সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -০৮

পর্বঃ০৮
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(কার্টেসি ছাড়া গল্প কপি নিষেধ।)

‘সুন্দরী চলেছে একা পথে,
সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে?
রাগ কোরো না সুন্দরী গো,
রাগলে তোমায় লাগে আরো ভালো।’

রাইদার পিছন পিছন সায়ন হাঁটছে আর মনের মাধুর্য মিলিয়ে এই গানটা গাচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজের রাগ সংযত করার চেষ্টা করছে রাইদা। সে পণ করেছে সায়ন যতই রাগানোর চেষ্টা করুন সে কোনো জবাব দিবে না। কেনো যে সায়নের সাথে আসতে রাজি হয়েছে তা ভেবেই নিজের গালে চড় দিতে মন চাচ্ছে তার।

চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে ফিরে সাবিনা এতো তাড়া দিয়েছে যে রাইদা দশ মিনিটে ব্যাগ গুছিয়ে সায়নের সাথে আবার চেয়ারম্যান বাড়ি যাচ্ছে। সাবিনাকে আলাদা ডেকে রাইদা সবকিছু বিস্তারিত বলে বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু সাবিনা তাকে নিশ্চিন্ত থাকতে বলে।সাবিনার ধারণা এতো বছর আগের ঘটনা কারোই মনে নেই।
ফোনের দিকে তাকিয়ে রাইদা সময় দেখে নেয় প্রায় রাত বারোটা বাজে যার কারণে কোনো বাড়ি থেকেই আলো আসছেন না।লোকেরা আলো নিভিয়ে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।

কাঁচা রাস্তায় লাগেজ টেনে রাইদা বিরক্ত হয়ে যায় এক সময় তারপরও সায়ন তার দিকে তাকাচ্ছে না এমন কি লাগেজটা নিয়ে একটু সাহায্য ও করছে না।এক হাতে লাগেজ আর আরেক হাতে ফোনের ফ্লাশ জ্বালিয়ে হাঁটছে রাইদা। সায়ন টর্চ হাতে হাঁটছে, শুধু হাঁটছে বললে ভুল হবে ঠোঁট প্রসারিত করে বাঁশি বাজাচ্ছে আবার উল্টাপাল্টা গান গেয়ে রাইদাকে রাগানোর চেষ্টা করছে।

চেয়ারম্যান বাড়ি পৌঁছে গেলে সানজিদার রুমে রাইদাকে ঘুমাতে দেওয়া হয়। সকল চিন্তা ভাবনা ফেলে রাইদা ঘুমানোর চেষ্টা করে।দুই ঘন্টার মতো ঘুমায় বাকি রাত নির্ঘুম শুয়ে থাকে।

মনিরা বেগম ফজরের আগেই উঠে রান্নায় লগে পড়ে।মহিউদ্দিন জরুরি কাজে ফজরের সময় বের হয়েছে।
ফজরের নামাজ আদায় করে সকলকে রেডি হওয়ার জন্য ডেকে দেয়।আরাফ ফজরের আগে উঠেই মসজিদে চলে গেছে। যামিনী কল পাড়ে হাত মুখ ধুচ্ছে পাশে দাঁড়িয়ে ব্রাশ হাতে শ্রেয়া ঘুমে ঝিমাচ্ছে।রাইদা পুকুর পাড়ে বসে সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।

‘আচ্ছা আমি তো ইচ্ছে করে সামনে আসিনি তাহলে কি আমার শাস্তি হবে?’
আরাফের কন্ঠ পেয়ে রাইদা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।

‘অবশ্যই হবে তবে সেটা পরে ভেবে জানাবো কি শাস্তি। ‘,হেঁসে জবাব দেয় রাইদা।

‘বেলি ফুল আরেকটা ফুলের জন্য। ‘,রাইদার দিকে বেলি ফুল বাড়িয়ে দিয়ে বলে আরাফ।

ফুল দেখে রাইদা অনেক খুশি হয়।হাসিমুখে দু’হাতে বাড়িয়ে ফুলগুলো নেয়।

‘ফুল গুলো অনেক সিন্ধ। ‘,বেলিফুলের দিকে তাকিয়ে বলে রাইদা।

‘নট মোর দ্যান ইউ।’,আনমনে বলে আরাফ।

আরাফের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে বসা থেকে উঠে ঘরের দিকে যায়।আরাফ যখন বুঝতে পারে সে অজান্তেই রাইদাকে লজ্জা দিয়েছে তখন সেও লজ্জায় হাসতে থাকে।

..

রেডি হয়ে সকলে বসার ঘরে রাইদার অপেক্ষা করছে।সায়ন বিরক্ত হয়ে ঘড়ি দেখতে থাকে।

‘আরে রাইদা ঘুম দিলো না তো আবার?’,রুবেল বলে।

‘সানজু গিয়া দ্যাখ তো এতো দেরি ক্যান হইতাছে? ‘,মনিরা বেগম সানজিদাকে বলে।

সানজিদা মাথা নাড়িয়ে ঘরের দিকে যেতে নিলে রাইদার কন্ঠ ভেসে আসে।

‘কোথাও কাউকে যেতে হবে না চলে এসেছি আমি।’,লাগেজ টেনে নিয়ে এসে বসার ঘরে দাঁড়ায় রাইদা।

রাইদাকে দেখে সকলের চোখ ছানাবড়া। শ্রেয়া যামিনীকে গুঁতা দেয়। দুই বান্ধবী একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে থাকে। রুবেল নিজের সানগ্লাস খুলে তাতে ফু দিয়ে আবার চোখে দেয়।

‘কি হলো? সময় নষ্ট করছেন তো আপনার,চলেন জলদি।’,কথাগুলো বলে রাইদা নিজের লাগেজ নিয়ে বের হয়।

বাকিরাও নিজেদের ব্যাগ এবং লাগেজ নিয়ে বের হয়।মনিরা,সানজিদা,সোনিয়া মিলে সকলকে বিদায় জানায়।
একটা ভ্যান ডাকা হয়েছে যেটায় করে লাগেজ গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে। সকলের লাগেজ ভ্যানে তোমার পর রাইদাও নিজের লাগেজ ভ্যানের উপর রেখে নিজেও চড়ে বসে। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বেই সে ভ্যান চালককে তাড়া দেয়। শর্টকাট কাঁচা রাস্তা দিয়ে যাওয়ার উপায় না থাকায় ভ্যান চালককে অনেকটা ঘুরিয়েই যেতে থাকে।

সকলের লাগেজ সমেত রাইদা মাইক্রো এর কাছে পৌঁছায়।
মিনিট দশেক পর হাঁটতে হাঁটতে বাকিরাও চলে আসে। ড্রাইভিং সিটে এসে বসে সায়ন,মাঝের সিটে বসেছে শ্রেয়া আর যামিনী, শেষের সিটে গিয়ে বসে রুবেল।রাইদা দ্বিধায় পরে যায় কোথায় বসবে সেটা নিয়ে।

‘রুবেল তুই সামনে বস।রাই এখানে বসুক।’,আরাফ এসে বলে রুবেলকে।

‘তাহলে তুই কই বসবি?’,বোকার মতো প্রশ্ন করে রুবেল।

‘রাই সামনে এসে বসো।’,সায়ন গম্ভীর গলায় বলে।

‘সামনে বসলে আমার বমি পায় আমি পিছনে বসবো।’,কথাটা বলে রাইদা রুবেলের পাশে বসে।

আরাফ অসহায় মুখ করে তাকিয়ে থাকে রাইদার দিকে। আরাফের অবস্থা বুঝতে পেরে রাইদা হাসি আটকানো চেষ্টা করে। শেষে উপায় না পেয়ে আরাফ সামনে গিয়ে বসে।
লুকিং গ্লাস ঠিক করে রাইদার দিকে তাক করে সায়ন। রাইদার সেদিকে চোখ গেলে দেখে সায়ন তার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,সাথে সাথে সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয় রাইদা।

গাড়ি চলতে শুরু করে,গন্তব্য কুয়াকাটা। ধীরে ধীরে গাড়ির স্পিড বাড়তে থাকে।

‘এই রাই তুমি কি ইউ টিউব টিউটোরিয়াল দেইখা তারপর আপডেট হইছো?’,রুবেল কৌতুহল হয়ে প্রশ্ন করে।

রুবেলের এমন প্রশ্ন শুনে রাইদা জোরে হেঁসে দেয়।আরাফ গাড়ির বাহিরের লুকিং গ্লাস দিয়ে রাইদার হাসির দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘আরে হাসো ক্যান? বলো না কোন চ্যানেল ফলো করছো।আমিও একটু আপডেট হইতাম আর কি।’,রুবেল দাঁত কেলিয়ে বলে।

‘এটা সিক্রেট বলা যাবে না।আমি যদি বলে দেই তাহলে সবাই আমার মতো চুটকিতে আপডেট হয়ে যাবে পরে তো আপনারাই বলবেন সব মেয়ে আপডেট হয়ে গেছে কাউকে ভালো লাগে না।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তা ঠিক কিন্তু তোমার কথা বলার ধরণ এতো পরিবর্তন কীভাবে করছো? ইউটিউবে এমন কোন ভিডিও বের হলো যার দরুন এক রাতেই মানুষের ভাষা,পোশাক পাল্টে যায় আশ্চর্যের বিষয় এটা।’,রুবেল চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে।

‘কাক যতই ময়ুরের পেখম লাগাক কাক তো কাকই থাকে।’,শ্রেয়া বিরক্ত হয়ে বলে।

‘রাই এবার কিন্তু আমি তোমার বিষয়ে কনফিউজড। তুমি কিছুই ক্লিয়ার করে বলছো না।’,যামিনী বলে।

‘আমার বিষয়ে বলার মতো কিছুই নেই আপু।ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি সিক্স সেমিস্টার ফাইনাল দিলাম।এর বাহিরে আমাকে নিয়ে বলার মতো কিছু নেই।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তুমি এতো ভাব নিচ্ছো যেনো তুমি কোনো সেলিব্রিটি। তোরাও পারিস একটা গেঁয়ো মেয়েকে নিয়ে তামাশা শুরু করেছিস।’,শ্রেয়া রেগে বলে।

‘শ্রেয়া থাম তুই। না জেনে অন্যকে নিয়ে মন্তব্য করা উচিত না।’,আরাফ শ্রেয়াকে ঝারি মেরে বলে।

রাইদা মেসেঞ্জার টুংটাং মেসেজের শব্দে বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে রাইদা মেসেজ দেখায় ব্যস্ত হয়ে যায়।

‘কিরে রাই কতদূর গেলি?’,বাপ্পি রাইদাকে মেনশন করে জিজ্ঞেস করে।

‘বেশিদূর না।তোরা কে কি করিস?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।

‘আমি তো ডিউটিতে।পায়েল মনে হয় ঘুমে।’,রুহি রিপ্লাই করে।

‘অর্ক আর ফাহিমও হয়তো ঘুমে।’,বাপ্পি লেখে।

‘তোদের সাথে কিছু শেয়ার করতে চাই।রাতে সবগুলা মিলে গ্রুপে ভিডিও কল দিবি।’,রাইদা লিখে।

‘কি ব্যপার বল তো সারপ্রাইজ আছে নাকি কোনো?’,বাপ্পি লিখে।

‘কল দিলেই জানাবো।’,রাইদা রিপ্লাই করে।

সায়ন গাড়ি চালাচ্ছে আর একটু পরপর লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে রাইকে দেখছে। রাইদা গ্রুপের মেসেজ পড়ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।সায়নের কেনো জানি রাইদার হাসি দেখে হিংসা হচ্ছে।

..

প্রায় আড়াই ঘন্টা পর কুয়াকাটায় পৌঁছায় সকলে। একটা ভালো মানের হোটেলে সায়ন আগেই বুকিং দিয়ে রেখেছিলো কিন্তু বিপত্তি বাঁধে রুম নিয়ে। সায়ন তো জানতো না রাই আসবে তাই সে তিনটা রুম বুকিং দিয়েছিলো,এখন শ্রেয়া কিছুতেই যামিনী ছাড়া অন্য কারো সাথে রুম শেয়ার করতে চাচ্ছে না। এদিকে সায়নও কারো সাথে রুম শেয়ার করে থাকতে পারে না। রাইদা বিরক্ত হয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বলতে যায়।

‘আপনারা দেখুন রুম আছে কিনা।না হলে আমি অন্য হোটেলে যাচ্ছি।’,ম্যানেজারকে বলে রাইদা।

‘ম্যাম আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত এই মূহুর্তে সকল রুম বুকিং দেওয়া।আমরা চাইলেও আপনাকে রুম দিতে পারবো না।’,ম্যানেজার বলে।

সায়ন ম্যানেজারকে ডেকে সাইডে নিয়ে কথা বলতে থাকে।সোফায় সকলে বসে আছে আর রাইদা কাউন্টারে দাঁড়িয়ে সায়ন আর ম্যানেজারের কথা শোনার চেষ্টা করে। ম্যানেজারের সাথে কথা শেষ করে সায়ন রাইদার দিকে এগিয়ে আসে সায়ন।

‘যদিও আমি কারো সাথে নিজের কোনো জিনিস শেয়ার করি না তবে তোমার জন্য একটু কনসিডার করলাম না হয়। আমার রুমের খাটের নিচ কিন্তু একদম খালি চাইলে থাকতে পারো।’,রাইদার কানে ফিসফিস করে বলে সায়ন।

রাইদা মাথা তুলে চোখ বড় বড় করে সায়নের দিকে তাকায়। সায়ন এমন ভান করে দাঁড়িয়ে থাকে যেনো কিছুই হয়নি। রাইদা কিছু বলতে নিলে দেখে আরাফ আসছে।

‘কিরে ব্যবস্থা হলো?’,আরাফ সায়নকে জিজ্ঞেস করে।

‘দেখি ম্যানেজার কি করে।’,সায়ন দায়সারা জবাব দেয়।

‘এই নিন ম্যাম আপনার রুমের চাবি আর স্যার এই যে বাকি রুম গুলোর চাবি।’,ম্যানেজার সকলকে চাবি বুঝিয়ে দেয়।

‘এই না বললেন রুম নেই? এখন রুম কই পেলেন?’,রাইদা সন্দিহান দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করে ম্যানেজারকে।

‘তোমার রুম লাগবে না? না লাগলে চাবি ফেরত দাও।এতো প্রশ্ন করছো কেনো সেটাই বুঝতেছি না।’,সায়ন রাইদাকে বলে।

‘আরে সায়ন রাই তো ঠিকই বলেছে।’,আরাফ রাইয়ের হয়ে বলে।

রাইদা রেগে লাগেজ টেনে একাই যেতে থাকে রুমের দিকে।রুমের সামনে এসে চাবি দিয়ে রুমের লক খুলে ভেতরে ঢুকে দরজা লক করে দেয়।বাকিরাও নিজেদের রুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে সবাই নিজের রুমেই থাকে।

সকালে যার যার রুমে হোটেলের দেওয়া নাশতা পৌঁছে যায়। প্রথম দিন দুপুরে কুয়াকাটায় সমুদ্রে স্নান করার প্লান করা হয়।অবশ্য ট্যুরের সমস্ত প্লান সায়নের।

রাইদা ঘুমাচ্ছিলো দরজায় শব্দ হতেই ঘুমঘুম চোখে দরজা খুলে।দরজায় সায়নকে দেখে ঘুম উড়ে যায়।

হালকা নীল রঙের গেঞ্জি সাথে কালো রঙের প্যান্ট পরেছে সায়ন।প্যান্টটা হাঁটুর একটু উপরে যার কারণে সায়নের ফর্সা পা দু’টো উন্মুক্ত। দরজায় দু হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রুমে ঢুকে সায়ন।

‘আপনি দেখি ভদ্রতা জানেন না।অনুমতি ছাড়া কেনো ঢুকলেন?’,রাইদা রেগে সায়নকে বলে।

সায়ন রুমে ঢুকলে রাইদার আধ খাওয়া নাশতার দিকে তার চোখ যায়।

‘তুমি তো দেখছি নাশতাও খাওনি।খাওয়া দাওয়া করো না সেইজন্যই তোমার বুদ্ধি লোপ পাচ্ছে।’,রাইদার খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে বলে সায়ন।

‘আশ্চর্য আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে উল্টো নিজে আমায় কথা শোনাচ্ছেন।’,সায়নের পিছনে দাঁড়িয়ে রাইদা বলে।

পিছনে ঘুরে একপিছ আপেল রাইদা মুখে ঢুকিয়ে দেয় সায়ন। রাইদা আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

‘একদম চুপ এবার আমি বলবো তুমি শুনবা।আমরা এখন সমুদ্রে গোসল করতে যাবো তাই তোমায় ডাকতে এসেছি।জলদি রেডি হয়ে নিচে আসো হাতে সময় কম।সকালের পড়া জামাও তো এখনো পাল্টাওনি।এসব পড়ে সমুদ্রে গোসল করতে এসো না।’,সায়ন রাইদার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলে।

‘কেনো কি সমস্যা? এই গেঞ্জি পড়েই আমি যাবো।’,মুখ থেকে আপেল বের করে বলে রাইদা।

‘ঠিক আছে তোমার ইচ্ছা আমার কি।কেউ যদি লজ্জিত হতে চায় আমারই বা কি করার আছে।’,রাইদার দিকে না তাকিয়ে কথাগুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় সায়ন।

সায়ন যেতেই দরজা লক করে আয়নার সামনে দাঁড়ায় রাইদা।পড়নে তার সাদা প্যান্ট,বেবি পিংক রঙের হাফ হাতা গেঞ্জি এর উপরে সাদা রঙের শার্ট পড়েছিলো সকালে।হোটেলে এসে সে চেঞ্জ ও করেনি শুধু শার্টটা খুলে হাত মুখ ধুয়ে নাশতা একটু খেয়েই ঘুমিয়েছিলো। নিজের দিকে ভালো করে তাকাতেই রাইদা বুঝে যায় কেনো সায়ন তাকে বারন করেছে।নিজের অবুঝ কথাবার্তার জন্য নিজের কাছে নিজেই লজ্জিত হয়।

..

রাইদা নিচে নেমে দেখে শুধু আরাফ সোফায় বসে আছে দৃষ্টি তার ক্যামেরায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে আরাফের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
কারো উপস্থিতি টের পেয়ে আরাফ মুখ তুলে তাকায়।

কালো রঙের প্যান্ট সাথে কালো টপস পড়েছে রাইদা। মাথায় একটা কালো হ্যার্ট ও পড়েছে। আরাফ বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।

‘আপনি দেখছি আমায় যে কোনো মূহুর্তে হা*র্ট এট্যাক দিবেন মিস রাই।’,ট্রাউজারের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে আরাফ।

‘আর আপনি তো আমায় কো*মা*য় পাঠিয়ে দেওয়ার প্লান করছেন বোকা মশাই।’,হাসি দিয়ে বলে রাইদা।

‘আমি আবার কি করলা?’,আরাফ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

‘এই যে ফর্মালিটি দেখিয়ে এখনো আপনি আপনি করছেন।সবাই শুনলে কি ভাববে? আর হ্যা কেউ যাতে না জানে আপনি আমাকে আগে থেকে চিনেন।’,আরাফকে সর্তক করে বলে রাইদা।

‘জি ম্যাডাম আপনার কথাই শেষ কথা এবার চলুন বিচে যাই।’, এক হাত বুকে রেখে মাথা হালকা ঝুকিয়ে বলে আরাফ।

আরাফের কথা শুনে রাইদা হেঁসে দেয়।

‘আপনার শাস্তি কিন্তু এখনো বাকি।রেডি থাকবেন যে কোনো মূহুর্তে শাস্তির অর্ডার আসতে পারে।’,আরাফের কানে বলে রাইদা।

কথাগুলো বলে রাইদা বিচের দিকে পা বাড়ায়।পিছনে হাসিমুখে আরাফও আসতে থাকে।

বিচে গিয়ে দেখতে পায় সকলে আনন্দ করতে ব্যস্ত। আরাফ ক্যামেরা বের করে শ্রেয়া আর যামিনীর ছবি তুলছে।রুবেল আইসক্রিম খাচ্ছে আর গল্প করছে আইসক্রিম ওয়ালার সাথে।এটা রাইদার প্রথম সমুদ্র ভ্রমণ। সমুদ্র সৈকত দেখছে আর সে অবাক হচ্ছে।চারিদিকে এতো মানুষের হৈচৈ তার উপর সমুদ্রের ঢেউ একটু পর পর তীরে আঁচড়ে পড়ছে তা দেখে রাইদার মনে হলো সমুদ্র দেখতে আসতে সে বড্ড দেরি করে ফেলেছে। সায়ন এসে রাইদার পাশে দাঁড়ায়।

‘তখন বললে বেবি পিংক রঙের গেঞ্জি পড়বা কিন্তু পড়লা কালো টপস। তুমি আসলেই মিথ্যুক রাই।’,সামনে দৃষ্টি রেখে বলে সায়ন।

‘ও তাহলে আপনি চাইছেন এই ভীড়ে আমি ঐ রঙ পড়ে সমুদ্রে নামি?লু*চু লোক।’,রাইদা সায়নের দিকে তাকিয়ে বলে।

‘রাই এদিকে আসো।’,দূর থেকে যামিনী রাইদাকে ডাক দেয়।

রাইদা যামিনীর দিকে এগিয়ে যায়।আরাফ ছবি তুলতে শুরু করে রাইদা আর যামিনীর।দু’জনের একত্রে ছবি তোলা হলে রাইদা একা ছবি তুলতে থাকে।সায়ন আগের স্থানে দাঁড়িয়ে রাইদার দিকে তাকিয়ে থাকে।

‘এভাবে আর কিছুদিন গেলে তুই তো পাগল হয়ে যাবি সায়ন।’,বিরবির করে নিজেকে বলে সায়ন।

‘এবার এই রোগের একটা ব্যবস্থা করা অতি জরুরি। দ্বিতীয় বার ভুল করবো না যেটা প্রথমবার করেছি।’,রাইদার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে বলে সায়ন।

রাইদা হাসিমুখে ছবি তুলছে আর আরাফকে জ্বালাচ্ছে ছবি দেখানোর জন্য। আরাফও চুপচাপ রাইদার আবদার শুনছে।

‘ঐ পাশে চলেন ছবি তুলবো ঢেউয়ের সাথে।আমি মাঝে দাঁড়াবো আপনি ক্লিক করবেন।’,আরাফকে তাড়া দিয়ে বলে রাইদা।

‘কিন্তু রাই মানুষ তো অনেক।’,আরাফ জবাব দেয়।

‘আমি দাঁড়ালে মানুষ সরে যাবে।’,রাইদা জবাব দেয়।

রাইদা সেখানে গিয়ে মানুষ গুলোকে অনুরোধ করে তারা সরে রাইদাকে জায়গা দেয় ছবি তোলার জন্য। রাইদা সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়ায় আর আরাফ ছবি তুলতে শুরু করে। ঢেউরের সাথে ছবি তোলার জন্য রাইদা সমুদ্রের দিকে আরো পেছাতে থাকে। আরাফ তাকে নিষেধ করে কিন্তু রাইদা সে দিকে কান দেয় না। বিষয়টা সায়ন খেয়াল করলে তার মনে ভয় ঢুকে যায়। আরাফকে ডাক দেয় কিন্তু অনেকটা দূরে থাকায় আরাফ সায়নের ডাক শুনতে পায় না।দৌড়ে সায়ন সেদিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

রাইদা পিছনে ঘুরে সমুদ্রের দিকে তাকালে তার চোখ জোড়া জুড়িয়ে যায়।সমুদ্র সৈকতে যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই নীল আকাশ। মনে হচ্ছে আকাশটা সমুদ্রে গিয়ে মিলিত হয়েছে।একটু এগিয়ে গেলেই মেঘগুলোকে ছুঁতে পারবে সে। ঘোরে চলে যায় রাইদা। চোখ বন্ধ করে সমুদ্রের গর্জন শুনতে থাকে সে।

‘এই মেয়ে মরতে চাও? এত শখ মরার?’,সমুদ্র থেকে টেনে তীরে এনে বলে সায়ন।

রাইদা চোখ খুলে অবাক হয়ে যায় সায়নের কথা শুনে।

‘তোর কি জ্ঞান নেই আরাফ? ও হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রে চলে যাচ্ছে আর তুই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিস? ও তো সাঁতার ও জানে না।পুকুরের মধ্যে ডুবে যায় সেখানে এটা সমুদ্র। ‘,রেগে বলতে থাকে সায়ন।

শ্রেয়া,যামিনী, রুবেল ছুটে এসেছে দূর থেকে এসব দেখে।

‘ওনার কোনো দোষ নেই আমাকে নিষেধ করেছে তাও গিয়েছি আমি।’,কাচুমাচু হয়ে বলে রাইদা।

‘চুপ একটা কথা বলবা না আর।মরতে ইচ্ছা করলে আমাদের সামনে মরবা না বাড়ি ফিরে একা গিয়ে মরো।’,কথাগুলো বলে রাইদার ধরে রাখা হাতটা ঝারা মেরে ছেড়ে দেয় সায়ন।

‘সায়ন মনে হচ্ছে রাইদা কখনো সমুদ্রে আসেনি তাই ওর অভিজ্ঞতা নেই।তুই ওকে বকিস না।’,যামিনী সায়নকে বলে।

রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে সায়নের। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।রাইদার নত করে রাখা মুখের দিকে আরেকবার তাকিয়ে হোটেলে চলে যায় সে।

আরাফ এখনো বুঝতে পারছে না এতক্ষণ কি ঘটলো।যদিও সে যতক্ষণে বুঝতে পারে রাইদা সমুদ্রের ভেতরে চলে যাচ্ছে ততক্ষণে সায়ন এসে পরে।

কাউকে কিছু না বলে রাইদা হোটেলে যায় বাকিরা সমুদ্রে আনন্দ করতে থাকে।আরাফ চলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু শ্রেয়া আর যামিনীর ছবি তোলার চক্করে তার থাকতে হয়েছে।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হবে এমন সময় সকলে বের হবে উদ্দেশ্য মোটরসাইকেলে আশেপাশের স্থানগুলো ঘুরবে।
যামিনী এসে রাইদাকে ডাকে কিন্তু সে সরাসরি না করে যায়।অনেক জোরাজোরি করেও যামিনী তাকে রাজি করাতে পারেনি।শেষে রাইদাকে রেখেই বাকিরা চলে যায়।
সকলে মিলে মোটর সাইকেল ভাড়া করে লেবুর বন ঘুরতে যায়। সূর্যাস্তের সময় হয়ে এলে তিন নদীর মোহনায় চলে যায় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

রাত আটটা বাজলে রাইদা শোয়া থেকে উঠে বসে।সেই যে দুপুরে এসে গোসল করে শুয়েছে এখন উঠলো।ল্যাপটপ অন করে গ্রুপে ভিডিও কল দেয়।একে একে সকলে কলে জয়েন হতে থাকে।

‘কি হলো তোর চোখ মুখের এই অবস্থা কেন?কিছু হইছে?’,ব্যস্ত গলায় জিজ্ঞেস করে রুহি।

‘ঘুরতে গিয়ে আবার বিপদে পড়িসনি তো?যাদের সাথে গেছিস তারা কিছু বলছে? ‘,পায়েল জিজ্ঞেস করে।

‘আমার মনে হয় কোনো পোলা ওর সাথে অসভ্যতা করছে।’,বাপ্পি জবাব দেয়।

‘তোর থাম তো।রাইকে বলতে দে।’,অর্ক সকলকে থামিয়ে বলে।

দুপুরে বিচে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা বন্ধুদের বলে রাইদা।

‘তোর তো ভাইটাকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত উল্টো রাগ করছিস।তোর প্রাণ বাঁচিয়েছে। ‘,ফাহিম রাইদাকে বলে।

‘প্রাণ বাঁচিয়েছে বলে কি এত মানুষের সামনে ওকে অপমান করবে?’,পায়েল রেগে বলে।

‘ঠিকই তো লোকটা ঐভাবে না বললেও পারতো।’,রুহিও বলে।

‘নিশ্চয়ই রেগে গিয়েছিলো তাই অমন করেছে।সেনসিটিভ বিষয় বুঝিস না? রাইয়ের হেয়ালিপানার কারণে বড় দূর্ঘটনা ঘটতে সময় লাগতো না। ‘,অর্ক সকলের সাথে দ্বিমত পোষণ করে বলে।

‘রাই আমি বলি কি তোর এই বিষয় নিয়ে মন খারাপ না করে ঘোরাঘুরি করা উচিত।’,বাপ্পি বলে উঠে।

‘হ্যা রাই ঘুরতে গিয়েছিস মন খারাপ করে যদি রুমে বসে থাকিস তাহলে তো মন ভালো হবে না।’,ফাহিম রাইদাকে বুঝাতে বলে।

‘সকালে না বলেছিলি কিছু বলবি?’,রুহি রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

‘এখন না পরে শুনবো।রাই তুই খেয়ে রেস্ট কর আর কালকে কিন্তু ঘুরতে বের হবি দরকার হলে একাই বের হবি।’,অর্ক রাইদাকে বলে।

রাইদা কারো কথার জবাব দেয় না।ভিডিও কল থেকে বের হয়ে ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়।

(চলবে..)

(আপনাদের কাছে অনুরোধ ধৈর্য্য ধরে গল্পটা পড়ুন শেষ পর্যন্ত আশা করি নিরাশ হবেন না। এক মেয়ে নিয়ে টানাটানি কিংবা গতানুগতিক প্লটের গল্প আমি লিখছি না।গল্পের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছি অবশ্যই নতুন কোনো চমক গল্পে রেখেই গল্পটা লিখছি।গতানুগতিক রোমান্টিক গল্প লিখলে এত কষ্ট করে গল্পে সাসপেন্স রাখতাম না। গল্পের ৯০%কাহিনী এখনো বাকি।আপনাদের যদি গল্পটা ভালো না লাগে কমেন্টে জানাবেন, তাহলে আমি আর বাকি পর্বগুলো লিখবো না।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here