সবার উপরে প্রেম পর্ব -০৩

গল্পঃ সবার উপরে প্রেম ( তৃতীয় পর্ব )

একটা চুমু খাবার অপরাধে মিতু যেরকম হয়রানি আর ঘোল খাওয়াচ্ছে তাতে মন থেকে ফিলিংস ঝোলা হয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। হয়রানিতে দানাপানি বন্ধ হবার উপক্রম আমার।

সন্ধ্যায় ছাদে এসে দাড়িয়ে আছি এক কোণে, নির্জনে, আনমনে, এমন সময় শব্দ পেলাম কল আসার কারও ফোনে।

ঘুরে দাড়িয়ে দেখি মিতু এবং ওর ছোটবোন ছাদে এসেছে।

মিতুর ছোটবোন অর্থি আমাকে দেখে বললো,– ভাইয়া আপনি একা একা ছাদে কি করছেন?

আমি বললাম,– চাঁদ দেখতে উঠেছিলাম অর্থি।

: ভাইয়া আজ তো আকাশে চাঁদ নেই!

: অর্থি চাঁদটা আজ আমাদের নিচের ফ্ল্যাটে ছিল এতক্ষণ। এইমাত্র ছাদে এলো।

: ভাইয়া তুমি মিতু আপুর কথা বলতেছো তাই না?

: ওকথা বলেনা অর্থি, প্রশংসা করলেও তোমার বোন রেগে চাঁদ থেকে সূর্য হয়ে রাগের আগুনে আমার ফিলিংস পুড়িয়ে ফ্রাই করে শোধ তোলার ট্রাই করবে।

অর্থি মুখ চেপে খিলখিল করে হাসতে লাগলো।

মিতু এসে আমার সামনে দাড়িয়ে কড়া মেজাজে বললো,– এই যে, আপনার সমস্যা কি?

আমি মিতুর চোখে চোখ রেখে বললাম,– সমস্যার কি শেষ আছে মিতু! ছোট থেকে বড়ো হইলাম সে এক সমস্যা, বড়ো হলাম পরে বেকার থাকা সমস্যা, বেকার থাকলে বিয়ে করার সমস্যা, প্রেম করতে গেলে সমস্যা, মানে সমস্যাই সমস্যা, এখন তুমিই বলো কি করিলে, কোথায় গেলে সমস্যার ভাইরাস থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবো!

: ঠিক আছে বুঝলাম সমস্যার পাটা-পুতায় পিষে আপনার জীবন ভর্তা হয়ে গেছে, কিন্তু আমার পিছনে আদাজল খেয়ে লেগেছেন কেন?

: মিতু, আদা এবং জল দুটোই সাস্থের জন্য উপকারী, তাই তো আদা-জল খেয়ে লেগেছি।

আমার কথা শুনে মিতুর ছোটবোন অর্থি খিলখিল করে হেসে উঠলো।

মিতু আবার বললো,– সবই বুঝলাম, কিন্তু আমার পেছনেই কেন লাগতে হবে?

: আমার দরকার মিতু, এখন আমি মিতুর পেছনে না লেগে নায়িকা পরিমনির পেছনে লাগবো?!

: মিতুকেই আপনার কেন লাগবে শুনি?

: মিতু, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ের সুখের দোলা।

: হইছে হইছে, যেটা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দিন আগে।

: মিতু, তুমি আমার না হলে আমার বাচ্চাদের খেয়াল কে রাখবে বলো, বিয়ে করে বাচ্চা উৎপাদন করি চলো।

অর্থি আবার মুখ চেপে খিলখিল করে হেসে একটু দূরে সরে গিয়ে ফোন টেপায় মন বসালো।

মিতু একেবারে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে আমার সার্টের কলার ধরে বললো,– আপনার অনেক ফাজলামো সহ্য করেছি, এরপর এরকম ছ্যাঁচড়ামি করলে ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি।

আমি মিতুর চোখে চোখ রেখে বললাম,– ভালোবাসা যদি ছ্যাঁচড়ামি হয়, তবে লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, রোমিও-জুলিয়েট এদের ভালোবাসাও ভালোবাসা নয়, এরকম ছ্যাঁচড়ামি। তোমার একটা কথায় আজ শুধু আমি একা নই, অপমানিত হলো ইতিহাসের পাতার সমস্ত প্রেমিক প্রেমিকারা।

দূর থেকে অর্থি বললো,– ভাইয়া এই মামুলি বিষয় নিয়ে তুমি ইতিহাসের পাতা লইয়া যেমনে টানাটানি শুরু করছো তাতে তো ইতিহাসের পাতা ছিড়ে যা-তা হয়ে যাবে। ইতিহাসের পাতায় যারা আছে তাদের ডিস্টার্ব না করে নিজের বিষয় নিজে সামলাও।

অর্থির কথা শুনে মিতু হেসে ফেললো।

আমি মিতুকে বললাম,– এই হাসিটা আমি নিজের করে নিতে চাই, তোমার এই হাসির মায়ায় বাঁধা পড়েছি মিতু।

মিতু বললো,– এসব সত্যি নাকি অভিনয়?

: মিতু সত্যিকারের ভালোবাসা যদি অভিনয়ও মনে হয় তবুও সেটা সত্যি, আর অভিনয়কে ভালোবাসা মনে হলেও সেটা অভিনয়।

: আমাকে এত ভালো লাগার কারণ কী?

: মিতু কাউকে যখন হৃদয়ের গভীর থেকে ভালোলাগে তখন সব ভালোলাগার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় সেই মানুষটা। তাকে ভাবতে ভালোলাগে, নানান বাহানায় তাকে দেখতে ভালোলাগে, মানে সে মানেই পৃথিবীর সমস্ত ভালোলাগা, আর হৃদয় মাঝে বাড়তে থাকা ভালোবাসা।

: আমি যে পুলিশ ইনসপেক্টর আপনি জানেন। তার পরেও এত সাহস আমার পেছনে লাইন মারার।

: জানতাম না, জানলেই বা কি! প্রেম দারোগা / পুলিশ ডরায় না। এরা সবাই প্রেমের কাছে ধরা। আচ্ছা তুমি পুলিশ তার মানে কি তুমি রোবট! মনে ফিলিংস নেই? প্রেম করার ইচ্ছে হয়না? কিসমিস খাইতে মঞ্চায় না?

: কি বলেন এসব?

: আচ্ছা মিতু তোমার ঠোঁট গাল এসব কি প্লাস্টিকের তৈরি?

: মানে?

: মানে ঐ যে বললা তুমি পুলিশ ইন্সপেক্টর, আমি ভাবলাম পুলিশ বলে ভিন্ন ম্যাটারিয়াল দিয়ে তৈরি।

: দেখুন, এসব কথা বলে লাভ নেই, আপনি এ যাবত যা কিছু করেছেন এরকম অন্য কেউ করলে এতদিনে জেল হাজতে ভরে দিতাম, কিন্তু আপনাকে এতদিন কিছু বলিনি কারণ আপনাকেও আমার ভালো লাগে,কিন্তু কিছু করার নেই, আমি অন্য কারো সাথে এঙ্গেজড, মাস দুই পরে আমাদের বিয়ে।

মিতুর মুখে এই কথা শুনে আমার পৃথিবী যেন মুহূর্তেই থমকে গেল, কিছু বলার মতো শক্তি নেই আমার।

মিতু আবার বললো,– আপনাকে সাবধান করে দিলাম, এরপর যেন আর কোনো ভুল না হয়। হলে কিন্তু খবর আছে।

মিতু চলে গেল অর্থিকে নিয়ে, আমার মনের পশ্চাতে আছোলা বাঁশ দিয়ে। এতদিনের সাজানো স্বপ্নটা এভাবে ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে কক্ষনও ভাবিনি। শরীরে যেন একফোঁটা শক্তি অবশিষ্ট নেই। সারারাত বসে রইলাম ছাদে।

চলবে…

ইমতিয়াজ আহমেদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here