সুখপাখি পর্ব ২

সুখপাখি

২.
মেয়েটি আস্তে করে উত্তর দিলো,
— “শিমু।”

— “নাইস নেম। পুরা নাম?”

— “ওয়াসিফা বিনতে শিমু।”

— “ওকে।”

শিমু অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো আবিরের দিকে। মনে মনে ভাবছে এটা কি কাল রাতের সেই লোক যে তার উপর এমন অমানবিক অত্যাচার চালিয়েছে। শিমু কেমন যেনো দ্বিধায় পরে গেলো। আবির শিমুর দিকে শীতল চাহনি নিক্ষেপ করে রেখেছে সেই প্রথম থেকেই। শিমু মিনমিনে স্বরে বললো,
— “আপনি কি সেই আবির চৌধুরি? যার কাছে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে?”

শেষের কথা বলতে গিয়ে শিমুর গলা ধরে এসেছে। চোখে পানি টলমল করছে। চোখ নিচু করে রেখেছে। আবির খেয়াল না করেই বলে দিলো,
— “হুম।”

শিমু মুখ তুলে আবিরের দিকে তাকালো। চোখে পানি টলমল করতে দেখে আবির কিছুটা নড়েচড়ে বসলো। পরক্ষণে মনে হলো তার উত্তরে মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে। আবির প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো,
— “রান্না বান্না পারো?”

শিমু আবার মাথা নিচু করে নেয়। বালিশের সাথে হেলান দিয়ে একটু আধশোয়া হয়ে বসেছে যাতে কোমড়ে চাপ না পরে। গায়ের উপর কাঁথা দেয়া। আবির উত্তরের অপেক্ষায় শিমুর দিকেই তাকিয়ে আছে। শিমু আস্তে করেই বললো,
— “জ্বী পারি।”

— “কি কি পারো?”

— “মোটামুটি সব রান্না পারি।”

— “আমার জন্য চা আর নাস্তা বানাতে পারবে? না না শুধু আমার জন্য না। তোমার জন্যেও। পারবে?”

— “জ্বী পারবো।”

শিমু গায়ের উপর থেকে কাঁথাটা সরিয়ে নেয়। শার্টের উপরের দিকে দুইটা বোতাম খোলা ছিলো। আবির এর সেদিকে চোখ পরে। শিমুর বুকে একটা বিউটি স্পট আছে। সাথে কাল রাতে তার দেয়া কালচে কামড়ের দাগ। এটা দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। একটা অনুশোচনা আসে তার মনে। আবার শিমুর মুখের দিকে তাকায়। আবিরের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। পিচ্চি মেয়েটার সাথে অন্যায় করেছে সে।

শিমু পা দুটো মেঝেতে রাখে। কোমড়ে চাপ পরতে শুরু করে। পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে এক কদম চলতেই শিমু ব্যাথায় কুকড়ে উঠে। পরে যেতে নিলেই আবিরের দুই হাত দিয়ে শিমুর পেট জড়িয়ে ধরে বিছানায় বসিয়ে দেয়। শিমু নিজেকে দেখে বেশ লজ্জায় পরলো। চোখ নামিয়েই আবিরকে বললো,
— “আমার কাপড় কে পাল্টেছে?”

আবির অকপটে উত্তর দেয়,
— “আমি।”

শিমু লজ্জায় মাথা আরো নিচু করে নেয়। আবির সেটা উপভোগ করে। শিমু আস্তে করে বললো,
— “ছেলেদের কাপড় মেয়েদের পরা যায়েজ নেই। প্লিজ আমাকে একটা থ্রি পিস বা শাড়ি দিন।”

আবির যতই শিমুকে দেখছে, যতই শিমুর কথা শুনছে ততই মুগ্ধ হচ্ছে। আবির কিছুক্ষণ শিমুর দিকে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ এক শীতল হাওয়া আবিরের মনে বয়ে গেলো। উঠে দাঁড়িয়ে সোফার উপর থেকে সব কাপড়ের ব্যাগ ওর সামনে রেখে বললো,
— “এগুলো সব তোমার জন্য। যেটা ভালো লাগে সেটা পরে নিও।”

আবির উঠে বাহিরে চলে যায়। শিমু সব প্যাকেট খুলে দেখে। থ্রিপিস আর শাড়ি সব। বেশ সুন্দর। শিমু মনে মনে ভাবলো,
— “আচ্ছা এসব কি উনি পছন্দ করে এনেছেন? আনলেও কখন আনলেন? নাকি অন্যকেউ এনেছে?”

সব ভাবনা বাদ দিয়ে শিমু হলুদ রঙের একটা থ্রিপিস হাতে নেয়। আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়। হাটতে গিয়ে কয়েকবার পরে গেছে। ব্যাথায় চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু নোনাপানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পরেছে। ওয়াশরুমে ঢুকে শিমু থমকে দাঁড়ালো। মনে মনে বললো,
— “এটা ওয়াশরুম নাকি আরেকটা রুম?”

কিছুক্ষণ ভালো করে তাকিয়ে বললো,
— “নাহ শিমু। এটা ওয়াশরুমই। যা তাড়াতাড়ি গোসল করে নে। দাঁড়িয়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।”

শিমু ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে। ওড়নাটা ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নেয়। বেডের এক কোণে বসে তাওয়াল দিয়ে চুল মুছতে শুরু করে। দরজার দিকে পিঠ দিয়েই বসেছে। তখনই আবির রুমে আসে। শিমুকে ভেজা চুলে দেখে থমকে দাঁড়ায়। শিমুর ভেজা চুল আবিরকে টানছে। আবির আস্তে করে এসে শিমুর পেছনে বসে। শিমু নড়তে চাইলেই আবির তাকে থামিয়ে দেয়। চুলগুলো ঘাটছে। লম্বা লম্বা ভেজা চুল ঘাটতে আবিরের বেশ ভালোই লাগছে। শিমু জড়সড় হয়ে বসে আছে। শিমুর ভেজা চুল ঘাটা আবিরের কাছে একটা খেলা মনে হচ্ছে। কোনোদিকেই তাকাচ্ছে না। শুধু চুল নেড়েচেড়ে দেখছে। আবির দুই হাত মেলে লম্বা চুল হাতের উপর বিছিয়ে চুলে চুমু দেয়। শিমুকে বললো,
— “এই শোনো না বউ, তুমি কখনো চুল কাটবে না ঠিকাছে? যদি চুল কাটো আমি কিন্তু খুব রাগ করবো।”

আবিরের মুখে ‘বউ’ শব্দটা শুনে শিমুর কিশোরী মনে এক ভালোলাগা চেয়ে গেলো। নিজের অজান্তেই মুচকি হাসলো। শিমু হালকা মাথা ঘুরিয়ে আবিরের দিকে তাকালো। এখনো চুল দিয়ে খেলছে। আবিরকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো রত্ন পেয়েছে তাই খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। শিমু আবারো মুচকি হাসলো। এইমুহূর্তে আবিরকে একদম বাচ্চার মতো লাগছে শিমুর কাছে। একটা বাচ্চা যেমন দামি কোনো ভালো খেলনা পেলে মনোযোগ দিয়ে খেলে আবিরও তাই করছে।

——————————
আবির নিজের হাতে শিমুকে খাওয়াতে শুরু করে। শিমু কয়েকবার বলেছে সে খেতে পারবে কিন্তু আবির মানাই শুনছে না। লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে শিমু। ঘোমটা দিয়ে বসে আছে আবিরের সামনে। ওড়নাটা শিপন জরজেটের হওয়ায় বারবার পরে যাচ্ছে আর শিমু তা বারবার টেনে মাথায় রাখছে। আবির বিরক্ত হয়ে বললো,
— “ঘোমটা সরাও। চুল ঢাকছো কেনো? আজব আমি কি পরপুরুষ নাকি?”

শিমু কিছু বললো না। এক হাতে ঘোমটা টেনে ওড়না ধরে বসে আছে। আবির আর কিছু বললো না।

শিমুকে একটা ওষুধ দিলো। বললো,
— “এটা খাও ব্যাথা কমে যাবে।”

নাস্তার প্লেট নিয়ে রেখে আসলো। রুমে আসলে শিমু ডাকলো,
— “শুনুন।”

আবির এক ঝটকায় শিমুর সামনে এসে বসেছে। চুল ঠিক করতে করতে বললো,
— “জ্বী রাণীসাহেবা হুকুম করুন।”

শিমু কিছুটা চমকালো সাথে লজ্জাও পেলো। শিমুর গাল দুটো হালকা গোলাপি হয়ে এলো। তার নিজেকে সংযত রেখে বললো,
— “পুরুষদের একদম হলুদ এবং লাল রঙের ড্রেস পরা ইসলামে নেই। আপনি হলুদ গেঞ্জিটা পালটে অন্যকিছু পড়ুন।”

আবির এক টানে গেঞ্জিটা খুলে ছুড়ে মারে। তারপর শিমুকে বললো,
— “কি কালার পরবো?”

শিমুর কিছুটা অস্বস্তি হলো। একেতো খালি গায়ে বসে আছে তারপর উপর আবার বলছে কি কালার পরবে। যেনো ছোট বাচ্চা। শিমু মাথা নত অবস্থাতেই বললো,
— “হালকা যেকোনো কালারের শার্ট বা পাঞ্জাবি পড়ুন। তবে সেটা যেনো সিল্কের না হয়। সিল্কের কাপড় পরাও ইসলামে নিষিদ্ধ পুরুষদের জন্য।”

আবির উঠে কাবার্ড খুলে একটা পর একটা শার্ট নিজের সামনে ধরছে আর বেডে ছুড়ে মারছে। শিমু অবাক হলো। মনে মনে ভাবছে,
— “উনি এমন কেন করছে? পাগল।”

আনমনে হেসে দিলো। বেডের উপরে নেভি ব্লু কালার শার্টের উপর চোখ যেতেই শিমু সেটা হাতে নিলো। শার্টটা হাতে নিতে দেখে আবির বললো,
— “বউ আমি এটা পরবো?”

আবিরের মুখ থেকে যত বউ ডাক শুনছে শিমুর মনে ভালোলাগা ততই বাড়ছে। মুখ তুলে আবিরের দিকে তাকালো। ফর্সা মুখে কালো ঘন চাপ দাড়ি যেটার কারণে সৌন্দর্য যেনো উপচে পরছে আবিরের। শিমু অবাক হলো। ছেলেদের সৌন্দর্যও এভাবে উপচে পরার মতো হয় ভাবতেই আরেকদফা অবাক হলো। চোখ দুটো ছোট ছোট। সাদা গেজ দাঁতে হাসলে ঝিলিক মারে। চুলগুলো একদম সিল্কি। আবির বারবার হাত বুলাচ্ছে। আবির দুইহাতে টাউজার ধরে টেনে বললো,
— “খালি গায়ে টাউজার পরেছি এটা খেয়াল করেছো?”

শিমু চমকালো। কখন এভাবে এমন বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলো বুঝতেই পারেনি। নিজেকে কড়া ধমক দিলো। পরক্ষণে মনটাই বললো,
— “শিমু রিল্যাক্স বেব। এটা তোর হাসবেন্ড হয়। তুই তার বিয়ে করা বউ। কাল পবিত্র কলমা পড়ে দুজন পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিস। তুই তোর স্বামীকে দেখতেই পারিস।”

শিমু মনটাকে আরেক কড়া ধমক দিয়ে হাত বাড়িয়ে শার্টটা আবিরকে দিলো। আবির হাসিমুখে শার্টটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে শিমুর সামনে এসে বললো,
— “এই বউ বোতাম লাগিয়ে দাও।”

শিমুকে পাওয়ার পর আবিরের নিজের কোনো কাজ করতেই ইচ্ছে করছে না তার। এমন মনে হচ্ছে যেনো অনেকদিন পর একটা খেলার সাথি পেয়েছে। নিজের ভেতরের শিশু সুলভ আচরণ বেরিয়ে আসছে। আবির নিজেও খেয়াল করেছে ব্যাপারটা। শিমুকে পাওয়ার পর একদিনেই অনেক বছর আগের আপন মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে এই সেই পুতুল যে তার অগোছালো জীবনটাকে গুছিয়ে পরিপাটি করে তুলবে। শিমুর মনে ঢিপঢিপ শুরু হয়। কাপাকাপা হাতে আবিরের শার্টের বোতামে হাত দেয়। আস্তে আস্তে সব গুলো বোতাম লাগিয়ে দেয়।

অফিসে যাওয়ার আগে আবির শিমুর কপালে চুমু দেয়। এতে লজ্জায় শিমুর গাল দুটো আবারো গোলাপি হয়ে উঠে। আবির গালে চুমু দিতেই শিমু বিছানায় শুয়ে কাঁথা মুড়ি দেয়। তা দেখে আবির শব্দ করে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শিমু কাথা মুড়ি দেয়া অবস্থায় ভাবতে লাগলো,
— “উনাকে হাসলে কেমন লাগে? নিশ্চয় অনেক বেশি সুন্দর?”

রুমে আর সাড়াশব্দ না পেয়ে শিমু কাঁথা সরিয়ে উঠে বসে। রুমটা অগোছালো করে রেখে গেছে লোকটা। শিমু আস্তে আস্তে উঠে বেডের এক কোণে বসে সব শার্ট হ্যাঙারে ঝুলিয়ে কাবার্ডে রেখে দেয়। এবার সে রুমটাতে চোখ বুলায়। রুমটা বিশাল বড়। আবকিছু কালো রঙের। পর্দা থেকে শুরু করে বেডশিট এমনকি আসবাবপত্র সব কালো। শিমু মনে মনে ভাবলো হয়ত উনার কালো রঙ বেশি পছন্দ। বেড সাইডের টেবিলে আবিরের ছবি রাখা। ফ্রেমে বাঁধানো। শিমু ছবিটা হাতে নেয়। কালো গেটআপে লোকটাকে অসম্ভব মানিয়েছে। শিমু আনমনে হাসে।

——————————
আবির অফিস শেষ করে জলদিই ঘরে ফিরতে চেয়েছিলো বন্ধুদের জোরাজোরি করাতে বারে গিয়ে বসে। আবিরের মুখের খুশি দেখে সব বন্ধুরাই খুব খুশি। কারণ আবিরের মতো এমন এরোগ্যান্টের মুখে হাসি কখনো তারা দেখেইনি। সেই রুড, বদমেজাজি আবির থেকে আজকের হাসিখুশি আবিরকে দেখে খুব খুশি সবাই। এর মধ্যেই একজন বলে উঠলো,
— “দোস্ত আজ এতো খুশি কেন তুই? ভাবি কি যাদু করলো তোরে?”

— “মেয়েটা আসলেই যাদু জানে। একদিনেই আমাকে এতোটা বদলে দিয়েছে। আমি এমন একটা মেয়েকে পাবো ভাবতেই অবাক লাগে।”

— “তাহলে তো ভাবিকে দেখাই লাগে। আমরাও দেখবো ভাবি কেমন।”

আবির হাসলো কিছু বললো না। আবিরের দুই একজন বন্ধুর মনে শিমুকে দেখার কামনা জাগলো সাথে অবৈধ কিছু আকাঙ্খা। আড্ডা শেষে বন্ধুবান্ধব সবাই আগে চলে গেছে। আবিরও বেরিয়ে আসে। গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। কিছুদূর আসতেই ফুলের দোকান দেখে গাড়ি থামায় আবির। কিছু লাল গোলাপ আর একটা বেলীফুলের মালা কিনে নেয়।

রুমে এসে দেখলো শিমু জায়নামাজে বসা। আবির অবাক হয় কারণ সে শেষ কবে নামাজ পড়েছে মনে নেই। ফুল আর মালাটা রেখে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে শিমু ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গোলাপ ফুলগুলো নাকের কাছে ধরে রেখেছে। আবির এসে শিমুর পেছনে দাঁড়ায়। ঘোমটা সরিয়ে বেলীফুলের মালাটা নিয়ে খোপায় লাগিয়ে দেয়। শিমুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বারবার খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে কেমন লাগছে। যতই দেখছে ততই আবিরের নয়ন জুড়িয়ে যাচ্ছে।

আবির বললো,
— “আচ্ছা আমি খাবার নিয়ে আসছি। তুমি আমাকে তোমার হাতে খাইয়ে দেবে?”

শিমু একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। আবির আবার বললো,
— “দিবে না?”

শিমু মাথা নাড়ায়। আবির খুশিতে গালে টুপ করে চুমু দেয়। দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায় খাবার আনতে। শিমু গালে হাত দিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।

শিমু আবিরের মুখে খাবার দিচ্ছে আর আবির একবার আঙুলে বা হাতে চুমু দিচ্ছে আবার আঙুলে কামড় দিচ্ছে। আবিরকেও খাইয়ে দিচ্ছে নিজেও খাচ্ছে। শিমু চেয়েছে পরে খেতে কারণ আবিরের সামনে এভাবে খেতে লজ্জা লাগছিলো। কিন্তু আবির বাচ্চামি শুরু করেছে। তার সামনে খেতে হবে মানে হবেই। বাধ্য হয়েই শিমু খাওয়া শুরু করে।

খেয়ে দেয়ে রাতে দুজন শুয়ে পরে। শোয়ার আগে আবির শিমুর চুল খুলে দেয়। বেলীফুলের মালাটা বেড সাইডের টেবিলে রাখে। চুলে চুমু দিয়ে বালিশে মাথা রাখতেই আবির ঘুমের দেশে তলিয়ে যায়। ঘুমন্ত আবিরকে দেখতে ব্যস্ত শিমু। হাতটা বাড়ায় আবিরের চুল ছুতে আবার কি মনে করে হাত সরিয়ে নেয়।

—————————————-
পরেরদিন আবির জলদি জলদি অফিসে চলে যায়। শিমু ঘুম থেকে উঠে আবিরকে পায়নি। বেড সাইডের টেবিলে নাস্তার প্লেট রাখা ছিলো। হাত মুখ ধুয়ে এসে নাস্তা খেয়ে নেয়। প্লেট রাখার সময় ছোট একটা চিরকুট পেলো শিমু। তাতে লেখা ছিলো, “মাই বিউটিফুল ওয়াইফ সরি। আজকে তাড়াতাড়ি যেতে হচ্ছে। সন্ধ্যায় ফিরে আসবো প্রমিজ। উম্মম্মাহ! এটা কিন্তু গালে।” চিরকুটের শেষ লাইন পড়ে শিমু মাথা নত করে মুচকি হাসলো।

সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত দশটা বাজতে চলেছে অথচ আবিরের ফেরার নাম নেই। শিমু অপেক্ষা করতে করতেই ঘুমিয়ে গেছে। দরজা খুলার আওয়াজে উঠে বসলো শিমুম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত দুইটা বাজে। অবাক হলো। আবিরকে ঘরে ঢুকতে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো। আবির হেলেদুলে হেটে আসছে। গায়ের কোট হাত থেকে ছুড়ে মারলো। শার্টের ইন ঠিক নেই। গলার টাইও ঠিক নেই। চুল গুলো উসকোখুসকো। মুখটা মলিন। আবির এসে শিমুর সামনে দাড়ালো। শিমু আবিরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।চোখ লাল হয়ে আছে। আবিরের মুখে মলিন হাসি। শিমু মনে মনে ভাবলো,
— “উনার কি শরীর খারাপ এমন লাগছে কেনো? আর শরীর থেকে কেমন উটকো গন্ধ বের হচ্ছে।”

হঠাৎই শিমুর কানটা ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। ছিটকে পরলো মেঝেতে। শিমু চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো। মাথা ভনভন করছে। আবির পুরো শরীরের শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মারলো শিমুকে। খোপা খুলে চুল পিঠে ছড়িয়ে গেছে। শিমু মাথা ঘুড়িয়ে আবিরকে দেখেই নেতিয়ে পরলো মেঝেতে।

চলবে,,,
® নাহার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here