সাইকো_লাভার পর্বঃ১৭

সাইকো_লাভার পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃসাদিয়া_সিদ্দিক_মিম

আদির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বাইরে চলে এলাম,বাইরে এসে দেখি বাগানের এক সাইডে আদির একজন গার্ড একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।এত রাতে এখানে এই মেয়েটা এখানে কী করছে,,,মেয়েটা গার্ডের হাতে কিছু একটা দিলো মনে হচ্ছে।মেয়েটার মুখটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না,,,আমি কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলাম,,,আমি ওদের কাছে যেতে যেতে মেয়েটা চলে গেছে।

দিয়াঃ মেয়েটা কে ছিল,,,এত রাতে এখানে কী করছিল,,,আর আপনার হাতে ওটা কী?

গার্ডঃ আআআসলে ম্যাম ওওটা আআমার ছোট বোন ছিল,,,খখখাবার নিয়ে এসেছে আমার জন্য।

দিয়াঃ ঠিক আছে,,,,যান এখান থেকে।

গার্ড চলে যায়,,,কিন্তু গার্ডের কথাটা আমার বিশ্বাস হয় নি।নিশ্চয়ই কোন গাপলা আছে,,,আর মেয়েটার চাল চলনও কেমন একটা চেনা চেনা লাগছিল।এই গার্ডের উপর নজর রাখতে হবে।

এসব চিন্তা ভাবনা করতে করতে ভিতরে চলে আসি,,,আদির ঘরে গিয়ে দেখি আদি বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছে আর ঐ গার্ড আদির জন্য খাবার নিয়ে এসেছে।কিন্তু খাবার ত মৃদুল আনতে গেলো,,,সে ত এখনও ফিরে নি।

দিয়াঃ আপনি এখানে কী করছেন?আর খাবার ত মৃদুল আনতে গেছে উনি ত এখনও আসে নি।(সন্দেহ করে)

গার্ডঃ আআআসলে ম্যাম,স্যারের ত শরীর ভালো না ঔষধ খেতে হবে,আমার ছোট বোন আমার জন্য খাবার দিয়ে গেছে আর মৃদুল দেরি করছিল তাই ভাবলাম আমার খাবারটা স্যারকে খাইয়ে ঔষধ খাওয়াই,,,ততাই।

দিয়াঃ আচ্ছা আপনি আসুন আমি খাইয়ে দিব উনাকে।

গার্ডঃ ম্যাম আআআপনি কেন কষ্ট করতে যাবেন,,,আমি আছি ত আমি খাইয়ে দিব।(ভয় পেয়ে)

আদিঃ তুমি যাও এখান থেকে,,,আজ আমার বউ আমাকে খাইয়ে দিবে।

গার্ডঃ ককিন্তু,,,

আদিঃ আহ্ এত কথা না বলে যাও এখান থেকে।

গার্ড কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে যায়,,,আবার কী মনে করে গার্ডটা পিছন ফিরে একবার তাকায়,,,আমার নজর তখনও তার উপর।গার্ডটা বের হওয়ার সাথে সাথে আমি খাবারগুলো নিয়ে বাইরে ফেলে দেই।আদি অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আদিঃ এটা কী করলে তুমি,,,,খাবার গুলো ফেললে কেন?

দিয়াঃ আমার ইচ্ছে করছে তাই ফেলেছি,,,তাতে আপনার কী?

আদিঃ আমার কী?দাঁড়াও বুঝাচ্ছি মজা।

বলেই আদি বিছানা থেকে নেমে আমার দিকে এগিয়ে আসছে,,,এই ছেলের মতিগতি ভালো না,,দরজা খোলা আছে তাড়াতাড়ি এখান থেকে পালা দিয়া,,,আদি আমার কাছে আসার আগেই দিলাম এক দৌড় কিন্তু শেষ রক্ষা আর হল না আদি পিছন থেকে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেছে।

আদিঃ খাবার গুলো ফেললে কেন?ছেলেটার খাবার আমাকে দিয়ে গেলো। আমি অসুস্থ,খেয়ে যাতে ঔষধ খেতে পারি তার জন্য।ছেলেটা আমাকে কত ভালবেসে খাবারগুলো দিলো আর তুমি খাবার গুলো ফেলে দিলে।

দিয়াঃ ভালবেসে না ঘৃনা করে সেটা আপনি একটু পরেই বুঝতে পারবেন,,,এখন ছাড়ুন আমাকে।

আদিঃ না ছাড়ব না,,,আগে বলো খাবার গুলো কেন ফেলেছো,,,আমি জানি তুমি অকারনে কিছু করো না।

দিয়াঃ ছেলেটাকে আমার সন্দেহ হচ্ছে তাই ফেলেছি খাবার গুলো।

আদিঃ কেন?

দিয়াঃ ছেলেটা কথা বলার সময় তোতলাচ্ছিল,,,আর আমি ছেলেটাকে প্রশ্ন করার পর ভয়ও পেয়েছিল,,,তার জন্য আমার সন্দেহ হয়েছে,,,এবার ছাড়ুন।

আদিঃ তুমি কী বলতে চাইছো ছেলেটা খাবারে কিছু মিশিয়েছে?

দিয়াঃ হে ঠিক তাই,,,আর সেটা প্রমান করার জন্য খাবার গুলো কোন পশু/পাখিকে খাওয়ালেই হবে।

আদিঃ কিন্তু ছেলেটা এমন কেন করবে?

দিয়াঃ আপনার মেয়ে বিয়ে করার জন্য,,,আশ্চর্য লোক ত মিয়া আপনি,,,কেন এমন করব সেটা আপনি খুঁজেন কিন্তু এখন ছাড়েন আমাকে।(বিরক্ত হয়ে)

আদিঃ আচ্ছা যাও ছেড়ে দিলাম,,,আর তুমি একটু বসো আমি আসছি।

দিয়াঃ দাঁড়ান,,,আপনি এখন ছেলেটাকে কিছু বলবেন না,,,কিছু বললে ছেলেটা সতর্ক হয়ে যাবে।তাই যা করার সাবধানে ছেলেটার আড়ালে করতে হবে।এর পিছনে আসল কার্লপ্রিটকে খুঁজে বের করতে হবে।

আদিঃ বাহ্ আমার বউ ত দেখি গোয়েন্দা গিন্নি হয়ে যাচ্ছে।কত বুদ্ধি গো মাথায়,,,এত বুদ্ধি রাখো কই তুমি হুম।(মজা করে)

দিয়াঃ উফফ,,,আচ্ছা বসুন আপনি আমি গিয়ে দেখি খাবার এসেছে কী না।

আদিঃ তোমার যেতে হবে না,,,খাবার ঘরেই পৌঁছে যাবে তুমি এখন বসো এখানটায়।মাথার ব্যান্ডেজটাও ত পাল্টাও নি দেখছি।

কথাটা বলেই আদি আমাকে খাটে বসিয়ে মাথায় নতুন ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে,,,আমি আদির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,,,চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে,,,কত রাত যে চোখ দুটো ঘুমাতে পারে নি তারই প্রমান এই চোখের নিচে কালো দাগ,,,এই ছেলেটা ত আমাকে ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারে না,,,আর সেই ছেলেটার থেকেই ত আমি চার মাস দূরে ছিলাম।

আদিঃ এভাবে কী দেখো হুম,,,নজর লাগাইয়ো না কিন্তু,,,নজর লাগালে আমার বউ আমাকে আর ভালবাসবে না,,,এমনিতেই আমার বউ আমাকে ভালবাসে না।

আদির কথায় আমার হুস আসে,,,,তাই আদির থেকে সরে বসলাম।

দিয়াঃ আমি মোটেও আপনাকে দেখছিলাম,,,

এটুকু বলেই থেমে গেলাম,,,কারন একটু আগের ঘটনা আমি রিপিট করতে চাইছি না,,,মিথ্যা বললেই আবার তবারক পড়বে,,,না বাবা রিক্স নিয়ে কাজ নেই।

আদিঃ তারপর কী হুম,,,বলো তারপর কী?(দুষ্টু হেসে)

দিয়াঃ খখখাবার নিয়ে আসি আমি।

বলেই উঠে দাঁড়ালাম,,,আদির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আদি আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পেটে মুখ খুঁজে নেয়,,,আমার সারা শরীর কেঁপে উঠে,,,হঠাৎ হঠাৎ এমন আক্রমণ করে না,,,মনে হচ্ছে হার্টটা বের হয়ে অন্য কোথাও ট্রান্সফার হয়ে যাবে।

আদিঃ জান,,,কতদিন ধরে তুমি আমায় ভালবেসে ডাকো না,,,খালি আপনি আপনি করো,,,আমি কী এখন তোমার এতটাই দূরে চলে গেছি বলো,,,ভালবেসে কপালে চুমুও ত একে দেও না,,,একটুও ভালবাসো না এখন আমাকে,,,খালি দূরে দূরে থাকো আমার থেকে,,,আগে ত আমার সাথে খুব দুষ্টুমি করতা,,,এখন ত সেসব করো না।আগের দিয়াকে চাই আমি,,,আমার আগের দিয়াকে ফিরিয়ে দাও না তুমি,,,আমি যে আর পারছি না জান,,,তোমার ঘৃণা শয্য করার ক্ষমতা আমাকে দেয় নি আল্লাহ।কবেই মরে যেতাম কিন্তু পাপার জন্য পারি নি,,,আর আমি যদি মরে যাই তবে তোমাকে ভালবাসবে কে,,,অন্য কেউ তোমাকে ভালবাসবে সেটা আমি মরে গেলেও মানতে পারব না।তুমি আমার শুধু আমার।বেঁচে থাকলেও তুমি আমার,,,মরে গেলেও তুমি আমার।(কেঁদে কেঁদে বলল)

আদির প্রতিটা কথা আমার বুকে তীরের মত লাগছে,,,আমার চোখ ছলছল করছে,,,আমি কত কষ্ট দিচ্ছি আদিকে,,,তারপরও আদি আমাকেই চাইছে,,,আমার ভালবাসা চাইছে,,,আমি কী করব খোদা আমাকে বলে দেও,,,আর কত আমার ভালবাসার মানুষটাকে কষ্ট দিব আমি,,,আমাকে সাহায্য করো আল্লা,,,আমি যাতে তাড়াতাড়ি এই রহস্য ভেদ করে আদির সেই আগের দিয়া হতে পারি।আমার আদির সব কষ্ট যাতে দূর করতে পারি।আদি এবার মুখ তুলে আমার দিকে তাকায়,,,

আদিঃ দেখো তোমার আদি কাঁদছে,,,আর তুমি আমার চোখের পানি টুকুও মুছে দিচ্ছো না,,,আর আগে আমি একটু মন খারাপ করে থাকলেই কীভাবে মন ভালো করবে সেটা নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়তে,,,আর এখন তুমি আমার কান্না করা দেখে মজা নিচ্ছো।

আদি কথাগুলো খুব রেগে বলল,,,আমাকে ছেড়ে আদি এবার ঘরের জিনিসপত্র ভাঙ্গতে শুরু করল।

আদিঃ তুই কেন আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছিস,,,আমি বারবার বলছি কাউকে খুন করি নি আমি,,,তারপরও তুই আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিস না কেন,,,তকে ছাড়া যে আমি থাকতে পারি না তারপরও তুই আমাকে চারটা মাস দূরে রাখছত,,,সেই চারটা মাস আমি কীভাবে কাটিয়েছি দেখ চোখ খুলে দেখ।(চিৎকার করে)

বলেই আদি তার গা থেকে শার্টটা খুলে ফেলল,,,আমি এক পলক সেদিকে তাকিয়ে চোখ জোরা বন্ধ করে নেই।

আদিঃ চোখ বন্ধ করলি কেন?চোখ খুল,,,দেখ আমার সারা গায়ে শুধু তোর নাম লেখা,,,চারটা মাস নিজেকে এভাবে কষ্ট দিয়েছি আমি,,,সারাদিন তকে মনে করে কাঁদতাম কিন্তু যখন তর সাথে কথা বলতে মন চাইত,তকে ছুঁতে মন চাইত পারতাম না,,,তখন এভাবে নিজেকে শাস্তি দিয়েছি,,,যে কেন আমি ঐদিন ওখানে ছিলাম,,,এই সব আঘাতও ততটা কষ্টকর নয় যতটা কষ্ট তকে ছেড়ে থাকা,,,এর থেকে হাজারগুন বেশি কষ্ট তকে ছেড়ে থাকা।সেই কষ্ট আমি চার মাস ভোগ করেছি।কিন্তু এবার তকে আর আমি আমার থেকে দূরে যেতে দিব না।

আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে,,,নিজের শরীরটাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে,,,আমি আদির ভালোর জন্য এতদিন আদির থেকে দূরে ছিলাম কিন্তু এখন আমার দূরে থাকাই আমার আদিকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।এই ছেলেটা যে একটা সাইকো,,,আমার সাইকো আদি,,,আমার #সাইকো_লাভার এটা,,,না আমি আর আমার আদিকে কষ্ট পেতে দিব না।আমি আদির কাছে ফিরে যাব,,,আমি আদিকে সবটা বলব আমি আদিকে অবিশ্বাস করি না,,,এখনও আগের মতই বিশ্বাস করি,,,আমি আদিকে ঘৃনা করি না,,,এখনও আগের মতই ভালবাসি।

এসব ভেবে দৌড়ে আদিকে জড়িয়ে ধরলাম,,,আদিকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছি,,,,আদিও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।

#চলবে…

(গতকাল কিছু সমস্যার কারনে গল্প দিতে পারি নি,,,তাই এখন দিয়ে দিলাম,,,সন্ধ্যা বেলা আরেকটা পার্ট দিব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here