শুভ্রনীড়,পর্ব:১৩+১৪

#শুভ্রনীড়
#পর্ব১৩
#shamu_choudhury
পড়ন্ত বিকেলে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে৷
তাতেই একমনে ভিজে যাচ্ছে শুভ্রা। সে শুভ্রনীড় থেকে অনেক দূরে কোথাও আছে। সে জাপানীজ ভাষা পারেনা তাই জানেনা সে কোথায় আছে। হাটতে হাটতে আপন মনে চলে এসেছে। রাস্তার পাশে বড় একটা রেইন-ট্রি দেখে তার নিচে বসে পরে।
বৃষ্টি তে একাকী শুভ্রা ভিজেঁ একাকার হয়ে যাচ্ছে, তবুও সেদিকে তার খেয়াল নেই। হাজার দুঃখের ঝুঁড়ি নিয়ে সে হয়ত বৃষ্টি উপভোগ করছে৷ নয়ত বা অন্য কিছু। মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে অন্য দিন হলে সে হয়ত ভয়ে শিউরে উঠত।
কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম।
তার মনে হচ্ছে তার মত আকাশটার ও ভারী মন খারাপ, আকাশটার মন খারাপের কারণ কি সে কি নিজে? যদি সে হয় তাহলে সে আকাশ কে ছুঁয়ে দেখবে, তার উৎফুল্লতার কারণ হবে। আকাশ কে ছোঁয়া আদৌও কি তার পক্ষে সম্ভব?? হয়ত না। সে যতবার যা কিছু সম্ভব ভেবেছে তার ধারণা ততবার ভূল প্রমাণিত হয়েছে। আর সাধারণের কাছে তা অসম্ভব হলেও সে ভেবেছিল তার কাছে তা সম্ভব কিন্তু তা মোটেও সম্ভব ছিলোনা।
তার মনে তিলে তিলে গড়ে উঠা সেই ভালোবাসার রংমহল এক ঝড়বাতাসে যেন উড়ে অন্য কোথাও চলে গেছে।

এই তো সে ভেবেছিল আমান নামক মানুষটাই তার ছোটবেলার ইউভী যাকে সে প্রাণপণে চাইতো। যাকে সে প্রতিটা নিশ্বাসের সঙ্গে যুক্ত রাখতো, তাকে মনে রাখতো। তাই তো সেদিন খুশিতে সব কিছু না জেনেই বিয়ে করে বসে আমান নামক কালপ্রিট টাকে।
কিন্তু সে তো জানতোনা সব ছিল প্রতারণাপূর্ণ,বানোয়াট এবং অলোক।
কিন্তু এতকিছুর পর ও তার মন মানতে চাচ্ছেনা। আমানের ভালোবাসার প্রতিটা স্মৃতি শুভ্রার পরোতে পরোতে গেথে আছে। তার মনে হচ্ছে সব যেন কল্পনাতীত। কল্পনা শেষে আমান ই তার ইউভী। কিন্তু বাস্তবে সবাই আলাদা। আমানের সব কিছু মিথ্যে, সবকিছু ছিল সাজানো নাটক। এমন কি শ্রাবণ তার ভাই নামক মানুষটাও তাকে ঠকিয়েছে।
কিন্তু তাদের ভালোবাসা কখনো সাজানো মনে হয়নি কখনো মনে হয়নি তারা তাকে ঠকাচ্ছে ৷ সব কিছুই তো ঠিক ছিল। তাহলে?? সে কেন সব কিছু জানতে চাইলো।
তার নয়ন থেকে নয়ননীর গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে মিশে যাচ্ছে বৃষ্টি তে।

আজ তার পাশে কেউ নেই,
তার ইউভী কে প্রয়োজন,শুধু প্রয়োজন না খুবই প্রয়োজন। তার কাধে মাথা রেখে সে কাদঁবে,খুব কাদঁবে।
কিন্তু ইউভী তো নেই সে ঠিক করে সেও রেইনবো ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যাবে। বুকের ভিতর তার হু হু করে উঠে,
এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকা যায়?
সে তো আমান কে খুব ভালোবেসে ছিল,
না না আমান কে না ইউভী নামক মুখোশধারী কে।আর সেই আমানের মনে এই ছিল তা সে জানতোই না। এই কয়দিনে কত বার আমান তাকে ভালবাসি প্রাণপাখি বলেছে, তাকে বলেছে ছায়াবিনী ছায়া হয়ে থাকতে সব মিথ্যে ছিল? তার বাসার তো সব কিছুতেই শুভ্রতার ছোয়াঁ ছিল। শুভ্রা যখন আমান কে প্রশ্ন করেছিল এই বাসাতে সব কিছু এমন কেন?? জবাবে সে বলেছিল,

_এই শুভ্রনীড়ে শুধু শুভ্রতার ছোঁয়া থাকতে পারবে অন্য কিছু না, আমার শুভ্রাকে যারা শুভ্রতার ছোয়াঁয় আগলে রাখতে পারবে শুধু তারাই থাকবে। কেন না, আমি চাই না আমার ছায়াবিনীর কিছু হয়ে যাক।তাকে যে বড় ভালোবাসি, তাকে ছাড়া আমি বড্ড অচল। তার খুশির জন্য সব কিছু।

সবকিছু এভাবে শেষ হয়ে যাবে সে ভাবেনি, সে তো একটু ভালোবাসা চেয়েছিল, চেয়েছিল তার ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে,বিনিময়ে এই??শুভ্রা এই সব কিছু ভাবতে ভাবতে গগনবিদারী চিৎকারে কেঁদে উঠে। সে ছোট বেলা থেকে বৃষ্টি তে ভিজতে পারতো না। খুব জ্বর বাধাঁতো। এতক্ষণ বৃষ্টি তে ভিজার কারণে শুভ্রা জ্বরে কাপঁতে থাকে। এক পর্যায়ে সেখানেই বেহুশ হয়ে টলে পরে।

__ইউভী দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রনীড়ের সামনে৷ বাংলোটা অনেক বড়। চারদিকে শুধু চোখ ধাধানো মনমাতানো সাদাতে পরিপূর্ণ রয়েছে। ইউভীকে আমান ভিতরে নিয়ে যেতে চাইলে সে বলে সে বাংলো টা ঘুরে দেখতে চায়। আমান না করেনা তাকে বাংলো টা ঘুরে দেখায়। এখানে আসার আগে ইউভী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সে পারেনি। সবসময় আমান তাকে পাহারাতে রেখেছিল।পরে ইউভী কে জোর করেই আমান শুভ্রনীড় এ নিয়ে আসে। ইউভী না আসতে চাইলেও৷ আসার সময় অনেক বাহানা করে তবুও সে ছাড় পায়না। সে ভিতরে যেতে চায়না বলেই বলেছিল বাংলোটা ঘুরে দেখার জন্য। বাংলো ঘুরে দেখার পর আমান তাকে বলে ভিতরে যেতে আমানের অনেক ক্ষুধা লেগেছে। আমানের ক্ষুধা লেগেছে শুনে ইউভী আর না করতে পারেনা। সেও ভিতরে ঢোকে। ঢুকেই দেখে শ্রাবণ কার সাথে উঁচু গলায় কথা বলছে। আগে শ্রাবণ কে এই রকম ভাবে কথা বলতে আমান কোনদিন দেখেছি। তাই সে বিচলিত হয়ে শ্রাবণ এর ঘারে হাত রাখে মুহুর্তেই শ্রাবণ চমকে উঠে,,

ত ত তুই??

হ্যাঁ,কেন? ভয় পেয়েছিস নাকি? কি হয়েছে তোর বলতো। (আমান এই কথা বলে শ্রাবণ কে সোফায় বসায় আর ইউভী কে ইশারায় বসতে বলে। শ্রাবণ বলে,)

আমান শুভ্রা কে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি পুরো বাংলো খুজে দেখেছি৷ সামিহাকে বললাম সে বলল সে নাকি রুমেই ছিল জানেনা। তোর রুমে গিয়ে দেখি তোর ল্যাপটপ এ তোর শুভ্রা আর ইউভীর ছবি। মনে হয় শুভ্রা সব জেনে গেছে তাই সে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। বাহিরে অনেক খুজেছি কিন্তু পায়নি। তোকে যে বলব সেও সাহস আমার হয়নি।

আমান শ্রাবণ এর কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তবে কি সে শুভ্রা কে আবার হারিয়ে ফেলল?? সে ওখানেই ধপ করে বসে পরে। একদম চুপচাপ হয়ে যায়। তারপর ইউভীর হাত ধরে বলে,,

ভাইয়া তুমি তো ছোটবেলায় আমাদের সাথে খেলোনি,মিশোনি৷ আমি যতদিন থেকেছি ততদিন আমার ছায়াবিনী কে আগলে রেখেছি সে তো আমাকে বলেছিল আমায় কোনদিন ভূলবেনা। আমার ছায়াবিনী ছায়া হয়ে থাকবে তাহলে আমাকে সে কিভাবে ভুলে গেল?? আমার বদলে তোমায় কেন ভালোবাসলো ভাইয়া তুমি তো তাকে ভালোবাসো না। আমি কাউকে আপন করে পাইনা ভাইয়া। সবাই আপন হওয়ার আগেই চলে যায়। খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া। আব্বুর জায়গায় আমাকে কেন খুন করলেনা বল??? আমাকে খুন কর ভাইয়া তোমার দোহায় লাগে৷

এই বলে আমান ইউভীর দুই পা ধরে কাদঁতে থাকে। ইউভী বাকরুদ্ধ তবেও তার নয়নেও নয়ননীর। সে কখনো আমান কে ভালোবাসেনি সব সময় তাকে ঘৃণা করেছে আর আমান তাকে ভালোবেসেছে। এসব ভাবতে ভাবতে সে আমান কে উঠায় উঠিয়ে একনজর তার দিকে তাকায়। আমান এখনও কেদেঁ যাচ্ছে তার কান্না দেখে ইউভীর বুক ভারী হয়ে আসে৷ সে তার ছোট ভাই কে কখনো বাবার আদর পেতে দেয়নি এই ভেবে সেও ডুকরে কেদেঁ উঠে। শ্রাবণ এগিয়ে আসতে চাইলে ইউভী হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়৷

ইউভী আমান কে বলে খুব ভালোবাসিস শু কে??

আমান কান্নারত অবস্থায় কথা বলতে পারেনা। মাথা ঝাকিঁয়ে হ্যা উত্তর দেয়৷

ইউভী নিচে তাকিয়ে আবার আমানের দিকে তাকায়। আবার নিচে তাকায়৷ তার মন চাচ্ছে সে আমান কে জড়িয়ে ধরুক তার ও তো কেউ নেই। তবুও যেন বিবেক তাকে বাধাঁ দিচ্ছে। এমত অবস্থায় আমান তাকে জড়িয়ে ধরে আবার কেঁদে উঠে৷ মায়ের পর এই প্রথম ইউভী কে কেউ জড়িয়ে ধরল। আমানের নয়ননীর এ ইউভীর শার্ট ভিজে যাচ্ছে। ইউভী এবার আমান কে জড়িয়ে ধরে এতদিন পর তার ভালোলাগাকে সে খুজে পেয়েছে। যে শান্তি সে কালোজাদুতে খুজে বেরাতো তা সে তার ভাইয়ের মাঝে পেয়েছে। সে কান্নারত অবস্থায় হেসে বলে,

তুই তো বলেছিলি আমান যে আমি যেমন থাকি তেমন ই তোরা ভালোবাসবি। আমাকে ক্ষমা করে দিবি ভাই?? একবার মাফ করে দেনা আমিও সুখে নেই। আমিও তোদের ভালোবাসতে চাই। আমিও এই শুভ্রনীড়ের সদস্য হতে চাই। চল আমরা তিন জন শুভ্রা কে খুজতে যাবো। এরপর আমার আরোও অনেক কাজ বাকি আছে৷ এই বলে আমান আর শ্রাবণ কে নিয়ে ইউভী বেরিয়ে পরে শুভ্রার খোজে।

__আমানের সাথে যখন ইউভী দাঁড়িয়ে ছিল তখন সামিহা তাদের দেখে নেয়৷ তাদের দেখে সে বুঝে যায় ইউভী আর তাদের দলে নেই। তাই সে তাদের আগেই শুভ্রা কে খুজতে বেরিয়ে যায়। সে এক পর্যায়ে শুভ্রাকে পেয়েও যায়। কেননা শুভ্রা শুভ্রনীড় থেকে সোজা বেরিয়েছে কোন বাকে ওদিক সেদিক যায় নি। তাই তাকে খুজে পেতেও সামিহার বেগ পেতে হয়নি। সে গিয়ে দেখে শুভ্রার প্রচন্ড জ্বর এসেছে। জ্বরের কারণে সে অজ্ঞান হয়ে গেছে।সে কোন মতে শুভ্রাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসায়। আর বেড়িয়ে পরে তার প্রধানের উদ্দেশ্য। সে তাকে গিয়ে বলবে এখন সব কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। ইউভীও ভালো হয়ে গেছে এই রকম চললে তো তাদের উদ্দেশ্য সফল ই হবেনা। আর ইউভী আমান যে তাদের তো বলি দেওয়া যাবেইনা শুভ্রাকেও পেতে দিবেনা। তাই বেশি ভালো হয় শুভ্রাকে আজই বলি দেওয়া। তারপর না হয় ইউভী আমানের পালা। এই ভেবে সামিহা তাড়াতাড়ি গাড়ি চালায়।

_অন্যদিকে মিরা তাদের কাজের লোক কে পুরো বাংলোটা ঝাড়ু দিতে বলে। সে সব রুমে ঝাড়ু দিতে গিয়ে দেখে প্রতিটা রুমের বেডের নিচে ছাই জাতীয় কিছু রাখা আছে। প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে যখন সব রুমে পায় তখন মিরাকে বলে দেয়৷ মিরা ভেবে পায়না এসব কি?? এমনিতেই শুভ্রাকে পাওয়া যাচ্ছেনা তার ভিতর এইগুলা? তাই সে কাজের লোক কে বলে এইগুলা যেন না ভাবে৷ আর তাকে বলে স্টোর রুমটাও পরিষ্কার করতে৷কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হলো রুমের আসল চাবি দিয়েও তালা খুলছেনা। অনেক চেষ্টা করে যখন পারেনা তখন কাজের লোকটি আবার মিরা কে বলে। মিরা এবার বিরক্ত হয়ে যায়। নিজেই দেখতে যায় আসল ঘটনা কি? সে এসে দেখে সত্যি তাই। তাহলে তালা কে পাল্টালো?? মিরা কাজের লোক কে বলে তাদের মালী কে খবর দিতে এসে আসলে সবাই মিলে দরজাটাই ভাঙবে। মালী আসলে সবাই মিলে অনেক কষ্ট করে দরজা ভাঙে তারপর দেখে____

চলবে??

#শুভ্রনীড়
#পর্ব১৪
#Shamu_Choudhury

মালী আসলে সবাই মিলে অনেক কষ্ট করে দরজা ভাঙে তারপর দেখে পুরো রুম ধুমায় ধুমায়িত। সবার কাশতে কাশতে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। একটু পর সবাই রুমে ঢোকে সবাই দেখে পুরো রুম জুড়ে শুধুই শির আর শির। সবাই হতবাক হয়ে যাক। রুমটা গোছালো কিন্তু অন্য রকম কি বিদঘুটে গন্ধ মিরার বমি বমি পায়। সে বুঝে উঠেনা আসলে কি করা উচিত। তবুও সে রুমের ফ্যান ছেড়ে ভিতরে ঢোকে। ভিতরে কিছুই পায়না। মিরা আর বাকি লোক ভেবে পায়না এসব কে করেছে আর এইগুলোই বা কি? আমান বলেছিল স্টোর রুম অনেক আগে থেকে বন্ধ আছে। আমান এই সব কিছু থেকে অজানা। মিরা আস্তে আস্তে সামনে এগোতে থাকে হঠাৎ করেই লোহার শিকলের সাথে পা পেচিয়ে যায় আর মিরা পরে যায়। ব্যাথার আর্তনাদ করে উঠে। কাজের লোক গুলো মিরা কে শিকল থেকে ছাড়িয়ে নেয়৷ মিরা উপরে উঠে হাত এর ধুলা মুছতে নিলে দেখে সে যেখানে পরেছিল ফ্লোরের সেখানে দরজার মত কিছু যে রকম টা হলিউডের বা বলিউডের অন্যতম হরর মুভী গুলোতে দেখা যায়। তার মনে হয় নিচে বেইসমেন্ট আছে। আশ্চর্য ব্যাপার হল যে কেউ তাতে যেতে পারবে। সে যাওয়ার আগে শ্রাবণ কে ফোন করে নেয়। কিন্তু শ্রাবণ ফোন উঠায় না। তিন-চার বার ফোন দেওয়ার পর ও না ধরলে মিরা ঠিক করে সে একাই ভিতরে যাবে।

__অন্যদিকে তারা সবাই শুভ্রাকে খুজতেছে কিন্তু কোন ভাবেই তার হদিস পাচ্ছে না৷ আমান এখন আর কাদঁছেনা তবে কারো বুকে অনবরত ছুরি মারলে যে ব্যাথা হয় তার থেকে শতগুন ব্যাথা সে অনুভব করছে৷ এর মাঝেই সবার মুখ চোখ শুকিয়ে গেছে৷ কাল থেকে তারা কিছুই খায়নি। না খেয়ে চলাও মুশকিল। অনেক খুজাখুজি করে তারা কিন্তু শুভ্রার খোজঁ মিলে না। আমান শ্রাবণ আর ইউভীর দিকে তাকায় না খেয়ে আর চিন্তায় তার মুখ শুকিয়ে গেছে। আমান ভাবে শুধু শুভ্রার চিন্তা করলেই তো হবেনা তাদের যে আরোও দুইটা ভাই আছে তারা না খেয়ে আছে তাদের কিছু অন্তত খাওয়া দরকার। আমান তাদের কে বাসায় যেতে বলে আর বলে সে নিজেই খুজতে থাকবে। কিন্তু কেউ রাজি হয়না। তাদের জন্য আমান শুভ্রনীড় এ ফিরতে রাজি হয়ে যায়।

__
শোন,তোমরা সবাই এখানেই থাকো কাউকে তো থাকা লাগবে বল? না হলে শ্রাবণ দের খবর দিতে পারবোনা। আমি বরং একাই যাই।

মিরা এক নাগাড়ে এসব কথা বলে কাজের লোক দের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু তারা রাজি হয়না। এসব ভুতুড়ে জায়গায় থাকাও কি রকম একটা৷ তারা বলে তারা তাদের সাথেই যাবে। মিরা বলে তাহলে তারা যাক সে থাকুক। কিন্তু এতেও তাদের আপত্তি। অবশেষে মিরা হার মানে। সবাই বেইসমেন্টের ভিতরে যাওয়াতে রাজি হয়।
কিন্তু মিরা দেখে ভিতরে যাওয়ার দরজায় তালা দেওয়া তালা টা অনেক ক্ষুদ্র। সে এক নিমিষেই বুঝে যায় এর চাবি কোথায় পাওয়া যাবে। কারণ একদিন সামিহাকে ডাক দিতে গিয়ে মিরা দেখে সামিহার বেডে একটা চাবি। চাবিটা খুবইইইইই ছোট। সে কৌতুহল বশত সামিহাকে প্রশ্ন করে কিন্তু সামিহা এড়িয়ে যায়। চাবিটা কোথায় রেখেছিল তা জানত না। কিন্তু একদিন কাজের মেয়েটা সামিহার রুম পরিষ্কার করতে গিয়ে সেই চাবিটা পেয়েছিল আর মিরা কে দিয়েছিল। মিরা সেইটা তার কাছে রেখে দিয়েছিল। মিরা এক দৌড়ে গিয়ে সেই চাবিটা আনে আর চাবিটা দিয়ে এক মুহুর্তেই তালা খুলে যায়। মিরা ভেবে পায়না এখানে সামিহা কি করবে বা কি করেছে।
তারা সবাই দরজাটা খুলে দেখে তার সাথেই লাগানো সিড়ি রয়েছে। আর তার ভিতর ছোট বড় কয়েকটা কামরা। দরজা টা ছোট হলেও বাহিরে থেকে মনে হচ্ছে কামরা গুলো বেশ বড়। একদম পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছেনা তবে আবছা আবছা বোঝা যাচ্ছে। সিড়ি বেয়ে আস্তে আস্তে সবাই বেইসমেন্টের ভিতরে ঢোকে। কেউ কালেমা পড়ছে আবার কেউ ইউনুস দোয়া পড়ছে।আস্তে আস্তে নিচে যাওয়ার পর মিরা আমান কে ফোন করতে যায়।কিন্তু সে দেখে ফোনে কোন নেট নেই। সাধারণত বেইসমেন্টের ভিতরে নেট না থাকারি কথা। সে আস্তে আস্তে এগোতে থাকে নিচে পানিতে চিপচিপা একটা ভাব। কেমন বিচ্ছিরি গন্ধ।এখানে সেখানে মরা ইদুর পরে আছে তা থেকে আরোও বিদঘুটে গন্ধ বের হচ্ছে। মিরা ওরনা দিয়ে তার নাক ঢাকে। সিড়ির কাছে থেকে দেখা যাচ্ছে কামরাগুলোতে কি যেন ঝুলানো আছে। একটু এগোতেই মিরা আতঁকে উঠে। তার পায়ের নিচের পানি পুরো লাল। এইগুলা রক্ত ছাড়া অন্য কিছু হতে পারেনা।কেননা সেগুলো থেকে রক্তের গন্ধ আসতেছে সে তো ডাক্তার সে কোনটা রক্ত আর কোনটা কি সহজেই বুঝে যাবে। মিরা ভয়ে ঢোক গিলে। সে ফিরে আস্তে চায়। ভাবে এখন না পরে আমান দের সাথে আসাটাই শ্রেয়। এই ভেবে সে দরজার দিকে অগ্রসর হয়।
কিন্তু আকস্মিকভাবে পিছন থেকে কাজের মেয়েটার চিৎকারে মিরার পা থমকে যায়। সে এক নিমিষেই পিছে তাকায়। ভয়ে, অভিশঙ্কায় তার বুক ধুকপুক ধুকপুক করতে থাকে।সে দেখে কাজের মেয়ে বেইসমেন্টের ফ্লোরে পরে আছে।আর তার রক্তে এইবার মনে হয় সব টুকু পানি রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তার এই অবস্থা দেখে মিরা ভয়ে কাপঁতে থাকে। সে মাথা তুলে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটাকে দেখে স্তব্ধ হয়ে যায়। এ সে কাকে দেখছে? তাহলে এতদিন সে মুখোশ ধরে এ বাসাতে ছিল?

সামনে থাকা মানুষ্টার হিংস্রতা দেখে মিরা পালাতে চায়। সিড়িতে একপা দিতেই পিছনে থাকা লোকটা তার হাতের ধারালো ছুরি দিয়ে মিরার পায়ে এক কোপ দেয়। মিরা সেখানেই পরে যায় তিব্র ব্যাথায় আর্তচিৎকার করে উঠে। পা থেকে রক্ত গলগলিয়ে পরতে থাকে। তার সাহস হয়না সে পায়ে হাত দিবে তবুও ভয়ে ভয়ে ওরনা ছিড়ে তার এক টুকরো পায়ে কোনমতে বাধেঁ। তবুও তাতে কাজ হয়না রক্ত সেই আগের মত পরতে থাকে। মনে হয় ক্ষতটা খুবই গভীর হয়েছে। মিরা ডুকরে কেদেঁ উঠে আর বারংবার একটা কথায় বলে,,

তুমি না বলেছিল তোমার মেয়ে নেই। আমি তোমার মেয়ের মত তাহলে আমাকে মারতেছো কিভাবে? আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ____!

আর কিছু বলার আগেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি তাকে ক্লোরোফর্ম শুকিয়ে অজ্ঞান করে নিয়ে যায় বেইসমেন্টের কোন এক অজানা রহস্যময়ী কামরায়৷

অন্যদিকে আমান রা বাসায় ফিরে। কিন্তু বাসায় কাউকে দেখতে না পেয়ে অবাক হয়। শ্রাবণ এতে রেগে যায় কারণ সে বলেছিল তারা তিন জন শুধু শুভ্রা কে খুজঁতে যাবে ওদের কে যেতে বলেছে?

আমান শুনে বলে,

আরে ওরা কোথাও যায়নি। গেলে এতক্ষণে ফিরে আসতোনা। গিয়ে দেখ উপরে আছে। মিরা কে বলেছিলাম সব কিছু ঠিক ঠাক পরিষ্কার করে রাখতে এমন কি স্টোর রুমও তাই হয়ত তারা ক্লান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে।

আমানের কথা মতে শ্রাবণ উপরে যায় ঠিকি তবে মিরাদের পায়না। তারা তো আর জানেনা মিরা কোন বিপদে রয়েছে। শ্রাবণ হন্নি হয়ে খোজাঁর পরও তাদের না পেলে ফোন করতে যায়। কিন্তু সে দেখে মিরা তাকে ফোন দিয়েছিল। তার কপালে চিন্তায় সুক্ষ্ম ভাঁজ পরে। সে নিচে এসে আমাদের জানায়। ইউভী বলে,

আমাদের উদ্দেশ্যে ছিল শু কে খুন করা বাকি দের কাউকে না। তাহলে? তারা কিভাবে উধাও হয়।

ইউভীর মুখে এসব কথা শুনে আমান আতঁকে উঠে। সে সব কিছু শুনতে চায়। শুনতে চায় কিভাবে ইউভী এসব পথে আসলো। ইউভী বলতে না চাইলেও আমান আর শ্রাবণ জোর করে। তাদের জোরাজুরি তে ইউভী হার মানে আর বলতে থাকে।

সে যখন ছোট ছিল তখন শুভ্রার বাবার ডায়েরি পেয়েছিল। তখন সে না বুঝলেও আস্তে আস্তে সব বুঝে যায়। এমন কি সেই ডায়েরির জন্য শুভ্রার বাবা খুন হয় তাদের প্রধানের হাতে। তবে এইটা সে বড় হয়ে জানতে পারে৷
এর মাঝে আমান প্রশ্ন করে,

ডায়েরি মানে? যেইটা আমার কাছে আছে? আমি তো সেইটা খুলেও দেখিনি। চাচ্চুর সৃতিচারণ হিসেবে রেখে দিয়েছি। সেই খানে কি এমন ছিল?? যার জন্য চাচ্চু কে খুন করা হয়েছে?

সেই ডায়েরির ভাজে ভাজে অনেক কালো জাদু রয়েছে। রয়েছে ইলুমিনাতিদের গোপন অনেক কিছুর রহস্য আমি এর বেশু কিছু জানিনা। তবে চাচ্চু কালো জাদু করত শয়তানের পুজারী ছিল৷ আমি এমনিতেই সবার সাথে তেমন মিশতাম না আর ডায়েরিটা পাওয়ার পর থেকে নিজেকে আরোও বন্দি করে নেই চারদেয়ালের মাঝে। সবসময় সেইটা পড়ার চেষ্টা করেছি তবে বুঝিনি। আস্তে আস্তে আমি নেটে সার্চ করতে থাকি। আর পেয়ে যাই জার্মানে অবস্থিত সেই সুইসাইড ফরেস্ট এর ঠিকানা। যা আমার সব কিছুর রহস্য ভেদ করে দিয়েছিল। সেই ফরেস্ট আছে অনেক পুরোনো এক কবর। সেখানে দিন বা রাতে কাউকেই দেখা যায়না। যারা যায় তারা শুধু সুইসাইড করতেই যায় আর তাদের লাশ যদি ঠিক টাইমে পাওয়া যায় পঁচে না যায় তবে সেই কবরস্থানে মৃতদের দাফন করা হয়। সেইখানে আমি প্রথম গিয়ে কাউকেই পাইনি। তালা দেওয়া ছিল আর মানুষের লাশের ছিল প্রচন্ড গা গুলিয়ে দেওয়া গন্ধ। তবুও আমি অনেক কষ্ট করে সেখানে ঢুকি তবে লাশের মৃত দেহের পঁচা গন্ধে আমি থাকতে পারিনি। জোর করে থাকলেও সেখানে জ্ঞান হারায়। বলে বুঝাতে পারবোনা এত অসহ্যকর গন্ধ। আর তারপর জ্ঞান ফিরলে আমি কবরের ভিতরে নিজেকে আবিষ্কার করি।

তার শেষের কথা শুনে আমান আর শ্রাবণ দুজনেই আঁতকে উঠে।তাদের দুজনার চোখে ভয় বিদ্যমান।আর কবরের ভিতর মানে? দুজনেই প্রশ্ন ছুড়ে মারে ইউভী কে।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here