সুখতারার খোঁজে পর্ব -১১+১২

#সূখতারার_খোজে🧚‍♀️
#লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ১১

-ডংগি মেয়ে কোথাকারে..এতো সাজোন গোজন করে কই যাওয়া হইছিলো শুনি? বাপে দেওয়া এক্ষান দামী কাপর, আর তুই সেইটা পড়ে ডং করে বেরাস?

চেঁচিয়ে তনয়াকে বলে উঠলো তারার চাঁচি। প্রতিত্তোরে তনয়া মুখে হাসি জড়িয়ে বললো,

-উফফ! এখন প্রায়’ই সাজতে করতে হবে আমায়। দেখা করতে হবে না? আরও এমন ড্রেস লাগবে।

এতে যেন আরও ক্ষেপে উঠলো তনয়ার মা। দৌড়ে গিয়ে চুলের মুঠি টেনে বলে উঠলেন,

-কি কস? বল কি বললি? কার সাথে ডলাডলি করিস তুই? আবার বলা হচ্ছে দেখা করতে যাবি?

-আহ্,মা খুব লাগছে তো!

-লাগুক। মর তুই। বাড়িতে তোর থেকেও বড় মেয়ে আছে,কই সে তো এতো নাটক করে না? তোর এতো ডং কিসের?

ঘর থেকে এমন বিদ্রুপের আওয়াজ জানে আসতেই ছুটে বেরিয়ে আসে তারা। সে পড়ছিলো। ব্যঘাত ঘটে ঝগড়ায়। সে এসে তনয়াকে ওভাবে দেখে ছুটে চলে এলো উঠোনে। তনয়াকে ছাড়িয়ে বললো,

-চাচী ও বড় হয়েছে। তুমি ওকে এভাবে মারতে পারোনা।

আরও ক্ষেপে বলে উঠলেন ইলিমা,

-তুই ছাড় ওকে! যুবতি মেয়ে কি’না দিনে দুপুরে সং সেজে ঘুরাফেরা করবে?

-ওর ভুল হয়েছে চাচী। আর হবে না।

তারার সাফাই যেন মোটেই পছন্দ হলো না তনায়ার। তারাকে ছিটকে দূরে সড়িয়ে কর্কষ স্বরে বলে উঠলো তনয়া,

-ভুল মানে? আমার কাউকে ভালোবাসা ভুল? তুই ভুল করিস নি তারা? আমার থেকে ভালোবাসার মানুষটাকে তুই কেড়ে নিয়েছিস! আগুনে জ্বালিয়েছিস আমার বুকে।

কথাগুলোয় তারার কপালে সূক্ষ্ম কয়েকটা ভাজ পড়লো। যে মেয়েটা সকালেই আপু সম্মোধন করে ডাকলো আর এখন তুই,তুকারি? তারা যেন থমকে গেলো কিছু মুহুর্তের জন্য। তনয়া ফিক করে হাসলো। ইলিমার রাগ যেন ক্রমশ উর্ধমুখী হচ্ছে। তনয়া বললো,

-তোর কি কপাল তারা? বিয়ের পরও লোকটা তোকে ভালোবাসে। ধন্যি মেয়ে তুই!

তারা বললো,

-এ..এ সব তুই কি বলছিস? তুই কার কথা বলছিস তনয়া?

-অভ্র!

-এটাই কি তোমার সবথেকে বড় ভুল নয় তনয়া?

উপস্থিত অন্যকারো রাগান্বিত কন্ঠস্বরে ফিরে তাকালো সবাই। ঘামে জর্জরিত অভ্র দাড়িয়ে। সে সটাং প্রবেশ করলো বাড়িতে। তনয়া যেন আনন্দিত! সবটা তার কাছে একটু তারাতাড়িই হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। অভ্র আবারো বললো,

-আজ তুমি না থাকলে কবিতা চলে যেত না! কেন করলে এমন?

তারা অস্ফুটস্বরে বললো,

-চ..চলে গেছে ম..মানে?

অভ্র তাকালো তারার দিকে। তারা জিজ্ঞেসু দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে। অভ্র খানিক এগিয়ে ইলিমা বেগমের কাছে গেলেন। বলে উঠলেন,

-বলছিলেন না এত সং সেজে কই গেছিলো আপনার মেয়ে? আমি বলছি, ও আমার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলো। অনেক বারণ করার পরেও কবিতাকে গড়গড় করে তারার সব ব্যাপারে বলেছে। সে চলে গেছে। ও বাড়িতে ফোন করেছি, কিন্তু সে ওখানে যায়নি!

থমকে গেলো তারা। কবিতা চলে গেছে মানে? আর তার ব্যাপারে কি এমন বলেছে তনয়া। মুখ থমথমে হয়ে উঠলো ইলিমার। তিনি জানতেন তারার সাথে অভ্রে বিয়ে হওয়ার কথা। কিন্তু বড়লোকের ছেলে তারাকে ধোকা দিয়েছে! আর তার’ই মেয়ে নাকি সে সংসার ভাঙেছে? তিনি দৌড়ে রান্নাঘরে চলে গেলেন। শাল গাছের কাঠ নিয়ে তেড়ে এলেন তনয়ার দিকে।তারা এবার আটকাতে পারলো না! তারাকে ছিটকে ফেলে ইলিমা একের পর এক লাঠিপেটা করলেন তনয়াকে। কাঠের এক একটা মারে শরীরে নরক যন্ত্রনা অনুভব করতে লাগলো তনয়া। ‘মা মা’ বলে সন্ধ্যার সময় ডুকরে কাঁদতে লাগলো তনয়া। তারা উঠে ছুটে গেলো ইলিমাকে আটকাতে। জাপটে নিয়ে পিছিয়ে গেলো। ইলিমা তবুও খ্যান্ত নন। যেন ওকে মেরে ফেললেই শান্তি! তখনি প্রবেশ করলেন তনয়ায় বাবা। পরিস্থিতি বোধগম্য হলো না।

_______

বাবার কাছে না গিয়ে সত্যি সত্যিই কবিতা ফ্লাট নিয়েছে। মামার কাছে একটি কল করতেই কারন জানার প্রয়োজন মনে করেননি, টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে। ফ্লাটের জানালার দারে দাড়িয়ে কবিতা। সবে পেয়ে উঠেছে ফ্লাটে! তার লাগেজ এখনো ওভাবেই আছে। বারবার খালি অভ্রের কথা মনে পড়ছে! কষ্ট হচ্ছে! বুকে জ্বালা করছে কবিতার। বেলকনি দিয়ে মৃদু ঠান্ডা হওয়া বয়। বেবি হেয়ার গুলো দুলছে কবিতার। চোখ চিকচিক করছে পানিতে।

__________

সন্ধ্যা আকাশে জ্বলজ্বলে চাঁদ উঠেছে। অভ্র সহ তারার পুরো পরিবার মোড়ায় বসে। দিনের আলোর মতোই চাঁদের আলো চিকচিক করছে যেন। আঙিনায় থমথমে মুখ নিয়ে বসে আছেন তূরের বাবা এখতেয়ার। তার দুহাত পড়ে তূর। আর মাটিতে ছালা বিছিয়ে বসেছে তারা,তনয়া। সকলে খুব উদগ্রীব! কৌতুহলে তারা হাত কচলাচ্ছে! অভ্র অন্যদিকে ফিরে আকাশ পাণে সুদূর দূষ্টি স্হাপন করলো। ইলিমা বেগম কিছু বলতে চেয়েও আর বললেন না। অবশেষে বললেন এখতেয়ার,

-সময়টা ছ’মাস আগের। তনয়ার জন্য পাত্র দেখা হচ্ছিলো তখন। আমি কখনো ভাবিইনি অভ্রের মতো বড়লোক পরিবারের পাত্র পাবো। পেয়েছিলাম! মেয়ে দেখতে তারা এসেছিলেন স’পরিবারে। পাকা কথা হয়নি সেদিন। অভ্রকে একটু টাইম দাওয়া হয়েছিলো। সে ভাবুক,তনয়াকে সে আদেও জীবনসঙ্গী হিসেবে চায় কিনা! এতোক্ষণ লাগলো না, সন্ধ্যাতেই ফোন আসলো সে বিয়েতে রাজি নয়। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে অন্য পাত্রের তল্লাসিতে বের হই। সেদিনের পর তনয়া ভেঙে পড়ে! হয়তো অভ্রের মোহ তাকে একদিনে ঘায়েল করেছিলো। ছ’মাস আগে পর্যন্ত যে মেয়েটা তারা বলতে পাগল ছিলো তারপর থেকে সে তারার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলো! কারন? বলছি..

সকলের কৌতুহল ক্রমশ তিনগুন বেগে বাড়ছে! সবটা জানার জন্য তাদের অপেক্ষা যেন বেশ ভুগাচ্ছে। আজমল আবারো বলতে লাগলেন,

-কারন তার ঠিক পরের সপ্তাহেই অভ্র ফোন করে বললো তার মেয়েকে পছন্দ। আর সে তনয়া নয়, আমার ভাইয়ের মেয়ে তারাকে। কোথথেকে লোভের আবির্ভাব হলো আমার মনে। মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসলাম! অভ্রের বারবার কলই প্রমান করছিলো সে যেভাবেই হোক তারাকে চায়। সুযোগের সৎ কি? অসৎ ব্যাবহার করলাম। অভ্রও রাজি হলো এক কথায়। ও তো বলেছিলো, পারলে দ্বীগুন দেবে! এরপরে পরিচয়, বলতে তারার নাম্বারটাই শুধু অভ্রকে দেই। প্রথম কলে বেশ ঝাড়ি খেয়েছিলো অভ্র। তারা অজানা ছেলের সাথে কথা বলে না কখনো। আর তারা এটাও জানতো না যে অভ্র তনয়াকে দেখতে এসেছিলো। জানিনা অভ্র তারাকে কথা বলাতে পারলো কিভাবে। তিন তিনটে মাস অভ্র তারার সাথে কথা বলেছে। সামনে আসেনি! চুপিসারে দেখে গেছে।এরপর আসলো সামনে ঠিক তিনমাস পর। তাদের কথা বলা আরও বাড়লো! সবটা জানতাম আমি। এরিমধ্য তূর ভুল করে বসলো। সে সরাসরি তারাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিলো। সরাসরি! তূরও জানতো না অভ্রের ব্যাপারে। তারা আমায় সবটা বললো। তূরকে আমিই দমালাম। জানতাম ও খুব ভালোবাসে তারাকে। তারার জন্য অনেক করেছে তূর। ভাবির খুব দেখাশোনা করতো তূর,তারার অনুপস্থিতে। যেখানে তারা এক কেজি চাল কিনে রাখতো ড্রামে, তূর চুপিচুপি পাঁচকেজি চাল দিয়ে আসতো! আগে হলে হয়তো তারা খেয়াল করতো। কিন্তু অভ্রের ভালোবাসাই তাকে সবসময় অন্যকোথাও রাখতো। সে খেয়ালই করেনি! তারও একমাস পর তারার জন্য যখন বুক ঝলসে যাচ্ছিলো তূরের, ভালোবাসার আগুনে কেমন দাউদাউ করে পুরছিলো তখন সে নতুন উদ্যমে গিয়ে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলো। তারা সেদিন প্রচুর অপমান করলো তূরকে। প্রতিটা গালিই হয়তো তছনছ করে দিয়েছিলো তূরের মন। সে হয়তো ঘৃনাও করতে শুরু করেছিলো তারাকে। তাই এতোদিন কথা বলেনি! যখন প্রথম অভ্র লুকিয়ে তারাদের বাড়িতে আসলো তনয়া সবটা জানতে পারলো। সবটা জেনে হয়তো এক রক্তি ঘৃনাই জন্মে তার মনে। কিন্তু সে হুটহাট তারাকে ঘৃনা করে ঠিক করেনি। বিয়ে ভাঙার দুদীন পর’ই সব জানে যায় তনয়া। যখন লুকিয়ে আসতো অভ্র। সেদিনের পর তনয়া আর আসেনি তারার সামনে। কথা বলেনি পর্যন্ত! হঠাৎই শুনলাম অভ্রের বিয়ে। আচ্ছা যদি এতোদিন অভ্র সত্যিই তারাকে ভালোবাসতো তাহলে কি পারতো বিয়ে করতে? কেন করলো? যখন জানলাম সবকিছুর পেছনে আমার চেনা কেউ জড়িত তখন খুব অবাক হলাম!

কথাটা বলেই ইলিমার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালেন এখতেয়ার..#সূখতারার_খোজে🧚‍♀️
#লেখক:আর আহমেদ
বোনাস পর্ব

উপস্থিত সকলে ঘটনায় জড়িত! এ যেন একে অপরকে নিয়েই তৈরি পুরো ঘটনা! যে যেমন যাকে ভালোবেসেছে, সে ঠিক তেমনি অন্যায় করেছে! করেছে কারো প্রতি অন্যায় নয়তো ভালো। তারা দু’পলক তূরকে, আরেক পলক অভ্রের দিকে। সূদুর আকাশ পানে তাকিয়ে স্হির অভ্র। হয়তো তার খুব কষ্ট হচ্ছে! বুক ফেটে যাচ্ছে। সব হাড়িয়ে আজ সে নিঃসন্দেহে নিঃস! এখতেয়ার সহ অপরাধী তনয়াও। জানা হলো না তারার অপরাধ। এখতেয়ার ইলিমার থেকে চোখ সরিয়ে বলে উঠলেন,

-আজ যদি তূর আর তনুকে ইলিমা দেখে রাখতো তো হয়তো দুজনে এমন কুটিল কাজ করতো না!

কথাটায় ইলিমা চট করে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। এখতেয়ার থামিয়ে দিলেন ইলিমাকে। বলে উঠলেন,

-আহ্! তুমি চাইলেই ছেলে মেয়ে দুটোকে আটকাতে পারতে। ওরা নিজেদের জন্য,ভুলের জন্য নিজেদের সহ তিন তিনটে জিবন নষ্ট করেছে। কি তূর? কেন তোমরা এমন করেছিলে?

অভ্র হঠাৎ বলে উঠলো,

-আমার আর তারার সম্পর্ক জানিনা তূর কিভাবে জানলো, সেদিন ও আমায় তারার বিরুদ্ধে ওর অন্তরালে ওর কোচিং সেন্টারের রোহান সম্মন্ধে এমনসব কথা বলেছিলো যা আমি…

তারা অভ্রের দিকে হতাশার শ্বাস টেনে বললো,

-ও! আজ বুঝলাম! এইতো বিশ্বাস! ভাগ্যিস এই ঠুঙ্ক সম্পর্ক ভেঙেছে! জানেন? কষ্ট হচ্ছে কবিতার জন্য!

-ও আমায় কিছু ফটোও দেখিয়েছিলো, যেখানে তুমি আর রোহানের হেঁসে কথা বলার ছবি! কি তাইতো তূর?

নিশ্চুপ তূর। মুখ ফুটে কথা বলার সামর্থ্য নেই তার। আফসোস হচ্ছে তনয়ার। কতোগুলো সম্পর্ক শেষের পথে আজ! এখতেয়ার আবারো বলতে লাগলেন,

-আমি আন্দাজ করে বলি সবটা? যেহেতু তূর তারাকে আর তনয়া অভ্রকে ভালোবেসেছিলো, তাই ওরা খুব জঘন্য ও কুটিল একটি বুদ্ধি করে৷ অভ্রকে ভুল বুঝায় দুজনে মিলে। এর এর ফলস্বরূপ তারা কি ভালো আছে? পেয়েছে নিজের ভালোবাসার মানুষকে? পায়নি!

অভ্র উঠে দাড়ালো। তার বুকে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে কষ্টে! সকল একাকিত্ব বোধ বুঝি তার”ই জন্য বরাদ্দ! দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দু’পা এগোলো অভ্র। ফের পিছে এসে তারাকে বললো,

-যদি কখনো মনে করো আমার ক্ষমা পাওয়া উচিত তখন না হয় মাফ করে দিও?

অশ্রুসিক্ত নয়নে বেড়িয়ে গেলো অভ্র। দিক সারা লাগছে তারার কাছে। তূর একপ্রকার ছুটে ঘরে চলে গেলো। তনয়া হঠাৎ জড়িয়ে নিলো তারাকে। অঝোর বৃষ্টির মতো কেঁদে উঠলো তনয়া। চাইতে লাগলো মাফ! হয়তো ক্ষমার যোগ্য নয় বলেই তারাও উঠে চলে গেছিলো তখন।

কেটে গেলো প্রায় এক মাস!

সবাই সবটা জেনে গেলো। জানলো কবিতার মা-বাবা সকলে। অনেক বলে কয়েও ফ্লাট থেকে ফেরাতে পারলো না কবিতাকে। তারাও ব্যার্থ হলো। অভ্রকে তার মা বাবা ও বলেছিলো কবিতাকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব তার। অভ্র হাত জোর করেছিলো পর্যন্ত!একমাসে সবথেকে খারাপ অবস্থাটা অভ্রের! নিজের বাবাই তাকে মৃত ঘোষণা করেছে! বহিষ্কার করেছে অভ্রকে! আজ দু সপ্তাহ সে বের হয়নি বাড়ি থেকে। ঘর বন্দি থাকে সব সময়। প্রতিটা সেকেন্ড তার জন্য অতি কষ্টকর! একা সে পুরো পৃথিবীতে! আজ হয়তো সে ও বাড়িতেই আছে কিন্তু তার পাশে নেই কেউ! ইরা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। ছেলে আর ছেলের বৌয়ের চিন্তায় তিনি ক্রমান্বয়ে অসুখের পথে।

এক্সাম শেষ! কবিতা আর একটিও এক্সাম ভালো দিতে পারেনি! বলতে গেলে পুরো পড়াশোনাই বন্ধ করে দিয়েছিলো কবিতার। এক একটা দিন তাকে কাটাতে হচ্ছে কষ্টে।

-কবি আসবো?

দারে দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো তারা। কবিতা স্বর চিনেই বললো,

-আয়।

-কি করছিস? সবসময় এমন বসে থাকিস কেন তুই?

-ভালো লাগছিলো না তা…

-তোর কি কোন সময়েই ভালো লাগেনা? সবসময় দেখি বলকনিতে। কি এতো বেলকনিতে তোর?

কবিতা আড়ালে চোখের পানি মুছে ঘরে এলো। বিছানায় বসলো তারা। ব্যাগ থেকে বের করলো একটা লাল ডিব্বা। কবিতা যেন দেখেই চিনলো এর ভেতরে কি আছে। বলে উঠলো,

-তুই নাড়ু এনেছিস কেন?

-তোর জন্য। খা তারাতাড়ি।

-পড়ে খাবো..

কবিতাকে থামিয়ে চেঁচিয়ে বললো তারা,

-তারা প্লিজ! একটু নরমাল হ। তোর প্রিয় নাড়ু নিজ হাতে বানিয়ে এনেছি। এমন করিস না প্লিজ। খেয়ে নে।

-খিদেই পায়না।

-চেষ্টা করেছিস কখনো? তুই অভ্রকে ছাড়া বাঁচতে পারবি না কবিতা। প্লিজ ফিরে চল।

-এখনো তুই ফিরতে বলছিস?

-আচ্ছা তুই আন্টি আঙ্কেলের কথা একবার ভাব। তুই তোর মা বাবার কথা একবার ভাব, ওনারা আজও আমায় ফোন করে বলেছেন। প্লিজ কবি চল আমার সাথে।

-আর কতদিন তিনমাসের?

-ত..তারমানে তুই ডিভোর্স নিবিই নিবি?

-হুম নিবো।

-এ তিনটে মাস তোকে ও বাড়িতে থাকতে হতো তারা। তুই এখানে থাকলেই কি পাবি ডিভোর্স?

-পাবো!

-কিন্তু..

-আমার মামাই যেখানে একজন জর্জ তারা..

-তো তুই এটার অপব্যবহার করবি?

-করবো। আমি ডিভোর্স চাই। আর দহন সম্ভব নয়। আর নয়।

-কবি..

তারার কথার মাঝেই বেজে উঠলো ফোনটা। কবিতা ফোন রিসিভ করলো। ওপাড় থেকে বলে উঠলো কেউ,

-কবিতা আরেকবার ভাবো। দুমাস প্রায় শেষ তু…

-পেপার্স পাঠিয়ে দিবেন। রাখছি!
#সূখতারার_খোজে
#লেখক:আর আহমেদ
পর্ব ১২

-তুই এমন করিস না প্লিজ!

তারার কথার পরপরই হর্ন বজে উঠলো ফ্লাটের নিচ থেকে। ঠোঁট জোরা কুঁচকে চেয়ালে চেয়াল বসালো তারা। এদিকে কবিতা পাগলামি করছে আর নিচে তার পেয়ারা ভাই। রাগে দপদপ করতে করতে বেলকনিতে গেলো তারা। নিচে ঝুকে দেখলো তূর সেদিকেই তাকিয়ে। তারাকে দেখতেই ও ইসারা করলো চলে আসতে।’পাজি একটা’ সন্মধনে গালি দিলো তারা। এরপর চেঁচিয়ে বললো,

-সমস্যা কোথায় আপনার? কাজ থাকলে চলে যান। কানের গোড়ায় প্যা পো বাজালে কি আর কাজটা হবে?

তূর ও চেঁচিয়ে বললো,

-আম্মা তোকে নিয়ে যেতে বলেছিলো, মনে আছে?

তারা বিরক্তিকর মুখ দেখিয়ে আবারো ঘরে এলো। হ্যাবলার মতো ড্যাপড্যাপ করে উপরে বেলকনির দিকে তাকিয়ে রইলো তূর।

তারা ভেতরে এসেই আলমারিতে হাত দিলো। কবিতা বুঝলো আজ আটঘাট বেঁধেই এসেছে তারা। সে অকপট বলে উঠলো,

-তুই এ বিষয়ে জোর করার অধিকার রাখিস আদেও?

একপলক ফিরে তাকালো তারা। বললো,

-আমি আগে বললে তুই ঠিক এটাই করতি না?

-করতাম..

-তাহলে চুপচাপ চল।

-তুই আজ অন্যায় মানতে বলবি তারা?

ততক্ষণে কাপরগুলো সব বিছানায় রেখেছে তারা। গুছাতে গুছাতে বললো,

-অন্যায় বাঁধা দিচ্ছি!

-হাহ্,পাঠাচ্ছিস তুই! নরকে পাঠিয়ে অন্যায় বাঁধা! হাউ ফানি তারা। কাপরগুলো প্লিজ ওখানের রাখ।

-তুই যে তোর মা-বাবার প্রতি অন্যায় করছিস তার বেলা?

-ওনাদেও শাস্তি পাওয়াটা উচিত ছিলো।

কথাটায় তারা ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো৷ মুখ ব্যাঙ্গ করে বলে উঠলো,

-ওমাহ্? আরও কেউ জড়িত আছে এতে?

-হুম। তারা কি একটি বারও খোঁজ খবর নেবে না বল?

-তাহলে তো বলবো তুইও সমান অপরাধী!

ভ্রুযুগল কুঞ্চিত করে উঠে দাড়ালো কবিতা। তারার সামনে এসে দু হাত বাবু করে বলে উঠলো,

-আমার কোন দোষ নেই।

-তাই?

-জ্বি আপা।

-ওও। তা ভাবিজি আমায় যদি একটি বার বলতি তোর জামাই কে তাহলে কি আর এতোসব ঘটতো?

তারার পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লো কবিতা। একহাতে তালি বাজে না। সে হয়তো তার বেস্টফ্রেন্ড কে সারপ্রাইজ দিবে দেখে জানায়নি। অথচ সেটাই মারাত্মক ভুল! হয়তো সে দোষী নয়।

-তুই ওট।

-ভালো লাগছে না।

-এমনিতেই নাড়ু খাসনি কিন্তু।

বলেই টেনে উঠালো কবিতাকে তারা। সালোয়ার কামিজ হাতে পাঠিয়ে দিলো ওয়াশরুমে। এখানে থাকলে কবিতার জিবন অবনতির শেখরে পৌছাতে বেশিক্ষণ লাগবে না। কবিতা আসতেই লাগেজ হাতে নেমে এলো তারা। কবিতা তারার চালাকি বুঝে মাথায় আলতো থাপ্পড় দিলো। এরপর নেমে এলো নিচে। তারা নিচে আসতেই তূর বলে উঠলো,

-ও আসতে রাজি হলো?

-আলহামদুলিল্লহ্। হয়েছে।

-এতক্ষণ লাগে?

-তো আপনি গেলেই হতো।

-তোর সাথে পারা যাবে না।

-বাই দা ওয়ে, আপনি এখানে দাড়িয়ে আছেন কেন?

-তোকে নিতে!

-কেন? না মানে কমন সেন্সটুকুও কি আপনার নেই? কবিতাকে আমি ছেড়ে তবেই যাবো। আপনি যান।

-তোর কথায়?

ভ্রু নাচিয়ে বললো তূর। তারা পাশে এসে দাড়ালো কবিতা। কবিতাকে দেখে তূর বাইক থেকে নামলো। বললো,

-সেদিনের জন্য ক্ষমা চাইছি। মানে আমি..

-কোনদিনের?

-ওইযে যেদিন আপনি…

-ঠিকিই করেছিলেন। এটাই হয়তো ভালো ছিলো। অন্তত তারাকে ও বাড়িতে যেতে হয়’নি।

তারা বললো,

-কবি চলতো। এখানে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।

তূর রাগান্বিত হয়ে বললো,

-তোর সাহস তো দেখি বারছে দিনদিন। ডোজ দিবো?

-কবিতা তুই যাবি?

-তোকে পড়ে দেখছি। তোমরা দাড়াও আমি রিকসা দেখছি।

তূর চলে গেলো রিকসা আনতে৷ দু দন্ডেই নিয়ে এলো রিকসা। তারা আর কবিতা উঠে বসলো। খানিক মনমরা লাগছিলো কবিতাকে। তারা পাত্তা দিলো না। সে এখন সহানুভূতি প্রদর্শন করলে হয়তো কেঁদে দিবে কবিতা। এমনই হয়!

রিকসা চলতে লাগলো। তূর এক টানে বাইক নিয়ে চলে গেলো।

_________

বুকে জাপটে জড়িয়ে কবিতার বাবা কবিতাকে। একজন পিতা তার কন্যাকে কতটা ভালোবাসে তা কবিতা আর তার আব্বুকে না দেখলে বোঝা যেত না। তারার চোখে জমলো শিশিরবিন্দু। তার মনে পড়ছে তার বাবার কথা। তিনিও হয়তো তাকে এভাবেই ভালোবাসতেন। তারা বাড়ি থেকে নিঃশব্দে চলে এলো ওখান থেকে। ও বাড়ির কেউ লক্ষ করলো না। সবাই কবিতাকে দেখে আবেগে চোখের জল ফেলছিলেন। তারা বাইরে আসতেই তূর কোথথেকে সটাং তার সামনে হাজির হলো। তারা ভরকে গেলো। বলে উঠলো,

-এমন করেন কেন সবসময়?

-তোকে ভয় দেখাতে। নে উঠ!

-এতক্ষণ কেন অপেক্ষা করছিলেন?

তূর এদিকওদিক তাকিয়ে কিছু ভাবলো। বললো,

-তোর চাচী…

-চাচীর কথাই ধরে আছেন? কেন ভাঙলেন অভ্রের সাথে আমার ভালোবাসা? বিশ্বাস?

হাসির ছলেই বলে উঠলো তারা। তূরের মুখের স্বাভাবিকতা ছেড়ে হয়ে উঠলো বিষন্ন। তারা আবার জিজ্ঞেস করলো,

-আমি সেই রাস্তায় অপমান করেছিলাম বলে?

-তুই বুঝবি আদেও?

তারা খিলখিল করে হাসলো। যেন জোক্স বলেছে তূর। তূর ভ্রু কুঁচকে বললো,

-হাসছিস যে?

-তো? কাঁদবো? বিশ্বাস করবো না কেন? বলেন!

-থাক..শুধু মনে কর,বাঁচিয়েছিলাম আমি তোকে।

তারা কিছুই বুঝলো না। ভাবতে ভাবতেই উঠে বসলো তারা। তূর আর কিছু বলেনি তারাকে।

_______

সোফা থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে দাড়ালেন আমির। তার লক্ষে স্থির চোখে তাকাতেই ড্রইংরুমে বিদ্যমান সকলেই উঠে দাড়ালো। একপা একপা করে এগিয়ে আসছে অভ্র। আমির কেমন নাক ছিটকে দূরে সড়ে দাঁড়ালো। আজকাল তার ছেলেকে ঘৃনা হয়। ইরা পারলেন না, ছুটে গিয়ে জড়িয়ে নিলেন অভ্রকে। হু হু করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন,

-কেন বাইরে আসলি? আমাদেরও মারতে চাইছিলি নাকি তুই?

অভ্র নিশ্চুপ! অগোছালো ভাবে দাড়িয়ে আছে অভ্র। চুলগুলো এলোমেলো। কেমন জট পাকিয়েছে! ক্লিন সেভ করা ছেলেটার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ির ডগাগুলো উঁকি মারে। ইরা বাধভাঙ্গা নদীর মতো কাঁদতে লাগলো। অতপর বললো,

-কি রে? তোর খাবার…

-কবিতা?!

একমাসে আজ প্রথম কবিতা উচ্চরন করলো অভ্র। আমির বলে উঠলেন,

-পারলে নিয়ে আয়। নাহলে আমার এমন কোন ছেলের প্রয়োজন নেই।

অভ্র সটাং মাটিতে বসে পড়লো। তার বিহেভিয়ারে পাগলের ছাপ কড়ারুপে স্পষ্ট!

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here