#’শ্রাবণ রাতের বর্ষণ’❤
#’লেখিকাঃ ঈশানুর তাসমিয়া মীরা❤
#’পর্বঃ ১৪
.
সাদা, লাল, কমলা রঙের হরেক প্রজাতীর গোলাপ ফুলে ঘেরা এক বাগানে দাঁড়িয়ে আছেন চন্দ্রা এবং রুদ্র। তাদের অগ্রের বিশাল বড় এক পুকুর। সচ্ছ পানি তার। দমকা হওয়ায় পানির মাঝে কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে একটু পরপর কৃষ্ণচূড়া ফুল পরছে। ইহা এক মনোরম দৃশ্য। যা দেখে মনোমুগ্ধ রাজকুমারী চন্দ্রপ্রভা। কখন যে রুদ্র তার অতি নিকটে এসে পেছনে দাঁড়িয়েছেন বুঝতেই পারেন নি চন্দ্রা। ঘাড়ে কারো গরম নিশ্বাস পড়তেই চমকে উঠে দূরে সরে দাঁড়ান চন্দ্রা। রেগে রুদ্রর দিকে তাকাতেই হেসে ওঠেন রুদ্র। মৃদু স্বরে বলে উঠেন,
—” স্থানটা কিরুপ? পছন্দ হয়েছে রাজকুমারী?”
অতি ক্ষোপে চন্দ্রা একটা মিথ্যা বলে ফেললেন। অর্থাৎ বলে উঠলেন,
—” স্থানটা অতি বাজে। আমার পছন্দ হই নি।”
অথচ তার পছন্দ হয়েছে স্থানটা। শুধু কি পছন্দ? অধিক পছন্দ হয়েছে! এদিকে রুদ্র এক কদম কাছে এগিয়ে বললেন,
—” তাই নাকি? আমি তো দেখছিলাম একজন গভীরভাবে চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছিল। তাকে কি আপনি দেখেছেন চন্দ্রা?”
—” আপনি এত নাটকীয় কেন বলুন তো সম্রাট?”
রুদ্র গর্ব করে বললেন,
—” প্রেয়সী অতি জেদী বলে! আচ্ছা আমাকে বিবাহ করলে এমন কি হবে চন্দ্রা? আমি তো অত খারাপ নই। দেখতে-শুনতে তো ভালোই। এটা আমি না সবাই বলে।”
নিজেকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে বললেন রুদ্র। চন্দ্রা প্রথমে ভ্রু কুঁচকালেন। পরপরই স্বাভাবিক হয়ে পানির দিকে চেয়ে বলে উঠলেন,
—” আপনি ভেতর থেকে নয় বাহির থেকে সুন্দর সম্রাট। এই যে জল দেখছেন? তার মতো সচ্ছ নন আপনি। এটাই আপনাকে বিবাহ না করতে চাওয়ার মূল কারণ।”
রুদ্র তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসলেন। পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত করে চন্দ্রা অতি কাছে এসে বললেন,
—” আমি যেমনই হয়ে থাকি না কেন রাজকুমারী বিবাহ তো তোমাকে আমাকেই করতে হবে। এতে যেকোনো পন্থা ব্যবহার করতে রাজী আমি। সেটা যদি কারো মৃত্যুও হয় তাহলেও পিছু হটবো না আমি।”
চন্দ্রা ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলেন। রুদ্র থেকে দূরে সরে দাঁড়ালেন। তার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরছে- তাকে পালাতে হবে। যে করেই হোক!
ভেবেই ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও রুদ্রর কাছে এসে দাঁড়ালেন চন্দ্রা। মিনমিনিয়ে বলে উঠলেন,
—” আমার ক্ষুধা লেগেছে। আমি আহার করতে চাই।”
রুদ্র ভ্রু কুঁচকালেন। প্রথমে সন্দিহান দৃষ্টিতে চন্দ্রার দিকে তাকিয়ে তারপর বাঁকা হাসলেন রুদ্র। চন্দ্রার কানের কাছে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বললেন,
—” পালাতে চাইছো আমার থেকে?”
চন্দ্রা চমকালেন। ভয় পেলেন প্রচুর। শুকনো ঢোক গিলে অনেকটা তোতলিয়ে বলে উঠলন,
—” আ-আমি কে-ক-ন পালাবো? তা-ছাড়া আপনি থা-থাকতে কিভাবে পালাবো স-সম্রাট?”
রুদ্র ডান ভ্রু কুঁচকে বললেন,
—” ঠিকই তো, তুমি পালাবে কিভাবে? যাই হোক, এই যে কৃষ্ণচূড়া গাছটা দেখছো এটার নিচে বসে থাকো। আমি আসছি তোমার জন্য কিছু আ….হা…র নিয়ে।”
‘আহার’ শব্দটা বেশ টেনে টেনে উচ্চারণ করলেন রুদ্র। পরক্ষণেই বাঁকা হেসে চলে গেলেন সেখান থেকে। চন্দ্রা নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে আছেন রুদ্রের যাওয়ার পথে। কেননা এহেন জায়গায় আহার কোত্থেকে আনতে গিয়েছেন রুদ্র? চন্দ্রা তো এমনি এমনি বলেছিল কথাটা। যদি কাজে লাগে! আর কাজেও লেগেছে। কিন্তু রুদ্রের কথাগুলো বেশ সন্দিহান ছিল। সে কি কোনো ভাবে বুঝে গেছে চন্দ্রা পালানোর পরিকল্পনা করছে? হয়তো না। নাহলে তাকে রেখে যেত কেন? এসব ভাবতেই চিন্তাটা কিছুটা হলেও কমলো চন্দ্রার। কিন্তু পরপরই চিন্তায় কপাল কুঁচকে এলো তার। সে পালাবেটা কিভাবে? কোন পন্থায়?
_____________________
প্রায় অনেক্ষণ কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে বসে ছিলেন চন্দ্রা। পরিকল্পনা করলেন যেকরেই হোক তাকে রুদ্রের আসার আগে তার ঘোড়া নিয়ে পালাতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ! দ্রুত পদে কর্পনরাজ্যের মুখ্য দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন চন্দ্রা। কর্পনরাজ্য মূলত একটা হরেক রকমের ফুলের বাগান আর পুকুরের মনোরম স্থান। অনেক সুন্দর একটা স্থান বলা যায়। পেছন ফিরে কর্পনরাজ্যকে আরেকবার দেখে ঘোড়ার দিকে এগিয়ে যান চন্দ্রা। সাথে সাথে থমকে দাঁড়ান। বিস্ময়ে চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে তার। ঘোড়ার সঙ্গে হেলান দিয়ে আপেল খাচ্ছেন রুদ্র।(বিঃদ্রঃ আম্মুর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম আগের দিনে আপেল ছিল নাকি? আম্মু বলল সারাজীবনই নাকি আপেল পাওয়া যায়৷ তাই আপেলই দিলাম এখানে।) চন্দ্রাকে দেখেই বাঁকা হেসে উচ্চস্বরে বলে উঠলেন,
—” তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম রাজকুমারী। এতক্ষণ লাগালে যে আসতে? কিভাবে পালাবে সেটা পরিকল্পনা করছিলে নিশ্চয়ই!”
চন্দ্রা রেগে চোখ-মুখ শক্ত করে আছেন। বুঝতে পারছেন রুদ্র তখনই বুঝে গিয়েছিলেন চন্দ্রার মনের কথা। অর্থাৎ সে যে পালানোর চেষ্টা করছেন তার পূর্বাভাস পেয়ে গিয়েছিলেন রুদ্র। চন্দ্রাকে রাগতে দেখে রুদ্র উচ্চস্বরে হেসে উঠলেন। পরক্ষণেই আপেলের পানে তাকিয়ে আফসোসের সঙ্গে বলে উঠলেন,
—” উফফ! চন্দ্রপ্রভা, এতক্ষণ কেন লাগালে পালাতে? দেখো তোমার জন্য আনা আপেলটা আমি নিজেই খেয়ে ফেলেছি। এখন তুমি কি আহার করবে বলো তো? আসলে আরেকটু আগে পালানো উচিত ছিল তোমার। তাহলে আপেলটা খেতে পারতে।”
রুদ্র যে চন্দ্রাকে খোঁচা দিয়ে এসব বলছেন তা ঢের ভাবে বুঝতে পারছেন চন্দ্রা। অতি মাত্রায় রেগে চন্দ্রা বলে উঠলেন,
—” দেখুন…”
রুদ্র হঠাৎ-ই গম্ভীর হয়ে উঠলেন। চন্দ্রার কথার মাঝে বাঁধা দিয়ে বলে উঠলেন,
—” দেখবো বিবাহের পর। আপাতত আমার সাথে রাজপ্রাসাদে যেতে হবে তোমার। এবং হ্যাঁ, মুখ থেকে একটা শব্দ বের করার সাহস দেখাবে না। তোমাকে কিছু বলছি না দেখে ভেবো না আমি রেগে নেই। শুধু রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। নতুবা তোমার জায়গায় অন্য কেউ হলে তার গর্দান এতক্ষণে সহি-সালামত থাকতো না। রুদ্রের কবল থেকে পালানো এতই সহজ মনে হয় তোমার?”
রুদ্র কথা বাড়ালেন না আর। চন্দ্রাও নিশ্চুপ। কিছুসময় অতিবাহিত হতেই রুদ্র চন্দ্রার কাছে এসে তাকে কোলে তুলে নিলেন। চন্দ্রা বাঁধা দিলেন না। চন্দ্রাকে ঘোড়ায় বসিয়ে নিজেই বসে পরলেন ঘোড়ায়। অত:পর দ্রুত গতিতে ঘোড়ার মাধ্যমে ছুটতে লাগলেন রাজপ্রাসাদের উদ্দেশ্যে।
___________________
রাত্রিবেলা চন্দ্রা নিজ কক্ষে মুখ গোমড়া করে বসে ছিলেন। কেননা তিনি পালাতে পারেন নি। আর তাকে রুদ্রকে বিবাহ করতে হবে আগামীকালই। দীর্ঘশ্বাস ফেললেন চন্দ্রা। চোখে জল এসে হানা দিচ্ছে তার। নিজ মাতা-পিতার হত্যাকারীকে বিবাহ করতে হবে তার। ভাবতেই কষ্টের গহীন জোয়ারে আরও তীব্রভাবে বাসা বেঁধে নিলেন চন্দ্রা। হঠাৎ তার শিবিরে কিরণ এসে হাজির। মাথা নিচু করে বলে উঠে সে,
—” ক্ষমা করবেন রাজকুমারী। সম্রাট আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।”
চন্দ্রা তড়িৎ গতিতে চোখের পানিগুলো বাম হাতে মুছ ফেললেন। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু বলবেন তার আগেই রত্নমাকে নিয়ে সম্রাট রুদ্র তার কক্ষে এসে হাজির। সঙ্গে কিছু সংখ্যক দাসীও আছে। রুদ্র ছাড়া রত্নমাসহ সবার হাতে বিভিন্ন পোশাক ও অলংকার। যা দেখে বিস্মিত চন্দ্রা। কিন্তু রুদ্রের মুখে লেগে আছে হাসি আর রত্নমার মুখে কালো মেঘের ছায়া। বোঝাই যাচ্ছে সে আসতে চায় নি রুদ্রের সঙ্গে।
রুদ্র এক এক করে সব পোশাক ও অলংকার দেখাতে লাগলেন চন্দ্রাকে। কিন্তু সেদিকে বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই চন্দ্রার। আর সেই অনাগ্রকে যে রুদ্র পাত্তা দেবেন সেটা ধারণা করাও ভুল৷ রুদ্র রুদ্রের মতোই চন্দ্রার জন্য একটার পর একটা পোশাক বেছেই চলেছেন। একসময় চন্দ্রা বিরক্ত হয়ে বলে উঠেন,
—” এসব করে লাভ নেই সম্রাট। আমি আপনাকে বিবাহ করব না। প্রয়োজন হলে বিবাহের আসরে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেবো।”
রুদ্র বিন্দু মাত্র রাগলেন না চন্দ্রার কথায়। উল্টো রহস্যময় হেসে চট করে চন্দ্রার গালে চুমু খেয়ে নিলেন। আকস্মিক ঘটনায় স্তব্ধ রুদ্ধবাক চন্দ্রা। দাসীগণ মাথা নিচু করে আছে। আর রত্নমা, তার হিংসা এবং রাগ যেন ক্রমশই বেড়ে চলেছে। যদি পারতো তাহলে চন্দ্রাকে এক্ষণি হত্যা করতো সে।
.
_____________চলব___________
গল্পের শেষে চলবে লেখাটা যে কি বিরক্তিকর😒। যাই হোক, পর পর তিনদিন গল্প পেলেন। অনুভূতি কি?
এবং হ্যাঁ,
Nusrat Jahan Ira, Nahiyan Talukder, Afrin Shuvra, Jodha Akbar, Israt Jahan Mita, Arrushi A, Tahsina Khan Saima, সহ এত্তগুলো পাঠকের জন্য রইল অবিরাম ভালোবাসা ❤
Ishanur Tasmia