শাওয়াম পর্ব -১৭+১৮

#শাওয়াম
পর্ব ১৭
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

১৮

ভারসিটিতে ভর্তি হবার পর শাওয়াম নতুন করে ফেসবুক আইডি ওপেন করে। পুরাতন বন্ধু বান্ধব,পুরাতন স্মৃতি সবকিছু ভুলে নতুনের পথে পা বাড়াবার প্রস্তুতি। ফেসবুকে তেমন একটা একটিভ থাকা হয়না শাওয়ামের। বলা যায় সায়েমের জন্যই সে থাকেনা। সায়েম সর্বদা তার ওপর সন্দেহের তীর ছুড়তে ব্যস্ত। মাঝে মাঝে সায়েমের প্রতি খুব বিরক্তি আসে শাওয়ামের। মানুষটা কেন তাকে এত সন্দেহ করে? সে শুধু তার ভুলগুলো ধরতেই ব্যস্ত। একটা ভুলের পেছনে থাকা পাচটা ভালোবাসার কারণ কেন খুজেনা সে? শাওয়ামের মুখে যেন আধার নেমে আসে। তীব্র কষ্ট অনুভব হয়। সায়েমকে ভালোবাসাটা তার জীবনের ভুল না ঠিক মাঝে মাঝে এই দ্বিধা দ্বন্দ্বে তার রাতগুলো নির্ঘুম কেটে যায়।

রাত দশটা বাজে।

রিডিং রুম থেকে বই খাতা গুছিয়ে সবে রুমে এলো শাওয়াম। রুমে আপাতত কেউ নেই। সিনিয়র দুই আপু নিচে রিডিং রুমে পড়তে ব্যস্ত। আজ বাদে কাল পরীক্ষা তাদের। আরেকজন আপু দুদিন হলো বাড়িতে গেছে। রুমটা ফাঁকা দেখে শাওয়াম বই গুলো কোন রকমে বিছানার কোনে রেখে ফোন হাতে নিল। অনেকদিন হলো রাতে সায়েমের সাথে ফোনালাপ হয়না। বড় আপুদের সামনে কথা বলতেই কেমন লজ্জা লাগে তার। শাওয়াম ফোন হাতে নিয়েই সায়েমের নাম্বারে ডায়াল করলো। দু বার রিং হতেই ফোন রিসিভ করল সায়েম,

‘হ্যালো।’

‘কেমন আছো?’

‘আছি।’

‘আছি এটা কেমন উত্তর? ভালো খারাপ কিছু তো বলো? তোমার কি মন খারাপ?’

‘আমার মন খারাপ দিয়ে তুই কি করবি হ্যাঁ? তোর তো নিজের পাট গোছানো হয়ে গেছে। এইচএসসিতে গোল্ডেন পেলি, এখন আবার দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িস তোর কি আর এখন আমাকে পাত্তা দেবার সময় আছে? নিত্য নতুন নাগর জুটিয়ে তাদের সাথেই ঢলাঢলি করিস।’

‘সায়েম! ছিহ। এগুলো কোন ধরনের কথা? তুমি জানো আমি তোমাকে কত ভালোবাসি কেন শুধু শুধু এসব আজেবাজে কথা বলো আমাকে?’

‘তোর ভালোবাসা বোঝা হয়ে গেছে। একটা ওড়না ছাড়া পিক দিতে পারিস না আবার তুই নাকি আমাকে ভালোবাসিস! ভালোবাসা থাকলে মানুষ বিশ্বাস করে। তুই বিশ্বাস করে একটা ছবি দিতে পারিস না আবার তুই ভালোবাসার কথা বলিস?’

‘ আমি তোমাকে ওড়না ছাড়া ছবি দেইনি মানে তুমি ধরে নিলে তোমাকে ভালোবাসি না। আর তুমি যে প্রতিনিয়ত আমাকে সন্দেহ করো তার বেলায়? বিশ্বাস তুমি কি করো আমাকে?’

‘এই শোন আমি কি করি না করি সে জ্ঞান আমাকে দিতে আসবি না। তুই নিজে কি করিস সেটা দেখ। ‘

‘আমি নিজে কি করছি না করছি সেটা ভালো করেই জানি আমি। তুমি কী করছো সেটা দেখ। একটা মেয়ের কাছে তুমি ওড়না ছাড়া ছবি চাও কিভাবে? লজ্জা করলো না তোমার?’

‘আমি তো আমার গার্লফ্রেন্ডের কাছে চেয়েছি। সেটা চাইতেই পারি। তুই আর কি করিস? আমার বন্ধুরা দেখি তাদের গফের সাথে ডেটে যায়, রাত হলেই হট ছবি ইনবক্সে পাঠায়, কত জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। আর তুই? তুই কি দিয়েছিস আমাকে এতদিনের রিলেশনে? তোর হাতটাও ঠিকভাবে ধরতে দিসনি।’

‘স্টপ ইট প্লিজ। আমার ভুল হয়েছে তোমাকে কল করা।ভেবেছিলাম আজ ফ্রি আছি তোমার সাথে গল্প করি। কিন্তু তুমি তো,,,, তোমার বন্ধুরা তোমাকে একদম নষ্ট করে ফেলেছে ।’

‘তার মানে কি তুই আমাকে নষ্ট বলতে চাইছিস? তুই কি? তুই তো নষ্টা। তোকে তো খেয়ে ছুড়ে ফেলেছিল না ঐ যে কি নাম যেন। তোর নিজের ভারজিনিটি বলতে কিছু আছে? তুই আমাকে নষ্ট বলিস? তোর আর দু টাকার বেশ্যার মধ্যে কোন তফাত নেই।তুই তো,,,,,।’

‘শাট আপ। অনেক বলেছিস তুই। তোকে বিশ্বাস করা, ভালোবাসাই আমার জীবনের ভুল। তুই আমার চরিত্র নিয়ে কথা তুলিস সব জেনেও! আরে তোর থেকে ঐ সাদাফ ভালো ছিল। ওর তো দেহ চাই সেটা সামনা সামনি বলতো। তোর মতো মিচকে শয়তান না আকারে ইঙ্গিতে বোঝাতে আসে। আর জীবনে আমার সাথে যোগাযোগ করতে আসবি না তুই। আমাকে বেশ্যার সাথে তুলনা করিস! তোর তো জন্মের ঠিক নেই। তোর বাপ মা নিশ্চয়ই তেমন চরিত্রের নাইলে তোর মতো সন্তানের জন্ম দিতোনা যে রাত বিরেতে মেয়েদের ইনবক্সে ন্যুড চায়। বাস্টারড।’

শাওয়াম ফোন কেটে দিল। এক নাগাড়ে এত কথা বলে হাপাচ্ছে সে। রাগে শরীর জ্বলছে তার। এত বিশ্বাস করে সায়েমকে নিজের সব অতীত বলেছিল আর সায়েম প্রতিনিয়ত সেটার সূত্র ধরে তাকে খোটা দেয়। ঠোট চিপে কেঁদে দেয় শাওয়াম। মুখ উপরের দিকে তুলে চোখ বুজে কাদে।

‘আমার কি দোষ ছিল? আমি কি ইচ্ছে করে সাদাফের কাছে গিয়েছিলাম? সবাই কেন আমাকে দোষারোপ করে। কেউ তো সাদাফের বিরুদ্ধে কথা বলেনা। আমি যাকেই ভালোবেসে আকড়ে বাঁচতে চাই, সেই আমাকে ধোঁকা দিয়ে অর্ধমৃত করে দেয়। আর কত!’

অনেকক্ষণ কাদার পর শান্ত হয়েছে শাওয়াম। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার মতো বাজে। নিচে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে হাত মুখ ধুয়ে উপরে আসে শাওয়াম। টেবিলের ড্রয়ার থেকে দুটো ডেইরি মিল্ক বের করে খেতে শুরু করে। ফোনের দিকে চোখ যেতেই মনে পরে যায়, আজ ব্যাচের মেসেনজার গ্রুপে তাকে এড করেছিল তার এক বান্ধবী। ক্লাসের কারোর সাথেই তার তেমন পরিচয় না। মন ভালো না। সবার সাথে একটু পরিচিত হলে কেমন হয়? শাওয়াম ডেইরি মিল্ক এক কামড় মুখে দিয়ে প্যাকেটটা মুড়িয়ে টেবিলের ওপর রাখে। ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে লগ ইন করে। মেসেনজার ছাড়া তেমন একটা ফেসবুকে আসেনা শাওয়াম। নিউজফিড স্ক্রল করতেই চোখ আটকে যায় সায়েমের একটা পোস্টে। প্রায় এক ঘন্টা আগে পোস্টটি করেছে সায়েম। পোস্টটি পড়তেই শাওয়ামের আরো রাগ উঠে।

পোস্টে লেখা ছিল-

‘আচ্ছা বন্ধুরা বলতো, খাওয়া জিনিসকে কি আর খাওয়া যায়? যে এটো তার আবার কিসের ইনটেক থেকে ভাইরাল হবার ভয়? এরে খাওয়াটা তো আরো বদহজমের ব্যাপার স্যাপার।’

পোস্টটি যে শাওয়ামের উদ্দেশ্যে করা বুঝতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হয়নি শাওয়ামের। ঘৃনায় চোখ মুখ খিচে আসে শাওয়ামের। এত বিশ্রিভাবে সায়েম তাকে সম্বোধন কিভাবে করতে পারে? সায়েমের আইডিতে সার্চ করে তাকে আনফ্রেন্ড করে দেয় শাওয়াম। মেসেনজারে যায়। সায়েমের সাথে চ্যাট ও ডিলিট করে দেয়। সায়েমের সাথে এমনিতেও তার তেমন চ্যাট হয়না। কারণ একটাই সায়েম স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে বলতে একসময় এডাল্ট চ্যাট শুরু করে। শাওয়াম বিষয়টা এড়িয়ে যেতে ঘুমানোর অজুহাত, এটা ওটা অজুহাত দিতে থাকে সায়েমকে। মাঝে মাঝে তার মনে হয় সায়েম হয়তো তার জন্য সঠিক ব্যক্তি নয়। তার সাথে সব সম্পর্কের ইতি ঘটালে ভালো হয়। ভেবেও করতে পারে না শাওয়াম। ঐ যে আছে না একটা কথা ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে। ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে শাওয়ামের। কি মনে করে স্প্যাম মেসেজ চেক করতে বসে শাওয়াম। অনেক মেসেজ জমা আছে। বেশির ভাগ ছেলেদের। হাই, হ্যালো লিখে রেখেছে। এদের কান্ড দেখলেই হাসি পায় শাওয়ামের, চেনেনা জানেনা একটা মেয়েকে ইনবক্সে হাই হ্যালো করতে আসে। হঠাৎ করেই একটা মেসেজ দেখে থমকে যায় শাওয়াম। মেসেজটা প্রায় দেড় মাস আগের। এটাও একটা ছেলের মেসেজ। আইডির নামটা ও বেশ। ” ফাইরাজ আহমাদ।” নামটা একটু ইউনিক টাইপের। শাওয়াম ম্যাসেজটা ওপেন করে। ভেতরের লেখা গুলো পড়ে শাওয়ামের ভেতরে আরো কৌতুহল জন্মে। অদ্ভুত শিহরণ জাগে।

‘ আসসালামু আলাইকুম। আপনার ব্যস্ত সময় গুলোকে ক্ষান্ত দেওয়ার মাঝে যদি একটু আমার বন্ধুদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন খুব উপকৃত হতাম। বিশেষ কিছু না আপনাকে কয়েকটা কথা বলার ছিল। জানি তার মধ্যে একটি কথা যেটা হয়তো আপনাকে ইতিমধ্যে অনেকেই বলেছে, আর আপনার মুখমন্ডলে কান পচে যাওয়ার মতো বিরক্তির ছাপ ও ফুটে উঠেছে। শুনেছি প্রতিটা মানুষকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত। আপনার সমৃদ্ধ সুযোগের ভান্ডার থেকে যদি এক বদ্ধ করতল সুযোগ আমাকে দিতেন খুব বেশি লোকসান হবেনা হয়তো। ‘

—এত দেরী করে কেন গল্প দেন? উফ এই অভিযোগের ডালা সাজিয়ে বসে আছে আমার ক্ষুদ্র পাঠক মহল। আচ্ছা লেখিকা কি এমনি এমনি দেরী করে? আমি তো আগেই বলেছিলাম সামনে যত সময় এগিয়ে আসছে আমার ব্যস্ততা বেড়েই চলেছে। ঐ লেখাটা তো আপনারা দেখেন না।কেন দেখেন না? গল্প পড়া শেষ হলে মাঝে মাঝে বাকি কোন অক্ষরের আনাগোনা থাকলে সেটাতেও চোখ বুলাতে হয় বুঝলেন? এসাইনমেন্ট, পরীক্ষা, আবার পরবর্তী বইয়ের পান্ডুলিপির কাজ, তার মধ্যে মাঝে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলাম। গল্প লেখার সময় পাই কি করে বলুন। মা বাবার কড়া আদেশ এই লেখালেখির জন্য যদি আমার পড়াশোনার ক্ষতি হয় আমার সাধের এন্ডয়েড ফোনখানা আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে, লেখালেখি ঐখানেই সমাপ্ত করতে হবে। সেটা কি আমার ভালো লাগবে বলুন। এই যে একরাশ হতাশার মাঝেও দু কলম একটু আধটু লিখে আপনাদের মাঝে নিজের মতামত উপস্থাপন করি বিনিময়ে আপনাদের থেকে একটু ভালোবাসা,দোয়া আর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি চাই। এটা যদি না থাকে আমার হতাশা গুলো যে তখন এক সমুদ্রের সমান হয়ে উথাল পাথাল ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ে আমাকে দুর্বল করে দেবে। সেটাও কি ভালো লাগে বলুন? জানি ভালো লিখতে পারিনা। আমার গল্পের জন্য হয়তো খুব কমই আপনারা অপেক্ষা করেন। তবু ও একটু যদি এই মাসুম ব্যক্তিটিকে ক্ষমা করতেন, আর তার সমস্যা গুলোকে বুঝে অভিযোগ গুলো তুলে নিতেন খুব ক্ষতি হবে কি? নয়তো যে এই অভিযোগের মাঝে না জানি আমার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়ে যায়। আশা করছি আমার প্রিয়রা আমাকে বুঝবেন।
#শাওয়াম
পর্ব ১৮
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)

মেসেজগুলো বেশ অদ্ভুত রকমের। সাধারণ মানুষের মতো কথা না। শাওয়ামের মনে সংশয়। মানুষটা কি তাকে চেনে? এভাবে কেন মেসেজ পাঠাবে। শাওয়ামের চিন্তাধারার প্রসার ঘটে। হয়তো সে বেশিই ভাবছে। এত চিন্তা করার কি আছে? সামান্য বিষয়। শাওয়াম মাথা থেকে এসব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে। ছোট্ট করে টাইপ করে,

‘হুম।’

হুম শব্দটা ছোট হলেও অনেক সময় ব্যাপক অর্থ বহন করে। এই যেমন মেসেজের কি রিপলাই করবে এটা ভাবতে না পেরে শাওয়াম হুম লিখেই এক প্রকার দায়সারা কাজ করল। অবাক ব্যাপার! শাওয়াম রিপলাই করতে না করতেই ওপাশ থেকে মেসেজ আসলো,

‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা যদি একসেপ্ট করতেন?’

শাওয়াম মেসেজটা দেখে বেশ চিন্তিত। অচেনা ছেলে একসেপ্ট করা ঠিক হবে কিনা। শাওয়াম একবার লোকটার নামের ওপর ক্লিক করে প্রফাইলে একটা চক্কর দিয়ে এলো। ফাইরাজ নামের লোকটা ঢাকার স্থানীয় নয়। তবে সেখানেই পড়াশোনা, বেশ নামকরা একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে জব করে। প্রফাইলের পোস্ট, কমেন্টস সেকশন সব দেখে শাওয়াম এতটুকু অবগত হতে পারলো লোকটা ভালোই, সুশীল খারাপ হবে না। শাওয়াম রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে নিয়ে আবার মেসেনজারে ঢুকল। ছোট্ট করে টাইপ করলো,

‘হুম।’

‘Isn’t it a good feelings to make someone’s day? Thanks a lot for making my day.’

ফাইরাজের দু লাইনের ইংরেজি বার্তা শাওয়ামের গায়ে কাঁপুনি দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। শাওয়াম বেশ ভয় পাচ্ছে, একটা অপরিচিত লোক যার দিন কিনা তার জন্য ভালো হলো! ফ্লার্ট করছে নিশ্চয়ই। শাওয়ামের শেষ ভাবনার মাঝেও জল ঢেলে দিল অপরিচিত মানুষটি। দু মিনিটের ব্যবধানেই ফাইরাজের নতুন বার্তা,

‘দয়া করে এটা ভাববেন না যে আমি আপনার সাথে ফ্লার্ট করছি।’

মেসেজটা দেখে শাওয়াম চমকে গেল। দু চোখ জুড়ে বিস্ময়ের বাস। লোকটা কিভাবে বুঝলো তার মনের কথা? সে তো এতক্ষণ এই চিন্তাই করছিল। বেশ আজব ব্যপার।

সেদিনের মতো গুড নাইট লিখেই শাওয়াম বিদায় নিল ফেসবুক জগত থেকে। কিন্ত সময় সব বারের মতো এখানেও থেমে যায়নি। আদান প্রদান আরো এক প্রস্তর এগিয়েছে। দিন শেষে ওপারের কারোর বড় বড় বার্তা এপারের ছোট্ট হাই হ্যালোর কাছেই তৃপ্ত হয়ে যায়। কারোর বিশাল চিঠি পড়ার অধৈর্য সময় যখন বিরক্তির ছাপ আকে মুখে, কারোর ছোট্ট হুম ও তখন কারোর হৃদয়ে ঝড় তোলে বৃহৎ পরিসরে। কি অদ্ভুত অনুভূতি তাই না? শাওয়াম ফাইরাজের সম্পর্ক টা ঠিক এমন আমে দুধে মিশে গেছে। কিন্তু কোথায় যেন আঠি গড়াগড়ি খেয়েই যাচ্ছে। শাওয়ামের কাছে এটা স্রেফ বন্ধুত্ব। ফাইরাজের কাছে,,,,,!

অপরিচিত মানুষটা এখন শাওয়ামের বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে। মেসেজ বাদ দিয়ে ফোন নম্বর আদান প্রদানের পর্ব অনেক আগেই চুকে গেছে। ডাক্তার হবার স্বপ্ন এখনো শাওয়ামের পিছু ছাড়েনি। উদ্ভাস নামের একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়েছে শাওয়াম। মেডিকেলে সেকেন্ড টাইম পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতেই হবে তাকে। যদি এবার কপালে ডাক্তার হবার সুযোগ থাকে। এদিকে ক্লাসের পড়াশোনা থেকে যেমন বিরতি তেমন উদাসীনতা । এই ইয়ার কোন রকমে পরীক্ষার আগের দিন পড়ে পরীক্ষা দেবে।পাশ হোক বা ফেল তাতে তার মাথা ব্যথা নেই। ভর্তি হয়ে আছে, পরের বছর মেডিকেলে চান্স না পেলে প্রয়োজনে রিএড নেবে। নতুন ব্যাচের সাথে পড়াশোনা শুরু করবে। এই প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে শাওয়াম। শাওয়ামের নতুন পদক্ষেপে মায়ের পূর্ণ সাপোর্ট থাকলেও বাবার স্থান টা শূন্যতে চলে যায়। তার বাবা এখনো মেনে নিতে পারেননি শাওয়ামকে, তার অতীতের ভুল ক্ষমার অযোগ্য হিসেবেই দেখে যাচ্ছেন তিনি। আজকাল শাওয়ামের নতুন শুভাকাঙ্ক্ষী তাকে বেশ সাপোর্ট করে যায়। দিন রাত ফাইরাজ তার খোঁজ রাখে, কখন কি খেয়েছে? আজ কতটুকু পড়েছে সব।

সায়েমের সাথে বেশ কদিন যোগাযোগ বন্ধ। ঐ ঘটনার পর সায়েম নিজেও যোগযোগ করেনি না শাওয়াম করেছে। তবু শাওয়ামের মন সায়েমের জন্যই আচকাচ করে। শত হলেও তার ভালোবাসা সায়েম। আজ না হোক কাল ঠিক অভিমানের পর্ব সমাপ্ত হবে।

বিকাল পাঁচটা। ক্লান্ত শরীর নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজের রুমের কাছে এসে পৌছালো শাওয়াম। আজ বিকেল চারটা অবদি ক্লাস ছিল তার। সকাল নয়টা থেকে শুরু। মাঝে অবশ্য তিন ঘন্টার লম্বা বিরতি ছিল।তবুও একটু বেশিই ক্লান্ত অনুভব করছে সে। রুমে ঢুকেই নিজের ডাবলিং বেডের পাশে গিয়ে ধপ করে বসে পরলো। শ্বাস প্রশ্বাস যেন দ্রুত গতিতে চলছে তার। এই গরমে মাথার ঘিলু গুলো ও বোধ হয় টগবগ করে ফুটছে। এখনি গোসলে যাওয়া যাবেনা। ঘর্মাক্ত শরীর, এর মধ্যে গোসল করলে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি। তাই বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো শাওয়াম। ফোনটা হাতে নিয়ে ডাটা অন করলো। বেশ এক ঘন্টা আগে ফাইরাজের মেসেজ,

‘এখনো ক্লাস শেষ হয়নি?’

ফাইরাজের নামের পাশে সবুজ বাতি জ্বলছে। তার মানে সে ও অনলাইনেই একটিভ আছে এখন । শাওয়াম রিপলাই করল,

‘কেবল রুমে আসলাম।’

‘ফ্রেশ হয়েছো? কিছু খেয়েছো?’

‘এখন ফ্রেশ হওয়া বা খাওয়া কোনো কিছুর ইচ্ছে করছে না। আধ ঘন্টা শুয়ে থাকব তার পর সব। ‘

‘ও আচ্ছা। তোমাকে একটা কথা বলার ছিল। যদিও অনেক দিন ধরে বলব ভাবছি। ‘

‘কি?’

‘তুমি তো বলেছিলে এইচএসসি তে তুমি জিপিএ ফাইভ পেয়েছ।’

‘হ্যা। কেন?’

‘এত ভালো রেজাল্ট করেছো অথচ আমাকে ট্রিট দিলেনা! ইটস নট ফেয়ার।’

ফাইরাজের মেসেজ দেখে শাওয়ামের চোখ কপালে। সেই কোন যুগে সে পরীক্ষা দিয়েছিল তারপর আরেক যুগে রেজাল্ট। আর এখন কিনা এই লোককে তার ট্রিট দিতে হবে তাও কিনা আদিকালের ঐ পরীক্ষার ভিত্তিতে! শাওয়ামের রাগ হচ্ছে ফাইরাজের ওপর। এমনিতেই সে স্রেফ বন্ধু হিসেবে কথা বলে তার সাথে। মাঝে মাঝে ফাইরাজ এমন কিছু আচরণ করে শাওয়ামের প্রচুর বিরক্তি লাগে এই মানুষটার ওপর। এর আগে কদিন বলেছে সে তার সাথে মিট করতে চায়। শাওয়াম ইন্ডিরেক্টলি এড়িয়ে গেছে একটা কথা বলে, কোন কারণ ছাড়া সে মিট করবে না ফাইরাজের সাথে। নির্ঘাত এজন্য এই কারণ খাড়া করেছে ফাইরাজ। শোয়া থেকে উঠে বসলো শাওয়াম। দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আবার রিপলাই করতে লাগল,

‘আর ইউ ক্রেজি!’

‘এইসব বিজি টিজি বলে লাভ নাই। কালকেই আমাকে ট্রিট দিতে হবে। নয়তো,,,,,,।

‘নয়তো কি?’

‘আর কি? বুঝব আপনি ভীষণ কিপ্টা, কন্জুস এক পিস। টাকা দিয়ে খাওয়াতে হবে এই ভয়ে আমাকে ট্রিট দিতে চাননা।’

‘ফালতু কথা বলবেন না একদম।’

‘তাহলে ট্রিট দিন।’

ফাইরাজের প্রস্তাব শুনে শাওয়াম ভাবনার জগতে ডুব দিল। ফাইরাজ লোকটা বেশ জালাচ্ছে তাকে। এমনভাবে কথা বলে যেন শাওয়াম তার পার্সোনাল প্রপার্টি। এই লোকটাকে বিদায় করতেই হবে তার লাইফ থেকে। এই লোকটার কথার জন্য সে সায়েমের সাথে যোগাযোগ করেনি। ফাইরাজকে যখনি সায়েমের কথা বলেছে শাওয়াম তারপর থেকে সায়েম ছেলে ভালো না, মেয়েদের উচিত এটিটিউট রাখা, সায়েম দোষ করেছে এখন শাওয়াম যেচে কথা বলতে গেলে সায়েম এই ভুল আবার করবে ইত্যাদি এটা ওটা বুঝিয়েছে ফাইরাজ। শাওয়াম বেশ বুঝতে পারছে ফাইরাজের মনে অন্য কিছু চলছে। সে চায়না সায়েম তার সাথে থাক। বুদ্ধি খাটিয়ে শাওয়াম জবাব দিল,

‘ঠিকাছে। কালকে আপনাকে ট্রিট দেব। কিন্তু একটা শর্ত আছে?’

‘কি শর্ত?’

‘কালকের পর আপনি আর কখনো আমার জীবনে আসবেন না। আপনার উপস্থিতি আমার সব এলোমেলো করে দিয়েছে, তাই আমার জীবনে আপনার অনুপস্থিতিই প্রয়োজন। ‘

‘কিহ!’

‘হ্যাঁ এটাই। কাল নিউমার্কেট গেটে দাঁড়াব সকালে।’

‘ যথাআজ্ঞা। আপনার হুকুম শিরোধার্য।’

‘ড্রামা কিং।’

শাওয়াম ফোন রেখে তোয়ালে, জামা কাপড় নিয়ে গোসলের জন্য ছুটলো।

শাওয়ামের নামের পাশের সবুজ বাতি নিভে গেল হুট করে। ফাইরাজ হাসে। ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি।

‘তোমার জীবনে আমার উপস্থিতি স্থায়ী না অস্থায়ী নাকি চিরস্থায়ী হবে সেটা তো সময় আর আমি বলব।’

চলবে———–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here