লাভার নাকি ভিলেন পর্ব ১৮+১৯

#লাভার_নাকি_ভিলেন?
#পার্টঃ১৮
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

মেঘলাঃ চলুন যাই….

আকাশ মেঘলা ২ জনেই ডিংগিতে বসল।

মাঝিঃ বাবাজি মেঘলা কিন্তু সাঁতার জানে না একবার পড়ে গিয়ে ডুবতে বসেছিল।একটু দেখে যাবেন।

আকাশ চিন্তা করবেন না চাচা….!!! আমরা সাবধানেই যাব।

ডিংগির ২ পাশে ২ জন বসল।
কিছুদুর যাওয়ার পর,

আকাশ বলল মেঘলা যদি কিছু মনে না করিস তুই আমার পাশে এসে বসবি….

মেঘলা মনে করব কেন দাঁড়ান আসছি…।

আকাশঃ দাঁড়া তোর আসতে হবে না আমি আসছি তুই কখন পড়ে যাবি কে জানে বলতে বলতে মেঘলার পাশে গিয়ে বসল। ২ জনেই খুব খুশি
কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পড়েই চারদিক অন্ধকার হতে শুরু করল আকাশে মেঘ জমছে।

আকাশঃ এই অসময়ে বৃষ্টি….??? একটু আগেই তো রোদ ছিল,আকাশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল।

কিন্তু মেঘলা বৃষ্টি আসার লক্ষন দেখে খুশিতে পাগল প্রায়…

আকাশ অবাক হয়ে বলল মেঘলা তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? এখুনি হয়ত ঝড় উঠবে তুই সাঁতার পাড়িস না আমাদের উচিত এখুনি ফিড়ে যাওয়া… তোর স্বপ্ন মনে হয় আজ আর পূরন হবে না।তোর তো মন খারাপ হওয়ার কথা তা না হয়ে খুশি হচ্ছিস কেন?

মেঘলাঃ পাগল হয়েছেন নাকি আমি তো চাই আজ খুব জোর বৃষ্টি হোক। খোদা আমার চাওয়া পুরন করেছে।আমার স্বপ্ন এভাবে পূরন হবে ভাবতেই পাড়িনি ভেবেছিলাম আজ সব হবে শুধু বৃষ্টিতে ভিজার ইচ্ছাটাই পুরন হবে না কিন্তু এখন তো দেখছি সেটাও হবে। আমি তো খোদার কাছে সেজন্য শুকরিয়া আদায় করব।

আকাশঃ তোর মাথা সত্যিই গেছে আমার ব্যাপারটা মোটেও ঠিক লাগছে না।

মেঘলাঃ কথা কম বলে নৌকা টা চালান তো আর একটুপরই পৌছে যাব।ততক্ষনে বৃষ্টি আসবে না।

আকাশ আর কথা না বাড়িয়ে নৌকা চালানোতে মন দিল তবে তার কিছুটা ভয় লাগছে।

কিছুদূর যাওয়ার পর মেঘলা বলল ওই যে দেখুন
ছোট্ট একটা ঘর, এক চিলতি বারান্দা আর এক টুকরো উঠুন…..সব মিলে আমার স্বপ্নের বাড়ি।

আকাশ অবাক হয়ে দেখছে এই বিশাল বিলের মাঝখানে একটা দিপের মত টিলা তারউপর একটা ছোট্ট ঘর। অসম্ভব সুন্দর পরিবেশ।

কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা পৌছে গেল।
মেঘলা আকাশকে নিয়ে ঘরে গেল।ঘরের ভিতরে কিছুই নেই একটা বিছানা আছে সেটারও বেহাল দশা।তারা ঘরে পৌছানোর পড়েই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।মেঘলা বিছানার নিচ থেকে একটা বক্স বের করল।
বক্স থেকে একটা পাঞ্জাবি বের করে আকাশ কে দিল।
আকাশঃ এটা কার…???

মেঘলাঃ কার আবার আপনার…

আকাশঃ কিন্তু এখানে কিভাবে এল….তুই কখন এসব করলি?

মেঘলা হেসে বলল আজ থেকে প্রায় ১ বছর আগে এই পাঞ্জাবি টা আমার নিজের হাতে বানানো। ।আমি জানতাম এই দিন টা কোন না কোনদিন আমার জীবনে আসবে তাই আগেই রেখেছিলাম।জানি না মাপে হবে কিনা তবুও একবার ট্রাই করে দেখুন আর এই বিলটা তো আপনাদের এই বাড়িটা দাদি বানিয়ে দিয়েছে।আপনি তো কখনো এখানে আসেন নি জানবেন কি করে।

আকাশ মেঘলাকে দেখে শুধু অবাক হচ্ছে। কারন মেঘলার দেওয়া সারপ্রাইজ গুলির কাছে তার সারপ্রাইজ কিছুই নয়।

মেঘলাঃ আমি চোখ বন্ধ করে ১০ গুনব এর মধ্যে চেঞ্জ করবেন।এর বেশি চোখ বন্ধ করে থাকতে পাড়ব না

আকাশ হাসতে হাসতে বলল তাকিয়ে থাকতেই বা বারন করেছে কে?ছোট বেলা একসাথে খালি গায়ে কত গোসল করেছি আজ হটাৎ এত লজ্জা কোথা থেকে আসল?আর যাই হোক তোকে তো আমার লজ্জা করবে না।

মেঘলাঃ ছি কিসব কথা? আমরা কি এখনো ছোট আছি নাকি তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করুন তো।
আকাশ চেঞ্জ করে নিল।

মেঘলাঃ এবার বাইরে যান

আকাশঃ বাইরে তো বৃষ্টি…

মেঘলাঃ তাতে কি…যেতে বল্লাম যান…
আকাশকে হতবাক করে দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিয়ে মেঘলা ঘরের দরজা লাগিয়ে দিল।

আকাশ বৃষ্টিতে ভিজছে আর ভাবছে হচ্ছেটা কি?
কিছুক্ষন পর মেঘলা দরজা খোলে বাইরে আসল।
আকাশ মেঘলার দিকে তাকিয়ে এক অজানায় ডুব দিল।আকশের চোখ যেন আর সরছে না।
লাল শাড়ি, লাল চুড়ি চোখে গাঢ় কাজল,খোলা চুলে আর নুপুরের রিনিঝিনি আওয়াজ তুলে এগিয়ে আসছে মেঘলা। আকাশের মনে হচ্ছে এই বন্য হরিনির দিকে তাকিয়ে হাজার বছর কাটিয়ে দেওয়া যায়…
আকাশ হা করে তাকিয়ে আছে. মেঘলা এসে আকাশের ধ্যান ভেংগে বলল সাজটা বেশি ভাল হয় নি তাই না?অনেক আগে থেকেই এগুলি রেখেছিলাম আসলে ইচ্ছা ছিল কোন এক বর্ষায়,খোলা চুলে, কলকা পাড়ের শাড়িতে মুটো ভর্তি চুড়ি পড়ে আপনার সাথে বৃষ্টিতে ভিজব।সেদিন মেঘলা আকাশ এক হয়ে মিশে যাবে প্রকৃতির মাঝে। এতক্ষন মেঘলা স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিল কিন্তু,

হটাৎই মেঘলা চিৎকার করে বলতে লাগল বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটাকে, আকাশের ওই মেঘগুলিকে, বিশাল জলরাশির হাজারটা পদ্মকে সাক্ষি রেখে বলছি আমি আপনাকে ভালবাসি…. আকাশ…খুব ভালবাসি আপনাকে…

খোলা জায়গায় চিৎকার করে বলায় কথা গুলি বারবার প্রতিধ্বনি হতে লাগল। এবার মেঘলা আকাশের কাছে এসে ২ হাত বাড়িয়ে আস্তে করে বলল,রোদ্রময় আকাশ কি আজ মেঘলা হবে?আপনি হবেন আমার?

আকাশ কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
আকাশ যদিও বৃষ্টিতে ভিজছে দেখে বোঝার কথা না কোনটা চোখের পানি আর কোনটা বৃষ্টির পানি তবুও মেঘলা আকাশের কাছে কে এসে বলল এবার আপনি কাঁদছেন কেন?

আকাশ মেঘলাকে জড়িয়ে ধরে বলল তোর ভালবাসার কাছে আমার ভালবাসা কিছুই না মেঘলা।কিভাবে পাড়িস এত ভালবাসতে?

তুই আজ আমাকে যে খুশি উপহাড় দিলি আমি কোনদিন ভুলব না মেঘলা…এই আকাশ সারাজীবন মেঘলা থাকবে।

মেঘলা আর আকাশকে নিয়ে বৃষ্টতে ভিজতে লাগল।আকাশ টাইমার দিয়ে তাদের এই মধুর সন্ধিক্ষন কে গ্যালারিতে বন্দি করে রাখল।

কিছুক্ষন ভিজার পর তারা ঘরে গেল।
২ জনেই ভেজা কাপড় বদলে নিল।
এখন প্রায় ৩ টা বাজে।

আকাশঃ মেঘলা এবার আমাদের যাওয়া উচিত কারন দেড়ি হলে তোকে বকা দিবে।

মেঘলাঃ এই দিনটা আর কোনদিন আসবে না।
ইচ্ছের হাজার রং এর সুতায় বুনা স্বপ্নগুলি পূরন করতে একদিন না হয় বকাই খেলাম।

তখনি মাঝি এসে একটা ব্যাগ দিল….

আকাশঃ এগুলি কি?

মেঘলাঃ কিছু না… বৃষ্টি কমে গেছে আপনি বাইরে যান।মাঝি চাচা উনাকে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসুন তো।
আকাশঃ বাইরে যাব কেন এখানেই থাকি….

মেঘলাঃ উফফ বেশি কথা বলেন আপনি যান তো যতক্ষন না আমি বলছি আসবেন না।
মেঘলা জোর করে আকাশ কে পাঠিয়ে দিল।

কিছুক্ষন পর আকাশ অনেকগুলি পদ্ম নিয়ে ফিরে আসল।মাঝি তাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।

আকাশ এসে আবারো অবাক হল কারন যেখানে এমন একটা ঘরে এই বৃষ্টির দিনে রান্না করা প্রায় অসম্ভব সেখানে মেঘলা তার প্রিয় খিচুড়ি রান্না করেছে।

মেঘলা দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আসুন রেস্টুরেন্ট এর খাবারের চেয়ে ভালই হবে মনে হয়।

আকাশঃ এতকিছু কিভাবে করলি?

মেঘলাঃকিভাবে করব হাত দিয়েই করেছি আসুন আসুন তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন।যেতে হবে…এবার সত্যিই দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।

আকাশ এসে খেতে বসল।
আকাশঃ খায়িয়ে দে….

মেঘলাঃ বয়সে আমি ছোট আপনার উচিত আমাকে খায়িয়ে দেওয়া….

আকাশঃ আচ্ছা আয় দিচ্ছি,আকাশ মেঘলাকে খায়িয়ে দিল আর মেঘলাও আকাশ কে…
এবার ফিড়ে আসার পালা।

আকাশঃ আজকের দিন টা এত ভাল কাটবে ভাবতেই পাড়ি নি।
মেঘলাঃ আমারও খুব ভাল লেগেছে।



মেঘলাদের ফিড়তে ফিড়তে ৮ টা বেজে গেল।

আকাশঃ তুই যা আমি বাইকটা রেখে আসছি..

মেঘলাঃ আজ কপালে কি আছে কে জানে নিশ্চুই খুব বকা খেতে হবে(মনে মনে)

যেই কথা সেই কাজ ঘরে ঢুকতেই শুরু হয়ে গেল বকাবকি…

রাবেয়া বেগমঃ নবাবজাদির এখন বাসায় আসার সময় হলো….এটাকে কি হোটেল মনে হয় যে ফুর্তি করে যখন খুশি আসবি?

মেঘলা চুপচাপ বকা শুনছে…

বিপাশাঃ কলেজে যাস নাকি অন্য কোথাও? নস্টা মেয়ে কোথাকার বলে মেঘলাকে থাপ্পড় মারতে গেল।

তখনি আকাশ এসে বিপাশার হাত ধরে ফেলল।
বিপাশা রেগে গিয়ে বলল তুমি ওর জন্য আমার হাত ধরলে?

আকাশঃ আমার পরিবারের কেউ অন্যায় করলে প্রতিবাদ করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
কি ভুল করেছে ও? তোমরা ভুলে যাচ্ছ মেঘলার এখন একটা বয়ফ্রেন্ড আছে তাই ও এখন নাবিলের সাথে যেখানে খুশি যেতে পাড়ে।

আর ভাবি তোমাকে বলছি তুমি যেমন বাড়ির বউ মেঘলাও ঠিক তেমন বাড়ির বউ মানে নাবিলদের অবস্থা আমাদের চেয়ে কোন অংশে কম না তাই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করার আগে ২ বার ভাব্বে।নাবিল যদি জানে আমি থাকতেও তার হবু বউ এর সাথে এমন ব্যবহার করা হচ্ছে আমি লজ্জায় ওর সামনে মুখ দেখাতে পাড়ব না তাই ওর সাথে কেউ খারাপ আচারন করবা না, করলে আমি সেটার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হব।
মেঘলা ঘরে যা….



সেদিনের পড়ে আর কেউ মেঘলার সাথে তেমন খারাপ ব্যবহার করে নি।মেঘলা আকাশের সাথে প্রায়েই ঘুরতে যায় সবাই ভাবে নাবিলের সাথে গিয়েছে। আকাশ মেঘলার জন্য এটা ওটা কিনে এনে বলে নাবিল দিয়েছে।মেঘলা আর আকাশ সারারাত ফোনে কথা বলে। কেউ দেখলেও কিছু বলে না কারন নাবিলের সাথে ত বিয়ে ঠিক হয়েই গেছে।তাই মেঘলা নাবিলের সাথে প্রেম করছে এটাই ভাবে।
কারনে অকারনে আকাশ মেঘলাকে নিজের ঘরে ডাকে এখন তারা একসাথে থাকলেও কেউ কিছু বলে না। নাবিলের নামে বেশ ভালই প্রেম করে তারা।
সম্পর্কের প্রায় ৩ মাস হয়ে গেছে এর মধ্যে কখনো আকাশ মেঘলার মাঝে কোন জগড়া ঝামেলা হয় নি।২ জনেই ২ জনকে অনেক বোঝে।আকাশ মাঝে মাঝে একটু রাগ করে যদি মেঘলা ফোন রিসিভ করতে দেড়ি করে তাহলে।মেঘলা আবার নানা রকম বাহানা করে আকাশের রাগ ভাংগায়।
সব খুব ভাল ভাবে চলছিল।

কিন্তু একদিন আকাশ ফেসবুকে একটা ছবি পোস্ট করে নিজেদের কপালে দুঃখ ডেকে আনল।

মেঘলা আর তার সেদিনের বৃষ্টিতে ভিজার সময়ের একটা ছবি নিজের ওয়ালে পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখল,
“ইচ্ছের হাজার রং এর সুতোয় বুনা স্বপ্নের রাজ্যে বনলতার সাথে কাটানো কিছু সময়”

মেঘলা ছবিটা দেখার সাথে সাথেই ডিলিট করতে বলল আকাশও বোঝল কাজটা ঠিক হয় নি তাই ডিলিট করে দিল।
কিন্তু ততক্ষনে ছবিটা অনেকেই দেখে ফেলেছে। কলেজের অনেকেই জেনে গেল মেঘলা আকাশের সম্পর্কের কথা।
ছবিটি ইরার কাছেও পৌছে গেছে,
ইরা প্রচন্ড রেগে গেল সে সিধান্ত নিল বাসায় সবার কাছে বলে দিবে কিন্তু আবার চিন্তা করল আকাশ কারোর সামনে আজও মেঘলাকে প্রেমিকার পরিচয় দেয় নি আর ছবিটিও ডিলিট করে দিয়েছে তারমানে ও চায় না কেউ জানুক তাদের সম্পর্কের কথা এখন ও যদি সবাইকে বলে দেয় তাহলে আকাশ সুযোগ পেয়ে তাদের সম্পর্কের কথা সবাইকে বলে দিবে আর হয়ত সবাই সেটা মেনেও নিবে তখন তার কি হবে? এটা ভেবে সে কাউকে কিছু বলল না,
ইরা ভাবতে লাগল কিভাবে মেঘলাকে সরানো যায়…



চলবে….!!!

( সবাইকে অনেক ধন্যবাদ গল্পটা শেষ করে দিব ভেবেছিলাম কিন্তু সবাই এত সাপোর্ট করেছেন যে আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পাড়ছিলাম না আপনারা গল্পটা এত ভালবাসেন।
আমি কারোর কমেন্টের রিপ্লে দিতে পারিনি তার জন্য দুঃখিত কিন্তু সবার কমেন্টগুলি পড়ে খুব ভাল লেগেছে।আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ)
লাভার_নাকি_ভিলেন?
#পার্টঃ১৯
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

ইরা ভাবতে লাগল কিভাবে মেঘলাকে সরানো যায়…



এদিকে আকাশের চাচাত বোনের বিয়ে,চাচা চাচী সহ বোন, সবাই বিদেশে থাকে কিন্তু সব আত্নীয় স্বজন দেশে থাকে তাই বিয়েটা আকাশদের বাসা থেকে হবে। জাস্ট ২ দিন পর বিয়ে তাই আজ থেকেই বাসায় মেহমান আসা শুরু হয়েছে।
আকাশের সব কাজিনরা চলে এসেছে আগামিকাল হলুদ সন্ধ্যা….
বাড়িতে সাজ সাজ রব।মেঘলারও খুব ভাল লাগছে। আকাশের বোন সুমি…তার সাথেও মেঘলার খুব ভাব হয়েছে।সব ঠিকঠাক ছিল কিন্তু মেঘলা জানত না তার এই আনন্দ বেশি থাকবে না।
মেঘলার সব খুশি বিলীন করার প্লেন নিয়ে ইরা এসে হাজির হল।

আকাশ বসে বসে ফোন টিপছিল আর মেঘলা সুমির হাতে মেহিদি দিচ্ছে আকাশ মাঝে মাঝে মেঘলা আর সুমির সাথে খুনশুটি করছে মেঘলা সেটা উপভোগ করছে তখনি ইরা এসে আকাশকে জড়িয়ে ধরল।আকাশ ও কিছুটা তাল মিলাল। এটা দেখে মেঘলার খুব রাগ হল।

বিপাশা এসে ইরাকে জড়িয়ে ধরে বলল এই তো বাড়ির গিন্নি চলে এসেছে।

মেঘলার এই কথাটায় খটকা লাগলেও বেশি পাত্তা দিল না কারন সে জানে ইরার সাথে আকাশের বিয়ে ঠিক করা আছে তাই গিন্নি বলতেই পাড়ে।

মেঘলাঃ উম গিন্নি না ছাঁই ডাইনি বুড়ি এসেছে…আর আকাশ টাই বা কেমন ডাইনিটাকে আমি সহ্য করতে পাড়ি না জানে না? তাহলে এত আহ্লাদ কিসের যতসব অসহ্যকর (বিড়বিড় করে)

ইরাঃ বিপাশা আপু আমার ব্যাগপত্র গাড়িতে আছে কোথায় রাখবে ড্রাইভার কে বলে দাও।

বিপাশাঃ এটা তো এক ঝামেলা হল ঘর তো সব ভরে গেছে কিন্তু তুই তো কারো সাথে বেড শেয়ার করে থাকিস না কোথায় থাকবি তাহলে…??

তখন আকাশ বলে উঠল কেন মেঘলার ঘর তো খালি আছে ওকে মেঘলার ঘরে পাঠিয়ে দাও না মেঘলা অন্য কোথাও থাকবে…..

মেঘলাঃকথাটা শুনে ২২০ ভোল্টের ধাক্কা খেলাম।বাড়ির অন্য কেউ এই কথাটা বলতেই পাড়ত তাতে আমার কিছু যায় আসত না কিন্তু আকাশের মুখ থেকে এটা শুনে সাথে সাথে ২ চোখ ভরে এসেছে আর একটু হলেই জল গড়িয়ে পড়বে নাক মুখ লাল হয়ে গেছে ইচ্ছা করছে এখুনি কেঁদে দেই।কিন্তু সেটা দেখার সময় আকাশের নেই।সে আমাকে লক্ষ্য না করে উল্টে বলল ইরাকে ঘরে পৌছে দিতে।

মেঘলা রেগে গিয়ে বলল কাজ করছি দেখতে পাচ্ছেন না?

আকাশঃ এই মেয়েটা এত বোকা কেন আরে ঘরে তো পার্সোনাল অনেক কিছুই থাকতে পাড়ে সেগুলি গুছিয়ে নেওয়ার জন্য বলছি এটাও বোঝতে পাড়ছে না?(মনে মনে)
মেহেদী পড়ে এসে দিস আগে ওকে নিয়ে ঘরে যা মুখে মুখে তর্ক করিস না?

মেঘলাঃ ইরা আপু আপনার এতই প্রিয় যে আমাকে ঘর ছাড়া করলেন এখন আবার উনার কাজ করে দেওয়ার জন্য ঘরেও পাঠাচ্ছেন ভালই…. এক পলকেই কতটা বদলে গেলেন একবারো ভাবলেন না আমাকে বের করে দিলে আমি কোথায় ঘুমাব? নিশ্চুই মেঝেতে তাই না…??সারাদিন কত গল্প করেন আমার জন্য নাকি কত ভাবেন আর অন্য একটা মেয়েকে পেয়ে এখনি বদলে গেলেন ছেলেরা সত্যিই খুব খারাপ তারা সব পাড়ে ভাবতে ভাবতে মেঘলা ইরা কে নিয়ে উপড়ে গেল।

আকাশ বাইরে চলে গেল….

মেঘলা গিয়ে ইরাকে ঘরে দিয়ে চলে আসতে চাইলে পিছন থেকে ইরা মেঘলাকে ডেকে বলল,দাড়াও মেঘলা.

মেঘলাঃ জ্বি আপু বলুন…

ইরাঃ আমি জানি আকাশের সাথে হয়ত তোমার একটা সম্পর্ক আছে কিন্তু আমি তোমার বড় বোনের মত তাই তোমার কোন ক্ষতি হোক তা আমি চাই না।

মেঘলা অবাক হয়ে ইরার কথা শুনতে লাগল…

ইরাঃ তুমি কি জানো আকাশ তোমাকে একটুও ভালবাসে না সে তোমার সাথে শুধু মজা নিচ্ছে আর কিছুই না….

মেঘলাঃ প্লিজ আপু আর যাই বলুন আকাশের ভাইয়ের ব্যাপারে খারাপ কিছু বলবেন না। আমি নিজেকে অবিশ্বাস করতে পাড়ব কিন্তু আকাশ কে পাড়ব না।

ইরাঃ তাই বোঝি? তা তোমার কি মনে হয় আকাশ তোমাকে ভালবাসে?

মেঘলাঃ অবশ্যই বাসে আর এর মধ্যে আমার কোন সন্দেহ নেই।

ইরাঃ তাই যদি হয় তাহলে,
আকাশ তো জানে আজ রাতে বাসায় প্রচুর ছেলে আসবে ও কি করে পাড়ল তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিতে? এতগুলি ছেলে বাড়ির মধ্যে ঘুরাঘুরি করবে আর তুমি শরনার্থির মত এখান থেকে ওখানে ঘুরে বেড়াবে তোমার আশ্র‍য় নেওয়ার মত কোন জায়গা নেই সব শেষে কোথায় ঘুমাবে? কোন এক মেঝেতে তাই তো?যেখানে ছেলেদের অবাদ বিচরন থাকবে রাতের অন্ধকারে তোমার সাথে যা খুশি ঘটতে পাড়ে।
ভালই যদি বাসত তাহলে এটা করতে পাড়ত তুমিই বলো?
অন্যদিকে দেখো আকাশ আমার ব্যাপারে কতটা সচেতন,আমাকে কতটা ভালবাসে বিপাশা আপু নিজের বোন হয়েও আমার কথা ভাবল না বলল ঘর নেই অথচ আকাশ আমার জন্য একটা সেইফ জায়গা বের করে দিল।একেই বলে ভালবাসা বোঝেছো?

মেঘলাঃ আপু তো কথাটা মন্দ বলে নি সত্যিই তো বলেছে..আমি কোথায় না কোথায় থাকব আমার সাথে যা ইচ্ছে হতে পাড়ে… আকাশ একবারো আমার কথা ভাবল না এটা ভেবেই কান্না পাচ্ছে. (মনে মনে)

ইরাঃ আচ্ছা এটাও বাদ দেই এবার বলতো আকাশের ব্যাপারে তুমি কতটা জানো…??

মেঘলাঃ সব জানি উনি আমায় সব বলেন কিছুই লুকান না।

ইরাঃ সত্যিই কি তাই….???

মেঘলাঃ হুম তাই…

ইরাঃ তাহলে নিশ্চুই এটাও জানো যে আকাশ বিবাহিত…

মেঘলা রেগে গিয়ে বলল অনেক আজেবাজে কথা বলেছেন এবার থামুন আমার এসব ভাল লাগছে না বলেই সে নিজের ফোন টা নিয়ে নিচে চলে আসল।
কিন্তু সন্দেহ খুব খারাপ জিনিস একবার মনে ঢুকলে আর বের হতে চায় না।
মেঘলার মনে ইরার কথাগুলি বার বার বাজছে….
তার খুব অশান্তি লাগছে কোন কিছুতেই মন বসছে না।
আকাশ ও বাসায় নেই যে তাকে জিজ্ঞাস করবে।ভাবতে ভাবতে সে একটা উপায় বের করল।
সুমির কাছ থেকে কথা বের করবে সুমির সাথে তার ভালই মিল হয়েছে।তাই সুমির ঘরে গেল।

মেঘলাঃ আপু আসব…

সুমিঃ হ্যা নিশ্চুই এসো না… এত পারমিশনের নেওয়ার কি আছে? যখন ইচ্ছে আসবে।

মেঘলাঃ কি করছো…

সুমিঃ তোমাদের দুলাভাইয়ের সাথে কথা বলছিলাম এখন বলা শেষ…

মেঘলাঃ খুব ভালবাসো তাই না?

সুমিঃ তা ত একটু বাসিই।তুমি কাউকে বাসো না?

মেঘলাঃ আমার কথা বাদ দাও আচ্ছা আকাশ ভাইয়া কাউকে ভালবাসেন না? আসলে এর পর তো তার সিরিয়াল তাই জিজ্ঞাস করলাম আর কি।

সুমিঃ ওর আবার কিসের সিরিয়াল ওর বিয়ে তে হয়েই গেছে….দাঁড়াও ওর বিয়ের ছবি দেখাই আমার ফেসবুকে ছিল খুব সুন্দর করে সেজেছিলাম আমরা….

সুমির কথাটা শুনে মেঘলার হৃদস্পন্দন যেন এক মুহুর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেল।

সুমি ছবিগুলি বের করে দেখাল… চারদিকে মানুষজন সাজানো গোছানো তার মধ্যে আকাশ আর ইরা…

আর কোন সন্দেহ রইল না মেঘলার কাছে সব প্রামান হয়ে গেল মেঘলা আর সহ্য করতে পাড়ল না সুমির সামনেই হাওমাও করে কেঁদে বাইরে চলে আসল।

সুমি বিষয়টা কিছুটা বোঝলেও কি হয়েছে সঠিক বোঝল না।

মেঘলা এক দৌড়ে ছাদে গিয়ে আকাশের দেওয়া ২ টা আংটিই খুলে নিচে ফেলে দিল।তারপর মেঝেতে বসে কাঁদতে লাগল….

মেঘলাঃ আমার সাথে এত বড় প্রতারনা কি করে করতে পাড়লেন আপনি…?? আপনি তো বলেছিলেন বিয়ে ঠিক হয়েছে বিয়ে হয়ে গেছে সেটা কেন বলেন নি?নিজের বউ থাকতেও আমাকে নিয়ে খেল্লেন?
কি করে পাড়লেন এত এত ভালবাসার গল্প সবি কি তবে মিথ্যা ছিল…???শুধুমাত্র মজা নেওয়ার জন্য আমাকে ব্যবহার করলেন?
এতদিন আমাকে মিথ্যা শান্তনা দিলেন।আমি এতদিন যা যা ভেবে এসেছি সবি মিথ্যা ছিল।আজকের গুলিই ঠিক আপনি কেন পরিবারে বলতে চান নি বা কাউকে জানাতে পাড়েন নি সেটা আজ বোঝলাম।
আরে সবাইকে বল্লে তো আমি জেনে যাব আপনি বিবাহিত।সত্যিই আপনি আমায় নয় ইরা আপুকে ভালবাসেন আর তার অনেক প্রমান আগেও দিয়েছেন আজও দিলেন।
আমাকে শুধুই ব্যবহার করলেন….
কিন্তু আমি তো সেই ছোট থেকে আপনার জন্য অপেক্ষা করছি,আজ আমার কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই সব হারিয়ে আজ নিঃস্ব আমি কি নিয়ে বাঁচব আমি….??? আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে আকাশ ছোট থেকেই তো লাঞ্চনা আর অবহেলায় বড় হয়েছি কেন তবে সুখের স্বপ্ন দেখালেন? আমার মত অসহায় একটা মেয়েকে নিয়ে খেলতে একবারো বিবেকে বাঁধা দিল না?



চলবে…!!!
(কেউ চিন্তা করবেন না আমার গল্প আর যাই হোক স্টার জলসার সিরিয়াল হবে না)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here