শাওয়াম পর্ব -২৫ ও শেষ

#শাওয়াম
পর্ব ২৫ (অন্তিম পর্ব)
Suvhan Arag

সুখের গল্পটা হওয়া উচিত বিস্তৃত, যাকে পড়তে পড়তে কয়েক যুগ যেন কেটে যায়। ঘোরে চলে যাওয়া যায়, এমন ঘোর যেটা কাটেনা। কষ্টের গল্পটা শুনতে তিক্ত লাগে, অনুভব করতে আরো তিক্ত। কষ্টকে যত সং ক্ষিপ্ত করা যায় ততোই ভালো। মানুষের জীবনে কষ্টের আধার সংক্ষিপ্তই হোক। কি জানি শাওয়ামের জীবনে কোনটার অস্তিত্ব রইল।

আজকাল শাওয়ামের খুব মনে পড়ে ফাইরাজ বার বার বলতো, “তোমার অতীত মানেই অতীত। সেটা নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। ”

আসলেই কি নেই? শাওয়াম নিজেকেই প্রশ্ন করে বোকা বনে যায়। সম্পর্কের শুরুতেই শাওয়াম ফাইরাজকে বলেছিল শাওয়ামের মিডিয়াতে কাজ করার ইচ্ছে ছিল। এই ইচ্ছে পূরণের সিড়ির প্রথম ধাপ হিসেবে ইউটিউবে একটা এলবামে ফিমেল ক্যারেক্টার হিসেবে অভিনয় করেছিল। বিয়ের পর তো শাওয়াম নিজেকে পুরো বদলে ফেলেছে। কিন্তু আজকাল সেই ইউটিউব ভিডিওর সূত্র ধরে ফাইরাজ শাওয়ামের সাথে অশান্তি শুরু করেছে।

শাওয়ামকে বার বার ভিডিওটা দেখিয়ে বলবে, “এই যে এই ছেলেটা যেভাবে তোমার হাত ধরেছে আমিও একটা মেয়ের হাত এভাবে ধরব।”

শাওয়াম যেটা ভুলে গেছে যেটা থেকে সরে এসেছে সেটা নিয়েই ফাইরাজের এত জলঘোলা করার কি আছে সেটা শাওয়াম বুঝে পায়না। ফাইরাজ যে বিয়ের পর এক বাচ্চার বাপ হয়েও এখনো এক্স গার্লফ্রেন্ডকে ফলো করে সেটা নিয়ে শাওয়াম কখনো একটু টু শব্দ করেনি। ওহ এর মধ্যে শাওয়ামের জীবনে আরেকটি নতুন মানুষের আগমন ঘটেছে। বাংলাদেশে তখন করোনার শুরু এই লকডাউনের মাঝে শাওয়ামের কোল আলো করে আসে তার ছোট্ট রাজকন্যা ‘শায়েরি’। শাওয়াম হিসেবে বাচার চেয়ে আজকাল শায়েরির মা হিসেবে বেচে থাকাটাই শাওয়ামের জীবনের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ফাইরাজের পরিবর্তন শাওয়ামকে দুর্বল করে দিয়েছে, বেচে থাকাটাই তার কাছে এখন দুর্বিষহ। যেই ফাইরাজ শাওয়ামের মা বাবার কাছে একদম নিজের ছেলের মতো হয়ে গেছিল সেই ফাইরাজ এখন শাওয়ামের মা বাবাকেও নাম মাত্র সম্মান দেখায়। আগে নিজের মায়ের ভুল গুলো যাও ফাইরাজের চোখে পড়তো আজকাল ফাইরাজের চোখে মায়ের কোন ভুলই ধরা পড়েনা। শ্বশুরবাড়িতে শায়েরির যত্ন করার জন্য ধরতে গেলে শুধু শাওয়াম নিজেই আছে। শ্বাশুড়িও তেমন শায়েরিকে চোখে দেখে না। ফাইরাজের সাথে দুদিন অন্তর ঝগড়া অশান্তি লেগেই থাকে শাওয়ামের। দুদিন অন্তর ওঠে ডিভোর্সের কথা।

শাওয়ামের কাছে মনে হয় দুনিয়াতে এখন তার মা বাবা ছাড়া তাকে দেখার আর কেউই নেই। শায়েরির কথা ভেবে বার বার শাওয়াম ডিভোর্স শব্দ থেকে সরে আসে। কিন্ত এভাবে অশান্তি করে কি বেচে যায়? যেই ফাইরাজ তাকে কষ্ট না দেওয়ার কথা দিয়েছিল সেই ফাইরাজই আজ তার কষ্টের কারণ। এই তো কদিন আগেও শাওয়াম ডিভোর্স দেবে বলে কোলে শায়েরিকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল ঐ বাড়ি থেকে। সেটা ও হলোনা। তার শ্বাশুড়ি তার কোল থেকে শায়েরিকে কেড়ে নিয়ে অন্য ঘরে ঘরবন্দি করলো আর তাকে চলে যেতে বললো। আর ফাইরাজ সে ও যে পুরোপুরিভাবে শাওয়ামকে চেয়ে গেছে সেটা বললে ভুল হবে। সে শাওয়ামকে যেতে দেবে না আবার তাকে ভালোভাবে সংসার ও করতে দেবেনা।

_

পুরোটা দিন আমি ভেবেছি গল্পের শেষটা কিভাবে করব। এটা তো কোন সমাপ্ত নয় বরং চলমান আমি প্রতিনিয়ত দেখে যাচ্ছি, শুনে যাচ্ছি। শাওয়ামের জীবনটা যেমন মাঝ নদীতে পড়ে আছে না একূলে আগানোর উপায় আছে না ওকূল। গল্পের শেষটাও এভাবেই রেখে দিলাম আমি।

শাওয়ামের বিয়ের পর সায়েম আবার এসেছিল শাওয়ামকে নিজের জীবনে ফিরে আসার অনুরোধে। শাওয়াম প্রত্যাখানই করেছিল। বেঈমানকে সুযোগ দিতে নেই।

আর সাদাফ? আজকাল দেখি অপরাধীরাই ভালো থাকে। আসলেই তাই। সেও ভালো আছে। বাকিটা জানা নেই আমার।

শাওয়াম গল্পটা বাস্তব চরিত্র। এটা নিয়ে লেখার একটাই কারণ ছিল, শাওয়ামের মতো অনেক মেয়েই আছে আমাদের আশে পাশে। উঠতি বয়সে ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়াটাই তাদের জীবনের কাল হয়ে দাড়ায় কোন এক সময়।

পাঠক/ পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলব পুরো গল্পের সারাংশ হিসেবে-

– জীবনে যত বড় অন্যায় করুন কখনো মা বাবার থেকে লুকাবেন না। মা বাবাকে না জানিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। মা বাবার চেয়ে বেশি কেউ আপনার ভালো চাইবে না, না আপনাকে সঠিক পথ দেখাবে। গল্পের শুরুতে যদি শাওয়াম নিজের সব কিছু মা বাবাকে খুলে বলতো তাহলে হয়তো এই সাদাফ, সায়েম এই এত ঝড় তার জীবনে আসতো না।

– জীবনটা খুব ছোট্ট। জীবনের চেয়ে সিদ্ধান্তের ব্যাপ্তি অনেক বেশি। সঠিক সিদ্ধান্ত আপনার জীবনকে যেমন সুন্দর করতে পারে তেমনি ভুল সিদ্ধান্ত আপনার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। সিদ্ধান্ত হুট করে নয় বরং ভেবে চিন্তে, ধীরে সুস্থে নিন। তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুল করে। ফাইরাজকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তটাও শাওয়ামের তাড়াহুড়ো ছিল কিন্তু।

– বিশ্বাস অনেক মূল্যবান জিনিস। সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে নেই। আজ কেউ আপনার সামনে দুটো মন গলা কথা বললো তার মানে এই না যে আপনি তাকে বিশ্বাস করে বসবেন। কথায় আছে না, ” নিজের দাঁতকেও বিশ্বাস নেই। সুযোগ পেলে কামড় দিয়ে বসে।” ঠিক তাই।

– বন্ধু বান্ধব নির্বাচনে সতর্ক হবেন। বর্তমান যুগটাই এমন হয়েছে কাছের বন্ধুই এসে আগে পিঠে ছুরি মারে। বন্ধুকে বন্ধুর মতোই দেখবেন। বেশি কাছে টানবেন না, ধোঁকা দিলে কষ্ট রাখার জায়গা পাবেন না। কাছে টানুন একটু দূরত্ব রাখুন যাতে ধোঁকা দিলে আপনার উঠে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা থাকে।

————–অসমাপ্ত —————-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here