সংশয় শেষ_পর্ব

সংশয়
শেষ_পর্ব
#লেখক :ঐশি
–পাপা,পাপা,,
দুই পাপা ডাকলো কে ?পিছনে তাকাতেই দেখি তাসফিয়ার সাথে তাসফিয়ার মতো হবুহ একজন ই ।আমি একদম স্তব্দ হয়ে গেলাম ।এখানে দুটু মেয়ে তাও আবার এক ই রকম ।কি করে সম্ভব ।দুজন কে কাছে ডাকলাম ।কোনো অমিল নেই দুজন এর মাঝে ।হঠাৎ তাসফিয়া বলে উঠলো ,,
–আমরা দুই বোন ,,,এক ই রকম দেখতে খুব সুন্দর তাই না ?
–এখানে ও আসলো কি করে ?
দুজনেই দেখলাম পিছনের দিকে ইশারা করলো ।দেখলাম একজন মধ্যবয়স্ক লোক ।বুঝলাম ইনি ই হয়তো তার বাবা ।একটু আধটু কথা বলতে হবে ।তাই উনার পাশে গেলাম ।কিছু বলার আগে ই দেখলাম শাকিল আবার ফিরে এসেছে
তার মানে তাকে পুলিশ ধরেনি ?কেনো ছেড়ে দিলো তাকে? তাহলে এই বিয়ে হয়েই যাবে থামানো আর সম্ভব না ।মন স্থির করলাম হোক না এ বিয়ে তাতে আমার কি ?ভালো থাকুক প্রিয় মানুষটা এটাই চাই ।সাথে তাসফিয়ার বাবা ও বসেন আমার সাথে ।কথা বলছিলাম উনার সাথে ।তিনি শুরুতেই আমার হাত দুটু ধরলেন বললেন,,,
–ভাই মেয়ে দুইটাকে দেখে রাইখেন প্লিজ ।জীবনে অনেক খারাপ কাজ করেছি কিন্তু কখনো সন্তান দের কথা একবারও ভাবিনাই ।ভাবিনাই যে পরীর মতো সুন্দর আমার দুইটা জমজ মেয়ে আছে,,
–আপনি এভাবে বলছেন কেনো কোথায় যাবেন আপনি ?
–আমি ক্রস ফায়ার এর আসামী ।মাদক এর সাথে সংযুক্ত আমি ।সব রকম মাদক ব্যাবসায় জড়িত ।সুখের সংসার ছিলো আমার কিন্তু টাকার নিশায় সব কিছু ফেলে মাদক এ যুক্ত হই ।যখন নিজের ভালোবাসার মানুষের উপর হাত তুলতাম সামান্য খারাপ ও লাগতো না ।আমি বাসায় থাকতাম না বেশি ।একদিন জানতে পারি ওর ক্যান্সার কিন্তু ততোক্ষন এ সে একদম শেষ পর্যায় এ ,,।সেদিন রাতে বাড়ি ফিরি তখন দেখি সে নেই সাথে তাসফিয়াও না ।বাসায় এই মেয়েটাও ঘুমিয়েছিলো ।আমি একে নিয়ে খুজতে বের হই ।অবশেষে জানলাম যে ও আর এই পৃথিবীতে নেই ।সব থেকে কষ্ট অনুভব করতে থাকলাম ।ভালোবাসার মানুষটা এভাবে ফেলে চলে গেলো কি করে ? হাসপাতাল এ যাই কিন্তু তাসফিয়াকে দেখি নি ।ভাবলাম হয়তো সে হারিয়ে গেছে ।খুজতে থাকলাম কিন্তু কোথাও পাচ্ছিলাম না এদিকে মাদক ছেড়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু পুলিশ তা করেনি ।ক্রস ফায়ার এর ওয়ারেন্ট জাড়ি করা ।আমাকে মরতে ই হবে ,,আমাকে তার কাছে ফিরতে ই হবে ,,,
–কি বলছেন এসব ,,,কিছুই হবে না আপনার ,,,।আপনার তাসফিয়াকে ওই যে বউ সাজা মেয়েটাকে দেখছেন সে এতো দিন তার কাছেই রেখে ছিলো ।সে আবার আমার ভালোবাসার মানুষ ,,।আপনি ভালোবাসা পেয়েও রাখতে পারেন নি আর আমি পেয়েও ভুল এর জন্য হারিয়েছি ,,,
–মেয়ে দুইটা কে দেখে রাইখেন ভাই,,জীবনে আর কিছু ই চাই না,,।আমি এখান থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে ই আমি মারা যাবো ।বিয়ে বাড়ি তো তাই কিছু করে নি ।এখানে চারদিকে পুলিশের অনেক লোক সিভিল এ আছে ,,
–ভাই আমি পুলিশ এর সাথে কথা বলি কিছু ই হবে না আপনার ।লাভ নেই তা ছাড়া আমিও পাপের শাস্তি চাই ।মেয়ে দুইটা অনেক আদরের দেখে রাইখেন ভাই ,,।আর ওই যে কনে বসে আছে উনি সত্যি ভালোবাসলে ফিরে আসবেই ।
তারপর তিনি বসা থেকে উঠে দাড়ালেন দুই টা মেয়ের কাছে কি জেনো বললেন ।তাদের কপাল এ মুখে চুমু দিয়ে আমার কাছে এসে বললেন ,মেয়ে দুইটা আপনার ভালো রাইখেন ভাই ।তারপর চলে গেলেন মেয়ে দুইটা তাকিয়ে রইলো ।আমি বুজতেই পারছিনা এখন কি করবো ।মানুষ এর জীবন কত বিচিত্র তা বুঝা ই যায় না ।তাসফিয়া তারা দুজন ই জমজ ।দুজন ই আমার কাছে এলো ।আমি অন্য জনকে বললাম তোমার নাম কি ?
–আমার নাম রাইসা,,

তাসফিয়া আর রাইসা কে নিয়ে বসে আছি অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।কেউ কেউ কাছে এসে ওদের সাথে কথা বলছে ।বিয়ের খাওয়া দাওয়া চারদিকে শুরু হয়ে গেছে ।আমি বসে আছি ।তখন ই তাসফিয়া বললো,,
–আমাদেরও খুদা লেগেছে ,,,খাবো না ?
–চলো এখন ই খাবো,,
এই বলে বলে খাবার টেবিল এ বসলাম ।দূরের শেষ টেবিল এ দেখলাম বউ জামাই তারা বসেছে।তাসফিয়াও দেখেছে হয়তো ।তাসফিয়া ই বললো,,
–ঐখানে যাই পাপা,,আম্মুকে একটা সারপ্রাইজ দেই,,
আমি না করিনি যেতে দিলাম ।যেয়ে তারা কিছু একটা গন্ডগুল লেগে গেছে হয়তো ।তারাতারি উঠে গেলাম সেখানে ।যেয়ে তো দেখলাম অবস্থা নাজেহাল ।বউ কে আম্মু ডাকায় জামাই পক্ষের লোকরা নানা রকম কথা বলছে ।অনেক বুঝিয়ে দুইজন কে নিয়ে আসলাম ।খাওয়া দাওয়া শেষ ।আমি খাই ই নাই ।এই দুজন কে খাওয়াতে খাওয়াতে ই আমার খাওয়া শেষ ।শুনেছি নিজের গার্লফ্রেন্ড এর বিয়েতে কব্জি ডুবিয়ে খেতে হয় ।কিন্তু তা আর হলো না ।তাসফিয়া ,রাইসা তারা নিজেরা কথা বলতে বলতে ই খাওয়া শেষ ।ফটোগ্রাফার আমাদের ছবি তুলছে ।নিজেকে আসলেই বাবা বাবা মনে হচ্ছে ।সকল খাবার আয়োজন এরপর এখন হবে বিয়ের কবুল বলানো ।সবাই কনের কাছে উপস্থিত ।আমি তাসফিয়া,রাইসা কে নিয়ে ধীরে পায়ে চলে গেলাম কনের স্টেজ এ ।শেষ বারের মতো অপরুপ রুপ দেখে চলে যাবো আজীবন এর জন্য ।কাজী সাহেব এর ঘরে প্রবেশ ।সবাই একদম চুপ ।এর মধ্যেই ধুপ করে তাসফিয়ার কান্না ,,আম্মুর কাছে যাবো ।কোনো রকম কান্না থামিয়ে পিছনে দাড়ালাম ।মেয়েরা সব পারে এখানে এসেই বুঝলাম ।চোখে পানি পর্যন্ত নেই তার ।আমি দেখছি দূর থেকে কিন্তু সে এক ধ্যান এ নিচে তাকিয়ে আছে ।হঠাৎ দেখি তাসফিয়া রাইসা একটাও পাশে নেই ।তারা একদম চিপা চাপা দিয়ে কনে পর্যন্ত চলে গেছে ।দুইজন দুই পাশে কনে মধ্যে সবাই ছবি তুলতে ব্যাস্ত ।ঠিক তখন ই আমি ভীড় সামলে ভিতরে গেলাম তা না হলে আগের মতো ঝামেলা হবে ।তাসফিয়াকে বললাম বাসায় চলো ,,
তার কথা সে যাবে না ।তারপর নিজেই রাগে সেখান থেকে চলে আসলাম মেয়ে গুলো ঝামেলা করবে নিশ্চই ।কিন্তু যেতে আর পারলাম না এর আগে এক মেয়ে বললো কনে আমাকে ডাকছে ।ভাবলাম কি বলবে তাই গেলাম ।যেতে ই সে বললো,,

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন



–আপনি বাসায় চলে যান ওরা থাকুক ,আমাদের ড্রাইভার বাসায় দিয়ে আসবে ।
বিয়ের আগেই তুমি আপনিতে চলে আসলাম ।মেয়েরা একটা জিনিস বলতেই হবে ।চলে আসছিলাম আর শুনছিলাম ,,কাজীর কথা ।বের হয়ে এসে সুজা বাড়িতে এলাম ।এতোক্ষন এ হয়তো সব শেষ ।বিয়েটা হয়েই গেলো ।মা তাকিয়ে আছে আমার দিকে হয়তো ভাবছে ছেলেটার কি হলো ।আমি এখন একদম একা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্কের শেষ করে দিয়েছি ।কান্নায় কাটালাম সারা বিকেল ।ঘুম এর ঔষধ খেয়ে মাত্র বিছানায় যাবো এমন সময় দেখি রাইসা ।তাকে সে কাছে এসে আমার আঙুল টেনে নিয়ে গেলো দরজা পর্যন্ত ।যেয়ে দেখি বউ সাজা সেই মেয়েটি দাড়িয়ে যাকে আমি ভালোবাসতাম ।এবার তাসফিয়া আর রাইসা জুরে বলে উঠলো আম্মুকে নিয়ে এসেছি ,পাপা ।কিছু বলার আগেই আমি আমার ঙ্গান হারাই ।দশটা ঘুম এর ঔষধ খেয়েছিলাম ।ছয়দিন পর যখন চোখ খুলি তখন দেখি তাসফিয়া বুকের উপরে আর রাইসা জড়িয়ে ধরে আছে ।সামনে একটা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে প্রীতি ।ভেবেছিলাম স্বপ্ন পরে দেখি এটা সত্যি ।ডাক দেওয়ার সাথে সাথেই তাসফিয়া রাইসা খুশিতে একদম পাগল হবার মতো ।আর প্রীতি সেও ।কিন্তু কিভাবে কি হলো বুঝতেই পারলাম না ।বাসায় ফিরলাম সুস্থ হয়ে ।বিয়েও করে ফেললাম ।সব ই যেনো স্বপ্নের মতো মনে হলো ।এর দুদিন পর সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি শাকিল এসেছে ।একে আমি এমনিতে সহ্য করতে পারি না ।তার উপর তার সাথে ই বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো ।এমন সময় দেখলাম পুলিশ ও আসলো ,এখন আমার কলিজায় একটুও পানি নেই ।পুলিশ এসেই বলতে শুরু করলো ,,
–এই শাকিল একজন মানসিক রোগী ,,তিনি আপনাদের সম্পর্ক ভাঙার অনেক চেষ্টা করছে,,।হাসপাতাল এর রিপোর্ট এর অবৈধ কাগজ সহ নানা রকম খারাপ কাজ এ জড়িত এই শাকিল ।ওকে এখন নিয়ে যাওয়া হবে,,
–তাহলে এসব কাজ এই শাকিলের ??
–হ্যা ,,
শাকিল কে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো ।প্রীতি কে তখন বললাম তা বিয়েটা ভাঙলে কেনো গো ?করেই ফেলতে এমন পাগলকে যে তোমাকে এতো ভালোবাসে?
–তুমি ই তো সব প্লেন করছো ,,মেয়ে দুইটা কানের কাছে যেয়ে বলতেছে আমার কাছে আর যাবে না ।আর,,
–আর কি –প্রেম করেছিলা ভাবিনি কিছু ই ,,এখন তুমি একটা ভুল করেছো ।জানি তুমি কিছু ই বলবে না তাই নিজেই চলে এলাম ।এতো দিন ভালোবেসেছি এখনও বাসবো ,,
–কে ভালোবাসে বেশি ?শাকিল নাকি আমি ?আগে তো বলতে শাকিল তোমাকে অনেক ভালোবাসে,,
–এমনি বলতাম ,,,
–কখনই নিজের প্রিয় মানুষকে অন্যের সাথে তুলনা করতে নেই ,,আমি কতটা ভালোবাসি সেটা আমি ই জানি ,,
–ঠিক আছে ,,ভালোবাসি ,,
তখন ই তাসফিয়া রাইসা পিছনে এসে বলে উঠলো চলো আজকে ঘুরতে যাই আমরা ।অবশেষে সব সংশয় শেষ হলো,,
“”””সমাপ্ত”””
[বি:দ্র:মাদক কে না বলুন ।মাদক আপনার পরিবার ,জীবন ধ্বংসের মূল কারন ।নিজের প্রিয় মানুষকে অন্যের সাথে তুলনা করবেন না ।যদি সত্যি ই ভালোবাসেন তাহলে তাকেই গ্রহন করুন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here