রৌদ্রবিলাসী পর্ব -০৫

রৌদ্রবিলাসী
৫ম পর্ব
লেখক:-#নিয়াজ_মুকিত

ধুমধামে বিয়ের আয়োজন চলছে ওইদিকে।এদিকে পাল্লারের মেয়েগুলো বেশ বাধ্য হয়েই আমাকে সাজাচ্ছে।আমি শুধু অপেক্ষায় আছি আহান ভাইয়ের।আমার সম্পুর্ন বিশ্বাস তিনি কিছুক্ষনের মধ্যে আসবেন,কিন্তু সেই কিছুক্ষনটা কতক্ষন সেটাই বুঝতে পারছি না।

দেখতে দেখতে পশ্চিম আকাশে সুর্য্যি মামা ডুবে যাওয়ার সময় হয় কিন্তু আহান ভাইয়ের দেখা নেই।এদিকে সন্ধ্যা নামলেই আমাকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হবে।এমন সময় আমার চোখ পড়ে একটা জালানার দিকে।বাড়ির নিচতলায় থাকার কারনে সহজেই জালানা দিয়ে সবার নজর এড়িয়ে বেড়িয়ে পড়ি।

জালানা দিয়ে বের হয়ে প্রথমে চারদিকে তাকিয়ে দেখি কেউ আছে কিনা।সবাই বাসার সামনের দিকে পিছনের দিকে কেউ নেই।এমন সময় আমার নজরে পড়ে যায় আহান ভাইয়ের গাড়িটা।তিনি গাড়িতে বসে আছেন তবে একা নয় সাথে একটা মেয়েও বসে আছে।তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কালিয়া মাস্তান।আহান ভাই মেয়েটার হাতে একটা চুমু খেয়ে কালিয়ার উদ্দেশ্যে কি যেন বলে?

তাদের থেকে অনেক দুরে থাকার কারনে কিছু শুনতে পারিনা আমি।তবে চোখ ফেটে ঠিকই পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে।সত্যি মানুষের মন বোঝা খুবই কঠিন।আজকে সকালে যে ছেলেটা আমাকে ভালোবাসতো বিকেল হতে না হতেই সে অন্য মেয়ের হাতে চুমু খাচ্ছে।কষ্ট পাবার আরো একটা কারন আছে,কেউ মানুক আর না মানুক বিয়ে তো আমাদের হয়েছেই?

একসময় এসব ভাবা বাদ দিয়ে বা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলি।তারপর মনের ভেতর থেকে নিজে নিজে পালানোর তাগদা পাই।বুঝতে পারি এখানে বেশিক্ষন থাকলে কারো চোখে পড়তে দেরি হবে না।

আমি চোখের মধ্যে পানি নিয়ে বাসার পিছন দিক দিয়ে দৌড়াতে থাকি।বাসার পিছনের দিকে হালকা ঝাড়-জঙ্গল থাকায় কয়েকবার হোচট খেয়ে পড়তে পড়তেও বেঁচে যাই।একবার পড়ে গিয়ে মাথায় বেশ আঘাত পাই।সেদিকে কেয়ার না করে আমি দৌড়ে দৌড়ে মেইন রাস্তায় উঠে পড়ি।

রাস্তায় উঠে একটা সিএনজি দাঁড় করিয়ে তারাহুরো সেখানে উঠে পড়ি।সিএনজি চালক জিজ্ঞাসা করে আমি কোথায় যাব?তার প্রশ্ন শুনে আমার মনে পড়ে আরেকটা ভাবনা?আমি এখন কোথায় যাব?আহান ভাইতো আরেকজনকে ভালোবাসে।তার কাছে গিয়ে আমার লাভ কি?আর আমাদের বাসায় তো এখন কেউ নেই,সো সেখানে যাওয়া যাবে না এই মুহুর্তে।

এদিকে সিএনজি চালক বার বার জিজ্ঞাসা করেই চলেছে।তার জিজ্ঞাসা করার এক ফাঁকে আমি আহান ভাইদের বাড়ির ঠিকানা বলে দেই।সিএনজি চালক আর কোনো কথা না বলে সোজা চালাতে শুরু করেন।

কিছুক্ষন যাওয়ার পর একটা জায়গায় আমার চোখ আটকে যায়।আহান ভাই আর সেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।আমি তারাতারি করে সিএনজি চালকে থামতে বলি।তিনি বেশ বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞাসা করেন,

–” কি হলো? ”

কিন্তু তার কথায় আমার কান নেই।আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আহান ভাইয়ের দিকে।তিনি তার ওয়ালেট থেকে টাকা বের করে মেয়েটার দিকে এগিয়ে দেন।মেয়েটা টাকাটা নিয়ে আহান ভাইয়ের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে কি যেন বলে চলে যায়?আহান ভাই আর দেরি না করে তার গাড়িতে উঠে পড়ে।

আমি এবার হাতের ইশারায় সিএনজি চালককে গাড়ি চালাতে বলি।তিনি আমার নির্দেশ পেয়ে মুহুর্ত দেরি না করে গাড়ি ছোটাতে শুরু করেন।আমি বসে বসে ভাবতে থাকি সেই দৃশ্য গুলো।খেয়াল করি চোখের কোণে হালকা পানি জমে গেছে।

কিছুক্ষন পর সিএনজি চালকের কণ্ঠস্বরে আমার ধ্যান ছুটে যায়।তার দিকে তাকাতেই সে বেশ বিরক্তি নিয়ে বলে,

–” এসে গেছি ”

আমি তার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সিএনজি থেকে নেমে পড়ি।এই মুহুর্তে তো আমার কাছে টাকা নেই।তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে আমি বাসার ভেতরে চলে যাই।সবার নজর এড়িয়ে সোজা নিজের রুমে গিয়ে ব্যাগ থেকে টাকা বের করে পুনরায় নিচে নেমে ভাড়া পরিশোধ করে যাই।

ভাড়া পরিশোধ করে বাসার ভেতরে ঢুকেই দেখি আহান ভাই।তিনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমি তার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি তিনি বধুবেশে আমাকে দেখে মোটেও অবাক হননি।আমি তার সাথে কোনো কথা না বলে সোজা রুমে চলে যেতে ধরি কিন্তু আহান ভাই আমাকে পিছন থেকে টেনে ধরে বলে,

–” পালালি কেমন করে? ”

আমি তার দিকে না তাকিয়ে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা রুমে চলে যাই।আমার ব্যবহারে আহান ভাই যে বেশ অবাক হয়েছে সেটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না আমাকে।আমি রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দেই।অথঃপর বেশ কিছুক্ষন জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে থাকি।চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে পড়ছে।মনে পড়ছে অফিসে কিভাবে আহান ভাই আমাকে খাইয়ে দিয়েছিল।

নিজেই নিজের মনকে প্রশ্ন করি,
–” আচ্ছা আমি কাঁদছি কেন?আমি তো আহান ভাইকে ভালোবাসি।তারই বা দোষ কি?আমি তো দেখতে ততটা ভালো নই সো আমাকে নিয়ে কেন পড়ে থাকবে সে ”

আমার প্রশ্নে বাধা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে দরজায় বারি মারতে থাকে ওপাশে দাড়িয়ে থাকা আগন্তক।আমি বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকি।অথঃপর চোখের পানি মুছে দরজার দিকে এগোই।দরজা খুলে দেয়ার সাথে সাথে রুমে প্রবেশ করে আহান ভাই।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে আচমকা প্রশ্ন করেন,

–” কি হয়েছে উষু? ”

আমি এবার তার দিকে তাকাই।তার সাথে চোখা-চোখি হয়ে যায় আমার।তার চোখে কৌতুহল আর আমার চোখে ঘৃণা।আমি তার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বলি,
–” কই কিছু নাতো? ”

আহান ভাই এবার আমাকে এক হাত দিয়ে ঝাপটে ধরে।তিনি আমার মুখের সামনে মুখ নিয়ে এসে বলেন,
–” তোর চোখে অন্য কিছু দেখতে পাচ্ছি আমি।সত্যি করে বল! ”

আমি তার দিকে না তাকিয়েই দীর্ঘ একটা শ্বাস নিয়ে বলি,

–” ছাড়ুন,এগুলো চেন্জ করব! ”

আহান ভাই বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে আমার দিকে তাকান যেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ছাড়বেন কিনা?অবশেষে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলেন,

–” আচ্ছা যা! ”

আমি তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যাই।বেশ সময় নিয়ে সবকিছু চেন্জ করে বের হয়ে আসি।বের হয়ে দেখি আহান ভাই বিছানায় বসে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।আমাকে দেখে আচমকা প্রশ্ন করেন,

–” তুই কি বিয়েটা মেনে নিয়েছিস উষু? ”

হঠাৎ এই প্রশ্নটা কেন আমি তার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করি।তিনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।তার তাকিয়ে থাকার মানে বুঝতে অসুবিধা হয় না আমার।তিনি আমার কাছ থেকে প্রশ্নের উত্তর চাইছেন।

আমার উত্তর দিতে দেরি হয় দেখে তিনি পুনরায় প্রশ্ন করেন,

–” তুই কি বিয়েটা মেনে নিয়েছিস উষু,না নিলে বল আটকে রাখবো না।কারন আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু কারো অবহেলা…”

তার কথা শেষ হয় না।এমন সময় দরজায় কেউ একজন ঠক ঠক আওয়াজ করে।আমাদের দুজনের দৃষ্টি একসাথে পড়ে যায় দরজার দিকে।আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিতেই একটা নারীমুর্তি আমাকে সড়িয়ে দিয়ে আহান ভাইয়ের দিকে ছুটে যায়।তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে বলে,

–” কেমন আছো আহান বাবু? ”

চলবে..ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here