সবার উপরে প্রেম পর্ব -০২

গল্পঃ সবার উপরে প্রেম ( দ্বিতীয় পর্ব )

গতকাল মিতুকে দেয়া কিসটা বাঁশে পরিণত করে আমাকে ফেরত দেবার জন্যই হয়তো মিতু সকাল সকাল বাসায় এসে উপস্থিত! এখনও শিওর নই সকালের নাস্তায় মায়ের হাতে বানানো পুরি খাবো নাকি মিতুর হাতে বাঁশ!

এই ভয়ংকর মূহুর্তে আমার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের উপস্থিতি। কপালের ঘাম দেখে তাচ্ছিল্যের সুরে মিতু বললো,– ভয়ে দেখছি কপাল ভিজে গেছে, একটু পরে আবার প্যান্ট ভিজে না যায়।

মিতুর কথা শুনে কিঞ্চিৎ লজ্জার উদয় হইলো মনে, মিতুর কথা একপ্রকার সত্য, সকাল সকাল এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে জানলে বাজার থেকে সল্প মূল্যে প্যাম্পার্স কিনে এনে প্যান্টের নিচে ঠিকই পরে রাখতাম।

আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মিতু ভেতরে প্রবেশ করলো। আমি দরজা বন্ধ করে মিতুর পিছুপিছু গিয়ে আম্মার সামনে দাড়ালাম।

আম্মা মিতুকে দেখে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে, ঠিক যেমন নব্বই দশকের মুভিতে নায়কের নায়িকা নায়কের বাসায় আসলে নায়কের মা নায়িকার দিকে তাকিয়ে থাকতো।

মিতু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জলদি করে আম্মাকে সালাম দিয়ে বললো,– আন্টি আমি মিতু।

আম্মা সেভাবেই মিতুর দিকে তাকিয়ে বেখেয়ালে বলে ফেললো,– কি তু?

মিতু আবার বললো,– আন্টি আমি মিতু, নিচের ফ্ল্যাটে আমরা এলাম দুমাস হলো। মানে আপনাদের নিচের ফ্ল্যাটে থাকি।

আম্মা সেভাবেই ঘোরের মধ্যে বলে ফেললো,– পরীর মতো একটা মেয়ে, নিচের ফ্ল্যাটে থাকবে কেন! উপরের ফ্ল্যাটে এত স্পেস খালি থাকতে।

আম্মা যে অলরেডি কল্পনার জগতে চলে গিয়ে মিতুকে তার পুত্রবধূ বানিয়ে ফেলছে তাতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। আমি অনিচ্ছা সত্ত্বেও জোরে জোরে দুটো বানোয়াট কাশি কাশলাম, কাশির শব্দ আম্মার কানের পর্দায় নক করতেই ডিস্টার্ব ফিল করে কল্পনা আম্মার মস্তিষ্ক ত্যাগ করলো, এবং আম্মা বাস্তবে ব্যাক করলো।

আম্মা মিতুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো,– মাশাআল্লাহ, কি মিষ্টি মেয়ে তুই! তোকে দেখে অদূরে থাকা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এডভান্স দেখে এলাম।

আমি বললাম,– আম্মা ভবিষ্যৎ ভ্রমণ করতে টাইম মেশিন লাগে, ঐ প্রযুক্তি এখনও উদ্ভাবিত হয়নি, গবেষণা চলে কেবল।

চোখ গরম দিয়ে আম্মা আমাকে বললো,– তুই চুপকর বদ, বেশি টাইম টাইম করলে কানের উপ্রে এমন একটা দিমু যে বারো ঘন্টার চলতি টাইম ফরম্যাট চব্বিশ ঘন্টার ফরম্যাটে পরিনত হবে, তারপর বারোটার পরে তেরটা দেখবি, একটার দেখা পেতে আরও বারো ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে।

আম্মুর কথা শুনে মিতুর ঠোঁটে মূহুর্তের জন্য হাসি দৃশ্যমান হয়ে আবার অদৃশ্য হয়ে গেল।

মিতু আম্মুকে বললো,– তা আন্টি অদূর ভবিষ্যতে গিয়ে কি দেখে এলেন শুনি?!

আম্মা বললো,– ঠিক তোর মতো একটি মেয়ে আমার ছেলেবউ, এবং তোদের মিষ্টি মিষ্টি সন্তান, মানে আমার নাতি নাতনী।

আম্মার কথা শুনে লজ্জায় মিতুর গাল লাল হয়ে গেল। এসব শুনে মিতু ভিরমি খাবার আগে এক গ্লাস শরবত এনে খেতে দিলাম।

মিতু এবার আম্মাকে বললো,– আচ্ছা আন্টি, আপনার ছেলে কি করে?

আম্মা বললো,– কি আর করবে, সারাদিন বুক আর গ্রামে ঘোরাঘুরি!

মিতু বললো,– আমি তো প্রায়ই দেখি সে ঢ্যাং ঢ্যাং করে ঘুরে বেড়ায়, বুক পড়ার সময় কই! আর থাকে তো শহরে তাহলে গ্রামে ঘোরাঘুরি কিভাবে সম্ভব।

আম্মা বললো,– আরে পাগলী আমি ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামের কথা বলছি, সারাদিন ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে ঘোরাঘুরি করে!

আম্মার কথা শুনে মিতুর কোমায় যাবার অবস্থা। মিতুর কোমায় যাবার আগে আম্মা কিচেনে চলে গেল।

আমি মিতুকে বললাম,– আম্মু কিন্তু মন খোলা এবং মজা করে কথা বলে। আচ্ছা আমার বানানো শরবত কেমন ছিল মিতু?

ভেংচি কেটে মিতু বললো,– কচু ছিল।

আমি বিদ্যুৎ গতিতে মিতুর দুই গাল ধরে মিতুর ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললাম,– না সবকিছু ঠিক আছে, শুধু চিনির পরিমাণ বেশি মনে হচ্ছে! নাকি ঐটা তোমার ঠোঁটের মধু এখনও শিওর না।

মিতু ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– এটা কি হলো?

: মানে তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা শরবত খেয়ে ট্রাই করলাম মিতু, আমার বানানো শরবত কেমন ছিল।

: ও আচ্ছা, তাই বুঝি?

: একদম একদম, তুমি ভেবনা তোমার ঠোঁটে চুমু খেয়েছি, আসলে তোমার ঠোঁটে লেগে থাকা শরবত টেস্ট করেছি, খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল নিজের বানানো শরবত কেমন ছিল।

: ও আচ্ছা আচ্ছা! একটু অপেক্ষা করো, তোমার শরবত যদি আমি বের না করছি!

: এহ! কি বলো এসব এই শীতে, শরম করে তো।

: আহা! কী শরম রে!

: আমার শরবত বের করার কথা বললা তো, তাই শরম পাইছি।

মিতু ভ্রু কুঁচকে বললো,– পশ্চাতে ডান্ডা চালান দিলে সম্মুখের অস্ত্র নরম হয়ে বস্ত্র ভিজে যাবে। তোমার এবার একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।

মিতুর শুদ্ধ সংস্কৃত ভাষা শুনে কিছুক্ষণের জন্য মিতুকে রবী ঠাকুরের নিকটাত্মীয় বলে মনে হলো। ডান্ডা-ফান্ডা কিসব কয় এ মেয়ে! এত শক্তিশালী বাক্য ছোড়ার উৎস কি? কিন্তু আমি তো আর জানতাম না মিতু লেডি পুলিশ ইন্সপেক্টর!

আমি বললাম,– কি বলো এসব মিতু, একটা নিরীহ নিষ্পাপ যুবককে এসব বলে ভয় দেখানো কিন্তু এক ধরনের অন্যায়!

মিতু রহস্যময় হাসি হেসে বললো,– টের পাবা সোনামণি, রেডি হও।

মিতুর মুখে সোনামণি শুনে নিজেকে দোলনায় দোল খেয়ে ফিডার খাওয়া বাচ্চা ভাবতেই কেমন একটা সিক্রেট শরম ফিল করলাম ইনসাইডে।

কথা শেষ করে মিতু চলে গেল। আমি তো চিন্তায় শেষ, কি এমন হেস্তনেস্ত করবে যার জন্য রেডি হতে বললো!

চলবে…

ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here