#শাওয়াম
পর্ব ৪
Suvhan Arag (ছদ্মনাম)
সাদাফের মুখের পৈশাচিক হাসি দেখে শাওয়ামের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।জমিনের সাথে মিশে গেছে সে নিমিষেই।সাদাফ আর তার বিয়ে হয়েছে!কবে কিভাবে?সেই সামান্য কাগজটা নিয়ে যে সাদাফ অসামান্য কিছু করে ফেলবে শাওয়ামের ধারণার বাইরে ছিল।
ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সাদাফের দিকে তাকিয়ে কম্পিত কন্ঠে বললো,
‘এ হতে পারেনা।আপনি মিথ্যা বলছেন।জাল কাগজ বানিয়েছেন আপনি।’
‘আর কি হওয়ার বাকি আছেরে শাওয়াম!সবই তো ঘটে গেছে।মেনেই নে যে তুই আমার স্ত্রী।’
‘নাহ!অসম্ভব!অসম্ভব!’
শাওয়ামের মাথার ভেতর চক্কর দিচ্ছে।মুহূর্তেই যেন পুরো দুনিয়া ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে তার চোখের সামনে।অতীত ভবিষ্যত বর্তমান সব গুলিয়ে ফেলছে।মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে,তার মা বাবা জানতে পারলে কী হবে?কি করল সে?কেন গেল সাদাফের ডাক শুনে?কেনই বা সাদাফকে শায়েস্তা করতে গেছিল?তবে কি নিজেই নিজের জন্য খাল কেটে কুমির আনলো ! সব কিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে শাওয়ামের সামনে।দম বন্ধ হয়ে আসছে।চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে তার।
শাওয়ামের টালমাটাল অবস্থা দেখে সাদাফ দু কদম এগিয়ে শাওয়ামের হাত চেপে ধরলো।এতে যেন আরো বড় ঝটকা খেল শাওয়াম।নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা।আক্রোশ নিয়ে বললো,
‘আমার হাত ছাড়ুন সাদাফ ভাই।’
‘কি ভাই ভাই করছিস হুম?এখন স্বামী হই তোর।নাম ধরে ডাক।’
‘সব মিথ্যা কথা।আমি সবাইকে বলে দেব।’
‘ঠিকাছে বলতে পারলে বলে দে।আমিও ধুমধাম করে বর সেজে তোর বাড়ির গেটে গিয়ে দাঁড়াব।’
সাদাফের কথা গুলো শাওয়ামের বুকে তীরের মতো বিধছে।কথাগুলো হজম করতেও কষ্ট হচ্ছে।বেসামাল অবস্থা।কি করবে সে?
৫
দুপুর দুটো বাজতে চললো।শাওয়ামের এখনো আশার নাম নেই।চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছেন তহমিনা।ডাইনিং টেবিলের ওপর মাথা কাত করে শুয়ে আছেন।মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে কখন থেকে বসে আছেন।বিকেলে শাওয়ামের কোচিং ক্লাস।এসেই না খেয়ে কোন রকমে গোসল সেরেই টিভি নিয়ে বসবে।তার একটু পর উঠে কোচিং এর জন্য দৌড়।খাবার না খাওয়ার যত বাহানা করা যায় আর কি।মেয়ের পিছনে এখনো সেই ছোট বেলার মতো ভাতের থালা হাতে ছুটতে হয় তহমিনাকে।কখন এক লোকমা ভাত মুখে তুলবে।
ঘড়ির কাটা তো ছুটছে তার নিজস্ব গতিতে।মায়ের মনে যেন কু ডাকছে।কথায় আছে না আপনজনদের জন্য চিন্তা হলে আগে খারাপ কথাটাই মাথায় আসে।তহমিনা ও ব্যতিক্রম নন।আজকালকার যে দুনিয়া।মেয়েদের পদে পদে বিপদ।অনেক বয়স্ক মহিলা হয়েও তাই কেউ রেহাই পায়না কিছু জানোয়ারের কবল থেকে।সেখানে শাওয়াম তো বাচ্চা মেয়ে।আরো বৃহস্পতিবার স্কুল পুরো সময় হয়না।আগেই ছুটি হয়।
টুং টাং শব্দ।
কলিংবেলের আওয়াজ।এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালেন তহমিনা।দ্রুত গতিতে নিচে নামার জন্য অগ্রসর হলেন।অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান ঘটলো।উচ্ছাস নিয়ে তহমিনা গেট খুলতে গিয়েই থমকে গেলেন।মুখ কালো করে বললেন,
‘ওহ!তুমি!’
অফিস থেকে ফিরে ঘর্মাক্ত অবস্থায় গেটের বাইরে দাড়িয়ে ছিলেন রাশেদ সরদার।স্ত্রীর মুখ কালো দেখে কিছুটা দমে গেলেন।অপ্রস্তুত হয়ে বললেন,
‘এভাবে বলছো কেন?আর কারো অপেক্ষা করছিলে নাকি?’
তহমিনা গেট খুলতে খুলতে জবাব দিলেন,
‘শাওয়াম এখনো বাড়ি ফেরেনি।আজ তো ওর হাফ টাইম স্কুল।আড়াইটার বেশি বাজে।’
‘চিন্তা করছো কেন?চলে আসবে।দেখ হয়তো এক্সট্রা ক্লাস নিচ্ছে কোন টিচার।’
‘চিন্তা কি সাধে করছি?মেয়ে জন্ম দিয়েছি।মেয়েদের তো কবরে যাওয়ার আগ অবধি বিপদ ছাড়ে না।পদে পদে বিপদ।জানো তো তোমার মেয়ের পেছনে আরো বখাটে ছেলেরাও লাগে।কি করব বলতে পারো?’
কথা বলতে বলতে চোখের পানি ছেড়ে দিলেন তহমিনা।স্ত্রীর কথা শুনে যেন এতক্ষণে বাস্তবতার দিকে নিজেকে আবিষ্কার করলেন রাশেদ সরদার।চিন্তায় কপালে ভাজ পড়লো।আদরের মেয়েকে নিয়ে তার ও চিন্তার শেষ নেই। এই টুকু বয়স।আরো সুন্দরী মেয়ে।বাবা মায়ের কি চিন্তার শেষ আছে? রাশেদ সরদার কেমন যেন দমে গেলেন।আহত দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকালেন।দুজনের চোখাচোখি সাথে দৃষ্টিভরা যেন চিন্তার আসর।কাধ থেকে অফিসের ব্যাগটা স্ত্রীর হাতে ধরিয়ে দিলেন রাশেদ সরদার।
সান্ত্বনার সুরে বললেন,
‘তুমি চিন্তা করোনা।আমি এগিয়ে দেখছি।’
‘কেবল অফিস করে এসেছো।একটু পানি মুখে দিয়ে যাও।’
‘তহমিনা আমার শাওয়াম বাড়ি ফেরেনি।আমার যে পানির তেষ্টা নেই।পানি দিয়ে জিহ্বার তেষ্টা মিটবে।আমার মনের তেষ্টা আমার শাওয়াম ছাড়া মিটবে না।আমি ওকে নিয়ে তবেই আসব।তুমি ঘরে যাও।’
রাশেদ সরদার রওনা দিলেন।গেটের কাছে দাড়িয়ে তহমিনা শাড়ির আঁচল মুখে গুজে কেদেই ফেলেছেন।তার শুধু একটাই প্রার্থনা,মেয়েটা যেন সুস্থ সবল অবস্থায় বাড়ি ফেরে।
রাস্তার পাশ দিয়ে এলোমেলো ভাবে হেটে যাচ্ছেন রাশেদ সরদার।হাত ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন।তিনটা বেজে গেছে।
চলবে———-