শুভ্রনীড়,পর্ব:১১+১২

#শুভ্রনীড়
#পর্ব১১
#Shamu_Choudhury

আমান শুভ্রার হাত ধরে তাকে নিচের ফুল বাগানে অবস্থিত দোলনায় এনে বসায়। বসিয়ে বলে

তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবেনা ছায়াবিনী৷ আমি আছি এইগুলার জন্য। তুমি শুধু আমাকে ভুল বুঝোনা৷ আর সামিহার সাথে বাহিরে যাবানা। গেলেও আমাকে বলে যাবা।

আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। আর কিছু? আর কি করা লাগবে??

তোমাকে আদর করবো। আর তুমি আমার সব আদর গুলা আবার পুষিয়ে দিবা।

শুভ্রার মুখে লজ্জার আভা দেখা দিলে। আমান হেসে উঠে আর বলে
আমার একটু কাজ আছে ছায়াবিনী। আমাকে যেতে হবে। তুমি নিজের খেয়াল রেখ আমি মেরু কে পাঠাচ্ছি। ওর সাথে গল্প কর।
এই বলে আমান চলে যায়।
শ্রাবণ আমানের সাথে বাহিরে বের হবে তাই রেডি হচ্ছে। আর তার যা যা লাগতেছে মিরা সব তাকে এনে দিচ্ছে। তারা দুজনেই দুজন কে অনেক আগে থেকে ভালোবাসে তবে মুখ ফুটে বলতে পারেনা মিরা ভাবে শ্রাবণ তাকে শুধু বন্ধু ভাবে তাছাড়া কিছু না। শ্রাবণ এর ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু না।

মেরু টাই টা লাগিয়ে দে। আমি ডকুমেন্টস গুলা দেখি কিছু বাদ পরল নাকি।

মিরা কি করবে ভেবে পায়না৷ এর আগেও সে টুকটাক কাজ করে দিয়েছে কিন্তু এত কাছে গিয়ে তাকে সাহায্য করেনি। তাই এই মুহুর্তে কি করবে সেইটা ভেবে পায়না এমন ভঙ্গি ধরে দাঁড়িয়ে থাকে যে শ্রাবণ যেন বুঝে তার কথা মিরা কর্ণপাত করেনি। পরক্ষণেই শ্রাবণ আবার বলে উঠে,

এই মেরু? আমাকে ইচ্ছাকৃত ভাবে অগাহ্য করতেছিস নাকি?? এইটা কিন্তু ঠিক না।

আরে এতক্ষণ তো তোর কাজগুলোই করে দিচ্ছি। তাহলে তোকে ইগনোর কখন করলাম? তোর মত ছেলেকে আমি সাহায্য করেছি এইটাই অনেক। আমার শুকরিয়া আদায় করতে পারিস কিছু মনে করবো না।

মিরা কথা টা বলে হাত দিয়ে তার চুল পিছনে দিয়ে উল্টো দিক হয়ে ভাব নেয়।

এহহহহ ঢং। দূর হ। দরকার নাই তোর মত ফাজিল রেএ। আমার জন্য আমার বউ আছে তোকে লাগবেনা৷ আর আমার বউ কে দেখবি??তোর থেকে কিন্তু অনেক সুন্দর।

শ্রাবণ এর কথা শুনে মিরার বুক ছ্যাত করে উঠে। সে ভাবে তাহলে কি শ্রাবণ তাকে ভালোবাসেনা? সে কি জানেনা তার মেরু তাকে অনেক ভালোবাসে। ছলছল চোখে শ্রাবণ এর দিকে তাকায়। শ্রাবণ ডকুমেন্টস চেক করায় তার দিকে খেয়াল করেনা। মিরা বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কি বলবে সে?? কিছু বলার আগেই আমানের ডাক পরে। মিরাকে নিচে শুভ্রার কাছে যেতে বলে। সাথে সাথে মিরা নিচে চলে যায়। নিচে গিয়ে দেখে শুভ্রা শুকনো মুখে বসে আছে। সে শুভ্রা কে গিয়ে বলে

আরে ভাবী। আপনি এখানে একা কেন বসে? সামিহা নাই যে। উনার সাথে আমার তেমন কথায় হয়নি। একটু পরিচিত হতাম।

ওর কথা বাদ দেও মিরা। আমাকে বলত আমার সম্পর্কে তুমি কি কি জানো?? আর আমার চাচ্চু সম্পর্কে ওরা তোমায় কি কিছু বলেছে? ওরা আমাকে কিছু বলতে চায় না মিরা। এই কথা গুলো বলে শুভ্রা নিচের দিকে তাকায় তার চোখ থেকে দুই ফোটা অশ্রু কণা গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে। মিরা তার হাতের উপর হাত রেখে বলে

জানো? আমি যখন ইউভী(আমান) কে দেখছিলাম ইউভী এর সম্পর্কে যা যা জেনেছিলাম তার থেকে বেশি তোমার সম্পর্কে জেনেছি। ওই শুধু তোমার কথা বলত। বলতো আমার তোদের একটা করে ছায়া আর আমার দুইটা ছায়া যে আমাকে সবসময় ভালো থাকতে শিখায়। ভালোবাসতে শিখায়। এই সব অনেক কিছু বলে। শুভ্রা হা হয়ে শুনতে থাকে।
এক পযার্য়ে মিরা বলে,
ইউভী কয়েকদিন আগে একটু ডিপ্রেশনে ছিল। কিন্তু তুমি তাকে সেখান থেকে বের করেছো অনেক গুলা ধন্যবাদ বনু।

বুঝলাম না মিরা। কিসের কথা বলতেছো? আমার তো কয়েকদিন হল বিয়ে হয়েছে। আর উনাকে দেখে সে রকম মনেই হয়নি।আর উনি কিসের জন্য ডিপ্রেশনে ছিল??

এমা তুমি জানোনা?? তোমার বিয়ের পরেরদিন ই তো তাকে পাওয়া গেছিল না সে গিয়েছিল সুইসাইড ফরেস্ট এ৷

এতটুকু শুনেই শুভ্রা কেঁপে উঠে। সে ভাবে আবার উনি সুইসাইড ফরেস্ট এ গিয়েছিল?? তাই শুভ্রা মিরা কে বলে,,

কোন ফরেস্টে গিয়েছিল? জার্মান যেই ফরেস্ট আছে সেইটাতে?? আর কেন গিয়েছিল?

মিরা বলে,,
না। জাপানের টাতে। আর তোমার চাচ্চুর খুনের ভিডিও ক্লিপ নিতে গিয়েছিল। কিন্তু সেখান কার কিছু আদিবাসী তাকে বন্দি বানিয়েছিল। তাই তো তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না।

শুভ্রা এইবার ভয় পেয়ে যায়।ইউভী এত কিছু করেছে? তাকে না বলে? এই জন্য সে বলে তাকে কোন চিন্তা করতে হবেনা। কিন্তু এইভাবে চললে তো ইউভীর ক্ষতি হবে৷ সে ভাবে সেই খুনি কে খুজে বের করবে তাই সে বলে উঠে,,

সেই ক্লিপ কি তোমার কাছে আছে মিরা?? আমাকে দেখাতে পারবে??প্লিজ না বলোনা

আমার কাছে নেই তবে ইউভীর ল্যাপটপে আছে। উপরে চল তোমাকে দেখায়। এই বলে শুভ্রা কে মিরা উপরে নিয়ে যায়।

____
আচ্ছা তোমার মাঝে আর আমানের মাঝে এমন কোন পার্থক্য আছে? যেইটা দেখে শুভ্রা বুঝে যাবে আসল ইউভী কে???

(সামিহা আসার পর থেকে আমানের পর্দা ফাঁস করতে চাচ্ছে। কিন্তু সব পথ যেন বন্ধ। কাজটা এমন নিখুঁত ভাবে করতে হবে যাতে তাকে কেউ সন্দেহ না করে। আর যদি সে হুট করেই কিছু করে বসে এতে তার ই ক্ষতি হবে। তারপর অনেক ভেবে সে ইউভী কে ফোন করে আগের কথা বলে)

যখন তখন ফোন করে বিরক্ত করো কেন সামিহা?? আমার ভালো না।( ইউভী বিরক্তিকর কন্ঠে বলে)

এই শোন এখন কেন বিরক্ত লাগবে তোমার?? আগে মনে ছিল না? তুমি তো অনেক বড় লোভী যার জন্য এত খুন করেছো। আর এখন ভালো হতে চাচ্ছ। যা বলেছি উত্তর দাও। যে নিজের বাবা কে খুন করতে চায় সে আর যাই হোক ভালো হতে পারেনা।
সামিহা রাগ্বানিত স্বরে ইউভী কে বলে৷ কথা গুলো শুনে ইউভীর অনেক মন খারাপ হয়। আসলেই তো সে একটা পশু। না না পশু না পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট। না হলে যে তাকে এত ভালো বাসতো তাকে সে কিভাবে খুন করল।
ইউভী জানে তার আর আমানের মাঝে এমন এক পার্থক্য আছে যেইটা তে তাদের না দেখেও সহজেই বলা যাবে কে ইউভী আর কে আমান। তবুও সে সামিহাকে সাফ জানিয়ে দেয় সে কিছু জানে না৷ ইউভী ভাবে সে সব কিছু ঠিক করতে পারবেনা তবে নিজেকে শেষ করে দিতে পারবে। এই ভেবে সে রেইনবো ব্রিজ এর দিকে এগোয়। এত দিন অনেক মানুষ এই ব্রিজ এ তার শিকার হয়েছে। আজ সে নিজেকে বলি দিতে চায়। এইভাবে থাকা বড় দ্বায়।)

আমান আর শ্রাবণ ইউভী কে খুজতে বের হয়েছে। তারা জানতে চায় কিভাবে ইউভী নিজের বাবা কে খুন করতে পারলো?? এত নিকৃষ্ট কেন হতে গেল?? এই সব ভাবতে ভাবতে আনমনেই আমানের চোখ হতে পানি পরতে লাগলো। তারা খোঁজ পেয়েছে ইউভী আগে কোথায় থাকতো। সেখানে গিয়ে তারা ইউভী কে পায়নি। মনে হয়েছে সে রুম টাতে অনেকদিন যাবৎ কেউ থাকে। রুমে সে রকম কিছু পাওয়াও যায়নি পুরো রুম ধূলিকণা তে পরিপূর্ণ ছিল৷ কিন্তু একটা দেয়ালে শুধুই একটি জায়গার ছবি বার বার ছিল। আমান আর শ্রাবণ দুজনেই সেই জায়গা টা ভালো খুব ভালো ভাবে চিনে৷ তাই এখন তারা সেখানে যাচ্ছে।

____
আজকে ইউভীর নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে৷ সে মারা গেলে তার জন্য কেউ কি কাঁদবে?? না তার তো কেউ নাই। হয়ত আমান কাঁদবে। আর শু? শু তো তাকে ছোট বেলায় দেখেছিল এখন সে জানতেও পারবেনা তার খেলার সাথিটা আর নেই। আর সে তো আমান কেই ইউভী ভাবে সত্যি টা হয়ত জানবেনা আবার জানতেও পারে। আমান যদি জানায়। এই সব ভাবতে ভাবতে ইউভী রেইনবো ব্রিজ এর কর্ণারে দাঁড়ায়। আর সেখানে উঠে পরে একটু নরচর করলেই সে পরে যাবে। এতদিন ব্রিজ টার সবচাইতে উচুঁ জায়গাতে চড়ে কত মানুষ কে সে খুন করেছে৷ তার মনে একটুও দয়া মায়া কাজ করেনি। এইতো এ্যালেক্স বলেছিল তার ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তাকে যেন সে দ্বিতীয় সুযোগ দেয় কিন্তু ইউভী তা করেনি। এই সব ভাবতে ভাবতে এক সময় ইউভী জোরে জোরে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তার পকেট থেকে ছুরি বের করে নিজের হাতে নিজেই চালিয়ে দেয়। হাত থেকে অনবরত রক্ত ঝরঝর করে পরতেই তাহকে মুহুর্তে তার পায়ের নিচে রক্তে লাল হয়ে যায়। আস্তে আস্তে তার দেহ নিস্তেজ হয়ে আসে। সে সেখান থেকে পরে যেতে লাগলেই____

চলবে???

#শুভ্রনীড়
#পর্ব১২
#Shamu_Choudhury
ইউভীর নিস্তেজ দেহ রেইনবো ব্রিজ থেকে পরে যেতে লাগলেই আমান আর শ্রাবণ তাকে ধরে ফেলে। ইউভীর এই অবস্থা দেখে দুজনেই অনেক ভয় পেয়ে যায়। পুরো জায়গাটা রক্তে লাল হয়ে গেছে। আমান তাড়াতাড়ি তার রুমাল বের করে ইউভীর হাতে রুমাল রেখে চেপে ধরে।তবুও রক্ত বন্ধ হয়না ক্ষনিকের মধ্যেই রুমাল্টাও রক্তে ভিজে যায়। তারা দুজনেই ইউভীকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে নিয়ে শ্রাবণ এর হসপিটালের দিকে রওনা দেয়। এদিকে ইউভীর অবস্থা খুব শোচনীয়। মনে হয় বেহুশ হয়ে গিয়েছে নিশ্বাস তার চলছেনা বললেই চলে। ইউভীর এই অবস্থা দেখে আমান কি করবে ভেবে পায়না শ্রাবণ কে বার বার বলতেছে গাড়ি জোরে চালাতে। রাস্তা যেন শেষ হওয়ার নাম নেই।আগে তো কোনদিন এই রকম মনে হয়নি।একসময় তারা হাসপাতালে পৌঁছে যায়। শ্রাবণ মিরা কে ফোন করে আগেই সব জানিয়েছিল তারা যাওয়ার সাথে সাথেই ইউভীকে অপারেশন থিয়েটার এ নেওয়া হয়। মিরা আমান কে বাহিরে থাকতে বলে কিন্তু আমান নাছোড়বান্দা সে তার ভাই কে রেখে বাহিরে থাকবে না।সময় খুব কম তার উপর আমানের জিদ দেখে শ্রাবণ তাকে অপারেশন থিয়েটার এ নিয়ে নেয়। ইউভীর সব রক্ত পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে দেয়। প্রচুর রক্ত ক্ষরণ এর কারণে তাকে দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয় কিন্তু হঠাৎ করেই ইউভীর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়।
পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়, আমান ডুকরে কেঁদে উঠে আর শ্রাবণ এর কলার ধরে বলে,,
তুই না আমার এক ভাই তাহলে সেও তো তোর ভাই। তোর ভাইকে তুই বাচিঁয়ে তোল না ভাই। আমার এই কথা টা রাখ।

এই বলে আমান শ্রাবণ এর দিকে করুণ ভাবে তাকায় দুজনের চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। শ্রাবণ তাড়াতাড়ি করে আমান কে বের করে দিয়ে ইউভীকে শকড থেরাপি দেয়। যদি এতে কাজ না করে তাহলে ইউভী কোনদিন ফিরে আসবেনা। সে সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে না ফেরার দেশে৷

____মিরা শুভ্রা কে আমানের রুমে নিয়ে গেলে প্রথমে ল্যাপটপ খুজে পায়না। পরে খুজে পেলে খুলেই দেখে তাতে পাসওয়ার্ড দেওয়া। মিরা শুভ্রা কে বলে যে সে পাসওয়ার্ড জানে নাকি কিন্তু শুভ্রা বলে সে জানেনা। জেনেই বা কি করতো। তাই তো শোনেনি। এর মাঝেই শ্রাবণ এর ফোন চলে আসলে মিরা জানায় শ্রাবণ এর কোন এক বন্ধু সুইসাইড করতে চেয়েছিল তাকে ইমারজেন্সি তে নিতে হবে তাই মিরা কে এক্ষুনি যেতে হবে। শুভ্রার কে নিজের খেয়াল রাখার কথা বলে চলে আসে৷
শুভ্রা ল্যাপটপ নিয়ে ভাবে সে কি করবে। ভাবতে ভাবতে সামিহার রুমের দিকে পা বাড়ায়। গিয়ে দেখে সামিহা কাউকে ফোন দিচ্ছে। শুভ্রা তাকে ডাক দিলে সামিহা ফোন লুকিয়ে বলে কি হয়েছে। শুভ্রা বুঝতে পারেনা সে কেন ফোন লুকালো৷ আর সে কোথায় ফোন পেল?? তাই শুভ্রা বলল.

কি রে? কি লুকাচ্ছিস? ফোন কোথায় পেলি??

না আ না মানে। ফো ফোন তো আমি বাসায় থেকে এনেছিলাম। তোকে বলা হয়নি। কারো সাথে কথা বলবি নাকি বল।

ওহহ না না বলবনা। তোকে ইদানীং রুম থেকে বের হতেই দেখিনা চল না বাহিরে যায়। বাহিরে না গেলি ছাদে যায় চল। সামিহা যেতে না চাইলেই সে জোর করেই নিয়ে যায়৷ আর সামিহা বার বার ইউভী কে ফোন করেই যাচ্ছে কিন্তু তার ফোন নাকি পরিসীমার বাহিরে। সামিহা ছাদে গিয়ে হা হয়ে যায় এত সুন্দর। সে এর আগে এখানে আসেনি। সবকিছুতে যেন শুভ্রা আর শুভ্রা৷ সামিহা বলে উঠে,

কি রে তোর জামায় দেখি সব কিছুতে তোকে রেখেছে। এই বলে শুভ্রা কে গুতা মারে

হ্যাঁ তো? দেখ সব কিছু কি সুন্দর তোর জামায় নাই বলে কি আমার টা রোমান্টিক হবেনা। আমায় হেব্বি ভালোবাসে। এই বলে সামিহা মুচকি হাসে তার চোখে আমানের টোল পরা হাসি দেখায়। সেই কখন কাজে বেরিয়েছে এখনও ফিরেনি। সামিহা শুভ্রা কে টেনে দোলনার কাছে নিয়ে যায় গিয়ে সামিহার কাঁধে মাথা রাখে৷ সামিহা কি করবে বুঝতে পারেনা৷ এখন তার কি রকম অনুভূতি হয় একটা মেয়ে তাকে এত বিশ্বাস করে আর সে তাকেই মারতে চায়। সেও ভালোবাসার দাম দিতে জানেনা৷ কিন্তু ভালোবাসার উপরেও যে তার লক্ষ্য স্থির হয়ে আছে৷ এই ভেবে যেই সে শুভ্রার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিবে তখনি কিসের যেন ডাক পরে। তারা দুজনেই কান পেতে শোনে। ফুচকা হ্যাঁ তারা ভুল শোনেনি। অবাকের বিষয় হচ্ছে এই জাপানেও ফুচকা পাওয়া যায়। ফুচকার কথা শুনে তাদের দুজনের চোখেই ফুচকা ভেসে উঠে। দৌড়ে তারা নিচে যায়। গিয়ে দেখে জাপানের ই লোক উনি তাদের দেখে ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় বলে উঠে তারা ফুচকা খাবে নাকি। তারা গিয়ে দেখে হরেক রকমের আচার, ফুচকা সাথে ভেলপুরিও। সেসব দেখে তাদের চোখ চকচক করে উঠে। সাথে সাথেই তারা সম্মতি জানায়৷ কমবেশি সবকিছু খায় আর ফুচকা সাথে বাকিগুলার ও স্বাদ একদম বাংলাদেশের খাবারের মত অনন্য৷ আর মিরা খাবে বলে শুভ্রা অনেক গুলা ফুচকা নিয়ে নেয় প্রে মিরা আসলে এসব দেখে অনেক খুশি হবে তবে মিরা বাংলা টা জানলেও সে বাঙালি না৷ এখানকারই দেখতে মাশাল্লাহ। তারপর শুভ্রা টাকা দিতে চাইলে উনি জানায় এইদিকে কখনো সে আসেনা। শুভ্রনীড়ের মালিক তাকে অনেকগুলো টাকা দিয়েছেন যাতে উনি এই বাসার সামনে এইগুলা নিয়ে আসেন আর অপেক্ষা করেন একটা মেয়ে এসে নাকি এইগুলা দেখে অনেক খুশি হবেন৷ তাছাড়া তিনি টাকার বিনিময়েও আসতেন না তবে সেই ছেলেটা মানে আমান নাকি তাকে অনেক অনুরোধ করেছেন। এইসব বলে তিনি চলে যান শুভ্রা আনমনেই হেসে উঠে আর ভাবে তার জামায় দূর থেকেও অন্যের খেয়াল কিভাবে রাখা যায় তার উপর পিএইচডি করেছে। রুমে আসলে শুভ্রা শুভ্রার রুমে আর সামিহা তার রুমে চলে যায়। শুভ্রা রুমে এসে ল্যাপটপ দেখে ভাবে পাসওয়ার্ড নিশ্চিত শুভ্রার নামে দেওয়া তাই সে টাইপ করে শুভ্রা কিন্তু ভূল পাসওয়ার্ড। আবার এই রকম অনেক কিছু দেয় কিন্তু না বার বার ভুল দেখায়৷ ইতিমধ্যে শুভ্রার মন খারাপ হয়ে গেছে। আর চান্স টাও মাত্র একবার আছে এইবারও ভুল পারলে বারো ঘন্টার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে৷ তারপর সে দেয় “ছায়াবিনী ছায়া” আর সাথে সাথে খুলে যায় মুহুর্তেই শুভ্রার হাসি আবার তার ঠোঁটে ফিরিয়ে আসে৷ ওয়ালপেপারে শুভ্রা আর আরেকটা ছেলের ছবি। শুভ্রা ঠিক বুঝতে পারেনা এই ছেলেটা কে? ইউভী ছোটবেলায় এই রকম দেখতে ছিলোনা। তাহলে শুভ্রার সাথে ছেলেটা?? আবার শুভ্রা নিজেই সেই ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে আছে। অনেকক্ষণ মনে করার পর ও মনে হয়না আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ছেলেটার ডান গালে টোল। কিন্তু সে জানে এইটা ইউভীর ছোট বেলার ছবি না। তারপর সে ভাবে এইটা হয়ত ইউভীর(আমানের) কোন বন্ধু। তারপর সে প্রথমে গ্যালারি তে ঢোকে। একটা ফাইল আছে শুভ্রনীড় নামে সে সেইটাকে ঢুকলে দেখে শুভ্রার ছোটবেলার অনেক ছবি। একটা ছবিতে তার চোখ আটকে যায় শুভ্রা মাঝখানে দুইপাশে দুইটা ছেলে এক ছেলের ডান গালে টোল আরেক ছেলের গালে টোল নাই। যে ছেলের গালে টোল নাই সেইটাই তো তার আসল ইউভী৷ ছোট বেলায় টোল নাই অথচ বড় হয়ে ডান গালেই টোল কিভাবে আসল? তাহলে কি তার সাথে যে থাকছে সে আসল ইউভী না?? ছবিতে থাকা পাশের ছেলেটা?? মুহুর্তে শুভ্রার বুক ছ্যাত করে উঠে। এত বড় ভুল কিভাবে করতে পারলো সে??এত বড় ঢোকা সে কিভাবে মেনে নিবে??তাই তো সেই নকল ইউভী তাকে কোনদিন ভালোবেসে শু বলে ডাকেনি। হাওমাও করে কেঁদে উঠে সে।

____পর পর ছয়বার ইলেক্ট্রিক শকড দেওয়ার পর ইউভী চোখ খুলে নিশ্বাস নেয়। ইউভী কে চোখ খুলতে দেখে আমান ধরফরিয়ে উঠে ইউভীকে জড়িয়ে ধরে। শ্রাবণ তাকে আটকিয়ে বলে তার এখন বাহিরে যাওয়া উচিত। ইউভী ঠিক নেই৷ শ্রাবণ বাহিরে যায় আর আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করে৷ বাহিরে দাঁড়িয়ে সে শ্রাবণ এর অপেক্ষা করে৷ শ্রাবণ আসলে আমান বলে

ভাইয়া ঠিক আছে তো?? কিছু হবেনা তো আবার? আর কোন রিস্ক আছে? তুই এত তাড়াতাড়ি বাহিরে কেন এলি? ভিতরে যা ইউভীর তোকে দরকার পরতে পারে৷

এত টেনশন করিস না তো৷ ইউভী এখন ঠিক আছে। কয়েকদিন বেড রেস্ট নিক। আর তাছাড়া নার্স আছে। এখন চল বাড়িতে যাই শুভ্রাও একা আছে। সারাদিন হল বাসায় ফিরিস অনেক চিন্তা হয়ত করতেছে। তাড়াতাড়ি চল ক্ষুধাও লাগছে আমার।

না শ্রাবণ তুই যা আমি আজ যাচ্ছিনা। শুভ্রা তাও ঠিক আছে কিন্তু ভাইয়া ঠিক নাই। হতে পারে আমরা চলে গেলে সে আবার সুইসাইড করতে চাইবে৷ আমার জানা উচিত সে কেন এই রকম করতে চাইলো?? সে কেন আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইলো? আমাকে বললে আমি কি কিছু করতে পারতাম না?? না আমি ওর ভাই না কোনটা??
এইগুলা বলে আমান আবার কাদঁতে থাকে আবার সে বলে উঠে,,

ছোট বেলা থেকে ঠিকমত কারোর ই ভালোবাসা পেলাম না। সব সময় নিজেকে একা পেয়েছি। সবাইকে শুধু কল্পনা করে গিয়েছি ক্ষনিকের জন্য হয়ত কাছে পেয়েছিলাম কিন্তু সেইগুলোও আমার মনে নেই। এমন কি নিজের ভালোবাসার মানুষকে প্রতিদিন ঠকাচ্ছি। সে জানতে পারলে কি মুখ দেখাবো বলতে পারবি?? পারবিনা। আমি আসলেই খারাপ,ইউভীর জায়গায় আমাকে হওয়া উচিত ছিল। আমি মারা গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

শ্রাবণ বলল, এইগুলা ভাবিস না আমান। সবার সব সময় ভালো যায়না৷ কারো খারাপ আর কারো ভালো সবসময় ভালো চাইলে কি তা পাবি বল???সময় পরিবর্তনশীল। আজ তোর খারাপ সময় গেলে কাল ভালো সময় পাবি। তাছাড়া আগে কেউ তোর চোখের সামনে ছিল না এখন সবাই আছে। তাহলে??আস্তে আস্তে সবাই তোকে ভালোবাসবে। টেনশন করিস না। আর আচ্ছা তোর থাকতে মন চাইলে থাক আমি বাসায় যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি চলে আছিস৷
এই বলে শ্রাবণ চলে যায় শুভ্রনীড়ে।

শ্রাবণের বাবা আর ইউভীর বাবা একজনই আর সে হলো আলভী রাহমান। কিন্তু তাদের মা আলাদা৷ ইউভীর মায়ের নাম শান্তা রাহমান৷ আর আমানের মায়ের নাম আফিয়া জুনায়েদ খান।আলভী রাহমান ইউভীর মা শান্তা কে বিয়ে করার এক বছরের মাথায় আলভী রাহমান ইন্দোনেশিয়ায় কাজে গিয়েছিল। সেখানে গিয়ে কাজের চাপে এক বছর অবস্থানরত থাকে,তার মাঝেই আমানের মা আফিয়ার সাথে আলভী রাহমান এর দেখা হয় আর তিনি প্রথম দেখায় তাকে ভালোবেসে ফেলেন।পরবর্তীতে সেখানেই আফিয়াকে বিয়ে করেন৷ এর মাঝেই জাপানে শান্তার গর্ভে ইউভী জন্ম নেয়। ইউভীর খবর আলভী রাহমান কে জানালে তিনি চিন্তিত হয়ে পরেন৷ সে ভেবে পায়না আফিয়াকে একা রেখে তিনি কিভাবে জাপানে ফিরে যাবেন৷ তাই তিনি আফিয়াকে নিয়েই জাপানে পারি দেন। আলভী রাহমানের সাথে আফিয়াকে শান্তা রাহমান মেনে নিতে পারেন নি। স্বামীর ভাগ কেউই দিতে চায়না৷ শান্তার সাথেও ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি অল্প কিছু দিনেই ডিপ্রেশনে চলে যান৷ ঠিকমত ইউভীর খেয়াল রাখতেন না। দিন দিন শান্তার এই রকম আচরণ এ ইউভী অনেক অসুস্থ হয়ে পরেন। এর মাঝেই আবার আমানের জন্ম হয়। আলভী রাহমান সব ঠিক করার জন্য ইন্দোনেশিয়া আলভী রাহমান আমানের মা আফিয়ার জন্য আমান’স স্কোয়াড নামে বাংলো বানায়। আর সেখানে তাদের রেখে আসে৷ তার কিছু দিন পরেই ইউভীর মা শান্তা রাহমান মারা যান৷ দুজনে দুই জায়গায় বড় হয়। কেউ মায়ের আদর ছাড়া আর কেউ বা বাবার আদর ছাড়া। শান্তা রাহমান মারা যাওয়ার আগে বলে যায় আফিয়া আর তার সন্তানের ছায়া যেন ইউভীর উপর না পরে। কেননা সৎ মা ভালো হয়না। তার কথা রাখার জন্য আলভী রাহমান দুজন কে দুই জায়গায় বড় করেন। এক জায়গায় করলে হয়ত সব ঠিক থাকতো। আমান একটু বড় হতেই আমানের মাও মারা যান তখন আমানকে আলভী রাহমান জাপান এনেছিল সাথে ছিল তাদের ভাইয়ের ছোট মেয়েটা শুভ্রা। সে এক দেখাতে আমান কে অনেক পছন্দ করেছিল। কারণ মা মারা যাওয়ার পর ইউভী অন্য রকম আচরণ করত। কারোও সাথেও মিশতো না আর আমান ছিল বিপরীত। সে সবার মাঝে তার মায়ের ভালোবাসা খুজতো৷ শুভ্রা এখন যার সৃতিচারণ করে সেইটা আর কেউ নয় সেইটা আমান। কিন্তু ছোটবেলায় আমানকে ইউভী দেখতে পারতোনা সে ভাবতো তাদের জন্য শান্তা রাহমান মারা গেছেন৷ হয়ত কোন একদিক দিয়ে ইউভী সঠিক ছিল। ইউভী যখন সুযোগ পেত আমান এর সাথে অসংগতমূলক আচরণ করত। যার জন্য আলভী রাহমান আবার আমান কে জাপানে রেখে আসেন আর সেখানকার কেয়ারটেকার এর কাছে আমান বড় হয়। সবাই কে সবার থেকে আলাদা করা হয়। বড় হতে হতে শুভ্রাও আমানের নাম ভুলে যায় রয়ে যায় শুধু সৃতি যেখানে আমানের বদলে ইউভীর নাম রয়েছে। হাইস্কুলে পড়তেই আবার শুভ্রা আর তার মাকে শুভ্রার বাবা বাংলাদেশে রেখে যান। তারপর একেক দেশে তাদের জীবন একেক ভাবে চলতে থাকে।

এসব ভাবতে ভাবতে আমান ইউভীর কেবিনে যায় গিয়ে ইউভীর হাত ধরে বসে আর বলে,

কেন চলে যেতে চেয়েছিলে ভাইয়া? তুমি চলে গেলে তোমার ছোট ভাইয়ের কি হত?
কথা বলে ইউভীর হাতে আমান মাথা রাখে। আমানের চোখের পানি ইউভীর হাতে পরলে ইউভী আস্তে আস্তে চোখ খোলে। সে সবই শুনেছিল।

ইউভী ভেজা কন্ঠে বলে,
আমি আমাদের বাবাকে মেরে ফেলেছি আমান। এই শাস্তি কি আমার প্রাপ্য নয়?? জানি আমার মৃত্যু টাও কঠোর থেকে কঠোরতর হওয়া উচিত। কিন্তু কে মৃত্যু কে ভয় পায়না বল? তাই আমি সহজ পথ বেছে নিয়েছিলাম। আমি চাইলেও এই পথ থেকে ফিরে আসতে পারবোনা আমান। বহু চেষ্টাও করেছি।
আমান ছলছল নয়নে ইউভীর দিকে তাকায় আর বলে
আজ তুমি আমাদের সাথে যাবে। শ্রাবণ আর আমি তোমার দেখাশুনা করবো। কোন না শুনছি না। এই বলে শ্রাবণ কে ফোন করে আমান জানায় সে ইউভী কে সাথে নিয়ে বাসায় আসছে। ইউভী হাজার মানা করলেও তার কথাগুলি আমানের কর্ণপাত হয়না।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here