সম্পর্ক,পর্ব-৬

সম্পর্ক
অলিন্দ্রিয়া রুহি
|পর্ব ৬|

__________
বিকেল বেলা। বাহিরে মরা রোদ, মৃদু আওয়াজে ফ্যান ঘুরছে। প্রান্ত এক মনে একটা বইয়ের পাতায় চোখ দিয়ে আছে, পুরো রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা। সেই নিস্তব্ধতা ভেঙে গেল মৌনির রিনরিনে গলার স্বরে, ‘প্রেম কী?’ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে গালে হাত ঠেকিয়ে উদাস চোখে তাকাল মৌনি। প্রান্ত ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। বইয়ের পাতা থেকে মনোযোগ সরিয়ে মৌনির দিকে তাকাল। মৌনি ফের প্রশ্ন ছুঁড়ে, ‘বলুন না, প্রেম কী?’
‘এসব কী ধরনের প্রশ্ন মৌনি? চুপচাপ পড়ো।’ ধমকে বলল প্রান্ত।
মৌনির ভ্রু জোড়া সঙ্গে সঙ্গে কুঁচকে গেল, ‘কেন? একটা জিনিস না জানলে সেটা আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে পারি না?’
‘না পারো না। সবকিছু সবার কাছ থেকে জেনে নেওয়া যায় না। আর তুমি এই বয়সে এসে এসব জানো না? মজা করছ?’
‘এখানে মজার কী পেলেন? আমি তো আগেই বলেছি, আমি ভাল মেয়ে। তাই কখনো এসবে জড়ায়নি। জানিও না, জিনিসটা কী। এটা হলে কীরকম অনুভূতি হয়।’
প্রান্তের মেজাজ চড়ে যাচ্ছে, তবু সে নিজেকে সামলে কাঠখোট্টা কণ্ঠে বলল, ‘তোমার এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারব না। বইয়ের কোনো প্রশ্ন থাকলে বলো, উত্তর দিচ্ছি। এখন চুপ থাকো, প্লীজ।’
‘উঁহু… এটার উত্তর দিলেই আমি পড়ব। নইলে এই যে, বই বন্ধ।’ বলতে বলতে মৌনি সত্যি সত্যি বই বন্ধ করে ফেলল। প্রান্ত কিড়মিড় করে বলে, ‘প্রেম একটা ভয়ংকর জিনিস। এটা হলে ভয়ংকর সব অনুভূতি হয়। সেসব অনুভূতির সাথে সাক্ষাৎ করতেও সেরকম মনের জোর লাগে। নইলে হয় না। হয়েছে, শুনেছ? এবার বই খোলো.. খোলো বই।’

উত্তর পেয়ে মৌনি সন্তুষ্ট। সে বই খুলতে খুলতে আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, ‘আপনি কখনো এই অনুভূতির সাক্ষাৎ পেয়েছেন?’
তারপর আঁড়চোখে প্রান্তের দিকে তাকাল। দেখল হতভম্ব একটা মুখ কেমন কটমট করে তাকে দেখছে! মৌনি হেসে দিল।
‘আপনাকে রাগলে তো খুব ভাল দেখায়! এই শুনুন না, আপনি সবসময় রাগ রাগ করে থাকবেন। কেমন?’
প্রান্ত হতচকিত। এই মেয়ের কথাবার্তা মোটেও সুবিধার ঠেকছে না। অনেক সিনেমা, গল্পে সে দেখেছে, শিক্ষক ছাত্রীর প্রেম-বিয়ে হয়! তবে কী এবার এমন কোনো ঘটনার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে সে? প্রান্তের বুকটা আঁতকে উঠল। দম বন্ধ হয়ে আসতে চাচ্ছে। মাথা চক্কর দিচ্ছে৷ প্রান্তের ঘর্মাক্ত মুখটা দেখতেই মৌনির ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেল। সে চিন্তিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করে, ‘কী হলো? আপনি এমন করছেন কেন?’
‘আ..আজ আর পড়াব না। আমি আসছি।’ অনেক কষ্টে বলল প্রান্ত। মৌনির তরফ থেকে কোনো উত্তর শোনার আগেই চলে গেল। মৌনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে কী খুব বেশি বিব্রত করে ফেলেছে প্রান্তকে? এইজন্যে চোরের মতো পালালো?

মৌনির মা মাধুরি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, ‘তোর পড়া হইছে?’
মৌনি বিষন্ন গলায় জবাব দিল, ‘হুঁ।’
‘আমার না এসব একদম ভাল লাগছে না। তোর বাপের কোনো কান্ডজ্ঞান নেই। কোথাকার কোন ছেলে, তাকে চেনে না, জানে না, ঘরে যুবতী মেয়েও আছে! তারপরেও কয়টা সার্টিফিকেটের উপর বিবেচনা করে নিয়ে এসেছে! উফ…’ মাধুরির কণ্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ছে।
মৌনি বই গুলো গোছাতে গোছাতে বলল, ‘তাতে কী? আর উনি তো ভালোই মনে হলো আম্মু। খারাপ কিছু দেখিনি।’
‘তুই উনাকে একদিন দেখেই বুঝে গেছিস যে কেমন?তুই আমার পেটে হইছোস, নাকি আমি তোর পেটে হইছি? এই দুনিয়া কে চিনে বেশি? কে?’
মৌনি ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, ‘অবশ্যই তুমি।’
‘হ্যাঁ, আমি চিনি। জগতে কারা ভাল, কারা খারাপ, বুঝি। মানুষের মুখ দেখলেই সব বুঝা যায়। এইজন্যে আমার এত মাথাব্যথা।’
‘মাথাব্যথার কিছু নেই। কোনো খারাপি দেখলে না করে দিয়ো।’
‘আগে দেখে নেই। এসব পোলাপান অনেক চালাক হয়,বুঝছিস? এরা তলে তলে সব করে, সহজে ধরা যায় না। আচ্ছা শোন, তুই কিন্তু বেশি একটা মিশবি না। এসব ছেলেরা মেয়ে পটাতে উস্তাদ হয়।’
মৌনির বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। তাকে প্রান্ত আর কী পটাবে! সে নিজেই তো প্রান্ত কে পটাতে চাইছে! কিন্তু এই কথাটা মা’কে বলা যাবে না। কক্ষনো না।

‘আম্মু তুমি যাও তো। আমি আবার পড়ব।’ মা’কে ভাগাতে মৌনি বই খুলে পড়ার বাহানা করল। মাধুরি আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলেন, মৌনিকে পড়তে দেখে কিছুক্ষণ কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন, ‘আচ্ছা পড়।’ চলে গেলেন। তিনি চলে যেতেই মৌনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।

_________
আহ্নি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ছেড়া জুতোটা দেখছে। কীভাবে সেলাই করালে জুতোটা আবার সুন্দর ভাবে ইউজ করা যাবে, আর সেলাই টা কেউ বুঝবেও না, তাই ভাবছে। এমন সময়ে রতি রুমে ঢুকল।

‘কী করছ আহ্নি?’ জানতে চাইল রতি।
‘জুতোটা দেখছিলাম ভাবি।’
‘এমা জুতো ছিঁড়ল কী করে?’
‘আর বলো না! সকালে আসার পথে এক অন্ধের সাথে ধাক্কা খেয়েছিলাম। তখনই অর্ধেক ছিঁড়ে গেছিল। বাকি পথ আসতে আসতে পুরোটা গেছে!’ বলেই হতাশার শব্দ করল আহ্নি, মুখ দিয়ে।
‘ওহ, অন্ধ লোকটাও পড়ে গেছিল? ব্যথা পায়নি তো?’ চিন্তিত গলায় জানতে চাইল রতি।
আহ্নি একটু হাসল, ‘আরে, সত্যি সত্যি অন্ধ না। ব্যাটা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে হাটছিল, তাই আমাকে দেখতে পায়নি। আমি সরে যাওয়ার আগেই দিল ধাক্কা।’
রতিও ক্ষীণ হাসল, ‘ও, তাই বলো।’
তারপর চুপ হয়ে রইল। আহ্নি জুতো পর্যবেক্ষণ করা শেষে রতির দিকে তাকায়। দেখল, রতির মুখে অমাবস্যার আঁধার নেমে এসেছে। আহ্নি জিজ্ঞেস করল, ‘কী হইছে? তোমার মন খারাপ লাগছে!’
রতি প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইল, ‘কিছু না। বাদ দাও।’
‘না, কেন বাদ দিব? আজ পর্যন্ত আমি তোমার কাছে কিছু লুকোয়নি, তোমারও লুকানো সাজে না। এখন ঝটপট বলো, কী হইছে?’
রতি ক্ষণকাল চুপ থেকে কণ্ঠ খাঁদে নামিয়ে বলল, ‘তোমার ভাইয়ার কাছে বলছিলাম, আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা। আজ ক’দিন ধরে আমার অনেক সমস্যা হচ্ছে। তোমার ভাইয়া রাজি হইছিল, তখন আম্মা আসলো। আর দুই হাজার টাকা চেয়ে নিয়ে নিল। বলল, উনার নাকি অনেক কোমরে ব্যথা!’
আহ্নি অবাক গলায় বলল, ‘আম্মার আবার কবে থেকে কোমরে ব্যথা হলো!’
‘কী জানি!’ রতির মন আরও খারাপ হয়ে গেল। সে জানে, তার শ্বাশুড়ি বাহানা করে ওই টাকা নিয়েছে। কী করতে কে জানে! নিতো নিতো, দুইটা দিন পরেই নিতো! আজকে রতি বলল, আর আজকেই উনার এসে টাকা নিতে হলো… উহঃ!

‘ভাইয়ার কাছে আর টাকা নেই?’
‘নাহ।’ ছোট্ট করে জবাব দিল রতি।
‘আজকে বাবার ব্যবসা টা থাকলেও অনেক ভাল হতো।’ বলেই আহ্নি চুপ করে গেল।

নাছির মাহতাব কাপড়ের ব্যবসা করতেন। উনার নিজের শো-রুম ছিল। আবার আরাফও চাকরি করতো। ওদের চকচকে থাকা দেখে সমাজের সবাই ভাবতো, ওরা বুঝি খুব উচ্চবিত্ত৷ অনেক ধন-সম্পদের মালিক। এই পরিবারে বউ হয়ে এসে রতি বুঝল, ওরা অতটাও বড়লোক না। মধ্যবিত্ত, তবে উচ্চ-মধ্যবিত্ত। যাদের থাকা-খাওয়ার বাইরেও হাজারটা ইচ্ছা অনায়াসে পূরণ করার সামর্থ্য থাকে। লিলি বেগম কখনোই সংসারের দিকে মন দেননি। কীভাবে দু পয়সা জমা থাকবে, ভবিষ্যতের জন্য কিছু রাখা, দুই মেয়ের বিয়ের জন্য কিছু জমানো, ইত্যাদি কিছুই উনি করেননি। সবসময় আয়েশী ভাবে চলেছেন। বিলাসিতা করেছেন। রতির বিয়ের চার মাসের মাথায় নাছির মাহতাব ব্যবসায় লস খেয়ে বসলেন, একদম আচানক! সেই লসের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই উনার দোকানে ইয়াবার প্যাকেট পাওয়া গেল। এই প্যাকেট এনেছিল তারই এক কর্মচারী কিন্তু এই দোষে সে নিজেও দোষী সাবস্ত হলো। জেল হয়, জরিমানা হয়। জরিমানা দিতে গিয়ে পুরো দোকান টাই বেঁচতে হয়। জেল থেকে আনতে গিয়ে গ্রামের কিছু সম্পত্তিও বিক্রি করতে হয়েছে। এরপর থেকেই নাছির মাহতাব থমকে গেছেন। লিলি বেগমও ধানী লঙ্কার মতো জ্বলে উঠেছেন। সবসময় ঘেঁঘো বাঘিনী একটা!নাছির মাহতাব কে একদম পাত্তা দেন না উনি। সবসময় ছোটো করে চলেন। বড় টা তো আগে থেকেই নেশাখোর, কাজকর্ম কিচ্ছু করে না।শেষে আরাফের ঘাড়ে চাপল সব দায়িত্ব! ভাগ্যিস বাড়িটা লিলি বেগমের নামে আছে, নইলে ঘরে যতটুকু সচ্ছলতা আছে, তাও থাকত না।

নীরবতা ভেঙে আহ্নি মৃদু রাগ নিয়ে বলে, ‘বাড়িতে যেটুকুন জায়গা পরিশিষ্ট ছিল, ওটাও বিক্রি করে দিল নিজের বড় মেয়ের জন্য! ধুমধাম করে বিয়ে দিতে হবে কিনা!’
রতি বলল, ‘তোমার বিয়ের সময়েও ধুমধাম করেই দিবে আহ্নি।’
‘ধুর, আমি বিয়েই করব না। বিয়ে মানেই প্যারা। দেখো না, ভাইয়া কেমন করে তোমার সাথে? একদম পরাধীন হয়ে যাওয়া লাগে!’
রতি মিনমিনিয়ে বলল, ‘সবাই কিন্তু তোমার ভাইয়া হয় না আহ্নি।’ পরমুহূর্তেই চুপ হয়ে গেল। রতি নিচু কণ্ঠে বললেও আহ্নি স্পষ্ট শুনতে পেল সেটা। একটা দীর্ঘশ্বাস বায়ুতে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াল। ব্যাগ থেকে কিছু টাকা বের করল, তারপর রতির দিকে বাড়িয়ে ধরল সেটা, ‘এখানে ২০০ টাকার মতো আছে ভাবি। ডাক্তার দেখানো হবে না, তবে ফার্মেসীতে কথা বলে আপাতত’র জন্য কিছু ঔষধ আনতে পারবা। নাও ভাবি।’

রতির চোখে জল ছাপায়। কষ্টে না, আহ্নির ভালবাসা দেখে, খুশিতে। সে এক জীবনে কিছুই করতে পারেনি এটা ঠিক নয়, সে একজন আপনের চেয়েও আপন মানুষের সন্ধান পেয়েছে! এই বা কম কীসে?
আহ্নি বিচলিত কণ্ঠে বলল, ‘আরে, আরে, কাঁদছ কেন?’
আঙুলের ডগা দিয়ে কার্নিশে জমা পানিটুকু রতি মুছে নিতে নিতে বলল, ‘উঁহু, কাঁদছি না তো।’
আহ্নি স্তব্ধ হয়ে রতিকে ক্ষণকাল দেখল। তারপর আচমকাই জড়িয়ে ধরল, গাঢ় স্পর্শে রতির বুকে জমাট বাধা ব্যথাগুলো নোনাজল রূপে চোখ ভেঙে বেরিয়ে আসতে শুরু করে। রতি কাঁদছে, হু হু করে কাঁদছে। মনের সমস্ত কষ্ট মেটাতে কাঁদছে। আহ্নি কিছু বলছে না। চুপচাপ রতিকে জড়িয়ে ধরে আছে, দৃঢ় ভাবে। কাঁদুক মেয়েটা, কাঁদলে মন হালকা হয়।

নোটস গুলো গুছিয়ে রাখে আহ্নি। দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখল, রাত নয়টার ঘরে ঘড়ির কাটা। পড়তে বসেছিল সাতটায়, অনেকক্ষণ পড়ল! রতি যাওয়ার পর পরই আহ্নি পড়তে বসেছিল। এখন খুব তৃষ্ণা পাচ্ছে তার। মনে হচ্ছে নদীর সব জল গলায় ঢেলে দিলেও এই তৃষ্ণা মিটবে না। আহ্নি অবাক হয় একটু, এতো তৃষ্ণা কেন পাচ্ছে ওর? ভাবনা থামিয়ে ডাইনিং এ যায় আহ্নি। যেখানে ভেবেছিল পুরো এক নদীর পানি লাগবে এই তৃষ্ণা মেটাতে, সেখানে মাত্র হাফ গ্লাস জলেই তৃষ্ণা মিটে গেল! আহ্নি আবার অবাক হয়। ইদানীং সে কেমন উলোটপালোট আচরণ করছে, অদ্ভুত!

আহ্নির পরে দুপুরের ঘর। আহ্নি নিজের ঘরে ঢুকার সময় একটা চিকন কণ্ঠ শুনতে পেল। মুহূর্তেই আহ্নির মস্তিষ্ক সচল হয়ে উঠে। সে পা টিপে টিপে দুপুরের ঘরের দরজার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বুক ধুকপুক করছে তার। মনে হচ্ছে, অনাকাঙ্ক্ষিত কিছুর দেখা পাবে সে! খুব সাবধানে রুমের ভেতর উঁকি দিতেই চোখে পড়ে, লিলি বেগম দুপুরের হাতে টাকা তুলে দিচ্ছে। দুপুর দ্রুত টাকাটা নিয়ে বালিশের তলায় রাখল। এরপর লিলি বেগম কে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘আম্মু, কী বলে যে তোমায় ধন্যবাদ দিব না! উফ! কত্তবড় একটা চিন্তা মাথা থেকে নামল আমার।’
লিলি বেগম দুপুরের এসব আহ্লাদীপনা একদমই সহ্য করতে পারছেন না। তিনি দুপুরকে ঠেলে সরিয়ে নিচু, কিন্তু কাঠখোট্টা গলায় বললেন, ‘চাঁদ কে কালকেই এই টাকা দিয়ে দিবি আর বলবি যেন কোনো ছবি টবি কারো কাছে পাচার না হয়। আর শোন,এটাই কিন্তু শেষ বার। এরপর থেকে আর যদি কোনো আকাম ঘটাস, আমি মোটেও সামাল দিব না। কত অভিনয় করে এই টাকা আনতে হলো আরাফের থেকে জানিস?’

আহ্নি যা বুঝার বুঝে ফেলল। আর কোনো কথা শোনার প্রয়োজন তার নেই। সে দ্রুত নিজের ঘরে চলে এলো। দরজা আঁটকে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে আবিরকে ইমোতে ফোন লাগাল। আহ্নি ঘামছে, তার ঘরে এত বড় জঘন্য নর্দমার কীট লুকিয়ে আছে, সে বিশ্বাসই করতে পারছে না…
আবির ফোন ধরতেই আহ্নি এক নাগাড়ে সব বলে দিল। যা যা শুনেছে, নিজের যা যা ধারণা সব… আবির চুপ করে শুনল। সব বলা শেষে আহ্নি থামে, আবির বলল, ‘আমার সন্দেহই তাহলে ঠিক! আমার বন্ধু রজব ও এই কথাই বলছে।’
‘রজব কে?’
‘আছে এক ফ্রেন্ড। তোমার বোনের উপর সন্দেহ হচ্ছিল দেখে রজবকে বলছিলাম দুপুরকে সবসময় চোখে চোখে রাখতে। দুপুর আমাকে মিথ্যে বলে সেদিন গোলাপ গ্রামে গেছে ওই ছেলের সাথে! আর সবসময় রাস্তাঘাটে হাসি তামাশা তো আছেই।’
‘তাহলে আপনি এর আগে কেন আপাকে শাসন করলেন না?’
‘আমি আসলে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না রজবের কথা আহ্নি। দুপুর… দুপুরকে আমি খুব ভালবাসি কীনা! আমি দোটানায় ছিলাম! কাকে রেখে কাকে বিশ্বাস করব? তবে এখন বুঝতে পারছি, এই অসুস্থ সম্পর্ক থেকে আমার মুক্তি চাই। সত্যি মুক্তি চাই। আর পারি না আমি। ভালবাসা আছে, তাই বলে তার সব অন্যায় সয়ে তার সঙ্গেই থাকতে হবে? আমার তো মনে হয়, এরকম অসুস্থ ভালবাসার মায়াজালে পা ফেলার চাইতে আজীবন চিরকুমার থাকাও উত্তম!’ আবির ক্ষীণ হাসল। তার বুক ভেঙে গুড়িয়ে যাচ্ছে!
আহ্নি মন খারাপ করে বলল, ‘এরকম মনের জোর আমার ভাবির হয় না কেন আবির ভাই!’
আবির কিছু একটা ভাবল। তারপর বলল, ‘আমি চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই আসছি। পারলে এর আগেই আসব। তারপর এই সব যন্ত্রণার ফয়সালা হবে। তুমি চিন্তা করো না।’
‘আপনি আমাকে কখনো ভুলে যাবেন না তো আবির ভাই?’
‘না বোকা মেয়ে। তোমার আপার সাথে আমার সম্পর্ক থাকুক বা না থাকুক, তোমার সাথে আমার সবসময়ই সম্পর্ক থাকবে।’
আবিরের উত্তরে আহ্নি খুশি হল। ফোন রেখে দিল। তারপর জানালার পাশ ঘেঁষে বসল। আকাশে থালার মতো পূর্ণ চাঁদ,আজ কী পূর্নিমা? পূর্নিমা হোক বা না হোক, আজকের রাতটা আহ্নির কাছে ভীষণ ভাল লাগছে।

চলবে…
*কপি করা নিষেধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here