রৌদ্রবিলাসী পর্ব -০২+৩

রৌদ্রবিলাসী
দ্বিতীয় পর্ব+ তৃতীয় পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত

–” তোমার বাচ্চা আমার পেটের মধ্যে ”
আপুর এই কথাটা শুনে আহান ভাই রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায় এবং বলে,

–” শোন এশা,তুমি ওই বিয়েটার কথা বলছো তাই না?দেখ আমি সম্পুর্ন গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমাদের বিয়ে হয়নি।ওই সময় আমরা দুইজনই চেতনা হাড়িয়ে পড়ে ছিলাম।আমার মনে হচ্ছে আমাদের বিয়ে হয়নি আর তুমি বলছো বাচ্চার কথা।এটা কিরকম ফাজলামি শুনি? ”

এশা আপু মাথা নিচু করে ফেলে।আমি এবার খানিকটা কৌতুহল নিয়ে আপুর দিকে তাকাই।তারপর তার মুখটা উপরের দিকে তুলে নিয়ে বলি,

–” আপু তোর মেডিকেল রিপোর্ট কোথায়?সেটা দেখা ”

আপু এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” এখনো চেকআপ করানো হয়নি।তবে আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি মা হতে চলেছি ”

আমি এবার আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,

–” তো আপনি প্রমাণ দেন যে আপনাদের বিয়ে হয়নি ”

আহান ভাই এবার বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে আমার আর আপুর দিকে তাকিয়ে থাকে।অথঃপর দীর্ঘ একটা নিঃস্বাস ফেলে হাওয়ার মধ্যে।তারপর এশা আপুর দিকে দৃষ্টিপাত করে হুট করে প্রশ্নটা তার দিকে ছুঁড়ে দেন তিনি,

–” আচ্ছা আমাদের তো হুশ ছিল না কিন্তু তু‌মি জানলে কেমনে আমাদের বিয়ে হয়েছে? ”

আচমকা এই প্রশ্নটা শুনে আপু চমকে ওঠে।সে প্রশ্নের উত্তরটা লুকানোর জন্য টালবাহানা শুরু করে।আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি সে কিছু একটা লুকাচ্ছে?কিন্তু কি লুকাচ্ছে?আমি এবার দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠি,

–” কালকে মেডিকেল চেকআপ করানোর পর বোঝা যাবে? ”

আমার কথার সাথে আহান ভাই একমত হন কিন্তু আপু টালবাহানা শুরু করে।আ‌মি বুঝতে পারছি আপু চাইছে না চেকআপটা করানো হোক কিন্তু কেন?তার মানেটা স্পষ্ট সে মিথ্যো বলছে।সবশেষে আহান ভাইয়ের কড়া দৃষ্টি ও আমার জোড়াজুড়িতে আপু রাজি হয়ে যায়।আহান ভাই আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,

–” কালকে একজনের কপাল খুলবে আর একজনের বন্ধ হবে।দেখা যাক কার কপাল খোলে ”

কথাটা বলে তিনি রুম থেকে বের হয়ে যান।রুম থেকে বেড়োনোর আগে তিনি বলে যান আর আসবেন না আজকে।আমরা যেন ঘুমিয়ে পড়ি।আহান ভাই বের হতেই আমি দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে আসি।তারপর আপুর সামনে বসে পড়ি।চোখের দৃষ্টি স্থির রাখি তার দিকে।তারপর কড়া দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলি,

–” আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি তুই মিথ্যাে বলছিস।কিন্তু কেন? ”

আপু এবার মাথা তুলে আমার দিকে তাকায়।তারপর রুমের চারদিকে একবার চোখ বোলায়।তারপর পুনরায় আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” আমি ইচ্ছে করেই পালিয়েছিলাম।আর হ্যা এতক্ষন থেকে যে কথা গুলো বললাম সব মিথ্যো ”

আমি অবাক হয়ে আপুর দিকে তাকাই।‌অযাথা মিথ্যে কথা বলার দরকার কি বোঝার চেষ্টা করি।আপু আমার মনের ভাবনাটাকে ধরে ফেলে।সে বিছানার উপর পা তুলে আরাম করে বসে পড়ে।তারপর নিজের মধ্যে একটা রাজকীয় ভাব নিয়ে এসে বালিশে হেলান দিয়ে বলে,

–” বৎস,তোমার নিশ্চয় জানতে ইচ্ছে হচ্ছে আমি কেন মিথ্যে বলেছি?কেন বলেছি তার বাচ্চা আমার পেটে?কোথাকার বিয়ের কথা বলছি আমরা?কেনই বা তার সামনে কান্না করে এরকম অভিনয় করলাম?তুমিতো এসবই জানতে চাও তাইনা ”

আপুর এই ধরনের ব্যবহার দেখে আমি বাকরুদ্ধ।কিছুক্ষন আগে কান্না করা মেয়েটা এখন হাসির রাজ্যের রানী হয়ে গেছে।আমি ভ্রু-কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে তার মাথায় হাত দেই।তারপর অন্তরচক্ষু স্থাপন করে বোঝার চেষ্টা করি কোন জায়গার তারটা হুট করে ছিড়ে গেল?আমার কাহিনীকারবার দেখে অবাক হওয়া জিজ্ঞাসা করে,

–” তোর আবার কি হইলো? ”

আমি গভীর মনযোগ দিয়ে তার মাথাটা পরিক্ষা করতে করতে বলি,

–” দেখতেছি কোন জায়গার তারটা পট করে ছিড়ে গেল ”

আপু এবার খানিকটা রেগে আমার হাতটা সড়িয়ে দেয়।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” ফাজলামো বাদ দিয়ে শোন! ”

আমি মাথা নাড়িয়ে বলার অনুমতি দেই।আপু আমার কাছ থেকে সাড়া পেয়ে বলতে শুরু করে,

–” আসলে আমার ইচ্ছা ছিল না ওই লাল বান্দরটার সাথে সংসার করার।তাই বিয়ের দিন সকালে পালিয়ে যাই।আর ও যে বলতেছে আমার সাথে ওর প্রেম ছিল,আচ্ছা তুই বলতো কেউ যদি নিজে নিজে কাউকে ভালোবেসে ভাবে যে সেও তাকে ভালোবাসে তাহলে কি সেটাকে প্রেম বলে।সে নিজে নিজে ভালোবাসতো আর ভাবতো আমিও তাকে ভালোবাসি,মানে মানুষের মাথার কয়টা তার ছিড়লে এরকম হতে পারে ভাব তো একবার? ”
আমি তার দিকে না তাকিয়েই বলি,

–” কমপক্ষে ২টা ”

আপু আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ধমকায়।তারপর পুনরায় বলতে শুরু করে,

–” তাকে মিথ্যা কথা বলার কারনটা হলো সে অলরেডি আমাকে খোঁজার জন্য গুন্ডা ভাড়া করছে।তাই তাকে তার বন্ধুদের নাম বললাম তাহলে আর কিছু হবে না।আর হ্যাঁ তার বাচ্চা আমার পেটে না তবে একজনের বাচ্চা আমার পেটে হবে এটা ঠিকই এবং তার সাথে আমার বিয়েও হয়ে গেছে।আর আহানের সাথে বিয়ের কাহিনীটা শুনলে তুই হাসতে হাসতে মরেই যাবি।মানে এতটা বোকা বানিয়েছি তাকে..”

আমি এবার বেশ আগ্রহ নিয়ে আপুর দিকে তাকিয়ে বলি,

–” প্লিজ বলো না ”

আপু আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা ধমকিয়ে বলে,

–” শুনলে হাসতে হাসতে মরে যাবি।আমি চাই না তুই এত তারাতারি মর ওকে।যা ঘুমা!আর হ্যা আমি চলে যাচ্ছি।গুড বাই ”

কথাগুলো বলে আপু উঠে দাঁড়ায়।তারপর আমার আর কোনো কথা না শুনে চুপি চুপি রুম থেকে বের হয়ে যায়।আমি উঠে দরজার কাছে যেতে যেতে সে হাওয়া।বাহিরে বের হয়েও তাকে দেখতে পাই না আর।
আমি বিষয়টা নিয়ে তত না ভেবে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।এক ঘুমে পাড় করে দেই বাকি রাতটা।

পরেরদিন সকাল বেলা নিজের মুখের কাছে হালকা গরম নিঃশ্বাস অনুভব করে আমার মুখটা।প্রথমে একচোখ খুলে তাকিয়ে চমকে উঠি।সাথে সাথে খুলে যায় ২য় চোখটা।আহান ভাই আমার উপরে ঝুকে আছে।আমি এক লাফ সরি এক লাফ দিয়ে উঠে বসি।আহান ভাই আমার দিকে বেশ হাসি-খুশি দৃষ্টি নিয়ে তাকায়।অথঃপর মাথায় হালকা একটা বাড়ি মেরে খানিকটা ঝাঝালো গলায় বলে,

–” উষু,তোকে এখন ভারসিটিতে যেতে হবে সেটাও বেমালুম ভুলে গেছিস।ভুলবিই তো,তোর ধান্দাই তো ভার্সিটি ফাঁকি দেয়া।চল উঠ! ”

আমি বেশ কিছুটা সময় নিয়ে তাকাই আহান ভাইয়ের দিকে।তার মতের কোনো ভাবান্তর না দেখে চুপ করে উঠে পড়ি।তারপর ড্রেস নিয়ে সোজা ওয়াসরুমে চলে যাই।রেডি হয়ে বের হই একেবারে।বের হয়ে দেখি আহান ভাইও রেডি।তার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে জানতে পারি,সে আমাকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে যাবে।আমি প্রথমে না করতে চাইলে তিনি কঠোর গলায় জানিয়ে দেন তিনি কোনো পুঁচকো মেয়ের কথা শুনতে রাজি নন।

ব্রেকফাষ্ট শেষ করে সবার কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে বিয়ের পরেরদিনই ভারসিটি পথে রওনা দেই।আমার পাশে বসে গাড়ি চালাচ্ছেন আমার বর আহান।কিছুক্ষনের মধ্যে আমাদের দীর্ঘ পথের যাত্রা শেষ হয়।আহান ভাই গাড়িটা ভার্সিটির ভিতরে ঢুকিয়ে দেন।আমি তার কাছ থেকে বিদেয় নিতে গেলে তিনি বলে ওঠেন,

–” শোন পুঁচকো মেয়ে,ছেলেদের সাথে কথা বলবি না।কেউ কোনো কিছু দিলে খাবি না বুঝলি ”

তার কথাবাত্রা শুনে আমার মনে হতে থাকে আমি মনে হয় ৫বছরের বাচ্চা।এমন সময় পিছন থেকে একটা ছেলেকণ্ঠ আমার নাম ধরে ডাকে।আমি খানিকটা অবাক হয়ে পিছনে ঘুরি।ছেলেটাকে দেখেই চিনে ফেলি।আরে এতো সেই ভন্ড ছেলেটা যে সবসময় আমার পিছন পিছন ঘুরে বেড়ায়।তার সম্পর্কে রিচার্চ করার পর জানতে পেরেছি সে এই এলাকা কালিয়া মাস্তানের ছোট ভাই।

ছেলেটা আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।আহান ভাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে।এমন সময় ছেলে আমার সামনে হাটুগেড়ে বসে পিছন থেকে একটা গোলাপ ফুল বের করে বলে,

–” আই লাভ ইউ উষা..প্লিজ এক্সেপ্ট মি ”

চলবে..

{এতদিন পর গল্প লেখার পরও এত রেসপন্স আশা করি নাই সত্যি।আপনাদের ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার নাই।ভালোবাসা নিবেন আমার পক্ষ থেকে}

নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ

রৌদ্রবিলাসী
তৃত্বীয় পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত

–” আই লাভ ইউ..প্লিজ এক্সেপ্ট মি? ”
কথাটা বলে ছেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি আহান ভাইয়ের দিকে না তাকিয়েই ভয়ে কাপতে থাকি আরো তাকালে কি হবে কে জানে?ততক্ষনে আহান ভাই বেশ অবাক হয় গাড়ি থেকে নেমে পড়ে।তারপর বেশ কিছুটা সময় নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটার দিকে তাকানো অবস্থায় তিনি আমার উদ্দেশ্যে বলেন,

–” গাড়িতে ওঠ উষা? ”

আমি বিন্দুমাত্র সময় অপচয় না করে গাড়িতে উঠে পড়ি।এইসময় তার কথা না শুনলে হিতে বিপরীত হতে পারে স্পষ্ট বুঝতে পারছি আমি।তাই এ সময় ঘাড় ত্যারামি না করে সোজা গাড়িতে উঠে পড়ি।জানালা বন্ধ করে দিয়ে ভিতর থেকে তাকিয়ে থাকি বাহিরে।লক্ষ্য করি সম্পুর্ন ক্যাম্পাসের ৭০% মানুষের দৃষ্টি আহান ভাইদের দিকে।

ছেলেটা এবার উঠে দাঁড়ায়।তারপর বা হাত দিয়ে মুখের সামনে পড়া চুলগুলো উপরে তুলে রাখে।পাশ থেকে একটা ছেলে এসে উইগ পড়িয়ে দেয় তার মাথায়।ছেলেটা এবার বেশ ভাব নিয়ে তাকায় আহান ভাইয়ের দিকে।আহান ভাইও তাকিয়ে আছে তার দিকে।

টান টান উত্তেজনার একটা মুহুর্ত।কে কাকে মারবে বলা কঠিন?ঠিক এই মুহুর্তে ঠাস করে একটা আওয়াজ হয়।কে মার খেল দেখার জন্য আমি ভালো করে বাহিরে তাকাই।লক্ষ্য করি কালিয়া মাস্তানের ছোট ভাই গালে হাত দিয়ে মাটিতে বসে আছে।তার চোখ দিয়ে আগুনের ফিরকি ধরছে।রাগে থরথর করে কাপতেছে।আহান ভাই মুখ ভর্তি হাসির রেখা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” তোমার ভাই কালিয়া মাস্তান আ‌মাকে দেখলে এখনো হাত ধরে চুমু খায় আর তুমি তার ছোট ভাই হয়ে মানে তার পাওয়ারে চলে আমার ওয়াইফকে প্রপোজ করো।সাহস থাকা ভালো,তবে বেশি থাকা একটু ক্ষতিকর ”

ছেলেটার রাগ এখনো কমতেছে না।সে থরথর করে কাঁপছে রাগে।সে এবার উঠে দাঁড়ায়।তারপর আহান ভাইয়ের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে তাকিয়ে বলে,

–” আজ পর্যন্ত আমি যা চেয়েছি তাতো পেয়েছি পেয়েছিই সাথে যা চাইনি তাও পেয়েছি।আমি উষাকে ভালোবাসি মানে ভালোবাসি এবং তাকে আমি চাই।সো,কার কি হয় হোক সে আমার হবেই ”

আহান ভাই তার কথা শুনে হাত তালি দিয়ে চারদিকে তাকিয়ে বলে,

–” নাইস জোকস অফ দ্যা ইয়ার।আচ্ছা বাবু তুমি যাও,তোমার ভাইয়ার সাথে কথা বলবোনি।তুমি যাও কেমন? ”

ছেলেটা রাগে ফুসতে ফুসতে তার দলবল নিয়ে বিদেয় হয়।আহান ভাই গাড়িতে উঠে সর্বপ্রথম আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” আজ তুই শেষ ”

কথাটা বলে তিনি গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চালাতে শুরু করেন।আমি খানিকটা ভয় ভয় নিয়ে তার দিকে তাকাই।বোঝার চেষ্টা করি তিনি মনে মনে কি ভাবছেন?আহান ভাই টের চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” আজ আর তোকে ক্লাস করা লাগবে না,বাসাও যাওয়া লাগবে না।আজ সারাদিন আমার অফিসে বসে থাকবি আমার সামনে ওকে ”

মানে কি বলবো আমি ভুলে যাই এই মুহুর্তে।মানুষ কতটা পরিমাণে শয়তান হলে এরকম একটা কথা বলতে পারে?সারাটা দিন আমি তার অফিসে তার সামনে বসে থাকবো,এটা কোনো কথা।আহান ভাই মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পেরে যায়।তিনি গাড়ি থামিয়ে ভ্রু-কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” কি থাকবি না? ”

এই মুহুর্তে ‘না’ উত্তর দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই।বাধ্য হয়ে শত চেষ্টা করে মুখের মধ্যে হাসি নিয়ে এসে কাধ ঝাকিয়ে বলি,

–” অবশ্যই থাকবো ”

আহান ভাই এবার হাসি মুখে আমার দিকে তাকান।তারপর পুনরায় গাড়ি চালাতে শুরু করেন।আ‌মি তার সিটটাতে বসে ভাবতে থাকি আপুর কপালটা এত ভালো কেন?সে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছিল আহান ভাই পাবনা থেকে পালিয়ে আসা একজন পাগল?

কিছুক্ষনের যাত্রায় আমরা পৌছে যাই আহান ভাইয়ের অফিসে।তিনি গাড়িটা পার্ক করে আমাকে নিয়ে রওনা হন নিজ কক্ষের উদ্দেশ্যে।পথের মধ্যে অনেকের সাথে দেখা হলে প্রত্যেকে সালাম দেয়।আহান ভাই সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলে আমাকে নিয়ে সোজা একটা রুমে চলে আসে।

রুমটার মধ্যে প্রবেশ করে আমি পাগল হয়ে যাইতে যাইতেও ভালো থাকি বহু কষ্টে,কারন এটা অফিসরুম নাকি বেডরুম সেটা নিয়েই কনফিউশনে পড়ে যাই আমি।একটা অফিস রুমে যা যা থাকা দরকার তার বিন্দুমাত্র উপাদানও এখানে নেই।তার পরিবর্তে একটা বেডরুমে যা যা থাকা দরকার তার সবকিছু এখানে আসে।শোয়ার জন্য বেড,বসার জন্য সোফা সবকিছুই এখানে বিদ্যমান।আমিতো অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেলি,

–” এটা কি অফিসরুম নাকি আপনার বেডরুম? ”

আমার কথা শুনে আহান ভাইয়ের ঠোঁটের কোণে হালকা হাসির রেখা ফুটে ওঠে।সে আমার দিকে না তাকিয়ে সোফায় বসে বলতে শুরু করে,

–” সারাদিন একটা চেয়ারে বসে থাকতে চিন্তা করে না আমার।আর অফিসটা যেহেতু আমার বাপের,সো আমি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছি।মোটকথা এক জায়গায় ঢ্যাপসা কদমের মতো বসে থাকে ভালোলাগেনা তাই এইসব ব্যবস্থা ”

তার কথা শেষ হতে না হতে আমি ফট করে বলে ফেলি,

–” ডান্ডানাচুনি ”

ব্যাস এই শব্দটা পরবর্তি মুহুর্তে আমার জীবনের কাল হয়ে ফিরে আসে।আমার এই কথা শুনে আহান ভাইয়ের রাগ সপ্তম আসমান অতিক্রম করে মুহুর্তে।একটা পুঁচকো মেয়ে তাকে ডান্ডানাচুনি বলবে এটা তিনি কখনো মেনে নেবেন না।তাইতো এক লাফে সোফা থেকে উঠে বসে আমার সামনে এসে দাঁড়ান।তারপর ইয়াবড় হাতটা তুলে পিঠের মধ্যে ঠাস করে একটা বাড়ি লাগিয়ে দেন তিনি।

বাড়িটা খেয়ে কুকড়ে উঠি আমি।মুখ ব্যাথায় বিকৃত হয়ে যায়।আহান ভাই রেগে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,

–” পুঁচকো মেয়ে তোর সাহস অনেক বেড়ে গেছে।এখন চুপ হয়ে বসে থাক এখানে বুঝলি।বেশি কথা বললে মেরে ফাটাই দিব মাথা ”

আমি চুপচাপ তার কথায় মাথা নাড়াই।তিনি আমার কাছে থেকে হ্যা সম্মতি পেয়ে পুনরায় তার আসনে ফিরে যান।আমি বেডের উপর বসে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি সোফার দিকে।মনে মনে ঠিক করি তার সাথে আর কথা বলবো না।

ঠিক কত সময় বসে ছিলাম জানিনা তবে এটা জানি যে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ি আমি।কতক্ষন ঘুমিয়েছি সেটা জানিনা তবে এটা জানি আহান ভাইয়ের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গে।আধো আধো চোখ খুলে লক্ষ করি আহান ভাইয়ের হাতের মধ্যে খাবারের প্লেট।তিনি আমাকে টেনে তুলে বসিয়ে দেন।

আমি বেশ বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকালে তিনি হুতোম পেঁচার মতো মুখ করে বলেন,

–” যা,ফ্রেস হয়ে আয়! ”

আমি একবার তার দিকে একবার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকাই।অথঃপর আরো একবার মার খাওয়ার আগেই উঠে ওয়াশরুমের পথে রওনা দেয় আমার পা দুটো সাথে বয়ে নিয়ে চলে শরীরটাকে।

ফ্রেস হয়ে এসে লক্ষ করি আহান ভাই সোফায় বসে কাজে মগ্ন।তিনি আমার উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে আমার দিকে তাকিয়ে বেশ স্বাভাবিক ভাবে বলেন,

–” খাবার নে,আর আমাকে খাইয়ে দে সাথে তুইও খা ”

তার কথা শুনে আমি বলেই ফেলি,

–” পাগল নাকি?জীবনে একটা বাচ্চাকেও এখনো ভাত খাওয়াইনি আর আমি খাওয়াবো ওনাকে।আচ্ছা আপনার পাবনার সিরিয়াল নাম্বার কত ছিল?নিশ্চয় উপরের সারির দিকে আপনার নাম ছিল ”

কথাটা বলাও শেষ নেই তার আগেই আহান ভাই উঠে এসে এক পা উপরে তুলে দুহাত দিয়ে কান ধরে দাঁড় করিয়ে দেন।সাথে হাসি মুখে বলেন,

–” বাকি দিনটা এভাবেই থাকতে হবে ”

আমি কি বলবো বুঝতে পারি না।শেষমেষ হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেই।আহান ভাই আমার কান্না শুনে আমার দিকে এক লোকমা ভাত এগিয়ে দিয়ে বলেন,

–” পুঁচকো মেয়ে ”

চলবে..

{কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here