অস্তিত্বে_তুমি পর্ব শেষ

#অস্তিত্বে_তুমি
#পর্ব_২৪ (#শেষ_পর্ব)
#সুলতানা_পারভীন

-হোয়াট! কায়রাকে নিতে গার্ড পাঠিয়েছি মানে? কায়রা কোথায়? কোন এম্বুলেন্স? কোথায় নিয়ে গেছে? নাম্বার কত এম্বুলেন্সের? জাস্ট আনসার মি ড্যাম ইট। হ্যালো? হ্যালো?

মোবাইলের অপর প্রান্তের কথাগুলো শুনেই জিহানের পা দুটো যেন ফ্লোরে আটকে দিয়েছে কেউ। জিহান এক নাগাড়ে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন করার পর অপর প্রান্ত থেকে লোকটাও হন্তদন্ত হয়ে নিজের স্টাফদেরকে এম্বুলেন্সটা আটকানোর জন্য বলছে শুনে জিহান মোবাইলটা লাউডস্পিকারে দিতেই নীলাও পাশে এসে দাঁড়ালো। লোকটা নিজের স্টাফদেরকে কিছু ইন্সট্রাকশন দিয়ে কিছু একটা শুনে তড়িঘড়ি করে আবার বলা শুরু করলো।

-স্যার? এম্বুলেন্স মেইন গেইট পার করে চলে গেছে স্যার। গেইটের বাইরেই ডক্টর আর নার্সকে এম্বুলেন্স থেকে বাইরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ফুল স্পিডে চলে গেছে। আমরা পুলিশকে ইনফর্ম করছি স্যার।

-হাউ কুড ইউ গাইজ সো ইরেসপন্সসিবল! কায়রার যদি কিছু হয় আপনাদের হসপিটালের আমি কি হাল করি খেয়াল রাখবেন।

-সরি স্যার। আপনাদের তরফ থেকে এশুয়েরেন্স আইডি শো করেছিল ওই লোক দুজন। উই সুড হ্যাভ ভেরিফাই দোজ আইডিজ। আমরা এক্ষুণি ব্যবস্থা নিচ্ছি স্যার। সরি স্যার।

লোকটার অনুনয় বিনয়ের ফাঁকে জিহান রাগে কলটা কেটে দিয়ে নিজের চুল খামচে ভাবতে লাগলো কে করতে পারে এমন কাজ। এদিকে জিহানের জোর গলায় কথার শব্দে জিশানও রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে ততক্ষণে। বেচারা বাচ্চা ছেলেটা ভয়ে গুটিশুটি হয়ে নীলার শাড়ির আঁচলের কোণা ধরে মুখ লুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নীলা জিহানের কাঁধে হাত রাখতেই জিহানের হুঁশ ফিরলো। এখানে দাঁড়িয়ে থেকে নষ্ট করার মতো সময় হাতে নেই মনে পড়তেই জিহান নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে নীলার দিকে ঘুরে জিশানকে দেখে একটু হাসি ফোটানোর চেষ্টা করলো ঠোঁটের কোণে। বাচ্চাটা যে ভয় পেয়েছে সেটা দেখেই বুঝতে পারলো জিহান। তাই আর কথা না বাড়িয়ে নীলার হাতে হাত রাখলো।

-তোমরা সাবধানে থেকো নীল। কি হচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। সাদিকের কি হয়েছে, কায়রা—। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। টিমের সবাইকে কাজে লাগিয়ে দিচ্ছি। নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো কায়রা আর সাদিককে খুঁজে বের করতে।

-কিন্তু কায়রা আপু?

-তুমি টেনশন করো না। আমি দেখছি কি হয়েছে। ফার্ম হাউজের এড্রেস যদিও কেউ জানে না, তবু সাবধানে থাকবে নীল। আর জিশান? মামনিকে কিন্তু ডিস্টার্ব করবে না একদম। তাহলে বকবে কিন্তু। লক্ষী ছেলের মতো ব্রেকফাস্ট করে নিবে। মনে থাকবে? আসছি নীল? সাবধানে থেকো।

জিশান মাথা নেড়ে ‘দুষ্টুমি করবে না’ বলে সায় জানাতেই জিহান হেসে নীলা আর জিশান দুজনের কপালেই ছোট্ট করে একটা করে চুমো এঁকে দিয়ে বেরিয়ে গেল। নীলা ঘুমুঘুমু জিশানের চোখগুলো দেখে জিশানকে নিয়ে রুমে চলে এলো। জিশানকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই জিশান আবার ঘুমিয়ে পড়তেই নীলা নিজের মোবাইলটা নিয়ে তাড়াতাড়ি আফসান খন্দকারের নাম্বার ডায়েল করলো। দুই তিনবার কল হওয়ার পর অপর প্রান্ত থেকে একটা গম্ভীর মতো স্বরটা ভেসে আসতেই নীলা চমকে উঠে নাম্বারটা চেক করলো। ঠিক নাম্বারেই কল করেছে বুঝতে পেরে আবার মোবাইলটা কানে লাগালো নীলা।

-হ্যালো? কে বলছেন? এটা তো আমার পাপার নাম্বার। আপনার কাছে কেন?

-নীলা ম্যাম? আমি শিহাব বলছি। আফসান স্যারের পি.এ। স্যার মিটিংয়ে আছেন তো। তাই কলটা আমি রিসিভ করেছি।

-ওহ। পাপাকে একটু মোবাইলটা দিন তো?

-সরি ম্যাম। স্যার আর আবরার স্যার দুজনেই এই মূহুর্তে মিটিংয়ে আছেন। ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাইন্টের সাথে মিটিং চলছে। আর্জেন্ট কিছু বলার থাকলে আমাকে বলতে পারেন। এনি প্রবলেম ম্যাম?

-আমমমমম। না মানে। তেমন কিছু না। মিটিং শেষ হলে পাপাকে বা ভাইয়াকে বলবেন কলব্যাক করতে।

-ওকে ম্যাম। সরি ম্যাম এখন রাখছি। স্যার বারবার ডাকছে। ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং—।

-ওকে।

নীলা কলটা ডিস্কানেক্ট করার আগেই শিহাব কলটা কেটে দিল। নীলা দুই মিনিট অপেক্ষা করে এবারে নিহারের নাম্বারে কল করলো। পরপর কয়েক বার কল করার পরে কলটা রিসিভ হলো। রিসিভারের অপরপ্রান্তে নিহারের কণ্ঠস্বরটা শুনে নীলার গলা ভেঙ্গে আসলো এক মূহুর্তেই। নিহার ব্যস্ত হয়ে নীলাকে বারবার প্রশ্ন করছে কি হয়েছে, আর নিহারের উদ্বেগভরা কণ্ঠস্বরে নীলার আরো হাউমাউ করে কান্না এসে গলা বুজে দিতে চাইছে। নিহার তবু বারবার প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। শেষে নীলাও এক নিঃশ্বাসে বলা শুরু করলো। কথাগুলো শুনে নিহারের কি রিএকশন হবে জানা নেই নীলার। শুধু মনে হচ্ছে এখন না বললে হয়তো আর কখনো বলা হবে কথাগুলো।

অন্যদিকে, ফার্মহাউজ থেকে বের হয়ে নিজের গাড়িতে এসে বসতেই মোবাইলের রিংটোনের শব্দ কানে আসতেই জিহান কলটা রিসিভ করতেই আবার সেই রোবোটিক কন্ঠের হাসিটা শুনতে পেল। হাসিটা শুনতেই জিহানের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।

-হসপিটালের নিউজটা তো এতোক্ষণে পেয়ে গেছেন মিস্টার জিহান চৌধূরী, রাইট? আপনার জন্য আরেকটা গুড নিউজ আছে মিস্টার চৌধূরী। আপনার শ্বশুরবাড়ির একজন বিশেষ মেম্বার অলরেডি মিসিং। উমমমম। এখনও কেউ জানে না। মে বি ২/৩ ঘন্টার মধ্যে মিসিং রিপোর্ট চলে আসবে সবার সামনে।

-হু দা হেল আর ইউ? হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট?

-ওয়েট ফর মাই নেক্সট কল। মে বি নেক্সট মিসিং নিউজটা দিয়ে দিব। গুড বায় মিস্টার জিহান।

-হ্যালো? হ্যালো?

রোবোটিক সাউন্ডের কণ্ঠস্বরটা কেটে যেতেই প্রায় সাথে সাথেই আরেকটা নাম্বার থেকে কল আসতেই জিহান কলটা রিসিভ করলো।

-হ্যালো হ্যালো হ্যালো? হু দা হেল আর ইউ? কি প্রবলেম টা কি?

-হ্যালো স্যার? আমি হসপিটাল থেকে বলছি।

-ওপস। সরি। ইয়েস ডক্টর। সরি। কোনো খোঁজ পাওয়া গেল কায়রাকে এম্বুলেন্সে কোথায় নিয়ে গেছে? বা কে বা কারা?

-নো স্যার। বাট স্যার হসপিটালের ক্যামেরা ফুটেজ চেক করে আমরা দেখছি আরেকজন পেশেন্ট চেক আপ করতে এসেছে, দুই কিডন্যাপার উনাকেও মেডিসিন পুশ করে সেন্সলেস করে নিয়ে গেছে।

-হোয়াট! কোন পেশেন্ট! নাম কি?!

-স্যার নাম? নাম— নাম মিস্টার আরহান খন্দকার।

-হোয়াট!

ডক্টরের কথাটা শুনে কয়েকটা মূহুর্ত থ হয়েই বসে ছিল জিহান। আরহান খন্দকার, নীলার বাবা! উনি হসপিটালে কি করছেন, কেন ওই লোকগুলো কায়রার সাথে আরহান সাহেবকেও কিডন্যাপ করলো? কি চায় কি ওরা? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই জিহান রানিং কলটা কেটে সাদাফের নাম্বারে কল করলো। কলটা প্রায় সাথে সাথেই রিসিভ হলো।

-জিহান, গিভ মি টু মোর মিনিটস। সাদিকের লাস্ট লোকেশন ট্রেস করা হয়ে গেছে। আমি তোকে লোকেশন হোয়াটসএপ করেছি। আর তোর মোবাইলের জিপিএস অন করে রাখ। তাহলে তোর প্রত্যেকটা রেকর্ড থাকবে আমার কাছে।

-সাদাফ, কায়রা আর আফসান খন্দকারও মিসিং।

-হোয়াট? আফসান খন্দকার আর আবরার খন্দকার দুজনের মোবাইল অন আছে। উনাদের অফিসের লোকেশনই শো করছে।

-আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড কি হচ্ছে। আমি সাদিকের মোবাইল লোকেশনে যাচ্ছি, তুই লোকেশন ট্রেস করতে থাক।

-ইয়া। বাট বি কেয়ারফুল। যে বা যারাই কাজটা করুক না কেন কিছু তো ঘাপলা আছেই। আর আই থিংক সাদিক—–।

-সাদিকের কিচ্ছু হয়নি। ও অনেক কেয়ারফুল, ইন্টেলিজেন্ট ছেলে। কিছু হওয়ার আগেই আমি ওকে, কায়রাকে, নীলার পাপাকে, সবাইকে খুঁজে বের করবো।

-ওকে। আই উইল আপডেট ইউ এভরি সিংগেল ডিটেইলস।

-ওকে। বি কেয়ারফুল।

সাদাফ কলটা কেটে দিতেই জিহান ওয়াটসএপে সাদাফের পাঠানো লোকেশনটা চেক করে সেদিকেই গাড়ি ছোটালো। বেশ অনেকটা সময় পার হওয়ার পর লোকেশনে পৌঁছালো জিহান। সাদাফের পাঠানো লোকেশনটা একটা পুরোনো ফ্যাক্টরির মতো মনে হচ্ছে জিহানের কাছে। বাইরের গেইটে কোনো তালা দেয়া নেই দেখে জিহান গাড়িটা গেইটের থেকে বেশ কিছুটা দূরেই পার্ক করে এসে ধীর পায়ে গেইটের দিকেই এগিয়ে গেল। মরচে পড়া গেইটের উপরে ‘S S Industry Limited’ নামের পেইন্ট করা দেখে অজান্তেই জিহানের ভ্রু জোড়া কুঁচকে গেল। জিহান যত ধীর পদক্ষেপে সম্ভব বিশাল গেইটের কেচি গেইটটা পার করে বন্ধ ফ্যাক্টরির দিকে পা বাড়ালো। পুরো জায়গাটা দেখে মনে হচ্ছে কোনো পুরোনো ফ্যাক্টরির ওয়ারহাউজের মতো। জায়গাটার আরো কিছুটা ভিতরে যাওয়ার পর একটা এম্বুলেন্স দেখে জিহান প্রায় ছুটে সেটার দিকে এগিয়ে গেল। তাড়াহুড়োয় এটা খেয়াল করলো না বেশ কয়েক জনের চকচকে চোখ জিহানকেই খেয়াল করছে। এম্বুলেন্সের কাছাকাছি এসে এম্বুলেন্সের ব্যাক ডোরটা খুলে দিতেই বেডে শোয়ানো অক্সিজেন মাস্ক, আর নলে ঘেরা কায়রা আর অন্য একটা বেডে আফসান খন্দকারকে দেখে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ঠিক পিছন থেকে একটা সজোরে আঘাত এসে লাগলো জিহানের মাথার পিছনের দিকটায়। আর জিহানও ছিটকে বেশ কিছুটা দূরে নোংরা ধূলোয় মাখা ফ্লোরে মুখ থুবড়ে পড়লো।

অন্যদিকে, জিহানের নাম্বারে বেশ কয়েকবার কল করার পরও কল রিসিভ করছে না দেখে টেনশনই হচ্ছে নীলার। আফসান খন্দকারের নাম্বারেও কয়েকবার কল করেও কেউ কল রিসিভ করছে না দেখে নীলার এবারে ভয় করতে শুরু করেছে। আরেকবার নিহারকে কল করবে কি না ভাবতে ভাবতে শেষে নাম্বারটা ডায়াল প্যাডে তুলতেই কলিংবেলের শব্দ শুনে নীলা প্রায় ছুটে দরজাটা খুলতে গেল। মেইন ডোরটা খুলতেই সামনেই একটা মেয়েকে দাঁড়ানো দেখে নীলা নিজেকে সামলে নিল। মেয়েটার মুখটা কেমন যেন চেনাচেনা লাগছে নীলার কাছে। কোথায় দেখেছে মনে করতে পারছে না, তবু এতো পরিচিত লাগছে মুখের গঠনটা!

-ম্যাম আপনি শিগ্গির চলুন প্লিজ? আপনার বাবা আর ভাইয়া জিহান স্যার আর উনার বোনকে আটকে রেখেছে। নয়তো মার্ডার করে ফেলবে।

-হোয়াট! আপনি কে? কিসব যা তা বলছেন? পাপা আর ভাইয়া এসব কখনোই করবে না। জাস্ট গেট লস্ট।

নীলা কথাটা বলতে বলতেই মেইন ডোরটা লক করে দেয়ার চেষ্টা করতেই মেয়েটা শক্ত হাতে দরজাটা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে গেল। নীলা চমকে কয়েক কদম পিছিয়ে এসেই ডায়েল প্যাডে যে নাম্বারটা ছিল সেটাতেই কল করার চেষ্টা করলো। ততক্ষণে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটা সতর্ক হয়ে গেছে। সেও নীলার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়েই ফ্লোরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। সামনের মেয়েটা এবারে বিশ্রি শব্দ করে হেসে নিজের পরচুলা, চশমা এসব নীলার দিকেই ছুঁড়ে ফেললো। নীলা কোনোমতে দুহাত মুখের সামনে রেখে আক্রমণটা থেকে নিজের চোখ মুখ আড়াল করে আবার উঠে দাঁড়ালো। এবারে সামনে দাঁড়ানো মেয়েটাকে চিনতে পারলো নীলা। এটা সুনয়না। সেদিনের সেই মেয়েটা!

-মিস্টার এন্ড মিসেস চৌধূরী একটু অভার স্মার্ট তোমরা দুজনেই। ফার্স্ট টাইম এই ফার্মহাউজে আমাকে নিজের উডবি হাজবেন্ডের সাথে এতোটা ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও কি করে তাকে বিয়ে করলে? ছি ছি ছিহ! তুমি তো নারী জাতির নামে কলঙ্ক। এতো নিচ, ক্যারেক্টারলেস একটা ছেলের সাথে দিনের পর দিন রাত কাটাচ্ছ? ঘৃণা হয় না নিজের উপরে?

-মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ সুনয়না। জিহান তোমার সাথে কিছুই করে নি, সেটা আমার চেয়েও ভালো তুমি জানো। জিহানের উপরে আমার রাগ হতে পারে, ক্ষোভ থাকতে পারে, আমি কিছুটা প্রজেসিভও হয়ে গেছি হয়তো হুট করে তোমাকে আর জিহানকে একসাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, আর তোমার ওই বিশ্রি ইঙ্গিত করা হাসি। আহ! কিন্তু ওকে আমি নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভরসা করি, বিশ্বাস করি।

-সেদিন করে নি, আমাকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু কিশোর বয়সের নিজের দোষ ঠিকই আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজে মহৎ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ ওর জন্য আরেকটা ছেলের জীবন তছনছ হয়ে গেছে। কখনো নিজের পরিচয় পর্যন্ত কাউকে দিতে পারে নি, শুধু তোমার জিহানের কারণে। নিজে একটা মেয়ের সাথে ——।

-জাস্ট শাট আপ। কার কথা বলছো তুমি হ্যাঁ? যার কাছ থেকে এসব বানোয়াট গল্প শুনেছ তাকেই ভালো করে জেরা করো। দেখবে নিজের দোষ সেই লোকই জিহানের নামে দিচ্ছে, আর তোমার সামনে ভালো মানুষ সাজার নাটক করছে।

-হাহ। তুমিও তোমার জিহানের প্রেমে অন্ধ, যা বলে বিশ্বাস করে নাও, আমিও সেই লোকটাকে ভালোবাসি বলেই তার কথাই আমার জীবনের শেষ কথা। আর আজ তার জন্য আমি নিজে মরতেও পারি বুঝলে? তোমার এসব কথায় আমি তাকে সন্দেহ করবো? হুহ। এতোগুলো বছরে তোমার জিহান আমার ভালোবাসার মানুষটাকে যত না কষ্ট দিয়েছে, আজ আজকের এই দিনটায় তার হাজার গুণ বেশি ফিরিয়ে দিব আমরা, আমরা সবাই মিলে। কেন জানো? করাণ আজকের দিনটাতেই তোমার জিহান তার কাছ থেকে সব কেড়ে নিয়েছিল।

-কি করবে কি তোমরা? আর? জিহান কোথায়? কায়রা আপু? কায়রা আপু কোথা? বলো?

-তোমাকেও তাদের কাছেই নিয়ে যেতেই আমি এসেছি মিসেস চৌধূরী। সোজা কথায় আমার সাথে চলো? নইলে শুনলাম এই বাড়িতে একটা বাচ্চাও আছে? কি যেন নাম? জিশান রাইট?

-জিশানকে কিচ্ছু করো না প্লিজ? আমি-আমি-আমি যাবো তোমার সাথে সুনয়না প্লিজ। ওকে কিছু করো না। ও তো ছোট্ট একটা বাচ্চা, প্লিজ?

-ওকে। তুমি বিনা বাঁধায় গেলে আর ওই পুঁচকি বাচ্চাটাকে নিয়ে কি করবো?

নীলা আর কিছু না বলে চোখ ফিরিয়ে একবার পিছন দিকে তাকিয়ে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করতেই সুনয়না নীলার চুলের মুঠো ধরে টানতে টানতে নীলাকে নিজের সাথে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

এদিকে, এস এস ইন্ডাস্ট্রির পুরোনো ফ্যাক্টরিতে বেশ তীক্ষ্ম একটা যন্ত্রণা নিয়েই চোখ মেলে তাকালো জিহান। মনে হচ্ছ কেউ মাথায় কয়েক মন ওজনের পাথর বেঁধে দিয়েছে। বহু কষ্টে ঝাপসা চোখে পিটপিট করে তাকানোর চেষ্টা করলো জিহান। সামনের ঘন অন্ধকার সরে আলো ফুটে উঠতেই সামনের একটা চেয়ারের সাথে নীলাকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় দেখে উঠে নীলার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই নিজের হাত পাও বাঁধা টের পেল জিহান। আক্রোশে নিজের হাত পায়ের বাঁধন ছোটানোর চেষ্টা করেও সফল হলো না ছেলেটা। এবারে অসহায় হয়ে খেয়াল করলো ফ্যাক্টরির একটা পাশে এম্বুলেন্সের খোলা দরজা দিয়ে কায়রাকে দেখা যাচ্ছে। রাগে, দুঃখে, আর নিজের গাধামিতে নিজেকেই খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছে জিহানের। নিজের কয়েক হাজার গালি দেয়ার মাঝেই একটা শব্দ শুনে জিহান চমকে শব্দের উৎস খোঁজার জন্য চারদিকে তাকাতেই লোকটাকে দেখতে পেল জিহান। ফ্যাক্টরির আলোর দিক থেকে জিহানের দিকেই এগিয়ে আসছে বলে জিহান প্রথমে চেহারাটা দেখতে পায়নি জিহান। কিন্তু পরক্ষণেই মুখটা স্পষ্ট চিনতে পারলো জিহান। শিহাব! এতো কিছুর পিছনে তাহলে শিহাবের হাত ছিল! কিন্তু কেন!

-নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে কি লাভ জিহান? এর চেয়ে আমাদেরকে প্রশ্ন করলে সদুত্তর পেতে পারিস। তোর কৌতূহল না বাড়িয়ে একটু শক দেয়া যাক, কি বলিস? তোমরা সবাই বেরিয়ে এসো প্লিজ? আমাদের জিহান সাহেবের সেন্স এসেছে।

শিহাবের কথাটা শেষ হতেই আরো তিনজন মানুষের ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে মানব অবয়ব লাভ করলো। মানুষগুলোর মুখগুলো দেখে জিহান স্তব্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে। মুগ্ধা, যাকে নিজের সবচেয়ে বিপদের মূহুর্তে পাশে পেয়েছে সেই বন্ধু, মামী দিলারা জামান, যিনি নিজের সন্তানের মতো স্নেহে জিহানকে ভালোবেসেছেন আর সবশেষে জামান চৌধূরী, যার স্নেহের হাত সবসময় জিহানের মাথায় ছিল। পরিচিত মুখগুলোর এতো বড় ধোঁকাটা হজম করতে রীতিমতো কলিজা ফেটে যাচ্ছে জিহানের। একটাই প্রশ্ন জিহানের মাথায় ঘুরছে। কেন কেন কেন!

-আমাকে চিনতে পারলি না ব্রো? ওকে লেট মি ইন্টিডিউস মাইসেল্ফ। আমি শিহাব শওকত জামান। ইন শর্ট এস এস। তোর একমাত্র মামাতো ভাই, রিমেম্বার?

-তুই? মামা, মামি, মুগ্ধা? এই শয়তানটার কাছে শেষে নিজেদেরকে বিক্রি করে দিলে? নিজেদের ছেলে বলে অন্যায়ের সাথে আপোশ করে নিলে? ছি মামা! আর আমি এতোদিন ধরে ভাবছি আমার কোম্পানিতে কে গাদ্দারি করছে, কে মীরজাফরের মতো কোম্পানিকে ভিতর থেকেই ঝুরঝুরে করে দিচ্ছে! নিজের লোকেরাই পিঠে ছুরি মারে সেটা আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল।

-ঠিকই বলেছিস জিহান। সেদিন তুই আমার পিঠে ছুরি মেরেছিলি, আজ আমি মারলাম। তবে তোর ছুরির আঘাত আমি কবেই সামলে নিয়ে তোকে আর তোর পরিবারকে বরবাদ করতে লেগে গেছি জানিস? কায়রার বিয়ের কথা মনে আছে জিহান? হা হা হা। তোর জান্নাতবাসী বাবা মা মানে আমার শ্রদ্ধেয় ফুফা ফুফু যারা আমাকে সামান্য একটা বিষয়ে কুকুরের মতো বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে, তাদের ধারণা আফসান খন্দকার ছেলেকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দিয়েছিল শত্রুতা করে। হা হা হা। আসলে ঘটনাটায় ওদের বেচারাদের কোনো দোষই ছিল না। যা করার আমি আর বাবাই করেছি।

ইউ ব্লাডি রাস্কেল। একটা মেয়েকে রেপ করতে চেয়েছিলি তুই। ইজন্ট ইট এ বিগ ডিল ফর ইউ? মাত্র এস এস সি ক্যান্ডিডেট ছিলি তুই তখন। কিশোর বয়সে এতো বড় অধঃপতন। নিজের কাজের যোগ্য শাস্তিই দিয়েছিল ড্যাড আর আফসান আঙ্কেল তোকে। তোর আরো বড় পানিশমেন্টের দরকার ছিল। কিশোর অপরাধ আইনের কারণেই ছাড় পেয়ে গেছিলি জাস্ট।

-শাট আপ। হস্টেজদের এতো বকবক করতে হয়না জিহান। আর আমি তোর বড় ভাই। বড়দের কিভাবে সম্মান করতে হয় এই নূন্যতম শিক্ষাটা তোকে তোর বাবা মা দিতে পারে নি? ওপস! দিবে কি করে এর আগেই তো মেয়ের কীর্তি দেখে ফ্যানের সাথে দড়িতে ঝুলে মরে গেছে।

-শিহাববববববববব। আমার বাবা মা বা কায়রাকে নিয়ে একটা বাজে কথাও বললে তোকে খুন করে ফেলবো।

-ওপস! সরি সরি। কায়রা তো আমার নিজের ছোটো বোনের মতোই। বাট একটা সিক্রেট নিউজ শুনবি? তোর বাবা মা আসলে নিজেরা মরে নি। হা হা হা। আমি, বাবা, মা তিনজনে মিলে ওদেরকে আগে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে শেষে দড়িতে——-।

-শিহাবববববব। আমার হাতটা একবার ছাড়াতে পারলে আজ তোদের সবাইকে এখানেই পুঁতে ফেলবো কুত্তার বাচ্চা।

-কিসব আগামাথা ছাড়া গালি দিচ্ছিস জিহান। এতোদিন আমার মাকে নিজের মায়ের মতো দেখেছিস, আর এখন গালি দিচ্ছিস? ওহ আরেকটা কথা তো তোকে বলাই হয়নি। কায়রাও নিজে থেকে মরতে যায় নি। ওকে একটু কম কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম। হাজার হোক, বেচারি প্রেগনেন্ট ছিল। তাই জাস্ট হাতের শিরা কেটে দিয়ে চলে আসতে চেয়েছিলাম। বাট না। ম্যাডামের তো সবাইকে শব্দ করে বাড়ি মাথায় তোলার শখ হয়েছিল। তাই ওকেও লটকে দিতে হয়েছিল। সো স্যাড। দেখ এখনো কোমায় না বেঁচে আছে, না মরেছে।

-শিহাব। তোদের প্রত্যেকটাকে আমি খুন করবো আজকে।

-ওকে। আগে নিজে তো বেঁচে দেখা। ওহো। তার আগে আমার কিছু প্ল্যানিং শোন তুই। কায়রাকে দেখছিস? ওর অক্সিজেন সিলিন্ডারে আর বড় জোর দশ মিনিটের মতো অক্সিজেন বাকি আছে। এই ব্যাপারে আমার কোনো দোষ নেই দেখ। তুই নিজেই সেন্সে আসতে এতোগুলো ঘন্টা নষ্ট করে ফেললি। সো স্যাড।

-জাস্ট লেট হার গো শিহাব।

-এতো বছর ধরে ওঠে নি, আজ আর কি উঠবে? ওহো! আরেকটা কথা বলতে তো ভুলে গেছি। ঠিক পনেরো মিনিটের মাথায় এম্বুলেন্সে রাখা কাস্টমাইজ বোমটা ব্লাস্ট হবে। ততক্ষণে তোর শ্বশুর মশাই, মানে আমার এক্স বস সেন্সে আসবে বলে মনে হয় তোর? সেই কখন ইনজেকশন পুশ করেছি। এই ব্যাটারও গোয়েন্দা হওয়ার শখ হয়েছিল তোর কি যেন নাম চামচাটার, আমমমমম ওহ মনে পড়েছে সাদিকের কথা শুনে। ভেবেছে আমার বিরুদ্ধে কন্সপারেসি করবে আর আমি জানবো না।

-সাদিক কোথায় শিহাব? বল নইলে খুন করে ফেলবো তোকে আমি—-।

-চিল ব্রো। এতোক্ষণে ওর লাশটা পচতে শুরু করেছে। তাই সেইফটির জন্য কোণায় নিয়ে রেখেছি। পনেরো মিনিট পর ওপরে গিয়ে ওর সাথে দেখা করে নিস। সবই মায়া বুঝলি জিহান। এবার তোর বাবা একমাত্র জীবিত উত্তরাধিকারী হিসেবে আমিই সবকিছুর মালিক হবো। আর? আর রইলো আবরার আর নিহার? ওদেরকেও বাচ্চাটা আগে দুনিয়ায় আসুক, তারপর দেখা যাবে কি করা যায় ওই দুটোকে নিয়ে। আপাতত বায় জিহান। সরি রে, তোর বউটা তো ঘুমে অচেতন। সুনয়না ঘুমের ডোজ দিয়েছে তো। সুনয়নাকে চিনলি তো? তোর হবু ভাবি। ও না থাকলে এতো কিছু পসিবলই হতো না। শি ইজ এ রিয়েল চাম ইউ নো? চলো ড্যাড মম? পনেরো মিনিট সময় আছে এদের হাতে। শেষ বিদায়টা নিয়ে।নিক? আমরা আপাতত অফিসে যাই? লিগাল কাজগুলো শুরু করা যাক, কি বলো? বায় জিহান, বায়।

আধাঘন্টা পর,
চৌধূরী ইন্ডাস্ট্রির কনফারেন্সরুমে ইন্ডাস্ট্রির ওনারশিপ পরিবর্তনের লিগাল কার্যক্রম চলছে। কোম্পানির লইয়ার বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিহানের করা পাওয়ার অফ এটর্নির পেপারে সাইনগুলো চেক করছিল। সবগুলো পেপার গভীর মনোযোগ দিয়ে চেক করা শেষ করে লইয়ার কিছু বলার জন্য উঠে দাঁড়াতেই কনফারেন্স রুমের দরজাটা শব্দ করে খুলে গেল। মিটিংয়ে থাকা সবক’জন মেম্বারের চেয়েও বেশি আঁতকে উঠলো শিহাব আর শওকত জামান। কেননা, ততক্ষণে পুরো রুমটা পুলিশে ঘেরাও করে ফেলেছে আর পুলিশের এতোগুলো সদস্যের ভেতর থেকে একটা পরিচিত মুখে নজর এসে পড়েছে তাদের। জিহান। জিহানকে দেখে শিহাব আর জামান চৌধূরী পাশ কাটিয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই চারদিক থেকে পুলিশ তাদের দুজনকে ঘিরে ধরে ফেললো। জিহান এবারে শিহাব আর মামার সামনে এসে দাঁড়ালো।

-কি অবাক হচ্ছ না তোমরা? কি করে বেঁচে ফিরলাম এটা ভেবে অবাক? নাকি এই আধঘন্টায় এতো আয়োজন করে তোমাদেরকে গারদে পোরার ব্যবস্থা করলাম কি করে সেটা ভেবে অবাক? একটা কথা কি বলো তো? সবাই ধোঁকা দেয় না, সাদিকের মতো বন্ধুরা নিজের জীবন দিয়ে হলেও তাদের সততার প্রমাণ দিয়ে যায়। আর সাদাফের মতো বুদ্ধিমান বন্ধুরা বিপদে পড়লে ছুটে আসে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে। যে অন্যায় করেছ মামা তার শাস্তি তুমিও পাবে। আর ভেবো না মামি আর মুগ্ধা পালিয়েছে। ওদেরকে এয়ারপোর্ট থেকে পুলিশ এতোক্ষণে গ্রেফতার করে ফেলেছে। সো মিস্টার শিহাব? হোয়াট ডু ইউ সে নাউ? তোমার তীরে এসে তরি ডুবে যাওয়ার খুব রাগ হচ্ছে না? বেটার লাক নেক্সট টাইম। ওপস সরি, মে বি দেয়ার ইজ নো নেক্সট টাইম নাউ।

কনফারেন্স রুম থেকে পুলিশের লোকেরা শিহাব আর জামান চৌধূরীকে টানতে টানতে বাইরে আনতেই পর পর দুবার গুলির শব্দে সবাই চমকে উঠলো। শিহাব পালাতে গুলি ছোঁড়ে নি। সুনয়না নিজের হাতে নিজের ভালোবাসার মানুষকে চিরতরে শেষ করে দিয়েছে। পুলিশের লোকেরা সুনয়নার হাত থেকে গুলিটা কেড়ে নিয়ে হাতে হাতকড়া পড়ালো। জামান চৌধূরী তখনও স্তব্ধ হয়ে পাথরের মূর্তির মতো নিজের সন্তানের লাশের দিকে তাকিয়ে রইলো। শিহাবের প্রাণহীন দেহটা দেখে বাকি লাশগুলোর দৃশ্যও চোখের সামনে ভেসে উঠছে উনার। এটাই হয়তো তার এতোদিনের অন্যায়ের শাস্তি। চোখের সমানে নিজের সন্তানের মৃত্য দেখার মতো বড় শাস্তি আর কি হতে পারে? এদিকে সুনয়নার চোখ বেয়ে গড়গড় করে পানি ঝরছে। মেয়েটা অনেক বেশিই ভালোবেসেছিল এই লোকটাকে। কিন্তু লোকটার আসল মুখোশ খুলে গিয়েছিল ফ্যাক্টরিতে শিহাবের বলা কথাগুলো শুনেই। শিহাব আর ওর মা বাবা চলে যেতেই সুনয়না ছুটে এসে জিহান আর নীলার হাতের বাঁধন খুলে দেয়া শুরু করে। ততক্ষণে আফসান খন্দকারের সেন্স ফিরেছে। আর সাদাফ আর আবরার জিহানের মোবাইল ট্রাক করে সোজা পুলিশ নিয়েই হাজির হয়েছে সেই পুরোনো ফ্যাক্টরিতে। সময়ের মধ্যে সব করতে পারলেও কায়রা আর ওদের মাঝে নেই। হসপিটালে নেয়ার পর ডাক্তারের আর কিছুই করার ছিল না। ততক্ষণে সব অর্গান লাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে কায়রার। শেষ বারের জন্যও প্রিয় মানুষটার মুখটা দেখতে পেল না মেয়েটা।

মাস খানেক পর।
আজ প্রথম বার নীলাদের বাসায় এসেছে জিহান। জামাই হয়ে এসেছে। আফসান খন্দকার, আবরার, নিহার ব্যস্ত হয়ে জামাই আদর করছে। জিহান বেচারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে তাদের আদর যত্নে। নীলা এসব দেখে মিটিমিটি হাসছে। এমন একটা দৃশ্য দেখার জন্য এতোগুলো দিন, এতোগুলো বছর মেয়েটার চোখ জোড়া তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষা করেছে। আজ ওর সেই স্বপ্নটা সত্যি হলো। এতো বাঁধা বিপত্তি পার করে, সমস্ত ভুল বোঝাবুঝি শেষে দুটো পরিবার এক হয়েছে। এর বেশি আনন্দের আর কি হতে পারে?

রাতে নিজের বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলো ভেবে ঠোঁটের কোণে আলতো হাসির রেখা ফুটে উঠেছিল নীলার। হঠাৎ করেই কেউ একজন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজতেই চমকে উঠে হাতটায় একটা আদরের কিল বসালো নীলা।

-এভাবে হুট করে জড়িয়ে ধরে ভয় দেখাও কেন হ্যাঁ?

নীলার প্রশ্নে জিহান ছোট্ট করে একটা চুমো এঁকে দিলো নীলার ঘাড়ে। আরো গভীর আবেশে নীলার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রাণ নিলো জিহান।

-তোমার অস্তিত্বে নাকি শুধু আমিই মিশে আছি, তাহলে আমার স্পর্শে এতো চমকে ওঠো কেন বারবার? এই সময় এতো চমকে উঠলে চলবে? যে আসছে তারও তো পাপার স্পর্শগুলো অনুভব করতে শিখতে হবে নাকি? তুমি এভাবে প্রতিবার আঁতকে উঠলে আমার ছোট্টো সোনামনিটা তো ভাববে কে না কে বারবার মাকে এসে জড়িয়ে ধরে।

জিহানের কথাটা শেষ করার আগেই নীলা উল্টোদিকে ঘুরে জিহানের দিকে ফিরেই ধুপধাপ কিল বসিয়ে দিল জিহানের বুকে।

-অসভ্য ছেলে একটা। কিসব বলো সবসময়? নিজেই হঠাৎ করে এসে আমাকে ভয় দেখায় আবার যতসব উদ্ভট কথাবার্তা বলে। এখন সরো তো। এতো ঢং করতে হবে না। জিশান চলে আসবে এক্ষুণি। সারাদিন তো। দুষ্টুমি করে বেড়াচ্ছে। এবারে একটু ঘুমাবে তো?

-জি না ম্যাডাম। জিশান আজকে তার দাদুর কাছে গল্প শুনতে শুনতে ঘুমাবে বলে বায়না করেছে। আমাদেরকেও ডিস্টার্ব করবে না, আবরার ভাই আর নিহার ভাবিকেও ডিস্টার্ব করবে না। তাছাড়া এবার থেকে তো জিশান এখানেই থাকবে, তাই ওদের সাথে কিছুটা টাইম স্পেন্ড করতে দাও। তাহলে আর তোমার জন্য কান্নাকাটি জুড়ে দিবে না।

-এখানে থাকবে মানে কি? আমার ছেলেকে আমি এখানে রেখে যাবো? পাগল হয়েছ নাকি? একদম না। আমি জিশানকে যাওয়ার সময় আমার সাথেই নিয়ে যাবো।

-আরে! ছেলে হলো কবে তোমার? বিয়ের আগে ঘরজামাই থাকে বুঝলাম, তুমি তো দেখছি মেয়ের জন্মের আগেই জিশানকে ঘরজামাই বানিয়ে ফেলছো। হা হা হা। বড় হয়ে কি জবাব দিবে বলো তো?

-চুপ চুপ চুপ। জামাই ঘরজামাই সব পরে দেখা যাবে। কিন্তু জিশানকে ছাড়া আমার এক মূহুর্তও চলবে না বুঝলে? আমার দুটো সন্তানই আমার অস্তিত্বে মিশে গেছে। ওদের একজনকেও নিজের থেকে আড়াল করা সম্ভব নয় আমার পক্ষে।

-বা বা! বাচ্চারা উনার অস্তিত্বের সাথে মিশে গেছে! আর আমি বানের জলে ভেসে এসেছি?

-ঢং করবে না তো একদম। আমার অস্তিত্বে শুধু তুমি মিশে আছো, তুমি শুধু তুমি।

এভাবেই খুনশুটি ভালোবাসায় রঙিন থাকুক ভালোবাসারা। প্রত্যেকটা সংসার, প্রত্যেকটা স্বপ্ন এভাবেই নিজের অস্তিত্বের খোঁজ পাক, আর রেঙে উঠুক ভালোবাসার।

সমাপ্ত।

(এতোদিন ধরে এই কনফিউজিং গল্পটার পাশে যারা ছিলেন তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও ভালোবাসা রইলো। দয়া করে কেমন হয়েছে জানাবেন। ইনশাআল্লাহ শীগ্রিই নতুন গল্প আসতে চলেছে। আশা করি পাশে থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here