সেদিনও ছিলে তুমি পর্ব ৪

#সেদিনও_ছিলে_তুমি❤
#লেখনীতে-ইশরাত জাহান ফারিয়া
#পর্ব-৪

১০.
—“তুমি কাল রাতে কি কান্ডটাই না করলে, আমাকে তো ছাড়তেই চাইছিলে না।”

আমি চোখ বড় বড় করে ওনার দিকে তাকালাম। ওনি ঠোঁটে হাসি এঁকে বললেন, ‘শুনতে চাচ্ছো নাকি ঘটনাটা? অবশ্য তুমি শুনতে চাইলে আমি মানা করবোনা!’

আমি বললাম, ‘না না। আপনাকে আর বলতে হবেনা।’

—“ওকে! না শুনতে চাইলে থাক, এসব কাউকে না বলাই ভালো।”

আমি ভাবছি কি এমন হয়েছে যে ওনি এমন করছেন? ওনার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে এরচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা দুনিয়াতে আর দ্বিতীয়টি নেই। যাইহোক, খারাপ কিছু না হলেই হলো। আমি বললাম, ‘আমার শাস্তি কি শেষ হয়েছে? নাকি আরও কিছু বাকি আছে?’

ওনি আমার দিকে তাকালেন। বললেন, ‘বাহ! শাস্তি পাওয়ার জন্য এতো উতলা? এমন হতে দেখিনি কাউকে।’

—“এখানে উতলা হওয়ার কি দেখলেন?আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করেছি!”

ওনি অবাক হওয়ার ভান করে সন্দেহ নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। বললেন, ‘তুমি কি আমার প্রেমেটেমে পড়ে গেছো নাকি মেয়ে? এমনভাবে কথা বলছো আমার তো তা-ই মনে হচ্ছে।’

আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, ‘মোটেও না। আপনার মতো কিডন্যাপারের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই!’

ওনি রেগে বললেন, ‘আমি কিডন্যাপার?’

আমি ভয় পেলেও উত্তর দিলাম না। উল্টো দিকে ঘুরে আল্লাহ আল্লাহ করছি। ওনি আর কিছু বললেন না। কাকে যেন ফোন দিলেন, কিসব বলে রেখে দিলেন। একটু পরে একটা মহিলা নাস্তা নিয়ে আসলেন। ওনি মহিলাকে আমার দিকে ইশারা করলেন। আমি অবাক হয়ে তাকাতেই মহিলাটি ট্রে’টা আমার সামনে রেখে বললেন, ‘খেয়ে নিন মা!’

বলেই দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি হচ্ছে এগুলো?’

ওনি ভাবলেশহীনভাবে বললেন, ‘খেয়ে নাও। কাল থেকে তো কিছুই খাওনি!’

—“খাবোনা!”

—“খাবোনা মানে?”

—“খাবোনা মানে আমি খাবোনা।”

—“কেন খাবেনা?”

—“ক্ষিধে নেই, তাছাড়া অচেনা-অজানা মানুষের দেওয়া খাবার আমি খাইনা!”

—“কাল থেকে না খেয়ে আছো, বলছো ক্ষিধে পায়নি? এই তুমি কি পাগল? না খেয়ে এতোক্ষণ থাকছো কিভাবে?”

—“হোস্টেলে থাকি, কোনোবার তিন-চারদিনও না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এখন এসব অভ্যাস হয়ে গিয়েছে!”

ওনি অবাক হয়ে বললেন, ‘ক্যান্টিন থাকতে না খেয়ে থাকো, মানে বুঝলাম না।’

আমি শুকনো গলায় বললাম, ‘আপনি এসব বাদ দিন। আমাকে এখান থেকে যেতে দিন প্লিজ! আমার অনেক কাজ আছে।’

ওনি গম্ভীর গলায় বললেন, ‘আগে খেয়ে নাও, তারপর যাওয়ার কথাটা ভেবে দেখবো।’

আমি খুশিতে বললাম, ‘তারমানে আমার শাস্তি শেষ?’

ওনি রেগে বললেন, ‘আমি কখন বললাম শাস্তি শেষ? শাস্তি তো দিইনি তোমাকে, জাস্ট ট্রেইলার দেখালাম। তোমার শাস্তিটা আমি ঠিক করবো, বুঝলে? সো বেশি কথা না বলে জলদি খাবার শেষ করো!’

আমার মনটা আবারও ‘কু’ ডাকা শুরু করলো।নিঃশব্দে খেতে লাগলাম। খাবারটা কেমন বিস্বাদ লাগছে, এটাকে নাকি সুপ বলে। আমি কখনো সুপ খাইনি, যার ফলে স্মেলটাও সহ্য হচ্ছেনা। তাও গিলতে লাগলাম।

১১.
আমার খাওয়া শেষ হতেই ওনি বললেন, ‘সো রেডি?’

—“কি রেডি?”

—“তুমি না হোস্টেলে ফির‍্তে চাও?”

—“ওহহ চলুন!”

ওনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘আচ্ছা, শুনো! তুমি না আর জোকার সেজে ভার্সিটিতে এসোনা৷’

আমি মুচকি দিয়ে বললাম, ‘আপনাকে বলতে হবেনা।’

তারপর আমি ওইরুম থেকে ওনার পেছন পেছন বের হলাম। তারপর আমার চক্ষুচড়ক গাছ। কি সুন্দর সাজানো গোছানো একটা বাড়ি। চারদিক যেন আলোতে ঝলমল করছে। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। কারণ এতো সুন্দর বাসা এর আগে আমি আর কখনো দেখিনি। ওনি পেছনে ঘুরে আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ধমকে বলে উঠলেন, ‘এই মেয়ে! হা করে তাকিয়ে আছো কেন?’

আমি থতমত খেয়ে বললাম, ‘না না কিছুনা।’

—“এখন কি আমার সাথে যাবেন মিস আরশি বেগম? নাকি এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অক্কা লাভ করিবেন?”

আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম, ‘না না চলুন। আমি আসছি তো!”

ওনি রাগী গলায় বললেন, ‘জ্বি চলুন। আর আমাকে উদ্ধার করেন।’

—“এটা কি আপনার বাসা?”

—“আমার নয়তো কি অন্যকারো বাসা নাকি আজব!”

—“ওহহ!”

আমার জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিলো ওনার বাসার সবাই কোথায়? কাউকেই তো দেখলাম না আশেপাশে। কেউ কি এই বাসায় থাকেনা? তাহলে ওনার বাবা মানে ভিসি স্যার বা উনার স্ত্রী-ই বা কোথায়?

এসব ভাবতে ভাবতে বাসার বাইরে চলে আসলাম।
ওনি বললেন, ‘উই উইল হ্যাভ টু হারি। লেট’স গো!’

আমি বললাম, ‘আপনার যেতে হবেনা স্যার। আমি একাই যেতে পারবো।’

উনি সন্দেহী চোখে তাকালেন। বললেন, ‘তাই নাকি?’

—“জ্বি!”

ওনি ঠোঁট উল্টে বললেন, ‘কিন্তু তা তো হচ্ছেনা! তোমাকে আমি নিয়ে এসেছি, আমিই ছেড়ে আসবো!’

আমি অস্বস্তি নিয়ে বললাম, ‘আপনার যাওয়ার দরকার নেই, আমিই পারবো স্যার!’

ওনি রেগে বললেন, ‘আমার মুখের ওপর কথা বলা আমি পছন্দ করিনা। চুপচাপ গাড়িতে ওঠে বসো।মাইন্ড ইট।’

—“কিন্তু….”

ওনি আবারও রেগে গেলেন। গাড়ির জানালার পাশে একটা ঘুসি দিয়ে বললেন, ‘ইউ ব্লাডি গার্ল, আই জাস্ট স্টপ ইট!’

আমি ভয়ে ভয়ে বললাম, ‘কোথায় বসবো স্যার?’

ওনি গম্ভীর গলায় বললেন, ‘ড্রাইভিং সিটের পাশে!’

ওনি দরজা খুলে দিলেন। আমি তাড়াহুড়ো করে বসলাম। বাবারে! কার পাল্লায় পড়লাম। সোজাসাপটা কথাটাকে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে ক্যাঁচাল করে প্যাঁচাল মেরে দিলেন।

ওনি ড্রাইভিং সিটের বসলেন। আমি একেবারে জানালার পাশে সিঁটিয়ে বসলাম। ওনি ধমক দিয়ে বললেন, ‘এদিকে সরে বসো। সিটবেল্ট পড়ে নাও।’

আমি একটু সরে এদিকে বসলাম। কিন্তু সিটবেল্ট নামক জিনিসটাকে কিছুতেই আটকাতে পারলাম না। অসহায় চোখে ওনার দিকে তাকাতেই বললেন, ‘আমি দেখিয়ে দিচ্ছি!’

আমি বললাম, ‘না না। লাগবে না।’

ওনি চোয়াল শক্ত করে আমার দিকে তাকালেন। চোখে রোদচশমা পরে সোজা হয়ে পিঠ ঠেকিয়ে বসলেন। আমার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘আমি মেয়েদের গায়ে হাত দিইনা, একবার আস্ক করেছি। আমি আমার নিজের বেল্ট লাগাচ্ছি, তুমি সেভাবে ট্রাই করো মেয়ে!’

আমি মাথা নাড়লাম। ওনার এই কথাটা আমার হঠাৎ পছন্দ হয়ে গেলো। যাইহোক, ওনাকে দেখে দেখে সিটবেল্ট পড়াটা শিখে নিলাম। তারপর ওনি
ড্রাইভ করতে শুরু করলেন। দুজনেই চুপচাপ।
প্রায় আধঘন্টা পর গাড়ি আমার হোস্টেলের সামনে এসে থামলো। আর আমি প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির দরজা খুলে একদৌড়ে পগার পার। পেছনে ফিরেও তাকালাম না। আপদ থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভালো। একটা বিষাদময় ঘটনার আপাতত এখানেই ইতি ঘটলো।

১১.
হোস্টেলে পৌঁছে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলাম। একটা দারুণ শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এলাম। চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হঠাৎ দেখলাম, আমার গলার কাছে একটা দাগ, লাল টকটকে হয়ে আছে। ভালো করে খেয়াল করতেই দেখি এটা কামড়ের দাগ। সদ্য দেওয়া কামড়ের দাগ! আমি চমকে উঠলাম। গালের মধ্যেও একটা কামড়ের দাগ। আমি এবার হতভম্ব। কে করলো আমার সাথে এই কাজ? আদ্র? কাল তো উনিই ছিলেন সারাক্ষণ আমার সাথে, তাহলে কি উনিই? আমাকে কি এই ঘটনাই ওনি বলতে চেয়েছিলেন? নাহ, আমার এবার ভয় হচ্ছে। ওনি আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে কি খারাপ কিছু করেছেন আমার সঙ্গে! তবে যে বড় মুখ করে ওনি বলেছেন, ‘ওনি মেয়েদের গায়ে হাত দেননা।’

ওনি কি আমাকে তবে মিথ্যে কথা বলেছিলেন? ওনি একটা মিথ্যাবাদী! আমি ভাবতে পারছিনা। আমার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। থাপ্পড়ের প্রতিশোধ এভাবে নিলেন! আমি ওনাকে যতই অপছন্দ করিনা কেন, এটুকু বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু সব ছেলের মতো ওনিও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আমার সর্বনাশের কারণ হয়ে দাঁড়ালেন। আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। কিন্তু আমার কান্না চারদেয়ালে ধাক্কা খেয়ে প্রতিধ্বনি হয়ে আমার কাছেই ফিরে এলো। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের আসলেই হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করাটা অনেক রিস্কের, কে যেন আমাকে বলেছিলো! মনে পড়ছেনা।

👉”নামায ফেরেশতাদের ভালোবাসা লাভের উপায়!”

~হযরত আলী (রাঃ)

চলবে….ইনশাআল্লাহ! অনেকেই গল্পের ভুল ধরার বদলে পার্সোনাল এ্যাটাক করে, আপনারা দয়া করে এটা থেকে বিরত থাকুন। আল্লাহ ভরসা❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here