সোনার_সংসার পর্ব ১২

#সোনার সংসার
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১২

সবাই সামনে তাকিয়ে দেখে সাদিয়া বউ সাজে দাঁড়িয়ে আছে।তার পাশেই হৃদয় সাদিয়ার লাগেজ হাতে দাঁড়িয়ে আছে।সবাই যেন ভূত দেখার মত চমকে গেছে,শরীফও সাদিয়ার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।সাদিয়ার পড়নে লাল রঙের একটা কাতান শাড়ি,গায়ে বারি গহনা,আর হালকা সাজ,এতেই বেশ লাগছে সাদিয়াকে।সাদিয়া এসব দেখে হেঁসে বলে উঠল,,,

“বাব্বা সবাই আমাকে দেখে কী শক খেলে নাকি?এতটাই শক খেয়েছো যে চোখের পলকই ফেলছো না।”

সাদিয়ার কথায় সবার হুশ আসল,আর সাদিয়ার কথার সাথে হৃদয় তাল মিলিয়ে বলল,,,

“আরে না শক খায় নি কিন্তু তোমার উপর সবাই ক্রেরাশ খাইছে,তাই এভাবে তাকাইয়া আছে।”

“ততুমি এই সাজে এএএখানে কেন?” (শরীফের মা ভয়ে ভয়ে বলল)

“এত কথা বলতে পারব না,কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি সে হিসাব আছে আপনাদের কারো।তখন থেকে ত চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছেন।এবার ত তাড়াতাড়ি বরন করুন,খুব গরম লাগতাছে বাইরে।”

“এই মেয়ে ঠিক করে কথা বলো।আর তোমাকে বরন কেন করব?তুমি কী নতুন বউ যে বরন করব তোমাকে?” (শরীফের চাচি)

“অবশ্যই সে নতুন বউ,দেখছেন না বউ সাজে এসেছে।তাই কথা না বাড়িয়ে আমার ব বউকে বরন করুন।”(হৃদয়)

এতক্ষণ কে কী বলেছে তার কোন কথাই শরীফের বোধগম্য হয় নি,কিন্তু হৃদয়ের আমার বউ কথাটা তার কানে বারি খেলো।শরীফ আর কিছু না ভেবেই হৃদয়ের কাছে তেড়ে গিয়ে কলার চেপে ধরে চিল্লিয়ে বলল,,,

” আমার বউ মানে?তুই কী বলতে চাইছিস,তুই সাদিয়াকে বিয়ে করেছিস?সাদিয়া তোর বউ?”

“আরে আমি এটা কখন বললাম!আমি ত বললাম সাদিয়া আমার ব বউ।”

“তুই আবারও সাদিয়াকে নিজের বউ বলছিস!”

কথাটা বলেই শরীফ রেগে হৃদয়ের নাকে একটা ঘুসি মারল,আর সেটা দেখে সাদিয়া শরীফকে টেনে অর পাশে দাড় করিয়ে শরীফের হাত চেপে ধরে বলল,,,

“হে খোদা আমার কপালে কী এই হাম্বা মার্কা জামাই লিখে রাখছিলা!”

“হাত ছাড়ো আমার,নয়ত খারাপ হয়ে যাবে।কত্ত বড় সাহস দেখছত,আমাকে ছেড়ে আমার বন্ধুকে বিয়ে করেছে আর বিয়ে করে আমার বাড়িতে এসে বলছে বরন করতে।এই মুহূর্তে তোমরা ডিভোর্স পেপারে সাইন করবে,নয়ত তোমাদের দুইজনকে মেরে এখানে পুঁতে ফেলব।”

“ঠাডাইয়া দুইটা থাপ্পড় লাগামু,তোমাদের ছেলেদের এই এক স্বভাব বরাবরই চৌদ্দ লাইন বেশি বুঝো।(দয়াকরে কেউ সিরিয়াসলি নিবেন না কথাটা।)এমন নাউজুবিল্লাহ মার্কা কথা কে বলছে তোমাকে হে?হৃদয় ভাইয়াকে আমি আমার বড় ভাইয়ের নজরেই দেখি।আর তুমি কী না ছিঃ ছিঃ ছিঃ।”

“কী বলতে চাইছো তুমি হে?আমি বোকা,আমি কিছু বুঝি না,ফিডার দিয়ে দুধ খাই আমি হে?হৃদয় দুইবার বলছে আমার ব বউ,এতে কী বোঝায় হে?”

“পুরো কথাটা না শুনেই তুলকালাম চালু করছত তুই,আরে আমি বলছি আমার বন্ধুর বউ,ব দিয়ে বন্ধু প্রকাশ করছি।মজা করে সংক্ষেপে বলছি,আর তুই আমাকে মারলি।আর জীবনে মনে থাকলে সংক্ষেপে কিছু বলব না।”

কথাটা বলেই হৃদয় ভাইয়া রুমাল দিয়ে নাক মুছল,আমি মুখ টিপে হাসছি।আর শরীফ ভ্যাবলার মত একবার হৃদয় ভাইয়ার দিকে তাকাচ্ছে।আরেকবার আমার দিকে তাকাচ্ছে,আমি সেটা দেখে বলে উঠি,,,

“জি জনাব হাম্বা মার্কা জামাই হৃদয় ভাইয়া এটাই বলেছে,আপনি কী তা এখন বুঝতে পারছেন?”

শরীফ আমার কথা শুনে রাগি ভাবে আমার দিকে তাকাল,আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে বাড়ির ভিতরে ডুকি আর বলে উঠি শ্বাশুড়ি আম্মাকে,,,

“বরন ত করলেন না তাই একাই ডুকে গেলাম,কারন বাড়িটা ত আমারই শ্বশুর বাড়ি তাই না।যাই হোক আমি রুমে গেলাম,পরে কথা বলব।”

কথাটা বলে সিড়ি বেয়ে উপরে আসতে নিলেই শ্বাশুড়ি আম্মা রেগে বলে উঠে,,,

“এই মেয়ে তুমি আমার বাড়িতে ডুকেছো কোন সাহসে হে?আর এসবের মানে কী?যখন মন চায় চলে যাবে,আবার যখন মন চায় ফিরে আসবে!”

“এই যে শ্বাশুড়ি আম্মা,,,For your kind information এই বাড়িটা আপনার বাড়ি নয়।এটা আমার শ্বশুর বাড়ি,শ্বাশুড়ি বাড়ি না।আপনি আমার শ্বাশুড়ি,শ্বশুর ত নন।তাই আপনার বাড়ির কথাটা বলবেন না।আর আমার শ্বশুর বাড়ি আমার সংসার,আমার শ্বাশুড়ি বাড়ি ত নয়।তাই যা মন চায় তা করব।”

কথাগুলো বলে সাদিয়া উপরে চলে গেলো,আর সাদিয়ার শ্বাশুড়ি পুরাই কনফিউজড সাদিয়ার কথায়।শ্বাশুড়ি বাড়ি না শ্বশুর বাড়ি এসব ভেবে উনার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল তাই উনার জা কে বলল ঘরে দিয়ে আসতে।সাদিয়াকে উনি পরে দেখে নিবেন।
আর এইদিকে শরীফ পুরাই অবাক।এ কোন সাদিয়াকে দেখছে শরীফ,যে সাদিয়া আগে শত কষ্টের পরও মুখ দিয়ে কোন কথা বের করত না আর এখন যেন মুখ খুললেই আগুন বের হয়।শরীফকে এভাবে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে পিছন থেকে শরীফের কাঁধে হৃদয় হাত দিয়ে বলে উঠল,,,

“ভাই এত অবাক হইস না,কারন সামনে দিয়ে এমন আরো অনেক কিছু হবে সেটার জন্য অবাক হওয়াটা বাঁচাইয়া রাখ।”

শরীফের এবার কিছু মনে পড়ে যায় আর রেগে হৃদয় কে বলে উঠল,,,

“তুই সাদিয়াকে এখানে নিয়ে এসেছিস তাই না?কেন নিয়ে এসেছিস এখানে সাদিয়াকে?জায়গাটা অর জন্য একদমই সেফ নয় তুই কেন ওকে এখানে আনলি?”

“সাদিয়াকে হৃদয় নয় আমি এনেছি,আর তুই কী বলতে চাইছিস সাদিয়া এখানে সেফ নয় মানে কী শরীফ?”

পিছন থেকে সজীব কথাটা বলে উঠে,শরীফ এতটাই রেগে ছিল যে কী বলতে কী বলে ফেলেছে সেটা এখন খেয়াল হল।তাই শরীফ নিজেকে সামলে বলে উঠল,,,

“যে মেয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে পারে সেই মেয়েকে আমি ফিরে পেতে চাই না,কারন কখন কী করে বসে তার কোন ঠিক নেই তাই বলেছি সেফ নয় আমাদের জন্য!”

“শরীফ তুই কী বলছিস এসব,সাদিয়া মোটেও ওমন মেয়ে নয় আর সাদিয়া পালিয়ে গিয়েছিল মানে?” (হৃদয়)

“আমি বলছি পালিয়ে গিয়েছিল নাকি কেউ ওকে সরিয়ে ফেলেছিল!”

কথাটা সজীবের পাশে থেকে শরীফের ভাবি বলেছে,উনি উনার মেয়েকে নিয়ে হসপিটালে গিয়েছিল তাই এতক্ষণ এখানে ছিল না।আর সজীব সাদিয়া আর হৃদয় কে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে উনার বউ আর মেয়েকে হসপিটাল থেকে নিয়ে এসেছে।শরীফের ভাবির কথাটা শুনে শরীফ কিছুটা গাবড়ে গেলো,,,তাই আমতা আমতা করে বলল,,,

“সরিয়ে ফেলছে মানে কককী বলতে চাইছেন ভাবি?”

“এটাই বলতে চাইছি যে সেদিন তোমার বিয়ের রাতে তুমি সাদিয়াকে এই বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলেছো।”

শরীফের ভাবির কথা শুনে সবাই যেন আকাশ থেকে পড়ল,শরীফ সাদিয়াকে সরিয়ে ফেলেছিল মানে কী?শরীফের বিয়ের পরের দিন যখন সাদিয়াকে কেউ খুঁজে পায় নি তখন সবাই ভেবেছে সাদিয়া এই কষ্ট,যন্ত্রণা শয্য করতে না পেরে পালিয়ে গেছে।তার জন্য ব্যাপারটা কেউ ঘাটে নি কিন্তু এখন ত অন্য কিছুই শুনছে।

“শরীফ সরিয়ে ফেলেছে মানে?কেন করল শরীফ এমনটা?” (হৃদয়)

“ভাবি আপনি এএএসব কী উল্টাপাল্টা বলছেন?আআমি সাদিয়াকে সরিয়ে ফেলেছি মানে?”

“তুমিই ত সে,,,

শরীফের ভাবি আর কিছু বলবে তার আগেই শরীফের বড় ভাই বলে উঠল,,,

” তুমি থামো ঘরে যাও,স্বর্নাকে খাওয়াও গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে কিছু খায় নি।আমি দেখছি এদিকটা।”

তারপরও শরীফের ভাবি কিছু বলতে চাইলে সজীব চোখ পাকিয়ে তাকায় তার জন্য উনি কিছু না বলে মাথা নিচু করে চলে যায়।শরীফও সুযোগ বুঝে সেখান থেকে চুপচাপ কেটে পড়ে কারন এখানে থাকলেই বড় ভাই আর ঐ মীরজাফর বন্ধুটা চেপে ধরবে।যার উওর শরীফ এখন দিতে চায় না তাই চুপচাপ চলে যায়।সেটা দেখে সজীব আর হৃদয় হেঁসে ফেলে একসাথে।

______________________________

আমি আমার রুমে চলে এলাম,এই রুমটাতে বিয়ের পর আমি আর শরীফ থাকতাম।আজ কতদিন পর এই ঘরে এলাম,ভেবেই চোখের কোনে পানি জমা হল।রুমটা এখনও আগের মতই গুছানো,এই রুমটাতে কত স্মৃতি জমা আছে।আমি রুমের প্রতিটা জায়গায় ছুঁয়ে দিচ্ছি,আমি যখন এসব ভাবনায় মশগুল তখন দরজা খোলার আওয়াজে আমি পিছন ফিরে দেখি শরীফ দাঁড়িয়ে আছে।আমি সাথে সাথে পিছন ফিরে চোখের পানি মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে কিছু বলতে যাব তখনই ঠাস করে একটা থাপ্পড় পড়ে আমার গালে,আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।তারপর শরীফ আমাকে কিছু না বলেই হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।থাপ্পর দেয়ার পর কান্না পেলেও এখন খুব রাগ হচ্ছে,,,

“কী ভাব দেখেছো থাপ্পড় মারলি ত মারলিই কারনটা ত বলে যেতি।তবে না হয় মনকে বুঝ দিতাম যে এই কারনে মারলি। শালা হিটলার দেখে নিব তোকে।”

অন্যদিকে শরীফ ছাঁদে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে,,,

“কেন ফিরে এলে এখানে?দূরে ছিলে সেখানেই ত বেশ ছিলে,কেন এখানে ফিরে এলে?”

#চলবে,,,

(বিদ্র ১ঃ সাদিয়ার এই নতুন রূপ কেমন লাগছে আপনাদের জানিয়ে যান🥰)

(বিদ্র ২ঃ খেলতাম না আমি☹️,,,এত বড় করে দেই তারপরও বলে ছোট কইরা দেই😭।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here