স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ২৫+২৬

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_25

ওয়েটিং চেয়ারে বসে আছে ফারাবি। আধ ঘন্টা ধরে কাউন্টারের মেয়ে টা কে বলেছে ফারহানের সাথে দেখা করবে।
কিন্তু মেয়েটার তেমন কোনো রেসপন্স ই নেই।
ফারহানের অফিসে আসা টাই ঠিক হয় নি। কিন্তু প্রজেক্ট টা কমপ্লিট না করলে ফারাবির মার্ক কমে যাবে।
না হলে কখনোই এমন একটা গম্ভীর অফিসে আসতো না ফারাবি।
কলেজ ব্যাগ থেকে একটা কিটক্যাট বের করে খেতে লাগলো ওহ।
কাউন্টারের মেয়েটা সরু চোখে তাকিয়ে দেখছে ওকে।
মেয়েটার মাথায় ঢুকছে না ফারহান স্যারের সাথে এমন একটা পিচ্ছির কি দরকার ?
ফারাবির দিকে পাত্তা দিলো না মেয়েটা।
ফারাবি বিরক্ত হচ্ছে খুব , কাউন্টারের মেয়েটা ওর কথার গুরুত্ব ই দিচ্ছে না।
ফারাবি কাঁধে ব্যাগ নিয়ে কাউন্টারে গেল। মেয়েটা সরু চোখে তাকিয়ে ফোনে কথা বলতে লাগলো।
ফারাবির প্রতি বেশ বিরক্ত হচ্ছে ওহ।
ফারাবি মিন মিনিয়ে বলল
_ আপু আপনি প্লিজ আমার রেফারেন্স টা দেখুন প্লিজ।

_ দেখো স্যারের সাথে এখন দেখা করা যাবে না।
স্যার যখন তখন দেখা করতে চায় না।

_ আপু প্লিজ একটু দেখুন না।

_ স্যারের বকা খেতে আমি রাজি নই। তোমার বেশি দরকার হলে তুমি লাঞ্চ টাইম অব্দি ওয়েট করো।

_ আপু প্লিজ একটু বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার স্যার বকবেন না , আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি।
আমার নাম বললেই ওনি চলে আসবেন।

মেয়েটা বিরক্তির দৃষ্টি তে তাকালো। স্যার নাকি ওর নাম শুনেই চলে আসবেন।
ফারাবি ঘড়িতে টাইম দেখলো , লাঞ্চ টাইম হতে এখনো দু ঘন্টা বাকি।

মেয়েটা ফোঁস করে দম ফেলে বলল
_ দেখো স্যার যদি আমাকে বকেন তাহলে

_ ডোন্ট ওরি আপু আপনাকে বকবেন না ওনি।
আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি

মেয়েটা কাউন্টার থেকে উঠে চলে গেল। ফারাবি ওয়েটিং চেয়ার এ বসে রইলো। ফারহানের ফোন সুইচ অফ, নাহলে এতো ঝামেলা হতো না।
মিনিট দুয়েক পর মেয়েটা ফিরে আসলো। গম্ভীর কন্ঠে বলল
_ স্যার কারো সাথে কথা বলছেন। এখন ওনার সাথে দেখা করা যাবে না। আর প্লিজ তুমি ওয়েটিং চেয়ারে গিয়ে বসো।
আমাদের ক্লাইন রা আসা যাওয়া করছেন।

ফারাবি মলিন হেসে সম্মতি জানালো। আজ রাত আট টার মধ্যে প্রজেক্ট এন্ট্রি করাতে হবে।
না হলে আই সিটি তে ফেল আসবে। আই সিটি স্যারের থেকে হেল্প নিতে পারবে না ওহ।
এখন এক মাত্র ভরসা ফারহান , রিফাত সিলেটে আছে।
ফারাবি ওয়েটিং চেয়ারে পা উঠিয়ে বসলো। এভাবে আর কতোক্ষন বসে থাকবে ওহহ ?
কাল রাতে ঘুম না হওয়াতে খুব ঘুম ও পাচ্ছে ওর।
বার বার হাই তুলছে , চোখ দুটো লাল হয়ে আছে।
ফারাবি ব্যাগ টা বুকে জড়িয়ে সিটে হেলান দিয়ে মাথা গুঁজে রইলো।
কে জানে ফারহান কে কখন দেখতে পাবে ওহ।

*

ফারাবির সাথে রিমির কলেজে দেখা হয় নি। ফারাবি ফোনে বলেছে আই সি টি প্রজেক্ট করতে কোথাও একটা যাবে।
তাই ওহহ একাই কলেজে এসেছে।
কলেজে আসতেই ফাহাদ ওর সামনে চলে আসলো।
আচমকা আসাতে রিমির চোখ দুটো রসগোল্লা হয়ে গেল।
আসে পাশে তাকিয়ে বলল
_ আরে তুমি এখানে ?
পাগল হলে নাকি এভাবে কেন আসছো ?
কেউ দেখে নিলে মহা ঝামেলা হয়ে যাবে।

ফাহাদ কোনো কথা বলছে না। ঠোঁটে স্নিগ্ধ এক হাসি ফুটিয়ে রেখেছে।
রিমির খুব রাগ হচ্ছে এই ছেলে টা পুরো পাগল।
ফাহাদ কে পাশ কাটিয়ে রিমি চলে যেতে নিলেই ফাহাদ খপ করে রিমির হাত ধরে ফেললো।
রিমি চমকে উঠলো , ফাহাদ এক গাল হেসে রিমি কে নিয়ে আড়ালে চলে আসলো।
রিমির বুক ধুকপুকানি শুরু হয়ে গেছে।
এই ছেলেটা নির্ঘাত ওকে মেরে ফেলবে।
এভাবে হুট হাট টেনে নিয়ে আসলো যদি কেউ দেখে ফেলে ?

রিমি কড়া চোখে তাকিয়ে বলল
_ ছাড়ো আমাকে , কেউ এসে পরবে।

ফাহাদ হেয়ালি করে বলল
_ উহুহ আসবে না কেউ। আজ আমাদের সময়।

রিমি ভ্রু কুঁচকে তাকালো । তারপর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
ফাহাদের চোখ দুটো রিমির দিকে গভীর দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
রিমি শুকনো ঢোক গিলে বলল
_ কি হয়েছে ফাহাদ ?
তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন ?
তুমি

_ হুসস , কোনো কথা না।

রিমি ফাঁকা ঢোক গিললো। ফাহাদের সাথে কখনো সেভাবে দেখা করা হয় নি।
আর না কখনো এতো টা কাছা কাছি আসা হয়েছে।
রিমি অস্বস্তি তে একদম জমে গেছে।
ফাহাদ বিগলিত হেসে রিমির চোখে চোখ রাখলো।
রিমি চোখ নামিয়ে নিলো। ফাহাদ তার উষ্ণ হাত টা রিমির গালে রাখতেই রিমি শিউরে উঠলো।
রিমির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে। ফাহাদ যত্ন করে ঘাম টা মুছিয়ে দিলো।
রিমির চিত্ত কেঁপে উঠলো। ফাহাদ মোহনীয় হেসে রিমির ঠোঁটের দিকে আগাতেই রিমি হাত দিয়ে বাঁধা দিলো।
ফাহাদ প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। রিমির হার্টবিট খুব ফাস্ট চলছে।
ফাহাদের থেকে দূরে সরে রিমি বলল
_ আমার অস্বস্তি হচ্ছে ফাহাদ।

ফাহাদ সরস হাসলো। রিমি ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। ফাহাদ মৃদু হেসে রিমি কে বলল
_ এতো ঘাবরে যাও কেন রিমি ?
জানো কতটা ভালোবাসি তোমাকে ?

রিমি চমকালো , ফাহাদ ঝরা হেসে বলল
_ চলো কোথাও ঘুরতে চাই।

রিমি হালকা হাসলো। আজ ও যাবে ওর ভালোবাসার সাথে ঘুরতে।
একটা দারুন সময় কাঁটাবে প্রিয় মানুষ টার সাথে।
রিমির চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। প্রিয় মানুষের কাছা কাছি আসতেই কেমন সুখ সুখ অনুভব হচ্ছে।
রিমি চমৎকার হাসি তে হাসলো। ফাহাদ গভীর দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো।

*

ফারহান ল্যাপটপ থেকে মুখ সরিয়ে নিলো। ক্লান্ত লাগছে শরীর টা , এখন আবার ক্লাইন্ট এর সাথে মিটিং করতে হবে।
ফারহানের অফিসের ল্যান্ড লাইনের ফোন টা বেজে উঠলো।
ফারহান তপ্ত শ্বাস ফেলে ফোন রিসিপ করে কথা বলল।
ক্লাইন্ট এসে গেছেন , ফারহান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
ক্লাইন্ট কে রিসিপ করতে হবে , ফারহান বরাবর ই সবাই কে বেশ সম্মান দেয়।
করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো তখন দেখতে পেলো দুটো স্টাফ গল্প করছে।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে তাঁদের সামনে যেতেই তারা চুপসে গেল।
ভয়ে কাঁপতে লাগলো , ফারহান দৃষ্টি শান্ত রেখেই বলল
_ কাজে ফাঁকি দেওয়া আমার পছন্দ নয়।
গল্প করার জন্য ও আমি রেস্ট টাইম এড করেছি।
আই হোপ নেক্সট এমন দেখবো না।

স্টাফ দুটো মাথা ঝাঁকালো। ফারহান চলে যেতেই দম ফেললো।
ফারহান কে বাঘের মতো ভয় পায় সবাই।
ফোন হাতে নিয়ে রাফি আর রায়হান কে কল করলো ওহ।
দুজন কে কনফারেন্স এ রেখে বলল
_ ফাস্ট মিটিং রুমে চলে আয়।
ক্লাইন্ট এসে পরেছে, ওনাদের ট্রিটে যেন ক্রটি না থাকে ।
আর হ্যাঁ
ফারহান থেমে গেল ফোন টা কেঁটে দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলো।
কাউন্টারের মেয়ে টা ফারহান কে দেখে উঠে দাঁড়ালো।
ফারহানের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই শুকনো ঢোক গিললো।
ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
_ স্যার মেয়েটা আপনার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে।
আমি অনেক বার বলার পর ও যায় নি।

ফারহান ভ্রু কুঁচকালো। কাউন্টারের মেয়েটার দিকে না তাকিয়েই বলল
_ কখন এসেছে ?

_ স্যার সাড়ে দশটার দিকে।

ফারহান ঘড়িতে টাইম দেখলো। অলরেডি 1 টা বেজে গেছে ।

মেয়েটা কাঁপা স্বরে বলল
_ আমি বলেছিলাম চলে যেতে কিন্তু

_ আমাকে জানান নি কেন ?

_ স্যার আপনি কথা বলছিলেন তাই

_ তো ?

মেয়েটা ভয় পেয়ে গেল। ফারহান শান্ত কন্ঠেই বলল
_ রেফারেন্স দিয়েছিলো ?
ওর পরিচয় জমা দিয়েছিলো ওহ ?

মেয়েটা মাথা ঝাঁকালো । ফারহান অগ্নি চোখে তাকিয়ে বলল
_ তাহলে আমাকে জানান নি কেন ?
ওর পরিচয় জানার পর ও কি করে এমন করলেন ?

মেয়েটা কেঁপে উঠলো। ভয়ার্ত কন্ঠে বলল
_ স্যার আমি দেখি নি পরিচয়।
ভেবেছিলাম একটা পিচ্ছি মেয়ের কি দরকার থাকতে পারে তাই।

ফারহান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ফারাবির দিকে তাকিয়ে অধরে হাসি ফুটিয়ে নিলো।
মেয়ে টা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।
ফারহান ধীর পায়ে ফারাবির দিকে এগিয়ে গেল।
ফারাবি কে অতি সন্তর্পণে কোলে তুলে নিলো যেন ফারাবির ঘুম না ভেঙে যায়।

মেয়েটা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
তার স্যার একটা মেয়েকে কোলে তুলে নিয়েছে।
ফারহান ধীর পায়ে ফারাবি কে কোলে নিয়ে যেতে যেতে বলল
_ ব্যাগ টা আমার রেস্ট রুম এ পাঠিয়ে দিন।

মেয়েটা মাথা ঝাঁকালো । ফারহান কোনো দিকে না তাকিয়ে ফারাবি কে নিয়ে চলে গেল।
অফিসের প্রত্যেক টা স্টাফ হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
যেন তারা ভুত দেখার মতো চমকে গেছে।

ফারহান চলে যেতেই মেয়েটা রেফারেন্স দেখলো।
রেফারেন্স দেখে হা হয়ে গেল। তার মাথা তে ঢুকছে না কিছুই।
পরিচয়ে লেখা মিসেস ফারাবি ফারহান চৌধুরী।
কলেজ ব্যাগ কাঁধে মাথায় দুই বিনুনী করা পিচ্ছি মেয়েটা ফারহান স্যারের বউ।
সবাই কানাঘুষো শুরু করে দিয়েছে। সবার ই একি প্রশ্ন মেয়েটা কে ?
কাউন্টারের মেয়েটা লম্বা করে দম নিয়ে বলল ফারহান স্যারের বউ।
সবাই বড় বড় চোখে তাকিয়ে রইলো। তাদের বিশ্বাস হচ্ছে না তাদের স্যার ম্যারিড।
তা ও তার বউ কিনা কলেজ পরুয়া এক পিচ্ছি মেয়ে।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_26

ফারাবি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। যেন সব রাজ্যের ঘুম ওর ঘাড়ে ই এসে পরেছে।
ফারহানের ল্যাপটপ টা বেডের পাশে পরে আছে আর ফারহান ফারাবির দিকে উবু হয়ে তাকিয়ে আছে।
ফারাবির মুখের একটা লোমকুপ ও যেন বাদ না যায় ওর দৃষ্টি থেকে তার জন্যই মনোযোগ দিয়ে দেখছে ফারহান।
মেয়েটার মাঝেই ডুবে আছে। মাথায় একটা চিন্তা আসলে ও সেটা কে বাতিলের খাতায় ফেলে রেখেছে।
তার প্রেয়সীর কাছে সমস্ত টাই ম্লান। তবে হঠাৎ এভাবে আসার কারন টা বুঝতে পারছে না ফারহান।
ফারাবির মুখে সামনে কয়েকটা চুল আঁচড়ে পরতেই ফারাবি ঠোঁট বাকিয়ে নিচ্ছে।
ঘুমের মধ্যে ই চরম বিরক্তি প্রকাশ করছে ওহহ।
তবে তার থেকে ও বেশি বিরক্ত হচ্ছে ফারহান।
ফারাবির মুখ থেকে একটা একটা করে চুল সরিয়ে নিলো যাতে ওর ঘুম না ভেঙে যায়।
মিনিট খানেক পর দরজায় নক পরতেই ফারহান ভ্রু কুঁচকালো।
ফারাবির দিকে এক পলক তাকিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে পরলো।
আজকে মিটিং টা করবে না ওহহ। তবে মিটিং টা খুব বেশি প্রয়োজনীয় ওহ।
তাই ফারহান মিটিং রুমে গিয়ে কুশল বিনিময় করে চলে আসলো।
রাফি আর রায়হান কে সব কিছু সামলে নিতে বলল।
কয়েক জন লেডি স্টাফ ফারহানের দিকে গভীর দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।
তাদের ভাবুক হওয়ার কারন ফারহান বিবাহিত।
আর সব থেকে বড় কথা ফারহান বিয়ে টা করলো কবে ?
করলে ও নিউজ চ্যানেল গুলো তে সে খবর পৌছালো না কেন ?

ফারহান কোর্টের বোতাম ঠিক করতে করতে বলল
_ যে যার নিজের কাজ করুন। আই হোপ অন্য কোনো ভাবনা তে পরে আমাদের মিটিং টা ভেস্তে দিবেন না।

মেয়ে গুলো জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ালো।
ফারহানের দৃষ্টি প্রখর , ওদের দিকে না তাকিয়ে ও সব বুঝে গেল।

ফারহান ফোন স্ক্রল করতে করতে চলে আসলো।
ফারাবি এখনো ঘুমোচ্ছে, তবে বেচারি এদিক ওদিক বার বার পাশ ফিরছে।
একটা কোলবালিশের অভাবে বিরক্ত ওহ।
ফারহান ঝরা হেসে ফারাবির পাশে গিয়ে শুইয়ে পরলো।
ফারাবি বাচ্চা দের মতো করে ফারহান কে জড়িয়ে ধরলো।
ফারহান লম্বা হাসলো , ফারাবির মাথা ফারহানের বুকে থাকায় ফারাবির চুল গুলো বার বার ওর মুখে লাগছে।
ফারহান তাতে বিরক্ত না হয়ে গভীর ভাবে অনুভব করে যাচ্ছে ।

আধ ঘন্টা পরে ফারাবি পিট পিট করে চাইলো।
ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে আশে পাশে চোখ বুলালো।
সম্পূর্ণ অচেনা পরিবেশ দেখে ভরকে গেল।
ফারাবি লাফিয়ে ফারহানের বুক থেকে উঠলো।
ফারহান ভ্রু কুঞ্চিত করতে লাগলো।
ফারাবি পাশে পরে থাকা ওড়না টা দ্রুত গায়ে জড়িয়ে নিলো।
এতো টাই ভয় পেয়ে গেছে যে ফারহান সামনে থাকা তে ও ওকে দেখতে পায় নি।
ফারহান সামান্য কাছে এসে ফারাবির বাহু চেপে ধরতেই ফারাবি চিৎকার করে উঠলো।
ফারহান দ্রুত ফারাবি কে বুকে টেনে নিয়ে বলল
_ ফারাবি শান্ত হ , আমি তোর সাথেই আছি।

ফারহানের কন্ঠস্বর কানে আসতেই ফারাবি যে ধরে প্রান ফিরে পেল।
অচেনা জায়গা দেখে ভরকে গিয়েছিলো ওহ।
ফারহান মৃদু হেসে ফারাবির গালে হাত রেখে বলল
_ এতো ভয় পেয়ে গেলি ?

ফারাবি লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।
ফারহান আলতো হেসে ফারাবি কে কাউচ এ বসিয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলো।
ফারাবি সামান্য হাসার চেষ্টা করলো। ফারাবির দুটো হাত জড়ো করে চুমু খেয়ে ফারহান বলল
_ হঠাৎ অফিসে এসেছিস যে ?
কোনো সমস্যা হয়েছে ?

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো। ফারহান স্বস্তির দম ফেললো।

ফারহান ফোনে ম্যাসেজ করে লাঞ্চ পাঠাতে বলল।
ফারাবি বার বার ফাঁকা ঢোক গিলছে। কেন যেন ওর এখনো ভয় করছে।
ফারহান পানি ঢেলে দিয়ে বলল
_ পানি টা শেষ করে শান্ত হ , আর ভয় পাওয়া বন্ধ কর।

ফারাবি অপ্রস্তুত হাসলো। ফারহান ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
ফারাবি পানি শেষ করে দম ফেললো।
দরজায় নক পরতেই ফারহান খাবার নিয়ে নিলো।
ফারহান খাবার সার্ভ করতে করতে বলল
_ কোন দরকার ছিলো ?

ফারাবি মাথা ঝাঁকিয়ে বলল
_ আই সিটি প্রজেক্ট টা আজ রাত আট টার মধ্যে কমপ্লিট করে সাবমিট করতে হবে।
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

ফারহান হালকা হাসলো। এই কয়েক দিনে ফারাবির পড়াশোনা গোল্লা তে গেছে।
খাবারের প্লেট নিয়ে ফারাবির সামনে বসে বলল
_ আমি হেল্প করে দিবো। তবে আজ থেকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে।
এতো ফাঁকি বাজি একদম ই চলবে না।

ফারাবি থম থমে মুখ করে রইলো। ফারহান ভাত মাখিয়ে নিয়ে মুখের সামনে দিলো।
ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
ফারহান মৃদু হেসে বলল
_ আগে তুই খেয়ে নে তারপর খাবো।

ফারাবি মাথা ঝাঁকিয়ে খাবার টা নিলো। তবে খাবার চিবুতে চিবুতে সামান্য মুখ কুঁচকালো । ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ কোরাল ফিস ভালো হয় নি?

ফারাবি মাথা ঝাঁকালো যার অর্থ না।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে এক লোকমা ভাত মুখে নিলো।

ফারাবির দিকে তাকাতেই ফারাবি মেকি হাসি দিলো।
ফারহান রহস্য হেসে বলল
_ দুষ্টমি করছিস তা ও আমার সাথে?
আচ্ছা তাহলে আমি ও তোকে দেখাবো দুষ্টুমি কাকে বলে।

ফারাবি উঠে পালাতে গেলেই ফারহান হাত চেপে ধরলো।
ফারাবি মুখ গোমড়া করে বলল
_ সরি ।

_ নো সরি মিসেস, তবে শাস্তি টা তোলা রইলো। আপাতত খাবার ফিনিস করুন।

ফারাবি বোকা চোখে তাকিয়ে খাবার খেতে লাগলো।
ফারহান ঠোঁট কামড়ে হাসছে। ফারাবি মনে মনে ফারহান কে এক গাঁদা গালি দিচ্ছে।
ফারহান তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে ।
কারন ফারাবির ঠোঁট দুটো অনড়গল নরেই যাচ্ছে।
আর চোখ দুটো কাউকে যেন খুবলে খাচ্ছে।
মানুষ টা যে ওহহ সেটা বুঝতে বিন্দু মাত্র অসুবিধা হলো না ফারহানের।

*

রিমির চোখে মুখে খুশির ঝলকানি। আজ প্রথম প্রিয় মানুষ টার সাথে আলাদা সময় কাটিয়েছে ।
একটা পার্কে হাতে হাত রেখে ঘুরেছে। তারপর লাঞ্চ করে বাসায় ফিরেছে।
এই টুকু সময় ওর কাছে সেরা মুহুর্ত ছিলো। করিডোরের কাউচে বসে মিটিমিটি হাসছিলো রিমি।
রাফাজ ফোনে তনির সাথে কথা বলছিলো।
রিমির এমন কান্ড দেখে তনি কে বলল
_ তনি একটু হোল্ড করো তো।

_ ওকে।

রিমির সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।রিমি লজ্জা হাসছে , রাফাজ ভ্রু কুঁচকে থেকে রিমির কান টেনে ধরলো।
আচমকা আক্রমণে রিমি লাফিয়ে উঠলো। রাফাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলল
_ কি করছিলি তুই ?

_ ভাইয়া লাগছে আমার। কোথায় কি করছিলাম।
আমি তো বসেই ছিলাম, আহহ কান টা ছাড়ো ।

_ বসে বসে হাসছিলি কেন?
পাগলে ধরেছিলো , নাকি পিঠে মরার জন্য দু খানা পাখনা গজিয়েছে ?

_ উহহ ছাড়ো তো

রাফাজ রিমি কে ছেড়ে দিয়ে নিজের কোমরে হাত গুঁজে বলল
_ হাসছিলি কেন ?

রিমি সামান্য ভ্রু কুঁচকে বলল
_ আমি হাসছিলাম ?

_ নাহ তুই কেন হাসবি , আমি হাসছিলাম তো।

_ আজব তাহলে আমাকে কেন জিজ্ঞেস করছো।
ডাক্তার হয়ে ও নিজের সমস্যা বুঝো না ?

_ ফাজিল মেয়ে দারা তোকে আজকে

রিমি কে ধরতে যেতেই রিমি ভো দৌড় দিলো ।
রাফাজ হো হো করে হাসতে লাগলো। তারপর তনির সাথে ফোনে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
মাস খানেক বাদেই ওদের বিয়ে। সবাই কে ইনভিটিশন কার্ড ও পাঠিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে।
সুন্দর এক মূহুর্তের জন্য দুজনি অপেক্ষা করছে।
তনি হলো রাফাজের হসপিটালের জুনিয়র ডক্টর।
ছয় মাস ধরে ডাক্তারি পাস করেছে।
তবে ওদের পরিচয় টা সাড়ে তিন বছরের। রাফাজের মামাতো বোনের বান্ধবী তনি।
মামাতো বোনের বিয়ে তেই পরিচয় হয়।
আর দুজনের প্রেম হয়ে যায়। অবশ্য রাফাজের মা তনি কে আগে থেকেই পছন্দ করে রেখেছিলেন।
ভাগ্যের জোড়ে দুজনের ভালোবাসা ও হয়ে যায়।

রাফাজের মা টেবিলে খাবার গোছাচ্ছেন। ওনি আর ওনার স্বামী শপিং এ বেরিয়েছিলেন।
আর তাই লাঞ্চ করতে লেট হয়ে গেল।

ফারাবির বাবা আর ফারহানের বাবা বাগানে গল্প করছেন।
দুজনের গল্পের বিষয় বস্তু হচ্ছে ফারাবির বিয়ে নিয়ে।
যেহেতু সামনের মাসে রাফাজের বিয়ে তাই রিক আর ফারাবির বিয়ে টা তার পরের মাসে হবে।
আর তার পরের মাসে আবার আরিফের বিয়ে।
তিন তিন টে বিয়ে সামলাতে ওনাদের বেগ পেতে হচ্ছে।
এতো এতো গেস্ট, আয়োজন সব কিছু সঠিক ভাবে পালন করা নিয়েই আলোচনা করে যাচ্ছেন।
দুই বন্ধুর গল্প দেখে মনে হচ্ছে দুজনের মাথায় কোনো চিন্তা নেই।
সুখের সাগরে ভাসছেন ওনারা।
ফারহানের মা মেইন ডোরে এসে ভ্রু কুঁচকে চলে গেলেন।
এদের গল্প মানে কয়েক ঘন্টার লম্বা বিরতি।
এখন এদের সামনে না যাওয়াই উত্তম।

*

ফারাবি পেন্সিল মুখে দিয়ে বসে আছে।
ফারহান আলাদা খাতাতে প্রজেক্ট করছে।
সমাধান থেকে শুরু করে আর্ট সব কিছুই ফারহান করছে।
যার সব কিছু ফারাবির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।ওর মাথায় একটা কথা ঘুরছে ফারহান ছাত্র জীবনে নিশ্চয় একটা গাঁধা ছিলো।
কারন এই সব ফালতু প্রজেক্ট এক মাত্র গাঁধা রাই পারে।
যেমন ওর আই সিটি স্যার একটা গাঁধা ।
ফারাবির মাথায় এক উদ্ভট চিন্তা আসলো। ফারহানের মুখ টা গাঁধার মুখে লাগিয়ে কল্পনা করতেই ফারাবি ফিক করে হেসে উঠলো।
ফারহান কলম উঠিয়ে বলল
_ কি হয়েছে ?
পাগলের মতো হাসছিস কেন ?

ফারাবি হাসতে হাসতে বেডে শুইয়ে পরেছে।
এতো বেশি হাসি পাচ্ছে যে পেট ব্যথা হয়ে গেছে ওর ।
ফারহান সন্দিহান চোখে তাকিয়ে তা দেখছে। ফারাবি কোনো মতে পেট চেপে ধরে হাসি থামালো।
ফারহানের কপালে সূক্ষ্ম একটা ভাঁজ পরেছে। ফারাবি কোনো মতে হাসি থামালো।
ফারহান প্রজেক্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
কিছু মুহুর্ত পর ফারাবি আবার হাসতে হাসতে বেডে শুইয়ে পরলো।
কারন এবার ওহ ফারহানের মুখ টা পেঁচার মুখের উপর বসিয়ে কল্পনা করেছে।

ফারহান কলম টা রেখে ফারাবির দিকে ভ্রু বাকিয়ে বলল
_ এমন পাগলের বিলাপ শুরু করেছিস কেন?

ফারাবি হাসতে হাসতে বলল
_ পেঁচা

_ হোয়াট কোথায় পেঁচা

_ আরে আপনি পেঁচা

ফারহান নাক কুঁচকে ফেলল। গম্ভীর দৃষ্টি তে বলল
_ আমি পেঁচা?

ফারাবি মাথা ঝাঁকিয়ে হাসতে লাগলো। ফারহান ভ্রু কুঁচকে থেকে বাঁকা হাসলো।
ফারাবির দু হাত জড়ো করে চেপে ধরলো। ফারাবি বোকা বনে গেল ফারহান একগাল হেসে বলল
_ আমি পেঁচা হলে তুই তো পেঁচি।

ফারাবি কপাল কুঁচকে বলল
_ নাহহ ,আমি কেন পেঁচি হবো ?

ফারাবির নাক টিপে দিয়ে ফারহান আমুদের স্বরে বলল
_ কারন তুই আমার তিন বছর ধরে বিয়ে করা এক মাত্র বউ।
আর আমি পেঁচা হলে আমার বউ কে তো পেঁচি হতেই হবে।

ফারাবি আলতো হাসলো। ফারহান ফারাবির দিকে সামান্য ঝুঁকে বলল
_ এবার তাড়াতাড়ি প্রজেক্ট কমপ্লিট করুন ম্যাডাম।

_ প্রজেক্ট কমপ্লিট করে ফেলেছেন ?

_ হ্যাঁ তাড়াতাড়ি কর।

_ কোনো ব্যাপার ই না। জাস্ট আ মিনিট দেখে দেখে লিখতে যাহ সময় লাগবে।

ফারহান বাঁকা হেসে বলল
_ নো ম্যাডাম। আমি চুরি বিদ্যা করতে দিবো না আপনাকে। আপনি আগে প্রজেক্ট টা শিখবেন তারপর না দেখে লিখবেন।

_ কিন্তু সবাই তো হেল্প নিয়ে কপি করেই লিখেছে।

ফারহান বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলল
_ সবাই কি ফারহানের বউ ?

ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ফারহান ঝরা এসে ফারাবি কে কাছে টেনে নিয়ে বলল
_ আমার বউ সেরা। সে কেন কপি করবে ?
সে তো বেস্ট, বেস্ট বউ , বেস্ট প্রেয়সী, বেস্ট পিচ্ছি জান। আমার বউ সবার থেকে সেরা আর সব কিছুতেও ওহ সেরা।

ফারাবি মোহনীয় দৃষ্টি তে ফারহানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
এই মানুষ টা কি কখনো এমন পাগলামী বন্ধ করবে না ?
সত্যি ই কি ওহ সেরা ?

ফারাবির ভাবনাতে ফোরন কাটলো ফারহান । ফারাবির গালে চুমু খেয়ে বলল
_ হ্যাঁ আমার বউ সব থেকে সেরা। আমার পিচ্ছি বউ টা সবার থেকে আলাদা। যে আমাকে রাঙিয়ে ছে এক নতুন দুনিয়া তে।
যার জন্য আমি পাগল হতে বাধ্য হয়েছি।
আমার পৃথিবী টা সাজিয়ে দিয়েছে আমার বউ টা।
সে সেরা নয়তো কে সেরা?

ফারাবির চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। আজ খুব হিংসে হচ্ছে ওর , কেন ওহ ফারহান কে ফারহানের মতো করে ভালোবাসতে পারে না।
মানুষ টা কে কলিজার সাথে বেঁধে রাখতে পারলে কি মনে হবে মানুষ টাকে প্রাপ্য ভালোবাসা দিতে পেরেছে ওহ ?

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে
‘ ছোট পার্ট র জন্য দুঃখিত ‘

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here