রৌদ্রর শহরে রুদ্রাণী পর্ব -০৬

#রৌদ্রর_শহরে_রুদ্রাণী
#পর্বঃ৬
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“তুই এমন হলি কিরে আশু?? তুই তো কখনো কারও সাথে এভাবে কথা বলিস না। তাহলে আজ কেন ওনার সাথে এভাবে কথা বললি??”

কাসফিয়া বেশ গম্ভীরমুখে কথা গুলো বলল। আরশি নিজের রাগ দমিয়ে শান্ত গলায় বললো-

“ডক্টর সাহেব আমার সাথে কিভাবে বলে তুই কি দেখিস না!! গম্ভীর গলায় কথা বলেও আমাকে কেমন লজ্জায় ফেলে দেয়। আর ওনার সাথে সব সময় অপ্রত্যাশিত ঘটনাই ঘটে তাই ওনার প্রতি আমার রাগ হচ্ছে।”

কাসফিয়া আরশির পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আরশির দিকে নিরাশাজনক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় বললো-

“তোর কাছে যেমন এসব ঘটনা অপ্রত্যাশিত ঠিক তেমনি ওনার কাছেও এইসব কিছুই অপ্রত্যাশিত। সেটা কেন তুই বুঝতে পারছিস না!! যাইহোক এবার আমি আর তোকে জোর করবো না। তোর ব্যবহারের জন্য সরি বলতে চাইলে বলিস আর না হয় বলিস না।”

কথা গুলো শেষ করেই কাসফিয়া গম্ভীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। কাসফিয়ার কথা গুলো শুনে আরশি কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো। আরশির মস্তিষ্কে নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। “কাসফিয়া তো একদম ঠিক কথাই বলেছে। এই সব অস্বস্তিকর ঘটনাগুলো তো আমাদের দুজনের কাছেই অপ্রত্যাশিত। এতে তো ওই লোকটার কোনো দোষ নেই। তাহলে আমি কেন শুধু শুধু ওনার সাথে বাজে ব্যবহার করছি!! উনি তো আমাকে কিছু বলেনি!! চাইলে তো উনিও আমাকে কথা শুনিয়ে দিতে পারতো।” আরশি আরও কিছুক্ষণ নিজের মনে হিসেবনিকেশ করে ঠিক করলো রৌদ্রকে ফোন করেই ক্ষমা চেয়ে নিবে। এখন এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে চিরকুটটা হাতে নিয়ে আবারও পড়তে লাগলো। পাখিগুলোর নাম তার কাছে বেশ পছন্দ হয়েছে তবে এই নাম রাখার কারন জানতে ইচ্ছে করছে খুব। আরশি ধীর পায়ে টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। ডক্টর সাহেবের বলা কথা গুলো এখনো মাথায় ঘুরছে। তাই আরশি চায় না ওনার বলা কথা গুলো সত্যি হোক তাই খুব আস্তে-ধীরে হাটছে যেন আবারও পরে গিয়ে ব্যথা নায়া পায়। টেবিলে বসে একটা লাল কাগজে কালো কালিতে বেশ সুন্দর করে লিখছে-

“প্রিয় সম্বোধন করবো নাকি অন্য কিছু দিয়ে চিঠি লেখা শুরু করবো বুঝতে পারছি না। আপনি যে-ই হোন না কেন আপনার পাখি গুলোর নাম খুব পছন্দ হয়েছে। তবে এই নাম রাখার পেছনে কোনো কারন আছে কি-না তা জানতে খুব ইচ্ছে করছে।

ইতি,
আপনার পাশের বারান্দা”

চিরকুটটা লিখে একনজর ভালো করে দেখে। বারান্দার দিকে চলে গেল। পায়ের ব্যথাটা এখনও আছে। ডক্টরের কথা মতো ঠান্ডা পানির ছেক দেওয়া উচিত ছিল। বারান্দায় এসে চোখ ছোট ছোট করে ভ্রু কুচকে ফেললো। সময়টা মধ্য দুপুর। আকাশে উত্তপ্ত সূর্য। রোদের তাপে বারান্দার ফ্লোর উত্তপ্ত হয়ে আছে। চারপাশ রোদের ঝলমলে আলোতে চোখ পুরো পুরি মেলে তাকানো যাচ্ছে না। গ্রীষ্মের তান্ডব শুরু হয়েছে। আচ্ছা এটা কি চিঠি আদান-প্রদান করার সময়!! এমন উত্তপ্ত রোদের মধ্যে!! আরশি রৌদের অতি হাস্যজ্বল ঝলকানি থেকে বাচার জন্য বা হাত কপালের উপর রেখে চোখ দুটো আড়াল করে নিল। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হলো না। আরশি তাড়াতাড়ি করে চিরকুটটা পাশের বারান্দায় ছুড়ে দিয়ে পাখিগুলো দিকে তাকালো। পাখি সম্পর্কে না জানলেও ওর কাছে মনে হচ্ছে লালচে-হলুদ রঙের পাখিটাই রুদ্রাণী। তারপর কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুচকে ময়না পাখিটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

“আচ্ছা তোর নাম কি দেওয়া যায়?? তোর নাম আছে কি না সেটাও তো জানি না। পরে না হয় তোর মালিকের কাছ থেকে জেনে নিব। তোরা থাক আমি গেলাম রোদের তাপ আমাকে ঝলসে দিচ্ছে।”

এই ভাপসা গরমে বেশি ক্ষন থাকতে না পেরে আরশি তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে আসলো। বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিছানায় বসেই এসির টেম্পারেচার আগের থেকেও কমিয়ে দিলো।

————————

বারান্দার দরজা পাশে দাঁড়িয়েই রৌদ্র মুচকি হাসলো। পাখিগুলোর সাথে আরশির এভাবে কথা বলা শুনে রৌদ্রর ঠোঁটে অজান্তেই হাসি ফুটে উঠেছে। আর মনে মনে ময়না পাখির নামটাও ঠিক করে ফেলেছে। শব্দহীন পায়ে বারান্দা যেয়ে চিরকুটটা নিয়ে আসলো। রৌদ্রর এমন অদ্ভুত আচরণে রৌদ্র নিজেই অবাক হচ্ছে। আগে তো কখনো এমন করেনি তাহলে এখন কেন এইরকম লুকোচুরি খেলছে!! আগে তো কখনো এভাবে একা একা মুচকি হাসেনি তাহলে এখন কেন এই মেয়ের প্রতিটা আচরণ দেখেই মুচকি মুচকি হাসছে!! নিজেকে এখন স্কুল পড়ুয়া এক কিশোর ছেলে মনে হচ্ছে। রৌদ্র নিজের উদ্ভট চিন্তা ভাবনা বাদ দিয়ে স্টাডি টেবিলে বসে চিরকুটটা পড়লো। চিরকুটটা পড়ার সাথে সাথেই রৌদ্রর ফোন বেজে উঠলো। রৌদ্রর ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনে আরশির নাম্বারটা দেখে বরাবরের মতোই একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফোন রিসিভ করল।

“আমি খুবই দুঃখিত আপনার সাথে এমন বাজে ব্যবহার করার জন্য। আসলে বার বার আপনার ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলোর জন্য আমি খুব অস্বস্তিতে ছিলাম। তাই আপনার উপর রেগে ছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এতে তো আপনার কোনো দোষ নেই শুধু শুধুই আমি আপনাকে রাগ দেখিয়েছি। আশা করি আপনি আমার সিচুয়েশন বুঝতে পারছেন।”

আরশি একনাগাড়ে কথা গুলো বলে বড় করে দু একবার শ্বাস নিল। আরশির এমন একনাগাড়ে কথা বলা শুনে রৌদ্র বিস্মিত হয়ে বলল-

“আরে আপনি এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন!! শান্ত হোন মিস আরু। আমি কিছু মনে করিনি আপনার ব্যবহারে।”

রৌদ্রর মুখে আরু নাম শুনে আরশি কিছুটা সময়ের জন্য থমকে গেল। স্তব্ধ হয়ে বসে আছে আরশি। এভাবে আরু বলে কখনও তাকে কেউ ডাকেনি আর আজ এক অপরিচিত মানুষের মুখে আরু ডাকটা কেন যেন খুব আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে। আরশিকে নিশ্চুপ হয়ে থাকতে দেখে ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে শীতল কন্ঠে আবারও বললেন-

“মিস আরু আপনি ঠিক আছেন তো!!”

আরশি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে শান্ত গলায় বললো-

“জ্বি ঠিক আছি। আসলে সরি বলার জন্যই ফোন করেছিলাম। মাফ করবেন আমার ব্যবহারের জন্য।”

রৌদ্রর কিছু একটা ভেবে গম্ভীর গলায় বললো-

“মাফ তো করা যেতেই পারে তবে নেক্সট টাইম খামচি নয় ছোট্ট একটা ট্রিট দিলেই হবে।”

খামচির কথা শুনে আরশি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। লোকটা বার বার যে কেন এই খামচির কথা তুলে আরশির মাথাতেই ডুকে না। আরশি লজ্জায় অস্থির হয়ে বলল-

“ওকে মনে থাকবে আপনার কথা এখন রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।”

দ্রুত কথা গুলো বলেই ফোন রেখে দিল আরশি। রৌদ্র এবার খানিকটা শব্দ করেই হেসে দিল। আরশিকে অস্বস্তিতে ফেলতে তার বেশ ভালোই লাগে। রৌদ্র ঠিক করলো এখন আর চিঠি লিখবে না। কারন আরশির পায়ে যেহেতু ব্যথা সে নিশ্চয়ই আজ আর বারান্দায় আসবে না।৷ আরশি আজ সারাদিন রুমে বসেই কাটিয়ে দিল। কাসফিয়ার কড়া হুকুম বেশি হাটাহাটি করা যাবে না। কোনো প্রয়োজন থাকলে কাসফিয়া কে বলতে। আর সব সময়ের মতো ‘ আংকেল কে ফোন করবো’ বলে ভয় দেখিয়ে বিছানাতেই চুপচাপ বসিয়ে রেখেছে।

—————————

রৌদ্র সকালে চিঠি লিখে আরশির বারান্দায় দিয়ে তাড়াহুড়ো করে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলো আজ কিছুটা দেরি করেই ঘুম ভেঙেছে তার।
সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার ফলে আরশিও আজ বারান্দায় যায়নি। কাসফিয়ার সাথে ভার্সিটির জন্য বেরিয়ে গেছে। কাসফিয়া আর আরশি ভার্সিটিতে পৌঁছে তাদের নিয়মিত আড্ডা দেওয়ার জায়গায় গেল। ভার্সিটির পাশের বড় এক কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচের বেঞ্চি গুলোই হলো তার ফ্রেন্ডদের আড্ডার মহল। আরশি আর কাসফিয়া গাছতলায় আসতেই এক সুদর্শন যুবক তাদের কাছে এসে আরশির দু কাধে হাত রেখে অস্থির কন্ঠে বললো-

“আরশি বেবি তুমি ঠিক আছো তো?? শুনলাম তোমার নাকি পা মচকে গিয়েছিলো??”

আরশি গোলগোল আঁখিদুটি দিয়ে সুদর্শন যুবকটার দিকে তাকিয়ে আছে। আহহহ.. কি সুন্দর বেবি ফেস!! একদমই চকলেট বয়। ছেলেটার এমন বেবি ফেস দেখলে যে কেউ তার মায়ায় পরে যাবে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here