শুধু তুই ২ ❤️ পর্ব -১৫+১৬

#শুধু_তুই
—-(সিজন২)
#পর্বঃ১৫
#Rifat_Amin

প্রহরভাই আমার দিকে স্থিরচিত্তে তাকিয়ে থাকতেই আমি বিছানা উঠে বসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা লাগালাম। কিন্তু উনি নিজে থেকে সড়ে যাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে পোষণ করলেন না। উনার এসব হাবভাব দেখে সর্বশক্তি দিয়ে সড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বললাম,

‘ কি বেহায়া পুরুষ আপনি! উঠুন বলছি। ও মা গো ম’রে গেলাম আমি। ‘ (আমি)

এবার উনার টনক নড়লো। আমার উপর থেকে সড়ে গিয়ে বিছানার এককোণে বসে নিশ্চিন্তে ফোন ঘাটলে থাকলেন। ব্যাপারখানা এমন, যেনো মিনিটখানেক আগে এখানে কিছুই হয়নি। এদিকে উনার এসব ডন্ট কেয়ার মুড দেখে মাথা ব্যাথাটা তীব্র হলো। বিছানা থেকে উঠে উনার ফোনটা কেরে নিয়ে বললাম,

‘বিদেয় হন রুম থেকে। আপনার জন্য বোধহয় আজ আমার মাথাটা ফেটেই গেলো। ‘ (আমি)

উনি ফোন কেরে নেয়ায় যথেষ্ট বিরক্ত হলেন। অতঃপর সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন,

‘ দেখ রশ্নি, একবার কপালে কপালে ধাক্কা লাগলে কিন্তু মাথায় শিং গজায়। ভালোয় ভালোয় আরেকটা ধাক্কা দে। তাহলে তুইও সেভ থাকবি, আর আমিও সেভ থাকবো। ‘ (প্রহর)

উনার এসব বাচ্চামো কথায় নিজের রাগটা কনট্রোল করতে না পেরে ঝাড়ু খুঁজতে শুরু করলাম। ঠিক তখনি রুমে প্রবেশ করলো কেউ ,

‘ সরি, সরি। তোমাদের রোমান্টিক সময়ে পার্মিশন না নিয়ে ঢুকে পরার জন্য। ‘ (সারা)

সারা আপু রুমে প্রবেশ করে কথাটা বলার সাথে সাথেই দমে গেলাম আমি। আপু আর কথা না বলে রুম থেকে বের হতেই প্রহরভাই বললেন,

‘ আরে যাচ্ছো কোথায়? কিছু বলার থাকলে বলে যাও ‘ (প্রহর)

‘ ইয়ে মানে, আপনি যে প্রেমকে ডাকতে পাঠিয়েছিলেন। সেটাই জানাতে এলাম। প্রেম নিচে। ‘ (সারা)

‘ আচ্ছা যাও। আমি আসছি। ‘ (প্রহর)

কথাটা বলেই প্রহরভাই বিছানা থেকে উঠে বসলেন। উনাকে উঠতে দেখে সারা আপু আর কথা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন। বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমি বললাম,

‘ এটা কি হলো? একমাত্র আপনার জন্য আমার মানসম্মান ধুয়ে যাচ্ছে । ‘ (আমি)

‘ তোর যে অপরিষ্কার মানসম্মান! ধুঁলে যদি একটু পরিষ্কার হয়! ‘ (প্রহর)

‘ দেখুন.. আপনি কিন্তু খুব বারাবারি করছেন। একজন নামি-দামি সিঙ্গার হয়ে এসব করতে লজ্জা করে না? ‘ (আমি)

উনি জবাব না দিয়ে নিজের চুলটা একটু স্টাইল করে উপরে উঠিয়ে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন। অতঃপর একদম আমার মুখের সামনে এসে বললেন,

‘ না গো! আমার একদম লজ্জা করে না। আচ্ছা একটা ভালো কথা। আম্মু কিন্তু আমার জন্য মেয়ে দেখছে। তোর কাছে কোনো ভালো মেয়ে থাকলে আম্মিকে জানাস তো ‘ (প্রহর)

উনার কথায় মাথার রাগ নব্বই ডিগ্রি পেরিয়ে একশো আশিতে পৌঁছালো। কিন্তু রাগ কেনো হচ্ছে ঠিক ধরতে পারলাম না৷ উনি আর কোনো কথা বা বলে শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেলেন। রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই আমি সামান্য চিৎকার করে বললাম,

‘ আপনি একটা নির্লজ্জ পুরুষ’ (আমি)

ভাবলাম উনি বোধহয় অনেক রাগ করবেন। কিন্তু ঘটলো ঠিক তার উল্টোটা। আবারো রুমে পা ঢুকিয়ে চোখ টিপে বললেন,

‘ আই ন্যো দ্যাট বেইব’ (প্রহর)

উনার কথায় বিষ্ময়ের সপ্তম আশ্চর্যে পৌঁছে গেলাম আমি। মনে মনে কয়েকটা গালি দিতে একদম ভুললাম না।

সকালের খাবার খেতে বসতেই বেজে গেলো সকাল এগারোটা। যদিও এর আগে হালকা স্নাক্স হয়েছে। বড়সড় ডাইনিংটার চতুর্দিকে বসে আছে প্রহরভাই, প্রেম, ফারহান আর মিল্লাতভাই৷ শুধু আমি আর সারা আপু সবার খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত। রিসোর্টের খাবার পরিবেশন করার জন্য যেসব সার্ভেন্ট আছে তাদের সবাইকে সাময়িক ছুটি দিয়েছেন প্রহরভাই। তাঁর দাবী, এত কষ্ট করে ঢাকা থেকে একজন কাজের লোক বহন করে নিয়ে এসেছি কি শুধু বসে বসে খাওয়ানোর জন্য?
আর উনার সেই কাজের লোকটা হলাম আমি। সার্ভেন্টদের বিদায় দিয়েই উনি গম্ভীর কন্ঠে আমাকে বললেন, ‘ রশ্নি, আমি তোকে এখানে এনেছি আমার সবকাজগুলো করে দেয়ার জন্য। আর তুই বসে বসে খাবি, তা তো হবে না। দে, সবার খাবার গুলো সার্ভ করে দে। ‘

উনার কথা শোনামাত্র সকালের রাগটা পুনরায় জেগে উঠলো আমার। ঠিক তখনি সারা আপু উঠে বললেন,

‘ ভাইয়া আমিও তাহলে সার্ভ করি। ‘ (সারা)

‘ আরে আরে, তুমি তো নতুন বউ। তুমি পারবা না। তুমি শুধু বসে বসে অর্ডার করো। ‘ (প্রহর)

উনার এসব ঢংমার্কা কথাশুনে আমি মহাবিরক্ত হলাম। মিল্লাতভাই কঠিন চোখে প্রহরের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ এসব কি প্রেম? বাচ্চা মেয়েটাকে এভাবে জ্বালাচ্ছিস কেন?’ (মিল্লাত)

‘ ঐ মহিলাকে তোর বাচ্চা মনে হয়? এটাই কলি যুগ রে ভায়া। খালি চোখে দেখবা পিচ্চি, চশমা লাগিয়ে দেখবা মহিলা ‘ (প্রহর)

‘তোর চোখে মনে হয় পাওয়ারি চশমা? ‘ (মিল্লাত)

প্রহরভাই হালকা কেশে বললেন,

‘ আসলে ভায়া, আমাদের অভিজ্ঞতা আছে। ‘ (প্রহর)

প্রহরভাইয়ের এসব ফালতু নাটক প্রেম আর ফারহান মহা কৌতুহল নিয়ে দেখছে। মনে হচ্ছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছেন উনি। মনোযোগ দিয়ে না দেখলে হয়তো বড়সড় কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে। এসব কথার মাঝেই হঠাৎ দেখলাম সারা আপু সব খাবার আগে শুধু প্রেমকেই ঢেলে দিচ্ছে। তাও ভীষণ যত্নসহকারে! যা দেখে আমার চোখ কপালে!
হায়রে, আজ সিঙ্গেল বলে।
অনেক কষ্টে সকালের খাবারটা শেষ করে একটু রেস্ট নিয়ে পুরো রিসোর্টটা ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত হলো। সেই সিদ্ধান্তে সবাই একমত। শুধু অমত করলাম আমি। জীবনে কখনো খাবার সার্ভ না করা আমি আজ সার্ভ করে ভীষণ ক্লান্ত। অতএব, এখন আমি রুমে বসে, দরকার পরলে শুয়ে বাইরের দৃশ্য দেখবো৷ না হলে ঘুমাবো। কিন্তু বরাবরের মতো প্রহরভাই আমার বিরুদ্ধে জেঁকে বসলেন। আমাকে যেতেই হবে। উনার ভাষ্যমতে আমার মতো একটা ছিঁচকাদুনে মেয়েকে একটা রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না। দেখা গেলো একটা মেয়েটা কেঁদে বন্যা বানিয়ে ফেলেছে।
উনি সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

‘ তোমরা যেতে ধরো সামনে। আমি এই শয়তানকে নিয়ে এক্ষুণি আসছি। ‘ (প্রহর)

উনার আদেশ শুনে যে যার মতো হাঁটা শুরু করলো। এদিকে ফ্যাসাদে পরো গেলাম আমি। উনি আমার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে বললেন,

‘ চল যাই। এখানে একা থেকে কি করবি? ‘ (প্রহর)

‘আমার একা থাকতেই ভালো লাগছে। আপনি প্লিজ আমাকে একা থাকতে দিন ‘ (আমি)

আমার কথা উনি শুনলেন না। এদিকে আমি হাত ছাড়ার জন্য চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছি। এমন সময় হুট করেই হাতটা ছেড়ে দিলেন উনি। আর আমি সোজা পরে গেলাম মেঝেতে। মেঝেতে পরামাত্র ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলাম। কোমরটা বোধহয় ভেঙ্গেই গেলো আল্লাহ! উনি সেসব তোয়াক্কা না করে বললেন,

‘ একদম ঢং করবি না বলে দিলাম। উঠে পর। তুই আবার ভাবিস না আমি তোকে কোলে তুলে নিয়ে যাবো ‘ (প্রহর)

বিলাসবহুল হোটেলটার তৃতীয় তলায় ইজি চেয়ারে বসে আপনমনে সিগারেট টানছে মাহিম। তার সামনে বসে প্রকাশ হাত চুলকাচ্ছে। নিশ্চই কিছু বলতে চাচ্ছে। কিন্তু ভয়ে ভয়ে আর বলে উঠতে পারছে না৷ মাহিম সেটা বুঝতে পেরে বললো,

‘ কিছু বলবে? ‘ (মাহিম)

‘ আসলে স্যার। হঠাৎ চিটাগং আসাটা কি ঠিক হলো? আমরা ঢাকা থেকেই লোক পাঠিয়ে দিতাম। ‘ (প্রকাশ)

খুব দ্রুত কথাটা বলে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো প্রকাশ। বোঝা গেলো, মনে মনে অসংখ্যবার এই কথাটুকু রপ্ত করেছে সে৷ তাই অনুমতি পাওয়া মাত্র সেটা উগলে দিয়েছে। মাহিম চেয়ার থেকে উঠে বললো,

‘ প্রহরের সাথে শেষবারের মতো দেখা করতে চাই। জানতে চাই ওর শেষ ইচ্ছে কি! ইন্টারেস্টিং হবে না গল্পটা? ‘ (মাহিম)

কথাটা শুনে আঁতকে উঠলো প্রকাশ। কিন্তু স্যারের সামনে সেটা গোপন রাখার চেষ্টা করে বললো,

‘ এটা রিস্কি হবে স্যার ‘ (প্রকাশ)

‘হুম’ (মাহিম)

হুম বলেই নিশ্চুপ থাকলো মাহিম। অতঃপর ক্ষণকাল মৌনতা বজায় রেখে পকেট থেকে ফোন বের করলো সে। কাঙ্ক্ষিত নাম্বারটা ডায়াল করে ফোনটা কানে ধরার সাথে সাথেই ওপাশ থেকে ফোনটা রিসিভ করলো কেউ। মাহিম স্পিকারে দিয়ে বললো,

‘ প্রেয়সীকে পাওয়া গেছে? ‘ (মাহিম)

ফোনের ওপাশের অজ্ঞাত মানব গম্ভীর কন্ঠে বললো,

‘ জি বস। এখন কি করবো? ‘

‘ চিটাগংয়ে পাঠিয়ে দাও। ‘ (মাহিম)

‘ বস এতদূরে! সমস্যা হয়ে গেলে?’

‘ কিছুই হবে না। তুমি তোমার কাজ করো ‘ (মাহিম)

‘ জি বস’
#শুধু_তুই
—(সিজন২)
#পর্বঃ১৬
#Rifat Amin

চট্টগ্রামের সব থেকে বড়, বিজয় কনসার্টের মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন প্রহরভাই। তাঁর খানিকটা সামনেই উল্লাসিত লাখো শ্রোতা তাঁদের প্রিয় সিংগারের কন্ঠে গান শোনার জন্য মুখিয়ে আছেন প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে। কনসার্ট শুরু হওয়া কথা ছিলো সন্ধ্যা ছ’টায়। কিন্তু প্রহরভাইয়ের এখানে পৌঁছাতে লেট হওয়ায় এখন সঁন্ধ্যা সাতটায় শুরু হবে মূল অনুষ্ঠান। এতক্ষণ উনার আসতে বিলম্ব হওয়ায় খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন প্রতিটা দর্শক। তারা ভেবেছিলো হয়তো তিনি আসবেন না। নিশ্চই আয়োজক অথরিটি তাঁদের বোকা বানিয়েছে। কিন্তু অবশেষে সব তর্ক বিতর্ক পেরিয়ে প্রহরভাই যখন মঞ্চে উঠে পড়লেন। তখন উল্লাসে ফেটে পরলো সবাই।
আমি আর সারা আপু মঞ্চের ঠিক সামনে স্পেশাল জোনে বসে কনসার্ট দেখার জন্য মুখিয়ে আছি৷ ঠিক মুখিয়ে নয়। খুব তারাতারি এখান থেকে বেড়িয়ে গেলেই যেনো বেঁচে যাই।
আমরা যে কারণে এখানে থাকতে খুব আনন্দ পাচ্ছি না, ঠিক সেই কারণে প্রহরভাইয়ের এখানে পৌঁছাতে লেট হয়েছে। কয়েকদিন আগে মাহিম নামক এক ছেলে আমাকে ফোনে করে হু’ম’কি দিয়েছিলো। তখন মেজাজটা খারাপ থাকায় এতটা সিরিয়াসলি নেইনি বিষয়টা । বরং ফোনেই ধোলাই দিয়েছিলাম। সেই ব্যাক্তি তিনদিন আগে হোটেলে ডিনার করার সময় প্রহরভাইকেও ফোন দিয়ে হু’ম’কি দিয়েছিলেন। কিন্তু এই সাধারণ হু’মকি যে বাস্তবে রুপ নেবে। তা আমরা কেউ স্বপ্নেও ভাবিনি। গতকাল হঠাৎ বাসা থেকে ফোন আসে প্রেয়সীকে পাওয়া যাচ্ছে না। আম্মি, ঐশী কেঁদে কেটে অস্থির। বিকালে আঙ্কেলের (মামার) যাওয়ার কথা ছিলো স্কুল থেকে প্রেয়সীকে আনতে। কিন্তু মাঝপথে হঠাৎ গাড়িটা ঝামেলা করায় খানিকটা বিলম্ব হয়েছে যেতে। আর এই সময়টুকুর মাঝেই প্রেয়সী নিখোঁজ। নিউজটা শোনার পর থেকেই প্রহরভাই স্তব্ধ হয়ে আছেন। না পারছেন কনসার্টটা ক্যান্সেল করে দিতে আর না পারছেন এখানে থাকতে। তবে অনেক ভাবনার পর তিনি কনসার্টে এটেন্ড করেছেন। প্রেম, ফারহান আর মিল্লাতভাইকে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সাথে প্রহরভাইয়ের কিছু লোকজনও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সেফটির জন্য। কিভাবে প্রেয়সী নিখোঁজ হলো বিষয়টা এখনো পরিষ্কার হয়নি। তবে খুব তারাতারি জানা যাবে বলে পুলিশ আশ্বস্ত করেছে। যাতে প্রেয়সী ঢাকা থেকে বের না হতে পারে তাঁর জন্য প্রতিটা মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। কিন্তু প্রহরভাই বসে নেই। তিনি চিটাগংয়েও তাঁর গুপ্ত লোকজনদের লাগিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের কাছ থেকে কিছু না কিছু ইনফরমেশন অবশ্যই পাওয়া যাবে।

‘ রশ্নি, ভাইয়া কখন গান শুরু করবে? আমার এখানে থাকতে একদম ভালো লাগছে না। ‘ (সারা)

সারা আপুর কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো আমার। সন্ধ্যা পার হয়ে এখন রাতের ঘন আঁধারে ছেয়ে গেছে আকাশ। কনসার্টের রংবেরঙের নিয়ন আলোয় চারপাশ মুখরিত। সাউন্ড বক্সের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক হিসাবে বাজছে ‘ আমার সোনার বাংলা। আমি তোমায় ভালোবাসি। ‘ প্রহরভাই দাঁড়িয়ে বড় বড় বিজনেস ম্যান আর কনসার্ট অথরিটিদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছেন৷ দেখে মনে হচ্ছে উনার কোনো চিন্তা নেই। অথচ এই মানুষটাই প্রেয়সীর চিন্তায় খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। আমি গরমের তাড়নায় নিজের চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে বললাম,

‘ আমারো ভালোলাগছে না। একদম অসহ্য লাগছে। ‘ (আমি)

‘ আচ্ছা, একবার তোমার ভাইকে ফোন করে ওখানকার খবর নেবো? ‘ (সারা)

সারা আপু আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে উত্তরের অপেক্ষায় সময় নষ্ট করলেন না। ফোন বের করে প্রেমকে ফোন লাগালেন৷ এই সাউন্ড বক্সের শব্দে কি আদৌ ফোনে কথা বলা সম্ভব? কানে হেডফোন ঢুকিয়ে ফোন করার পর সারা আপু মনমরা হয়ে আমার দিকে তাকালেন৷ মন খারাপ করে বললেন,

‘ ফোন ধরছে না তো। কেটে দিচ্ছে। ‘ (সারা)

‘ আচ্ছা টেনশন করিও না। আর ফোন ধরলেও তো এই সাউন্ডে কথা বলতে পারতা না। ‘ (আমি)

আমাদের কথার মাঝেই মঞ্চে গান শুরু হওয়ার জন্য বাদ্যযন্ত্রগুলো বাজানো শুরু হলো। ইন্সট্রুমেন্টের তীব্র সাউন্ড আর দর্শকের চিৎকারে পুরো মঞ্চ যেনো সময়ের সাথে সাথে কেঁপে কেঁপে উঠছে।

‘সারাক্ষণ, কেন যে ভাবাও?
মায়াবী মায়াজালে জড়াও
নিজের মতোই হঠাৎ, দেখা দাও
ইচ্ছে করেই আবার, হারিয়ে যাও।

কোথায় থাকো? কি তোমার নাম?
কেন আবেগ মাখো অবিরাম?
কোথায় থাকো? কি তোমার নাম?
কেন আবেগ মাখো অবিরাম?
কেন আবেগ মাখো অবিরাম?

কখনো উড়াও, কখনো ভাসাও
কখনো ভাবাও, কখনো হাসাও,
কখনো উড়াও, কখনো ভাসাও
কখনো ভাবাও, কখনো হাসাও।

অহর্নিশ, ঘুম হারা, চোখের পাতায়
কথা হয়, রাত ভর, তারায় তারায়,
তোমার ভেতরে আজ নীরবতা
আমায় ঘিরে রাখে অস্থিরতা।

অহর্নিশ, ঘুম হারা, চোখের পাতায়
কথা হয়, রাত ভর, তারায় তারায়,
তোমার ভেতরে আজ নীরবতা
আমায় ঘিরে রাখে অস্থিরতা ..
কোথায় থাকো? কি তোমার নাম?
কেন আবেগ মাখো অবিরাম?
কোথায় থাকো? কি তোমার নাম?
কেন আবেগ মাখো অবিরাম?
কেন আবেগ মাখো অবিরাম?

কখনো উড়াও, কখনো ভাসাও
কখনো ভাবাও, কখনো হাসাও …’

গানটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই দর্শকের উচ্ছাসে মুখরিত হলো পুরো মাঠ৷ অতঃপর প্রহরভাই কিছু কথা বলে আবারো নতুন গান ধরলেন। পরপর দুটো গান শেষ করার পর তার পারফরম্যান্স শেষ করলেন। অতঃপর কিছু বিজনেসম্যানের ছেলে মেয়েরা মঞ্চে উঠে উনার সাথে হাত মোলাকাত করলেন। সেলফি তুললেন। যা দেখে আমার মনটা খারাপ থেকে খারাপতর হওয়া শুরু করলো। কত সুন্দর সুন্দর বড়লোকের মেয়ে বাবা! আবার উনিও কত সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছেন। নিশ্চই পছন্দ হয়েছে উনার। পছন্দ না হওয়ারই বা কি আছে৷ আর মেয়েগুলোই বা এমন কেন? সব গায়ে পরা স্বভাব। আরো কিছুক্ষণ ওখানে থাকার কথা ছিলো প্রহরভাইয়ের। কিন্তু মাত্র একঘন্টার মধ্যেই উনার সব কাজকর্ম কমপ্লিট করলেন। মঞ্চ থেকে নেমে পরার আগে অথরিটির অনুরোধে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা প্রদান করলেন।

প্রহরভাইয়ের পার্সোনাল গাড়িতে করে আমরা রিসোর্টে ফিরলাম। এখানে এসে মন খারাপ যেনো আরো জেঁকে বসলো। পুরো রিসোর্টটা একদম ফাঁকা। কত আশা নিয়ে এসেছিলাম অথচ দুটো দিনও সবার সাথে মজা করতে পারলাম না! প্রহরভাই রুমে ঢুকার আগে আমাদের সামনে এসে বললেন,

‘ তোমরাও ঢাকা চলে যাও। আমি এখানে আজকের দিনটা থাকবো ‘ (প্রহর)

আমি বিরোধীতা করে বললাম,

‘ চলে গেলে একসাথে যাবো। আমার এখানে থাকতে ভালোলাগছে না ‘ (আমি)

সারা আপু বললেন,

‘ আমিও ঢাকা ফিরবো৷ এখানে ভালো লাগছে না ‘

‘ দেখ রশ্নি। মাথা গরম করিস না। আমি দুটো গার্ডসের ব্যাবস্থা করে দিচ্ছি। ‘ (প্রহর)

‘ বললাম না আমি যাবো না। ‘ (আমি)

উনি শান্ত চোখে তাকালেন। পুরো শরীরে নিবীর ক্লান্তির ছায়া। গায়ে এখনো মুজিবকোর্ট অবহেলায় জড়ানো রয়েছে। তিনি ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,

‘ এখানে থেকে কি করবি? কার সাথে থাকবি? ‘ (প্রহর)

উনার কথায় আমার টনক নড়লো। আসলেই তো, সবাই না থাকলে কি আমি একাই প্রহরভাইয়ের কাছে থাকবো? কিন্তু উনি একাই বা এখানে কি করবেন? উনার ভাবসাব কিছু বুঝিনা বাবা! আমি উল্টা প্রশ্ন করলাম,

‘ আপনি এখানে থেকে কি করবেন? ‘ (আমি)

উনি কঠিনদৃষ্টিতে তাকালেন। অতঃপর সারা আপুর দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘ কেউ যদি যেতে না চায়, তাহলে সে যাবেনা। সারা, তুমি সবকিছু রেডি করে নাও৷ আমি লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি। ‘ (প্রহর)

উনার কথায় আমি আহত দৃষ্টিতে তাকলাম। এমন বিহেভ করার কি আছে? এদিকে সারা আপু আবার প্রেমের দেখা পাবে ভাবতেই ঢাকা যাওয়ার জন্য ব্যাস্ত হয়ে উঠছে। আর কোনো কথা না বলে আপু ফোন নিয়ে ওর রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন। আপু চলে যেতেই আমিও যাবো এমন সময় উনি বললেন,

‘ রুমে আয়। ‘ (প্রহর)

আমি মূর্তিন্যায় দাঁড়িয়ে রইলাম। উনার সাথে আর একটা কথাও বলবো না। অসহ্যকর মানুষ। আমার এমন ঘাড়ত্যাড়ামো দেখে উনি শক্ত করে হাত ধরে টানতে টানতে রুমের ভীতর নিয়ে গেলেন। ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠলাম আমি। তবুও উনি ভ্রুক্ষেপ করলেন না। হঠাৎ রুমের সামনে সার্ভেন্ট এসে পরায় আমার ছেড়ে দিলেন উনি।

‘ স্যার। ডিনারটা কি এখানে আনবো নাকি ডাইনিংয়ে? ‘ (সার্ভেন্ট)

‘ আমি খেয়েছি। শুধু দুজনের জন্য ডাইনিংয়ে খাবার রেডি করো। ‘ (প্রহর)

লোকটা চলে গেলো। অতঃপর প্রহরভাই আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বললেন,

‘ মুখের উপর কথা বলতে শিখে গেছিস দেখছি। আমার প্রতি তোর সামান্য রেস্পেক্টও আসে না, তাইনা? ‘(প্রহর)

উনার কথায় আমি আহত দৃষ্টিতে তাকালাম৷ ঠোঁট উল্টে বললাম,

‘ সরি ‘ (আমি)

প্রহরভাই জবান না দিয়ে কাউকে ফোন করলেন। ফোনটা রিসিভ হওয়া মাত্র উনি বললেন,

‘ তোর লোকেশন পাঠা। আমার বোনের গায়ে যদি সামান্য আঁচড়ও লাগে। তাহলে তুইসহ তোর চোদ্দগুষ্টিকে আমি দেশছাড়া করাবো ‘ (প্রহর)

ওপাশ থেকে কেউ জবাব দিলেন। হয়তো ইনিই মাহিম।

‘ আরে না না ব্রো। তোর বোন মানে তো আমারো বোন তাইনা। ওর কোনো ক্ষতি হবে না। ক্ষতি হবে শুধু হবে তোর। ‘ (মাহিম)

‘ প্রহর খানকে যদি ভালোমতো চিনে থাকিস। তাহলে এসব থেকে বের হয়ে আয়। ভালো হবে না কিন্তু’ (প্রহর)

‘ তুই আমার যে ক্ষতিটা করেছিস। তাঁর ক্ষতিপূরণ কখনো সম্ভব নয়। ‘ (মাহিম)

‘ ক্ষতি! কি ক্ষতি করেছি আমি তোর? আমি যা করেছি তোর ভালোর জন্যই করেছি ‘ (প্রহর)

মাহিম হেসে ফোন কেটে দিলেন। আমি উনার এমন কঠিন রূপ দেখে ভয়ে কুঁকড়ে গেলাম। মনে সাহস যুগিয়ে বললাম,

‘ কি ক্ষতি করেছেন উনার? ‘ (আমি)

ফোনটা কেটে যাওয়ায় উনার রাগ যেনো চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে লাগলো। কোনো কথাবার্তা ছাড়াই আমার গলা টি’পে ধরে বললেন,

‘ প্রহরখান কাউকে জবাবদিহি করেনি। সামনেও করবেনা।’ (প্রহর)

মুহুর্তেই গলায় ভীষণ টান অনুভব করলাম আমি। উনার শক্তপোক্ত হাতের জোড়ে নিশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হলো। এই প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম প্রহরখানের রাগ কতটা মারাত্মক হতে পারে।

চলবে?
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here