শুভ্রনীড়,পর্ব:১৭

#শুভ্রনীড়
#পর্ব১৭
#Shamu_Choudhury

সেদিন আসলে যা হয়েছিল___

এইটা তুমি কি করলে সামিহা? নিজের বাবাকে নিজেই মেরে ফেললে?
শ্রাবণ কথা টি বলে সামিহার দিকে তাকিয়ে থাকলো সবাই তার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে সবাই উওর চায়। সামিহা জলশুন্য কন্ঠে বলে উঠে,,

প্রথম যখন এখানে এসে বাবার সব কিছু জানতে পারি, তখন সব কিছু মেনে নিতে পারিনি আমি। পরে বাবার কথা ভেবে আমি রাজি হয়ে যাই এসব কু-কর্ম করতে। তার মাঝেই ইউভীর সাথে দেখা হয় আমার। তার সাথে থাকতে থাকতে কখন তাকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম নিজেও বুঝিনি। সব কিছু ভালোই চলছিলো। কিন্তু বাবা ইউভীকে ফুসলিয়ে তার হাতেই তার বাবাকে খুন করায় আমি খুব মানা করেছিলাম কিন্তু শোনেনি। তারপর যখন শুভ্রা কে আর ইউভী কে মারতে বলে তখন আমি মানতে পারিনি। কারণ যতই হোক শুভ্রা কে আমি নিজের কলিজা ভাবি আর ইউভীকে আমার রক্ত। কিভাবে কি করতাম?? তাই পথ খুজি। যখন ইউভী বলে এসব পথ থেকে সে ফিরে আসতে চায় তখন আমিও তাকে বলতে চেয়েছিলাম যে আমিও ফিরে আসতে চাই কিন্তু বাবা আমাদের উপর সব সময় নজর রাখতো। সেদিন সেখানেও নজর রেখেছিল তাই এতদিন আমি শুধু অভিনয় করে গেছি। উনার কথা মত সব করেছি আমি। এখন তোমরা বলবে যে আমি উনাকে এসব পথ থেকে ফিরে আসতে কেন বললাম না? কিভাবেই বা বলবো? বললেই আমাকে সন্দেহ করবে। কেননা উনার সাথে মিশে আমি বুঝেছি উনি এতে অন্ধ। কালো জাদু উনার শিরায় শিরায় রয়েছে। তাই আমি উনাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করিনি। সব কিছুই ঠিক করে রেখেছিলাম ভেবেছিলাম শেষ মুহুর্তে বাবাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবো। কিন্তু উনি যখন ইউভী কে মারতে যাচ্ছিলেন আমি নিজেকে আটকাতে পারিনি। সামিহার হাতের রিমোট দেখিয়ে বলে এইটায়ে ব্যাটারি নেই আমি আগেই খুলে নিয়েছিলাম। আর তোমরা যাতে ভিতরে সহজেই আস্তে পারো তাই আমি সেখানে শিকল রেখেছিলাম আর দরজা টাও খোলা রেখেছিলাম। বাকি থাকলো রক্ত সেইটা রক্ত না স্ট্রবেরি ফ্লেভারের জুস ছিল আমি সে রকম ভাবেই সেইটা বানিয়েছি যাতে কাছে থেকে দেখলেও মনে হয় রক্ত। এই সব গড়গড় করে বলে সামিহা ইউভীর দিকে আহত দৃষ্টি তে তাকায়, আর বলে,,

ভালোবাসি তোমায় ইউভী। একদম বেশি বাসিনা যে টুকু বাসি আমার সবকিছু দিয়েই বাসি।
এসব বলতে বলতা সামিহা তার বাবার মৃতদেহের কাছে যায় আর চিৎকারে করে কেঁদে বলে,,

কেন করলে এমন বাবা? আমি কখনো কারো ভালোবাসা পেলাম না কেন বলতে পারো? তোমাদের তো অনেক ভালোবেসেছিলাম আমি তাহলে কিভাবে ছেড়ে গেলে?? আমাকে তোমায় খুন করতে কেন বাধ্য করলে??? সব মেয়েরা নাকি বাবার রাজকন্যা হয়। আমি কার রাজকন্যা হয়ে থাকবো বাবা?? আমি এইভাবে থাকতে পারবোনা বাবা। (সামিহার তার হার্টের দিকে ইশারা করে বলে) আমার এইখান টায় বড় কষ্ট হচ্ছে বাবা আমাকে নিয়ে যাও। এই বলে কেঁদে উঠে। মুহুর্তেই বেইসমেন্টে পুলিশ এসে ফাঁকা জায়গা পরিপূর্ণ করে দেয়। সামিহা এসবের আগে পুলিশ কে ফোন করেছিল। পুলিশ কে দেখে সামিহা সব দোষ নিজের ঘারে নেয়। পুলিশ যখন তাকে হ্যান্ড কাফ পরিয়ে নিয়ে যেতে থাকবে তখন শুভ্রা দৌড়ে এসে বলে,,

কে বললো তোর কেউ নেই?? আমি যদি বিপদে তোর কথা ভাবি তাহলে তুই বিপদে পরলে আমি কেন তোর কাছে থাকবোনা বলতো?? কিন্তু তোকে শাস্তি যে পেতেই হবে সামিহা বাকি সাজা সেইটা না হয় কমিয়ে দিবো। তাকে জড়িয়ে ধরে বলে তোর জন্য আমি অপেক্ষা করবো সামিহা। আমিও যে তোকে আমার কলিজা ভাবি। সামিহার মুহুর্তে চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে যায়৷ সামিহাকে বেইসমেন্ট থেকে উপরে নিয়ে আসা হয়। মিরা কে কোলে নিয়ে এসবের আগেই শ্রাবণ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বাকি থাকে শুভ্রা,আমান আর ইউভী। আমান শুভ্রার কাছে যেতে চাইলেই শুভ্রা হাতের ইশারায় তাকে থামিয়ে দেয়।
তখন ইউভী বলে,,
তাকে থামিয়ে আর ভুল করিস না শু। তুই যাকে ছোটবেলা থেকে ভালোবেসে এসেছিস এই সেই আমান। যাকে তুই ইউভী বলে চিনতি কেননা সেও তোর চাচ্চুর এক সন্তান। তাকে লুকানোর জন্য সবাই তোকে আমার কথা বলেছে।

এই কথা বলে ইউভী চলে যায়। আমান শুভ্রার দিকে তাকিয়ে দেখে শুভ্রার চোখে পানি। শুভ্রার দিকে দুই হাত বাড়িয়ে বলে,,

ওহে ছায়াবিনী,,
শুভ্রতায় অবগুণ্ঠিত
তোমার সেই চিত্তহারী ছায়া
শুভ্রতার চাদরে মোড়ানো
তোমার মনোমহোকর মায়া।

শেষ লাইন গুলো না বলতেই শুভ্রা তাকে পরম আদরে জড়িয়ে বলে,

ভালোবাসবো প্রিয়
বড় ভালোবাসবো তোমাকে,,
এইভাবেই মিশে থাকবো
ছায়াবিনী ছায়া হয়ে তোমাতে।

_____

থামুন।

মানে? উনাকে আমাদের সাথে নিয়ে যেতে দিন। উনি খুনি।

আমিও খুনি আমাকেও নিয়ে চলুন। বিশিষ্ট শিল্পপতি আলভী রাহমান কে খুন করেছে তার ছেলে ইউভী রাহমান।

পুলিশ কে এই বলে ইউভী তার চোখ মুছে নেয়। আর সামিহার কাছে গিয়ে তার হাত ধরে বলে,
তুমি তোমার বাবার রাজকন্যা হয়ে থাকতে পারোনি তো কি হয়েছে? আমার কাছে থাকবে? ইউভীর রাজরানী হয়ে???

সামিহার খুশিতে চোখে পানি টলমল করে। ইউভী কে সম্মতি দেওয়ার সময় এক ফোটা নীড় গাল বেয়ে পরলে ইউভী হাত ফেলে তা ধরে নেয় আর বলে,,

না না এতো চলবেনা। আমার রাজ্যের সার্বভৌমত্বের অধিকারিনী কিনা ছিচকাদুনে হবে?? প্রথম বার তাই মাফ করে দিলাম। দ্বিতীয় বার হলে কিন্তু নবরাজরানী খোঁজা হবে। এই বলেই সামিহা কে চোখ মেরে জড়িয়ে ধরে।

নিজেই নিজের দোষ-ক্রুটি গুলো স্বীকার করার জন্য তাদের সাজা কম করে ৪বছর দেওয়া হয়৷ ছাড়া পাওয়ার পরের সপ্তাহেই তাদের বিয়ের ব্যাবস্থা করা হয়।

সামিহা বউ সেজে ইউভীর রুমে সেই কখন থেকে বসে আসে। ইউভীর আসার নাম নেই। এত ভারী গহনা লেহেঙ্গা পরে থাকা যায়?? সকালে সে বোরখা পরেছিল কিন্তু শুভ্রার হাতে তাকে ডাকিয়ে পাঠানোর পর সামিহা তার রুমে গেলে ইউভী তার হাতে লেহেঙ্গা আর গহনা দিয়ে বলে রাতে এসব পরে তার জন্য অপেক্ষা করতে। বিয়ের সব পর্যায় শেষ না হতেই সে তড়িঘড়ি করে রুমে আসে। এসে বোরখা খুলেই সাজতে থাকে। কত তাড়াতাড়ি করে সেজে সেই কখন থেকে বসে আছে। কিন্তু ইউভী আসতেছেনা। সামিহা উঠে দাড়ালেই পাশে রাখা দুধ পায়। এতক্ষণে তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল দুধ দেখেই এক নিমিষেই সব পান করে ফেলে। এর মাঝেই দরজা খোলার শব্দ হয়। সামিহা দৌড়ে গিয়ে ইউভী কে সালাম করে৷ ইউভী তাকে উপরে উঠিয়ে দেখে দুধ পরম যত্নে সামিহার ঠোঁটের উপরেও লেগে আছে। ইউভী হঠাৎ করেই এক কান্ড করে বসে। সামিহা লজ্জায় সরে যেতে চাইলেই ইউভী তাকে আটকায়। সামিহা কি বলবে বুঝতে পারেনা। লজ্জায় বার বার কুকড়িয়ে উঠছে। তার অবস্থা দেখে ইউভী ডেভীল স্মাইলে বলে,

এত দিন আমাকে হুকুম করেছো। এখন থেকে আমার হুকুমে চলবা এই বলেই আবার একি কান্ড করে বসে ___

___এই প্রতিদিন তোরা এত চকোলেট কোথায় পাস?? দে আমাদের আমরা খাবো৷

এই বলে তিনটা ছেলে শুভ্র আর নীড়ের থেকে তাদের চকোলেট কেড়ে নেয়। যেই খেতে যাবে ওমনি পিছন থেকে তাদের উপর কে যেন এক বালতি পানি ঢেলে দেয়। পিছনে তাকিয়ে সেই ছেলেকে দেখে তিনটা ছেলের মাঝে একটা ছেলে তাকে মারতে আসে আর বলতে থাকে,

কিরে পুচকু? মার খাওয়ার খুব শখ হইছে মনে হয়??

ছেলেটা এগোনোর আগেই তাকে বাকি দুজন থামিয়ে দেয় আর তাকে টেনে নিয়ে যায়। শুভ্র আর নীড় তাকে চকোলেট এগিয়ে দিয়ে বলে,,

এই নে সানভী আমাদের বাচাঁনোর জন্য তোর টিপস। তুই ছোট হয়েও ওদের সাথে কিভাবে লড়াই করিস রে??

সানভী চকোলেট খেতে খেতে চকোলেট মাখানো মুখেই ডেভীল স্মাইল দেখিয়ে বলে,,

_ইটস মি ইয়্যার সানভী রাহমান। মেরে বাপ কা বেটা।

শুভ্রনীড়ের প্রতিটা নীড়ে রয়েছে একেক কপোত-কপোতী আর তাদের পুচকুরা। শুভ্রনীড় এ এখনও শুভ্রাতার ছায়া রয়েছে। ইউভী পেয়েছে তার রাজরানী আর সানভী কে। আমান পেয়েছে তার ছায়াবিনী আর ছায়াবিনীর শুভ্রকে। শ্রাবণ পেয়েছে তার একমাত্র ভালোবাসা আর তাদের পৃথিবী নীড় কে। আগে যে রকম আমান,শ্রাবণ আর ইউভী তিন ভাই তিন জনের দুনিয়া ছিল এখন তেমনই শুভ্র, নীড় আর সানভী রয়েছে। সবাই সবার বাবার মতই হয়েছে। এই সব কাহিনী নিয়ে একেকদিন একেক রকম ভাবে সাজিয়ে উঠছে শুভ্রনীড়।

সমাপ্ত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here