সন্ধ্যা নামার পরে পর্ব ২৯+৩০

#সন্ধ্যা_নামার_পরে
#ঊনত্রিশ

“মাঝে মাঝে সময়ের দাবিতে অনেক পিছুটান পেছনে ফেলে আসতে হয়। তাই তো জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পর্কগুলো ছেড়ে চলে এলাম লন্ডনে। ছোটবেলা থেকে এক বাবাই আমার সব ছিলেন। বাবা চলে যাওয়ার পর যে পরিবার আমাকে আগলে রেখেছিল সে পরিবারকে ছেড়ে আসাটা আমার জন্য কখনোই সহজ ছিল না। নিজের সাথে নিজেকে যুদ্ধ করতে হয়েছে। প্রথম প্রথম প্রতিদিন ডক্টরের নম্বরে কল দিতে ইচ্ছে করত। জানতে ইচ্ছে করত তাকে ছাড়া আমি যতটা খারাপ আছি, সেও কী ততটাই খারাপ আছে! নাকি তারচেয়ে বেশি। কিন্তু কল দেব কী করে কিয়া। আমি তো নিজেই তাকে বারন করে এসেছি আমাকে কল না দিতে। তাহলে আমি কী করে সেই কথার খেলাপ করি।

তাই তো চেয়েও কোনোরকম যোগাযোগ করতে পারিনি। নিজেকে বুঝিয়েছি এটাই আমার নিয়তি। এ পৃথিবীতে কিছু মানুষ শুধু কষ্ট পাওয়ার জন্য জন্মায়।
আমিও নিজেকে সেই কাতারে রেখে শান্তি খোঁজার চেষ্টা করেছি। জানো কিয়া মাঝে মাঝে মনে হয় দিদানের শরীর কেমন জিজ্ঞেস করি। মা কী এখনো আগের মতোন রাগী আছেন? আমাকে মনে পড়ে তাদের? ওহি এখন কার সাথে গল্প করে? আমি কিন্তু আজও একটা দিনের জন্য তাদের ভুলে থাকিনি। সারাদিন পড়াশোনা, চাকরি সব শেষ করে যখন এক কাপ কফি হাতে বসি। তখন তারা সবাই একে একে আমার ভাবনার শহর জুড়ে ঘুরাফেরা করে। মনে হয় তারা আমাকে ছেড়ে ভালো নেই। যতটা আমি কষ্টে আছি, তারাও ঠিক ততটাই কষ্টে আছে। আবার মনে হয় হয়তো আমার কথা সবাই ভুলে গেছে। সময় সব ভুলিয়ে দেয়।”

কিয়া বিস্ফারিত চোখে নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। সে ভাবছে একটা মানুষ এত সুন্দর করে কী করে ভাবতে পারে! কতটা শক্তি থাকলে এতবড় অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া যায়। যে মানুষটা তার সব কেড়ে নিল। তাকে কিচ্ছুটি বলল না!

“নিরা তোমার শ্বশুরকে কী কেউ কিছু বলেনি? মানে অর্নব কিছু বলেনি তার বাবাকে?”

নিরা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “ওহি মাঝে মাঝে কল দেয় আমায়। সে জানিয়েছে আমি আসার পর থেকে আমার অনুরোধ রাখতে কেউ বাবাকে কিছুই বলেনি। তবে সবাই তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় শাস্তি কী জানো? আপনজনদের নীরাবতার। কেউ হাজারটা কথা শোনালে যতটা না কষ্ট হয়। তারচেয়ে অযুত-লক্ষ গুন কষ্ট হয় যদি কথা না বলে। আমি চলে আসার তিন মাস পরে নাকি বাবা রোড এক্সিডেন্ট করেন। অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে সবাই ভেবেছে তিনি মারা যাবেন। সে যাত্রায় তিনি বেঁচে গেলেন। কিন্তু কোমায় চলে গেছেন। ডাক্তার জানায় উনি মানসিকভাবে অনেক চাপে ছিলেন। তাই শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার জন্য এ অবস্থা।

এরপর একদিন দিদান আমায় কল করেছিলেন, বলেছিলেন, “খোদার লাঠি শব্দহীন হয়। যেখানে মানুষ ক্ষমা করে দেয়, সেখান থেকেই সৃষ্টিকর্তার শাস্তি শুরু হয়। তাই তো আমার ছেলের আজ এ অবস্থা। তুই চলে যাওয়ার পর একদম ভেঙে পড়েছিল। সবার কথা না বলা তাকে ভেতর থেকে শেষ করে দিচ্ছিল। চাপা অনেক কাউকে বুঝতে দিত না। তাই তো এই পরিণতি। আমারা এসবকিছু মেনে নিয়েছি। এ দুনিয়ায় কষ্ট পেয়ে গেলে, হয়তো আখিরাতে শাস্তি একটু হলেও কমবে। কিংবা কমবে না। সেটা পুরোটাই আল্লাহর হাতে। শুধু তুই ওঁকে মন থেকে ক্ষমা করে দিস বোন। তোর দীর্ঘশ্বাস যে তার উপর হায় হয়ে পড়ে।”

সেদিন দিদান অঝোরে কেঁদেছিলেন। সেই কান্না আমার ভেতরটা কাঁপিয়ে দিয়েছিল। কিয়া আমি জানি না কেন বাবার এমন পরিণতি মেনে নিতে এখনো পারি না। একদিন উনি আমাকে বলেছিলেন, “শোকর আল্লাহর কাছে, তুমি আমার ঘরের বউ হয়ে এসেছো।”
সে কথাটি উনি মন থেকে বলেছেন কিনা আমি জানি না। তারপরও মনে হয় আমাকে একটা সময় বাবার ভালোবাসা দিয়েছেন। বাবাকে হারিয়ে যখন আমি নিঃস্ব হয়ে যাই তখন তিনি আমাকে ছায়া দিয়েছেন। আমি কী করে সেসব ভুলে যাই বলো? আমি তো অকৃতজ্ঞ নই।

নিরা কাঁদছে। তার চোখের কোল বেয়ে মুক্তোর মতো জলের ধারা বয়ে নামছে। সেই জলে এতটুকু হিংসা নেই, প্রতিশোধ নেই। শুধু শত্রুর জন্য ভালোবাসা আছে। কিয়ারা ভাবছে মানুষ নাকি পুড়ে পুড়ে খাঁটি হয়। আজ এই মেয়েটাকে না দেখলে তার এটা কখনোই মনে হত না। এমন আত্মসংযম খুব কম মানুষের হয়। ভালোবাসার এতটা ক্ষমতা সব মানুষের হয় না।

কিয়ারা বলল, “লিরা তুমি কী জানো? তুমি অসাধারণের চেয়েও অসাধারণ একটা মেয়ে!”

নিরা অশ্রুসিক্ত চোখে হেসে বলল, “এই তো এখন আবারও জানলাম। আগেও বলেছিলে।”

কিয়ারাও হাসল। তখনই নিরার ফোনে কল আসল। হাতে নিয়ে দেখল প্রকাশকের নম্বর। সে কথা বলল। কিয়া চুপচাপ সেটা বোঝার চেষ্টা করল।

ফোন কাটার পর কিয়ারা জিজ্ঞেস করল, “কার কল?”

“প্রকাশকের। কালকে বইয়ের ফাইল পাঠাতে হবে। সম্পাদক সাহেব দেখবেন সবটা ঠিক আছে কিনা। বেটা রিডিং, প্রফেশনাল এডিটিং, সব কাজ শেষ হয়েছে। ভেবেছিলাম আমি আর একবার রি-চেক দেব। যাইহোক এখন কালই পাঠাতে হবে। স্যারের আদেশ শির ধার্য।”

কিয়ারা বলল, “একটা প্রশ্ন করব লিরা?”

“অবশ্যই করো।”

“তুমি কী কখনো তোমার স্বামীর কাছে ফিরে যাবে না?”

নিরা হাসল, বলল, “সে কী আর হয় বলো? আমি চাই না আর ফিরে যেতে। যেভাবে আছি সেভাবেই সবটা চলুক না। যে সময় একজন মাকে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা ভুলিয়ে দেয়। সেই সময় একদিন অর্নবকে ভুলিয়ে দেবে, তার জীবনে নিরা বলে কেউ ছিল। আমাদের পথচলা এতটুকুই।”

“আমার বাবা-মায়ের ছবি দেখবে কিয়া?”

“দেখাও?”

নিরা ফোন ঘেটে একটা ছবি বের করল। ওই যে কুড়িয়ে পাওয়া সেই ছবিটি। ফোনে তুলে রেখেছে।

কিয়ারা ফোন নিয়ে দেখে বলল, “লিরা তুমি একদম তোমার মায়ের মতো হয়েছো। হুবহু এক। সেই নাক, সেই ঠোঁট। পুরোটা মুখ!”

নিরা নিজেও তাই ভাবে। তাই তো কিয়ারার কথা শুনে হাসল। এমন সময় আবার নিরার ফোন বেজে উঠল। ফোনটা কিয়ারার থেকে নিয়ে নিরা অবাক হলো ওহি কল দিয়েছে! রিসিভ করবে না ভেবেও করে ফেলল।

ওপাশ থেকে করুণ গলায় আওয়াজ আসল, “সব শেষ হয়ে যাচ্ছে ভাবী। প্লিজ তুমি একটা বারের জন্য এসো? আমি তোমার কাছে মিনতি করছি? তার শেষ ইচ্ছা তোমায় একবার দেখবে। এটা থেকে তাকে বঞ্চিত করো না। ফিরে এসো একবার ভাবী? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো।”

নিরার হাত কাঁপছে। গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হচ্ছে না। বারবার তার একটা কথাই কানে বাজছে। আসার সময় অর্নব বলেছিল। “আমি মরে গেলেও কী শেষ দেখা, দেখতে আসবে না?”
#সন্ধ্যা_নামার_পরে
#ত্রিশ

সকাল থেকেই আকাশে মেঘের ঘনঘটা। মেঘগুলো পেজো তুলোর মতোন উড়াউড়ি করছিল। ইতোমধ্যেই তুষার পড়া শুরু করেছে। নিরা ওহির কথা শুনতেই ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেল। যেন এ মুহূর্তে পৃথিবীটাই থমকে গেছে, ঘড়ির কাঁটা থেমে গেছে। বৃষ্টির মতো বরফ শরীরের তীরের মতো বিঁধার কথা হলেও সে চুপচাপ বসে আছে। একটুও নড়ছে না।

আবার ফোন বেজে উঠল। এবার কিয়ারা ফোনটা ধরে ওহির সাথে কথা বলল। নিরার অবস্থাটা সে বুঝতে পারছে। কাছের মানুষের এমন অবস্থা হলে যে কারোই কষ্ট হবে। কিয়ারা নিরাকে জড়িয়ে ধরল। গলায় আটকে থাকা কান্নার দলটা তখনই বেরিয়ে এলো। নিরা ডুকরে কেঁদে উঠল। কিয়ারা চোখেও জল। সে নিরাকে ধরে ভেতরে নিয়ে গেল।

ভেতরে গিয়ে নিরার শরীর থেকে গলে যাওয়া বরফের পানিটুকু মুছে দিয়ে পাশে বসে বলল, “তোমার যাওয়াটা দরকার লিরা।”

নিরা ধরা গলায় বলল, “আমাকে কেন বারবার এত পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় বলতে পারো কিয়া? নিজের সবকিছু ছেড়ে এ দেশে আসাটা কখনোই সহজ ছিল না আমার জন্য। মাসের পর মাস আমি ঘুমাতে পারিনি। প্রতিটি মুহূর্তে তাদের কথাই মনে পড়েছে। যখন ধীরে ধীরে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলাম তখনই আমাকে আবার পুরনো সব ঘা তাজা করতে হবে! তার কিছু না হয়ে আমার কেন হলো না। আমি তো দিব্বি বেঁচে আছি। মরে যাওয়া তো আমার উচিত।”

নিরা অঝোরে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে যাচ্ছে। কিয়ারা তার হাত দুটো ধরে বলল, “তোমাকে এখন সব থেকে বেশি সুস্থ থাকতে হবে লিরা। এতটা পথ তোমাকে জার্নি করতে হবে। এভাবে ভেঙে পড়লে কীভাবে যাবে বলো?”

“আমি কিচ্ছু জানি না কিয়া। কিচ্ছু না। এ জীবনটা আমি আর বয়ে বেড়াতে পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। তার কিছু হয়ে গেলে আমি কী করব?”

“কিচ্ছু হবে না। তুমি শুধু ভরসা রাখো। আমার একটা বন্ধু এয়ারলাইন্সে চাকরি করে। তাকে বললে আট ঘণ্টার মধ্যে তোমার ফ্লাইট করে দেবে। শুধু তোমাকে শক্ত হতে হবে। এভাবে কাঁদতে থাকলে তুমি দূর্বল হয়ে পড়বে। এতটা পথ তোমাকে একাই যেতে হবে। তাই তোমার নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হবে।”

“সাদা কাপনে মোড়ানো কফিন দেখলে আমার বড্ড ভয় করে কিয়া। হৃদপিণ্ডের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে আসে। জীবনে অনেক সময় পার করেছি। এর থেকে ভয় আমি আর কিছুতে পাই না।”

কিয়ারা নিজের বুকে নিরাকে টেনে নিয়ে বলল, “জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যি তো মৃত্যু লিরা। সে তুমি মুসলিম হও, বা আমি খ্রিস্টান সবাইকেই তো মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তুমি ভেঙে পড়েছো এটা দেখতে আমার ভালো লাগে না।”

কিয়ারা নিরার প্রয়োজনীয় সবকিছু গুছিয়ে দিল। ফ্লাইটের আর এক ঘণ্টা বাকি। তারা বেরিয়ে পড়ল গাড়ি নিয়ে। কিয়ারা ড্রাইভ করছে। সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। প্রতিটি মুহূর্তে তার অসহ্যকর যন্ত্রণা হচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে পাখি হয়ে উড়ে চলে যেতে। ওহির নম্বরে কল দিল। প্রথম বারে রিসিভ হলো না। দ্বিতীয়বারে হলো। ওহি জানাল হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে। তবে মায়ান বা দিয়া কেউই কোনো ভরসা দিচ্ছে না। কথাটা শুনে নিরার আরও বেশি ভয় করতে শুরু করল।

★★★

মায়ান দিয়া অপারেশন থিয়েটারে ঢুকেছে। বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে। সবার হাত আল্লাহর নিকট মোনাজাতে দোয়া প্রার্থী হয়ে রয়েছে। সবার একটাই দোয়া অপারেশন সাকসেসফুল হোক। অনেক ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন করা হচ্ছে। অপারেশন করলেও কতটা কী হবে সে শুধু আল্লাহই জানেন।”

ওহি মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদছে। মাও কাঁদছেন।

নিরা এয়ারপোর্টে এসে দাঁড়িয়েছে। ভেতরে ঢুকার আগে কিয়ারাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। কিয়ারা বলল, “খুব শীঘ্রই দেখা হবে লিরা। আমি তোমার অপেক্ষায় থাকব। তোমার বাংলাদেশের নম্বর আমার কাছে আছে। কল দেব আমি।”

প্লেন ছেড়ে দিয়েছে আজ থেকে তিন বছর আগে নিজের দেশ ছেড়ে এসেছিল। সেদিন যেমন যন্ত্রণা নিয়ে এসেছিল। আজও তেমন ভয়-যন্ত্রণা মিশ্রিত অনুভূতি নিয়ে ফিরছে। বারবার মনে হচ্ছে সবকিছু ঠিক থাকবে তো! মানুষটা বাঁচবে তো? তার মুখের কথা শুনতে পারবে তো? সিটের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে সে। চোখের কোণ বেয়ে ঝরঝরিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। যেন এ মেয়েটার সারা জনমই অশ্রু ঝরানোর জন্য। শূন্যতা আর হাহাকার ছাড়া তাকে তো জীবন কিছুই দেয়নি।

★★★

অনেকদিন পর নিজের দেশের মাটিতে পা রাখল নিরা। ভেবেছিল আর কখনোই আসবে না। কখনো নিজের মাতৃভূমিকে দেখতে পাবে না। কিন্তু তার সব চিন্তা ভুল প্রমাণিত হলো। ভাগ্য কাকে কোথায় নিয়ে যায় সেটা কেই বা বলতে পারে! একটা সিনএনজি ভাড়া করে উঠে বসেছে। ওহিকে কল দিয়ে হাসপাতালের ঠিকানা জেনে নিল। এতদিন পর সবার মুখোমুখি হতে হবে! কীভাবে নিজেকে সামলাবে বুঝতে পারছে না সে। এয়ারপোর্টে নেমে বাংলাদেশের সিমটা ঢুকাতেই কিয়ারার কল পেল। মেয়েটা যে লাস্ট খবর জানার জন্য উদ্ধিগ্ন হয়ে আছে।

হাসপাতালের সামনে এসে নামল নিরা। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছে না তার জন্য কী অপেক্ষা করছে। খারাপ কিছু শোনার জন্য সে প্রস্তুত নয়। লিফট থেকে নামতেই করিডরে ওহি আর তার মা বসে আছে। নিরার দিকে চোখ পড়তেই ওহি দৌঁড়ে এসে তাকে ঝাপটে ধরে। নিরার হাত থেকে সুটকেসটা ধড়াম করে পড়ে যায়। মেয়ের দিকে অনুসরণ করতেই মা দাঁড়িয়ে গেলেন। কতদিন পর সেই মুখটা দেখছেন। যে মুখটা দেখার অপেক্ষা প্রতিদিন করে গেছেন। চোখ দিয়ে জল পড়ছে তার। সামনে এগুনোর শক্তিটুকু পাচ্ছেন না। এ মেয়েটাকে যে তিনি ওহি থেকে কম ভালোবাসেন না।

ওহিকে জড়িয়ে ধরে নীরবে অশ্রুপাত করছে নিরা। অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কিচ্ছুটি বলতে পারছে না। এই তার সমস্যা যখন অনেক কথা বলার থাকে, তখন কিছুই বলতে পারে না। ধীর পায়ে মায়ের দিকে এগিয়ে গেল নিরা। উনার সামনে দাঁড়াতেই নিরার মুখটা দু’হাতে আঁজলা ভরে নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলেন। যেন নিজের পূর্বের খোয়া যাওয়া কিছু ফিরে পেয়ে পরম মমতায় দেখে নিচ্ছেন সব ঠিক আছে কিনা। নিরার চোখের জল মুছে দিয়ে তিনি ডানে-বামে মাথা নাড়িয়ে কাঁদতে বারন করলেন।
নিরা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। মায়ের বুকে ছোট্ট শিশুর মতো কাঁদতে লাগল।

তখনই মায়ান-দিয়া তখন করিডরে এসে থমকে গেল নিরাকে দেখে। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে রইল তার দিকে। তখনই ওহি বলল, “ভাইয়া কেমন আছে দিয়া আপু?”

নিরার বুকের ভেতর ধড়ফড় করছে। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তটা পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন সময়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here