লাভার নাকি ভিলেন পর্ব ২২+২৩

#লাভার_নাকি_ভিলেন?
#পার্টঃ22
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

আকাশ একটা থাপ্পড় মারল…

মেঘলা যেই গালে হাত দিতে যাবে আকাশ তার হাত ধরে বলল মেহেদী নস্ট হলে মেরে ফেলব।

মেঘলাঃ মারলেন কেন?মিথ্যা কি বলেছি এনগেইজম্যান্ট আর বিয়ের মধ্যে পার্থক্য কি?



আকাশঃ গাছে ফুল হওয়া আর ফল হওয়ার মাঝে যে পার্থক্য বিয়ে আর এনগেইজমেন্ট এ ঠিক তেমন পার্থক্য।

মেঘলাঃ বোঝলাম না…

আকাশঃ বোঝার কথাও না।তুই যে পরিমান মাথা মোটা… তুই কিছু বোঝবি এটা যে ভাব্বে সেও একটা গাধা…. শোন গাছে ফুল যতগুলি ফোটে ততগুলি ফল হয় না। ফল হয় তার অর্ধেক।
এবারো বোঝিস নি তাই না, আচ্ছা তুই দাঁড়া আমি দরজা টা লাগিয়ে এসে দেখাচ্ছি বিয়ের পর কি কি করা যায় আর বিয়ের আগে কি কি করা যায় না।তাহলেই পার্থক্য টা বোঝবি।

মেঘলাঃ দরজা লাগানোর কি দরকার?

আকাশঃ এখন তোর সাথে যা যা হবে সেসব তো দরজা খুলে করা যায় না তাই দরজা লক করতে হবে…

মেঘলাঃ মানে কি?

আকাশঃ বিয়ের পর একটা ছেলে একটা মেয়ের সাথে কি কি করতে পাড়ে সেটাই দেখাব এখন…

মেঘলাঃ ছি…!!! কি খারাপ আপনি….!!

আকাশঃ যাই হোক বোঝতে পেড়েছিস তাহলে…যাক এবার মেইন কথায় আসি আজ থেকে প্রায় ২ বছর আগে,আমি তখন ১ম বর্ষে পড়ি,রাজনীতিতে নতুন ঢুকেছি তাই মারামারি টা একটু বেশিই করতাম তার জন্য প্রতিদিন কলেজে যেতাম, একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফিড়ে দেখলাম বাসায় বেশ সাজ সাজ রব বোঝলাম না কি ব্যাপার? বাসায় ফিরার কিছুক্ষন পর জানতে পাড়লাম আমার নাকি বিয়ে তাও আবার ইরার সাথে।ইরার বাবা বিদেশে চলে যাবেন তাই তাড়াতাড়ি করে বিয়ে দিতে চায় আর আমি রাজনীতির জন্য সারাদিন মারামারি করি তাই বাসা থেকে চাচ্ছিল আমি বিয়ে করে সংসারি হয়ে মারামারি ছেড়ে দেই।আমার রাজনীতি করা বাসায় কারো ভাল লাগত না তাই বিয়ের ব্যবস্থা করেছে আমি রাজি হব না জন্যে আমাকে আগে থেকে জানানো হয় নি আমি যতক্ষনে জানলাম ততক্ষনে বিয়ের সব আয়োজন করা শেষ। শপিং করাও শেষ আত্নীয়রা আসা শুরু করে দিয়েছে কি করব বোঝতে পাড়ছিলাম না তখন তুই কেবল নাইনে পড়িস আর তুই কি অবস্থায় আছিস সেটাও জানতাম না।
কিন্তু তোর জন্য আমার ভালবাসাটা ঠিকি ছিল তাই আমি বলি লুকিয়ে বিয়ে করব না বন্ধু বান্ধব কেউ জানে না এটা কমন বিয়ে? কেউ মানতে চাচ্ছিল না পড়ে আমি বলি এনগেইজমেন্ট করে রাখো পড়ে না হয় বিয়ে হবে।অনেক কষ্টে সেদিন বিয়েটা আটকে ছিলাম কিন্তু বিয়ের শপিং সহ আত্নীয় দের দাওয়াত দেওয়া হয়ে গিয়েছিল তাই এনগেজমেন্ট টা আটকানো সম্ভব হয়নি এনগেজমেন্ট হয়েছিল আর আমরাও বিয়ের বর বউ এর মত সেজেছিলাম ছবি তুলেছিলাম কিন্তু বিয়েটা আমি করি নি শুধুমাত্র তোর জন্য।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে বিয়েটা করলেই ভাল হত অন্তত কেউ দুশ্চরিত্র তো বলতে পাড়তো না।

মেঘলা এবার চুপ হয়ে গেল….
মেঘলাঃ আমি কি এসব জানতাম নাকি? কি যে করি নিজেই জানি না এখন তো ভারী ভেজাল হল আকাশ ভাই তো রেগে গেছে…

আকাশঃ তুই তো ঘর থেকে যাবি না জানি বলেও লাভ নেই তাই আমি নিজেই চলে যাচ্ছি কেউ জিজ্ঞেস করলে বলিস রাতে ফিরব না…

মেঘলাঃ ভাইয়া তো রেগে গেছে চলেও যাচ্ছে এখন যদি চলে যায় আর ফিরবে কিনা সন্দেহ আছে বিয়েতেও হয়ত থাকবে না যে জেদ উনার…যেতে দিলে হবে না থামাতে হবে…যেভাবেই কিছু একটা করতে হবে….(মনে মনে)

আকাশ চলে যাচ্ছে তখন পিছন থেকে মেঘলা বলে উঠল খুব ক্ষুদা পেয়েছে… কেউ যদি একটু খায়িয়ে দিত।

আকাশ বিরক্তি নিয়ে মেগলার দিকে তাকিয়ে বলল নিজের হাত কি হয়েছে?

মেঘলাঃ আমি এত তাড়াতাড়ি মরতে চাই না…

আকাশঃ কি…???

মেঘলাঃএকজন বলেছে মেহেদি নষ্ট হলে মেরে ফেলবে…

আকাশ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল সত্যি মেহেদী নষ্ট করবি না?? যদি কথা দিস তাহলে খায়িয়ে দিব।

মেঘলাঃ আরে কোনভাবে আপনাকে আটকাতে পাড়লেই হয় (মনে মনে)
হুম পাক্কা কথা দিচ্ছি।

আকাশঃ জানিস মেঘলা এই মেহেদী না খুব কাজের জিনিস এখন থেকে প্রতিমাসে তোকে মেহেদী কিনে দিব…

মেঘলাঃ কেন প্রতিমাসে মেহেদী পড়লে কি কাজ হবে?

আকাশ দরজাটা লক করে মেঘলার কাছে গিয়ে বলল এই দেখ আমি এখন তোর সাথে যা যা করব তুই বাঁধা দিতে পাড়বি না ভাল হবে না?

মেঘলাঃ মানে কি… এ না আপনি কিছু করবেন না…

আকাশঃ কথা দিয়েছিস মেহেদী নষ্ট করবি না এমনি তো তোকে টাচ করলেই সাপের মত কিলবল করতে থাকিস আজ তা পাড়বি না এই সুযোগ আর কখনো পাব কিনা কে জানে বলেই মেঘলার ঠোঁটে ঠোঁট ছুয়িয়ে দিল।

মেঘলা বাঁধা দিতে পাড়ছে না।আকাশ মেঘলার কোমর জড়িয়ে ধরে ঠোঁটের স্বাদ গ্রহনে মত্ত হয়ে উঠেছে।

মেঘলা মনে মনে ভাবছে কি বোকা আমি না বোঝেই কথা দিয়ে দিয়েছি…

কিছুক্ষন পর আকাশ মেঘলাকে ছেড়ে দিয়ে বলল এই মেহেদীর যে এতগুন আগে জানলে মেহেদীর ফ্যাক্টরি দিতাম।

মেঘলাঃ অসভ্য ছেলে….

আকাশ হাসতে হাসতে খাবার হাতে নিয়ে মেঘলাকে খায়িয়ে দিল।

মেঘলাও খেয়ে নিল।




রাতে সুমি আর মেঘলা আকাশের ঘরে ঘুমাল আর আকাশ একই ঘরে সোফায়….

কিন্তু মাঝরাতে আকাশের ঘুম ভেংগে গেল।
সে রীতিমতো ভয়ে পেয়ে গেল….
আকাশ তার বুকের উপড়ে ভাড়ি কিছু একটা অনুভব করল সাথেসাথে সে ফোনের ফ্লেশ অন করল।

কিন্তু যা দেখল তাতে সে হতবাক হয়ে গেল কারন সে দেখলো তার উপড়ে মেঘলা শুয়ে আছে।
আকাশ ধমক দিতেও পাড়ছে না কারন ধমকে যদি সুমি জেগে যায় আর সুমি এই অবস্থায় ওদের দেখলে মান সম্মান থাকবে না আর কিছু না বলেও পাড়ছে না।

কিন্তু এদিকে মেঘলা গভীর ঘুমে আছন্ন।

আকাশঃ এর কি একটুও বুদ্ধি নেই? কখন এসেছে এখানে?মেঘলা এই মেঘলা উঠ…কি করছিস এসব? ফিসফিস করে…

কিছুক্ষন ডাকার পড়স
মেঘলা আকাশের বুকে থেকেই আরমোড় ভেংগে বলল কি হয়েছে?

আকাশঃ এখানে কি করছিস?
মেঘলাঃ ঘুমাচ্ছি…

আকাশঃ এখানে কেন?
মেঘলাঃ ইচ্ছা হয়েছে…

আকাশঃ কেউ দেখলে কি করবে বোঝ?

মেঘলাঃ আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে আর কি হবে? আর যাই হয়ে যাক পড়ে হবে এখন তো হচ্ছে না।
সুযোগ পেয়েও হাতছাড়া করব? এত বোকা আমি না।

আকাশঃ কি বুদ্ধির সাগর রে…. কিছুটা ধমক দিয়ে বকল উঠ বলছি নিজের জায়গায় গিয়ে ঘুমা।

মেঘলাঃ আমার জায়গাতেই আছি চুপ থাকেন তো শুধু শুধু কথা বলে লাভ নেই আমি এখানেই থাকব থাপ্পড় মারলেও যাব না…

আকাশঃ কিন্তু মেঘলা…

মেঘলাঃ কোন কিন্তু না ঘুমান তো

আকাশঃ উফফ এই মেয়েকে কিভাবে বোঝাব….

মেঘলাঃ বোঝাতে কে বলল ঘুমাতে দিবেন কি?

আকাশঃ জ্বি ম্যাডাম আপনি ঘুমান আমার ঘুম তো হারাম করে দিয়েছেন।

মেঘলাঃ ধন্যবাদ তবে আমি মাত্র ৫০ কেজি আমাকে নিয়ে ঘুমানো টা এতও কষ্টকর নয় চাইলেই আপনিও ঘুমাতে পাড়েন… যাই হোক গুড নাইট…

মেঘলা তো আপন মনে ঘুমাল কিন্তু আকাশ টেনশানে ঘুমাতে পাড়ল না সারারাত মেঘলাকে দেখে দেখেই কাটিয়ে দিল। তার টেনশান হলেও ভালও লেগেছে মেঘলার এমন আচারনে সে খুশিই হল।
ভোরের আলো ফোটার আগেই আকাশ মেঘলাকে বিছানায় রেখে বাইরে চলে গেল…..



ঘুম ভেংগে মেঘলা নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল তারপর সে উঠে বাড়ির কাজে লেগে পড়ল। আকাশের কথা আর মনে নেই।


বেলা ১ টা বাজে আকাশ কে বাড়ির কোথাও দেখা যাচ্ছে না মেঘলা এদিক ওদিক সব জায়গায় খুজে দেখল কিন্তু আকাশ কোথাও নেই।

মেঘলাঃ কোন কি বড় ভুল করেছি? আকাশ কি রাগ করে কোথাও চলে গেছে?

।#লাভার_নাকি_ভিলেন?
#পার্টঃ২৩
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

বেলা ১ টা বাজে আকাশ কে বাড়ির কোথাও দেখা যাচ্ছে না মেঘলা এদিক ওদিক সব জায়গায় খুজে দেখল কিন্তু আকাশ কোথাও নেই।

মেঘলাঃ কোন কি বড় ভুল করেছি? আকাশ কি রাগ করে কোথাও চলে গেছে? কিন্তু কি করেছি?

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেল তবুও আকাশ নেই।মেঘলা ১ বার ফোন দিয়েছিল কিন্তু আকাশ ফোন ও ধরে নি। সে বার বার ফোন দেয় নি কারন বাড়ির সবাই অনেক বার ফোন দিয়েছে আকাশ ফোন তুলে নি।বাড়িতে সবাই আকাশ কে খুজে না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে কারন এই অনুষ্টানের মধ্যমনি আকাশ আর সেই এখন নেই।

সারাদিন শেষে সন্ধ্যার দিকে আকাশ বাসায় ফিড়ল।
আসার সাথে সাথে সবাই জিজ্ঞাস করতে লাগল কোথায় গিয়েছিল কেন সারাদিন বাসায় ছিল না তাকে ছাড়া আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে আরো কত কি….
আকাশঃ আসলে একটা কাজ পড়ে গেছিল।sorry guys… এই তো চলে এসেছি এবার সব হবে.

আকাশ ইরার কাছে গিয়ে বলল সরি ইরা কাল তোমাকে দিয়ে এভাবে কাজ করানোটা আমার উচিত হয় নি।বন্ধু বন্ধুর জন্য এইটুকু করতেই পাড়ে তাই না? তুমি রাগ করো নি তো?

ইরা মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলল আমি তো জানতাম আকাশ তার ইরার সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করতে পাড়ে না।আরে তোমার প্র‍য়োজনে এইটুকু কেন আমি সব করতে পাড়ি বেবি…

আকাশঃ ধন্যবাদ,আসলে আমাকে অনেকেই বোঝতে পাড়ে না তাই টেনশান করছিলাম তুমি বোঝতে পেড়েছো তাতেই খুশি।

ইরা আকাশের কথায় খুব খুশি হল।

আকাশঃওহ আর একটা কথা, ইরা নাচের সব ব্যবস্থা করো রাতে কাপল ড্যান্স হবে।

ইরাঃ ইউ গ্রেট বেবি আমি এক্ষুনি সব ব্যবস্থা করছি।

আকাশের এই ব্যবহারে মেঘলা অবাক হল আর কিছুটা কষ্টও পেল,
ভাবতে থাকল সে নিশ্চুই কোন বড় ভুল করেছে তাই আকাশ এমন করছে কিন্তু কি করেছে। বোঝতে পাড়ছে না।

আকাশ যখন উপড়ে যেতে নিল কিছুটা ফাঁকা পেয়ে মেঘলা গিয়ে আকাশের সামনে দাঁড়াল।

মেঘলাঃ সারাদিন কোথায় ছিলেন?

আকাশঃ আমি আমার কাজের কইফত কাউকে দেই না।

মেঘলাঃ দিতে হবে… কি করছিলেন বলুন…

আকাশঃ কাজ করছিলাম কিন্তু কইফত চাওয়ার তুই কে?

মেঘলা অবাক হয়ে বলল আমি কেউ নই?

আকাশঃ না তো… কে হোস তুই আমার…??

মেঘলার মন খারাপ হয়ে গেল আর আকাশ সেটা বোঝতেও পাড়ল।কিন্তু তবুও আকাশ বলল সামনে থেকে সর রুমে যাব…

মেঘলা সরে গিয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল রাতে ওভাবে ঘুমিয়েছিলাম বলে এমন করছেন?

আকাশ হা হা হা করে হতাশার হাসি দিয়ে চলে গেল।

মেঘলাঃ ঠিক আছে আমি তো কেউ না ইরাই সব থাকুন আপনি আপনার ইরাকে নিয়ে আর কথা বলব না বাজে ছেলে একটা… বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল মেঘলা।

কিছুক্ষন পর আকাশ নিচে আসল সবাই আনন্দে মত্ত কিছুক্ষন পর হলুদের অনুষ্টান।

আকাশ, ইরাকে বলল সাজতে যাও নি এখনো?

ইরাঃহুম যাচ্ছি এই তো যাব আর কি সুমি আপু আসলেই সবাই পার্লারে চলে যাব…

মেঘলাঃ ওমা দরদ একবারে উতলে পড়ছে দেখি (মনে মনে)

আকাশঃহুম গুড,কিছুক্ষন পর তো অনুষ্টান,আচ্ছা যাও। এই মেঘলা শোন ক্ষিদে পেয়েছে কিছু খেতে দে তো…

মেঘলা রাগে ফুঁসছে কিন্তু খাবার চেয়েছে না দিলে আকাশের মা বকা দিবে তাই রান্না ঘরে গিয়ে খাবার নিতে নিতে আকাশকে হাজারটা গালি দিল। তারপর একটা বুদ্ধি পেল আকাশকে শাস্তি দেওয়ার,তাই বুদ্ধিমত তরকারিতে ইচ্ছামত মরিচ মিশিয়ে নিয়ে আকাশকে খেতে দিল।

আকাশ এক মুঠো খাবার মুখে দিয়ে বোঝতে পাড়ল এটা খাওয়ার অযোগ্য…

মেঘলা ভেবেছিল আকাশ খাওয়া বন্ধ করে তাকে বকা দিবে,তাই আগেই সেখান থেকে চলে গেল।দূর থেকে আকাশকে দেখছে,
কিন্তু আকাশ খাবার ছেড়ে উঠার বদলে মেঘলাকে অবাক করে দিয়ে একটু হেসে খেতে শুরু করল নিচ দিকে তাকিয়ে সে একমনে খাচ্ছে।
মেঘলা অবাক হয়ে ভাবছে হচ্ছেটা কি?

আকাশ খাওয়া শেষ করে এদিক ওদিক না তাকিয়ে ঘরে চলে গেল।

মেঘলাঃ আজব ঝাল টা কি কম হয়েছে নাকি?এত সহজে খেল কি করে? কিন্তু আমি তো পুরো বয়াম ভর্তি মরিচ দিয়ে ছিলাম।

আকাশ ঘরে গিয়ে ঝালে অস্থির হয়ে গেল চোখ দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে কিন্তু কাউকে কিছু বলল না সহ্য করে নিল।

রাত ৯ টা বাজে অনুষ্টানের সময় হয়ে এসেছে, বাসার সব মেয়েরা পার্লারে চলে গিয়েছে বাড়ি একদম শোনসান।

আকাশঃ কুর্তি আর পাঞ্জাবি পড়েছে দেখতে বেশ লাগছে তাকে…আকাশ চুল ঠিক করতে করতে নিচে নামল বাসায় তেমন কেউ নেই শুধু বড়রা আছে তাও উপড়ে বাকি সবাই কেউ পার্লারে কেউ বা বাইরে অনুষ্টানের জায়গায় আকাশও সেখানে যেতে চাইল কিন্তু হঠাৎ চোখে পড়ল মেঘলা রান্না ঘরের এক কোণায় বসে আছে।

আকাশ সেখানে গিয়ে বলল কিরে মেঘলা এখানে কিরছিস সাজতে যাস নি…???

মেঘলা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল কাজের মেয়ে অনুষ্টানে যায় কখনো শুনেছেন?

আকাশ রেগে গিয়ে বলল কি হয়েছে?

মেঘলা উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আপনাকে বেশ সুন্দর লাগছে…. ইরা আপি এখুনি চলে আসবে আপনি যান। একসাথে নাচবেন ভাল মানাবে ২ জনকে…

আকাশ এবার গিয়ে মেঘলাকে একটা ধাপ্পড় মারল।

মেঘলাঃ আহ… মারলেন কেন?

আকাশঃ তোর সাথে রাগ করে সারাদিন বাসায় আসলাম না তবুও তুই একবার খোঁজ নিলি না আমি কোথায় আছি কি করছি জানার প্রয়োজন মনে করলি না।দুপুর বেলা একবার ফোন দিলি তারপর আর দিলি না।
তবুও ফিড়ে আসলাম ভেবিছিলাম বোঝবি কেন রাগ করেছি কিন্তু বোঝা তো দূর একটাবার ঘরে গিয়েও জানতেও চাইলি না কি হয়েছে?
বোঝলাম তুই বুঝবি না সারাদিন না খেয়ে থেকে প্রচুর ক্ষুদা পেয়েছিল তাই নিজেই এসে খাবার চাইলাম আর তুই কি খাবার দিয়েছিস নিজেই জানিস।ওটা মুখে তুলার যোগ্য ছিল না কিন্তু তুই দিয়েছিস তাই কষ্ট করে হলেও খেলাম।
আবার এখন তুই আমার সাথে রাগ দেখাচ্ছিস কি মজার না বিষয়টা?

মেঘলাঃআমি কি এসব জানতাম নাকি যে রাগ করেছেন?আর খাবারে ঝালও দিতাম না যদি না আপনি ইরা আপুর সাথে ঢ্লাঢলি করতেন?

আকাশঃ কি করেছি?

মেঘলা নিজের গালে হাত দিয়ে বলল কিছু না…

আকাশঃ ও তুই কষ্ট দিতে পাড়বি আর আমি দিলেই দোষ?

মেঘলাঃ আমি কি করেছি?

আকাশঃ সত্যিই কি কিছু করিস নি?

মেঘলাঃ না করি নি… ঘুমের মধ্যে যদি মেরে থাকি সেটা অন্য ব্যাপার।

আকাশঃআমি একবারো তোর ঘুম নিয়ে কিছু বলেছি?

মেঘলাঃ রাতে তো ফেলে দিতেই চেয়েছিলেন ভোর হওয়ার আগেই ফেলে চলে গেলেন।

আকাশঃ তো কি করা উচত ছিল এক কম্বলের নিচে ২ জন শুয়ে আছি সেটা সবাইকে দেখানো উচিত ছিল বোঝি?

মেঘলাঃ আপনি সেটা দেখাতে পাড়বেন না জানি কারন আপনি আমায় ভালই বাসেন না।

আকাশঃ তুই খুব বাসিস তাই না?

মেঘলাঃ বাসিই তো….

আকাশঃতাহলে নিজের হাতের দিকে তাকা তো…

মেঘলা হাতের দিকে তাকিয়ে বলল মেহেদী তো ঠিকি আছে নষ্ট করি নি তাহলে?

আকাশ হতাশ হয়ে বলল মেঘলা তুই কি আদো আকাশের যোগ্য?

মেঘলা রেগে গিয়ে বলল আমি তো যোগ্য না ইরা যোগ্য যান তার কাছেই যান।এখানে এসেছেন কেন?

আকাশঃযা রেডি হয়ে নে মেঘলা আর ভাল লাগছে না আর তুই না একটু চালাক হওয়ার চেস্টা কর…যদি পাড়িস আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা করিস।
আমাকে না বোঝার জন্য তোকে না কোনদিন অনেক বড় মাসুল দিতে হয় আমি সেটাই চিন্তা করছি ।জানি এখুনো বোঝতে পাড়ছিস না তাই বলে বোঝাচ্ছি তোর হাতে রিং গুলি কোথায় মেঘলা? ব্যাপারটা আমার ভাল লাগে নি বলেই আকাশ সেখান থেকে চলে গেল।

মেঘলা এবার মাথায় হাত দিল,
মেঘলা ভাবতে লাগল,যে কিনা আমার মাটির পুতুল ১০ বছর ধরে যন্ত করে রেখে দিয়েছে আর আমি তার দেওয়া ভালবাসার চিহ্নটুকু কয়েকদিনেই রাখতে পাড়লাম না?নিজেই ছুড়ে ফেলে দিলাম। উল্টে তার সাথেই রাগ দেখালাম মরিচ খাওয়ালাম ছি ছি ছি মেঘলা তকে একটা কেন হাজারটা চড় মারা উচিত।

আকাশ আমার কলিজা দাঁড়াও আমি তোমার আনা সব কিছু দিয়ে সেজে তোমার রাগ ভাংগাব।










রাত ১০ টা অনুষ্টান শুরু হয়ে গেছে ইরারা সবাই চলে এসেছে।কিন্তু অনুষ্টানের ওখানে মেঘলা গেল না তাই আকাশ ঘরে এসে মেঘলাকে খুজতে লাগল।কিন্তু সে কোথাও নেই।

আকাশঃ আজ তোকে একবার পাই কি অবস্থা করব নিজেও জানি না।আমার কথার কোন দাম নেই বলে গেলাম রেডি হতে তানা করে এখন কোথায় উধাও হয়ে গেল?

আকাশ সারাবাড়ি খোঁজে ছাদে গিয়ে দেখল
কিন্তু সেখানেও মেঘলা নেই। আকাশ ছাদ থেকে নিচের দিকে তাকাতেই দেখল মেঘলা নিচে বসে কি যেন করছে।

আকাশঃ এখুনো রেডি হস নি দাঁড়া একবার নিচে নামি আজ তোর হবে….

মেঘলা মাটিতে বসেছিল আকাশ পিছন থেকে বলল তোকে না রেডি হতে বলেছিলাম এখানে কি করছিস তুই?

মেঘলা আকাশের দিকে তাকাতেই আকাশের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল।কারন মেঘলা কেঁদে কেঁদে চোখ মুখের অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে….

আকাশ রাগি লুক নিয়ে বলল কে মারা গেছে…এভাবে মরা কান্না করছিস কেন?

মেঘলা কেঁদে কেঁদে বলল রিংগুলি খোজে পাচ্ছি না কাল এখানে ফেলেছিলাম…

আকাশঃওগুলি এখানে নেই, উঠ বলছি… আকাশ মেঘলাকে টেনে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল তখন মেঘলা বলল কিন্তু আমি তো এখানেই ফেলেছিলাম।

আকাশ রেগে গিয়ে বলল এত দামি আংটি এখুনো এখানে পড়ে থাকবে বলে তোর মনে হয়? এত মাথা মোটা কেন তুই?

আকাশ মেঘলাকে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল লেহেংগা পড়তে।

মেঘলাঃ তাহলে আপনি বাইরে যান…

আকাশঃ যাব না…

মেঘলাঃ আজব তো….

আকাশঃ আমার জিনিস আমি দেখব তুই বাধা দেওয়ার কে?
মেঘলাঃ ছি আপনার একটু ও লজ্জা নেই।

আকাশঃআমার তো নেই আপনার খুব লজ্জা আছে তাই না?তাইতো ওয়াশরুম রেখে, একটা ছেলের রুমে চেঞ্জ করতে চাচ্ছেন যেখানে কিনা সিসি ক্যামেরা আছে।
মাথা মোটা কোথাকার তোকে কি আমি এখানে চেঞ্জ করতে বলেছি ওয়াশরুমে যা।
যতসব তাকে দেখতে আমার বয়েই গেছে।

মেঘলাঃ উফফ আবারো বোকামি করলাম…

আকাশঃ যাবি কি?

মেঘলা লেহেংগার ব্যাগটা নিয়ে এক দৌড়ে চলে গেল।

প্রায় আধা ঘন্টা হয়ে গেল মেঘলা বের হচ্ছে না দেখে আকাশ বলল এই জন্যই মেয়েদের সবাই ন্যাকা বলে।একটা জামা পড়তে এত সময় লাগে? কিরে মেঘলা তুই কি সারাজীবন ওখানেই থাকবি…??

মেঘলাঃ আমি কি করব?ঝামেলা হয়ে গেছে তো…!!!

আকাশঃ কি ঝামেলা?

মেঘলাঃ আপনি চোখ টা একটু বন্ধ করুন আমি আসছি।

আকাশঃউফফ….

মেঘলাঃ না না আমি যাব না আপনি আসুন…

আকাশঃ আচ্ছা দরজা খোল…

মেঘলাঃ চোখ বন্ধ করেছেন তো?

আকাশঃ না করি নি …খুলবি কি…??

মেঘলা খুলল যদিও আকাশ চোখ বন্ধ করেই ছিল তবুও মেঘলা দরজা খুলেই আকাশে চোখ চেপে ধরে বলল চোখ খুলবেন না।

আকাশঃ আচ্ছা বাবা খুলব না বল কি হয়েছে?

মেঘলাঃ আস্তে করে আকাশে হাত তার পিটে রেখে বলল চেইন টা লাগিয়ে দিল।

আকাশঃ যদি ভালভাবে বলতি তাহলে একবারেই লাগিয়ে দিতাম এত কাহিনি করলি তাই এবার আমিও একটু কাহিনি করি (মনে মনে)

আকাশ ইচ্ছা করেই মেঘলার পিটে হাত বুলাতে শুরু করল। আকাশের এমন স্পর্শে মেঘলা বার বার কেঁপে উঠছে আকাশ সেটা অনুভব করছে তবুও সে হাত বুলাচ্ছে…

মেঘলাঃ কি করছেন এসব?

আকাশঃ চোখ বন্ধ করে আছি তাই কিছু দেখতে পাচ্ছি না তাই তো চেন খুজছি…..

মেঘলাঃ আমার কেমন জানি লাগছে…

আকাশ হেসে বলল কেমন লাগছে…?? অস্থির অস্থির লাগছে বোঝি?

মেঘলা আকাশ কে ধাক্কা দিয়ে বলল যান লাগবে না চেন লাগানো…

আকাশ এবার লাগিয়ে দিয়ে বলল এবার তাকাই?

মেঘলাঃ হুম….

আকাশ তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল কারন মেঘলা সেজেগুজে একদম রেডি সে ওয়াশরুমেই সেজে নিয়েছে।

আকাশঃ মাসাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে আমার বউ টাকে…. কিন্তু কিছু একটা মিসিং…. কি মিসিং কি মিসিং হুম বোঝেছি মিষ্টি হাসিটা মিসিং… একটু হাসি দে তো তাহলে পারফেক্ট লাগবে…

মেঘলাঃ আমার রিং গুলির জন্য খারাপ লাগছে😔😔

আকাশ পকেট থেকে রিং ২ টি বের করে মেঘলাকে পড়িয়ে দিল।

মেঘলা অবাক হয়ে বলল এগুলি আপনি কোথায় পেলেন?

আকাশঃ কিনে নিয়েছি…

মেঘলাঃ মানে কি?

আকাশঃ আমাদের মালি রহিম চাচা এগুলি পেয়েছিলেন উনি মা কে দেখিয়েছিলে মা আংটিগুলি রহিম চাচাকে দিয়ে দিয়েছিলেন কারন মা তো চিনে না এগুলি কার।আমি কাল রাতে মেহেদী দেওয়ার সময়েই দেখেছিলাম তোর হাতে রিং নেই তাই রহিম চাচার আংটির কথা জানার পর সাথে সাথে রহিম চাচার কাছে যাই কিন্তু চাচা বলল বিক্রি করে দিয়েছে। তারপর অই দোকানে গিয়ে কিনে এনেছি।

মেঘলা আকাশ কে জড়িয়ে ধরে বলল এত ভালবাসেন আমায়….?? আমি সত্যিই এই ভালবাসার যোগ্য নই।বারবার আপনাকে কষ্ট দেই।

আকাশঃ মেঘলা কিছু করার আগে মাথা টা একটু কাটানোর চেস্টা করিস। নাহলে তুই এমন ভেবে ফেসে যাবি যে বেরোনোর পথ পাবি না।তোর শত্রুর অভাব নেই মেঘলা

মেঘলাঃ আকাশ আছে তো আমার কিসের চিন্তা?

আকাশঃতোর জিনিস আর তোকে সামলে রাখার জন্য আমি সারাজীবন থাকব না মেঘলা। নিজেকে নিজে সামলে রাখার চেষ্টা করিস।

মেঘলাঃ কোথায় যাবেন আপনি?

আকাশঃ হাহ… কাকে দিয়েছি রাজার পাঠ…?? কোথাও না চল এবার….

মেঘলা আকাশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল আকাশ কে ছাড়া মেঘলা এক মুহুর্তও বাঁচবে না।আমি আপনার কিছু হতে দিব না কখনো না…সবসময় আপনাকে আগলে রাখব।

আকাশঃ পাগলি বোঝিস ঠিকি কিন্তু একটু দেড়ি করে।

মেঘলাঃআমি জানি আমি যাই করি আমাকে ভাল রাখার জন্য একটা ছায়া সবসময় আমার পাশে থাকে তাই ইচ্ছা করেই মাথা কাটাই না আর সত্যি বলতে আপনার থাপ্পড় গুলি আমার ভালই লাগে…😋

আকাশঃ মানে কি এই যে বলিস ব্যাথা পেয়েছিস এগুলো কি তাহলে…

মেঘলাঃসত্যি করে বলুন তো একবারো আমাকে জোড়ে মারেন? তাহলে ব্যাথা পাবো কেন? ব্যাথা পেয়েছি বলি যাতে আদর করেন তাই।

আকাশঃ বাপরে এ তো দেখি মিরমিরা শয়তান…

মেঘলাঃ😁😁😁

আকাশ মেঘলার কপালে চুমু খেয়ে বলল আমার লক্ষি বউ। চল এবার যাই




আকাশ আর মেঘলা যখন একসাথে আসছিল সবার চোখ তাদের দিকেই ছিল। সবাই বলছিল চৌধুরী সাহেব আপনার ছোট ছেলের বউ নাকি?মাসআল্লাহ ২ জনকে বেশ মানিয়েছে।

তারপর আকাশ আজ আর কিছু না ভেবে মেঘলাকে ড্যান্স পার্টনার করে পারফরম্যান্স করলো যা আরো স্পষ্ট করে দিল তাদের সম্পর্কের বিষয় টা

হিরাঃ করো আকাশ করো কথায় আছে স্যাকরার টুকটাক কামারের এক ঘা…সব ফল তোমরা পাবে।

সেদিন থেকে বাড়ির সবার মনে সন্দেহ তৈরি হল।
বিয়ে হয়ে গেল দিন যেতে লাগল।যতই দিন যাচ্ছে আকাশের মেঘলার প্রতি ভালবাসা ততই বাড়ছে।মেঘলাও এখন কাউকে তেমন ভয় পায় না সেও মাঝে মাঝেই আকাশের জন্য পছন্দ মত খাবার বানায় আকাশকে নিজের স্বামির মতই যত্ন করে।
কিন্তু আকাশ মেঘলা কেউই বোঝতে পাড়ল না তাদের এমন আচারনের ফলে তাদের ভালবাসার মাঝে আস্তে আস্তে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হচ্ছে।



চলবে…!!
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here