শুধু তুই ২ ❤️ পর্ব -১৩+১৪

#শুধু_তুই
—-(সিজন২)
#পর্বঃ১৩
#Rifat_Amin

ঘড়িতে এখন রাত ১১ বেজে ৯ মিনিট। চারদিকে ঘোর নিস্তব্ধতা! মনে হচ্ছে এই ধরণীতে শুধুমাত্র একটি মানবী’ই অবস্থান করছে অথচ সেও এখন বাক্যহীন। অতএব এখন পৃথিবীকে সম্পুর্ণ শব্দহীন থাকা উচিৎ। প্রাণহীন থাকা উচিৎ। কিন্তু সেটায় বাধ সেঁধেছে অদূর থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝিঁ পোকা ডাক। বিলাসবহুল রিসোর্টের সব থেকে সুন্দর রুমটা বুক করা হয়েছে প্রেম আর সারার জন্য। সেই রুমের দক্ষিণ দিকটা ঘন তৃণাচ্ছন্ন। জানালা দিয়ে স্পষ্ট অবলোকন করা যায় সেই দৃশ্য। চাঁদের মোলায়েম আলো আর কৃত্রিম রঙিন আলোয় যায়গাটা কোনো স্বর্গরাজ্যের একটুকরো বাগান মনে হচ্ছে। সারা সেই সুন্দর দৃশ্যটা অপলক দৃষ্টিতে অবলোকন করছে। রুমে এখনো প্রেম আসেনি। কাল কোথায় ঘুরতে যাবে সেই প্লান করতে ব্যাস্ত সবাই। সারা সেই ঘন্টাখানেক থেকে রুমের ভীতর মূর্তির মতো বসে আছে। সে কখনো ভাবেনি প্রেমের সাথে তাঁর বিয়ে হওয়া সম্ভব। কেননা সারার পরিবার এমনকি প্রেম নিজেও এই বিষয়ে না করেছিলো। কত চেষ্টা, কত আত্মত্যাগে আজ প্রেমকে পেয়েছে সে। শেষ পর্যন্ত বাসা থেকে পালিয়ে বিয়েটা হলো। আর কখনো কি বাসায় যেতে পারবো? বাবা-মা কি আমায় আদৌ মেনে নেবে? নাকি আগের মতোই শুধু মা’রবে। সারা আর ভাবলো না। বিছানা থেকে উঠে রুমের লাইট টা জ্বালালো। পুরো রুমটা এখন ফুল দিয়ে সাজানো। সেই ফুল থেকে হালকা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসছে। এই সবটুকু ডেকোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছিলো রিসোর্ট অথরিটি । সারা টি টেবিলে রাখা জগটা থেকে একগ্লাস পানি খেয়ে নিলো ঢকঢক করে। সাথে সাথেই খট করে খুলে গেলো রুমের দরজা। প্রেম হুট করে রুমে ঢুকে পড়ায় মোটামুটি অস্বস্তিতেই পরে পড়ে গেলো সারা। বাসর রাত নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা করেছিলাম এত দিন। তার শুরুটাই বাজেভাবে হলো। প্রেম রুমে ঢুকেই স্বাভাবিক স্বরে বললো,

‘ দাঁড়িয়ে আছো যে? ঘুমাওনি? ‘ (প্রেম)

প্রেমের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলো সারা৷ আশ্চর্য! বাসর রাতে বর রুমে ঢুকার পূর্বেই বউ ঘুমায় নাকি? সে বিছানায় বসে বললো,

‘ না। হাসবেন্ড আসার আগে ওয়াইফ তো ঘুমায় না মেবি। তাও আবার বাসর রাত ‘ (সারা)

সারার কথা শুনে প্রেম মুচকি হাসলো। গায়ের নীল টিশার্টটা খুলতে খুলতে বললো,

‘ “Life is not a bed of rose” এই প্রবাদটা ছোট থেকেই শুনে এসেছো তাই না? এর অর্থ জীবন কোনো পুষ্পশয্যা নয়। আচ্ছা এখন কি আমরা জীবনের বাইরে অবস্থান করছি? তাহলে এই পুষ্পশয্যার ব্যাবস্থা করার মানে কি? ‘ (প্রেম)

প্রেমের যুক্তিপূর্ণ কথাটা বেশ লাগলো সারার। তবে জবাব দিলো না। জীবনে বাসর রাত সম্পর্কে অনেক স্বপ্ন এঁকেছে সে। প্রেম ওর জীবনে আসার পর থেকে সেই স্বপ্নে যেনো আরো বর্ষণ ঘটিয়ে সতেজ করেছে সবকিছু। সারার কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে আবারো মুচকি হাসলো প্রেম। এখন ওর শরীরে শুধুমাত্র একটা সেন্টু গেন্জি আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। সে বিছানায় উঠে বললো,

‘ তুমি শুধু আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে। আমাকে পাওয়ার জন্যই এতদিন অজস্র পাগলামি করেছো। আজ তো পেয়ে গেলে। কেমন অনুভুতি হচ্ছে তোমার? ‘ (প্রেম)

‘ আশ্চর্য। তুমি কি সাংবাদিক নাকি’ (সারা)

প্রেমের কথায় বেশ বিরক্ত ভঙ্গিতেই উত্তরটা দিলো সারা। এই উদ্ভট প্রেম আজীবন এমন থাকবে নাকি আল্লাহ! এ আমি কাকে বিয়ে করলাম। সারার জবাবে প্রেম হাসিতে ঢলে পড়লো। অতঃপর সিরিয়াস হয়ে বললো,

‘ তুমি আমাকে বিয়ে করেছো ভালো কথা। কিন্তু ভুলেও কখনো স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবে না প্লিজ। তুমি ভালো করেই জানো আমি কেমন! ‘ (প্রেম)

প্রেমের সিরিয়াস ভঙ্গির বাণী হলেও সারা অতটা গায়ে মাখলো না। ওর কথাটা শেষ হওয়া মাত্র সারা তীব্র বেগে প্রেমের উপর ঝুকে ওর শার্টের কলার খুঁজে না পেয়ে সেন্টু গেন্জি ধরে বললো,

‘ তুই শুধুই আমার। ওকে? তোকে পাওয়ার জন্য কি কম জ্বালানী খরচ করেছি। ভালোবাসা দিবি কি না বল?’ (সারা)

সারার হঠাৎ আক্রমণে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো প্রেম। অতঃপর নিজ হাত দিয়ে সারার হাত ধরে বললো,

‘ এসব কে শিখাইছে তোমায়? আমার খচ্চর বোনটা দেখছি ভালো করেই তোমার মাথা খেয়েছে । ‘ (প্রেম)

প্রেমের কাছ থেকে এই কথা শোনার পর সারার মুখটা দেখার মতো ছিলো। ধরা পরা চোরের মতো সে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো। রশ্নি তো বলেছিলো প্রেম এমন কথা বললে রাগ করে এই ব্যাবহার করতে। করলামও ভালো। বাট ধরা পরে গেলাম। ধুর ছাই। সারা মনে মনে এই কথা ভাবতেই প্রেম বললো,

‘ সে যাই হোক। আমি যা বলছি তা মাথায় রেখো। গুড নাইট। ‘ (প্রেম)

‘ প্রেমমম’ (সারা)

অশ্রুসজল চোখে তাকিয়ে ডাকলো সারা। এতদিন যাকে পাওয়ার জন্য সবকিছু ত্যাগ করে ছুটে এসেছে। সেই আজ এই কথা বলছে। আজ সত্যিই অনেক খারাপ লাগছে। নিজের প্রতি ভীষণ রাগ হচ্ছে। ঘৃণা হচ্ছে। আমার জীবনটা কি সত্যিই এমন হওয়াই উচিৎ ছিলো? পৃথিবীর সবাই তার প্রিয় মানুষের সাথে হাসি খুশি, সুখে শান্তিতে আছে। শুধু আমার কপালেই এত যন্ত্রণা কেনো? চোখের পানি অবিরল ধারায় পড়তেই প্রেম বললো,

‘ কাঁদছো কেনো পাগলী ‘ (প্রেম)

প্রেমের আদুরে সম্মোধনে আরো কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো সারা। প্রেম বালিশে মাথা দিয়ে বললো,

‘ এদিকে আসো বউ ‘ (প্রেম)

সারা চোখ তুলে চাইলো। প্রেম কি এখন মজা করছে? ঝাঁপসা চোখে তাকিয়ে আবারো চোখ ফিরিয়ে নিলো সারা। কথা বললো না। প্রেম মুচকি হাসলো। বালিশ থেকে মাথা উঠিয়ে সারার হাতটা আলতো করে ধরে বললো,

‘ এই চোখের পানিটুকুই যদি এখন আমার দেওয়া সুখের অনুভুতি হয় তাহলে কি খুব ক্ষতি হবে সারা? ‘ (প্রেম)

সারা ভেজা চোখে তাকালো। প্রেমের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো সে মজা করছে কি না। প্রেম আবার মুচকি হেসে বললো,

‘ বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা? ‘ (প্রেম)

সারা বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললো,

‘ উঁহু ‘ (সারা)

প্রেম আবারো হাসলো। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট থেকে একটা গোল্ড রিং বের করে সারার হাতে পরিয়ে দিয়ে বললো,

‘আমি এতই বেকার না যে বউকে ছোটখাটো একটা গিফ্ট দিতে পারবো না। যদিও গিফ্টটা খুব দামি না। তবুও আশা করি তোমার ঠোঁটে হাসি ফুটবে।’ (প্রেম)

সারা হাসলো। সে এতটাই খুশি হলো যে হাসতে হাসতে কেঁদে ফেলার উপক্রম হলো। শেষ পর্যন্ত প্রেমের কথাই সত্য বলে প্রমাণ হলো। কান্নায় ভেঙ্গে পরলো সারা। চোখের পানিটুকু সুখের হলো। প্রেম সারার কানে কানে বললো,

‘ বেঁচে থাকার জন্য এরকম একটা মহুর্ত হলেই হয় তাইনা? ‘ (প্রেম)

সারা ঝাঁপিয়ে পড়লো প্রেমের বুকে। শব্দ করে কাঁদলো এবার। মনের যতো কষ্ট, ব্যাথা, যন্ত্রণা জমা ছিলো। সব বিসর্জন দিলো এই চোখের পানি দিয়ে। এই যায়গাটুকুই তো দরকার ছিলো। কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে গেলেও যদি প্রিয় মানুষের বুকে একটু ঠাই পাওয়া যায়। তাহলে আর চাই কি? প্রেম সারাকে বুকে আগলে রেখে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বসলো,

‘ বাসার জন্য মন খারাপ হয়? সমস্যা নাই। আস্তে আস্তে সব মানিয়ে নেবো। ‘ (প্রেম)

এই মহুর্তে সারা নিজের সব থেকে সুন্দর স্মৃতিটুকু লিখলো মনের খাতায়।

—-

‘ তুই এখানে কি করছিস? ‘ (প্রহর)

প্রহরভাইয়ের কথায় চমকে উঠলাম আমি। ভূত দেখার মতো পিছনে তাকিয়ে ক্ষণকাল নিজেকে সময় দিয়ে শান্ত করলাম মস্তিষ্ক। রুমের সামনে করিডোরে বসে আপন মনে বাগানের সৌন্দর্য বিলাস করছিলাম এতক্ষণ। এমন সময় উনার আগমনে বেশ বিরক্তই হলাম। অতঃপর শান্তস্বরে বললাম,

‘ এমনেই বসে মশার কামর খাই। আপনি এখানে কেনো? ‘ (আমি)

উনি ভ্রু কুঁচকে তাকালেন। কথার জবাব না দিয়ে আমার পাশে বসে পড়লেন উনি। বেশ গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

‘ বুঝলি রশ্নি। বড়ই বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে। চোখের সামনে ছোট ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেলো৷ এটা কি মানা যায়? তুই বল। ‘ (প্রহর)

‘ ঢং করবেন না তো। কিছু বললে বলেন। নাহলে বিদেয় হন ‘ (আমি)

উনার ছ্যাকায়িত বাণী শুনে বেশ রাগ হলো। তাই কড়া কন্ঠেই কথাটা বললাম। উনি কথাটা শুনে যেনো আরো ছ্যাকা খেলেন। আমার একটু কাছে এসে বসে বসলেন,

‘ এইযে তুইও ছ্যাকা দিলি। আমি এক্ষুনি রাস্তায় বের হলে মেয়েরা হুমরি খেয়ে পড়বে বুঝলি। তারা যদি জানে, তোর মতো একটা অভদ্র মেয়ে আমাকে ছ্যাকা দিয়েছে। তাহলে কি তোকে আস্ত রাখবে ভেবেছিস? ‘ (প্রহর)

‘ রাস্তার মানুষরা রাস্তাতেই দাম পায়। তার জলজ্যন্ত প্রমাণ আপনি। ‘ (আমি)

আমার কথা প্রহরভাই ছ্যাকা স্কোয়ার, কিউব খেয়ে নিলেন। কাতর কন্ঠে বললেন,

‘ হে বিধাতা। তুমি আমাকে বিয়ে করার তৌফিক দান করো। এই ছ্যাকাগুলো আর নিতে পারছি না। ‘ (প্রহর)

‘ আপনি বিদেয় হন প্লিজ। ‘ (আমি)
#শুধু_তুই
—–(সিজন২)
#পর্বঃ১৪
#Rifat_Amin

‘ এ কি প্রেম!! তুমি এখনো সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দাওনি? ‘ (সারা)

রিসোর্টের ভিতরে দোলনায় বসে আরামসে সিগারেট টানছিলো প্রেম। এমন সময় সারার আগমন কিছুটা বিরক্ত করলো তাকে। সদ্য বিয়ে করা বউয়ের সামনে সিগারেট খাওয়াটা বোধহয় উচিত হবে না। এই ভেবে অর্ধ খাওয়া সিগারেটটা মাটিতে ফেলে দিলো প্রেম। অতঃপর করুণ দৃষ্টিতে সারার দিকে তাকালো । সারা তার কাঙ্ক্ষিত উত্তরটা না পেয়ে দোলনায় ধপ করে বসে বললো,

‘ কি হলো? উত্তর দিচ্ছো না যে! ‘ (সারা)

প্রেম নিরপরাধ দৃষ্টিতে তাকালো। সারা যে তাঁর সিগারেট খাওয়ার কথা জানে না। বিষয়টা তেমন না। এর আগেও ওর সামনে সিগারেট খেয়েছিলো সে। কিন্তু তখন তো ওর কোনো বাঁধা দেয়ার অধিকার ছিলো না। বাঁধা দিলেও কখনো শুনতো না সে। অথচ গতকাল তো সে কথা দিয়েছিলো সারার কথা শুনবে! মেনে চলার চেষ্টা করবে। প্রেম বললো,

‘ সত্যি বলছি, আমি অনেকদিন থেকে খাইনা। কিন্তু সকাল বেলা এই মনোরম পরিবেশটার সাথে একটা সিগারেট না হলে চলছিলো না। ‘ (প্রেম)

‘ তাই না? ঘরে বউ রেখে ভালোই সিগারেট খাওয়া হচ্ছে! ‘ (সারা)

‘ সরি বউ ‘ (প্রেম)

সারা হাসলো। হাতে থাকা ভাঙ্গা আইফোনটা দিয়ে একটা সেলফি তুলতে গিয়ে দেখলো ফর্ন্ট ক্যামেরা কিছুটা ড্যামেজ হয়ে গেছে। অতঃপর আহত দৃষ্টিতে প্রেমের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তোমার ফোনটা দাও। একটা সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দেই। ‘ (সারা)

হঠাৎ প্রেমের মনে পড়লো সে নিজেও ফেসবুক চালায়৷ কিন্তু অনেকদিন ঢোকা হয় না। নিজের ফোনটা সারার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ আমরা মুসলিম না? তুমি আর সোশাল মিডিয়ায় নিজের পিক আপলোড দিবা না। সেলফিগুলা এমনেই তুলে রাখো। নিজেই মাঝে মাঝে দেখিও। ‘ (প্রেম)

সারা খুব খুশি হলো প্রেমের কথায়। প্রেম যে মন থেকে ওকে মেনে নিতে শুরু করেছে, এতেই সে অনেক খুশি। ওর থেকে চাওয়ার আর কিছু নেই। হঠাৎ সারার নজর আটকে গেলো প্রেমের পরনে লুঙ্গি আর সাদা সেন্টু গেন্জির দিকে। সে খানিকটা অবাক দৃষ্টিতেই তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি লুঙ্গি পরতে পারো? ‘ (সারা)

প্রেম সারাকে দুহাতে আরেকটু কাছে আগলে রেখে বললো,

‘ কেনো? খারাপ লাগছে নাকি? ‘ (প্রেম)

‘ একদম হিরো লাগছে। কিন্তু আমায় ছাড়ো প্লিজ। তোমার মুখে সিগারেটের গন্ধ ‘ (সারা)

খানিকটা নড়েচড়ে বললো সারা। প্রেম ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো,

‘ লুঙ্গি পড়েও কাউকে হিরো লাগে এটা প্রথম শুনলাম ‘ (প্রেম)

সারা খানিকটা আহত হলো। আরে বেটা ধরছিস যখন ছাড়লি কেন? এটা তো কথার কথা বললাম যে সিগারেটের গন্ধ আসছে। তোর উচিৎ, আরো কাছে টেনে নেয়া৷ বেটা আনরোমান্টিক। সারা অতঃপর দাঁড়িয়ে বললো,

‘ যে কাজের জন্য তোমায় খোঁজ করছিলাম, সেটাই তো বলা হয়নি। ভাইয়া তোমাকে ডাকতে পাঠিয়েছিলো। তারাতাড়ি আসো ‘ (সারা)

‘ কোন ভাইয়া? আরে বাদ দাও তো, তোমায় অনেক স্নিগ্ধ লাগছে সারা৷ শাওয়ার নিছো ভালো কথা, কিন্তু চুল তো এখনো শুকায়নি! ‘ (প্রেম)

প্রেমের কথায় সারা যতটা না খুশি হলো। তার থেকেও শতগুণ লজ্জায় মিইয়ে গেলো সে। আজ প্রথম বোধহয় প্রেম ওর সৌন্দর্যের প্রসংশা করছে। সারা দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। বরং যথেষ্টর থেকেও বেশী বলা যায়। কিন্তু প্রেম এতদিন এই সুন্দরী রমণীর দিকে ভুলেও অন্তরের দৃষ্টিতে তাকায়নি। আজ প্রেম সেই লজ্জাময়ী রমণীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। একবার ভালো করে সারার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দেখলো একটা হালকা টিয়া কালারের শাড়ি পড়েছে সে। কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ ভদ্রটার আসন নিয়েছে। মাথার চুল থেকে মাঝে মধ্যে দুএকফোটা পানি ঝরছে সন্তর্পণে। ঘন কৃশচুলে কৃত্রিমতার বিন্দুমাত্র ছাপ নেই। কিন্তু সে সবসময় নিজেকে আপডেটেড রাখে । যুগের সাথে তাল মেলানোর মতো সব যোগ্যতা আছে ওর। এই সুন্দরী পৃথিবীতে এত ছেলেকে রেখে আমার মতো সাধারণ একটা ছেলের প্রেমে কিভাবে পরতে পারলো? সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা প্রেম। হঠাৎ প্রেমের চোখ আটকে গেলো সারার থুতনিতে থাকা সেই ছোট্ট কালো তিলে। চোখ ধাঁধালো সেই তিল প্রেমকে ভীষণ আকর্ষণ করছে। এদিকে প্রেমের নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে সারার শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি হু হু করে বেড়ে গেলো। নিউরনে নিউরনে বিদ্যুৎের মতো জানান দিলো খুব তারাতারিই তাঁদের বোঝাপড়াটা আরো দৃঢ় হবে। সারা বললো,

‘ প্রহরভাই ডাকছে, চলো। ‘ (সারা)

প্রহরভাইয়ের নাম শুনে চমকে উঠলো প্রেম। আচমকা সারার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে বললো,

‘ আগে বলবে না! দেরী হয়ে যাচ্ছে। উঠো। ‘ (প্রেম)

প্রেমের কান্ডে ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে রইলো সারা। এটা কি হলো? আশ্চর্য! আমার এখন লজ্জা পাওয়া উচিৎ নাকি রাগ করা উচিৎ!

—–

রৌদ্রজ্বল দিন। সকাল সকাল থাই গ্লাস ভেদ করে একফালি সুর্য রশ্মি আমার নিষ্পাপ ঘুমটার বারোটা বাজিয়ে দিলো। ঘুম ভেঙে যাওয়ায় যতটা না রাগ করলাম। তার থেকেও বেশী আনন্দে মনটা ভরে উঠলো যেনো। রাগের মাথায় বিছানা থেকে উঠে জানালাটা খুলে দেয়ামাত্র একফালি মিষ্টি সূর্যকিরণে আমার চোখমুখ কুঁচকে গেলো। সাথে সাথেই রাগ কর্পূরের মতো উবে গেলো। হালকা অন্ধকার থাকা রুমটা এবার ঝকঝকে রুপ ধারণ করামাত্র আমার চোখ আটকে গেলো বিছানায় পা বারবার টাঙ্গানো একটা ছোট্ট ব্যানারে। সেখানে টাঙ্গানো আছে হাস্যজ্বল একটি মেয়ের শাড়ি পরিহিত ছবি। মেয়েটি আর কেউ না। সেটা আমি!
কিন্তু আমি ভেবে অবাক হলাম যে, ঘুমানোর আগে মনে করে দরজা লাগানোর পরেও এই ব্যানারটা আসলো কোথা থেকে! রুমে ভূত টূত নেই তো?
ধুর! ভূত আসবে কোথা থেকে। আর আমি তো এসবে বিশ্বাসই করি না। তবে ছবিটার দিকে খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে বুঝলাম এটা আমার দুবছর আগের ছবি। পহেলা বৈশাখে স্কুলের ফাংশনে এটেন্ড করতে গিয়ে এই পিকটা প্রেম তুলেছিলো। তাহলে কি এটা প্রেমের কাজ? না! ও তো এসব করার মানুষ না।
এসব ওলট পালট ভাবনা মাথায় আসতেই দরজায় করাঘাত করলো কেউ। আমি ব্যানারটা ঝটপট নামিয়ে দরজা খুলতেই চোখ আটকে গেলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক সুদর্শন পুরুষের কাছে। তিনি প্রহরভাই। উনার উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ে হোয়াইট শার্টটা যা মানিয়েছে না! পুরাই হিরো। মাথার হালকা ছোট ছোট ভেজাচুলগুলো সদ্য গোসল করার স্পষ্ট প্রমাণ দিচ্ছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো ভিজে চিক চিক করছে। বুকের দুটো বোতাম খোলা থাকায় উনার উদম বক্ষের লোমশ শক্তপোক্ত শেপটা ভালো করেই আন্দাজ করতে পারলাম। মোটামুটি পাঁচ সেকেন্ড ধরে এসব স্ক্যান করতেই প্রহরভাই মাথায় ঠাস করে একটা বারি মে’রে বললেন,

‘ আমি কি তোর বিয়ে করা বর? একদম নজর দিবি না বলে দিলাম। আমার বউয়ের হকে কারো হস্তক্ষেপ বরখাস্ত করবো না ‘ (প্রহর)

মাই’র খেয়ে ইতোমধ্যেই আমার মাথার রাগ তুঙ্গে। সাথে উনার এসব ফালতু কথায় রাগটা আকাশ ছুঁতেই আমি একটা ভুল কাজ করে ফেললাম। রাগী স্বরে বললাম,

‘ সদ্য গোসল করে, নিজেকে হিরো বানিয়ে একটা মেয়ের রুমে ঢুকতে পারেন। আর আমি তাকিয়ে থাকলেই দোষ? নিজের চরিত্র গঙ্গার জলে ধুয়ে আসুন আগে। ‘ (আমি)

কথাটা বলার পর বুঝতে পারলাম ভুল যায়গায় ভুল কথা বলে ফেলছি। আমার কথার পরিপ্রেক্ষিতে প্রহরভাই একটু ভাব নিয়ে মাথার চুলটা এলোমেলো করে আবারো উপরে তুলে দিতেই বললেন,

‘ তুই কি ইনডিরেক্টলি আমায় হিরো বলছিস ? যদিও নিজের কয়েকটা গানের শুটিং করেছি আমি। আবার একটা মুভির হিরোর চরিত্রেও অভিনয় করার অফার পেয়েছিলাম। বাট ইউ নো, প্রহর খান এসব ক্ষ্যাতমার্কা মুভি করে না। আর নিজের চোখকে সংযত রাখ। বলা তো যায় না, ঐ চোখ দিয়ে আমার মতো নিষ্পাপ ছেলেকে পটিয়ে বিয়ে করে নিলি। ‘ (প্রহর)

উনার আকাশ কুসুম মার্কা কথা শুনে নিজেই নিজের মাথায় একটা চাটি মা’রলাম। অতঃপর পা দিয়ে নিজেকে উঁচু করে উনার ভেজা শার্টের কলার চেপে ধরে রুষ্ট কন্ঠে বললাম,

‘ দেখুন প্রহর ভাই..’ (আমি)

‘ কি দেখবো? তুই কি কোনো দেখার জিনিস? ‘ (প্রহর)

নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বললো প্রহরভাই । আমি এসব পাত্তা না দিয়ে আরো শক্ত করে কলার চেপে ধরে বললাম,

‘ নিজেকে আয়নায় দেখেছেন কখনো ? একবার দেখে তারপর আমার সামনে এসে দাঁড়াবেন। আর কি বললেন জানি! আমি আপনাকে পটিয়ে নেবো? আসতাগফিরুল্লাহ! আপনার মতো চরিত্রহীন লোককে ইহকালে বিয়ে করা সম্ভব না আমার! ‘ (আমি)

‘ ইহলোকে করলে পরলোকে একদম ফ্রি পাবি। প্রহর খান কিন্তু সবসময় এ্যভাইলেবল না। ‘ (প্রহর)

‘ বারবার প্রহরখান প্রহরখান করবেন না তো। আপনি একটা শাঁকচুন্নি ‘ (আমি)

‘শাঁকচুন্নি তো মেয়েরা হয় পাগলী। ‘ (প্রহর)

বারবার এমন ভুল কথা বলায় উনার সামনে ঠিকই অপমানিত হই কেনো বুঝি না! উনার থেকে কথাটা শোনামাত্র নিজেকে সামলে নিয়ে শার্টের কলার ছেড়ে দেবো। সাথে সাথেই আমার পা চেপে ধরলেন উনি। উনার খাম্বা পায়ের তলায় নিজের ছোট ছোট নির্দোষ পা দুখানা আটকাতেই আর পিছিয়ে যেতো পারলাম না। তার আগেই পরে যাবো এমন সময় কোনোভাবে উনার বামহাতটা শক্ত করে ধরলাম । কিন্তু শেষ রক্ষা আর হলো না। নিজেকে তো উনি আটকাতে পারলেন না। বরং উনি সরাসরি আমার উপর বিছানায় পরে গেলেন। ভাগ্যিস বিছানা ছিলো! নাহলে এতক্ষণে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে হাওয়া হওয়া লাগতো। কিন্তু বিছানায় পরে যাওয়া মাত্র উনার আঁশি কেজি ওজনের শরীরটা আমার উপর পরতেই বুঝলাম মাসে কয়দিন যায়। এত দ্রুত সবকিছু ঘটে যাওয়ায় নিজেকে সামলে নেয়া দূষ্কর হলো। এদিকে উনার শরীর আমার উপর পরায় প্রাণপাখি যেনো উরে গেলো। নিশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হতেই লক্ষ করলাম উনার ছোট ছোট বিষ্ময়ভরা চোখদুটো ঠিক আমার চোখের সামনে। যা দেখে শ্বাসপ্রশ্বাস আরো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলো!

চলবে?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here