সাইকো_লাভার পর্বঃ১৯

সাইকো_লাভার পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃসাদিয়া_সিদ্দিক_মিম

হসপিটালের একটা বেঞ্চে বসে আছি আদির পাশে,,,আদির হাতে ড্রেসিং করছে,,,পঙ্কজ কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,,,মৃদুলকে কেবিনে ডাক্তাররা দেখছে।আদির ড্রেসিং করা হয়ে গেছে।

দিয়াঃ আদি তোমার ফোনটা একটু দেও।

আদিঃ কেন? কী করবে ফোন দিয়ে এখন?

দিয়াঃ পুলিশে ইনফর্ম করব,,,এটা পুলিশ কেস আর যে বা যারা তোমাদের উপর হামলা করেছে সে যে ২য় বার হামলা করবে না তারও কোন গ্যারান্টি নেই,,,তাই পুলিশে ইনফর্ম করে এখানে পাহারার ব্যাবস্থা করতে হবে।

আদিঃ হুম ঠিকই বলেছো,,,নেও ফোন।

আমি আদির থেকে ফোনটা নিয়ে রায়ান ভাইয়াকে ফোন লাগাই,,,কিন্তু রায়ান ভাইয়া ফোন তুলছে না,,,বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর রায়ান ভাইয়া ফোনটা তুলে,,,তারপর রায়ান ভাইয়াকে সবটা বললে উনি জানায় উনি আসছে সাথে পুলিশ নিয়ে।ফোনটা রেখে পিছন ফিরে দেখি আদি দাড়িয়ে আছে,,,আদির চোখে রাগ স্পষ্ট।

আদিঃ তুমি ত বলছিলে পুলিশ কে ফোন দিবে কিন্তু তুমি রায়ানকে কল দিলে কেন?(রেগে)

দিয়াঃ রায়ান ভাইয়া একজন সিআইডি অফিসার,,,উনি আমাকে আগেও সাহায্য করেছে,,,তাই উনাকেই ফোন দিলাম,,,উনি পুলিশ নিয়ে আসছে।

আদিঃ নেক্সট টাইম যাতে রায়ানের সাথে কথা বলতে না দেখি আমি।

দিয়াঃ কেন গো,,,জ্বলে নাকি?(বাঁকা হেসে)

আদিঃ হে জ্বলে,,,এখানটায় জ্বলে আমার(বুকের বামপাশে হাত দিয়ে),,,রায়ানের সাথে তোমাকে দেখলে আমি শয্য করতে পারি না,,,আর আমি তোমার হাসবেন্ড আমার কথা শুনে চলতে হবে তোমাকে,,,আমি যাতে রায়ানের সাথে কথা বলতে আর না দেখি তোমাকে।

দিয়াঃ আদি সবসময় এভাবে ডেস্পারেট হলে চলে না,,,বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করো তুমি,,,এই মুহূর্তে আমদের এমন কাউকে দরকার যাকে বিশ্বাস করা যায় কারন আশেপাশে তোমার ঐ গার্ড পঙ্কজের মত লোকের অভাব নেই,,,আর রায়ান ভাইয়া এর আগে আমাকে অনেক ভাবে সাহায্য করেছে যে তুমি খুনী নও তার প্রমান দিতে,,,তাই আমার বিশ্বাস এই মুহূর্তে রায়ান ভাইয়াই সঠিক কাজটার জন্য,,,আর নিজে ঠিক থাকলে সব ঠিক,,,আমি ঠিক থাকলে সব ঠিক থাকবে।আর তুমি ত আমাকে বিশ্বাস করো,,,ত আমার উপর ভরসা রাখো তুমি কষ্ট পাও এমন কিছুই করব না আমি।

আদিঃ ঠিক আছে।(গাল ফুলিয়ে)

দিয়াঃ অরে আমার #সাইকো_লাভার গো,,,গাল এভাবে ফুলিয়ে রেখো না প্লিজ,,,ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি।(আদির গাল টেনে হেসে)

আদিঃ ছাড়ো ত ভাল্লাগে না।

দিয়াঃ সত্যি সত্যি ছেড়ে দিয়ে চলে যাব কিন্তু।(মজা করে)

কথাটা বলতে দেরি কিন্তু আমার গালে থাপ্পড় পড়তে দেরি না,,,আমি গালে হাত দিয়ে আদির দিকে তাকিয়ে আছি।

আদিঃ মাইর খাস না কয়দিন ধরে,,,তাই খুব বাড় বেড়েছিস তুই,,,একবার ছেড়ে গিয়ে মন ভরে নি তোর,,,বল মন ভরে নি তোর,,,যে আবার ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছিস।(রেগে চিৎকার করে)

দিয়া মনে মনেঃ শালা হারামি,,,তাড়াতাড়ি বুড়া হবি তুই,,,তোর দাঁতগুলো সব অকালে পড়ব,,,মজা করে একটা কথা বলেও শান্তি নাই,,,সাথে সাথে প্রসাদ দিয়ে দিছে।

আমি সেখান থেকে চুপচাপ এসে পড়লাম,,,ওখানে থাকলে আবার প্রসাদ দিতে পারে,,,আমার গাল পঁচে যাবে,,,এই কলার কাদির হাতের থাপ্পড় খেতে খেতে,,,কেন যে এই খাটাশটারে ভালবাসলাম।

আদির কাছ থেকে এসে পড়লাম অপারেশন থিয়েটারের ওখানে,,,চারদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যতক্ষণ না পুলিশ আসে,,,কারন পঙ্কজের লাইফ রিক্স আছে।
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সেখানে আদি আসে।আদির দিকে একবার তাকিয়ে মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে নিলাম আমি।আদি মুচকি হেঁসে আমাকে কয়েকবার ডাকল কিন্তু আমি শুনেও না শোনার ভান করলাম,,,এই মুহূর্তে এই কলার কাদি খাটাশটার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নাই।ইস্ গালটা জ্বলতাছে এখনও।

আদিঃ এই যে মিসেস পঁচা ডিম।

আদির বলা কথাটা কানে যেতেই সাথে সাথে মেজাজ গরম হয়ে গেলো।তাই রেগে বললাম,,,

দিয়াঃ কী বললেন আপনি,,,পঁচা ডিম আমি হে,,,আপনি কী হে,,,আপনি ত একটা পঁচা কলার কাদি।

আদিঃ ককককী,,,তুমি আমার এত সুন্দর নামটাকে এত বাজে একটা নাম দিলা।(অবাক হয়ে)

দিয়াঃ এহহ,,,তুমি আমার এত সুন্দর নামটাকে এত বাজে একটা নাম দিলা(ব্যাঙ্গ করে),,,,নিজেরটা ষোল আনা পুরাই এক আনাও বাদ দিবে না,,,আর আমার বেলা গোল্লা তাই না।

আদি আর কিছু বলবে কিন্তু তার আগেই সেখানে একজন নার্স আসে।

নার্সঃ আপনারা ঝগড়া করতে হলে বাইরে গিয়ে করুন,,,এটা হসপিটাল রুগিদের সমস্যা হচ্ছে।

দিয়াঃ ওপস,,,সরি,সরি,,,আমরা আর ঝগড়া করব না,,,আপনি যান।

নার্স চলে যায়,,,আদি মিটমিটিয়ে হাসছে,,,আমি আদিকে আর কিছু বললাম না,,,কিন্তু হঠাৎ করেই মনে হল যে আদিদের এ অবস্থা কে করল,,,আর এসব কীভাবে হল?তাই সাথে সাথে আদিকে জিজ্ঞেস করলাম,,,

দিয়াঃ আদি তখন কী হয়েছিল,,,আর পঙ্কজকে কে গুলি করেছে,,,আর তোমদেরই বা এ অবস্থা কে করল?

আদিঃ শোন তাহলে,,,তোমার কাছ থেকে এসে দেখি পঙ্কজকে একজন সুট করে পালাচ্ছে,,,আর তার পিছনে মৃদুল যাচ্ছে সেটা দেখে আমিও ওদের সাথে যাই,,,একটা পর্যায়ে মৃদুল তাকে ধরে ফেলে আর সে মৃদুলের পেটে চাকু দিয়ে আঘাত করে আর মৃদুলের হাত থেকে ছাড়িয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আমি ধরি তার মুখটা উর্না দিয়ে বাঁধা ছিল আমি টান দিয়ে উর্নাটা টান দিয়ে মুখ থেকে খুলে ফেলি,,,আর সাথে সাথে মেয়েটা আমার হাতে চাকু বসিয়ে দেয় আর আমার হাত থেকেও ছুটে যায় মেয়েটা,,,মেয়েটা ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথেই মুখে সিটি বাজায় আর একটা গাড়ি এসে মেয়েটাকে নিয়ে চলে যায়,,,তার একটু পরেই তুমি আসো।

দিয়াঃ তুমি মেয়েটার মুখ দেখেছো।(উত্তেজিত হয়ে)

আদিঃ হে দেখেছি আমি,,,কিন্তু মেয়েটাকে আগে কখনও দেখি নি আমি।

দিয়াঃ মেয়েটা দেখতে কেমন ছিল?

আদিঃ লম্বায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির মত হবে,,,গাঁয়ের রঙ শ্যামলা,,,চুল গুলো কাঁধ অবধি স্টাইল করে কাটা,,,আর নাকের ডগায় একটা কাটা দাগ আছে।

আদির কথা শুনে আমার একজনের কথাই মনে হল কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব,,,

দিয়াঃ আদি আমার ফোনটা দেও।(উত্তেজিত হয়ে)

আদিঃ তোমার ফোন দিয়ে আবার কী ঐ রায়ানকে কল দিবা হুম।(এক ভ্রু উঁচু করে)

দিয়াঃ আদি আমি এখন একটুও মজা করার মুডে নেই,,,তাড়াতাড়ি আমার ফোনটা দেও।(রেগে)

আদিঃ ওকে,ওকে দিচ্ছি,,,রাগ কেন করো?

বলেই আদি তার পকেট থেকে আমার ফোনটা দিলো,আমি ফোনটা হাতে নিয়েই গ্যালারিতে একজনের ছবি খুঁজছি,,,সারা গ্যালারি তন্নতন্ন করে খুঁজেও তার ছবি পেলাম না,,,এখন কী করি,,,হে ফেসবুকে সার্চ করে দেখি পাই কী না।

আদিঃ তুমি এমন ছটফট করছো কেন দিয়া?সবকিছু ঠিক আছে ত।

আমি কিছু না বলে ছবিটা খুঁজছি,,,অনেক খোঁজাখুঁজি করার পর সায়ান ভাইয়ার প্রোফাইলে গিয়ে ছবিটা পাই।ছবিটা পাওয়ার সাথে সাথে আমি ছবিটা আদির সামনে ধরে জিজ্ঞেস করি,,,

দিয়াঃ আদি দেখো ত এই মেয়েটাই কী না?

আদি ভালো করে ছবিটা দেখে বলল,,,

আদিঃ হে এই মেয়েটাই ত ছিল,,,কিন্তু তুমি কী এই মেয়েটাকে চিনো।(ভ্রু কুঁচকে)

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল,,,আদি এটা কী বলছে,,,এটা কীভাবে সম্ভব,,,যে মানুষটা চার বছর আগে মারা গেছে সে কীভাবে?

#চলবে…

(আর কয়েক পর্বের মধ্যেই রহস্য ভেদ হবে,,,সবার কাছে রিকুয়েষ্ট একটু ধৈর্য নিয়ে পড়ুন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here