সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ৬+৭

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_৬

#Tahmina_Akther

-একবার বলেই দেখো আমার ফুলের জন্য আমি সব করতে রাজী আছি।

-বেশি কিছু করতে হবে না তোর ফুলের জন্য। এখন তোর ফুলকে একটু ভাত মাখিয়ে খাইয়ে দিলেই হবে। পারবি না অভিক আমাকে খাইয়ে দিতে?
মুখটা বেশ করুন করে বললো হিয়া।

-আল্লাহ, আমি তো ভেবেছিলাম তুমি কি যেন করতে বলবে! তোমাকে ভাত খাইয়ে দিবো এইটাই তো আমার ভাগ্য। তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি হাতমুখ ধুয়ে আসি।
বলে ওয়াসরুমের দিকে উঠে গেলো অভিক।

আর হিয়া মনে মনে বলছে, পাগলটার তাহলে একটু চিন্তা কমেছে। কিন্তু,আমি ভাবছি অন্যকথা সেই লোকটা যদি অভিকের কোনো ক্ষতি করে তাহলে?

-বসে বসে আবার কোন ভাবনায় ডুবে গেলে,ফুল?

-না, কিসের চিন্তা করবো আমি? তোর আসার অপেক্ষা করছিলাম। নে এখন আমাকে খাইয়ে দে।

অভিক প্লেটে ভাত নিয়ে মাখিয়ে হিয়াকে খাইয়ে দিচ্ছে আর হিয়ার ঠোঁটের পাশে লেগে থাকা খাবার গুলো মুছে দিচ্ছে।

কে যেন দরজায় দাঁড়িয়ে হিয়া আর অভিককে দেখছে?

-অভিক আমি আর খেতে পারবো না রে পেট ভরে গেছে। এখন তুই নিচে যেয়ে খাবার খেয়ে শুয়ে পর।

-এখানেই তো অনেক খাবার আছে এতে আমার বেশ হয়ে যাবে।

অভিককে দেখলাম ও এটো প্লেটে ভাত নিয়ে খাচ্ছে। যেন আজ বেশ তৃপ্তি পেয়েছে খাবার। আমি অভিককে বললাম,

-অভিক, আজ কি খাবার বেশি ভালো হয়েছে নাকি? আমার তো একটুও ভালো লাগেনি।

-তোমার জ্বর তাই ভালো লাগে নি। আজকের খাবারে যেই তৃপ্তিটা পেয়েছি এই জীবনেও মনে হয় আর পাবো না।
বলেই বেশ আয়েশ ভঙ্গিতে বসে আবার খাওয়া শুরু করলো।

চাচী একটুপর এসে সবকিছু নিয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় আমায় বলে গেলেন, কোনো সমস্যা হলে যেন ডাক দেই।
আম্মু আমার পাশেই আজ থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু, আমি মানা করে দিয়েছি। আম্মুর এখন আমার পাশে থাকার চেয়েও আব্বুর পাশে থাকা জরুরি।

-অভিক আর কতক্ষণ বসে থাকবি এখানে? তোর রুমে যেয়ে শুয়ে পর। আমি ঠিক আছি এখন।

-তুমি ঘুমিয়ে পড়লে আমি চলে যাবো। বেশি কথা না বলে ঘুমাও তো।

আমি হু বলেই পাশ ফিরে শুয়ে পরলাম। এভাবেই যে কখন ঘুমিয়ে পরলাম!

———

ওই মেয়ের মাঝে এমন কি আছে যে তুমি এরকম বিহেব করছো? তুমি যে পথে চলছো আমরা তা কখনোই মেনে নিবো না বিশেষ করে তোমার বাবা। আশা করছি এখন থেকে তুমি আমার কথাগুলো মেনে চলবে।
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন এক নারী।

মা,তুমি আমার থেকে অন্য কিছু চাইতে আমি খুশি খুশি আমি মেনে নিতাম কিন্তু তুমি আমার জীবন থেকে হিয়াপাখিকে সরিয়ে দিতে চাইছো।
কিন্তু, আমি কখনোই তোমার এই কথাটি মানতে পারবো না। কারণ, আমার এই অন্ধকার কুটিরে এক চিলতে রোদ হলো আমার হিয়া। হিয়া যদি
আমার জীবন থেকে চলে যায় আমি আবারও অন্ধকার এই কুটিরে বিলীন হয়ে যাবো।

———

সূর্যের প্রথম প্রভাত কিরণের মিষ্টি ছোঁয়ায় আজ ঘুম ভাঙল হিয়ার বেশ প্রফুল্ল লাগছে ওর। শরীরে জ্বর আর নেই। বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।
সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে। আব্বু নিউজপেপার পড়ছে, চাচ্চু টিভিতে নিউজ দেখছে আর একপাশে বসে সাদাফ আর অরিন স্কুলের হোম ওয়ার্ক করছে। আমি ড্রইংরুম ছেড়ে কিচেনে চলে গেলাম।
গিয়ে দেখি মা সবজি ভাজি করছে আর চা বানাচ্ছে। জরি খালা রুটি বেলে দিচ্ছে আর চাচী রুটি ছেঁকে রাখছে। আমি কিচেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
কে যেন আমার কানে হঠাৎ করেই ভাউ করে উঠলো? আমি আচমকা এমন শব্দ শুনে আমি চোখ বন্ধ করে চিৎকার দিয়ে উঠি।

সবাই আমার চিৎকার শুনে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করছে,

-কি হয়েছে হিয়া?

সবার কন্ঠ শুনে একচোখ খুলে তাকালাম দেখি কোনো ভয়ানক প্রাণী আছে কি না? কিন্তু, না চেক করে দেখলাম কিছুই নেই। এবার আরেক চোখ খুলতেই আমার পাশে দাড়ানো মেয়েটিকে দেখতে পেলাম।বেশ খুশি হয়ে গেলাম আমি খুশিতে মেয়েটিকে জরিয়ে ধরলাম।
কারণ,মেয়েটি আর কেউ নয় আমার ফুপাতো বোন নোভা।

-কেমন আছিস নোভা? যেভাবে আমাকে ভয় দেখালি আরেকটু হলে আমার প্রাণপাখি আকাশে ফুরুত হয়ে যেতো।

-ভালো আছি। আমি তো ভাবতাম আমাদের হিয়া অনেক সাহসী কিন্তু আজ প্রমাণ পেলাম হিয়া একটা ভীতুর ডিম।

-আমি ভীতু তবে রে, দাড়া তুই
বলতেই নোভা একদৌড় দিলো আমার থেকে বাঁচবার জন্য। আমিও ওর পিছু পিছু দৌড়াচ্ছি কিন্তু ও একবার এপাশে তো আবার ওপাশে দৌড়াচ্ছে।
নোভা এবার সদর দরজা দিকে দৌড় লাগালো তাই আমিও ওর পিছু ছুটলাম।

কিন্তু, ফুটা কপাল আমার কার সঙ্গে যেন ধাক্কা খেয়ে পরে গেছি।
মাথা তুলে তাকাতেই কিছুই দেখতে পেলাম না কারণ আমার কপালে ছোট চুল গুলো চোখের সামনে এসেছিলো।

———–

বাড়িতে প্রবেশ করছিলাম কিন্তু বাতাসের বেগে এসে একটি মেয়ে আমাকে নিয়ে মাটিতে হুমরি খেয়ে পড়ে গেলো। মেয়েটি আমার বুক থেকে মাথা থেকে মাথা উচিয়ে দেখাবার চেষ্টা করছিলো। কিন্তু ওর চুলের জন্য বোধহয় দেখতে পারছিলো না। তাই আমি আমার হাত দিয়ে মেয়েটির সামনের চুলগুলো সরিয়ে দিলাম।

চুল গুলো সরাতেই সদ্য ঘুম থেকে ওঠা এক স্নিগ্ধ মুখ দেখতে পেলাম তার দুটো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। হয়তো, আশা করতে পারেনি আমি তার চুল স্পর্শ করবো।
বেশ তাড়াহুরো করে আমার উপর থেকে সরে উঠতে চাচ্ছিলো কিন্তু উনি আবারও আমার উপর পড়ে গেলেন। এবার বোধহয় বেশ লজ্জা পেলেন।

কে যেন মেয়েটিকে একটানে আমার উপর থেকে টেনে উঠালো? আমিও ছাড়া পেয়ে উঠে দাড়িয়ে স্যুটে লাগা ময়লাগুলো ঝেড়ে পরিষ্কার করলাম। পরিষ্কার করা শেষে তাকিয়ে দেখলাম অভিক দাঁড়িয়ে আছে সেই মেয়েটির হাত ধরে আর জিজ্ঞেস করছে ,কোথাও ব্যাথা লেগেছে কি না?
মেয়েটি মাথা নাড়িয়ে না জানালো।

আমি ওদের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই কে যেন পিছন থেকে আমার নাম ধরে সম্বোধন করলো, তাকিয়ে দেখি ছোট মামি আমার দিকে এগিয়ে আসছে। কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো,

-কেমন আছিস নিঝুম? আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো?

-না মামি আসার পথে কোনো সমস্যা হয় নি তবে তোমাদের বাড়ির দরজা দিয়ে ঢুকার সময় বেশ বড় ধরনের দূর্ঘটনা থেকে একটুর জন্য বেচে গেছি।

-কিছুই বুঝলাম না কি বলসি তুই?

-আসলে ছোট মামী, ভাইয়া দরজা দিয়ে ঢুকার সময় হিয়া ভাইয়ার সঙ্গে ধাক্কা লেগে পরে যায়। আর এইটাকে ভাইয়া দূর্ঘটনা বলছে। ভাইয়া, হিয়ার কিন্তু কোনো দোষ নেই আমাকে ধরতে যেয়ে ও তোমার উপর পরে গেছে।

কথাগুলো বলেই নোভা ওর ভাই নিঝুমের দিকে তাকালো।

-ওই তাহলে হিয়া, ও মাই গড আসলে আমি ওকে চিনতেই পারি নি। তা হিয়া কেমন আছো তুমি?

-জি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
বেশ নিচুকন্ঠে বললো হিয়া।

-আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তো তোমার পাশের জন কি আমার উপর রেগে আছে না কি? কথা বলছে না যে, কি রে অভিক কি হয়েছে তোর? ভালো আছিস?

-হু আছি ভালো। এখানে আর দাড়িয়ে না থেকে বাড়ির ভিতরে যাও সবাই।
অভিক কথাগুলো বলেই হিয়ার হাত ধরে বাড়ির ভিতরে সবার আগে ঢুকে পড়লো।

নিঝুম ইশারায় নোভাকে জিজ্ঞেস করলো,
কি হয়েছে?

নোভা কাঁধ ঝাঁকিয়ে ইশারায় বললো,

জানি না।

আর কেউ কোনো কথা না বলে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লো।

-ফুল তুমি এভাবে দৌড়াতে গেলে কেন? আর দৌড় যখন দিয়েছো তখন আশপাশে বা সামনে তাকিয়ে দেখে নিবে না।

বেশ রাগী স্বরে বললো অভিক।
#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব:৭
#Tahmina_Akther

-ফুল তুমি এভাবে দৌড়াতে গেলে কেন? আর দৌড় যখন দিয়েছো তখন আশপাশে বা সামনে তাকিয়ে দেখে নিবে না।
বেশ রাগী স্বরে বললো অভিক।

-অভিক সবসময় এভাবে শাসন করবি না ঠিক আছে আমি তোর বড় এটা কি তোর মনে থাকে না।

-সে তো দেখতেই পেলাম তুমি আমার থেকে কত বড় হয়েছো!আর তুমি নিঝুম ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে ঠিক আছে?

-নিঝুম ভাই আবার কি করলো তোর?উনি আমাদের ফুপাতো ভাই হন তাহলে উনাকে কি ভাবে ইগনোর করবো?

-এতশত কথা বাদ আমি যা করতে বলেছি তুমি তাই করবে । তারাতারি রেডি হও ভার্সিটির জন্য বের হতে হবে আধঘন্টা পরে।
বলে গটগটিয়ে চলে গেলো অভিক।

আজ নোভা এসেছে ওকে ছেড়ে ভার্সিটিতে যেতে মন চাইছে না। বেশ মন খারাপের সুরে বললো হিয়া। গোসল করে রেডি হয়ে নেই নয়তো এই অভিক আবার ওর পকপক শুরু করে দিবে।

আজ নোভার পরনে কালো রঙের গ্রাউন, কাধের একপাশে সাদা ওড়না আর মাথায় কালো হিজাব বাঁধা। মুখে কোনোপ্রকার প্রসাধনী ব্যবহার করেনি হিয়া।
হিয়া আয়নায় নিজেকে দেখে বললো,

-সাদা রঙটি যেন আমার জন্যই তৈরি হয়েছে! কি সুন্দর ভাবে সারা শরীরে সেঁটে আছে। অথচ, আহান একবার আমায় বলেছিলো, হিয়া তোমায় সব রঙে অনেক মানায় কিন্তু, কখনো সাদা রঙ পরতে দেখেনি একবার আমাকে সাদারঙ পরে দেখিয়ো তো।
আমার জবাব ছিলো,

-সাদারঙ আমার পছন্দ না আহান তাই আমি পরি না বুঝলে।যদিও কখনো পরি তুমি দেখবে না আর আমিও চাই না কখনো এই সাদা রঙ গায়ে জড়াতে।

কিন্তু, কে জানতো এই সাদা রঙ আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় রঙ!
চোখের পানি মুছে কাধে ব্যাগ নিয়ে চললাম অভিকের রুমে।

দরজায় নক করলাম ভিতর থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছি না দেখে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। দেখলাম অভিক মহাশয় সিগারেট খাচ্ছে তাও আবার ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে। কাচের এপাশ থেকে স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমি।
কাঁধের ব্যাগটি রেখে ব্যালকনির দরজায় বেশ কয়েকবার টোকা দিতেই ও তাড়াতাড়ি হাত থেকে সিগারেট ফেলে এসে দরজাটা খুলে দিলো। আমাকে দেখে হালকা হেসে বললো,

-তুমি আজ আমার রুমে বাহ বাহ কি সৌভাগ্য আমার। তা কি মনে করে এলে?

-তুই যে আমাকে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বললি সেটা কি ভুলে গেলি? আর তুই সিগারেট খাস কবে থেকে?

-এইতো বেশ কিছু দিন হলো, তুমি কেন এইসব প্রশ্ন করছো?
আর আমি ভুলি নি তোমাকে কি করতে বলেছি? চলো নিচে যেয়ে নাশতা খেয়ে বের হয়ে পরি।

বলে অভিক দরজার কাছে যেয়েও আবার ফিরে আসে আমার দিকে। আমার মুখের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে বললো,

-ফুলো আজ তোমায় পুরো কালো গোলাপ দেখাচ্ছে। হিজাব পড়লে তোমায় বেশ লাগে আজকের পর থেকে কোথাও গেলে হিজাব বেঁধে যেও।

-ও মনে পরেছে শোন অভিক আজ ক্লাস শেষে একটু মার্কেটে যেতে হবে।

-কেন? কিছু লাগবে তোমার আমাকে বলো আমি এনে দিবো তোমাকে।

-আসলে আমি বোরকা কিনতে চাচ্ছিলাম।

– আচ্ছা, ভালোই হলো তবে নিয়ে যাবো তোমাকে।
এখন আসো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

ডাইনিংটেবিলে নিঝুমকে আর দেখা যায়নি ও নাকি আগেই খেয়ে উপরের রুমে ঘুমাচ্ছে। অভিক মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে দুজন মার্কেটে যেয়ে বোরকা-নিকাব কিনলো। অভিকের হঠাৎ করে একটি শাড়ির শো-রুমের ভিতরে নজর পড়লো। কলাপাতা রঙের একটি শাড়ি বেশ পছন্দ হলো অভিকের তাই ও কিনে ফেললো।

হিয়া বেশ ক’বার জিজ্ঞেস করলো কার জন্য এই শাড়ি কিনেছে? অভিক হালকা হেসে বললো,

-কিনলাম আমার প্রিয়তার জন্য। ওর গায়ে ভীষণ রকমের মানাবে এই শাড়িটি।

হিয়া বললো,
-ও তলে তলে আমাদের অভিক প্রিয়তার জন্য শাড়িও কেনে। তবে কে এই প্রিয়তা.?

-আছে, তাকে খুব গোপনে আমার বুকের বা পাশের কুটিরে রেখেছি। গোপন মূল্যবান সে আমার কাছে। তাই ও কে জিজ্ঞেস করো না কারণ তুমি আমার কাছে থেকে উত্তর পাবে না ফুল।

-হয়েছে বহু কাব্যিক কথা এখন চল বাসায় দেরি হয়ে যাচ্ছে। আম্মু বকবে তাড়াতাড়ি বাসায় না ফিরলে।

-হু চলো।

————-

আজ রাতের আকাশে তারা আর চাঁদের মিলনমেলা চলছে। কি অপরুপ সৌন্দর্য ছেয়ে আছে আকাশজুড়ে!
এতসুন্দর পরিবেশ নাকি কখনোই দেখেনি নোভা আর নিঝুম ভাইয়া। তাই ওরা দুজন সন্ধ্যার পর থেকে ছাঁদে বসে আছে। আমি বসে বসে মোবাইলে ক্যান্ডি ক্রাস গেম খেলছি। সাদাফ, অরিন আর অভিক নিচে গিয়েছে তোষক আর চাদর আনতে। সবাই নাকি ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবে। আমার এসব খেলা একটু পছন্দ নয় কিন্তু, আমি যদি না খেলি তবে নোভা আর অভিক মন খারাপ করবে তাই রাজি হলাম।

ওরা তিনজন সব নিয়ে এসে ছাদের ফ্লোরে বিছিয়ে দিলো।একে একে আমরা সবাই গোল হয়ে বসে পড়লাম। নোভা এবার বোতলটি নিয়ে বললো,

-বোতলের এই অংশটি যার দিকে থামবে সে ট্রুথ অথবা ডেয়ার নিবে। আর এই অংশটি যার দিকে থামবে সে ট্রুথ অথবা ডেয়ার দিবে। তাহলে, খেলা শুরু করা যাক।
আমরা সবাই একসাথে বলে উঠলাম, হ্যা, শুরু করা যাক।

নোভা এবার বোতলটি ঘুরিয়ে দিলো। বোতলটি গিয়ে থামলো সাদাফের দিকে। সাদাফ ডেয়ার নিলো আর ওকে ডেয়ার দিবে অভিক। সাদাফের সে কি কান্না? ও বারবার বলছে ভাইয়া আমাকে উল্টাপাল্টা কিছু করতে বলো না।অভিক বলছে,

-যা, তোকে বেশি কিছু দিলাম না।তুই শুধু কাল সকালে এসে এই ফুলগাছ গুলোতে পানি দিয়ে দিস।

-ধন্যবাদ, ভাইয়া আমি কাল খুব সকালে উঠে এই গাছগুলোতে পানি দিব।
চোখের পানি মুছে বললো সাদাফ।

ওর কথা শুনে আমাদের সবার যেন হাসি থামছিলো না। বাবারে কি ভয়টাই না পেয়েছে বেচারা।

এবার পড়লো আমার উপর তাই ট্রুথ নিয়েছি আর ট্রুথ দিবে নোভা ।

-হিয়া, যদি তোর জীবনে আবার কেউ বসন্ত এনে দেয় তুই কি গ্রহন করবি? একদম সত্যি করে বলবি নো চিটিং ওকে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
-শুকনো মরুভূমিতে যেমন গাছ জন্ম নেয়া অসম্ভব তেমনি আমার জীবনে আহান ব্যতিত অন্যকেউ অসম্ভব। তবুও, জীবনটা অনেক দীর্ঘ চলার পথে একটি হাত বাড়িয়ে দিবে আমার হাত ধরার জন্য। সে হাত যদি এসে আমার সব আমিটাকে পুরোদস্তুর গ্রহণ করে, আমার পুরোনো সব ক্ষতের মাঝে সুখের প্রলেপ লাগিয়ে দেয় তবে সেই বসন্ত আমি গ্রহণ করতে রাজি আছি।
কিন্তু, আমি চাই না আমার জীবনে কেউ আর বসন্ত হয়ে আসুক। হারিয়ে বুঝতে শিখেছি ভালোবাসাহীন থাকতে বড়ই কষ্ট হয়।

আমার কথায় শুনে সবাই যেন চুপ হয়ে গেলো। তাই মহল ঠিক করতে আমি হেসে নোভার হাত থেকে বোতল নিয়ে ঘুরালাম। আর বোতল ঘুরে পরলো নিঝুম ভাইয়ের দিকে।ডেয়ার নিবেন নিঝুম ভাই আর আমাকেই ডেয়ার দিতে হবে। কি দেয়া যায় ভাবছিলাম? তখন মনে একটি জবরদস্ত খেয়াল এলো।

– নিঝুম ভাইয়া,এখন এই মূহুর্তে আপনার পছন্দের মানুষকে আপনার পছন্দের কথা বলবেন।

-ওকে,
বলে হালকা হাসলেন নিঝুম ভাইয়া। উনি উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলেন।

উনি কেন আমার দিকে আসছে? আজব তো?
হায় আল্লাহ, অভিক যেভাবে আমার দিকে আছে আজ নিশ্চয়ই কোনো অঘটন ঘটিয়ে ছাড়বে। আল্লাহ আজকের মতো বিপদ থেকে উদ্ধার করো।
মনে মনে বিরবির করে বলছে হিয়া।

#চলবে
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here