সন্ধ্যায় সন্ধি পর্ব ১+২+৩

“কীভাবে ব্যাথা পেলি চাঁদ আমাকে বলবি নাকি অন্য কোনো ব্যবস্থা করতে হবে আমায়”– এমন শীতল কন্ঠের হুমকি ক্ষানিকটা ঘাবড়ে গেলো চাঁদ।কারণ তার সামনে স্বয়ং যমদূতের মতন ভয়ানক মানুষ দাঁড়িয়ে আছে আর সেটা আর কেউ না তার খালাতো ভাই তেজ।আজ সকালে ছাদে কবুতরের পিছে ছুটতে গিয়ে পড়ে গিয়ে হাতে আর পায়ে বেশ খানিকটা ব্যাথা পেয়েছে সে।কিন্তু সামনের মানুষটাকে কোনো ভাবে জানানো যাবে না।এতে তার ছাদে উঠা বন্ধ করে দিবে তেজ।

তেজ আর চাঁদরা একই বাড়িতে থাকে তবে পাশাপাশি ফ্লাটে।তেজ খুব গম্ভীর আর রাগী একজন মানুষ।কিন্তু সে একজনের সামনে এই রাগটা প্রকাশ করে খুব কম সে হলো চাঁদ।এই মেয়েটার কাছেই তার যত দুর্বলতা।তেজ পড়াশোনা শেষ করে বাবার ব্যবসা সামলাচ্ছে আর চাঁদ শ্যামলা গায়ের বর্ণা আর এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী।তেজ তার নামের মতনই অনেক তেজী।তেজের আসল নাম তেজস্ব আবরার সবাই ছোট করে তেজ ডাকে।আর চাঁদের পুরো নাম কুহেলিকা চাঁদ। সবাই তাকে চাঁদ বলেই ডাকে।সে চাঁদের মতনই ঠান্ডা একটা মেয়ে।একটু দুষ্টু কিন্তু রাগ টাগ কিছু নাই তার।সে তেজের একদম উল্টো।মেয়েটা অকারণেই তেজকে ভয় পায়।

” চাঁদ তোমাকে কিছু বলছি আমি,ব্যাথা কীভাবে পেলে?- তেজের এমন শীতল
প্রশ্ন,, আবার তুই থেকে তুমি তে চলে যাওয়া চাঁদের শরীরকে ভয়ে অসার করে দিলো।অতঃপর যা হওয়ার তাই হলো,চাঁদ জ্ঞান হারালো।তেজ তো বোকা হয়ে তাকিয়েই রইল। তার মাথায় এটাই আসছে না যে সে কি এমন বললো যে অজ্ঞান ই হয়ে যেতে হবে।

সে চাঁদকে সুন্দর করে বালিশের উপর শুয়িয়ে দিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো।এত কাজের চাপের মাঝে এই গরমে হুট করে এতক্ষাণি পথ আসাটাও অনেক কষ্টকর।একটু আগে যখন মায়ের সাথে কথা বলার সময় চাঁদের ব্যাথায় কান্না করার শব্দ শুনেছে তখনই ছুটে এসেছে। আর কেউ জানুক না জানুক সে জানে মেয়েটা কি তার কাছে।

এক সন্ধ্যা বেলায় এই চাঁদ পৃথিবীর আলো দেখে সেদিন ছোট তেজের জীবনেও খুশির আলো আসে।ছোট চাঁদকে দেখে তেজের কি যে খুশি।কোলে নেওয়ার জন্য কি বায়না।তখন তার মা ছেলের হাতে সন্ধ্যায় জন্ম নেওয়া ছোট্ট চাঁদকে তুলে দেয়।সেই হতেই তাদের সন্ধি।সন্ধ্যায় সন্ধি হয় তেজ আর চাঁদের।

সেই ছোট বেলা থেকে চাঁদের প্রতি তেজের আলাদা টান।মেয়েটা একটু গোলগাল।কেমন মায়া মায়া মুখ৷ দেখলেই আদর করতে মন চায়।আজও তেজের মনে আছে ছোট বেলায় তার বয়স আট বছর হবে আর চাঁদ এক বছরের পুচকি।সে চাঁদকে কোলে নিয়ে বসে আছে।এর মাঝেই টিভিতে একটা বিয়ে হচ্ছে।তখন সে পাশে বসে থাকা তার মাকে জিঙ্গেস করলো — মা ওরা কী করছে?
তেজের মা মুচকি হাসি দিয়ে উত্তর দিলো — বাবা, ওদের বিয়ে হচ্ছে।ছোট তেজের মনে প্রশ্ন জাগলো। সে আবার তার মাকে জিজ্ঞেস করলোঃ মা বিয়ে কোনো করে?
তার মা গম্ভীর ছেলের এমর প্রশ্ন শুনে তো অবাক।কারণ তেজ খুব কম কথা বলে আজ হঠাৎ বিয়ে নিয়ে তার এত আগ্রহ দেখে তার মা অবাকই হলো।এর মাঝেই ছোট তেজ আবার বলে উঠেঃ বলো না মা বিয়ে কেন হয়।

তার মা ছোট ছেলেকে কি উত্তর দিবে ভেবে পায় না।তার মাঝেই তেজের বাবা আমজাদ সাহেব হেসে বললোঃ বাবা যখন আমাদের কাউকে ভালো লাগে তখন তাকে নিজের কাছে রাখতেই বিয়ে করা হয়। ছোট তেজ তখনই মনে মনে ভাবলো সে তো এই পুচকিটাকে অনেক পছন্দ করে অনেক ভালো লাগে পুচকিটাকে।তাহলে সেও পুচকিটাকে বিয়ে করে নিজের কাছে রেখে দিবে।সেদিন তেজ আট বছরের ছিলো আজ সাতাশ বছরের যুবক কিন্তু আজও মনের ইচ্ছাটার কোনো নরবরে হয় নি।

চাঁদকে সে আগলে আগলে রাখে।মেয়েটার কিছু হলেই তার বুকের ব্যাথা হয়।পাগল পাগল লাগে নিজেকে।কিন্তু মেয়েটার চাল চলনের জন্য রোজ একটু না একটু ব্যাথা পাবেই।বাকি সব ক্ষেত্রে তেজ রাগী কিন্তু চাঁদের বেলায় সে বড্ড শান্ত।কিন্তু তবুও মেয়েটা তাকে ভয় পায়।এসবই ভেবে আনমনে হেসে উঠলে তেজ।
______________________________
বিকাল নেমেছে চারপাশে।চাঁদের ঘুম ভেঙ্গেছে আরো আগে।তার মা যত্ন করে তাকে খাইয়ে দিয়েছে। খালামনি এসে দেখে গেছে।খালা যাওয়ার পরই তুহা আপুই আর হৃদি এসেছে।তুহা আপুই হলো তেজ ভাইয়ার ছোট বোন আমার অবশ্য দুই বছরের বড়।সে এবার অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। আর হৃদি হলো তেজ ভাইয়ার চাচাতো বোন আর আমার প্রানপ্রিয় বান্ধবী।আমাদের সারাদিন কেটে যায় আমার আপু প্রহেলিকা, তুহা আপু,হৃদি আর আমার আড্ডা দিয়ে।সবাই আমাকে খুব আদর করে।আর ভুলেই তো গেছি বলতে,আমাদের বড় ভাইয়া ও আছে আমার আর আপুর দুজনেরই বড় তবে তেজ ভাইয়ার ছোট।সেও এবার পড়াশুনা শেষের দিকে আর বাবার ব্যবসা ও সামলাচ্ছে।সবাই আমাকে খুব আদর করে।এমনকি হৃদির মা মানে তেজের চাচী সেও আমাকে খুব আদর করে। তাকে আমি ছোট মা বলি তুহা আপু আর তেজ ভাইয়ার দেখাদেখি।যাক এখন আড্ডা টাইম।সবাই তো আমাকে জিঙ্গেস করেছে কীভাবে ব্যাথা পেয়েছি কিন্তু কেউই জানতোনা আমি ছাদ থেকে ব্যাথা পেয়ে এসেছি শুধু মা আর খালা বাদে।কারণ তেজ ভাইয়ার কানে একবার এই কথা গেলে আমি শেষ।

হঠাৎ আমার আপু বলে উঠলো – কিরে সেদিন যে একটা ছেলে তোর পিছু নিয়েছে তার খোঁজ কিছু জানিস? আমারও হঠাৎ মনে হলো তাই তো,সেদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে এক ছেলে পিছে পিছে আমার সামনে পর্যন্ত এসেছিলো।আমি আর হৃদি রিক্সায় ছিলাম ছেলেটা বাইক করে এসেছিলো।আমি তো ভয়ে জমে শেষ একবার যদি তেজ ভাইয়া জানতে পারে তাহলে সর্বনাশ।কিন্তু তেজ ভাইয়া সেদিন কিছু জানতে পারে নি।তবে ছেলেটাকে আর দেখি নি।আপুকে বললাম- না আপু,সেদিনের পর থেকে আর দেখি নি ওই ছেলেরে,ভাগ্য ভালো তূর্য ভাইয়া জানেনা যদি জানতো আমি শেষ।আমার কথা শেষ হতেই তুহা আপু হেসে উঠলো আর বললোঃ এমন অনেক কিছুই আছে যা আমরা জানিনা,আর তুই অকারণে আমার ভাইকে দোষ দিবি না আমার ভাই একমাত্র তোর সাথে ই ঠান্ডা মাথায় কথা বলে তাও তুই যা ভয় পাস।সবাই এবার সমস্বরে হেসে উঠলো।ও ভালো কথা এতক্ষণে তেজ ভাইয়ার কথা মনে পড়লো।
সেই কোন দুপুরে দেখেছি এখনও একবার এলো না কেনো?

এসব ভাবনার মাঝেই দরজায় টোকা পরে।সে পিছে ফিরে দেখে দরজায় তেজ দাড়াঁনো।আর তেজের হাতে থাকা জিনিস টা দেখে তার বুক কামড় দিয়ে উঠলো।তাহলে কি তেজ জেনে গেলো,

তেজকে দেখেই তুহা,প্রহেলিকা, হৃদি চাঁদের রুম থেকে চলে গেলো।আর চাঁদ তো ভয়েই বসে রইল পাথর হয়।তেজ তার হাতের খাঁচা টা নিয়ে চাঁদের হাতে দিলো। শার্টের উপরের দুইটা বাোতাম খুলে সোফায় গিয়ে বসে আমাকে বললো-চাঁদ এক গ্লাস পানি দে তো,বাহিরে বডড গরম। আমিও একমুহূর্ত দেড়ি না করে তেজ ভাইয়াকে পানি দিলাম।ভাইয়া পানি খেয়ে বলে-কিরে এই কবুতর দেখার জন্যই তো ভর দুপুরে ছাদে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছিলি তাই না।

তেজ ভাইয়ার কথা শুনে তো শরীরের রক্ত হিমশীতল হয়ে গেলো।মনে মনে ভাবছি ভাইয়া কেমনে জানলো।এর মাঝেই তেজ ভাইয়া বলে উঠলো-আমি কীভাবে জানলাম সেটা না জানলেও চলবে তোর,এরপর থেকে দিনেদুপুরে ছাদে যাবি না, এই যে কবুতরের জন্য এত প্রেম এই কবুতর এনে দিলাম।আর একবার যদি শুনি ব্যাথা পেয়েছিস কোনো কারণো তাহলে সেদিন তোর শেষ দিন।

তেজ ভাইয়ার কথা শুনে তো কলিজায় পানি শুকিয়ে গেছে।তবে একটা ভালো লাগাও কাজ করছে।এ মানুষটা আমার জন্য কত ভাবে।না চাইতেও সব হাতের কাছে নিয়ে আসে।

“কিরে এমন ভ্যাবলার মতন তাকিয়ে আছিস কেনো?” তেজ ভাইয়ার এমন কথায় ধ্যান ফিরলো আমার, লজ্জাও পেয়েছি।কেমন ভাবে লজ্জা দিলো মানুষটা।সবসময় এমন করা লাগে ওনার।

অন্যদিকে চাঁদেরর এমন লজ্জা পাওয়া দেখে মিটিমিটি হাসছে তেজ।মেয়েটার লজ্জায় গাল গুলো কেমন লাল হয়ে গেছে।এতে লজ্জা পায় তার ছোট্ট চাঁদটা।এর মাঝেই ঘরে প্রবেশ করে চাঁদের বড় ভাই আহান ঘরে ঢুকে।আহান তেজকে ঘরে দেখে বেশ বিব্রত বোধ করলো।তেজ আহানকে স্বাভাবিক করতেই বলে উঠলো-আহান কি খবর তোমার,ওখানে দাড়িয়ে আছো কেনো এখানে আসো,বসো সোফায়। আহানও স্বস্তি পেলো তেজের অনুমতি পেয়ে।

আহান এসেই চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে-কীভাবে চলাফেরা করিস বোন?একটু সাবধান থাকবি তো।আর যেনো কখনো এমন ভাবে চালচলন না দেখি।বাবা আসলে মাকে খুব বাবে জানিন তো এর এমন উল্টাপাল্টা চালচলনের জন্য।আমরাও বাদ যাবো না বকা খাওয়া থেকে তাও তুই সাবধান হোস না।

চাঁদ ঠোঁট ফুলিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।কারণ এছাড়া ভাইয়াকে চুপ করানো যাবে না।চাঁদের এমন ঠোঁট ফুলানো দেখে আহানও চুপ হলো।কত আদরের বোন তার।ছোট বেলা থেকেই বোনটা একটু দুর্বল। দেখতে গোলগাল হলেও শরীরে হাজার রোগের বাসা।তাই তো সবার এত চিন্তা।সে বোনের মাথাঢ হাত বুলিয়ে বললো – আচ্ছা থাক বোনটা আর রাগ করে না ভাইয়া তার জন্য যে আইসক্রিম এনেছে সেটা কি জানে আমার চাঁদমনি।

চাঁদের আর কি চাই।সে খুশি মনে জড়িয়ে ধরলো ভাইয়াকে।

ভাই বোনের এমন মিষ্টি শাসন দেখে সোফা থেকে শান্তির শ্বাস ফেললো তেজ।সে চায় ৎার চাঁদ সবসময় এমন হাসি খুশি থাকুক, ভালো থাকুক।এর মাঝেই তেজের ফোন বেজে উঠলো।চাঁদ তেজের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে তেজ ফোন হাতে নিয়ে ঘরের বাহিরে চলে যাচ্ছে।চাঁদের মনে খটকা লাগে। কে এমন কল করেছে যে তেজ ভাইয়া আমাদের সামনে কথা বলতে পারবে না।তাহলে কি তেজ ভাইয়ার ও ব্যাক্তিগত কেউ আছে?
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ২

রাতে,
চাঁদ বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। কবুতর গুলোকে আদর করছে।তার এই এক দুর্বলতা। ভীষণ পাখি প্রেমী।এই যে ছাদে কত কবুতর, সে এই কবুতর দেখার লোভেই তো ছাদে যায়।মানুষটাকে না বলতেও কেমন বুঝে গেলো যে চাঁদের ও এক জোড়া কবুতর লাগবে।

এই তো একটু আগেই তেজ ভাইয়া বারান্দায় কবুতরের খাঁচাটা কেমন সুন্দর করে লাগিয়ে দিয়ে গেলো,জেনো তেজ ভাইয়ার বারান্দা থেকেও ছোঁয়া যায়।ও হ্যাঁ বলতেই ভুলে গেছি আমার আর তেজ ভাইয়ার বারান্দা পাশাপাশি। আমার বারান্দায় কি হয় তা তেজ ভাইয়া দেখতে পায় আবার তেজ ভাইয়ার বারান্দায় কি হয় সেটা আমি দেখতে পাই।কেমন মিরাক্কেল তাই না?

অন্যদিকে বারান্দা এক সাথে পরাটা কোনো মিরাক্কেল না।এটা তেজের কেরামতি। যেদিন চাঁদরা এই ফ্লাটে শিফ্ট করে সেদিনই তেজও তার ঘর শিফ্ট করে এই রুমটাতে আসে। কিন্তু চাঁদ টের ও পায় নি।

চাঁদ আর তেজেরা একই এলাকায় থাকতো কিন্তু আলাদা বাড়িতে। তেজের মা বাবার জোড়াজুড়িতে চাঁদ রা তাদের পাশের ফ্লাটে শিফ্ট করে।।

যাই হোক চাঁদের কবুতর দুটির খুব সুন্দর নাম দিয়েছে তেজ।একটার নাম সন্ধ্যা আরেকটার নাম সন্ধি।নাম গুলো একটু অদ্ভুত। চাঁদ এই নাম দেওয়ার পিছনে কারণ জানতে চেয়েছিলো।কিন্তু বিশেষ কোনো লাভ হয় নি।তেজের কাছে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় নি। কিন্তু চাঁদের কাছে নাম গুলো খুব সুন্দর লেগেছে।

বর্তমানে চাঁদ এক মনে কবুতর গুলোর দিকে চেয়ে আছে আর সে খেয়াল করছে কবুতর গুলো একজন আরেকজনকে ভীষণ অপছন্দ করে।ঝগড়া লেগেই আছে।চাঁদও আনমনে হেসে উঠে।

এর মাঝেই চাঁদের মা হাজির হয়।মায়ের প্রাণ চাঁদ। ওনার চাঁদ ছাড়াও আরো দুটো ছেলেমেয়ে আছে কিন্তু চাঁদের প্রতিই বোধহয় টান তার বেশি।ছোট বেলা মেয়েটা মরতে মরতে বেচেঁ এসেছে।এর পর থেকেই মেয়েটাকে নিয়ে সবাই ভয়ে থাকে।আবার সবার ছোট বলে চোখের মনি হয়েই থাকে।

এই তো একটু আগে চাঁদের বাবা এসে নিজের স্ত্রী এর সাথে কি রাগারাগি টাই না করলেন। কেনো মেয়েকে সে দেখে রাখতে পারলো না? অনেক কষ্টে চাঁদ বাবাকে থামিয়েছে।

চাঁদের মা চাঁদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন- চাঁদমনির কি কবুতে গুলো খুব পছন্দ?

চাঁদ ও মায়ের প্রশ্নে উৎফুল্লের সাথে উত্তর দেয়- হ্যাঁ মা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।চাঁদের মা মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

– জানো তো মা আমাদের খুব পছন্দে যারা মূল্য দেয় আমাদের উচিত তাদের মূল্য দেওয়া। তারা কি চায় সেটা বোঝা।এই যে তুমি অতিরিক্ত ছটফট করে তারপর একটা ব্যাথা পাও এতে আমরা সবাই কষ্ট পাই এমনকি তোমার তেজ ভাইয়াও। আমরা সবাই তোমাকে আদর করি তোমার পছন্দ অপছন্দ কে মূল্য দেই।তোমার কি উচিত না আমাদের জন্য নিজের একটু খেয়াল রাখা?

চাঁদ মায়ের কথায় হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ালো।সেও জানে তাকে সবাই কতটা ভালোবাসে কিন্তু সে কি করবে।তার হাঁটাচলা ভালো না চেষ্টা করেও শান্তশিষ্ট ভাবে চলতে পারে না।

চাঁদের মায়ের হঠাৎ মনে পড়লো সে চাঁদকে খেতে যাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিলো আর এখানে মেয়ের সাথে গল্প জুড়ে দিলো।।তাই মিসেস নিলিমা সানে চাঁদের মা চাঁদকে বললো খেতে আসতে।

চাঁদের কোনো হেলদুল নেই। খাওয়ার কথাটা শুনেও না শুনে বসে থাকার অভ্যাস তার।চাঁদের মা মেয়ের দুষ্টমি বুঝতে পেরে মেয়েকে টেনে দাঁড় করিয়ে বারান্দা থেকে বের করতে চাইলে চাঁদ আহ্লাদী সুরে বলে উঠে

– মা জানোতে ভাইয়া বিকেলে আইসক্রিম এনেছে তার অর্ধেক আমি খেয়েছি।আমার পেট একদম ভরা।এক দুইদিন না খেলেও খুদা লাগবে না।ওমা আমি খাবো না

– কে খাবে না শুনি।পাশের বারান্দা থেকে ধমকের সুরে বললো তেজ।

চাঁদ তো মনে মনে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়।

তেজ আবারো ধমক দিয়ে বললো- যা চাঁদ গিয়ে খাবার কমপ্লিট কর।আমি জেনো আর এক্সট্রা কথা না শুনি।খাবার শেষ করে আবার বারান্দায় এসে দাড়াবি যা।

চাঁদকে আর পায় কে।সে এক দৌড়ে ডাইনিং টেবিলে।নিলিমাও বোনের ছেলের দিকে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি দেয়।এই ছেলেটা তার মেয়েকে বড্ড আগলে রাখে।

তেজও খালামনির হাসির কারণ বুঝে মুচকি হাসি দিয়ে ভরসা দেয় চাঁদের দুনিয়ায় তেজ সবসময়ই থাকবে। তাদের চিন্তার কারণ নেই।

ডাইনিং টেবিলে,,
চাঁদের বাবা তার দুই মেয়েকে দুই পাশে নিয়ে বসেছেন।চাঁদের এক পাশে বাবা অপর পাশে ভাই।বাবা খাইয়ে দিচ্ছে তাকে।আর ভাই আর আপু সে নিয়ে কি ঝগড়া।অবশ্য সবটাই মজা করে।হাসিখুশিতে তাদের খাবারের পর্ব শেষ হলো।চাঁদের নিজেকে বড্ড সুখী মানুষ মনে হয়।কিন্তু ভয় হয় এত সুখ সইবে তো জীবনে?

চাঁদের মাথায় এখন ঐ একটা জিনিসই ঢুকে গেছে।এত সুখ তার জীবনে সইবে তো।এই চিন্তায় সে খাবার শেষ করেছে।আর বারান্দায় যায় নি।শুয়ে পড়েছে কিন্তু হুম নেই চোখে।

রাত তিনটে__

চাঁদ বিছানায় এপিঠ ওপিঠ করেও যখন ঘুমাতে ব্যর্থ তখন সে ভাবলো বারান্দায় গিয়ে পাখি গুলোর সাথে সময় কাটানো যাক।যেমন ভাবনা তেমন কাজ।আপুর পাশ থেকে উঠে বারান্দায় রওনা দিলো।

বারান্দায় এসে পাখি গুলোর খাচাঁয় হাত দিয়ে দাড়িয়ে রইলো।সে ভাবনায় এতটা ব্যস্ত ছিলো,যে পাশের বারান্দায় একটা মানুষ তার দিকে বিষ্ময়ের দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে সেটা খেয়ালই করে নি।

হ্যাঁ পাশের বারান্দায় তেজ বসে আছে।সে অনেক রাত অব্দি অফিসের কাজ করে।কিন্তু চাঁদ বারোটার মাঝেই ঘুমিয়ে পড়ে।আজ এত রাতে চাঁদকে বারান্দায় আসতে দেখে অতি অবাকই হয়েছে। তবে এটাও বুজেছে যে চাঁদ মহারানীর নিশ্চয়ই কিছু নিয়ে মন খারাপ। নাহয় এত অন্য মনস্ক থাকতো না।তাই সে গলা পরিষ্কার করলো শব্দ করে চাঁদের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য।

পাশের বারান্দায় কিছু একটা শব্দ শুনে চাঁদ ভালোই চমকে গেছে।ভয়ও পেয়েছে বোঝা গেছে।চাঁদের এমন অবস্থা দেখে তেজ ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলছে,

– রিল্যাক্স চাঁদ আমি। আমি তেজ,ভয় পেয়ো না।

চাঁদও স্বস্তি পেলো তেজকে দেখে না হয় এখনই ভয়ে কলিজাটা ছিড়ে পরে যেতো।তেজ চাঁদকে স্বাভাবিক হতে দেখে বললো,

– কি এমন ভাবছিলেন ম্যাডাম যে সামনের বারান্দায় জলজ্ব্যান্ত মানুষটাকে চোখে পড়লো না।

– চাঁদ তাড়াতাড়ি বলে উঠলো “কই না তো,তেমন কিছুই না।

– তেমন কিছু না হলে যেমন কিছুই হোক সেটাই বলো।

-আরো না ভাইয়া সত্যি বলছি তেমন কিছুই না।

এবার তেজ ধমকের সুরে বললো তুই কি আমাকে বলবি নাকি আমার তোকে দিয়ে বলাতে হবে।

চাঁদও বুঝলো আজ আর তার রক্ষে নেই।তাই সে আরেকটু বারান্দার গ্রিলের সাথে এসে দাড়ালো।এতে চাঁদ তেজের আরেকটু কাছে চলে গেলো।

কাছে গিয়েই বললো,
-ভাইয়া তোমরা সবাই আমাকে কত ভালোবাসো আদর করো।আমার নিজেকে অনেক সুখী মনে হয়।কিন্তু আজকাল ভয়ও হয়।এত সুখ আমার কপালে সইবো তো?

চাঁদের এমন আশঙ্কাজনক প্রশ্ন দেখে তেজ মনে মনে অবাকই হয়।তার ছোট্ট চাঁদ যে কত উল্টা পাল্টা ভাবনা মাথায় আনতে পারে সেটা ভেবেই সে মনে মনে হাসে।কিন্তু বোঝায় যাচ্ছে মেয়েটা অতিরিক্তই টেনশন করছে।টেনশন কমাতে হবে।

তাই সেও গ্রিলের দিকে আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলে,

– দেখো চাঁদ ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা ভালো।কিন্তু এতটাও ভাবা কখনো উচিত নয় যে তোমার বর্তমানটা নষ্ট হয়।আর যা হচ্ছে হতে দেও।যা হবে সেটাও তোমার হতে দিতেই হবে।এটাই উপরওয়ালা ইচ্ছা।কিন্তু তুমি যদি ভবিষ্যত নিয়ে এত ভাবো তাহলে তোমার বর্তমান নষ্ট হবে এছাড়া আর কিছুই না।তোমার উচিত এখন যতটুকু সুখ পাচ্ছো সব টুকুই লুটে নেওয়া জেনো ভবিষ্যতে সুখ না পেলেও আফসোস থাকবে না। আর ভবিষ্যতে সুখ পাবে না কেন বলছি।তোমার সাথে আমরা আছি সবসময়। আর আমরা আছি মানেই তোমার সুখ আছে।

চাঁদও বোধহয় এতক্ষনে মনটাকে শান্ত করতে পারলো।এ মানুষটার প্রত্যেক টা কথাই তার কাছে ঔষুধের ন্যায় কাজ করে।হঠাৎ ই চাঁদের মাথায় একটা কথা আসে সন্দিহান দৃষ্টিতে তেজের দিকে চেয়ে বলে,

– আচ্ছা ভাইয়া আপনি ঘুমান নাই কেনো এখনো?

তেজ ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়।এই মেয়ের মতিগতি দেখে।কই থেকে কই চলে গেলো সে।

তেজ ছোঠ ছোট চোখ করে বলে- তাতে তোর কি? সেই কৈফিয়ত কি আমায় তোকে দিতে হবে নাকি?

চাঁদ চুপ করে যায়।সত্যিই তো তাকে কি সব বলা লাগবো নাকি।সে কে?

চাঁদের আবার বিষন্নতা হানা দেয়।সে বলে- না ভাইয়া আমি কৈফিয়ত চাই নি।জিজ্ঞেস করেছিলাম কৌতুহল বশত।না বললে নাই বললেন।কৈফিয়ত দেওয়ার মতন কেউ না আমি সেটা আমার ও খুব ভালো করে জানা আছে।

চাঁদ এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে রুমে চলে গেলো।তেজকে কিছু বলারও সুযোগ দেয় নি। তেজও বোকা বনে গেলো।সেও বুঝতে পেরেছে চাঁদ হয়তো মজা টা বুঝতে পারে নি কষ্ট পেয়েছে।আর এই মেয়ে এই কষ্ট নিয়ে থাকলে আজ রাতে আর ঘুমাবে না।

তাই তেজ রুমে গিয়ে ফোনটা আনে।একবার কথা না বললে এ মেয়ে তিল কে তাল ভেবে ফুলে থাকবে।তাই সে চাঁদের ফোনে কল দেয় আর অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে চাঁদের ফোন ব্যস্ত বলছে।তেজ তাজ্জব বনে যায়। এত রাতে কার সাথে কথা বলছে চাঁদ?
#সন্ধ্যায়_সন্ধি
#মম_সাহা

পর্বঃ৩

টানা সাতটা কল দেওযার পরও যখন অপরপাশে থেকে মহিলা কর্কশ কন্ঠে বলে উঠছে *আপনার ডায়াল কৃত নাম্বারটি ব্যস্ত আছে*।তখন জেনো কেউ তেজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে মনে হয়।এত রাতে এতক্ষণ যাবত চাঁদ কার সাথে এত কথা বলছে।এই দুশ্চিন্তা নিয়ে রাত কেটেছে তেজের।

অন্য দিকে প্রহেলিকার ঘুম ভেঙ্গে যায় কারো ফুফিয়ে কাঁদার আওয়াজে। পাশ ফিরে দেখে তার আদরের ছোট বোন চাঁদ কান্না করছে। প্রথমে প্রহেলিকা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় তারপর ভাবে চাঁদ হয়তো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে। তাই হয়তো ঘুমের ঘোরে কাঁদছে।কিন্তু চাঁদের মুখে হালকা আলো দেখা যাচ্ছে। সেটা মোবাইলের আলো।প্রহেলিকা চাঁদের হাতের মোবাইলটা ছিনিয়ে নিয়ে যে দৃশ্য দেখে তাতো তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।

চাঁদ একধারে কেঁদেই যাচ্ছে। প্রহেলিকা বলেছে চাঁদকে যে তেজ ভাইয়াকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা উচিত। চাঁদও ভাবলো হ্যাঁ কিন্তু পরক্ষণেই মনে পরলো বারান্দায় বলা তেজের কথাটা। যদি জিজ্ঞেস করার পর তেজ আবারো বলে *তোকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি?” তখন চাঁদ কি করবে।এটা যে তার সহ্য হবে না। এর চেয়ে বরং সে এই ভয়ংকর দৃশ্যটা মনে রেখে সরে যাবে তেজের জীবন থেকে।

সারাটা রাত দুজন মানব মানবীর কেটে গেলো একে অপরের প্রতি অভিযোগ করে।তার সাক্ষী ছিলো প্রহেলিকা।

______________________________
সকালে,

চাঁদের মা অনবরত ডেকেই যাচ্ছে চাঁদকে ঘুম থেকে উঠার জন্য কিন্তু চাঁদের উঠার নাম গন্ধই নেই।চাঁদের মা চাঁদের মুখটা কাঁথার নিচ থেকে বের করে আতকে উঠলো।জ্বরে গাঁ পুরে যাচ্ছে,চোখ মুখ কেমন ফোলা, সারা মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে।এমন সময় প্রহেলিকাও গোসল সেরে বের হয়ে বোনের করুন দশা দেখে থমকে গেলো।

চাঁদের মা জোড়ে জোড়ে চাঁদের ভাই আহানকে ডাকতে লাগলো আর প্রহেলিকাকে বললো তাড়াতাড়ি তেজকে ডেকে নিয়ে আসতে।

মায়ের এমন ডাক শুনে আহানও ঘাবড়ে গেলো। সে অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছিলো।মায়েে ডাকের আওয়াজ শুনে দৌড়ে চাঁদের রুমে গেলো।দেখে তার মা তার বোনের মাথাটা বুকে নিয়ে সমানে কেঁদে যাচ্ছে।আতকে উঠলো আহান। তেজও হাজির হলো তখনই।সাথে তাদের বাসার সবাই।

চাঁদকে এমন অবস্থায় দেখে কারো মস্তিষ্ক কাজ করছে না।সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়।তেজ তাড়াতাড়ি রুমে ডুকে চাঁদকে পাঁজা কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে পানির ট্যাব ছেড়ে মাথাটা পেতে দেয় আর আহানকে বলে ডাক্তারকে কল দেওয়ার জন্য।

____________________________
ডাক্তার চাঁদকে দেখে গেছে আধাঘন্টা হলো।অতিরিক্ত টেনশনের জন্য প্রেশার ফল করেছে। আর এর জন্য জ্বরটা এসেছে। সবাই তো ভীষণ অবাক হয়েছে যে চাঁদেে কী এমন টেনশন।তেজ তো আরো অবাক। হঠাৎ করে মেয়েটার হলো টা কি।কাল রাতে তেজের কথাটার জন্যই কি এ অবস্থা। কিছুই মাথায় আসছে না তেজের।

একটু আগে চাঁদ উঠেছে।তাঁকে সবাই দেখে গেছে।আহান তো বোনের পাশেই বসে ছিলো এতক্ষণ। ইনিয়েবিনিয়ে অনেক বার বোনকে জিজ্ঞেস করেছে টেনশনের কথা কিন্তু চাঁদের মুখ থেকে একটা কথা ও বের করতে পারে নি।সবাই ভেবেছে চাঁদকে একটু সময় দেওয়া হোক।

দূরে সোফায় বসে সবটাই পর্যবেক্ষণ করছে তেজ।চাঁদের আচারণ তার স্বাভাবিক লাগছে না। মেয়েটা জ্বরের জন্য এতটা চুপ এটা সে মানতেই পারছে না।সে অপেক্ষা করছে রুম ফাঁকা হওয়ার। সে খেয়াল করছে মেয়েটা নিঁখুত ভাবে তাকে ইগ্নোর করছে।

এখন রুম ফাঁকা। শুধু চাঁদ, প্রহেলিকা আর তেজ আছে রুমে।প্রহেলিকাকে জোড় করে ধরে রেখেছে চাঁদ। কারণ সে জানে তেজ একা পেলেই তাকে প্রশ্ন করবে।আর প্রহেলিকা ও বোনের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে থেকে গেছে।বাহিরে সবাই কথা বলছে।চাঁদের মা বিকালের নাস্তা তৈরি করছে।চাঁদের বাবাকে কিছুই জানানো হয় নি।কারণ সে কয়দিনের জন্য শহরের বাহিরে গেছে।.শুধু টেনশন করবে।

এতক্ষণে চাঁদকে একা পেয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুড়লো তেজ।

– চাঁদ কি এমন হয়েছে যে এমন মরা কান্না করেছিস?

চাঁদ আতকে উঠে তবুও নিজেকে শক্ত রেখে উত্তর দেয়ঃ

– আমার কিছুই হয়নি তেজ ভাইয়া আপনি ভুলভাল বলছেন।
– আমি ভুল বলছি না ঠিক বলছি তুই ভালো করেই জানিস এবার উত্তর দে আর হ্যাঁ সত্যি টা বলবি।

চাঁদ এবার রেগে যায়।রেগে গিয়েই বলে- আমার যা ইচ্ছা তা হয়েছে আপনাকে বলবো কেনো?কে আপনি?আপনাকে কেনো কৈফিয়ত দেবো?

তেজ এবার সত্যিই অবাক হলো। চাঁদ তার সাথে কখনোই এমন করে কথা বলে না।মেয়েটা তার কাছে আসলে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলায় আর না তে না মিলায়।তেজের কষ্ট হয়েছে ঠিকই কিন্তু রাগ হয়েঠে দ্বিগুণ। রাগটা এই কারণে না যে চাঁদ তার উপর চিল্লিয়েছে রাগটা একারণে মেয়েটা সমস্যা শেয়ার না করে কষ্ট পাচ্ছে।

রাগে তেজের শরীর কাঁপছে।কিন্তু চাঁদের সামনে সে রাগ কখনোই প্রকাশ করে না।হনহনিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে যায় নিজের ফ্লাটে।

তারপরই রুমে গিয়ে হাজির হয় হৃদি আর তুহা আপু। তারা গিয়েছিলো তাদের ফুপুর বাড়িতে বেড়াতে কিন্তু চাঁদের অসুস্থতার কথা শুনে চলে এসেছে।তারা যাওয়ার সময় চাঁদ আর প্রহেলিকাকে বলেছিলো তাদের সাথে যেতে কিন্তু প্রহেলিকা যায় নি চাঁদের মন খারাপ দেখে।আর চাঁদ এমনেতেও ওদের ফুপুর বাড়িতে যেতে পছন্দ করে না।ওদের ফুপাতো বোন রাহা খুবই হিংসুটে মেয়ে আর ওদের ফুপুও কেমন কড়া কথার মানুষ।তাই চাঁদ যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখে তাদের থেকে।

একটু পর চাঁদের খালামনি হন্তদন্ত হয়ে চাঁদের কাছে আসে।চাঁদ তখন শুয়ে ছিলো।খালামনিকে দেখে চাঁদ উঠে বসে। খালামনি তখনই গড়গড় করে বলে উঠলো- চাঁদ মা তেজের সাথে কি হয়েছে তোর?রাগারাগি করেছিস আমার ছেলেটার সাথে? ঘরটাকে তো ভেঙ্গে ফেলছে মনে হয়। কি হয়েছে তোদের মাঝে?

চাঁদ জানতো তেজ এমন কিছুই করবে।তাই চাঁদ তার খালামনিকে কথা শিখিয়ে দিলো। আর সে জানে এতেই কাজ হবে।চাঁদের সাথে প্রহেলিকা,তুহা আর হৃদি বসে ছিলো।তারা চাঁদের বুদ্ধি দেখে লুটোপুটি খাচ্ছে হেসে।

অন্যদিকে তেজের মা ঘরে ঢুকেই তেজকে বললঃ তেজ বাবা দরজা খোল,আর জিনিসপত্র ভাঙ্গিস না।চাঁদ বলেছে আরেকটা কিছু ভাঙ্গার আওয়াজ পেলে সে কিছু খাবে না রাতে।ব্যাস এতেই কাজ হলো থেমে গেলো আওয়াজ।

তেজ ভাবছে এটুকু পাঁকা মেয়ে কীভাবে হুমকি দিচ্ছে তাকে।তবে তেজের মনটা এখনো খচখচ করছে চাঁদের কি হয়েছে জানার জন্য।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here