সবার উপরে প্রেম পর্ব -শেষ

গল্পঃ সবার উপরে প্রেম ( ৪র্থ এবং শেষ পর্ব )

–“ ভালোবাসা না দিলে অন্তত চুমু গুলো ফেরত দিয়ে যেও মিতু,” লিখে মিতুর হোয়াটসঅ্যাপে পাঠালাম।

ফিরতি মেসেজে মিতু লিখলো,– ধরে থানায় নিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে তেল মাখা বেতের বারি দিলেই চুমু খাবার মজা ধোঁয়ায় পরিনত হয়ে কান দিয়ে বেরিয়ে যাবে বলে দিলাম।

মিতুর রিপ্লাই দেখে আমার মাথায় হাত, পাথর চেপে পানি বের করা সম্ভব হলেও এই মেয়ের হৃদয় চেপে মনে হয় এক ফোটা প্রেম বের করা সম্ভব নয়। প্রেমে তো পড়লাম, এমন প্রেমে পড়লাম যে প্রেমে পড়ার আগেই ছ্যাঁকা খেয়ে পরাণ খালি পরপারে যাই যাই করে।

মনির খানের সেই গানটা, “প্রেম পিরিতি ভালোবাসা, আমার ভাগ্যে নাই,” কানের কাছে বেজে উঠলো।

রবী ঠাকুরের, “ জেনেশুনে বিষ করেছি পান,” গানের সাথে জীবনের মিল খুঁজে পেয়ে বেদনা উতলে উঠে হৃদয়ের চারপাশে অ্যাটাক করে চলেছে অবিরত।

একদিন যায়, দুই দিন যায়, আসেনা মিতু ভালো বাসেনা আমায়। তিনদিনের দিন মিতুর ছোটবোন অর্থি খবর দিলো মিতুকে কিডন্যাপ করা হয়েছে, ফোন অন কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে না।

আমি জলদি করে এক বন্ধুর মাধ্যমে মিতুর ফোনের লোকেশন খুঁজে বের করলাম। শহরের বাইরে এক পুরনো বাড়ি দেখালো লোকেশনে।

এদিকে চেয়ারের সাথে বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে মিতুকে, ভয়ঙ্কর মাস্তান বজলু বদ এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিতুর চারপাশে চক্কর কাটছে।

বজলু বদ মিতুর সামনে এসে বললো,– বজলু খায়না বিড়ি, বজলু খায়না মদ, তবু সবাই ডাকে বজলু বদ।

মিতু বললো,– তো এখন আমি কি করবো! খুশিতে নাচবো নাকি দুঃখে কান্না করবো?

বজলু বললো,– তোর কিছু করতে হবেনা, যা করার আমিই তোকে করবো।

বজলুর চ্যালা মিন্টু বললো,– বস উনি কিন্তু পুলিশ, যা-ই করেন ভাবিয়া করেন, করিয়া ভাবার কিন্তু সময় পাবেন না, ভাগ্য খারাপ হইলে আপনার পশ্চাতে ডিম থেরাপিও থাকতে পারে।

বজলু চোখ রাঙ্গানি দিয়ে বললো,– এত বুদ্ধি নিয়া তুই বাংলাদেশে কি করো মিন্টু? মনে চায় পাচার উপ্রে কিক দিয়া তোরে নাসায় পাঠাই মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করতে। চুপ থাক একদম চুপ।

মিন্টু চুপ হয়ে গেল।

বজলু আবার মিতুকে বললো,– তোর আজ এমন অবস্থা করবো যেটা দেখে ভয়ে জনগণের ব্লাড প্রেশার হাই হয়ে দুনিয়া থেকে নাই হয়ে যাবে।

বজলু বদের অন্য এক শিষ্য বললো,– বস আজ পর্যন্ত একটা বিয়েই করতে পারলেন না, খালি ডায়লগ মারতে পারেন এটা করবো, ওটা করবো!

বজলু রেগে গিয়ে বললো,– শোন, বেশী পটরপটর করিসনা, আমি কিন্তু কানের উপ্রেও মারতে পারি, টেনে এক্টা মেরে ছেড়ে দিলে কান কোমায় চলে যাবে বলে দিলাম, চুপ থাক।

মিতু বজলুকে বললো,– আচ্ছা বদ…

মিতুর কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো, আবার বজলু চোখ রাঙ্গানি দিতেই সবাই চুপ।

বজলু মিতুকে বললো,– এই যে, বদের আগে যে বজলু আছে সেটা বলার জন্য কি আর একজন হায়ার করে আনতে হবে।

মিতু বললো,– শুধু বদ শব্দটাই তোর সাথে হেব্বি মানায়, বজলু চুলোয় যাক, বদটা থাকুক।

বজলু ভ্রু কুঁচকে বললো,– বজলু চুলোয় যাক মানে!? যেখানে বজলু, সেখানে বদ; যেখানে বদ, সেখানে বজলু।

মিতু বললো,– আচ্ছা আচ্ছা, কিন্তু আমাকে এখানে তুলে আনার মানে কী, তোর সাথে আমার কী শত্রুতা?

বজলু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– তোর কারণে ক্যাটরিনাকে হারিয়ে বজলু আজ দেবদাস, তুই তো করলি আমার সর্বনাশ!

বজলুর মুখে ক্যাটরিনার কথা শুনে সবাই অবাক, মিন্টু অবাক হয়ে বললো,– বস আপনি আর ক্যাটরিনা! এ তো বানরের গলায় মুক্তার মালার মতো ঘটনা, কেম্নে কি? মাথা ঠিক আছে তো?

বজলু চোখ রাঙ্গানি দিয়ে বললো,– ওরে ছাগল, এই ক্যাটরিনা সেই ক্যাটরিনা না, আমার ক্রাশ রিনা, ক্যাট মানে বিড়াল খুব ভালোবাসতো, তাই ভালোবেসে তাকে আমি ক্যাটরিনা বলে ডাকতাম। যেদিন রিনার সামনে ভালোবাসার প্রস্তাব লইয়া উপস্থিত হইলাম, সেই দিন এই মিতু ম্যাডাম ছাগল চুড়ির অপরাধে হ্যান্ডকাফ লইয়া উপস্থিত হইলো। মানে দুদিন আগে ছাগল চুড়ি করছিলাম বন্ধুদের সাথে পিকনিক করার জন্য। যাই হোক রিনা এই ঘটনা শোনার সাথে সাথে বললো,– একটা ছাগল চোর হবে আমার জীবন সঙ্গী! এর চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।

তারপর রিনা চলে গেল চিরতরে, সেই ঘটনার পরে থেকে বজলু তার নামের শেষে বদ জুড়ে দিয়ে ভয়ংকর মাস্তান। সবাই এখন বজলু বদের নাম শুনলে হিসু করে দেয়।

মিন্টু হেসে ফেলে বললো,– বস, বিষয়টা বেদনার।

বজলু চোখ রাঙ্গানি দিয়ে বললো,– তয় হাসো ক্যা, এ কেমন বেদনা আবার?

মিন্টু সিরিয়াস হয়ে বললো,– বস বিষয়টি এতই বেদনার যে মস্তিষ্কে প্যাচ লেগে ভুলে কান্নার বদলে হাসির সিগনাল আসছে।

বজলু মেজাজ গরম করে মিতুকে বললো,– আজ তোর সাথে এমন হেস্তনেস্ত করবো, এমন দুষ্টুমি করবো যা দেখে তুই অনুভব করতে পারবি স্বপ্ন ভাঙ্গার যন্ত্রণা কাকে বলে। হেস্তনেস্ত করার পরে তোকে কেটে টুকরো টুকরো করে বস্তা ভরে বালি চাপা দিয়ে দেবো।

বজলুর আর এক শিষ্য বিরক্ত হয়ে বললো,– বস শুরু থেকেই শুধু এটা করবো ওটা করবো ডায়লগ না মেরে শুরুতেই কিছু করে ফেললে এতক্ষণে এক সন্তানের বাপ হইয়া যাইতেন নিশ্চিত।

সেই শিষ্যের কান ধরে টেনে এনে বজলু বললো,– তোর যখন এতই তাড়া, তুই কর তাইলে হারামজাদা।

শিষ্য চুপ করে পেছনে চেপে গেল।

বজলু খারাপ উদ্দেশ্যে মিতুর বুকের দিকে হাত বাড়াতেই আমি আড়াল থেকে দৌড়ে বেরিয়ে সামনে এসে বজলুকে বললাম,– ভাই বজলু বদ, তোর যা মনে চায় আমাকে কর, মিতুকে ছেড়ে দে প্লিজ।

বজলু অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,– তোরে আবার কি করমু, তুইয়ো যা আমিও তাই, যা করার এই পুলিশ ম্যাডামকে করবো। প্রাণে বাঁচতে চাইলে চুপচাপ কেটে পড়।

মিতু অবাক হয়ে আমাকে বললো,– তুমি এখানে?

আমি বললাম,– মিতু আমার ভালোবাসার মানুষটা আমার হোক বা না হোক, আমার ভালোবাসা রক্ষা করার দায়িত্ব তো আমারই, তোমাকে আমি পাবোনা ভেবে তোমার বিপদে যদি পাশে না থাকি, তবে ভালোবাসলাম কি। তোমার জন্য জীবন গেলেও যাক, অন্তত ভালোবাসা তো সার্থক হবে।

বজলু বললো,– ভালোবাসা পরে হবে, আগে এই পুলিশ ম্যাডামের সাথে আমার বাসর হবে সবার সামনে।

বজলুর সাঙ্গপাঙ্গরা এসে আমাকে বেঁধে ফেললো।

মিতু তো ট্রেনিং প্রাপ্ত, বাঁধন কখন খুলে ঢিলা করে রেখেছে কেউ টেরও পায়নি।

বজলু মিতুর সামনে ঝুকে পড়ে বললো,– এবার হবে খেলা।

মিতু বললো,– আচ্ছা বজলু আমার কারণে তোর স্বপ্ন ভাঙলো তাই তো! আচ্ছা বল তো স্বপ্ন কোথায় থাকে?

বজলু বললো,– কোথায় আবার! বুকে, চোখে।

মিতু বললো,– তোর বুক চোখ স্পর্শ না করেই তোর স্বপ্ন কিভাবে ঝাপসা করি দ্যাখ।

কথা শেষ করেই মিতু উঠে দাড়িয়ে ধড়াম করে বজলুর দুই পায়ের মাঝখানে একটা কিক মেরে দিতেই, প্যান্টের চেন বরাবর চেপে ধরে বাজলু মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। বজলুর চোখে সর্ষে ফুল ও জোনাকি পোকার আলো দৃশ্যমান হলো, পৃথিবীটা এখন বজলুর কাছে ঝাপসা।

মিতু বললো,– কি এবার তোর বিয়ে করার স্বপ্ন, বাবা হবার স্বপ্ন ঝাপসা হলো তো। এবার বুঝলি তো স্বপ্ন শুধু বুকে চোখে নয়, ডাউন সাইডেও থাকে।

বজলু কাতর কন্ঠে বললো,– ডেঞ্জার স্পটে আঘাত করে স্বপ্নে ব্যাঘাত ঘটানো কি খুবই জরুরি ছিল?

তারপর বজলু বেহুশ।

পুলিশ ফোর্স এসে চারদিক থেকে ঘিরে ফেললো,বজলু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আত্মসমর্পণ করলো।

সন্ধ্যায় আমি ছাদে দাড়িয়ে আছি চুপচাপ, পেছন থেকে মিতু এসে বললো,– এত ভালোবাসো আমায়, অথচ আমি একবার এঙ্গেজমেন্ট এর কথা বলায় চুপ হয়ে গিয়েছিলে সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে, খোঁজখবর না নিয়ে।

আমি বললাম,– মিতু তোমাকে আমি ভালোবাসি, আর ভালোবাসা মানেই বিশ্বাস, তাই তোমার কথা আমি বিশ্বাস করে নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলাম।

মিতু মিষ্টি হেসে বললো,– সত্য অনুসন্ধান না করার অপরাধে তোমার শাস্তি হওয়া উচিৎ।

আমি বললাম,– সমস্যা নেই, তোমার জন্য আমি সবকিছু মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত।

মিতু সামনে এসে আমার মুখোমুখি দাড়িয়ে, জড়িয়ে ধরে আমার ঠোঁট চুমু খেয়ে বললো,– শুরু থেকেই তোমাকে আমার খুব পছন্দ, তাইতো তোমার পাগলামি গুলোকে প্রশ্রয় দিয়েছি। সব মেয়েই চায় তার জীবনে এমন কেউ আসুক যে তোমার মতোই হৃদয় উজাড় করে ভালো বাসবে। আমি তোমাকে হারাতে চাইনা, তাই প্রেম পরে আগে বিয়ে করে ফেলি চলো। বিয়ের পরে তোমাকে স্পেশাল রিমান্ডে নিয়ে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আমি মিতুকে পাজাকোলা করে কোলে তুলে বললাম,– এই শীতেই সেই স্পেশাল রিমান্ডে যেতে চাই, জলদি কিছু করতে হবে।

কাবাব মে হাড্ডি হয়ে মিতুর ছোটবোন অর্থি এসে বললো,– স্পেশাল রিমান্ডে পরে, আগে যে যার বাসায় গিয়ে মুরব্বিদের রাজি করে বিবাহের ব্যাবস্থা করেন।

আম্মুর তো এমনিতেই মিতুকে পছন্দ, দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হলো। শীত এখন আমাদের কাছে বসন্ত। অবিবাহিত পাঠক / পাঠিকাদের বলবো আমাদের তো হয়ে গেল, আপনারাও এই শীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শীতে বসন্ত উপভোগ করুন।

সমাপ্ত।

ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here