শূন্যতায় পূর্ণতা পর্ব – ০৫+৬

#শূন্যতায়_পূর্ণতা
#হীর_এহতেশাম

||পর্ব-৫||

★মেহেদী রাঙা একটি হাত আরশের দিকে এগিয়ে দিলো ফারহিন। আরশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে। হাতের দিকে তাকিয়ে চোখ তুলে তাকাতেই খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ফারহিনকে দেখতে পেল সে। দৃষ্টি স্থির হলো! মোহময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বউবেশে দাঁড়িয়ে থাকা নারীটির দিকে। লাল রঙের শাড়ি, মাথায় ঘোমটা, এত ভারী সাজেনি সে। হালকা সাজে অপরুপ লাগছে। ফারহিন কাজল ভর্তি চোখ দিয়ে ইশারা দিলো। যার অর্থ ‘হাতটি ধরো’!!
আরশ ফারহিনকে দেখে ভুলেই গিয়েছিলো যে ফারহিন অনেক্ষণ যাবত হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরশ হাতে থাকা ফোনটা পকেটে রাখলো। ফারহিনের হাত ধরার জন্য হাত বাড়াতেই সেই হাত অন্য কারো হাতের মুঠোই চলে গেল। আরশ মানুষটির চেহারা তো দেখতে পেল না তবে পিঠের দিকটা আরশ দেখলো। মানুষটি ফারহিনকে পুরো আড়াল করে নিয়েছে। আরশের অন্তরআত্মা কেঁপে উঠলো। আরশ মৃদুস্বরে ডাকলো, ‘ফারহিন, ফারহিন’!
ফারহিন কোনো জবাব দিলো না। সামনে থাকা মানুষটি ফারহিন কে নিয়ে ততক্ষণে অনেক দূরে চলে গেছে। দুজনে হাত ধরে আছে। আরশ শেষ বারের মত গগন কাঁপানো কন্ঠস্বরে ডাকলো, ‘ফারহিন’!

দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বসলো আরশ। নিশ্বাস নিতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে। দ্রুত বিছানা ছেড়ে নেমে বেড সাইড টেবিলে রাখা পানির গ্লাসের দিকে হাত বাড়ালো কিন্তু গ্লাস খালি। আরশ গ্লাস তুলে আছাড় দিলো। উঠে দাঁড়ালো, স্বপ্ন দেখেছে সে, ভয়ংকর স্বপ্ন! ফারহিন কখনো অন্য কারো হতে পারেনা। ফারহিন কখনো তাকে ছেড়ে চলে যাবেনা কারণ আরশের কাছে ফারহিন ছাড়া আর কেউ যে নেই। ফারহিন চলে গেলে আরশ একা হয়ে যাবে, আর ফারহিন আরশকে কখনো একা করে দেবে না। অস্থির হয়ে উঠলো সে। ঘামছে, প্রচুর বাজে ভাবে ঘামছে। হৃদপিণ্ড মাত্রাতিরিক্ত ভাবে লাফাচ্ছে। সহ্য হচ্ছেনা। এক হাতে বুকের বা পাশ চেপে ধরলো আরশ। নিজেকে শান্ত করতে দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকলো। ঝর্ণার হাতল ঘুরিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো। ওয়াশরুমের ফ্লোরেই বসে পড়লো। ঝর্ণার নিচে আরশ চুপচাপ বসে রইলো। তাকে শান্ত হতে হবে, এতটা অস্থির সে হতে পারবেনা। সামান্য একটা স্বপ্নে তো আরো না।

★একটি প্রশ্ন করে চুপচাপ স্বামীর সামনে বসে আছে সালমা। সালমা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে দিদাত হাসান কখন উত্তর দেবে। দিদার হাসান সালমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বলল-
“-এসব প্রশ্ন করার সময় এখন না।
“-কেন না? আপনি আমাকে আজীবন বলে এসেছেন ফারহিন কে নিজের কাছ ছাড়া করবেন না। আর এখন হুট করেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেলেন? মতলব টা কি?
“-মতলব কিছু না। খারাপ কারো নজর পড়ার আগে তাকে তার যোগ্য স্থানে বসাতে চাইছি।
“-আপনার মেয়ে বলে কথা খারাপ লোকের নজর তো পড়বেই।
“-তুমি সবসময় এমন অশুভ কথা বার্তা কেন বলো? মাঝে মাঝে মনে হয় ফারহিন আমার একার মেয়ে!
“-আপনি ঠিকই বলেছেন ফারহিন আপনার একার মেয়ে। আমিতো নামমাত্র মা। তার কোনো কিছুতে আপনি কখনো আমার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন নি।
দিদার হাসান স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো, সালমা আবারও বলে উঠলো-
“-নিজের মেয়েকে আপনি খারাপ লোকের কাছ থেকে বাঁচাতে চাইছেন ব্যাপারটা এমন না। আপনি আপনার মেয়েকে আপনার কাছ থেকেই বাঁচাতে চাইছেন।
“-সালমা!! উচ্চস্বরে বলে উঠলো দিদার হাসান।
“-একদম চেঁচাবেন না। মেয়ে জেগে আছে ভুলে যাবেন না। আর তাছাড়া আমি ভুল কি বলেছি? আপনি যা করেছেন বা করছেন তাতে আপনার মেয়ের উপর খারাপ লোকের নজর তো পড়বেই।
“-আমি ওর ভালোর জন্যই করেছি। ওকে সুন্দর একটা জীবন দিতেই!
“-তাই নাকি? যারা মধ্যবিত্ত তাদের সন্তানরা কি জীবনযাপন করে না? করে, কিন্তু আপনি শুধু সুন্দর জীবনযাপন চান নি। আপনি রাজকীয় জীবন চেয়েছেন। যেটা আমি অন্তত চাইনি দিদার। সারাক্ষণ আমার এটা চিন্তা থাকে কখন মেয়েটা সব জেনে যাবে আর আমাদের ভুল বুঝে বসবে। নিজের বাবাকে যে নিজের আদর্শ ভাবে সেই আদর্শের এমন বিদঘুটে রুপ কেউ মেনে নিতে পারবে না।
“-আমার মেয়ে জানবে না। কিছুদিন পরই তাকে আমি তার যোগ্য স্থানে প্রেরণ করে দেব।
“-অদ্ভুত! আপনি আপনার জায়গা থেকে বিন্দুমাত্র নড়তে রাজি না।
“-তুমি বুঝবে না।
“-একটা কথা মাথায় রাখবেন, সত্য চাপা থাকে না।
দিদার হাসান হাসলো। তাচ্ছিল্যের হাসি! বলল-
“-যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর।
“-আপ….
সালমা কিছু বলার আগেই দরজায় নক পড়ে। নিজেকে সংযত করে নিলো। স্বাভাবিক কন্ঠে জবাব দিলো-
“-এসো!
“-মা তুমি এখানে আমি পুরো বাড়ি খুঁজছি।
রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল ফারহিন।
“-বলো কি বলবে?
“-ফারহানা এসেছে। আমি একটু বের হবো। ও পার্লার যাবে শপিং যাবে। ওর সাথে যাই?
“-যাও। নিজের জন্য কিছু কিনে নিও আর পার্লার থেকে তুমি একটু ফেসিয়াল যা যা লাগে করিয়ে নিও।
মৃদু হেসে বলল দিদার হাসান। সালমা অবাক হলো। মেয়েকে কলেজ ছাড়া কোথাও যাওয়ার অনুমতি যেই মানুষ দেয় না সে আজ এভাবে.. কিছু বলার নেই তার। স্বামীর কর্মকাণ্ডে বিরক্ত সে, প্রচুর বিরক্ত।
“-কি ব্যাপার বাপি হঠাৎ এত আদর সমাদর?
“-তোমাকে কি আমি আদর করি না প্রিন্সেস?
“-না তেমন না। কিন্তু পারমিশন দিলে যে?
“-সামনে তোমার আকদ না? তাই এইটুকু তো করতেই পারি। যাও নিজের ইচ্ছে মত ঘুরে এসো, হ্যাভ এ গুড ডে।
“-থ্যাংক ইউ বাপি।

ফারহিন বেরিয়ে গেল। সালমা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো স্বামীর দিকে। দিদার হাসান বলল-
“-আমাকে দেখার সময় অনেক পাবে। মেয়ের বিয়ের প্রস্তুতি নাও আপাতত।
“-অবিশ্বাস্য!! বলেই সালমা বেরিয়ে গেল। দিদার হাসান তাকিয়ে রইলো। এই মানুষটার অভিমান গেল না। অভিমান বিন্দুমাত্র কমলো না।

★অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে নিলো আরশ। কালো শার্ট, অ্যাশ রঙের প্যান্ট, অ্যাশ রঙের ব্লেজার। হাতে কালো চেইনের ঘড়ি। ল্যাপটপের ব্যাগ হাতে নিয়ে অন্য হাতে কালো রঙের কোটটি ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
কাদের শিকদার ড্রয়িংরুমে বসে ছিলেন। আরশকে নামতে দেখে উঠে দাঁড়ালো-
“-গুড মর্নিং!
“-গুড মর্নিং।
“-এসো নাস্তা করবে..
“-উহু! আমি অফিসে করে নেব তুমি খেয়ে নিও।
“-এত তাড়া কিসের?
“-মিটিং আছে বাবা, এমনিতেই লেট আমি।
“-আচ্ছা তাড়াতাড়ি এসো আজ। তোমার দিদার আঙ্কেল ইনভাইট করেছে।
আরশ তাকালো।
“-কিসের ইনভাইটেশন?
“-সামনেই ফারহিনের আকদ। সেই কারণেই ছোট খাটো পার্টি।
ধপ করে আরশের হাতে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগ পড়ে গেল। আরশ বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। ফারহিনের বিয়ে? আরশের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। কাদের শিকদার অবাক হলেন।
“-কি হলো?
আরশ অন্যমনস্ক হয়ে আছে। কাদের শিকদার আবারো ডাকলেন-
“-আরশ! তুমি ঠিক আছো?
“-হ্যা.. হ্যাঁ আম.. আমি ঠিক আছি।
“-কি হলো তোমার?
“-কিছু না। আমি লেট হচ্ছি। বলেই ব্যাগ তুলে নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো আরশ। দ্রুত গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ড্রাইভার ছাড়াই বেরিয়ে পড়লো আজ। প্রচন্ড স্পীডে বাতাসের গতিতে আরশ বেরিয়ে গেল।

ট্রাফিক জ্যাম পড়লো। আরশ স্টিয়ারিং এ মাথা ঠেকিয়ে আছে। এসব কি শুনলো? কিসের বিয়ে? বিয়েতো ফারহিন করতে পারবেনা। স্টিয়ারিং এ প্রচন্ড জোরে ঘুষি বসালো আরশ। হঠাৎ হাসির শব্দ কানে এলো। বাহিরে তাকাতেই দেখলো পাশেই ফারহিনের গাড়ি৷ আরশ সোজা হয়ে বসলো। ফারহিন আইসক্রিম নিয়ে কাড়াকাড়ি তে মত্ত। ফারহানা আর সে দুজনেই দুষ্টুমি করছে। আরশ সিটে মাথা এলিয়ে দিলো। গাড়ির গ্লাস তুলে দিলো। ফারহিনের দিকে তাকিয়ে রইল। অসহায়, মায়াভরা দৃষ্টিতে ফারহিনের হাসোজ্জল মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আগেই বাবার বলা কথাটা মনে পড়লো আরশের। আরশ গাড়ির গ্লাসেই ঘুষি বসালো। রেগে গেল মুহুর্তেই। কপালের পাশের রগ দুটি ফুলে উঠেছে। হাতের মুঠো শক্ত হলো। জ্যাম ছুটতেই ফারহিনের গাড়ি বেরিয়ে গেল। আরশ তাকিয়ে রইলো। গাড়ি স্টার্ট দিলো। প্রচন্ড দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ফারহিনের গাড়িকে ধাক্কা দিলো।

আচমকা টাল সামলাতে না পেরে ফারহিনের গাড়ি ধাক্কা খেল ওভারব্রিজ এর নিচের দেওয়ালে। সামনের সিটের সাথে ফারহিন ধাক্কা খেল। মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা পেল দুজনেই। ড্রাইভার দ্রুত বেরিয়ে গেল। গাড়ির ফ্রন্ট সাইড বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাড়ি হয়তো এই মুহুর্তে আর স্টার্ট নিবে না। এর চেয়েও ভয়ংকর কিছু হতে পারতো, এই ভেবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলো ফারহিন। হঠাৎ একটি গাড়ি থামলো। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো আরশ। ড্রাইভারের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তাদের কথা ফারহিন শুনতে পারছে না।
“-আপনি ঠিক আছেন?
“-জি ঠিক আছি।
“-এমন বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হলো কি করে? ইশ! গাড়ির তো বেহাল দশা।
আরশ আফসোস করলো। গাড়ির ড্রাইভারের ঠোঁট ফেটে গেছে। রক্ত পড়ছে। আরশ দ্রুত গাড়ি থেকে পানির বোতল নিয়ে ড্রাইভারের দিকে এগিয়ে দিলো।
“-আপনি একটু রিল্যাক্স হোন।
“-ধন্যবাদ।
“-এসব কি করে হলো?
“-কোনো গাড়ি ধাক্কা দিয়েছিলো হয়তো..
“-একি আপনি দেখেন নি কোন গাড়ি ধাক্কা দিলো?
“-না খেয়াল করিনি।
“-আচ্ছা যাইহোক। বড় বিপদ হয়নি এটাই লাখ লাখ শুকরিয়া।

ফারহিন বেরিয়ে গেল। আরশের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। আরশ ফারহিন কে দেখে চমকানোর ভান করলো-
“-তুমি?
“-আপনি এখানে কি করছেন?
“-অফিস যাচ্ছিলাম, গাড়ি তোমার জানতাম না। ড্রাইভার আর গাড়ির বেহাল দশা দেখেই এলাম। তুমি কোথাও যাচ্ছিলে নাকি?
“-একটু শপিং যাবো। এখন হয়তো আর যাওয়া হবেনা।
গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ফারহিন। আরশ বলল-
“-আমার সাথে চলো। আমিও শপিংই যাচ্ছি।
ফারহিন একবার আরশকে দেখে নিলো। বলল-
“-এই গেট আপ এ শপিং? মনে হচ্ছে না।
“-আমি অলওয়েজ এমনই থাকি। চলো!
“-কিন্তু,
“-আরে কোনো কিন্তু না। একদিক দিয়ে তুমি আমার রিলেটিভ তো হেল্প করতেই পারি। এসো!
“-যাবো এক শর্তে।
“-কি শর্ত? ভ্রু কুঁচকালো আরশ।
“-বাবাকে এই ঘটনার কথা বলবেন না। উনি একটু বেশিই পজেসিভ আমায় নিয়ে।
আরশ দীর্ঘশ্বাস ফেলল বলল-
“-ঠিক আছে। চলো এবার।

ফারহানা বেরিয়ে এলো। ফারহানা কে দেখে আরশ হাসি মুখে বলল-
“-হাই, কেমন আছো?
“-ভালো ভাইয়া! আপনি কেমন আছেন?
“-অনেক ভালো। তোমরা গাড়িতে বসো আমি আসছি।
ফারহিন আর ফারহানা গাড়িতে বসলো। আরশ ড্রাইভারের সাথে কথা বলছে। ফারহানা তাকিয়ে রইল। ফারহিনকে বলল-
“-ভাইয়াটা অনেক ভালো তাইনা?
“-হুম! অনেক।

আরশ গাড়িতে বসেও গাড়ি স্টার্ট দিলো না। বলল-
“-দুজন থেকে একজন সামনে এসো।
“-কেন ভাইয়া? ফারহানা প্রশ্ন করলো!
“-আমায় লোকে ড্রাইভার ভাববে তাই।
“-তুই যা। আমি এখানে আছি। বলতেই ফারহানা কে থামালো আরশ, বলল-
“-তুমি আসো।
“-না ভাইয়া আমি এখানেই ঠিক আছি। ফারহিন যা..
ফারহিন বেরিয়ে সামনে বসলো। আরশ তাকালো।
“-কি হলো? আরশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ফারহিন..
“-সিটবেল্ট! ইশারায় বলল আরশ।
ফারহিন সিটবেল্ট বেধে নিলো। আরশ মুচকি হেসে সানগ্লাস পরে নিলো। ফারহিন আরশের হাসি দেখলো কিন্তু হাসির অর্থ বুঝলো না। বাহিরের দিকে তাকালো সে…

চলমান….#শূন্যতায়_পূর্ণতা
#হীর_এহতেশাম

||পর্ব-৬||

★এত কাছে ছিলে তবুও করিনি খেয়াল
তোমার, আমার মাঝে অদৃশ্য দেয়াল,
তোমাকেই বুঝি খুঁজেছি আমি এতকাল
এক ঝলকে বদলে গেল আমার দিনকাল।

গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আরশ মিউজিক প্লেয়ার অন করতেই কণ্ঠশিল্পী মিনারের ‘শুধু তুমি’ গানটি বেজে উঠলো। ফারহিন দ্রুত তাকালো। আরশের দিকে তাকিয়ে মিউজিক প্লেয়ারের দিকে তাকালো। ফারহিনের খুবই পছন্দের একটি গান। তবে এখন ফারহিন আর শোনে না। গানটার প্রতিটা লাইন ফারহিনের কলিজার আঘাত করে। ফারহিন দ্রুত গান বন্ধ করে দিলো। গান বন্ধ করে অন্য দিকে তাকাতেই ফারহানা বলল-

“-বন্ধ করলি কেন? ভালোই তো লাগছিলো।
“-আমার লাগছে না তাই।
“-তোর না পছন্দের গান?
“-আগে ছিলো।
আরশ দুজনের কথা মনোযোগ সহকারে শুনছিলো। কিছুই বলল না। গাড়ি শপিং সেন্টার এর সামনে থামলো। আরশ দ্রুত নেমে দাঁড়ালো। ফারহিন, ফারহানা ও নেমে দাঁড়ালো। তিনজনই ভেতরে প্রবেশ করলো।

ফারহিন আর ফারহানা নিজেদের মত শপিং করছে। কখনো এটা তো কখনো ওটা দেখেই যাচ্ছে। ফারহিনের কোনো ড্রেসই পছন্দ হচ্ছেনা। আর কেউ সেটা না বুঝলেও দূরে বসে থাকা আরশ তা লক্ষ্য করলো। আরশ উঠে দাঁড়ালো। লেডিস ড্রেসের হ্যাঙ্গার গুলো দেখছিলো। হঠাৎ একটি ব্রাউন রঙের গাউনের দিকে আরশের চোখ আটকে গেল। হ্যাঙ্গার তুলে নিয়ে আরশ সেটা দেখতে থাকে।
ফারহানা আরশকে অনেক্ষণ যাবত পরখ করছিলো। আরশের হাতে লেডিস ড্রেস দেখে ফারহানা এগিয়ে গেল।
“-গার্লফ্রেন্ডের জন্য নাকি ভাইয়া?
“-না! আমার গার্লফ্রেন্ড নেই। হালকা হেসে উত্তর দিলো আরশ।
“-তাহলে?
আরশ দূরে থাকা ফারহিনের দিকে তাকালো, বলল-
“-গার্লফ্রেন্ড নেই তবে একজনকে পছন্দ করি।
ফারহানা আরশের চাহনি অনুসরণ করে সামনে তাকাতেই ফারহিন কে দেখতে পেল। ফারহানা গলা খাকারি দিলো। বলল-
“-আপনি যদি কিছু মনে না করেন এই ড্রেসটা আমি নিই, ফারহিনের জন্য। ওকে অনেক মানাবে।
আরশ হাতে থাকা ড্রেসটির দিকে তাকিয়ে রইলো, বলল-
“-ওর পছন্দ হলে নাও। আমি তো এমনিতেই দেখছিলাম।
“-আচ্ছা! এই ফারহিন… উচুস্বরে ডাকলো ফারহানা।
ফারহিন এগিয়ে এল। আরশের হাত থেকে ড্রেস নিয়ে ফারহানা বলল-
“-এটা দেখ! ভালো লাগবে।
ফারহিন ড্রেসটা নিয়ে গায়ে ঠেকিয়ে আয়নার দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। বলল-
“-নট ব্যাড! এটা আসলেই ভালো। আমাকে বেশ মানিয়েছে।
“-আরশ ভাইয়া পছন্দ করেছে।
আরশ এতক্ষণ চুপচাপ ফারহিনকে দেখছিলো। ফারহানার কথাতে থতমত খেল। ফারহিন আরশের দিকে তাকালো-
“-গুড চয়েস! আপনার চয়েস আসলেই ভালো। কিন্তু আপনি এটা কেন পছন্দ করছিলেন? আপনার বাসায় তো ফিমেল কেউ নেই!
“-এমনিই দেখছিলাম ড্রেসটা ভালো লাগছিলো। নাথিং স্পেশাল।
“-ওকে। তাহলে আমিই রাখলাম।
“-আমি এটার পেমেন্ট করে দিই?
“-আপনি কেন করবেন? ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো ফারহিন।
“-করতে দে না। হয়তো তোকে গিফট করতে চাইছে।
বাধা প্রদান করে বলল ফারহানা।
“-হ্যাঁ ফারহানা ঠিক বলেছে। বাবা সকালেই বলছিলো তোমার আকদ সামনে তো, সেই উপলক্ষ্যে গিফট ভেবে রেখে দাও।
ফারহিন চুপ করে রইলো। আরশ ফারহিন কে চুপ থাকতে দেখে বলল-
“-করে দিচ্ছি আমি?
“-আচ্ছা।
ফারহিন চলে গেল। আরশ হাসলো, প্রশান্তির হাসি।

★কনফারেন্স রুমে বিগত দেড় ঘন্টা ধরর অপেক্ষা করছে সবাই। আরশ এখনো এলো না। ম্যানেজার একটু পর একটু পর করে এতক্ষণ পার করে দিলো। আরশ তার কর্মজীবনে কখনো এক মুহুর্তের জন্যও দেরী করেনি। শুধু তাই না, যারা দেরী করে আসে তাদের আরশ মোটেও পছন্দ করেনা। অফিসের কড়া নিয়ম গুলোর মধ্যে একটি হলো, দেরী করা যাবে না। নিয়ম না বরং এটাই প্রথম শর্ত। ম্যানেজার আবারও সবার কাছ থেকে বিরতি নিয়ে বাহিরে এসে দাঁড়ালো। আরশের নাম্বারে ডায়াল করলো। রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছেনা। ম্যানেজার তবুও অনবরত কল দিয়েই যাচ্ছে। কারণ আরশ নিজেও জানে আজকের মিটিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

শপিংমলের পাশেই ভালো একটি কফিশপে বসলো আরশ, ফারহিন আর ফারহানাকে নিয়ে। আরশের ফোনে অনবরত ফোন এসেই যাচ্ছে। আরশ বিরক্ত হচ্ছে বার বার রিংটোন অফ করেও শান্তি পাচ্ছে না। অনেক্ষণ পর ফারহিন বলে উঠলো-
“-আপনার ফোন অনেক্ষণ যাবত বাজছে। রিসিভ করুন, হয়তো কোনো জরুরী কল।
“-না তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। তোমরা অর্ডার করো। আরশের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবার ফোন বেজে উঠলো। আরশ চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করলো। চোখ খুলে খানিকটা হাসার চেষ্টা করলো। বলল-
“-এক্সকিউজ মি। আমি একটু আসছি তোমরা অর্ডার করো।
আরশ উঠে চলে গেল। শপের বাহিরে এসে ফোন রিসিভ করলো। ফোন রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে ম্যানেজার বলে উঠলো-
“-স্যার! কোথায় আপনি? সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
“-আমি জাহান্নামে। আর তুমি বার বার আমাকে কেন ফোন দিচ্ছিলে? আমাকে ফোন করার ডিউটিটা তোমাকে কে দিয়েছে জানতে পারি?
আরশের রাগান্বিত কন্ঠস্বর শুনে ম্যানেজার চুপসে গেল। বলল-
“-স্যার! আজ মিটিং ছিলো। সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
“-মি. এহমাদ তোমাকে আমি ঘাস কাটার জন্য স্যালারি দিই না। তুমি সামান্য একটা মিটিং সামাল দিতে পারছো না? সিরিয়াসলি! তোমার বোঝা উচিত আমি বিজি আছি। অফিসের বাহিরেও আমার কাজ থাকে।
“-আম’সরি স্যার।
“-মি.এহমাদ, আমাকে নেক্সট টাইম আর ফোন দিবে না। তোমার ফোন থেকে আর একটি কল ও আমি দেখতে চাইনা। আন্ডারস্ট্যান্ড?
“-কিন্তু স্যার মিটিং..?
“-মিটিং সামাল দিতে না পারলে নিজের ইন্টারমিন্যাশন লেটার রেডি করে রাখো আমি এসে সাইন করে দেব। ডিসগাস্টিং…

আরশ ফোন কেটে দিলো। ম্যানেজার অবাক! কি হলো এসব? যেই মিটিং তাকে ছাড়া হবেনা সেই মিটিং সামান্য ম্যানেজার হয়ে কীভাবে সামাল দেবে মি.এহমাদ? চিন্তিত হয়ে কনফারেন্স রুমে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই কাদের শিকদার কে দেখে আরেক দফা চমকালো। ছেলেকে অফিসে বসানোর পর থেকে আজ প্রথমবার কাদের শিকদার অফিস এলেন।
“-স্যার আপনি?
“-কেমন আছো? কেমন চলছে সব?
“-আপনার বারুদের মত ছেলে ভালো থাকতে দিলে তবেই তো থাকবো! বিড়বিড় করে বলল ম্যানেজার।
“-কিছু বললে?
“-না স্যার ভালো আছি।
“-হঠাৎ আপনি এখানে? কোনো দরকারে আসা হয়েছে বুঝি?
“-না এমনিই। তুমি আমার জন্য আর আরশের কেবিনে একটা কফি পাঠাও। বলেই আরশের কেবিনের দিকে অগ্রসর হতেই ম্যানেজার বলে উঠলো-
“-স্যার তো আজ আসেনি।
কাদের শিকদার এর পা থেমে গেল। দ্রুত ঘুরে দাঁড়ালো।
“-কিহ?
“-হ্যাঁ আসেনি আজ।
সকাল বেলা মিটিংয়ের কথা বলে আরশ যে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেল তা মনে পড়তেই কাদের শিকদার আরো একদফা চমকালো। একটা দিনও আরশ অফিস মিস দেয়নি, সে আজ মিটিং আছে জেনেও আসেনি! নাকি কোনো মিটিংই ছিলো না..
কাদের শিকদার ম্যানেজার কে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো-
“-আজ মিটিং আছে?
“-অলরেডি কনফারেন্স রুমে সবাই দেড় ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছে।
“-মিটিং আমি হ্যান্ডেল করবো তুমি যাও।
“-ওকে।
ম্যানেজার চলে যেতেই কাদের শিকদার ফোন বের করে আরশকে ফোন করলো।

ফারহিনের সামনে বসতেই আবারও ফোন বেজে উঠলো আরশের। আরশ হালকা হাসার চেষ্টা করে উঠে আবারও বাহিরে এলো। নাম্বার খেয়াল না করেই আরশ রিসিভ করে কানে ধরলো-
“-তোমাকে কত বার বলবো আমাকে বিরক্ত করো না। তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে ফোন দেওয়ার?
“-আরশ!!
বাবার গম্ভীর কন্ঠ আরশের কানে পৌঁছাতেই আরশ থতমত খেল। দ্রুত কান থেকে ফোন সরিয়ে নাম্বার দেখলো। এক হাতে কপাল চেপে আরশ ফোন কানে ধরলো-
“-সরি বাবা!
“-কে বিরক্ত করছিলো?
“-কেউ না। প্র‍্যাংক কল। তুমি বলো কেন ফোন করেছো?
“-এমনি! খাওয়াদাওয়া করেছো কিনা জিজ্ঞেস করতেই ফোন করা।
“-হ্যাঁ করেছি। আচ্ছা আমি পরে কথা বলি, মিটিংয়ের জন্য লেট হচ্ছি।
কাদের শিকদার ভ্রু কুঁচকালো।
“-তুমি অফিসে?
“-অফিসে না থেকে কোথায় থাকবো। অফিসেই আছি, মিটিংয়ের কথা বলেছিলাম না?
“-আচ্ছা ওকে। মিটিং সেরে নাও।
কাদের শিকদার ফোন রেখে দিলো৷ পুরো অফিস রুমকে একবার দেখে বলল-
“-তুমি অফিসে? তাহলে আমি কোথায়?
নিজের ছেলের মুখে এই প্রথম মিথ্যে কথা শুনে কাদের শিকদার যতটা অবাক হলো তার চেয়েও বেশি আগ্রহ জন্মালো এটা জানার, এমন কোন কাজের জন্য আরশ মিথ্যে বলেছে।

★সন্ধ্যা হয়ে এলো। সারাদিন ফারহিন,আরশ ও ফারহারা একসাথেই ছিল। একদিনের মধ্যেই ফারহিন ও ফারহানার বেশ মন জয় করে নিয়েছে আরশ। আরশ নিজ দায়িত্বে ফারহিনের গাড়িও ঠিক করে দিলো। ফারহিন নিজের বাসায় নিজের গাড়ি করেই যাতে ফিরতে পারে, কেউ যাতে সন্দেহ না করে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। গাড়ি শপিংমলের সামনে অপেক্ষা করছে ফারহিন আর ফারহানার জন্য। গাড়ি দেখে ওরা অবাক হলো-
“-আপনি এত দ্রুত গাড়িও ঠিক করে নিলেন?
“-তুমিই বলেছিলে, তোমার বাবা জানলে সমস্যা হবে তাই।
“-থ্যাংক ইউ।
আরশ হালকা হাসলো। হঠাৎ ফারহানা বলে উঠলো-
“-চল ফুচকা খাবো।
“-কোথায় পাবি?
“-ওইযে.. ফুটপাতের উপরে একটা ফুচকার স্টল বসেছে। ফারহিন আর ফারহানা ছুটে গেল। আরশ তাদের পিছু পিছু গেল। ফারহানা তিন প্লেট ফুচকার কথা বলতেই আরশ বলল-
“-না না আমি খাবো না। এসব আনহাইজেনিক খাবার আমি খাইনা।
“-ভাইয়া কি আনহাইজেনিক? খেয়ে দেখুন না অনেক মজা পাবেন।
“-হ্যাঁ ভালো না লাগলে দিয়ে দেবেন! ট্রাই তো করে দেখুন। এভাবে না বলতে হয়না। ফারহিনের মুখ থেকে বের হতেই আরশ আর না করলো না। মনে মনে আওড়ালো-
“-তুমি বললে বিষ ও খেয়ে নেব, এটা তো সামান্য ফুচকা।
ফুচকার প্লেট আরশের হাতে দিলো। আরশ ফুচকা মুখে দেওয়ার আগে একবার ফুচকাওয়ালার দিকে তাকালো। ফুচকার ভেতরের আলু, ডিম হাতে কচলাতে দেখে আরশের মাথা চক্কর দিলো। কিন্তু ফারহিনের সামনে ফেলে দেওয়া যাবেনা। তাই আরশ অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফুচকা মুখে পুরে নিলো।

চলন্ত গাড়ি থেকে ফুটপাতে নজর আটকে গেল কাদের শিকদার এর। দ্রুত গাড়ি থামাতে বলল। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে ফুটপাতের দিকে তাকাতেই দেখলো আরশ। কাদের শিকদার বিস্ময়ের চরম শিখরে পৌঁছে গেল। তার ছেলে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছে তাও দুটি মেয়ের সাথে? অদ্ভুত! এত পরিবর্তন কীভাবে হলো? কবে হলো? কাদের শিকদার মেয়েটির মুখ দেখতে পেল না। তবে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো গাড়ির গ্লাস তুলে দিয়ে বলল-
“-তুমি যেই হও না কেন, এক অদ্ভুত জাদু জানো তুমি। নাহলে এমন পাথরটাকে ভাঙার সাহস পেতে না।

★বাসায় প্রবেশ করতেই দেখলো ড্রয়িংরুমে বাবা বসে আছে। আরশকে দেখে উনি ভ্রু কুঁচকালেন..
“-আজ এত তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলে?
“-তুমি ইনভাইটেশন এর কথা বলেছিলে ভুলে গেলে?
সোফায় বসতে বসতে বলল আরশ।
“-ওহ্! তা অফিসে মিটিং কেমন ছিলো?
“-ভালো ছিলো। তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
“-ওকে।
আরশ উঠে চলে গেল। ভুলে আরশের ফোন সোফার উপর রয়ে গেল। কাদের শিকদার ফোনটা নিলেন। পাওয়ার অন করতেই স্ক্রিনে থাকা হাসোজ্জল, মায়াবী মেয়েটির ছবি দেখে তিনি চরম ভাবে ধাক্কা খেলেন। ফারহিনের ছবি আরশের লকস্ক্রিনে কি করছে? ফারহিনের সাথে আরশের কিসের সম্পর্ক? রাস্তায় যে মেয়েটিকে দেখেছিলো তবে সেটা কি ফারহিনই ছিলো?

শত শত প্রশ্ন এসে ভিড় করলো কাদের শিকদার এর মস্তিষ্কে। যার উত্তর নেই। নিজের ছেলের এমন কড়া নিয়মের জীবন যাপনে কারো আসার সু্যোগ যেখানে ছিলো না সেখানে এমন হুট করে হঠাৎ বৃষ্টির মত একটি মেয়ের আগমন কাদের শিকদার কে প্রচন্ড চিন্তায় ফেলে দিলো। তিনি জানেন কয়েকদিন পরই ফারহিনের বিয়ে, কিন্তু আরশ? এই প্রথম আরশ কারো জন্য নিজেকে রাস্তা অবধি টেনে নামালো। আরশ অবশ্যই ফারহিন কে অনেক ভালোবাসে এটা বুঝতে বাকি রইলো না। নিজের ছেলেকে কখনো তিনি পরিপূর্ণ সঙ্গ দিতে পারেন নি। এবারও কি তিনি পারবেন না? তার ছেলের একমাত্র পছন্দকেও যদি তিনি এনে দিতে না পারেন তবে নিজেকে ধিক্কার জানানো ছাড়া আর কিছুই বাকি থাকবে না।

উপর থেকে নিজের চিন্তিত বাবাকে দেখে হাসলো আরশ। রেলিংয়ে ভর দিয়ে মৃদুস্বরে বলল-
“-তুমি কি ভেবেছো ভুল করে ফেলে এসেছি? উহু! ইচ্ছাকৃত ভাবেই। যাতে তুমি দেখো ফারহিনকে। সরি বাবা! তোমাক্র ইউজ করতে চাইনি। আমার হাতে আর কিছুই করার নেই কারণ ফারহিনকে আমার চাই। জীবনে প্রথমবার কিছু চেয়ে না পেলে আমার একটুও ভালো লাগবেনা। ফারহিনের যত্ন, আদর, ভালোবাসা পাওয়ার বড্ড শখ আমার। তুমি নিজেই ভাবো, অচেনা মানুষের জন্য যার এত দরদ নিজের মানুষের জন্য তার আদর, যত্নের অভাব হবে না। আমার শূন্য জীবনকে পূর্ণ করতে ফারহিন কে চাই বাবা। তোমার সাথে মিথ্যে বলেছি আজ, সরি। বিকজ, এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার লাভ এন্ড ওয়ার!!

আরশ হাসলো। রেলিং ছেড়ে রুমের দিকে হাটা দিলো।

চলমান….

|

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here