শ্রাবণ ধারা-২ পর্ব -০৯

#শ্রাবণ_ধারা-২
#পর্ব-৯
#সাদিয়া

সকাল নয়টায় একটু আগে হাসপাতালে যায় ধারা। কেবিনে ঢুকতেই দেখতে পায় নাজমুল তার কেবিনে বসে আছে। নাজমুলকে দেখেই ধারার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। ইচ্ছে করলো ঠাস ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পড় লাগাতে। কিন্তু ধারা তা করলো না। সে নিজের ইচ্ছেটা দমিয়ে রাখলো। শ্রাবণ বলেছে নাজমুলের সাথে সবসময়ের মতো নরমাল বিহেভ করতে। আর সত্যিটা এখনই কাউকে না বলতে। যদিও তাদের কাছে শ্রাবণের নির্দোষ হওয়ার পোক্ত প্রমাণ আছে তবুও শ্রাবণ নাজমুলকে নিয়ে চিন্তিত। কারণ সে সহজে দমে যাওয়ার মানুষ নয়। ধারা নিজের রাগটা দমিয়ে রেখে হাসিমুখে এগিয়ে গেলো নাজমুলের দিকে।
—আরে নামজুল ভাইয়া আপনি এখানে?

—ধারা তুমি ঠিক আছো তো? তুমি ঘুমিয়ে গেছো ভেবে তোমাকে রাতে আর ফোন করি নি। সকালে ফোন করলাম তুমি ধরলে না। অনেক চিন্তা হচ্ছিল আমার তাই চলে এলাম।

ধারা মিষ্টি হেসে জবাব দিলো,
—চিন্তা করবেন না আমি ঠিক আছি। আসলে মাইগ্রেনের ব্যাথাটা বেড়ে গেছিলো কালকে হঠাৎ করে।

ধারা ঠিক আছে শুনে নামজুল স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেললো। কিছুক্ষণ ধারার সাথে কথা বলে সে চলে গেলো।
নামজুল যেতেই ধারা বুক ভরে নিশ্বাস নিলো। নাজমুলের সাথে বকবক করে ধারার মাথাটা ধরে গেছে। ধারা আনমনে বলে উঠলো,কফিই!
এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো। ধারা ভেতরে আসতে বললো। অনুমতি পেয়ে ডা.রাফি ভেতরে প্রবেশ করলো। তার হাতে কফির কাপ। সে কফির কাপটা ধারার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,নিন ডা.ধারা কফি খান।

—থ্যাংক ইউ ডা.রাফি। এটার খুব দরকার ছিলো।

ডা.রাফি চমৎকার হাসলো। ধারা এই প্রথমবার খেয়াল করলো হাসলে রাফির বা গালে ছোট টোল পড়ে।
—আসলে আমি কফি খেতে যচ্ছিলাম। এখান দিয়ে যাওয়ার সাময় দেখলাম আপনি কপালে ম্যাসাজ করছেন। বুঝলাম আপনার হয়তো মাথা যন্ত্রণা করছে। তাই কফিটা নিয়ে এলাম।

—থ্যাংক ইউ এ্যাগেইন ডা.রাফি।

—এতো থ্যাঙ্কস দিতে হবে না ধারা। আমি অমন কিছুই করি নি।
ধারা আলতো হাসলো।

—নতুন জায়গায় কেমন লাগছে?

—তেমন একটা খারাপ না।

—কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো আমাদের এখানে।

—এমা না না কি বলছেন। সমস্যা কেন হবে।

—কোনো সমস্যা হলে আমাদের অবশ্যই বলবেন।

—জ্বী অবশ্যই।
এভাবেই তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বললো।

.
রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাঁটছে ধারা। আজকে কেন যেন তার ভীষণ হাঁটতে মন চাইছে। হাঁটতে হাঁটতে ধারা একটা পার্কের সামনে আসলো। পার্কে বিভিন্ন বয়সের মানুষজন রয়েছে। তবে তাদের মধ্যে বাচ্চাই বেশি। ধারা পার্কে গিয়ে বসলো। কিয়ৎক্ষণ পর ধারা তার পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করলো।
—নিন মিস ধারা বাদাম খান। বাদামে লৌহ আছে। লৌহের কাজ জানেন তো নাকি?

ধারা শ্রাবণের দিকে তাকালো।
—না মানে এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম আরকি।
ধারা কিছু না বলে চুপ রইলো।
—এমন চুপ করে বসে আছেন কেন?

—আপনি কেন সত্যিটা কাউকে বলতে দিচ্ছেন না?

—এতে বিপদ বাড়বে ধারা। নাজমুল ভাইকে আমার বিশ্বাস নেই। সাংঘাতিক লেভেলের ভয়ংকর মানুষ। জানেন তার সম্পর্কে এমন এমন খবর পেয়েছি যা শুনলে আপনি অবাক হবেন। আমার মনে হয় না দুনিয়াতে এমন কোনো অপকর্ম আছে যা সে করেনি। জানেন সে একজন বড় মাপের অর্গান স্মাগলার!

—কিহ্! তিনি অর্গান স্মাগলার? এইসব কি বলছেন আপনি?

—হুম ঠিকই বলছি।

—এতোকিছু জেনেও তাকে পুলিশে কেন দিচ্ছেন না? অর্গান স্মাগলিং কতো বড় ক্রাইম জানেন না।

—পুলিশ কি আমার মামা হয় সম্পর্কে যে আমার মুখের কথায় বিশ্বাস করবে। প্রমাণ লাগবে প্রমাণ।

ধারা বিরক্তি নিয়ে বললো,
—এতো কিছু যখন জেনেছেন তখন প্রমাণ জোগাড় করতে পারলেন না।

—মানুষ যখন অপকর্ম করে তখন কি সে জায়গায় জায়গায় প্রমাণ রেখে করে নাকি। প্রমাণ অনেক খুঁজে বের করতে হয়।

—তাহলে প্রমাণ না খুঁজে এখানে বসে বাদাম চিবুচ্ছেন কেন?

—অর্গান স্মাগনিংয়ের ঘটনা আমি মাত্র এক মাস আগে জেনেছি। তখন রাসেলকে খোঁজ নিতে বলেছিলাম। বিশ্বাস করুন এই এক মাসে একটাও মন মতো খবর দিতে পারে নি। এই ডাফারের জন্য রকিটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে। কোনো কাজের না এই ছেলে। বউ পাবে কি না সন্দেহ আছে আমার।

—এই রাসেল রকি কে?

—আমার নিঃসঙ্গ জীবনের সঙ্গী।
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো শ্রাবণ। আজকে কেন যেন শ্রাবণের পরিণতির জন্য ধারার নিজেকে দয়ী মনে হচ্ছে। দু’দিন আগেও ধারার মনে হতো শ্রাবণকে ভালোবেসে সে জীবনের সর্বোচ্চ শাস্তি পেয়েছে কিন্তু সত্যিটা জানার পর তার মনে হচ্ছে তাকে ভালোবেসে শ্রাবণ নিজের জীবনের সবকিছু হারিয়েছে। দোষ না করেও সে দোষী। তার প্রিয়জনেরা তাকে অবহেলা করে। তাকে ঘৃণা করে। ধারাকে ভালোবেসে সে আজ নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছে। আচ্ছা তারা যখন সত্যিটা জানবে তখন কি করবে? ধারার সত্যিটা জানার পর যেমন ধারার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিলো শ্রাবণের ক্ষেত্রেও কি তাই হবে? সবাই আপন করে নেবে শ্রাবণকে?

—মিস ধারা আপনি একটু বসুন আমি আরো এক ঠুঙ্গা বাদাম নিয়ে আসছি।

শ্রাবণ হাঁটতে হাঁটতে কাউকে ফোন করলো। মিনিট দশেক পর শ্রাবণ বাদাম হাতে ফিরে এলো।
—নিন মিস ধারা বাদাম খান আর বুদ্ধি বাড়ান।

শ্রাবণ ধারাকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে দিচ্ছে আর ধারা খাচ্ছে। বাদাম খাওয়ার পর্ব শেষে শ্রাবণ ধারাকে বলে,
—মিস ধারা আপনার জন্য আমার কাছে একটা গিফট আছে।

—গিফট?

শ্রাবণ পকেট থেকে একটা লকেটসহ চেইন বের করলো।
—এটা আপনার জন্য।
বলেই শ্রাবণ ধারাকে চেইনটা পরিয়ে দিলো। ধারা মুচকি হেঁসে আলতো করে হাত বুলালো চেইনটাতে। এটা তার শ্রাবণের থেকে পাওয়া প্রথম উপহার। আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে তারা বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। ধারাকে বাসায় নামিয়ে নামিয়ে দিয়ে শ্রাবণ চলে যায় নিজের বাসায়।
বাসায় ঢুকে ধারা দেখলো পুরো বাসা অন্ধকার। ধারা আন্টির রুমে গিয়ে দেখলো আন্টি শুয়ে আছে।
—আন্টি তুমি এইসময় শুয়ে আছো কেন এভাবে?

—আর বলিস না মাথাটা ব্যাথা করছে। সেই সাথে প্রেশারটাও বেড়ে গেছে।

—তুমি মেডিসিন নিয়েছো?

—নারে মা ঔষধ শেষ হয়ে গেছে।

—আগে বলবে না তোমার মেডিসিন শেষ হয়ে গেছে। একটু অপেক্ষা করো আমি নিয়ে আসছি।

—না না রাত হয়ে গেছে। তোকে এখন যেতে হবে না।

—আরে আন্টি কিছু হবে না। কাছেই তো ফার্মেসী আছে ওখানেই পেয়ে যাবো। তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি মেডিসিন।
বলেই ধারা নিজের ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে আসলো বাসা থেকে। বাসার নিচে আসতেই তার দেখা হলো নাজমুলের সাথে। নাজমুলকে দেখে ধারার ভ্রু কুঁচকে এলো।
—একি নাজমুল ভাই আপনি এসময় এখানে।

নাজমুল একটা গভীর নিশ্বাস নিয়ে বললো,
—সরি ধারা আই হ্যাভ টু ডুস দি। আই হ্যাভ নো আদার অপশন।
ধারা কিছুই বুঝলো না। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নামজুল ধারার মুখে কিছু স্প্রে করলো। তীব্র ঝাঁঝালো একটা গন্ধ নাকে এলো ধারার। ধারার চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। অতঃপর কিছু বুঝে উঠার আগেই জ্ঞান হারালো ধারা। নাজমুল ধারাকে পরম যত্নে আগলে রাখলো।
—তুমি চিন্তা করো না ধারা আমি তোমাকে অনেক দূরে নিয়ে যাবো। যেখানে নিয়ে গেলে শ্রাবণ চাইলেও তোমার খোঁজ পাবে না। সব ছেড়ে দূরে চলে যাবো আমরা। আমাদের ছোট্ট ঘর হবে। সেখানে থাকবো তুমি আমি আর নিরা! আমাদের জীবনে শ্রাবণ নামের কোনো কালো ছায়া থাকবে না। আমরা খুব সুখে থাকবো ধারা। আমরা তিনজন মিলে আমাদের সুখের রাজ্য সাজাবো।

বলেই ধারাকে পাজা কোলে তুলে নিলো নাজমুল।
নাজমুল ধারাকে নিয়ে চলে যেতেই আড়াল থেকে বেরিয়ে আসলো রাসেল। রাসেল পকেট থেকে ফোনটা বের করে শ্রাবণকে ফোন করলো।

—হুম রাসেল বলো।

—স্যার আপনার ধারণাই ঠিক। নাজমুল ভাই ধারা ম্যামকে কিডন্যাপ করেছে।

—গ্রেট! তুমি এক কাজ করো গোডাউনে চলে আসো। আমিও ফ্রেশ হয়ে চলে আসছি।

—ঠিক আছে স্যার।

শ্রাবণ ফোনটা টেবিলের উপর রেখে বাঁকা হাসলো।
—বাহ্ নাজমুল ভাই বাহ্। নিজের কফিনে শেষ পেরেকটা তাহলে মে’রেই দিলে। গ্রেট! আমার কাজও শেষ। এবার তোমাকে এক্সপোজ করার পালা। বি রেডি ব্রো!

শ্রাবণ ফ্রেশ হতে চলে যায়।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ
(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here