রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -১০

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ১০
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“রৌদ্র তুই কি কারও প্রেমে পরেছিস না-কি!!”

নিজের মায়ের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে রৌদ্র বিষম খেয়ে গেল। কাশতে কাশতে তার মা’য়ের দিকে গোলগোল চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই তার মা তাকে এমন একটা প্রশ্ন করবে সেটা রৌদ্র বুঝতেই পারেনি। রৌদ্রের মা মুচকি হাসি দিয়ে ছেলের মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-

“আগে তো আমার সাথে সব কথাই শেয়ার করতি কিন্তু এখন এমন গম্ভীর হয়ে গেলি কেন রৌদ্র!! বাসায় আমার বউমা আসলেই যদি তোর এই গম্ভীর স্বভাবটা ঠিক হয়।”

রৌদ্র তার মায়ের এসব কথা শুনে বিরক্তির সাথে বলল-

“মা… কি শুরু করলে এসব আজেবাজে কথা!! নির্বানের সাথে সাথে তুমিও দেখছি বাচ্চামো শুরু করলে।”

“আচ্ছা চল এখন ডিনার করবি।”

রৌদ্রের মা একটা মুচকি হাসি দিয়ে হাসি দিয়ে চলে গেলেন। রৌদ্র এখনও তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো রৌদ্র-“আচ্ছা আমি কি সত্যি সত্যিই প্রেমে পরেছি??” রৌদ্রর পুরো মাথা এলোমেলো লাগছে। এই প্রশ্নের কোনো উত্তর পাচ্ছে না। তার মাথায় শুধু রুদ্রাণী আর তার চিরকুটের কথাই ঘুরছে।

—————————

দু’দিন হয়ে গেল অথচ আরশি তার চিরকুটের প্রতিত্তোরে কোনো চিরকুট পেল না তার বারান্দায়। সকাল সকাল পাশের বারান্দার পাখি গুলোর দিকে তাকিয়ে আরশি কিছুটা চিন্তিত গলায় বললো-

“তোদের মালিক কি এখনো বাসায় আসেনি!! দু দিন হলো চিরকুট দিলাম কিন্তু এখনো চিরকুটের উত্তর পেলাম না। তোদের মালিক কি চিরকুটের কথা ভুলে গেল না-কি!!”

নির্বানকে চিরকুটের মানুষ না পেয়ে আরশি আবারও চিরকুটের প্রতি কৌতুহল হয়ে পরলো। আরশি জানে না চিরকুটের মালিক কে তবুও তার অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছে। পাশাপাশি বারান্দায় থেকেও অপরিচিত একজনের সাথে চিরকুট আদান-প্রদান করতে বেশ ভালোই লাগছে তার কাছে। চিরকুটের জন্য অপেক্ষাও এখন খুব উপভোগ করছে। আরশি আরও কিছুক্ষণ বারান্দায় থেকে রুমে চলে আসলো। ভার্সিটির সময় হতেই রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলো কাসফিয়ার সাথে।

“এই তোরা সবাই এই ছুটিতে আমার বাসায় চল। ওখানে সবাই মিলে অনেক ঘুরবো, মজা করবো। কি বলিস কাসফি!!”

ক্লাস শেষে সবাই মিলে ফুচকা খাচ্ছিলো ঠিক তখন আরশির বেশ উত্তেজিত হয়েই ফুচকা খাওয়া বন্ধ করে কথাটা বললো। আরশির কথায় সায় দিয়ে কাসফিয়াও বলল-

“গুড আইডিয়া। এবার ছুটি আমরা সবাই একসাথে কাটাবো আর এটাই ফাইনাল। আমার যতটুকু ধারনা আংকেল আন্টিরাও কিছু বলবে না আমাদের বাসায় গেলে। তাই না নীল!!”

নীল কিছু একটা ভেবে গম্ভীর গলায় বললো-

“আচ্ছা তা না হয় যাবো কিন্তু তোরা আবার আমাদেরকে ওখানে নিয়ে আমাকে আর আদ্রাফকে মেরে প্রতিশোধ নিবি না তো!!”

আরশি তার পাশে বসে থাকা নীলের কানে টান দিয়ে রাগী কন্ঠে বললো-

“সেটা না হয় আমাদের বাসায় গেলেই দেখা যাবে। এখন বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি খা।”

————————

বাসের জন্য অপেক্ষা করছিল আরশি আর কাসফিয়া। এমন সময় কাসফিয়া একটু উচ্চস্বরেই বলে উঠলো-

“আরে ডাক্তার সাহেব আপনি!! কেমন আছেন??”

কাসফিয়া কথায় আরশি বিস্মিত হয়ে ফোনের দিক থেকে নজর তুলে কাসফিয়ার দিকে তাকালো। কাসফিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে দেখলো রৌদ্র তার কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে। রৌদ্র তাদের দিকে এগিয়ে এসে শান্ত গলায় বললো-

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন?”

কাসফিয়া আরশির হাত জড়িয়ে ধরে নম্রমুখে বলল-

“আমরাও ভালো আছি। চলুন কোথাও বসে কথা বলি। আরশি বলেছিল ওর না-কি আপনাকে ট্রিট দেওয়ার কথা ছিল।”

কাসফিয়ার কথা শুনে আরশি কাসফিয়ার হাতে একটা চিমটি কাটলো। রৌদ্র একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো-

“হ্যাঁ তা তো ছিলই,, কিন্তু মিস আরু মনে হচ্ছে আমাকে ট্রিট দিতে চাচ্ছে না।”

রৌদ্রের মুখে মিস আরু নাম শুনে আরশি হকচকিয়ে উঠলো। রৌদ্রের দিকে ভ্রু বাঁকিয়ে তাকিয়ে ধারালো কন্ঠে বললো-

“আমি কি এই কথা বলেছি আপনাকে!!”

কাসফিয়া আরশিকে থামিয়ে দিয়ে বলল-

“আরশি তুই চুপ কর। আর ভাইয়া আপনি প্লিজ আশুর কথায় কিছু মনে করবেন না।”

কাসফিয়ার কথায় রৌদ্র মাথা নাড়িয়ে একটা অমায়িক হাসি দিল।

—————————

অস্বস্তিতে আরশিকে কাচুমাচু করতে দেখে রৌদ্র ঠোঁট চেপে হাসছে। রৌদ্র সকাল সকালেই বেরিয়ে পরেছিল তার বাসা থেকে। এখানে পৌঁছে নিজের ফ্ল্যাটে না গিয়ে ডিরেক্ট আরশির কলেজের এখানে চলে এসেছিল। রোদের মধ্যে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে অপেক্ষা করার পর আরশির দেখা পেয়েছে।
কাসফিয়া আরশিকে জোর করেই রৌদ্রর সাথে করে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছে। রৌদ্রের সামনাসামনি বসায় আরশি বেশ অস্বস্তিবোধ করছে।

“আচ্ছা আপনারা বসুন আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আশছি।”

কাসফিয়ার কথা শুনে আরশি কাসফিয়ার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো। আরশিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কাসফিয়া ফিসফিস করে বলল-

“এমন করছিস কেন আশু!! আমার বেশি সময় লাগবে না মাত্র পাঁচ মিনিট বস তুই এখানে। আর উনি তো তোকে একা পেয়ে খেয়ে ফেলবে না তাই না!!”

কাসফিয়া কথা গুলো বলেই ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল। আর আরশি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কাসফিয়ার যাওয়ার পথে।

“আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক মিস আরু??”

রৌদ্রর গম্ভীর গলায় এমন উদ্ভট কথা শুনে আরশি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে রৌদ্রের দিকে তাকালো। রৌদ্র তার হাত দুটো টেবিলে উপর উঠিয়ে দু হাতে আঙুল একসাথে ভাজ করে আবার গম্ভীরমুখে বলে উঠলো-

“আমি বাঘ নাকি ভাল্লুক যে আপনি আমাকে এভাবে ভয় পান। আমি কি আপনাকে খেয়ে ফেলবো না-কি?? আপনাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আপনি খুব অস্বস্তিবোধ করছেন।”

আরশি রৌদ্রর কথা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে শান্ত গলায় বললো-

“না তেমন কিছু না।”

রৌদ্র আর কিছু বললো না। দুজনের মধ্যে নিস্তব্ধতা বিরাজমান। খানিকটা সময় পর রৌদ্র বরাবরের মতোই গম্ভীর স্বরে বললো-

“আপনার পড়াশোনা কেমন চলছে মিস আরু??”

পড়াশোনার কথা শুনেই আরশি রৌদ্রের দিকে তীক্ষ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিরক্তি প্রকাশ করে বলল-

“রাত নেই দিন নেই আপনি সব সময় পড়াশোনার কথা বলেন কেন বলুন তো!!”

“তাহলে কি প্রেমের কথা শুনেতে চাচ্ছেন না-কি মিস আরু??

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here