সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ৮

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব:৮

#Tahmina_Akther

-উনি কেন আমার দিকে আসছে? আজব তো?
হায় আল্লাহ, অভিক যেভাবে আমার দিকে আছে আজ নিশ্চয়ই কোনো অঘটন ঘটিয়ে ছাড়বে। আল্লাহ আজকের মতো বিপদ থেকে উদ্ধার করো।
মনে মনে বিরবির করে বলছে হিয়া।

হিয়া ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো না পারছে এখানে থাকতে আর না পারছে দৌড়ে চলে যেতে। নোভা, সাদাফ, অরিন এরা তিনজন কিছুই বুঝতে পারছে না, আর অভিকের রাগে যেন সপ্তম আসমানে পৌঁছেছে।ওর কপালের দু’পাশের রগ গুলো দেখা যাচ্ছে।

নিঝুম হিয়ার মুখোমুখি হয়ে দাড়ালো।হিয়া ভয়ে মাথা নিচু করে কাপছিলো,আর মনে মনে নিজেকে বকছিলো কেন যে সে এই ডেয়ার দিয়েছিলো?
হিয়া তার গুটিয়ে রাখা হাতে স্পর্শ পেলো চট করে মাথা তুলে তাকায়।নিঝুম ওর হাত ধরে বলছে,

-হিয়া, তুমি বলেছো না এইমূহুর্তে আমি যেন আমার পছন্দের মানুষকে নিজের পছন্দের কথা জানিয়ে দেই। তো শুনে রাখো তুমি, এই মূহুর্তে তুমি হচ্ছো আমার সবচেয়ে পছন্দের মানুষ। তোমার সাথে আমার জীবনের বাকি বসন্ত গুলো কাটাতে চাই। তোমার সব তুমিটাকে আমি নিঝুম চৌধুরী আপন করতে চাই। হবে কি তুমি আমার বসন্তসঙ্গী?

হিয়া কি বলবে বুঝতে পারছে না। ও তো স্রেফ খেলার ছলে নিঝুমকে ডেয়ার দিয়েছিলো আর উনি যে এই সুযোগ কাজে লাগাবেন কে জানতো?
হিয়া নিঝুমকে কিছু বলতে যাবে তার আগে কেউ বলে উঠলো,

-তাহলে, আমাদের নিঝুম সিঙ্গেল থেকে মিঙ্গেল হবে তাহলে।

-আসলে ছোট মামি আপনি এখানে কখন এলেন?

-যখন তুমি হিয়াকে পছন্দের কথা বলছিলে ঠিক তখন এসেছি আমি।
তা হিয়া তোমার কি মতামত?

-আমাকে নিয়ে এখানে কি তামাশা শুরু করলেন নিঝুম ভাইয়া? একটু আগে আপনি শুনতে পাননি আমি কি বলেছিলাম? আমার এই জীবনে আর কাউকে চাই না।

বেশ জোরে কথাগুলো বলে হিয়া। তারপর, দৌড়ে নেমে যায় ছাদ থেকে। হিয়ার পিছু পিছু সবাই চলে গেলো শুধু নিঝুম আর অভিক বাদে।
নিঝুম বোকার মতো তাকিয়ে রইলো হিয়ার যাওয়ার পথের দিকে।
অভিক এগিয়ে গিয়ে দাড়ালো নিঝুমের সামনে।

নিঝুম অভিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
-আসলে, আমি ভাবতে পারিনি হিয়া যে এইভাবে রিয়েক্ট করবে। কিন্তু, অভিক বিলিভ মি আমি ওকে অনেক পছন্দ করে ফেলেছি।

-তুমি ওকে শুধুমাত্র পছন্দ করো ভালো তো বাসো না, তাই না? ফুল তোমাকে পছন্দ করে কি না আগে তোমার জানার প্রয়োজন ছিলো হুট করে এভাবে বলা তোমার উচিত হয় নি। আর হিয়াকে তুমি যতটুকুই পছন্দ করেছো ভুলে যেও, কারণ ওকে তুমি পাবে না।

-ভুলে যাবো মানে? আর ওকে আমি পাবো কি পাবো না এই কথা তুই বলার কে?

-কারণ, ফুল শুধুই আমার তাহলে তোমাকে এই কথা বলার অধিকারও আমার।

-ফুল যে তোর এই কথা কোথায় লেখা আছে?হিয়া জানে তুই বয়সে ছোট হয়ে ওকে নিজের করতে চাইছিস। মনে তো হয় না, যদি জানতো তাহলে তোর আশেপাশেও হিয়া থাকতো না। আর রইলো ছোট মামা-মামী তাদের আমি যতটুকু জানি কোনোদিনও তারা এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। তাহলে, হিয়া তোর হবে কি ভাবে?
বলেই বিদ্রুপের হাসি হাসতে লাগলো নিঝুম।

অভিকের মাথায় যেন জেদ চেপে গেলো নিঝুমের কথা শুনে। শুধুমাত্র ওর ফুপির ছেলে দেখে নয়তো আজ নিঝুমকে মেরে ফেলতো ও।

-শোন অভিক একটা বাজি লাগানো যাক, দেখি কে হিয়াকে পায় তুই নাকি আমি?

-হিয়া কোনো জিনিস নয় যে ওকে নিয়ে তোমার কাছে আমার বাজি লাগাতে হবে।

-তাহলে তো আরো ভালো হয় কারণ, মা হয়তো আজ রাতের দু’টোর ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসবে। মা এলে নাহয় হিয়ার কথা জানাবো মা’কে। আর মা জানাবে দুই মামাকে তারা নিশ্চয়ই তাদের মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করবে না। আমার সব আছে বাড়ি, গাড়ি, টাকা-পয়সা কিছুর অভাব নেই। আর তোর কিছুই নেই। তুই এখনো স্টুডেন্ট তাছাড়া তোর নিজেরও সাহস নেই ছোট মামার সামনে কিছু চাইবার। তাহলে, তো হিয়া আমারই হলো।

– আমি বাজি লাগালাম ফুল কখনোই তোমার হবে না। ফুল শুধুই অভিকের হবে আর কারো না।
বলেই ধুপধাপ পা ফেলে চলে গেলো অভিক ছাঁদ থেকে।

অভিক ছাঁদ নেমে আসার পরপরই নিঝুমও নেমে আসে ছাঁদ থেকে।

হিয়া একসমানে কেঁদেই চলেছে। কি পেয়েছে উনি আসতে না আসতে এখানে?আমি শুধু আহানকে ভালোবাসি আর কাউকে না।

মাথায় কারো ছোয়া পেতেই উঠে বসে হিয়া তাকিয়ে দেখে ওর মা। হিয়া ওর মাকে দেখতে পেয়ে যেন কান্নার বেগে আরো বাড়িয়ে ফেললো।
হিয়ার মা এগিয়ে এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বললেন,

-কি হয়েছে হিয়া? কাঁদছিস কেন?

-চাচী তোমাকে বলেনি কি হয়েছে?

-হু বলেছে আর এতে কান্না করার মতো কিছুই নেই। নিঝুম ভালো ছেলো, ওয়েল সেটেলড। সবচেয়ে বড় কথা ও তোর সবকিছু জেনে শুনে তোকে পছন্দ করেছে। তাহলে এখানে কান্না করার কোনো মানেই হয় না
হিয়ার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলছেন হিয়ার মা।

হিয়া ওর মায়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওর মা কিভাবে এত সহজে কথাগুলো বলে ফেললো! তবে কি ওর বাবা মা চাইছে ওনাদের কাঁধের ভাড় হালকা করতে?

-এইটা কি শুধুমাত্র তোমার কথা নাকি বাবারও?

-না, শুধু তোর বাবা কেন? তোর চাচ্চু, চাচী, আমি, তোর ফুপি, নোভা আগে থেকেই চাচ্ছিলাম নিঝুমের কাছে তোকে বিয়ে দিতে।কিন্তু, নিঝুম বা তুই রাজি হবি কি না? এই শঙ্কায় আমরা কেউ আর বলতে সাহস পাইনি। এখন যেহেতু সবাই একমত তাহলে তুইও রাজি হয়ে যা হিয়া।
আম্মু আমার হাত ধরে বললেন কথা গুলো।

-মা,আমাকে ভাবতে কিছুটা সময় দিবে তোমরা?

-হ্যা, হ্যা অবশ্যই তোর যত সময় লাগে তুই ভাব। আর যদি নিঝুমকে পছন্দ না হয় আমাদের বলিস।
কারণ, তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে তোর উপর কোনোপ্রকার জোর করবো না আমরা।
বলেই আম্মু আমার কপালের ছোট চুলগুলো গুছিয়ে কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন।

আর আমি বসে বসে ভাবছি, কেন এমনটাই হয় আমার সাথে?

————-

ভার্সিটির ক্যাম্পাসের বটগাছ তলায় মন খারাপ করে বসে আছে অভিক। আর ওর পাশে বসে আছে ওর বন্ধুরা। আবির বেশ কিছু সময় ধরে অভিককে দেখছে এখানে এসে বসার পর থেকে একটা কথাও বলেনি অভিক। যেন কোনো গভীর চিন্তায় ডুবে আছে সে। তাই আবির জিজ্ঞেস করেই ফেললো অভিককে,

-কি হয়েছে অভিক তোর ? আর আজ সাথে হিয়া আসে নি? ওকে দেখলাম না যে।

-গতকাল রাতে ফুপি বাংলাদেশে এসেছে তাই ও আসেনি বলতে বাড়ির কেউ ওকে আসতে দেয়নি।

– নিশ্চয়ই বিশেষ কোনো কারণ আছে তাই না?

-হু, অনেক বিশেষ। কারণ আমার ফুপির একমাত্র ছেলে নিঝুম চৌধুরী হিয়াকে বেশ পছন্দ করেছে। আর পরিবারের সকলেই বেশ খুশি হয়েছে নিঝুমের সিদ্ধান্ত শুনে। আমার ফুপি তো পারছে না আজই হিয়াকে নিঝুমের বৌ বানিয়ে নিয়ে যেতে।
বেশ মন খারাপের সুরে বললো অভিক।

-তাহলে, তোর কি হবে? তুই যে হিয়াকে ভালোবাসিস এই ব্যাপারে কিছু বলিস নি নিঝুমকে বা হিয়াকে?

-নিঝুমকে বলেছিলাম, শালা কি বলেছে জানিস? সে আমার সাথে বাজি লাগিয়েছে, ফুল নাকি তারই হবে? তাই আমিও রাগের মাথায় বাজি লাগিয়ে ছিলাম নিঝুমের সাথে। কিন্তু, আমি তো সত্যি ফুলকে পাবো না তাহলে এই বাজি ধরে লাভ কি বল তো আবির?

-শালা, তুই একটা ভীতুর ডিম। তোর বাবাকে গিয়ে বল আর তোর বাবাকে বলতে না পারলে হিয়াকে বলে দেখ। এভাবে মুখ গুজে পড়ে থাকলে কেউ এসে তোর হিয়াকে তোর চোখের সামনে দিয়ে নিয়ে যাবে। আর তুই এই বটতলায় দেবদাসের মতো পড়ে থাকবি শালা খচ্চর।

-আমি বললে কি বাবা আমার কথা মানবে? আর ফুল ও কখনোই আমাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না।

-আগে চেষ্টা তো করে দেখ। বাড়িতে যেয়ে আঙ্কেলকে বল এরপর যা হবে ভাগ্যের ব্যাপার। চেষ্টা কর নয়তো চিরকালের জন্য মনের মাঝে আফসোস রয়ে যাবে।

-হু আজ বলবো বাবাকে, এরপর যা হবে দেখা যাবে। এই জীবনে যদি ফুলকে না পাই তবে আমার আত্মহননের পথ ছাড়া কিছুই বাকি থাকবে না রে।
বলেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো অভিক। আর আবির চেয়ে চেয়ে প্রাণপ্রিয় বন্ধুর ভালোবাসার দহন দেখছিলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here