শেষ বিকেলে এলে তুমি পর্ব -০৪

#শেষ_বিকেলে_এলে_তুমি
#সিজন_২
#Tahmina_Akther

(৪)

-রুশা,আমার ওয়ালেট কোথায়?

বেশ জোরে চিল্লিয়ে জিজ্ঞেস করলো আদিল।

রুশা তখন রান্নাঘরে সকালের ব্রেকফাস্ট তৈরি করছিলো। ফাহিমা খালার শরীরটা ভালো নেই আগের মতো। রুশাকে রান্নাবান্না সামলাতে হয় আর বাদবাকি কাজ ছুটা বুয়া এসে করে দিয়ে যায়।

খাবার সব গুছিয়ে ডাইনিংটেবিলে এনে সাজিয়ে রাখলো। এরপরে, দোতলায় গিয়ে প্রথম রুমের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করলো। ভেতর থেকে বললো,

-দরজা খোলা আছে।

রুশা দরজা খুলে দেখলো রায়হান সাহেব বই পড়ছেন। রুশা রায়হান সাহেবের সামনে গিয়ে বললো,

-বাবা,এখন কি বই পড়ার সময়? তাড়াতাড়ি চলুন। খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।

-তোকে কতবার বলেছি এত পড়াশোনার চাপের মাঝে রান্নার দায়িত্ব নিস না এরপরেও নিয়েছিস। এখন এতকিছু করে হসপিটালে যেয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে ভালো লাগবে?

-বাবা,এটুকু কাজ তো আমি করতে পারি। আপনি আসুন।

রায়হান সাহেব হালকা হেঁসে বললেন,

-আমি যাচ্ছি কিন্তু আদিলের কি যেন দরকার? যেভাবে গলা ফাটিয়ে ডাকছে পাশের বাড়ির লোকেরা জানতে চলে আসবে, ওর কি দরকার?

রুশা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে এই রুম ছেড়ে ওদের রুমের দিকে রওনা হলো।

দরজা খুলে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলাম মহাশয় শুধু কালো প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছেন। সাদা গায়ে কালো কাপড় যেন ফুঁটে আছে। আমাকে দেখে বললো,

-রুশা, তোমার অপেক্ষা করতে করতে আমার এখন শীত শীত লাগছে। এতক্ষণে মনে হলো আমার কথা।

-আপনার কথা সবসময় আমার মনে থাকে কিন্তু কাজ ফেলে তো আর চলে আসা যায় না। বাবাকে ডেকে এরপর আপনার কাছে চলে এলাম।

কথাগুলো বলতে বলতে রুশা কাবার্ড খুলে একটি ক্রিম রঙা শার্ট বের করে এনে আদিলের গায়ে জড়িয়ে দেখতে লাগলো, এই শার্টে কেমন মানাবে?

-মাশাআল্লাহ,আপনাকে সব রঙে মানায়।

-কে বলে আমায় সব রঙে মানায়? তুমি আমায় ভালোবাসো তাই সবরকম ভাবে আমাকে তোমার ভালো লাগে। এখন শার্টটা পরিয়ে দাও।

রুশা মুচকি হেঁসে আদিলকে শার্টটা পরিয়ে দিলো এরপর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিলো।

-প্রতিদিন আপনাকে শার্ট পরিয়ে দিতে হবে?

-হ্যা দিতে হবে কারণ আমার মাধুর্যের চয়েজ অনেক ভালো এবং তার পছন্দ আমার গায়ে জড়িয়ে রাখতে ভালো লাগে। এখন, চোখ বন্ধ করো।

-কেন, চোখ বন্ধ করব?

-আহা, আগে করো তারপর বলছি।

রুশা চোখ বন্ধ করলো কিছু সময় পর ওর ঘাড়ে তপ্ত নিশ্বাস আছড়ে পরতে ও বুঝতে পারলো আদিল ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।

রুশার ঘাড়ের চুলগুলো একপাশে করে একটি চেইন পরিয়ে দিলো আদিল এরপর ঘাড়ে বেশ শব্দ করে চুমু খেলো, রুশা চোখ বন্ধ করে ফেললো।

আদিল রুশার হাত ধরে নিয়ে গেলো ড্রেসিংটেবিলের সামনে এরপর বললো,

-এবার চোখ খুলো রুশা।

রুশা আদিলের কথায় চোখ মেলে তাকালো, গলায় খুব সুন্দর একটি চেইন এবং ছোট একটি লেটার A। রুশা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো আয়নার মাঝে থাকা আদিলের প্রতিবিম্ভের দিকে।

-অনেক সুন্দর হয়েছে,আদিল।

-সুন্দর তো হবে কারণ আদিলের চয়েজ ওতটা খারাপ না।

আদিলের কথা শুনে রুশা হেসে ফেললো এরপর আদিলের দিকে ঘুরে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালো। আদিলের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে দিলো।এরপর,হাত ধরে বললো,

-আপনি এবার চলেন বাবা বোধহয় অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

আদিল জিহ্বায় কামড় দিয়ে বললো,

-তাড়াতাড়ি এসো আর এখন বাজে সাড়ে সাতটা নিশ্চিত আজ হসপিটালে দেরিতে পৌঁছাবো।

-আপনি তো দেরি করলেন।

-তুমি-আমি যেখানে থাকব সেখানে সময়ের কোনো হিসাব থাকবে না, প্রেয়সী।

অতঃপর, সবাই মিলে সকালের ব্রেকফাস্ট শেষ করলো।আদিল আর রুশা রায়হান সাহেবের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

হসপিটালে পৌঁছাতে সর্বপ্রথম রুশার সাথে দেখা হলো নাজের। নাজ তো প্রাণপ্রিয় বান্ধবিকে চারদিন পর দেখতে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা। রুশাকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-দোস্ত, তোকে ছাড়া এই হসপিটালটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে৷ কেমন আছিস, তুই? আর তোদের হানিমুন কেমন হলো?

ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করলো নাজ। রুশা নাজের মুখের অভিব্যক্তি দেখে ওর কাঁধে হালকা করে থাপ্পর মেরে বললো,

-দিন দিন বড্ড ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস, নাজ। কি সব প্রশ্ন করিস?

-তোমরা হানিমুনে যেতে পারো আর আমি জিজ্ঞেস করলে ফাজিল হয়ে যাই। আল্লাহ, তোমার কাছে বিচার দিলাম।

নাজ দু’হাত উপরের দিকে তুলে মোনাজাত ধরে বললো,রুশা নাজের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
রুশার হাসির সঙ্গে এবার নাজ তাল মিলিয়ে হাসতে লাগলো।

রাউন্ডের সময় হতেই দুজন বের হয়ে গেলো। এতক্ষণ আড়াল থেকে রুশার হাসি শুনছিলো মিসবাহ।

-রুশার হাসিমাখা মুখ কখনোই দেখা যাবে না কিন্তু ওর হাসি শোনা তো যাবে।তোমাকে আমি এখনো ভালোবাসি রুশা কিন্তু আদিলের জন্য আমার সেদিনের সব প্লান ফ্লপ হলো আর আমি তোমাকে চিরদিনের মতো হারিয়ে ফেললাম।

মিসবাহ কথাগুলো বলতে বলতে ওর চোখের কোণায় জমে থাকা পানি মুছে করিডরের দিকে এগিয়ে গেলো।

————————

দেখতে দেখতে কেটে গেলো দু’বছর রুশা ইন্টার্ণ শেষ করে শিশু হাসপাতালে যোগ দিয়েছে।চিকিৎসার ছলে বাচ্চাদের সাথে নানান রকম খুনসুটি সব মিলিয়ে রুশার দিন ভালো কাটছে।

আর আদিল সে তো তার মাধুর্যের জন্য দিনকে দিন আরও ডেস্পারেট হচ্ছে।

আদিল আর রুশা যখন ডিউটি শেষ করে বাড়িতে এলো তখন দেখতে পেলো বাড়ির সদর গেটে তালা ঝুলানো। আদিল বেশ অবাক হলো কারণ বাড়ির সবাই যদি বাড়িতে না থেকে অন্তত গেটের কাছে দারোয়ান থাকবে। কিন্তু, দারোয়ানও নেই।

মোবাইল বের করে রায়হান সাহেবের মোবাইলে কল করলো আদিল। বেশ কয়েকবার রিং পরার পর কল রিসিভ করলেন রায়হান সাহেব,

-হ্যালো আব্বা, কোথায় আপনি?

-আমি তো কাজলের বাসায়। তোরা চলে আয়।

-কিন্তু,

-কোনো কিন্তু নয়, চলে আয় রুশাকে নিয়ে।

-আচ্ছা, আসছি আমরা।

আদিল কল কেটে রুশার দিকে তাকালো রুশা আগে থেকেই আদিলের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে। আদিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-আব্বা, কাজলের বাসায় গিয়েছে এবং আমাদের দু’জনকে যেতে বলেছে।

-তাহলে, চলেন যাই। আজ কতদিন হলো আরশি মামনির সাথে দেখা হয় না।

আদিল দেখলো রুশার চোখেমুখে খুশির আভা ছড়াচ্ছে।

আদিল আর রুশা গাড়িতে উঠে বসলো। কিছুদূর যাবার পর আদিল গাড়ি থামিয়ে বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, ফ্রুটস,আরশির জন্য চকলেট কেক নিলো। গাড়ির পিছনের সিটে সব রেখে আবারও কার স্টার্ট দিয়ে রওনা হলো কাজলের বাসায়।

কাজলের বাসায় পৌঁছানোর পর বেশ কয়েকবার কলিংবেল বাজালো কিন্তু খোলার নাম গন্ধ নেই। আদিল চিন্তিত ভঙ্গিতে আর একবার কলিংবেল বাজাতে দরজা খুলে গেলো।

আদিল আর রুশা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখলো পুরো বাসা অন্ধকার। আদিল বার’কয়েক কাজলের নাম ধরে ডাক দিলো কিন্তু সাড়া পেলো না।

রুশা যখন ড্রইংরমের লাইটের সুইচ অন করলো ঠিক সেইমূহর্তে অনেকগুলো কন্ঠ বলে উঠলো,

-হ্যাপি এনিবার্সারি,আদিল এন্ড রুশা। অনেক অনেক শুভকামনা ভবিষ্যতের জন্য।

রুশা আর আদিল আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব হয়ে গেলো। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে এত সারপ্রাইজ দিলে তো খুশিতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে।

আয়াত এগিয়ে এসে আদিলকে জরিয়ে ধরে উইশ করলো আর কাজল রুশাকে উইশ করলো। একে একে সবাই উইশ জানালো।

রুশা আর আদিল খেয়াল করে দেখলো রায়হান সাহেব এককোনায় দাঁড়িয়ে ওদের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।

আদিল আর রুশা উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে, রায়হান সাহেব দু’জনের মাথায় হাত রেখে বললো,

-এইভাবে সবসময় হাসিখুশি থাকবি।

অতঃপর, সবাই মিলে আনন্দ করতে লাগলো। কাজল আর রুশা মিলে খাবার ডাইনিং টেবিলে খাবার পরিবেশন করতে লাগলো।

বাড়ির সবাই একসাথে বসে খাবার খেয়ে নিলো। আরশিকে খাবার তুলে খাইয়ে দিচ্ছে রুশা আর নানান রকমের কথা বলছে। আরশি কিছু কথার জবাব আধো বুলিতে দিচ্ছে আর যেগুলো না বলতে পারছে সেগুলো চুপ করে শুনে যাচ্ছে।

খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ হতে আদিল আর রুশা সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লো উদ্দেশ্য লংড্রাইভ।

————————

-কালো রঙে কাউকে এতটা সুন্দর লাগে জানতাম না আমি। এতটা নিখুত সুন্দরী কেন, আপনি?আপনাকে একপলক দেখার পর থেকে আমার রাতের ঘুম হারিয়ে গেছে অতল গহ্বরে।আমি যে আর ফিরে আসার পথ খুঁজে পাচ্ছি না।

কেন, আমি সেদিন আপনার ছবি দেখতে গেলাম? সেই ছবি দেখা হলো আমার জীবনের সবচেয়ে বড় মিষ্টি ভুল। মিষ্টি ভুল কেন বললাম জানেন?
জানেন না হয়তো?আমিও বলবো না।

আপনাকে কিভাবে আমার করে পাবো আমি জানি না?কিন্তু,আমি এটা জানি আপনাকে আমার জীবনে চাই-ই চাই। হোক সেটা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে।

বলে হাতে থাকা গ্লাসে থাকা ওয়াইন গলায় ঢাললো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here