শ্রাবণ ধারা-২ পর্ব -১১

#শ্রাবণ_ধারা-২
#পর্ব-১১
#সাদিয়া

“বাবা” ডাক শুনে সকলে চমকে পেছনে তাকায়। একটা কালো ফ্রক পরিহিত পাঁচ বছরের বাচ্চা মেয়ে হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে নাজমুলের মুখেও হাসি ফুটে উঠলো। সে “নিরা” বলে দৌড়ে বাচ্চাটির কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলো। বাচ্চাটিও তাকে জরিয়ে ধরলো।
—কেমন আছো মা?

—ভালো। জানো বাবা আমরা প্লেন দিয়ে এসেছি এখানে। কি যে মজা লেগেছে আমার। ও বাবা আমাকে আরেকবার প্লেনে উঠাবে? বলোনা না বাবা উঠাবে প্লেনে।

নাজমুল হাসি মুখে জবাব দেয়,
—অবশ্যই উঠাবো। আমার মা আমার কাছে একটা আবদার করেছে সেটা না রেখে কি আমি পারি বলো।
বাচ্চাটি খুশি হয়ে নাজমুলকে আবারো জরিয়ে ধরলো এবং বললো,
—তুমি পৃথিবীর বেষ্ট বাবা!

এতোক্ষণে ধারা অবাক চোখে নাজমুল আর বাচ্চাটাকে দেখছিলো। ধারা বুঝতে পারলো নিরা নামের বাচ্চাটা নাজমুলের মেয়ে। ধারা অবাক হয়ে ভাবছে,
—নাজমুল ভাই বিবাহিত? তার একটা মেয়েও আছে। বউ-বাচ্চা থাকার পরেও উনি আমার আর শ্রাবণের পিছনে পড়ে আছেন? কিন্তু কেন? কি চান উনি?
নাজমুল নিরাকে নিয়ে এতোই ব্যস্ত যে তার আর কোনো দিকে খেয়াল নেই। হঠাৎ তার মাথায় এলো নিরা এখানে কিভাবে এবং কার সাথে এলো।
—আম্মু তুমি এখানে কার সাথে এসেছো?

—মামনি আর ওই আঙ্কেলটার সাথে।
বলেই নিরা আঙ্গুল দিয়ে রাসেলকে দেখিয়ে দিলো। নাজমুল রাসেলের দিকে তাকাতেই তার চোখ গেলো রাসেলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নাদিয়ার দিকে। নাদিয়াকে দেখে নাজমুল ভ্রু কুঁচকায়।
—তোমরা এখানে কি করছো?

নাদিয়া তাছ্যিল্য করে হেঁসে বললো,
—এখানে না এলে তো তোমার এই সুন্দর রূপটা সম্পর্কে জানতেই পারতাম না। জানতেই পারতাম না তুমি আমাকে আর আমার মেয়েকে কি বাজে ভাবে ঠকাচ্ছো। কেন করলে এমন নাজমুল? বউ বাচ্চা থাকতেও আরেকজন মেয়ের প্রতি এতো কিসের টান তোমার? কেন এভাবে ঠকালে আমাদের? আমার কথা না হয় বাদ দিলাম তুমি একবারও নিরার কথা ভাবলে না নাজমুল? ও তো তোমার নিজের রক্ত ছিলো তোমার নিজের মেয়ে! তাহলে কেন করলে এমন।
নাজমুল কিছু বলছে না। এবার শ্রাবণ মুখ খুললো,
—কি হলো উত্তর দাও নিজের বউয়ের কথার। কেন করলে এমন?

—যা করেছি বেশ করেছি। নিজের ভালোবাসার জন্য করেছি।

—ভালোবাসা? কোনটাকে তুমি ভালোবাসা বলছো? তোমার যদি মনে হয় তুমি ধারাকে ভালোবাসো তাহলে সেটা ভুল। ধারা যদি তোমার ভালোবাসা হতো তাহলে তুমি ধারার জীবনটাকে নরকে পরিনত করতে না। তোমার জন্য ধারা আর শ্রাবণ ভাই কি কি সহ্য করেছে তার কোনো খবর আছে তোমার। ধারা দেশ ছেড়েছে শ্রাবণ ভাই তার পরিবার থেকে বিছিন্ন শুধু মাত্র তোমার নোংরা মানসিকতার জন্য। আদো তুমি ভালোবাসা মানে বোঝো নাজমুল? তুমি তো ভালোবাসার মতো পবিত্র শব্দটাকে ঘৃণিতো করে দিলে। তুমি যদি ধারাকে এতোই ভালোবাসতে তাহলে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব রাখতে পারতে। কিন্তু না তুমি তা করোনি। তা না করে দুটো মানুষের জীবনকে নরক করে দিয়েছো।

—এই তোমার এইসব লেকচার বন্ধ করো তো। তোমার কি মনে হয় আমি ধারার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিতাম আর ওর বাবা আর ভাই তা মেনে নিতো? জীবনেও মানতো না। কারণ আমার ফ্যামিলি! আমার পরিবারের সাথে ওর বাবার পূর্ব শত্রুতা! আর এসব আমি তোমাকে কেন বলছি। তুমি যাও এখান থেকে।

—হু চলে যাবো। নিজের মেয়েকে দিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো।

—মেয়েকে নিয়ে মানে? নিরা কোথাও যাবে। যাবে শুধু তুমি। নিরা আমার সাথে থাকবে।

—তুমি ভাবলে কি করে তোমার মতো একটা অমানুষের কাছে আমি আমার মেয়েকে থাকতে দেবো। আমার মেয়ের জীবনে আমি তোমার কালো ছায়াও দেখতে চাই না।
নাজমুল রেগে গেলো নাদিয়ার কথায়।
—তোমার এতো বড় সাহস তুমি আমার থেকে আমার মেয়েকে কেড়ে নিতে চাও।

শ্রাবণ ভাবছে,
—আরে বাহ্ এর তো দেখি মেয়ের জন্য বহুত ভালোবাসা। দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা আমার থেকে আমার ভালোবাসা আমার পরিবার কেড়ে নিয়েছিস না তুই এখান তোর থেকেও আমি তোর মেয়েকে কেড়ে নিবো। আর তোর মতো মানুষের সাথে এমন একটা বাচ্চা থাকলে তার ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে।
শ্রাবণ নিজের ফোনটা বের করে রাসেলকে টুস করে একটা এসএমএস করে দিলো। রাসেল চোখ দিয়ে শ্রাবণকে কিছু একটা ইশারা করতেই শ্রাবণ বাঁকা হাসলো।
অপরদিকে নাজমুল আর নাদিয়ার মধ্যে চলছে নিরাকে নিয়ে ঝগড়া। নাজমুল কিছুতেই নিজের মেয়েকে দেবে না আর নাদিয়া নিজের মেয়েকে ছাড়া যাবে না। একপর্যায়ে নাজমুল নিজের রিভলবারটা নাদিয়ার দিকে তাক করে বলে,
—ওকে তাহলে বরং তুমি উপরেই চলে যাও। এমনিতেও তোমাকে আমার আর কোনো দরকার নেই। তুমি বাঁচলে কি মরলে তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
এই বলে যেই না নাজমুল ট্রিগার চাপতে যাবে ওমনি শ্রাবণ বলে উঠে,
—ব্রো ঝগড়া করার আগে দেখে তো নাও তোমার মেয়ে কোথায়?

শ্রাবণের কথায় নাজমুল আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও নিরা নেই। নাদিয়াও অবাক হয়।
—শ্রাবণ আমার মেয়ে কোথায়?

—আছে আছে আমার কাছেই আছে। আমি ওকে যতন করে নিজের কাছে এনেছি।

—দেখ আমার মেয়ের সাথে কিছু করবি না। যা করার আমাকে কর কিন্তু আমার মেয়ের গায়ে যেন একরাম আঁচড়ও না লাগে। ওর যদি কিছু হয় তোকে আমি ছাড়বো না বলে দিলাম।

—আরে ভাই রিল্যাক্স। আমি তোমার তো এতোটা নিচ মানসিকতার না যে বাচ্চা মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু করবো। তুমি ছোট বাচ্চা নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে নিজের কাজ হাসিল করে নিতে পারো কিন্তু আমি পারি না গো। এতটাও অমানুষ এখনো হয়ে উঠিনি যে!

নাজমুল যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সে আস্বস্ত হলো শ্রাবণ নিরার সাথে খারাপ কিছু করবে না এতটুকু নাজমুল চেনে শ্রাবণকে। নাজমুলের কাছে মেয়ের চাইতে বড় আর কিছু নেই। নিরাকে সে অসম্ভব ভালোবাসে।
—শ্রাবণ ভাই আমার মেয়েকে দিয়ে দিন প্লিজ। আমি ওকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো। যেখানে গেলে এই লোকের অভিশপ্ত ছায়াও পড়বে না আমার মেয়ের উপর। আমার মেয়েকে আমায় দিয়ে দিন। ও ছাড়া যে আমার কেউ নেই শ্রাবণ ভাই।

—চিন্তা করবেন না ভাবি নিরা সেইফ আছে। ওর কোনো ক্ষতি আমি করবো না। আর নিরা আপনার কাছেই থাকবে। এই নোংরা লোকের ছায়াও যেন নিরার উপর না পড়ে সেই ব্যবস্থাই করবো আমি।

নাজমুল দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
—তোমরা আমার কাছ থেকে আমার মেয়েকে কেড়ে নিতে উঠে পড়ে গেলেছো কেন বলো তো?

শ্রাবণ তাছ্যিল্য করে বলে,
–কারণ তোমার মতো মানুষ বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। নিরাকে তো আমি তোমার থেকে আলাদা করবোই। তোমাকেও বুঝতে হবে নিজের কলিজার এক অংশ নিজের কাছে না থাকলে কেমন কষ্ট লাগে। তুমি আমার থেকে আমার পরিবার কেড়েছো, ভালোবাসা কেড়েছো তুমি আমার বোনের নিষ্পাপ বাচ্চাটাকেও তোমার নোংরা কাজে সামিল করেছো। তুমি আমার কলিজা নিয়ে টানাটানি করে ভাবলে কি করে তোমাকে আমি এতো সহজে ছেড়ে দেবো। আমাকে কি তোমার অবলা মনে হয় যে নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের বদলা নেবো না। তুমি কি আমাকে ধারা ভেবেছো যে নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের বদলা না নিয়ে হাওয়া হয়ে যাবো। সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে মহান হয়ে যাবো। না গো এতোটাও ভালো মানুষ নই আমি।

নাজমুল ভীষণ অসহায় হয়ে পড়লো।
—দেখ শ্রাবণ এমন করিস না। আমার মেয়ে আমার সব। ওকে ছাড়া আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। কোথায় আমার মেয়ে বল?

শ্রাবণ নাজমুলের কথার পাত্তা না দিয়ে বললো,
—ভাবি নিরাকে রাসেল নিয়ে গেছে। তুমিও যাও। আর হ্যাঁ আজ রাত বারোটায় তোমাদের সিঙ্গাপুরের ফ্লাইট। তুমি আর নিরা ওখানেই থাকবে। একদম সেইফ। আর খরচের কথা চিন্তা করো না। ওটা মাসে মাসে তোমার একাউন্টে পৌঁছে যাবে।
শ্রাবণের কথায় নাদিয়া কৃতজ্ঞতার হাসি দিয়ে চলে গেলো।

—তুই এটা ভালো করলি না শ্রাবণ। আমার থেকে আমার মেয়েকে আলাদা করে ভালো করলি না তুই। কি ভেবেছিস আমি এতো সহজে তোকে ছেড়ে দেবো। কখনো না।

—সে তুমি যে সহজে সোজা হওয়ার মানুষ নও তা আমি জানি। তাই সব ব্যবস্থা করেই এসেছি। আজ আমি মরে গেলেও তুমি বাঁচবে না।

নাজমুল শ্রাবণের কথায় হুট করে তার দিকে রিভলবারটা তাক করলো। ট্রিগার চাপতেই ধারা নাজমুলকে ধাক্কা দিলো যার ফলস্বরূপ গুলিটা শ্রাবণের বুকে গিয়ে লাগলো। শ্রাবণ “আহ্” শব্দ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। আর ধারা শ্রাবণ বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারালো।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here