স্বপ্নের চেয়ে মধুর পর্ব -০১

#স্বপ্নের_চেয়ে_মধুর❤️
লেখাঃ সুমাইয়া ইসলাম মিম

পর্ব-এক
.
“বাবা প্লিজ! তুমি অন্তত একটু বুঝার চেষ্টা করো। এই অসভ্য, জানোয়ারটাকে আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না।”

-“আমি বুঝতে পারছি না বেলা, এই ছেলে তোমার পিছু কি করে পড়লো?”

-“আমার ভাগ্যটাই বোধহয় এমন! নয়তো কি এমন ধোকা খাই?”

-“মানে কি?”

-“ফ্রেন্ড সেজে এসেছিল আমাদের ফ্রেন্ডদের মাঝে, এমন পিঠ পিছে ছুড়ি ঘোরাবে বিন্দুমাত্র আভাস পাই নি বাবা!”

মেয়ের এমন কথা শুনে বেশ হতাশ হলেন বেলাল শেখ। বেলা তার কেমন মেয়ে সেটা সে জানে। তবে তার মতো একটা শান্ত মেয়ের পিছনেই এমন বদমাশ কি করে পড়লো বুঝতে পারছেন না তিনি। কথার মাঝে আদ্রিতা জামান ওরফে বেলার মা বেশ চিন্তিত স্বরে বলে উঠলেন,

-“এখন কি করা যায় বলো তো? আমার মেয়ে যে এক বিন্দুও মিথ্যে বলছে না তা আমি খুব ভালো করেই জানি।”

-“আম্মু আমি পালিয়ে যাব।”

মেয়ের এহেন কথায় চমকে উঠলেন বেলাল ও আদ্রিতা। কি বলছে মেয়ে! বেলার মা মেয়ের বাহু ধরে নিজের দিক ফিরিয়ে বললেন,

-“পাগল হয়েছিস? সারা বাড়ি পাহারায় বসিয়েছে রাফাত! তুই কিভাবে পালাবি? আর কোথায় যাবি?”

বেশ চিন্তিত দেখা গেল বেলাকে। বেশ কিছুক্ষণ ভেবে ক্ষোভ নিয়েই বলল,

-“আমি চট্টগ্রাম যাব বাবা! তুমি ব্যবস্থা করো। আর যাই হোক রাফাতের কাছে নিজেকে আমি কিছুতেই বিলিয়ে দিতে পারব না। যেখানে আমার কোন দোষ নেই সেখানে ওর মতো একটা রাবিশ আমার শাস্তি হতে পারে না বাবা!”

মেয়ের কথায় সায় দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন বেলাল। আদ্রিতা শঙ্কা নিয়ে চেয়ে আছেন স্বামী ও মেয়ের দিকে। তার এতোটুকু মেয়ে আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। নিজের ভালো বুঝতে শিখেছে।

.
রাত পেরোলেই রাফাত আবার হানা দিবে বাসায়। এর আগেই মেয়েকে বিদায় দিতে হবে তাদের। মাঝারি একটা ব্যাগে বেলা তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে নিল। কালো বোরকা পরিধান করে নিজেকে ঢেকে নিল পুরোদস্তুর। মেয়েকে রেডি দেখে আদ্রিতা এগিয়ে এলেন। তার চোখ টলমল করছে জলে।

-“তুই কোথায় থাকবি? চট্টগ্রামে আমাদের কোন রিলেটিভও নেই! তুই..”

-“কাম ডাউন আম্মু! এটা আপাতত আমি তোমাদের বলতে পারব না। তবে বিশ্বাস করো তো আমাকে?”

বেলাল শেখ এগিয়ে এসে বেলার মাথায় হাত রাখলেন।

-“খুব বিশ্বাস করি রে মা তোকে! তুই আমাদের একটা মাত্র মেয়ে। মা ভয় হয় রে তোকে নিয়ে।”

বেলা বাবার দিকে তাকিয়ে তার হাতে হাত রাখলো। সুপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলল,

-“আমি ভালো থাকব বাবা। আর চিন্তা করো না তোমাদের খোঁজ আমি ঠিকই নেব।”

ঘড়ির ঢং ঢং শব্দে চকিতে ঘড়ির পানে তাকালো বেলা। বারো টা বেজে গেছে। ট্রেন ধরতে হবে রাত দু’টোর। বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে চুপিসারে বাবা মায়ের ঘরের বারান্দা বেয়ে চুপচাপ নিচে নেমে গেল সে। বোরকাটা খুলে নিয়ে ছিল আগে। নিচে নেমেই আগে গায়ে বোরকা জড়ালো। আশেপাশে বিশ থেকে পঁচিশ জনের মতো টহল দিচ্ছে। তবে পাশের বিল্ডিং এর দেয়ালটা টপকেই তাকে বের হতে হবে। সব কৌশল ভেবে নিয়ে আস্তে করে পাশের বিল্ডিং এ চলে গেলো। সেখানের গেট থেকে বের হলো নাসিমা আন্টির সাহায্যে। উনাকে অনেক আকুতি করার পরেই বিষয় টা বুঝে সাহায্য করলেন বেলাকে। যতই হোক মেয়েটাকে তিনি ছোট থেকেই চিনেন।

.
এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই বেলা হাফ ছাড়লো। এখানে বেশিক্ষণ থাকাও তার জন্য নিরাপদ নয়। হাত ঘড়িটায় চোখ বুলিয়ে দেখলো রাত একটা বেজে পাঁচ মিনিট। তাকে খুব দ্রুত যেতে হবে। এই রাতে যানবাহন তেমন নেই বললেই চলে। সে হাটতে হাটতেই একটা সিএনজি পেয়ে আর দেরি করলো না। উঠে পড়লো কমলাপুর রেলস্টেশন এর উদ্দেশ্যে।

স্টেশনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দুইটা বারো বেজে গেল। আতংক নিয়ে তাকিয়ে দৌড় দিলো স্টেশনের দিকে৷ মাইকিং করছে ইতিমধ্যে। বেলা টিকিট কেটে ট্রেনের উদ্দেশ্যে দৌড় দিতেই ট্রেন আস্তে করে চলতে শুরু করলো। বেশ ভয়ে পেয়ে যায় বেলা। বোরকা হাত দিয়ে তুলে বেশ দ্রুত গতিতেই সে ট্রেনে উঠে পড়লো। আশপাশের মানুষ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছিল তাকে। কেউ কেউ তো বলেও উঠলো, “এই মেয়ে মরার ভয় নেই?”

ট্রেনে উঠে হাফ ছাড়লো বেলা। এই নিকষকালো রাতে একা বাড়ি থেকে এভাবে পালিয়ে এসেছে সে। মরার ভয় থাকলে পালাতে পারতো বুঝি!
নির্দিষ্ট সিটে বসে বেলা বাইরে তাকালো। সব কেমন অন্ধকার! আচ্ছা বাইরের আধাঁর কি তার জীবনের এই অনিশ্চয়তার চেয়েও বেশি কালো?

হঠাৎই চোখ বুঝে গেল সে। তার ঘুম পাচ্ছে। খুব ঘুম পাচ্ছে।

.
আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে হাসলো রাফাত। রাত পোহালেই সে নিজের প্রেয়সীকে নিজের করে নিবে। বিয়ে করবে তাকে। সে জানে তার প্রেয়সী তাকে ঘৃণা করে তবুও সে তাকেই বিয়ে করবে। তা ধারণা ভালোবাসা পেলে মেয়েরা সব ভুলে যায় সব। বেলাকে সে অনেক অনেক ভালোবাসবে, তাহলেই আর তাকে না মেনে যাবে কোথায়?

বিছানায় বসে বালিশের দিকে তাকিয়ে ভাবলো কালকে রাতে এই বালিশেই মাথা রেখে বেলাকে নিয়ে সে স্বর্গসুখ নেবে। ভাবতেই লজ্জামিশ্রিত হাসি দিল সে। হঠাৎ দরজায় কড়াঘাতে ভাবনায় ছেদ ঘটলো তার। সাথে সাথে ওপাশ থেকে ভেতরে এলো হুমায়রা। তাকে দেখে রাফাত দাঁড়িয়ে গেল।

-“কি চাই? এখানে কেন এসেছো?”

হুমায়রার চোখ ছলছল করে উঠলো।

-“আমার সাথে এমন কেন করছো রাফাত?”

রাফাত ভাবলেশহীন ভাবে বলল,

-“আমি তোমার সাথে কিছুই করি নি। শুধু শুধু চোখের জল ফেলে লাভ নেই।”

-“রাফাত!”

-” চুপ! একদম চুপ! একদম চিৎকার করবে না। ভালো করে কথা বলছি দেখে মাথায় উঠে নাচবে আমি তো তা মানবো না!”

রাফাতের কথা শুনে কান্না করে দিল হুমায়রা। তার কষ্ট হচ্ছে। কোন মেয়েই চাইবে না তার স্বামীর ভাগ দিতে। কিন্তু তাকে রাফাত বাধ্য করেছে। সে কেন তার স্বামীর সুখ পেল না? কি দোষ ছিল তার? ভাবতেই আবার ডুকরে কেঁদে দিল সে। রাফাত বিরক্ত হয়ে বলল,

-“ফ্যাচ ফ্যাচ করো না তো! সামনে থেকে যাও। আর ভুলেও এই রুমে আসবে না। এই রুমটা আমার আর বেলার। আমার প্রেয়সীর!! ”

-“কিন্তু এটা আমার অধিকার রাফাত! আমি তোমার বিবাহিতা স্ত্রী! তুমি আমার সাথে এমনটা করতে পারো না।”

রাফাত তৎক্ষনাৎ এগিয়ে এসে হুমায়রার চুলেএ মুঠি ধরলো।

-“খবরদার! আর একবারও বলবি না তুই আমার স্ত্রী! তুই আমার জীবনের ভুল! যার জন্য আমি আমার প্রেয়সীর কাছে খুবই ঘৃণ্য। একটা দুর্ঘটনার স্বীকার হয়ে বিয়ে করেছি তোকে, তাও নিজের প্রেয়সীর কথায়! তাই বলে এই হৃদয় গহিনে তোর কোন অধিকার নেই। তুই আমার স্ত্রী নস! তুই শুধুই এই বাড়িতে পড়ে থাকা একটা জীব!”

-” এতো বড় কথা বলো না রাফাত! এই আমার কাছেই না তোমায় ফিরে আসতে হয়। বেলা তোমাকে ঘৃণা করে। চায় না তোমাকে। ভালোও বাসে না। আমি বাসি। অনেক ভালোবাসি তবুও তুমি আমায় চাওনা। কি কমতি আছে আমার? কেন এমন করো?”

-“তোর কমতি এটাই যে তুই আমার বেলা না। তুই হুমায়রা! আর আমি বেলাকে ভালোবাসি। তোকে কতবার বলব আমার জীবন থেকে চলে যা! তোকে দেখতে ইচ্ছে হয় না আমার!”

বলেই হুমায়রাকে ছুড়ে ফেলে দিল রাফাত। রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কেন বেলা তার কথা শুনলো না। কেন এতোবড় ভুল টা ও করলো। এই সময়টা কি মধুর হতে পারতো না? কেন এতো বিষাক্ত লাগছে সব?

(চলবে)..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here