সে আমার মানসিক শান্তি পর্ব -০৬+৭

#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

দু-চোখ পিটপিট করে মেলে তাকালো আয়াত।নিজেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করে,কিছুটা ভয়ে পেয়ে গেল।আশেপাশের ভারি দেহের কালো পোশাক পড়া,লোক গুলোর দিকে ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আয়াতে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে।কিন্তু ফলাফল শূন্য।মনে এসে হানা দিয়েছে অজানা ভয়।সে,তো নিচে খাবার নিতে এসেছিল।তখন-ই হঠাৎ করে লোকগুলো ঝড়ের গতিতে এসে আয়াত’কে গাড়িতে তুলে নেয়।তারপরে আয়াতে’র আর কিছু মনে নেই।আয়াতে’র ভাবনা’র মাঝে-ই আবরার রুমে প্রবেশ করে,আবরার’কে দেখে কিছু’টা স্বস্তি পায় আয়াত।কিন্তু আয়াতে’র স্বস্তি’টা বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারলো না।আবরারে’র ভয়ংকর কথা আয়াতে’র কলিজা কাঁপিয়ে তুলল।

–তোমার খেলা শেষ আয়াত শিকদার।তোমাকে এখানে-ই থেমে যেতে হবে।এর থেকে বেশি এগোনোর চেষ্টা করলে,তোমার বাবা আর আব্রাহাম দু’জনকে-ই হারাতে হবে।

–আপনি এসব কি বলছেন?আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছেন।আব্রাহাম জানতে পারলে,আপনাকে শেষ করে দিবে?

–হাস্যকর!কেউ আয়াতে’র বাবা’কে নিয়ে এসো।এ-মেয়ে সোজা কথা বুঝবে না।আমাদের বাঁকা পথে হাঁটতে হবে।
আবরারের কথা শেষ হবার সাথে সাথে,একজন কালো পোশাক পড়া লোক,আয়াতে’র বাবাকে সাথে করে নিয়ে আসলো।আয়াতে’র বাবার মাথায় বন্দুক ধরে রেখেছে।তা” দেখে কিছুটা আঁতকে উঠল আয়াত।শীতের মধ্যে-ও তরতর করে ঘামছে আয়াত।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।কিন্তু এখন আর স্বাভাবিক রাখতে পারছে না।আবরার’কে উদ্দেশ্য করে বলল।

–এটা কে?আপনি কাকে ধরে নিয়ে এসেছেন?

–দেখছেন আংকেল!আপনার মেয়ে এখন আপনাকে চিনতে পারছে না?এ” কেমন মেয়ে জন্ম দিয়েছেন?বলল আবরার।

–আয়াত মা তোর সমস্যা কি?আব্রাহাম কি তোকে ভয় দেখিয়ে জোর করে,তোকে আঁটকে রেখেছে?একদম ভয় পাস না মা।বাবা আছে না।সবকিছু ঠিক করে দিবে।তুই শুধু আমাদের সত্যি কথা’টা বল।

–কে আপনি?এসব কি বলছেন?আমি নিজ ইচ্ছায় আব্রাহামে’র কাছে রয়েছি।কেউ আমাকে আঁটকে রাখে নাই।

–নাটক শুরু হয়ে গেল।এই মেয়ে সোজা কথা শোনার মতো মানুষ-ই না।আজাদ আংকেল যখন তোমার কেউ হয় না।তাহলে তোরা আজাদ আংকেল’কে মেরে ফেল।বেঁচে থেকে আংকেলে’র কোনো কাজ নেই।আবরারে’র কথা শেষ হবার সাথে সাথে কালো পোশাক পরিধান করা লোকটি আজাদ শিকদারে’কে গুলি করতে যাবে।তখন-ই আয়াত বলে উঠল।

–আব্বু’কে মেরো না।আমি আব্বুর সাথে বাসায় যাব।বলতে বলতে আয়াতে’র দু-চোখ ভরে এলো।দু-চোখে’র অশ্রুকণা গুলো আড়াল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।আজাদ শিকদার দৌড়ে এসে,মেয়েকে বুকে আগলে নিল।

–একদম ভয় পাবি না মা।তোর বাবা থাকতে তোর কিছু হতে দিবে না।আমি যতদিন বেঁচে আছি।তোর ভয় পাবার কোনো কারন নেই।আবরার তুমি কি পেলে,
আমাদের যেতে দিবে বলো।তুমি যা” চাইবে,আমি তোমাকে তাই দিব।

–আমি যদি আপনার সাথে বেয়াদবি করে থাকি।তাহলে আমাকে মাফ করবেন।আমার টাকা-পয়সা কিছু চাই না।আমার শুধু রজনী’কে চাই আংকেল।আমি কথা দিচ্ছি।আমি রজনী’কে আপনার মতো করে ভালো রাখার চেষ্টা করবো।রজনী’কে ভালো রাখার মতো আমার সার্মথ্য হয়েছে।আপনি আমার সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন।আমাকে যদি আপনার মেয়ের যোগ্য মনে হয়।তাহলে আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবেন।আপনাকে কথা দিলাম।আপনি নিজ হাতে রজনী’কে আমার হাতে তুলে না দাওয়া পর্যন্ত,আমি কখনো নিজের ক্ষমতার অপর ব্যবহার করে,রজনী’কে বিয়ে করবো না।আপনি রজনী’র বাবা।আপনি নিশ্চয়ই রজনী’র খারাপ চাইবেন না।রজনী’র যেটা ভালো হবে।আপনি সেটাই করবেন।আমার লোকে’রা আপনার কোনো ক্ষতি করবে না।আপনারা বাসায় যেতে পারবেন।গাড়ি না নিয়ে আসলে বলবেন।আমি গাড়ি করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবো।

আবরারে’র ওপরে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আয়াতে’র ইচ্ছে করে সবকিছু করেছে।কিছু একটা হারিয়ে ফেলার হাহাকার পড়ে গিয়েছে আয়াতে’র মনে,অসহ্য যন্ত্রানায় বুকটা ভারি হয়ে আসছে।একবার বাবার অসহায় মুখখানার দিকে তাকাচ্ছে।আরেকবার আবরারে’র গম্ভীর মুখের দিকে তাকাচ্ছে।আয়াত’কে করুন চোখে তাকাতে দেখে,আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল।

–আমাকে তুমি মাফ করে দিও আয়াত।তোমাকে আর আব্রাহাম’কে আলাদা না করে দিলে,আমি রজনী’কে পেতাম না।নিজের জন্য এতটুকু স্বার্থপর হয়ে গেলাম।ভেবে-ই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো আবরার।সবাই মিলে যখন-ই রুম থেকে বের হতে যাবে।তখন-ই আব্রাহাম হন্তদন্ত হয়ে রুমের মধ্যে প্রবেশ করল।আব্রাহাম’কে প্রচুর বিধস্ত দেখাচ্ছে।আব্রাহাম’কে দেখে আয়াত কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।আব্রাহাম আয়াতের দিকে এগোতে যাবে।তখন-ই আজাদ শিকদার আব্রাহাম থামিয়ে দিল বলল।

–তুমি চাইলে-ও আয়াত’কে জোর করে নিজের কাছে রাখতে পারবে না।আয়াতে’র সবকিছু মনে পড়ে গিয়েছে।বেশির বাড়াবাড়ি করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

–আপনি যা” ইচ্ছে খুশি করে নিন।আয়াত আমার কাছে-ই থাকবে।তখন-ই আয়াত কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলল।

–কে আপনি?আব্বুর সাথে এভাবে কথা বলছেন কেনো?একদম আব্বুর সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলবেন না?আব্রাহাম আয়াতে’র কথা শুনে,তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আয়াতে’র দিকে তাকালো।ধীর গতিতে আয়াতে’র হাত-পা কাঁপছে।এক হাতে বাবার হাত ধরে রয়েছে।আব্রহাম আবরারে’র দিকে তাকিয়ে মলিন হাসলো।তারপরে আবরারের কাছে গিয়ে বলল।

–তোমাকে ভালোবাসার অনেক মানুষ রয়েছে।আমাকে ভালোবাসা কেউ নেই।এভাবে আমার শেষ সম্বল টুকু কেঁড়ে না নিলে-ও পারতে ভাইয়া।আজ থেকে আমার বেঁচে থাকা’টা কঠিন হয়ে যাবে।এভাবে আমাকে জীবিত লাশ বানিয়ে না দিলে-ও পারতে।দোয়া করি তোমার মনের আশা পূর্ণ হোক।সারাজীবন সুখে থেকো।বলে-ই এক মুহুর্ত দাঁড়ালো না।বিনাবাক্য রুম ত্যাগ করল আব্রাহাম।

আয়াত আব্রাহামে’র যাওয়া’র দিকে তাকিয়ে আছে।কষ্ট বুকটা ভারি হয়ে আসছে।মন হচ্ছে,খুব কাছের জিনিসটা বহুদূরে চলে যাচ্ছে।আব্রাহামে’র এই নীরবতা,শান্ত থাকা।আয়াতে’র ভেতরটা’কে দুমড়ে মুচড়ে ফেলছে।আজাদ শিকদার দেরি করল না।বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।

শিকদার বাড়িতে আজকে আনন্দের মেলা বসেছে।শিকদার বাড়ির প্রতিটি দেওয়াল আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করছে।কতগুলো দিন পরে বাড়ির মেয়ে বাড়িতে ফিরে এলো।আয়াত পাথরের ন্যায় বসে আছে।হারানোর যন্ত্রনায় বুকটা ভারি হয়ে আসছে।জোর করে সবার সাথে তাল মিলিয়ে হাসার চেষ্টা করছে আয়াত।দীর্ঘ সময় বসে থাকার পরে আয়াত,বিরক্ত হয়ে বলল।

–আমি বাহিরে থেকে এসেছি।প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।তোমাদের কথা শেষ হলে,আমি রুমে যাব।আমার বিশ্রাম নেওয়াটা খুব প্রয়োজন।আয়াতে’র কথা শুনে আয়াতে’র আম্মু বলল।

–সবাই এখন আমার মেয়েটা’কে ছাড়ো?আমার মেয়েটা নিজের রুমে গিয়ে বিশ্রাম নিক।আজকে আমি নিজ হাতে আমার মেয়ের জন্য রান্না করবো।সব খাবার হবে,আমার মেয়ের পছন্দের।আয়াত কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেল।রজনী বাসায় নেই।কলেজ শেষ করে।টিউশনে যায়।তারপরে বাসায় আসে।আয়াত চলে যেতে-ই,আজাদ চৌধুরী ড্রয়িং রুমে সবাই’কে নিয়ে আলোচনা করতে বসলেন।

–শুনো রজনী’র আম্মু!চৌধুরী সাহেব রজনী’র জন্য বিয়ের প্রস্তাব রেখেছেন।আমার রজনী’কে তার মেজো ছেলে আবরারের বউ করে নিয়ে যেতে চায়।আমি’ও ভেবে দেখালাম।পুরনো রাগ পুষে রেখে লাভ নেই।তাছাড়া উনার ছেলেটা-ও সফল।আয়াত’কে নিয়ে আসতে আমাকে সাহায্য করেছে।খোঁজ নিয়ে জেনেছি ছেলের চরিত্র ভালো।কোনো বাজে রিপোর্ট নেই।আমি আগে সবকিছু জেনে,তোমাদের সাথে আলোচনা করতে বসেছি।এখন তোমরা সবাই মতামত দাও।

–আমার রজনী রাজি থাকলে,আমি’ও রাজি।কারন মেয়ের সুখে-ই মায়ের প্রকৃত সুখ।তাছাড়া পরিবার’টা তো’ খারাপ না।খালি ওদের বাড়ির ছেলে দোষ করে নাই।আমাদের বাড়ির মেয়ে-ও দোষ করেছে।বলল রজনী’র আম্মু।

–পারিবারিক আলোচনার ওদের না টানলে বেশি খুশি হব।আজাদ শিকদারের গম্ভীর কণ্ঠে সবাই চুপ হয়ে গেল।সবাই মিলে ঠিক করল।রজনী আর আবরারের বিয়ে দিবে।আগামী কাল চৌধুরীদের আসতে বলা হয়েছে।

আয়াত এসে রুমে দরজা লাগিয়ে দিল।ওয়াশরুমে গিয়ে সাওয়ার ছেড়ে দিয়ে,হাউমাউ করে কান্না করে দিল।এতক্ষণ বুকে চেপে রাখা কষ্ট গুলো সাওয়ারে’র পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে।বুকের মাঝখানে ভিষণ ভাবে ফাঁকা অনুভব করছে।সে,তো আব্রাহাম’কে ভালোবাসে না।তাহলে কেনো তার জন্য এত কষ্ট হচ্ছে,নিজেই নিজেকে বুঝ দিল।এটা তোর মায়া আয়াত।কিছুদিন পরে এমনিতে-ই কেটে যাবে।আচ্ছা আব্রাহামে’র কি আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে না।

বিকেলে’র সোনালী আলোয় ফুটপাতে’র রাস্তা ধরে এলোমেলো হয়ে হাঁটছে আব্রাহাম।বুকের বা পাশে অসম্ভব ভাবে ব্যথা অনুভব করছে।কিছু সময়ের ব্যবধানে ছেলেটা কিভাবে এলোমেলো হয়ে গেল।যে,মুখে তিন বেলা নিয়ম করে হাসি থাকতো।সে,মুখে আজ বিষাদের ছোঁয়া।দু-চোখ লাল হয়ে আছে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে।দম নিতে কেমন জানি কষ্ট হচ্ছে,আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিল।নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করল।ব্যর্থ হয়ে নিজেই নিজে চুল গুলো টেনে ধরলো।

চলবে…..#সে_আমার_মানসিক_শান্তি
#পর্ব_০৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

পরের দিন সকাল বেলা,চৌধুরী বাড়ির সবাই এসেছে শিকদার বাড়িতে,সবার অধরের কোণে হাসি বিদ্যমান।সবাই মিলে,হাসি আনন্দে মেতে উঠেছে।রজনী মাথা নিচু করে বসে আছে।তার পাশেই মলিন মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে আয়াত।বাসায় যখন থেকে এসেছে,
মেয়েটা’র মুখে হাসি নেই।সবাই সবকিছু বুঝতে পারলে-ও আয়াত’কে সব সবকিছু মানিয়ে নেওয়া’র সুযোগ দিচ্ছে।আয়াত’কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে,
আজাদ শিকদার বলল।

–আম্মু তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো?বোনের পাশে গিয়ে বসো?আয়াত বিনাবাক্য বোনের পাশে গিয়ে বসলো।সবাই আড্ডা দিচ্ছিলো।এমন সময় ঝড়ের গতিতে আব্রাহাম শিকদার বাড়িতে প্রবেশ করে।কারো সাথে কোনো না বলে,পায়ের ওপরে পা” তুলে,আয়াতে’র সামনাসামনি বসলো,আব্রাহামে’র দৃষ্টি আয়াতে’র দিকে বিদ্যমান।আয়াত একবার আব্রাহামে’র দিকে তাকিয়ে,
চোখ নামিয়ে নিল।হৃদপিন্ডের গতিবেগ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দিগুণ ভাবে বেড়ে চলেছে,আব্রাহাম সবার সামনে এভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে।আয়াতে’র এতে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে,আড়চোখে সবাইকে একবার পরখ করে দিল।সবাই তাদের দিকে,গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে।

–আব্রাহাম এটা কি ধরনের বেয়াদবি?কাউকে বলা নেই?হুট একটা মানুষের বাসায় প্রবেশ করলে,তোমার লজ্জা করল না।বলল সফিউল চৌধুরী।

–একটা বেয়াদবকে তুমি আদবকায়দা শেখাচ্ছো আব্বু।তোমরা যে,কাজে এসেছো!সে,কাজে মন দাও।আমাকে নিয়ে এত ভাবতে হবে না।আমাকে আমার কাজ করতে দাও।কোনো ঝামেলা ছাড়াই চলে যাব।আমার সাথে ঝামেলা করতে আসলে,আমি ঝামেলা করবো।

–অসভ্য ছেলে তোমাকে আমি(বলেই উঠে আসতে চেয়েছিলেন,আজাদ শিকদার থামিয়ে দিয়ে বলল)

–বসে আছে থাকুক।কিছু বলার দরকার নেই।

–এই অসভ্যটা’কে একদম আশকারা দিবেন না।

–নিজে তো’ ভালোবাসো না আব্বু।তাই বলে অন্যকে-ও ভালোবাসতে দিবে না।

–আব্রাহাম তুই তোর কাজ কর।এখানে বড়রা আছে।বড়দের মাঝে কথা না বললে,খুশি হব।আব্রাহামে’র মায়ের কথায় আব্রাহাম চুপ হয়ে যায়।আবরার রাগী দৃষ্টিতে আব্রাহামে’র তাকিয়ে আছে।আব্রাহাম ভুলে-ও আবরারের দিকে তাকাইনি।এতে আবরার প্রচুর ক্ষিপ্ত হলো।

–সব মিলিয়ে কি দাঁড়ালো?এই সপ্তাহের শুক্রবারে রজনী আর আবরারের বিয়ে তাই তো’?বলল আবরারের মা।

–আলহামদুলিল্লাহ তাহলে এই কথাই থাকলো।রজনী আবরার তোমাদের কিছু বলার আছে।

–আপনাদের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।আপনাদের সিদ্ধান্তে আমার কোনো সমস্যা নেই।এখন যদি রজনী’র কেনো সমস্যা থাকে!সবাই রজনী’র দিকে তাকালো।রজনী মাথা নিচু করে আছে।দু-চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে।কালকে বাবাকে বারবার করে, বলেছিল।সে,আবরার’কে বিয়ে করতে চায় না।তবু-ও তার বাবা তার কথার মূল্য দিল না।ভিষণ করে বাবার ওপরে অভিমান হচ্ছে রজনী’র।রজনী’কে চুপ থাকতে দেখে সবার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল।আজাদ শিকদার ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।মেয়ে যদি না করে দেয়।তাহলে তার মান-সন্মান সব শেষ হয়ে যাবে।রজনী তার বাবার অসহায় মুখখানার দিকে তাকিয়ে,নিজের অভিমান গুলো ধরে রাখতে পারলো না।বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে,ভিষণ ভাবে মায়া হলো।মাথা নিচু করে উত্তর দিল।

–আমার কোনো সিদ্ধান্ত নেই।বাবার সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।বাবা যেটা বলবে আমি সেটাই করবো।বলেই উঠে চলে গেল।আজাদ শিকদার করুন দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকালো।বড্ড অভিমান হয়েছে বাবার ওপরে।সবাই মিলে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে ভেবে আগে,রওনা দিল।আজাদ শিকদার আব্রাহামে’র এক হাত ধরে আড়ালে নিয়ে আসলেন।

–তোমার সমস্যা কি?

–আমার কোনো সমস্যা নেই।

–তাহলে এখানে এসেছো কেনো?

–আপনার মেয়েকে দেখতে!

–তোমার লজ্জা করে না।আমার মেয়েকে দেখতে এসেছো?আবার আমাকে-ই বলছো?

–লজ্জা করবে কেনো?আমি কি চুরি করতে এসেছি নাকি?

–তোমাকে যেনো আর কখনো আমার বাসার আশেপাশে না দেখি,যদি দেখেছি তাহলে,আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।

–আয়াত’কে দিয়ে দেন।কথা দিচ্ছি এই জীবনে আপনার বাসার সামনে আসবো না।

–অসভ্য ছেলে!

–আপনি আজ জানলেন,সবাই তো আপনার আগেই জানে!

–আমার ছেলে হলে,কষে দু’টো থাপ্পড় বসিয়ে দিতাম।

–গাল এগিয়ে দিলাম।দুটো না চার টা দেন।তবু-ও আপনার মেয়েকে দিয়ে দেন।আয়াত’কে ছাড়া দম বন্ধ হয়ে আসে আমার।

–দেখো আব্রাহাম তুমি আমার ভালো রুপ দেখেছো?কিন্তু আমার খারাপ রুপ এখনো দেখো নাই।আমি বেঁচে থাকতে আয়াত’কে তুমি কোনোদিন পাবে না।

–আপনার মেয়েকে-ও অন্য কোথাও বিয়ে দিতে পারবেন না।আপনার মেয়েকে যে,বিয়ে করতে আসবে।আমি তাকেই শেষ করে দিব।

–আমি যদি তোমাকে শেষ করে দেই?

–আর আমি যদি আপনার পুরো পরিবার’কে শেষ করে দেই।আব্রাহামে’র শীতল কণ্ঠে বলা কথাটা আজাদ শিকদারের কলিজায় ছুঁইয়ে গেল।ছেলেটা’র শীতল কণ্ঠে বলা কথা গুলো এতটা ধারালো কেনো?ভয়ে পুরো শরীর কাঁপিয়ে তুলে,তার ওপরে একা দাঁড়িয়ে আছে।আজাদ শিকদার মনে মনে ভয় পেল।বাহিরে তা” প্রকাশ করল না।কোনো কথা না বলে,হনহন করে চলে আসলো।আবরার আব্রাহামে’র কাছে এসে শাসিয়ে বলল।

–তোর কোনো জ্ঞান-বুদ্ধি নেই।এভাবে কেউ এখানে আসে?

–তোমার ভাগ্য ভালো।তোমার বিয়েটা আমি হতে দিচ্ছি।আমি তো আর তোমার মতো স্বার্থপর নই।

–হাস্যকর তোর জন্য আমার বিয়ে হচ্ছে,পারলে আটকিয়ে দেখা আমার বিয়ে?

–ওকে ফাইন।বলেই চলে যেতে লাগলো আব্রাহাম।

–কোথায় যাচ্ছিস?

–আয়াত’কে নিয়ে চলে যাব।আব্রাহামে’র কথায় আবরার কিছুটা ভয় পেয়ে গেল।আব্রাহামে’র কাছে এসে,নরম কণ্ঠে বলল।

–তুই ভালোবাসার মূল্যটা বুঝিস।আশা করছি এমন কোনো কাজ করবি না।যেনো আমার বিয়েটা ভেঙে যায়।রজনী’কে আমি অনেক ভালোবাসি।ওকে নিজের করে পাওয়ার জন্য আমি কতটা নিচু মানের কাজ করেছি।সেটা তুই ভালো করেই জানিস।প্লিজ ভাই এমনটা করিস না।রজনী’কে ছাড়া আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।অনেক কষ্ট করে দুই পরিবার’কে রাজি করিয়েছি।তোর অনেক সাহস আছে।তুই জোর করে হলে-ও,আয়াত’কে নিজের কাছে রাখতে পারবি।কিন্তু তুই তো জানিস আমি আব্বু’কে কতটা ভয় পাই।আব্বুর কথার ওপরে কথা বলতে পারি না।এভাবে বড় ভাইয়ের মুখের হাসি কেঁড়ে নিস না।আমার বিয়েটা হয়ে যাক।তারপরে তুই আয়াত’কে যেখানে খুশি নিয়ে যাস।

–তাহলে স্বীকার করলে,তোমার বিয়েটা আমার দয়ায় হচ্ছে,আমি চাইলে মুহুর্তের মধ্যে তোমার বিয়েটা ভেঙে দিতে পারি।কিন্তু আমি তোমার মতো স্বার্থপর নই ভাইয়া।যে,নিজের ভালো থাকার কথা ভেবে,ছোট ভাইয়ের ভালো থাকাটা কেঁড়ে নিব।তুমি আমাকে যে,কষ্ট দিয়েছো?তার জন্য আমি তোমাকে কোনোদিন মাফ করবো না।বলেই আব্রাহাম চলে গেল।আবরার অপরাধবোধে মাথা নিচু করে ফেলল।মলিন মুখ করে,
সবার সামনে আসলো।সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।

আয়াত বেলকনিতে এসে আব্রাহাম’কে দেখার চেষ্টা করছে।এখানেই তো” ছিল।গেল কোথায়।আব্রাহাম’কে দেখার জন্য কেমন অস্থির হয়ে উঠছে।কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে,পেছনে ঘুরে তাকালো আয়াত।রজনী’কে দেখে আবার নিজের কাজে মন দিল।বোনের মলিন মুখটা দেখে রজনী’র বুকটা কেঁপে উঠল।রজনী কাউকে ভালোবাসে নাই।তবে ভালোবাসলে যে,কষ্ট পেতে হয়।তা” কাল থেকে আয়াত’কে দেখে বুঝতে পারছে।আব্রাহামে’র কাছে ছিল।মেয়েটা বেশ ভালো ছিল।বাবার কি দরকার ছিল।আয়াত’কে নিয়ে আসার।ছেলেটা’কে-ও দেখলাম।একদিনের ব্যবধানে কতটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।ভালোবাসলে বুঝি এমনই কষ্ট পেতে হয়।ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।

–আয়াত আব্রাহামে’র কথা মনে পড়ছে?

–আব্রাহাম কে আপু?

–হয়েছে বোনের সামনে আর নাটক করতে হবে না?আমি সবকিছু জানি!

–এসব কি বলছো আপু?আমি তোমার কথার কিছুই বুঝতে পারছি না?

–ভালোবাসা কাকে বলে,আমি জানিনা রে বোন।তবে তোকে আমি আব্রাহামে’র জন্য কষ্ট পেতে দেখেছি!আব্রাহাম’কে তোর জন্য শেষ হতে দেখেছি।সব শেষে একটা কথাই বলবো।তোদের আলাদা করে দেওয়াটা একদম ঠিক হয় নাই।বলেই চলে গেল রজনী।রজনী চলে যাওয়া’র পরে আয়াত হালকা হাসলো।

–আমাকে আর আব্রাহাম’কে যদি আলাদা না করতো?তাহলে তোমার আর আবরার ভাইয়া’র বিয়ে কিভাবে দিত আব্বু?আব্বু ক্ষমতা আরো শক্ত করতে হবে না।নিজের মাথার ছাদ শক্ত করতে গিয়ে,আমার ভালো থাকাটা’ই কেঁড়ে নিল।তোমাদের অনেক ক্ষতি করেছি।আর কোনো রকম ক্ষতি করতে চাই না।আমার ভাগ্যে যা” আছে।তাই হবে,আমি সবকিছু ভাগ্যের ওপরে ছেড়ে দিয়েছি।আমি আব্রাহাম’কে যতই ঘৃণা করি না কেনো?তাকে ছাড়া বেঁচে থাকা,আমার কাছে মৃত্যুর সমান।বেলকনি থেকে আয়াত রুমে এসে,খেয়াল করল কয়েকজন লোক আয়াতে’র সকল বই-খাতা,
জামা-কাপড় হসপিটালে আয়াতে’র যা” যা” ছিল।সবকিছু আব্রাহাম বাসায় পৌঁছে দিয়েছে।আয়াত একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।বইগুলো তুলে নিজের পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখলো।আয়াত’কে বই তুলতে দেখে রজনী বলল।

–আব্রাহাম’কে চিনিস না।তার দেওয়া জিনিস গুলো,ঠিকি যত্ন সহকারে তুলে রেখে দিচ্ছিস।

–আপু তোমার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।দু’দিন পরে তোমার বিয়ে,কোথায় তুমি পার্লারে থাকবে।নিজের রূপচর্চা করবে।তা-না করে ছোট বোনের পেছনে পড়ে আছো।

–বাবাকে বলেছি।আমার সাথে তোর বিয়েটা-ও দিয়ে দিতে।বাবা বলেছে ভেবে দেখবে?

–এমন করলে,আরোহী আপুর মতো আমি’ও পালাবো।অল্প বয়সে বিয়ে করে,নিজের জীবন শেষ করতে চাই না।

–এই কথা আর কারো সামনে বলিস না।তোকে আস্ত রাখবে না।তোকে কে বলেছে,বিয়ে করলে জীবন শেষ হয়ে যায়।

–আপু ভালো লাগছে না।আমাকে একা থাকতে দাও।

–তুই এমন হয়ে গেছিস কেনো রে আয়াত?

–আমি আগের মতোই আছি।এবার আমাকে একা থাকতে দাও।

–সন্ধ্যায় শপিং করতে যাবে সবাই।তোকে রেডি হয়ে থাকতে বলেছে।আমি এটাই তোকে বলতে এসে ছিলাম।বলেই রজনী চলে গেল।

আব্রাহাম হসপিটালে বসে আছে।এমন সময় আব্রাহামে’র বাবার ফোন আসলো।আব্রাহাম মলিন হেসে ফোনটা তুলল।

–দেখতে পেলে না।তোমার বড় ভাইয়ের বিয়ে,কোন আক্কেলে তুমি হসপিটালে গিয়ে বসে আছো।তাড়াতাড়ি বাসায় আসবে।

–আমার কাজ আছে।আমি যেতে পারবো না।আমি হসপিটালে বসে বসে খাই না।

–বেয়াদব আমার মুখের ওপরে কথা বলছো?দশ মিনিটের মধ্যে বাসায় দেখতে চাই তোমাকে!

–আব্বু আমার সাথে ভালোবেসে কথা বলো না কেনো?আমার সাথে একটু ভালোবেসে কথা বললে,তোমার কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে।সফিউল চৌধুরী কোনো কথা না বলে,কল কেটে দিল।আব্রাহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়লো।

চলবে…..

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here