রৌদ্রবিলাসী পর্ব -০৪

রৌদ্রবিলাসী
চতুর্থ পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত

–” পুঁচকো মেয়ে ”
বেশ শান্তি নিয়ে কান্না করতেছিলাম,হঠাৎ আহান ভাইয়ের এই কথাটা রাগিয়ে দেয় আমাকে।মুহুর্তের মধ্যে কান্না বন্ধ করে ভ্রু-কুঁচকে তার দিকে তাকাই।তিনি ভাতের লোকমা আমার দিকে বাড়ানো অবস্থাতেই জিজ্ঞাসা করেন,

–” এমনে তাকাইতেছিস কেন? ”

–” শোনেন মি.হাতি আমি পুঁচকো মেয়ে নই।আমার মা ছোট থেকে এত্তোবড় করার জন্য আমার পিছনে কমপক্ষে ৭টন খাবার খরচ করেছে।তার চেয়ে বড় কথা আপনি হয়ত জানেন না আমি প্রতিদিন রাতে আমার হাইট মেপে রাখি।আমার হাইট কত জানেন?শুনলে অজ্ঞান হয়ে যাবেন? ”

আহান ভাই ভাতের লোকমাটা পুনরায় প্লেটে রেখে মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

–” কত শুনি? ”

–” ৪.১১ফুট,হুহ।এই উচ্চতা পাওয়ার জন্য আমাকে প্রতিদিন ১গ্লাস করে দুধ খেতে হয়েছে ”

আমার কথা শুনে আহান ভাই ভাতের প্লেট রেখে উঠে দাঁড়ায়।আমি এখনো কান ধরে দাঁড়িয়েই আছি।তিনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে একহাত দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরেন।তারপর আমার মাথাটা ধরে বলেন,

–” এখন দেখ তো আমি তোর থেকে কত বড়?কমপক্ষে হলে ১ফুটের থেকেও বেশি।সো,তোকে পুঁচকো মেয়ে বলার অধিকার আমি প্রাকৃতিক ভাবেই পেয়েছি ওকে? ”

তার কথা শুনে আমার ইচ্ছা হয় এখনি তার মাথায় একটা বাড়ি মেরে তাকে ছোট করে দেই।তিনি আমার সাথে আর কোনো কথা না বলে একহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে অন্য হাত দিয়ে খাবার মুখের ভেতরে ঢুকিয়ে দেন।আমি অনুভব করি আমার পেটের মধ্যে ২কেজি ওজনের একটা ইদুর দোড়াদৌড়ি করছে ক্ষুধার জ্বালায়।সো,এখন বেশি ঢং না করে খেয়ে নিলে আমারই লাভ।

এভাবে নিত্যনতুন বিভিন্ন অত্যাচার সহ্য করে খাওয়া-দাওয়ার ইতি ঘটে।আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে হুমকি দিয়ে বলেন,

–” যদি কান ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়েছিস,তাহলে মেরে মেরে ভুত বানিয়ে দেব,তারপর তোর পিঠের উপর চড়ে মঙ্গলগ্রহ ভ্রমণ করে আসবো বুঝলি ”

আমি সেরকম কোনো চেষ্টা না করে ন্যায়পরায়ণতার সাথে এক পা খাড়া করে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকি।আহান ভাই ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে সোজা সোফায় বসে পড়েন।তিনি সেখানে বসে আ‌মার দিকে তাকিয়ে বলেন,

–” উষু,এখন থেকে তুই সপ্তাহে একদিন ভার্সিটিতে যাবি,আর বাকি ছয়দিন আমার সাথে অফিসে আসবি ”

–” আপনি কি বলেন এসব আহান ভাই?আমাদের বাংলা স্যার প্রতিদিন বলেন,পড়াশুনা একটা লম্বা গাছের কিছু ফলের মতো,যে যত বেশি ফল পাড়তে পারবে সে তত বেশি সফল।আমিতো এখন ফল পাড়ার চেষ্টা করছি,আর আপনি বাধা দিচ্ছেন।আপনিতো আমার শত্রুর তালিকার উপরে উঠে গেলেন আহান ভাই? ”

আমার কথা শুনে আহান বেশ বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকায়।অথঃপর আমার কথার পিছনে তার কথা লাগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে,

–” তোদের বাংলা স্যার নিশ্চয় এটা বলেনি যে,সেখানে ভালো ফলও থাকবে আবার পচা ফলও থাকবে।তোর দাঁড়ায় ওই ঢ্যাপসা পচা ফল ছাড়া অন্য ফল পেরে আনা সম্ভব নয়।আর আমিতো তোর শত্রু সেই অনন্তকাল থেকে।মনে নেই যখন তুই বিছানায় প্রসাব করতি আমি সেই পিক তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করে ৫০০লাইক ছিনিয়ে নিতাম।দুঃখের বিষয় আইডিটা এখন নাই।নাহলে পিকগুলো দেখাতে পারতাম ”

আহান ভাইয়ের এই কথাটা আমাকে চুপ করিয়ে দেয়।আমি আর কোনো কথা না বলে চুপ-চাপ শাস্তি ভোগ করতে থাকি।

একপর্যায়ে অফিস ছুটির সময় চলে আসে।আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–” আয় ”
আমি মুহুর্ত দেরি না করে তার পিছন পিছন চলতে শুরু করি।এতক্ষন কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকার কারনে হাত-পায়ের ব্যাথা উঠে গেছে।এখন একটু হাটতে পেরে ভালো লাগছে।কিছুক্ষন হাটার পর আমরা গাড়ির কাছে চলে আসি।আহান ভাই গাড়িতে উঠে পড়ে সাথে আমি।তিনি গাড়ি চালাতে শুরু করেন কোনো কথা না বলে।

প্রায় ৫মিনিটের মতো গাড়ি চালানোর পর আহান ভাই হুট করে গাড়ি দাঁড় করায়।আমি ভ্রু-কুঁচকে তার দিকে তাকাই।তিনি একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছেন।ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত রহস্যময় হাসি।আমি সামনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠি।মুখ দিয়ে অস্ফুট আওয়াজ বের হয়,কালিয়া মাস্তান।

কালিয়া মাস্তানের দেহ বর্ণনা দিতে গেলে ৪টা কলম প্লাস ৪টার খাতার প্রয়োজন হবে।তিনি দেখতে এতটা পরিমাণ সুন্দর যে,তাকে দেখলে আমার হাসি পায়।কি নেই তার?চাপ দাঁড়ি,উচ্চতা প্রায় ৬ফুটের কাছাকাছি,বিড়ালের মতো চোখ,ঝকঝকে সাদা দাঁত সাথে মানুষকে খুন করার জন্য একটা পিস্তল..

তার সৌন্দর্য্য হার মানায় বিখ্যাত অভিনয়শিল্পীদের।তবে তাকে দেখলে আমার মনে হয় কলকাতার জগা শিকদারের মতো।

আমি লক্ষ করি আহান ভাই গাড়ি থেকে নেমে পড়েছেন।আমি নামবো কিনা ভেবে পাইনা।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেই গাড়ি থেকে নামবো না।কালিয়া মাস্তান আহান ভাইয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।আহান ভাইও তার সাথে ঠিক একইভাবে কথা বলছে।

হঠাৎ কেউ আমাদের গাড়ির দরজা খুলে ফেলে।আমি সেদিকে তাকানোর সাথে সাথে একটা রুমাল দিয়ে আমার মুখ ঢেকে ধরে কেউ একজন।আমি চিল্লানোর সময় পর্যন্ত পাই না।

এদিকে আহান ভাই গাড়ি মাস্তানের থেকে বেশ হাসি-খুশি ভাবে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসে।গাড়িতে উঠেই তিনি চমকে ওঠেন।আমার সিটের দিকে তাকিয়ে দেখেন আমি নেই।টপ করে গাড়ি থেকে নেমে খুঁজতে থাকেন চারদিকে।

এদিকে ঠিক কতক্ষন অজ্ঞান হয়ে ছিলাম জানিনা।তবে জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে আলোকিত একটা জায়গায় আবিষ্কার করি।আমার চারপাশে অনেকগুলা মেয়ে বসে আছে।তাদের মধ্যে একজনকে চিনতে পারি,আমাদের এইদিকের পাল্লারে কাজ করে।তার কাচ থেকে জানতে পারি সে এখন আমাকে কনে সাজাবে এবং কালিয়া মাস্তানের ছোট ভাইয়ের সাথে আজকেই আমার বিয়ে।

এই মুহুর্তে আমার কি করা উচিত সেটা নিয়ে কনফিউশনে পড়ে যাই।ওইরকম একটা ভোকড়া মার্কা ছেলে আমাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছে ভাবতেই মাথার তারটা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

এমন সময় রুমে প্রবেশ করে কালিয়া মাস্তান ও তার ছোট ভাই।আমি এখনো তার ছোট ভাইয়ের নামই জানিনা।কালিয়া সাহেব আমার দিকে আন্তরিক দৃষ্টিতে তাকান।তবে সেই দৃষ্টি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি ভয়ংকর লাগে।

তিনি হাসি মুখে বলেন,

–” আমার ছোট ভাই বিশ্বাসের সাথে তোমার বিয়ে দেব আজকে।রেডি হও তুমি ”

আমি এবার কালিয়া সাহেবের দিকে বেশ কৌতুহল বোধক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলি,

–” আচ্ছা আপনার ছোট ভাইয়ের নাম বালিয়া মাস্তান রাখলে কেমন হয়?না মানে কালিয়া বালিয়া মেলে ভালো তো? ”

আমার কথা দুভাইয়ের মনে ধরে।তারা কিছুক্ষন নিজেদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক করে শেষ পর্যন্ত তার ছোট ভাই বলে,

–” ভাইয়া ও যা বলবে ওটাই ঠিক।আজ থেকে আমার নাম বালিয়া মাস্তান ”

আমি অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকাই।মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়,

–” আরে এরাতো যথাক্রমে ছাগলের ২ ও ৩ নাম্বার বাচ্চা ”

চলবে..ইনশাআল্লাহ

{ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন}
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here