শ্যামারঙা,পর্ব:১৩+১৪

শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ১৩

—-তোকে কত সময় ধরে ডাকছি শুনতে পাসনি…..

—- না ( মাথা নিচু করে)

— শুনবি কি করে কানে তো পাহাড় গুজে রেখেছিস….

— এই নে

— কী

— এই ওষুধটা খেয়ে নে…

— কী….ওষুধ…
আমি খাবো না কোন ওষুধ…

— খেতে হবে..

— না….

— এবার কিন্তু আমার রাগ হচ্ছে…
সবাই কিন্তু জানে আমি এক কথা বারবার বলা পছন্দ করি না…

— তাতে আমার কিছু না..
আমি খাবো না.. 😫😫

বলার সাথে সাথেই তিনি এমন একটি ধমক দিলেন যার শব্দে আমি আর কোন কথা না বলেই আমি ওনার হাতে থাকা দুটো ওষুধই খেয়ে নিলাম…

তারপর আবার কানে হেডফোন গুজে ওনার সাথে কোন রকম কথা না বলেই সিটে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম…,

কেন যেন মনে হচ্ছে চোখে ঘুমের পাহাড় নেমে এসেছে….

হঠাৎ কেমন যেন অনেক চিল্লাপাল্লা আর হৈ হুল্লোড় কানে আসছে…

চোখে এত ঘুম বাসা বেধেছে যে কানে সব কিছু শুনতে পারছি কিন্তু চোখ মেলে দেখতে পারছি না..,
আর কেন যেন তাকাতেও ইচ্ছা করছে না….

তাই বিরক্তি নিয়ে আবারও সেভাবেই বসে রইলাম…
আর এত চিৎকার চেচামেচির কারণ মনে করার চেষ্টা করছি…

তখনই মনে পড়লো জার্নির কথা…

আর মনে পড়তেই সাথে সাথেই চোখের পাহাড় সমান ঘুম এক মুহূর্তেই উবে গেল….
আর আমি তখনই চোখ মেলে তাকালাম….

আর তাকিয়ে বাইরে সূর্যের আলোয় আলোকিত পরিবেশ দেখে আমি অবাক,.

এ কি করে হলো? ¿

এক মুহূর্তের ঘুমেই রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে গেল…

নাকি আমি আবার ভুল দেখছি..
মোবাইলের আলো জালিয়ে দেখি সকাল সাতটা বাজে….

সবকিছু কেন যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।
মানে কিভাবে সম্ভব খুলনা থেকে কুয়াকাটা অব্দি দশ- বারো ঘন্টার লং জার্নির পথটা এক ঘুমেই আমি পার করে দিলাম…

যেখানে আমি বাসে ঘুমাতেই পারি না….

মাথায় হাত দিয়ে পাশের সিটে তাকাতেই দেখি নীলাদ্রি দা ফোনে কারও সঙ্গে চ্যাট করছেন।
ওনার দিকে তাকিয়ে আমি আবার মাথা সিটে এলিয়ে দিয়ে বসে থাকলাম আর পাশে বসেই ওনার কথা ভাবছি…..

প্রায় একঘন্টা পর আমাদের বাস এসে গন্তব্যে থামলো….,

একটানা অনেক সময় বসে থাকার পর বাস থেকে নেমে দাড়াতেই খুব টায়ার্ড লাগছে…..
তবে ভালো লাগার বিষয় হচ্ছে আমরা সবাই মিলে একসাথে আছি,….

এরপর আমরা সবাই আমাদের বুকিং করা রিসোর্টে গিয়ে উঠলাম…..
রিসিপশনে গিয়ে সবাই রুমের চাবি নিয়ে সবাই যে যার রুমে চলে গেলাম….

ফ্রেশ হয়ে সবাই যখন সকালের খাবার খেতে একত্র হলাম…..
তখন নীলাদ্রি দা আমাদের সবার জন্য কিছু রুলস ঠিক করে দিলেন….

তবে আমার ওনার রুলসে কিছু যায় আসে না…
আমার মাথায় এখন একটাই চিন্তা
কি করে আমি তাকে আমার মনের কথা বলবো….

চলবে…..

শ্যামারঙা
লেখিকাঃ বৃষ্টি সরকার অধরা
পর্বঃ১৪

তবে আমার ওনার রুলসে কিছু যায় আসে না…
আমার মাথায় এখন একটাই চিন্তা
কি করে আমি তাকে আমার মনের কথা বলবো….

সারাদিন রেস্ট নেবার পর বিকেলের দিকে কেন যেন খুব সাগর পাড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো..
কিন্তু এখানে আমি প্রথমবার এসেছি কিছু চিনিওনা তাই একা কোথাও যাবার কথা ভাবতেও পারছি না…

তাই মনের ব্যাকুলতা কমাতে রুমের সাথে থাকা লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাড়ালাম ।
বারান্দা থেকে সাগর পাড় বেশ অনেকটা দেখা যাচ্ছে তাই মন কিছুটা শান্ত হলো….

হটাৎ মনে হলো রুমের দরোজা কেউ নক করছে…..

দরজা খুলে দেখি মনিরা দাঁড়িয়ে আছে..
আমি ওকে ভেতরে আসতে বলায় ও বললো…..

—– না না,,দিদি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও..

— কেন??

— আসলে আমি আর তোমার মিরাজ ভাই ভাবছিলাম ঘুড়তে যাবো তাই তোমাকে ডাকতে এলাম…..

—- তোমরা যাবে।
আমাকে কেন টানছো এর মধ্যে।।
আর বাকিরা সবাই যাবে না। নাকি তোমরা দুজন আলাদা যাবে???

—-বাকি দের খবর আমারা জানি না

—- কেন?? কোন সমস্যা হয়েছে নাকি??

—- না না..
সমস্যা হবে কেন??

— তাহলে সবাই যাবে না কেন.. আর সেই খবর নেই বা কেন???

—– আরে এটাই তো নীলাদ্রি ভাইয়ের রুলস….
কেন তোমার মনে নেই…

—ওও..
মাথায় ছিলো না…
আরেক বার বলো তো….

—- নীলাদ্রি ভাই বলেছেন…রুলস নাম্বার..
1.আমরা যারা কাপল আছি তারা আমাদের ইচ্ছে মতো একারাই যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারি তবে ফোনের লোকেশন চালু রাখতে হবে…

2. কাপল বাদে যারা আছে তারা নীলাদ্রি ভাইকে ছাড়া বা তার পারমিশন ছাড়া কোথাও যাতে পারবেনা…

— ওও..
আমি তো একা আমার তো তাহলে নীলাদ্রিদার পারমিশন ছাড়া কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না।।।

— না দিদি..
তোমার আমাদের সাথে যাবার কথা তোমার ভাই আগেই নীলাদ্রি ভাইকে বলে রেখেছিল…
আর নীলাদ্রি ভাই তো এখন রিসোর্টে নেই..

— কেন? কোথাও গিয়েছেন নাকি নবু আর কনা দি কে নিয়ে…

— মনে হয় না…
ভাই একাই যান কার সাথে দেখা করতে গেলেন…
কে যেন একটা স্পেশাল গেস্ট আসছেন আজ যশোর থেকে তাই তাকে রিসিভ করতে গেলেন…

—- ওও
আচ্ছা… তা তোমরা কখন বের হবে….

—- তুমি না গেলে তো আমি যাবো না..
আর তুমি যদি যাও তবে রেডি হতে যতটুকু সময় লাগবে…

—- ওকে…
যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি রেডি হও জলদি…..

সন্ধ্যা নামার কিছু সময় বাকি আছে তার মধ্যেই আমরা বেড়িয়ে পড়লাম….

আমার জানা মতে আমিই অন্যদের ছাড়া আসতে চাইনি আর এখানে রিসোর্ট থেকে বেড়িয়ে দেখি আমি বাদে সবাই ঘুড়তে ব্যস্ত……

আর যাবেই বা না কেন…
সবাই তো এখানে সাথী নিয়েই এসেছে শুধু আমিই একা…
তবে যার ভরসায় এসেছি সে নিজেই লাপাত্তা…..

কিছু সময় ঘুরে এসে রিসোর্টের হোটেলে আমরা তিনজন বসে শীত যাতে কম অনুভূত হয় তাই গরম গরম কফি খাচ্ছি আর আড্ডা দিচ্ছি….

এর মধ্যে হঠাৎ করে নীলাদ্রি দা এসে বললেন…

—- মেঘা তোর রুমে একটু চলতো…

—- কেন?? কোন সমস্যা…

— না…
রুমে যেতে না পারলে চাবি টা দে…
কাজ আছে…..

ওনার এমন ব্যস্ততা আর বিরক্তি ভরা কণ্ঠ শুনে কফি না খেয়েই হাটা শুরু করলাম দোতলায় আমার রুমের দিকে….

রুমের কাছাকাছি যেতেই তিনি আবার চাবি চাইলেন….
এবার আমি চাবিটা ওনার হাতে দিয়ে দিলাম….

রুমের সামনে গিয়ে আমি অবাক…
সেখানে অত্যন্ত সুন্দরী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে….

নীলাদ্রি দা তার সামনে গিয়ে বললেন…

— সরি সরি…লেট হয়ে গেল…

—- না না…
ইটস ওকে….

—- আর বলো না….
একেই তো এখানে আর কোন রুম নেই তার ওপর ওকে খুজেই পাচ্ছিলাম না…
আর যখন পেলাম সাথে সাথেই নিয়ে এলাম….

বলেই রুমের লক খুলে মেয়েটিকে ভেতরে যেতে বললেন….

মেয়েটির পেছন পেছেন আমিও গেলাম রুমে…

কারণ এদের কাহিনী আমি কিছুই বুঝতে পারছি না….

রুমে যেতেই নীলাদ্রি দা আমাকে বললেন…

—মেঘা তোর কি দুটো বেডই লাগবে নাকি….

— না না..কেন…

— কেন কিরে…মহিমা এসেছে ওকে তো তোর সাথেই রুম শেয়ার করতে হবে।।।

কথা শুনে নিজের কাছেই খারাপ লাগলো…
তাই কোন কথা না বলে অন্য বেড থেকে ওড়নাটা সরিয়ে নিলাম…..

এত এতটা সময়ে মেয়েটি আমার সাথে একটুও কথা বলে নি…

যদিও বা আমি কথা বলতে চেয়েছি সে আমাকে এভয়েড করেছে…
হয়তো আমি #শ্যামারঙা তাই কথা বলতে চাইছে না…

আর সেই সাথে নীলাদ্রি দা ও বলে গিয়েছেন….

তার গেস্ট কে যেন কোন ভাবেই বিরক্ত না করা হয়…

আত্র কোন ভাবে যদি তিনি জানতে পারেন আমার জন তার গেস্ট বিরক্ত হয়েছেন তাহলে নাকি আমার খবর আছে…

ওনার কথা টা শুনে আমি যতটা না কষ্ট পেয়েছি তার থেকেও বেশি আমার ইগো তে লেগেছে….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here