লাভার নাকি ভিলেন পর্ব ২৪+২৫

#লাভার_নাকি_ভিলেন?
#পার্টঃ২৪
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

এতদিন সব ঠিকঠাক থাকলেও কিছুদিন যাবৎ মেঘলার মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।
কিন্তু সেটা পরিবার কিংবা ইরার জন্য না সে নিজেই বদলে গেছে। আর ইরা তো সেই বিয়ের পর আর আসেই নি।আর আকাশের বাড়ির লোকেও কিছু বলে নি।তবুও মেঘলা কিছু অস্বাভাবিক আচারন করছে,

মেঘলা সারাদিন ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে ফোনের দিকে তাকিয়ে একা একাই হাসে।

আকাশ বোঝতে বাকি নেই যে মেঘলা কারো সাথে এসমেস করে কিন্তু আকাশ বোঝতে পাড়লেও মেঘলাকে কিছু বলে না।আকাশের ধারনা নতুন নতুন সোস্যাল মিডিয়া ইউজ করছে তাই এমন করছে।
কিন্তু আকাশ যতই ছাড় দিচ্ছে মেঘলাও তত পেয়ে বসছে এখন সে আকাশকে কিছুটা এড়িয়ে চলতে শুরু করেছে, আকাশ ডাকলেও মেঘলা আকাশের ঘরে যেতে চায় না মোট কথা ফোন ছেড়ে কিছু করার সময় তার কাছে নেই।



আকাশ সেসব মেনে নিয়েছিল কিন্তু রাতে ঘুমানোর আগে মেঘলাকে ফোন দেওয়া আকাশের প্রতিদিনের রুটিন।
প্রতিদিনের মত আজকেও ফোন দিয়েছে।
কিন্তু কল ওয়েটিং…রাত ১২ টা বাজে এখন কোন জরুরী ফোন থাকার কথা না তাও আকাশ ভাবল হয়ত দরকারী ফোন তাই কেটে দিল।প্রায় ১০ মিনিট পর আবার ফোন দিল কিন্তু এখনও কল ওয়েটিং দেখে আকাশের বুকে চিন চিন ব্যাথা শুরু হলো।
১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত সে মেঘলাকে একনাগাড়ে কল করেছে কিন্তু প্রতিবারেই ওয়েটিং পেয়েছে।
এবার আকাশ বোঝতে পেড়েছে কিছু একটা ঘটছে যার ব্যাপারে সে জানে না।

আকাশ মেঘলার ঘরে গিয়ে নক করলো,মেঘলা ভাবল হয়ত কেউ দরকারে এসেছে সে জিজ্ঞাস করলো কে…???
আকাশ কথা বলল না।
মেঘলা দরজা খুলতেই আকাশ ঘরে ঢুকে পড়ল…
আকাশের চোখ ২ টি লাল হয়ে আছে দেখে বোঝায় যাচ্ছে সে খুব রেগে আছে।

আকাশকে দেখে মেঘলা ভয় পেয়ে গেল। মেঘলা বোঝল তার কপালে দুঃখ আছে, তাড়াতাড়ি ফোনটা লুকিয়ে ফেলল…

কিন্তু আকাশ মেঘলাকে কিছু না বলে বিছানায় বসে পড়ল আর মাথা নিচু করে কি জানি ভাবতে লাগল।

থমকে যাওয়া আকাশ ঝড়ের পুবার্ভাস ভেবেই মেঘলার গলা শুকিয়ে গেল।
মেঘলা কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু ভয়ে কথা জড়িয়ে যাচ্ছে কারন সে জানে এত রাতে আকাশ এমনি এমনি তার ঘরে আসে নি এখন নিশ্চুই তাকে মার খেতে হবে।
তবুও সাহস করে বলল এ এ এ এত রাতে আপ… আপনি এখানে.??

আকাশ মুখ তুলে মেঘলার দিকে তাকাল তারপর উঠে দাঁড়িয়ে মেঘলার কপালে একটা চুমু খেল মেঘলা অবাক হয়ে গেল….

আকাশ মেঘলার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল কখনো এমন কিছু করিস না যাতে কাউকে ভয় পেতে হয়।বলেই আকাশ চলে যেতে লাগল আর বলল অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড় জেগে থাকলে শরীর খারাপ হবে।

আকাশ যে এতক্ষন ধরে ফোন দিয়েছে মেঘলা তো সেটা দেখেছিল কিন্তু আকাশ কোন রিয়েক্ট করল না দেখে মেঘলা আকাশ থেকে পড়ল।সে নিশ্চিত ছিল আকাশ ফোন চেক করবে তারপর মারবে কিন্তু সেসব কিছু না করে উল্টে আদর করে চলে গেল।

আকাশ ঘরে এসে ভাবছে এই নিষ্পাপ চেহেরা কখনো কোন অন্যায় করতে পাড়ে আমি বিশ্বাস করি না কিন্তু ওর আমতা আমতা করা স্পষ্ট প্রমান করছিল ও কিছু অন্যায় করেছে তাই ভয় পাচ্ছে। ও ভয় পাচ্ছে এটা বোঝার পরেও আমি কি করে কিছু বলি?ওকে কিছু জিজ্ঞাস করা মানে ওকে সন্দেহ করা আর আমি ওকে সন্দেহ করছি এর চেয়ে বেশি অপমান আর কি হতে পাড়ে? তাই জিজ্ঞাস করতে চেয়েও কিছু বলতে পাড়লাম না কিন্তু মন যে কিছুতেই মানছে না…কার সাথে এতক্ষন কথা বলছিল না জানতে পাড়লে ঘুমাব কি করে? কিন্তু ওকে আমি সন্দেহ করছি এটা জানলে ও কস্ট পাবে তার চেয়ে জিজ্ঞাস না করাই ভাল।এমন তো হতেই পাড়ে কোন বন্ধুর সাথে কথা বলছিল।

আকাশ নিজেই নিজেকে শান্তনা দিয়ে শুয়ে পড়ল।




পরদিন সকালে মেঘলা কলেজে গিয়ে দেখল মাঠে লোকজনের ভীড়….
কি হচ্ছে জানার আগ্রহ নিয়ে মেঘলা এগিয়ে গেল গিয়ে যা দেখল তাতে নিজেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পাড়ছে না কারন আকাশ আর নাবিল মিলে সেই ছেলেটাকে মারছে যার সাথে মেঘলা সারারাত কথা বলেছিল।

মেঘলাঃ অবাক কান্ড আকাশ ভাই তো আমার ফোন ধরে নি তাহলে কি করে জানলো আমি এই ছেলেটার সাথেই কথা বলেছি……

আকাশ আর নাবিল ছেলেটাকে মারতে মারতে অবস্থা খারাপ করে দিয়েছে ছেলেটার নাক মুখ থেকে রক্ত পড়ছে,

মেঘলাঃ আমার জন্য কেউ এভাবে মার খাচ্ছে…??? না না এটা হতে পাড়ে না।আমার ওকে বাঁচানো উচিত।

মেঘলা দৌড়ে গিয়ে আকাশকে ফিড়ানোর চেস্টা করতে লাগল।

মেঘলাঃ ভাইয়া ছেড়ে দিন প্লিজ ওর কোন দোষ নেই। মেঘলা আকাশকে বাঁধা দিচ্ছে দেখে নাবিল অবাক হল।

নাবিল মেঘলাকে বলল কি করছো মেঘলা তুমি এখানে কেন এসেছো ক্লাসে যাও।

মেঘলা কিছু না শুনে আকাশ কে টেনে ধরল আকাশ মার থামিয়ে একটু সরে গিয়ে দাঁড়াল।

মেঘলাঃ যাক বাবা আটকাতে পেড়েছি…. ভেবে মনে মনে শান্তি পেল।

নাবিলঃ কি করব আকাশ ছেড়ে দিব।

আকাশ মেঘলাকে টেনে এনে সবার সামনেই জড়িয়ে ধরল।মেঘার মুখ নিজের বুকে চেপে ধরে বলল এমনভাবে মারবি যেন কোনদিন মেয়েদের দিকে তাকানোর সাহস না পায়….

নাবিলঃ কিন্তু মেঘলা….

আকাশঃ হা হা হা তুই ও কি বোকা হয়ে গেলি নাকি…বাচ্চা মেয়ে রক্ত দেখে ভয় পেয়েছে বলে তুই ও ভয় পাচ্ছিস?চিন্তা করিস না মেঘলা এখন আর মাথা ঘুরাতে পাড়বে তুই মার।

নাবিল মারতে লাগল…

মেঘলা ছটফট করছে আর বারবার বলছে ছাড়ুন আমাকে…প্লিজ আর মারবে না।

মেঘলা যতই ছটফট করছে আকাশ ততই চেপে ধরছে মেঘলাকে….

কিছুক্ষন পর আকাশ বলল হয়েছে নাবিল… এবার এটাকে নিয়ে যা।
নাবিল কয়েকটা ছেলেকে দিয়ে ওই ছেলেটাকে পাটিয়ে দিল।

আকাশ এবার মেঘলাকে ছেড়ে বলল এবার বল তোর কি সমস্যা? বাধা দিলি কেন?তুই কি চিনিস ছেলেটাকে?

মেঘলা অবাক হয়ে বলল মানে কি?

নাবিলঃ ঠিকি তো ও আজ একটা মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে তাই আমরা মারছিলাম কিন্তু তুমি হঠাৎ বাঁধা দিলে কেন?

মেঘলাঃ তারমানে ভাইয়া কিছু জানে না। আর জানবেই বা কি করে এটা তো কারোর এই জানার কথা না।কেবল কয়েক দিন হল কথা বলি।মেঘলা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কিছু বলছে না।

আকাশঃ তোর কি শরির খারাপ লাগছে? পানি খাবি?

মেঘলাঃ…..

আকাশ নাবিলকে বলল নাবিল যা তো একটা আইসক্রিম নিয়ে আয়……

নাবিল চলে গেল।

আকাশঃ জানিস মেঘলা কাউকে একবার সুযোগ দেওয়া উচিত,২য় বার ক্ষমা করা যায়,৩য় বার অনুরোধ করা যায় কিন্তু তারপরে আর মানা যায় না….

মেঘলাঃ কিছুই বোঝল না….তার মনে খটকা লাগছে কিন্তু কি হচ্ছে বোঝতে পারল না।

নাবিল আসার পর আকাশ মেঘলার হাতে আইস্ক্রিম টা হাতে দিয়ে বলল খেতে খেতে ক্লাসে যা….

মেঘলা যেতে যেতে ভাবছে ভাইয়া কি আমাকে ওয়ার্নিং দিল নাকি এটা আমার মনের ভুল….

নাবিল আকাশ কে জিজ্ঞাস করলো এর আগেও তো ছেলেটা অনেক মেয়েদের সাথে এমন করেছে তখন তো মারিস নি আজ হটাৎ মারলি কেন?

আকাশঃ আমি সমাজসেবী নই তাই কে কার সাথে কি করছে সেটা আমার দেখার বিষয় নয় কিন্তু এখন তো আমার কলিজায় হাত দিয়েছে তাই মেরেছি।

নাবিলঃ বোঝলাম না…

আকাশঃ আমি কখনো মেঘলাকে কোন সীমায় সীমাবদ্ধ করে রাখি নি নিজের স্বাধীনমত চলতে দিয়েছি, কিন্তু কাল রাতে প্রথমবার মেঘলার ফেইসবুক চেক করলাম

নাবিলঃ ওর ফেসবুকে তুই ঢুকলি কি করে?

আকাশঃ পাসওয়ার্ড আমার জানাই ছিল কারন একাউন্ট টা আমিই খুলে দিয়েছিলাম।

নাবিলঃ আচ্ছা তারপর কি হল বল…

আকাশঃএকাউন্টে লগ ইন করার সাথে সাথেই মেজাজ খারাপ হয়ে গিয়েছিল কারন মেঘলার প্রফাইল পিক কেমন বাজে ভংগিতে তুলা আর তাতে অনেক ছেলেদের কমেন্ট তারপর এসমেস চেক করে দেখলাম অনেক ছেলেদের সাথেই সে কথা বলে আর এই ছেলেটার সাথে মেঘলা অনেক বেশি এসমেস করে।

নাবিল অবাক হয়ে বলল তাহলে মেঘলাকে মিথ্যা বল্লি কেন? বল্লি না কেন যে ওর জন্যই এসব হচ্ছে।

আকাশঃ কি যে বলিস না নাবিল… নিজের প্রেমিকাকে সন্দেহ করছি তার জন্য এর চেয়ে বেশি অপমান আর কি হতে পাড়ে? মেঘলাকে আমি এতটা অপমান করতে পাড়ব নারে।

নাবিলঃ না বল্লে বোঝবে কি করে?

আকাশঃ বোঝার হলে এমনি বোঝবে….

নাবিলঃ যদি না বোঝে…???না বোঝে যদি এক ভুল বারবার করে।

আকাশঃ করুক ১ বার করবে ২বার করবে ৩ বার পর্যন্ত সুযোগ দিব……

নাবিলঃ তুই সত্যিই অদ্ভুত তোর জায়গায় আমি হলে এমন মেয়েকে সাথে সাথেই ছেড়ে দিতাম।প্রেমিক থাকতেও অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলে এটা কেমন মেয়ে?

আকাশ নাবিলের কলার টেনে বলল মেঘলার ব্যাপারে একটা বাজে কথা বল্লে জিভ টেনে ছিড়ে নিব বোঝেছিস।

নাবিলঃ ধুর ছাড়ত… দেখলাম তুই সত্যিই ভালবাসিস নাকি? মেঘলা যে কেমন মেয়ে সেটা তো আমি জানিই ওর মত মেয়ে হয়না…… নতুন নতুন ফেসবুক চালাচ্ছে তো তাই এমন করছে তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।

আকাশঃ মেঘলা কেন এত বোকা বোকা বলত দেখ এমন ছবি কেউ ফেসবুকে দেয়….??

নাবিলঃ হা হা হা…. ঠিকি বলেছিস মেঘলা আসলেই বোকা তাই তো বোঝে নি কি ছেলের পাল্লায় পড়েছে….!!!

আকাশঃ আমি তো চিন্তায় আছি ও যেভাবে আমাকে হার্ট করছে কতক্ষন তা সহ্য করতে পাড়ব…যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে একদম গা ভাসিয়ে দিয়েছে…

।#লাভার_নাকি_ভিলেন?
#পার্টঃ25
#লেখিকাঃ Snigda Hossain Mona

কলেজ থেকে বাসায় এসে মেঘলা ফ্রেশ হয়ে ফোন নিয়ে বসল কিন্তু ফোন নিয়ে দেখল তার ফেসবুক পুরো ওলট পালট হয়ে গেছে প্রোফাইল পিক বদলে গেছে কমেন্টে সবাইকে গালি দেওয়া হয়েছে এসমেস এ প্রতিটা ছেলেকে তার একাউন্ট থেকে অকথ্য ভাষার এসমেস করা হয়েছে। কয়েকজন কে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
কলেজের ছেলেগুলিকে হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এবার মেঘলা বোঝল আকাশ ওই ছেলেটাকে কেন মেরেছিল।তারমানে আকাশ কালকেই আমার ফেসবুক চেক করেছিল।
মেঘলা রেগে গেল রাগে আকাশের ঘরে গেল।

আকাশ স্বাভাবিকভাবেই বলল কিরে মেঘলা কিছু বলবি?

মেঘলাঃ আপনি এত অসভ্য কেন?

আকাশ হেসে বলল তোকে কামড়ে দিয়েছি নাকি?

মেঘলাঃ ফাযলামি বাদ দিন আমার ফেবু তে কেন ঢুকছিলেন? জানেন না ফেসবুক পার্সনাল জিনিস।না বলে কেন ঢুকলেন?সবাইকে বকা আপনি দিয়েছেন কিন্তু সবাই তো ভাবল আমি দিয়েছি।এখন কেউ আর আমার সাথে কথা বলবে না।আমার সব ভাল ভাল ছবি ডিলিট করে দিয়েছেন।এসব কেন করলেন?

আকাশ অবাক হয়ে বলল তুই আমার কাছে কয়ফত চাইছিস তাও ফেসবুকের জন্য?

মেঘলাঃ চাইব না কেন আপনি কে শুনি?

আকাশঃ কিরে বুক কাঁপছে না আমার সাথে এভাবে কথা বলতে?

মেঘলাঃ না কাঁপছে না মিথ্যা বলছি নাকি? অসভ্য ছেলে কোথাকার লাগবে না আপনার একাউন্ট আজকেই আমি নতুন একাউন্ট খুলব।

আকাশঃ ধর্য্যের সীমা পেড়িয়ে যাচ্ছে মেঘলা আর কন্ট্রোল করতে পাড়ব না।এখন যা এখান থেকে…না হলে মার খাবি।

মেঘলাঃ হুম যাচ্ছি একেবারেই চলে যাচ্ছি আপনার জীবন থেকেই চলে যাচ্ছি আমি আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা…

আকাশ বসে ছিল দাঁড়িয়ে বলল কি….??? কি বল্লি তুই?আবার বল?

মেঘলাঃ আমি আপনার সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইনা…

কথা বলতে দেড়ি হল কিন্তু আকাশের থাপ্পড় মারতে দেড়ি হল না

মেঘলা তাল সামলাতে না পেড়ে পড়ে গেল আর বলে উঠল আহ…. এত জোরে মারলেন?

এই প্রথম আকাশ মেঘলাকে জোরে থাপ্পড় মারল।গালে আংগুলের ছাপ পড়ে গেছে

আকাশ এসে মেঘলাকে তুলে আলতো করে আদর করে বলল কি হয়েছে বল না…?? কেউ কিছু বলেছে?আগের বারের মত ভুল বোঝিছিস?বল কি হয়েছে আমি সব মিটিয়ে দিব। বিশ্বাস কর আমি এমন কিছু করি নি যাতে তোর খারাপ লাগতে পাড়ে… বল না কি হয়েছে?কিরে চুপ করে আছিস কেন বল।

মেঘলাঃ না কেউ কিছু বলে নি আর কিছু ঘটেও নি।

আকাশঃ তাহলে গাল ফুলিয়েছিস কেন???

মেঘলাঃ আমি স্বাধীনতা চাই।

আকাশঃ মেঘলা আমি তোকে স্বাধীনতা দেই নি?

মেঘলাঃ এমন স্বাধীনতা না আমি সবার মত ঘুরতে চাই বেরাতে চাই সবার সাথে কথা বলতে চাই….আপনি আমায় সাজতে দেন না বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যেতে দেন না।ফেসবুকে ছবি দিতেও দেন না।

আকাশ হেসে বলল আহ পাগলিরব… এই জন্য ব্রেকাপ করতে হয়?বোকা কোথাকার…. আচ্ছা যা যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই থাকিস।আমি কিছু বলব না।বাধাও দিব না।কবে যে তুই বড় হবি কে জানে…






এরপর আকাশ আর কখনো মেঘলাকে কিছু বলে না।মেঘলার যা মন চায় তাই করতে দেয়।মেঘলা ছেলেদের সাথে কথা বলে এসমেস করে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে অনেক ছেলেরা কমেন্ট করে আকাশ সব দেখেও কিছু বলে না।
আকাশের খারাপ লাগলেও সহ্য করে।
কিন্তু আস্তে আস্তে আকাশের মন মেজাজও দিন দিন খারাপ হচ্ছে কারন মেঘলা আকাশকে এখন আর একদমেই সময় দেয় না আকাশ কোথায় কি করছে সেসব নিয়ে মেঘলার কোন চিন্তায় নেই।আকাশ রাতে ফোন দিলে মেঘলা বলে তার ঘুম পেয়েছে কথা বলতে পাড়বে না কিন্তু ফেসবুকে ঠিকি এক্টিভ থাকে সারারাত।





আকাশ একদিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল,রাজনৈতিক ব্যাপারে কিসের যেন একটা মিটিং আছে রেস্টুরেন্টে। সে কথা বলতে বলতেই রেস্টুরেন্ট এ ঢুকল।
কিন্তু হঠাৎ একটা কাপল টেবিলে চোখ পড়তেই আকাশের চোখ ছানাভরা হয়ে গেল।
কারন ছেলেটার সাথে যে মেয়ে পার্টনার বসে আছে সেটা আর কেউ না এটা তার প্রেমিকা মেঘলা।যাকে আকাশ নিজের চেয়েও বেশি ভরসা করে সেই আজ একটা ছেলের হাত ধরে বসে মজা করছে হেসে হেসে কথা বলচগে সে,কিন্তু সাথে বসা ছেলেটাকে আকাশ চিনে না।

মেঘলা ছেলেটার হাত ধরে বসে আছে দেখে আকাশ মনে মনে বলল আজ তুই সব সীমা পেড়িয়ে গেছিস মেঘলা…আর ক্ষমা করতে পারবনা আর এটা করার পর ক্ষমা করার প্রশ্নই উঠে না।

আকাশ এগিয়ে গিয়ে বলল এক রাতের রেট কত তোর …??কাস্টমারের কাছ থেকে এডভান্স নিস নাকি রাত কাটানোর পর কোনটা?

আচমকা এমন কুৎসিত প্রশ্নে মেঘলা অবাক হয়ে
আকাশের দিকে তাকাল।
মেঘলা এতক্ষন তার নতুন বিএফ এর সাথে রেস্টুরেন্ট এ বসে কথা বলছিল তখনি সেখানে আকাশের এন্ট্রি হয়েছে।আকাশ কে দেখে মেঘলার বুক ধুকপুক করছে কারন সে জানে তার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে চলছে।ভয়ে ভয়ে সে উঠে দাঁড়াল ভয়ে মেঘলার গলা শুকিয়ে গেছে।

আকাশ কে দেখতে অনেকটা আহত হিংস্র বাঘের মত লাগছে।চোখ দুটি অসম্ভব লাল হয়ে আছে, শক্ত করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আকাশ, মেঘলার কাছে এসে বলল
না মানে রেট টা জানলে আমার কয়েকটা বন্ধুকেও রাতে পাটাতাম তোর কাছে। তোর ত একজন ২ জনে হয় না তাই।আর তুই যেহেতু দেখতে ভাল তাই ওরাও মজা পাবে আর তোর ইনকামটাও ভাল হবে।

আকাশের কথা শুনে মেঘলার প্রায় কাঁদোকাঁদো অবস্থা হয়ে গেছে।সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ থেকে টুপটাপ পানি পড়ছে তার।
মেঘলাকে কাঁদিয়ে এবার আকাশ মেঘলাকে ছেড়ে তার পাশে বসে থাকা ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বলল তা আপনি ওর কত নাম্বার কাস্টমার জানতে পাড়ি? আসলে আপনাকে দেখে তো ভদ্রলোক মনে হচ্ছে তা এত হোটেল থাকতে এখানে কেনো?দেশে কি মেয়ের অভাব যে এটার পিছনেই পড়তে হল?

ছেলেটি অবাক হয়ে বলল আপনি কে? আর ওকে এভাবে বলছেন কেন?
ছেলেটি মেঘলাকে প্রশ্ন করল কি ব্যাপার মেঘলা তুমি কিছু বলছো না কেন? কে উনি?

মেঘলার গলা শুকিয়ে গেছে তার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে তাই সে আমতা আমতা করে বলল উনি আ আ আ আমার এএএ…..

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ মেঘলার গালে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। তাল সামলাতে না পেড়ে মেঘলা মাটিতে পড়ে গেল। আকাশ থাপ্পড় টা এত জোরে মেরেছে যে মেঘলার ঠোঁট ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।
কিন্তু আকাশের সেদিকে লক্ষ নেই সে গিয়ে মেঘলার চুলের মুটি ধরে টেনে তুলে বলল কি বলতে চেয়েছিলি? আমি তোর এক্স তাই না?
এই একটা কথা কান খুলে চুনে রাখ তুই আমার সাথে ব্রকাপ করলেও আমি করি নি কখনো করবোও না তাই আমি কখনো তর এক্স হব না বোঝেছিস? মেঘলার চুল ধরে রেখেই
আকাশ ছেলেটির দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল এটা আমার জিএফ ছিল এখনো আছে আর ভবিষ্যতেও থাকবে বোঝেছিস?তাই তোকে যদি আর কখনো মেঘলার দাড়েকাছে দেখি তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে বলে দিলাম।

ছেলেটি হতবাক হয়ে বলল এসবের মানে কি মেঘলা? আর ভাই আপনি যেই হন শুনুন আমি ওর সাথে গত ৭ দিন থেকে রিলেশানসীপে আছি। তাই আপনার সাথে যাই থাকুক সেটা অতীত।

আকাশঃ সে জন্যই তো বল্লাম কত নাম্বার তুই?আর হয়ত জানিস না মেঘলা আমাদের বাড়িতেই বড় হয়েছে এখনো সেখানেই থাকে আর আজ থেকে আমার রুমে থাকবে আর কিছু বলতে হবে?

ছেলেটিঃ মেঘলা তুমি কিছু বলছো না কেন?

মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলল স্যার ছাড়ুন আমাকে। আমি আপনার সাথে থাকতে চাই না উনার সাথে থাকতে চাই।

আকাশঃ তাই নাকি এতদিন পর তাহলে স্যার বলছিস?

মেঘলাঃ বাড়ির আশ্রিতার বাড়ির মালিককে যা বলা উচিত তাই ত বল্লাম।

আকাশঃ গুড একবার বাসায় চল তারপর বোঝাচ্ছি আমি তোর কি আর তুই কার সাথে থাকবি কার সাথে থাকবি না?

ছেলেটিঃ আপনার সাথে ওর যতই রিলেশান থাকুক না কেন ও এখন আর আপনার সাথে থাকতে চায় না তাই আপনি একটা মেয়েকে এভাবে হেরেসমেন্ট করতে পাড়েন না আর আমাদের প্রেমেও বাঁধা দিতে পাড়েন না।

আকাশ ছেলেটিকে বলল মনে হচ্ছে তুই এই এলাকার না।এখানকার হলে আকাশের গার্লফ্রেন্ড এর দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পেতি না।যাইহোক কোথায় থাকিস জানি না আর জানতেও চাই না। কিন্তু এটা শুনে রাখ মেঘলার পাশে তোকে যদি আর একবার দেখি তোকে এমন জায়গায় রেখে আসব যেখান থেকে আর কোনদিন ফিরে আসতে পাড়বি না সেদিনেই তোর শেষ দিন হবে বোঝেছিস? আকাশ কি সেটা এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখিস তাহলেই বোঝতে পাড়বি। ভালবাবে বলছি ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যা।

কথাগুলি শেষ করে মেঘলাকে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে আকাশ।
আর হাঁটতে হাঁটতে বলল আমি বলেছিলাম অন্যছেলের সাথে মিশবি না কথা বলবি না আমার এসব সহ্য হয় না। তবুও তুই কথা বলতে চাস তাই আমি মেনে নিয়েছি কিন্তু এখন তুই কথা তো কথা একদম প্রেম করে শুরু করে দিয়েছিস।আর কত সহ্য করব আমি?আজ এর সাথে ত কাল তার সাথে কিভাবে পাড়িস রে?
রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে আমার বাবা মা তোকে এত বড় করে তুলেছে। আমি তোকে এত ভালবেসেছি আজ সব কিছুই ভুলে গেছিস তুই।প্রতিদিন কোন না কোন ছেলের সাথে ফস্টিনস্টি করিস। কেন রে আমি কোনদিক দিয়ে খারাপ? আর যদি খারাপই হই তাহলে আগে ভালবেসেছিলি কেন? প্রেম করেছিলি কেন? আমাকে নিয়ে খেলা করতে তাই না?আজ সব খেলা শেষ করব আমি বাসায় চল বোঝাব তোকে।
অনেক সুযোগ দিয়েছিলাম তুই বোঝলি না।

এদিকে এত জোরে হাত ধরায় মেঘলার ব্যাথা লাগছে কিন্তু আকাশের তা চোখে পড়ছে না।

মেঘলাঃ আহ আমার লাগছে ছাড়ুন,ছাড়ুন বলছি।প্লিজ ছাড়ুন ব্যাথা পাচ্ছি।একমনে আকুতি মিনতি করছে মেঘলা।

কিন্তু আকাশের কানে কিছুই ঢুকছে না সে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘলাকে…..

বাসায় ঢুকতেই বিপাশার চোখে পড়ল বিপাশা দেখল আকাশ মেঘলাকে টানতে টানতে নিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছে সে বাধা দিল না বরং উপভোগ করছে বিষয় টা।

বিপাশাঃ আজ তোমাকে কে বাঁচাবে মেঘলা? তোমার যে কি অবস্থা হবে ভাবতেই তো ভয় লাগছে আমার আকাশের রাগ তো কখনো দেখো নি আজ দেখবে।

আকাশ মেঘলাকে ঘরে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিল আর দরজা লক করে দিল




চলবে…!!!


চলবে….!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here