শাওয়াম পর্ব -০৩

#শাওয়াম
পর্ব ৩
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

::অমর একুশে বইমেলা ২০২১ এ আমার প্রথম বই “আবেদিতা”প্রকাশিত হবে।কেউ অর্ডার করতে চাইলে ইনবক্স করবেন।::

গেল বুধবার নানুবাড়ি থেকে বাড়ি ফিরেছে শাওয়াম।মা বাবার সাথে অনেকদিন পর মন খুলে বেড়িয়েছে।এর মধ্যে সে প্রায় ভুলেই গিয়েছে সাদাফের ঐ দিনের কর্মকান্ড।

আজ বৃহস্পতিবার।আগামীকাল শুক্রবার।আজকে অন্তত স্কুল ফাঁকি দিতে চাইছে না শাওয়াম।তহমিনা বাড়িতেই আছেন।একেবারে শনিবার থেকেই জয়েন করবেন অফিসে।শাওয়ামের বাবা রাশেদ সরদার অফিসে গিয়েছেন।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াতে ব্যস্ত শাওয়াম।কাঁধে স্কুল ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।তহমিনা বিছানায় বসে বসে শুকনো কাপড় ভাজ করছে।মাঝে মাঝে কাজের ফাঁকে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আলাপ করছে।সকাল থেকেই তহমিনার মনটা কেমন খুতখুত করছে।গতকাল রাতে একটা ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।তার সংসারে বড় একটা বিপদ ঘটতে চলেছে।সকাল থেকে এজন্য কাজে মন বসাতে পারছেন না তহমিনা।এই তো আলু ভাজা করতে গিয়ে লবণ দিতেও ভুলে গিয়েছিল।আবার ফ্রিজ থেকে ডিম বের করার সময় হাত থেকে একটা ডিম ফ্লোরে পড়ে ফেটে গিয়েছে।সব মিলিয়ে কেমন উদাসীন হয়ে আছেন তহমিনা।

আয়নায় মায়ের অন্যমনস্কতা শাওয়ামের চোখ এড়ালো না।দুটো ক্লিপ দিয়ে ডান পাশের সিথির দিকের ছোট ছোট চুলগুলো আটকে দিয়ে পিছু ঘুরলো শাওয়াম।ব্যাগ কাঁধে মায়ের দিকে এগিয়ে গেলো।উৎকণ্ঠার সাথে ডাকতে লাগল,

‘মা,ও মা।’

মেয়ের ডাকে যেন বাস্তবে ফিরে এলেন তহমিনা।ইষৎ কেঁপে উঠে মেয়ের দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বললেন,

‘কিছু বলবি?’

‘তোমার কি হয়েছে?এত উদাসীন হয়ে আছো কেন সকাল থেকে?’

‘কিছু না মা।’

‘আমি স্কুলের জন্য বের হব।তুমি আমাকে এগিয়ে দেবে না?’

‘আজ স্কুলে না গেলে হয়না মা?’

মায়ের কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলো না শাওয়াম।যেই মা তাকে এক দিন ও স্কুল ফাঁকি দিতে দেয়না আজ তাকে স্কুলে যেতে বারণ করছে!শাওয়াম উত্তেজিত হয়ে বললো,

‘মা,সত্যি করে বলো তোমার কি হয়েছে?তুমি তো আমাকে কোন কস্মিনকালে স্কুলে যেতে নিষেধ করোনা!তাহলে?’

‘আমার মনটা কেমন ভালো ঠেকছে না মা।আমার একটা মাত্র কলিজার টুকরো তুই।তোকে নিয়ে এমনিতেই চিন্তায় থাকি।আজ মনটা খালি কু ডাকছে।’

‘ওসব কিছুনা মা।এই মাসের শেষের দিকে বার্ষিক পরীক্ষার ডেট দেবে।এখন ক্লাস মিস করব না মা।এমনিতেই একদিন মিস হয়ে গেছে।আজ যেতেই হবে।’

‘কিন্তু?’

‘মা আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।তুমি বরং থাকো।আমি চললাম।’

‘দাঁড়া!’

শাওয়াম ব্যাগ কাঁধে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।এক দৌড়ে সিঁড়িঘরের দিকে চলে গেল।তহমিনা হাতের থেকে কাপড় ফেলে মেয়ের পিছু পিছু ছুটলেন।নিচে গিয়ে দেখেন শাওয়াম গেট খুলছে।তহমিনা এগিয়ে গিয়ে গেট খুলে দিলেন।কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে মোড়ের কাছে দাঁড়ালেন।এখানে দাঁড়ালেই রিকশা পাওয়া যাবে।শাওয়াম তহমিনা দুজনেই রিকশার অপেক্ষায় আছে।একটু পর একটা রিকশার দেখা মিললো।ভাড়া ঠিক করে তহমিনা শাওয়ামের কপালে চুমু দিয়ে রিকশায় তুলে দিলেন।

রিকশা ছুটে চললো আপন গতিতে।পথের কাছে দাড়িয়ে একনজরে রিকশাটার দিকে তাকিয়ে আছে তহমিনা।বুকের ভেতর কেমন খচখচ করছে।মনে মনে তার একটাই চাওয়া সুস্থভাবে তার কোলের জিনিসটা যেন কোলেই ফিরে আসে।দেখতে দেখতে রিকশা অনেক দূর চলে গেছে।আর দেখা যাচ্ছে না তার একটু অংশ ও।তহমিনার কপালে চিন্তার ভাজ।আজ এত কেন দুশ্চিন্তা হচ্ছে তার!দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ি ফেরার জন্য পিছু ঘুরছেন তহমিনা।

স্কুল গেটে পৌছাতেই রিকশা থেকে নেমে পড়লো শাওয়াম।ভাড়া পরিশোধ করে গেটের দিকে এগুতে যাবে তার আগেই পথে বাধা।শাওয়ামের পথ আটকে দাঁড়িয়েছে সাদাফ।মাথা তুলে তাকাতেই সাদাফকে দেখে চমকে গেল শাওয়াম।সেদিনের ঘটনাটা যেন আবার মনের দরজায় কড়া নাড়লো।ভয়ে কিছুটা আঁতকে উঠলো সে।সাদাফের মুখে সেই বিশ্রী হাসি।যেটা দেখে শাওয়ামের ভেতরটা আরো গুলিয়ে যাচ্ছে।

সাদাফ লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাওয়ামের দিকে।চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে শাওয়াম।মাথায় ক্লিপ।পরনে সালোয়ার কামিজ আর ক্রসবেল্ট।স্কুল ড্রেস।শাওয়ামকে মাথা থেকে পা অবধি পর্যবেক্ষণ করে যেন নিজের নোংরা মনের নোংরা চাহিদা আপাতত চোখ দিয়েই মেটাচ্ছে সাদাফ।শাওয়াম পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আবার সাদাফ পথ আগলে দাড়ায়।শাওয়াম অসহায় চাহনিতে সাদাফের দিকে তাকালো।নিজেকে নরম করলে চলবে না।নিজেকে শক্ত করে বেশ কড়া কন্ঠেই শাওয়াম বললো,

‘এগুলো কোন ধরনের অভদ্রতা সাদাফ ভাই?আমার পথ আগলে দাড়িয়ে আছেন কেন?সরুন বলছি।আমি কিন্ত চেঁচামেচি করে সবাইকে ডাকব।’

‘আরিব্বাস!আজ দেখি বুলবুল পাখি আগেই মুখের বুলি ফোটাতে শুরু করেছে।’

‘আপনি কি সরবেন?নাকি আমি চেচাব?’

‘চেচাবি?চেচা।তোর গলায় যত জোর আছে সব দিয়ে চেচা।কিন্তু জানিস শাওয়াম লসটা তোরই হবে।স্কুল থেকেও তোকে বের করে দেবে।’

সাদাফের কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো শাওয়াম।তাকে স্কুল থেকে বের করে দেবে মানে!সাদাফের দিকে তাকিয়ে তার আচরণ বোঝার বৃথা চেষ্টা করছে সে।সাদাফের চোখে বিন্দু মাত্র ভয় নেই।বরং খুব কনফিডেন্সের সাথে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।যেটা শাওয়ামকে আরো চিন্তায় ফেললো।শাওয়াম কাপা কাপা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

‘আমাকে বের করে দেবে মানে!আমি কি করেছি হ্যাঁ?’

‘এই তোদের স্কুলে না একটা অদ্ভুত নিয়ম আছে ১৮ বছরের আগে কোন ছাত্রীর বিয়ে হলে সে আর এখানে পড়তে পারেনা।তাকে টিসি দিয়ে দেওয়া হয়।’

সাদাফের কথা শুনে আরেক দফা অবাক হলো শাওয়াম।এখানে বিয়ের প্রশ্ন কেন আসছে?শাওয়াম প্রশ্নোবোধক চাহনি নিয়ে সাদাফের দিকে তাকালো।তাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তার আগেই সাদাফ বলে উঠলো,

‘তোকে একটা জিনিস দেখাব শাওয়াম।একটা বিগ সারপ্রাইজ!’

শাওয়াম তোতলাতে তোতলাতে বললো,

‘কককি দেখাববেন আপনি?’

‘দাড়া।অপেক্ষা কর।অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয় জানিস না?’

সাদাফ বলেই প্যান্টের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করলো।কাগজের ভাজ খুলে শাওয়ামের সামনে মেলে ধরলো।মুখে বিশ্রি হাসি রেখে বললো,

‘এই যে তোর সারপ্রাইজ!’

কাগজটা শাওয়ামের খুব চেনা লাগছে।এটা তো সেই কাগজ যেটাতে সে সাইন করেছিল।স্ট্যাম্প দেখে বুঝতে অসুবিধা হয়নি।এক কোনে তার সেই সাইনটাও আছে।কিন্তু কথা হলো কাগজটা সম্পূর্ণ সাদা নেই।পুরো কাগজটা ছোট ছোট অক্ষরে অনেক কিছুই লেখা।তার নামের বিপরীত পাশে সাদাফের নাম ও লেখা।সবচেয়ে বড় কথা উপরে একটা ছোট্ট শিরোনাম “কাবিননামা”।শিরোনাম দেখেই শাওয়াম আঁতকে উঠেছে।কাঁপতে শুরু করেছে থরথর করে।

শাওয়ামের কাঁপুনি দেখে সাদাফের মনে পৈশাচিক আনন্দ।মুখ বেকিয়ে সাদাফ বলে উঠলো,

‘এই শাওয়াম তুই তো সব সময় ক্লাসের ফারস্ট গার্ল হোস।সব পড়ে দেখ তো কি লেখা আছে?এবার আর আমার থেকে তুই কোথায় পালাবি রে?’

চলবে————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here