স্বপ্নময় ভালোবাসা
রোকসানা আক্তার
||পর্ব-০৯||
তুরাব ভাইয়া যাওয়ার একদিন পরই মা অসুস্থ হয়ে পড়ে।মা একজন হার্টের রোগী।চিনচিন ব্যথানুভূতি বুকের ঝুঁলিতে প্রায়ই লেগে থাকে।কখনো কম আবার কখনো বেশি।এরজন্যে কুমিল্লায় ডাক্তারও দেখিয়েছি।ডাক্তার দেখানোর পর অনেকটা সেড়েছে। সেই সুপ্ত ব্যথাটা কাল আবার হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।তীব্র ব্যথা!সাথে বমি এবং ঘামের গলদশ্রু!কিছুতেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। এ নিয়ে হিতাহিতজ্ঞান শূন্যে কি থেকে কি করবো ভেবে পাই না।
বার কয়েক আকাশকে বলেছি।সে বলেছে বুকের ব্যথাটা স্বাভাবিক কিছু নয়। হার্ট এ্যাটাকও হতে পারে।ইমার্জেন্সী মাকে নিয়ে ঢাকায় যেতে।প্রয়োজন হলে সে নিজেই মাকে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখবে।
তবে,হুটহাট ঢাকায় যাওয়ার মতো আমার তেমন প্রস্তুতি এই মুহূর্তে নেই।অসুস্থ মাকে ঢাকায় নিয়ে আবার কুমিল্লায় ব্যাক করা জার্নির ব্যাপার।তারউপর একদিনে রিপোর্ট বেরুনোর পসিবিলিটি খুবই কম।আল্লাহ নাহ করুক রিপোর্ট যদি খারাপ আসে তখনতো ঢাকায়ই থাকতে হবে।আর থাকলেও কোথায় থাকবো ?ঢাকায় কে আছে আমাদের? হোটেলে কোনোমতে রাত্রি যাপন করার মতো সেই কানাকড়িও নেই!মার ডাক্তারখানার টাকা জোগাড় করতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে!আর ওখান দিয়ে অবসাদগ্রস্ত মা!
ভাবতে ভাবতে স্থির দৃষ্টিতে ওই দূরের দুটো সন্ধেভেঁজা কাকের দিকে তাকিয়ে থাকি।এমতাবস্থায় মা তার জবুথবু পায়ে এদিকে আসেন।একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আমার পাশ ঘেষে দাঁড়ান।অত্যন্ত ভাঙ্গা এবং কাতরানো গলায় বলেন,
“সানারে?”
আমি স্থির দৃষ্টিতেই মায়ের দিকে ফিরি।মা আবার বললেন,
“একটা কাজ করতে পারবি,মা?”
আমি আলতো উপরে-নিচে মাথা ঝাঁকাই।মা বললেন,
“শাহিদাকে একটু কল দিতে পারবি,মা?”
কথাটা শুনে খানিকটা বিস্মিত হলেও মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে তা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারিনি।খানিক হেসে দিয়ে মাথা নাড়ি। তারপর পেছনে ঘুরে সন্তপর্ণে পায়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে মোবাইলটা নিই।”শাহিদা খালামণি”-নাম্বারের উপরে টাস করে মায়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে।ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই মা বলেন,
“হ্যালো,শাহিদা?”
——–
“আছি এই আরকি।তবে বুকের ব্যথাটা আবারো বাড়ছে”
—–
“আরেহ চিন্তা করিস মা।কিছু হয়নি। এমনিতেই ব্যথা হচ্ছে।তা যেটা বলতে কল করলাম।”
——–
“তুরাব আমাদের বাসায় আসছিলো।তোরে যেয়ে কিছু বলছে?”
——
“বলে নাই?”
——
“ওহ।”
——
“আরেহ কি কস।গলার কথা ঠিক আছে।শরীরও ভালো আছে।চাপ নিস না ত!”
—–
“সানার কাছে দিতাম?”
—–
খালামণির কলটা লাইনে রেখেই মা আমায় ডাকলেন।আমি কাছে গেলাম।মা বললেন,
“ধর।তোর খালামণি তোর সাথে কি নাকি কথা কইবো।কথা ক।”
আমি কিছুটা অপ্রস্তুত বোধ করে ফোনটা হাতে নিই।ক্ষীণ এবং ছোট গলার কন্ঠে বললাম,
“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম, আন্টি? ”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।সানা বুবুর শরীর কি ঠিক আছে?বুবুর কথাবার্তা এমন রোগা রোগা শোনাচ্ছে কেন?ব্যথা কি খুবই বেশিই?”
“বেশি বলতে।কাল যে ব্যথা শুরু হয়েছে এখনো কমেনি।তাছাড়া,প্রচুর ঘামাচ্ছে আর দু’একবার বমিও করেছে।”
“কি!তুই এখনো বুবুকে নিয়ে বসে আছিস?তুই একটা কাজ কর!সন্ধের বাসেই ঢাকায় চলে আয়!দ্রুত!”
“কিন্তু খালামণি…।!”
“কোনো কিন্তু নয়।”
“এখন গেলে ডাক্তার ত আর পাবো না।”
“তাহলে কাল ভোরে রওনা করিস।ঠিক আছে?”
আমি খালামণির কথার পিঠে “না”-উত্তর করার সাহস পেলাম না।তমাকে ঢাকায় নেওয়াটা আসলেই এখন খুব জরুরি। মা ছাড়া এই পৃথিবীতে আমার কেউ নেই!মানসম্মানের কথা ভেবে মাকেই যদি না বাঁচাতে পারি তাহলে একশোটা সম্মামনার সার্টিফিকেট নিয়ে ঘুরলেও এই জীবনটা ব্যাখ্যা হীন,অর্থহীন,অমূল্য,নিষ্ঠুর!বললাম,
” জ্বী,আচ্ছা।”
আন্টি খুশি হয়ে কল কাটেন।
সকালের দিকে মাকে নিয়ে রওনা করি।আর বের হওয়ার আগেই আকাশকে কল করে জানিয়ে দিই যে ঢাকায় যাচ্ছি! আকাশ বললো,যাত্রাবাড়ী আসার সঙ্গে সঙ্গেই ওকে কল করতে।ও তার পরিচিত কাউকে পাঠাবে আমাদের সোঁজা হাসপাতালে নিয়ে যেতে।মাকে একেবারে চেকআপ-টেকআপ করা শেষ করে তারপর খালামণির বাসায় যেতে।আমি কথাটা হেলাফেলা না ফেলে দিয়ে অবিলম্বে মেনে নিই।।।
ন’টায় বাসস্ট্যান্ডে নামলেই একজন মাঝবয়সী লোক এসে আমাদের রিসিভ করে।তিনি সৌজন্যতা স্বরূপ হাসি দিয়ে আকাশের কথা বলেন।আমরাও সহজ-সাবলীলতায় লোকটির আতিথেয়তা সাদরে গ্রহণ করি।তারপর তিনি একটা সি.এন.জি করে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন।আমি এগিয়ে সি.এন.জি ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে যেতে নিলেই আকাশের পরিচিত সেই লোকটি বললো,
“ভাড়া দেওয়া লাগবে না।আকাশ ছার আগেই দিয়া দিছেন।”
আমি কথাটা শুনে লোকটির দিকে হতচকিতে তাকাই।লোকটি হেসে ফেলে।হাসিতে বুঝাচ্ছে-পরিচিত মানুষজন এরকম একটুআধটু করতেই পারে।
আমি মনে মনে খুব রাগ হলাম আকাশের উপর।এবার শুধু ভালোয় ভালোয় চেম্বারে ঢুকি তারপর তাকে দেখাবো মজা!এত মের্সিফুল কে সাজতে বলছে!!!
ভেতরে ঢোকার পর রিসিপশনে যাই।রিসিপনিস্ট মায়ের নাম লিখে নিয়ে সিরিয়াল নাম্বার দেন।আমি সিরিয়াল নাম্বার দেখে জিহবা দু’হাত বের করে হা এর মতো তাকিয়ে থাকি।আমাদের সিরিয়াল নাম্বার একশো!আর এখন চলছে মাত্র পনেরো!
আকাশের চেম্বারে ঢুকতে ঢুকতে ত রাত হবেই মাস্ট!
রিসিপনিস্ট বললেন,
“আপনারা কোথাও যেয়ে ঘুরে আসুন।আর ঘুরতে না ইচ্ছে হলে ওখানে বসে থাকুন।”
“জ্বী, আচ্ছা! আর শুনুন ম্যাম?”
“ইয়েস?”
“বিকেলের মধ্যেই কি ডাক্তারকে দেখিয়ে বেরুতে পারবো?”
“নট সিউর,ম্যাম।”
“ওহ।”
বলেই বেজার মুখ করে মাকে নিয়ে কোণার একটা সিটে বসি।আর ফোনটা হাতে নিয়ে আকাশের নাম্বারের উপর ঘুটঘুট করতে থাকি!!
মনে মনে কেনজানি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে আকাশের নাম্বারে কল দিই।দুই তিনবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়নি।আবারো বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা পাশে রাখি।
অতঃপর ত্রিশ মিনিট কেঁটে যাওয়ার পর আকাশ নিজেই ব্যাক করে।অস্থির গলায় বললো,
“স্যরি,স্যরি সানা।আসলে এতক্ষণে আমি রোগী দেখতেছিলাম।কোথায় তুই?এসেছিস?”
“ত্রিশ মিনিট আগে!”
“কি!আচ্ছা ওয়েট কর।তোর সিরিয়াল কত?”
“একশো।”
“ওকে,রাখ।আমি রিসিপশনে কল করতেছি।”
চলবে…
(কাল দুই পর্ব দিন।আসলে ফোনে একটু প্রবলেম ছিল।)