স্বপ্নের প্রেয়সী ২ পর্ব ২৭+২৮

#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_27

ফারাবিদের ছাঁদে দাড়িয়ে আছে রিক আর ফারহান ।
ফারহানের চোখ মুখে রাগ যেন দাবানল হয়ে ঝরছে। রিকের ঠোঁটের কোনে তাচ্ছিল্যর হাঁসি। ফারহান তার শক্ত পোক্ত হাত দুটি মুষ্টি বদ্ধ করে আছে। সন্ধ্যার নিভু নিভু আলো কালো ঘন অন্ধকারে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। বাতাসের গতি আভাস দিচ্ছে ঝড় হবে। তবে তার থেকে বড় ঝড় ফারহানের চোখে মুখে।

রিক বাঁকা হেসে ফারহানের উদ্দেশ্যে বলল
_ শেষ মেষ আমার আসল চেহারাটা ও দেখে ফেললি।
কিন্তু শয়তানের চেহারা কি কখনো বদলায় ?
সেই আমি খেলা টা ঘুরিয়েই দিলাম। তোর ক্ষমতার জোড় আমার জানার বোঝার দরকার নেই। তবে শুনে রাখ রিক কখনো হার মানে না।
নয় কেড়ে নেয় আর না হয় জ্বালিয়ে দেয়।

ফারহানের চোখের রগ গুলো ফুটে উঠেছে। কপালে দুটো ভাঁজ পরেছে যেন কাউ কে এখনি খুন করে ফেলবে।
রিকের কথা গুলো ফারহানের হজম হচ্ছে না।
ছেলেটা কে যতোটা সহজ ভাবে নিয়ে ছিলো ততটা সহজ নয় তা বুঝে গেছে ফারহান।
তবে একে শায়েস্তা করতে হলে খেলার মোর ঘোরাতে হবে।
এখন এখানে তিন টে মেয়ের জীবন ও জরিত।

রিকের ধারালো অস্ত্রের মতো কন্ঠস্বর আবার বেজে উঠলো
_ সবাই কে জানিয়ে দিবে আমার সত্যি টা ? যাহহ জানা, আই ডোন্ট কেয়ার। তার সাথে সাথে মেয়ে গুলোর জীবন ও আমি শেষ করে দিবো।

ফারহানের রক্ত গরম হয়ে গেল। এতোক্ষন ধরে চেঁপে থাকা রাগ টা বেরিয়ে আসতে চাইছে।
নিজেকে ঠান্ডা করতে চেয়ে ও পারলো না ঠান্ডা হতে।
রিকের দিকে তেড়ে গিয়ে ওর কলার চেপে ধরে বলল
_ ভালোই ভালোই বলছি সরে যা এসব থেকে। ফারাবির দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা ও করবি না।
আর মেয়ে গুলোর সাথে ও বাজে কিছু করতে চাইলে এখানেই মেরে দিবো তোকে।

রিক অতি সন্তর্পণে ফারহানের হাত থেকে কলার ছাড়িয়ে হো হো করে হেসে উঠলো।
ফারহানের কপালের রগ ফুটে উঠেছে। ফারহান তেড়ে আসতেই রিক হাত বাড়িয়ে থামিয়ে বলল
_ রিলাক্স ব্রো , রিলাক্স। খেলা তো এখনো অনেক বাকি।
আমার কিছু হলে মেয়ে গুলোর ভিডিও সোসাল মিডিয়া তে ভাইরাল করে দিবো।
রিক কাঁচা কাজ করে না , আর না কাঁচা খেলোয়ার।

ফারহানের রাগ বেড়ে গেল কিন্তু ওহ কিছু বলল না।
রিক বাঁকা হেসে স্থান ত্যাগ করলো । ফারহান চুল খামচে ধরে চোখ বুজে নিলো।

সেদিন রিক কে মৌ , মিতা আর সিমা পর পর তিন জনে ছয় টা থাপ্পর মারে।
রিকের রাগ অষ্টম আকাশে উঠে যায়। রিকের দিকে তাকিয়ে তিন জন তাচ্ছিল্য হাসলেই রিক হো হো করে হেসে উঠে। ওরা সবাই অবাক হয়ে যায়।
রিক ঠোঁটের কোন থেকে রক্ত মুছে নিয়ে ফোন অন করে ওদের দিকে তাক করে।
তিন জনের ই মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। ভিডিও তে স্পষ্ট ফুটে উঠছে ওদের সাথে রিকের বাজে মুহুর্ত।
তবে রিকের মুখ দেখা যাচ্ছে না । রিক হো হো করে হেসে উঠে।
দাবানলের মতো চোখের দৃষ্টি দিয়ে চিৎকার করে মেয়ে গুলো কে গালি দিতে থাকে।
মেয়ে তিনটে ফোন ছিনিয়ে নিতে গেল রিক পর পর থাপ্পর মারে সবাই কে।
ফোন আছাড় মেরে ভেঙে ফেলে রগরগা কন্ঠে বলে
_ নে ফোন ভেঙে ফেলেছি। যদি মুখ খুলিস তাহলে তদের ফুটফুটে শরীরের ফুটেজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরবে।

মেয়ে গুলো কেঁদে উঠে। রিকের পায়ে ও ধরে কিন্তু রিক লাথি মেরে চলে যায়।

*

ফারাবির কোলে মাথা রেখে শুইয়ে আছে ফারহান।
ফারাবি কে কলেজ থেকে লেকের ধারে নিয়ে এসেছে।
ফারাবি বার বার জিজ্ঞাস করার পর ও ফারহান কিছু বলে নি।
ফারহান আকাশের দিক তাকিয়ে আছে। ফারাবির মনের ভেতর উথাল পাথাল ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
ফারহানের চোখ মুখ কেমন শুকিয়ে গেছে। ফারাবির তার গভীর দৃষ্টি তে ফারহান কে দেখে যাচ্ছে।
ফারহানের কপালে কপাল ঠেকিয়ে ফারাবি বলল
_ কি হয়েছে আপনার ?
আপনার চোখ মুখ এমন শুকনো দেখাচ্ছে কেন ?

_ কিছু হয় নি। এমনি হয়তো শুকনো দেখাচ্ছে।

ফারহানের কথা ফারাবির বিশ্বাস হলো না। ফারহানে এলোমেলো চুল গুলো তে হাত বুলাতে বুলাতে বলল
_ সবাই কে জানানোর বিষয় নিয়ে ভাবছেন ? আপনি বললে আমি সবাই কে বলবো।

_ নাহহ তোকে কিছু বলতে হবে না।
আর এখন আমরা কাউ কে কিছু জানাবো না।

ফারাবি ভ্রু কুঁচকে ফেললো। ফারহানের দিকে প্রশ্নবোধক ভঙ্গি তে তাকিয়ে রইলো।
ফারহানের ভেতর থেকে আঁচড়ে পরলো লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস।
ফারাবির কোমর জড়িয়ে ধরে পেটে মুখ গুঁজে বলল
_ তুই আমাকে ভুল বুঝিস না জান। পরিস্থিতি একটু সহজ হোক , তারপর আমি সবাই কে সব বলে দিবো।

ফারাবি অধর কোনে হালকা হাসি ফুটিয়ে বলল
_ আমি আপনাকে ভুল বুঝি নি। আমি তো শুধু কারন জানতে চেয়েছিলাম।
আমি জানি আমাদের জন্য যেটা ভালো হবে আপনি সেটাই করবেন।

ফারহান মৃদু হেসে ফারাবি কে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
ফারাবি আহ করে হালকা আর্তনাদ করে উঠলো।
ফারহান ফারাবির কোল থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসে বলল
_ কি হয়েছে ?
ফারাবি অভিমানি কন্ঠে বলল
_ আপনার ধারালো খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে গালে ব্যথা পেয়েছি।

ফারহান ভ্রু কুঁচকে থেকে আচকমাই ফারাবি কে টেনে ধরলো।
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফারাবির গালে গাল ঘষতে লাগলো।
ফারাবি রাগ মেশানো কন্ঠে বলল
_ ছাড়ুন আমায়। আপনার বিদঘুটে দাঁড়ি তে ব্যথা পাচ্ছি আমি ।
সেভ করেন নি কেন ? কেমন বিদঘুটে লাগছে দেখতে।
ছিই

ফারহান রহস্য হেসে বলল
_ আরো বিদঘুটে হয়ে যাবো। তবু ও তোকে ছাড়বো না।

_ ছাড়ুন বলছি।

_ উহুহহহহমম ।

_ ফল মাখা খাবো আমি।

_ পরে।

_ নাহহ এখনি।

_ ইসসস তুই একটা পঁচা বউ। বর রোম্যান্স করলে ও দূরে সরিয়ে দিস।

_ তো আপনার কি? আমি কি দিন ভরে এই রখম ফালতু রোম্যান্স নিয়ে থাকবো নাকি ?
রোম্যান্স এর কি ছিড়ি খোঁচা খোঁচা দাড়ি দিয়ে বউয়ের সুন্দর গাল টাকে ক্ষত করে দেওয়া ।

ফারহান ভ্রু কুঁচকে থেকে বলল
_ তুই অন্য রোম্যান্স চাচ্ছিস। আগে বলবি তো

বলেই ফারাবির গালে চুমু খেয়ে নিলো। ফারাবি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ফারহান ঝরা হেসে ফারাবি কে নিয়ে ফল মাখা খেতে চলে গেল।

*

” ভাইয়া প্লিজ আমাদের বাঁচান। আমরা কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। প্লিজ ভাইয়া ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেলে আমরা কেউ বাঁচবো না।
আমরা বাঁচতে চাই ভাইয়া। আমরা মানছি ভুল করেছি কিন্তু সেটা তো শুধু মাত্র ভালোবাসা রক্ষা করতে গিয়ে ”

মৌ , মিতা , আ সিমা তিন জন ই কাঁদছে অঝোরে। একটা রেসট্রন এ ওদের সামনে বসে আছে ফারহান। মেয়ে গুলো অন্যায় করেছে কিন্তু ওদের বাঁচার অধিকার তো আছে ?

ফারহান ওদের আশ্বস্ত করে বলল
_ তোমরা শান্ত হও। আমি তোমাদের কিচ্ছু হতে দিবো না।
তবে রিকের কথা তে আর কোনো ভুল করে বসো না।
এখন ওহ কিছু করবে না। তবে তোমাদের একটা ডিসিশনে সব এলোমেলো হয়ে যেতে পারে।

_ ভাইয়া আমরা সব কথা শুনবো। শুধু আমাদের রক্ষা করুন, ঐ জানোয়ার আমাদের শেষ করে দিবে।

_ শান্ত হও তোমরা। ভুল যা হবার হয়ে গেছে। চোখের পানি ফেললে কিছুই হবে না। এখন লড়তে হবে , যে করেই হোক ভিডিও টা নষ্ট করতেই হবে।
তার আগে দেখতে হবে এর কতো গুলো কপি আছে আর কোথায় আছে।

ফারহানের কথাতে মেয়ে গুলো ভরসা পেলো। জীবনের একটা ভুল ওদের জীবন কে নষ্ট করে দিয়েছে।
এমন জানোয়ার কে ভালোবাসা টাই ছিলো জীবনের সব থেকে বড় ভুল।

ফারহান রাস্তা দিয়ে হেটে চলেছে। গাড়ি টা ফেলে রেখেছে রেসট্রন এর পার্কিং এ। গাড়ি ড্রাইভ করার মতো মানসিকতা এখন ওর নেই।
সব কিছু সামাল দিবে কি করে সেটাই এখন এক মাত্র ভাবনা।
ফুটপাতের ছোট ছোট ইটের টুকরো গুলো তে লাথি মারছে ফারহান।
পকেটে হাত গুঁজে ভাবছে নানান ভাবনা।
শুধু ফারাবি কেই না , মেয়ে গুলো কে ও তো বাঁচাতে হবে। কি করে কি করবে ওহ কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
সব কেমন অগোছালো হয়ে গেছে।

হঠাৎ করেই ফারহানের সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো।
ফারহান ভ্রু কুঁচকে থেকেই প্রশস্ত হাসলো। কাছে গিয়েই দু হাতে জড়িয়ে ধরলো।
রানা লম্বা করে হাসি দিয়ে ফারহানের পিঠ চাপরে বলল
_ কি রে ভাই কেমন আছিস ?

ফারহান ভ্রু কুঁচকে বলল
_ আমি যেমনি থাকি। তুই কখন এলি ? কিছু জানালি ও নাহহ। তা কি অবস্থা

_ আরে শালা আমি তো আজি ই এসেছি।
ট্রেনিং এ গিয়ে যাহহ অবস্থা হয়েছিলো। মরে গেলে ও কেউ পুলিশে যেন জয়েন না করে।

_ কেন ? পুলিশের ট্রেনিং নিতে গিয়ে কি দু চার ঘা তুই খেয়েছিস নাকি ?

_ আরে সেটা হলে ও চলতো। শালা পুলিশের চাকরি যেন কেউ না করে। এতো অত্যচার আমার জীবনে কখনো দেখি নি আর না হয়েছি।
ভালো খাবার নর্দমাতে ফেলে বলে উঠিয়ে খাও।

ফারহান হো হো করে হেসে উঠলো। পুলিশ, আর্মি এদের বাইরের দেশে ট্রেনিং এ অনেক আজব কান্ড দেখতে হয়।
আসলে জীবন বাঁচানোর প্রতিকূল পরিবেশ আসলে যেন তারা সামলে নিতে পারে তাই এই রকম ট্রেনিং। কোনো যুদ্ধে ওনারা যদি খাবারের অভাবে না বাঁচতে পারে তাহলে দেশ রক্ষা হবে কি করে ?

ফারহান রানার সাথে গাড়িতে উঠে চলে গেল। রানার সাহায্য দরকার।
মেয়ে গুলো কে বাঁচাতেই হবে।
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
#ফাতেমা_তুজ
#part_28

ফারাবির মা চা নাস্তা হাতে করিডোর দিয়ে আসছিলেন। রিফাত তার রুম থেকে বের হয়েই ফারাবির মা কে দেখে প্রশস্ত হাসলো।
চায়ের কাপ আর ফ্রাইড চিকেন নিয়ে বলল
_ উফফ ছোট মা যখনি কিছু দরকার তুমি হাজির। আমাদের সবার এতো এতো খেয়াল রাখো কি করে তোমরা ?

ফারাবির মা এক গাল হেসে বললেন
_ মায়েরা সব পারে। তবে আর কতোদিন এভাবে খাটাবি বল তো।
এবার বউ কে ঘরে তোল আমরা ও একটু ছেলের বউয়ের যত্ন আত্নি পেয়ে চোখ টা বুজি।

ফ্রাইড চিকেনে কামড় দিয়ে রিফাত বলল
_ ঐ হারামির যত্ন পাবা না ছোট মা। ওহহ হলো নাম্বার ওয়ান বজ্জাত। ওকে ঘরে তুলি আর আমার ঘাড় টা মটকে দিক।

ফারাবির মা হাসতে হাসতে চলে গেলেন। রিফাত মনিকা কে বকতে বকতে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেল।
যখন তখন এই মেয়েটা ঝগড়া করে। মাত্র ই একটা ছোট বিষয় নিয়ে ঝামেলা করে দিলো।
আরে ভাই এক্স তো এক্স ই হয়। না হয় এক্সের সাথে বহু দিন পরে দেখা বলে একটা ছবি তুলেছিই তার জন্য ঝগড়া করবি ?

এই সব ভাবতে ভাবতে চলে গেল রিফাত। সন্ধ্যা হয়ে গেলে ও আজ ওর অনেক কাজ। ফারহান ওকে অফিসের সব ফাইল হাতে বসতে বলেছে।
ফারহান কিছু ঝামেলার জন্য বিজন্যাস ঠিক ঠাক সামলাতে পারবে না।
আর তার জন্য রিফাত কে ফাইল নাড়াচাড়া করতে বলেছে।
ফারহানের ঝামেলা শেষ হলে ফারহানের সাথে তালে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হবে ওকে।
এতো দিনের সাজানো গোছানো জীবন টা কাজে আটকে যাবে।
ভাবতেই রিফাতের ইচ্ছে হচ্ছে কচু গাছের সাথে ঝুলে মরতে।

ফারহান বেডের কাছে দশ টার ও বেশি ফাইল সাজিয়ে রেখেছে।
রিফাত হা হয়ে দেখছে তা। ফারহান কাবাড থেকে আরেক টা ফাইল নামিয়ে নাড়াচাড়া করে বলল
_ ব্যাস হয়ে গেছে। তেরো টা ফাইল আছে , সুন্দর করে চেক করবি। যেটা না বুঝবি সেটা রাফি কিংবা রায়হানের থেকে বুঝে নিবি।

_ পাগল নাকি ? দুটো তে আমাকে ক্ষেপাবে তাহলে। কলেজ লাইফ থেকে জ্বালিয়ে যাচ্ছে। অথচ তোকে জমের মতো ভয় পায়।
কলেজের শীর্ষে থাকা ফাজিল দুটো।

_ কাজের ক্ষেত্রে নো কমপ্রোমাইজ সো তোকে ওদের ই হেল্প নিতে হবে।
শরীরে যে জং লেগেছে তা কচলে বের করতে হবে।
ডাফার বিয়ে করে বউ কে খাওয়াবি কি ?
বাবার টাকায় বউ কে খাওয়াবি লজ্জা করবে না ?

_ ভাই এতো বড় কথা বলতে পারলি তুই। বউ রে বিয়ে করমু এটাই তো বেশি আবার খাওয়াবো কেন ?

রিফাতে কথা শুনে ফারহান ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। রিফাত মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ যৌতুক নিবো বুঝেছিস।

রিফাতের কান মুচরে ধরে ফারহান বলল
_ যৌতুক বন্ধ করো। আর না হলে কান টা ধরে দুটো লাথি মারো।

রিফাত হো হো করে হেসে উঠলো। ফারহান ফাইল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল
_ মনিকা ফোন করেছিলো। শুনলাম তুই নাকি তোর কোন এক্স এর সাথে ছবি তুলেছিস।
আবার স্টোরি তে এক্স বলে পোস্ট ও দিয়েছিস।

রিফাত ফারহানের রুমের ছোট্ট ফ্রিজ থেকে স্প্রাইড এর বোতল বের করতে করতে বলল
_ এক্স তো কি হয়েছে। একদিন তো কলিজায় ঠিক ই ছিলো।

_ রাসকেল। খাওয়া বন্ধ করে ফাইল গুলো দেখে নে ।
আমি বেরোবো

_ কোথায় যাবি এখন ? সাড়ে আট টা বাজে অলরেডি।

_ রানার সাথে দেখা করতে। জামান নাকি বিয়ে করবে শুনলাম।
ওর গালফ্রেডের ছ্যাঁকা খাওয়ার পর ও দেবদাস হয়ে ছিলো।
ভেবেছিলাম বিয়ে টিয়ে আর করবে না। সারা জীবন সিজ্ঞেল মরবে।

_ দূর শালায় নাম্বার ওয়ান ঢকবাজ। যেই হারে সেন্টি খায় মনে হয় পুরো ভেঙে গেছে।
আসলে কিছুই নাহহ।

_ চুপ থাক। এক সপ্তাহ পর ই তো বিয়ে ওর। দুদিন পর নাকি আড্ডা পার্টি দিবে।
দেখি কৃপন এর পকেট থেকে কতো টাকা খসাতে পারি।

রিফাত দাঁত কেলিয়ে বলল
_ সমস্যা নাই মামা । টাকা না খসালে বাসর করতেই দিবো না।

ফারহান আর রিফাত এক সাথে হো হো করে হাসতে লাগলো। রিফাতের হাতে ফাইল ধরিয়ে দিয়ে সার্ভেন্ট কে রিফাতের জন্য ডিনার পাঠাতে বলল।
তারপর বাসা থেকে বের হয়ে গেল ফারহান।
আজ রিফাত সারা রাত ধরে ফাইল দেখলে ও ওর ফাইল দেখা শেষ হবে না।

*

রাত সাড়ে দশটা। ফারাবি গভীর মনোযোগে বই পড়ছিলো। ফারহানের কড়া নির্দেশনা রোজ রাত এগারো টা অব্দি পড়াশুনা করতে হবে।
যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে তাহলে বিরাট মাপের শাস্তি ও আছেই।
ফারহানের সাথে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলালেও এর একটু পালন করে নি ফারাবি।
আর পরের দিন ই ফারাবি কে মাঝ রাস্তা থেকে কিডন্যাপ করে নেয় ফারহান।
নিভু নিভু আলো জ্বলছে এমন একটা ঘরে বন্দি করে দেয়।
ফারাবির জ্ঞান ফিরলে ওহ ভয় পেয়ে যায়।
আর তখনি ফারহান আলো জ্বালিয়ে দেয়।
ফারাবি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললে ও তার রেশ বেশি ক্ষন টিকে থাকতে পারে নি।
তার আগেই ফারহান একটা চাইল্ড পার্কে নিয়ে কান ধরে উঠ বস করায়।
বাচ্চা গুলো খিল খিল করে হেসেছিলো সাথে ফারহানের গগন কাঁপিয়ে হাসি তো আছেই।
সেই দৃশ্য ভাবতেই ফারাবির শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।
কি লজ্জা টাই না পেয়েছিলো।
কিন্তু ফারাবি এখনো বুঝতে পারলো না ফারহান কি করে জানতে পারে যে ওহ পড়াশোনা করে নি ?
বাসার কেউ ও জানে না। কারন ও ডোর লক করে গেম খেলছিলো।
ফারাবি নিজের ভাবনার হেতু খুঁজে না পেয়ে হতাশ হলো।
ভেতর থেকে বুক চিড়ে বের হয়ে আসলো এক ফালি দীর্ঘশ্বাস ।
তারপর আরেকটু পড়ে নিয়েই কোলবালিশ চেঁপে ধরে বসে রইলো। ফারহান কে কয়েকটা গালি ও দিতে লাগলো।

ডিনার করা হয় নি ওর। সবাই খেয়ে নিয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে কিন্তু আজ বাসায় রান্না হয়েছে ইলিশ মাছের ঝোল।
ভাবতেই ফারাবির গা গুলিয়ে আসে। ইলিশ মাছ ভাঁজা ভুনা হতে পারে , পাতুরি কিংবা সর্ষে ইলিশ হতে পারে।
কিন্তু লেকের পানির মতো টলটলে ঝোল করার কি দরকার ছিলো।
দুপুরে মিষ্টি শুক্ত আর ডাল মেখে খেয়েছিলো।
কিন্তু এখন সেটা ও খেতে ইচ্ছে করছে না। অথচ খিদে তে পেট জ্বলে যাচ্ছে। দুপুরে ওর মা কে মাছের ঝোলের কথা বলতেই ফোরনের মতো করে তেতে উঠেন ওনি।
ওনার কথা মতে এতো ভাঁজা ভুনা খেয়ে কলিজা পুরিয়ে ফেলছে সবাই।
গ্যাস্টিক সহ নানা প্রবলেম হয়ে যাবে এতো ভাঁজা ভুনা খেতে খেতে।
ফারাবি আর একটা কথা ও বলে নি
চুপচাপ তরকারি ছাড়াই সবজি আর ডাল মেখে খেয়ে নিয়েছে।

ফারাবি গালে হাত দিয়ে বসে রইলো। খিদে থাকলে ঘুম আসে নাকি ?
আর ভাতের খিদে কি হাবি জাবি তে মিটে নাকি।
ফারাবি তবু ও একটা কিটক্যাট নিয়ে একটু একটু করে খেতে লাগলো।

কিটক্যাট খাওয়া শেষ হতে না হতে ফারাবির ফোন বেজে উঠলো।
ফারাবি ভ্রু কুঁচকে থেকে ফোন হাতে নিলো। ফারহানের ফোন দেখে অধরে এক চিলতে হাসি ফুঁটে উঠলো ।

ফারাবি কে হ্যালো বলার সুযোগ না দিয়েই ফারহান ব্যগ্র কন্ঠে বলল
_ দারোয়ান চাচার কাছে কাচ্চির প্যাকেট পাঠিয়ে দিয়েছি।
তাড়াতাড়ি নিয়ে পাঁচ মিনিটে ফিনিশ করে ঘুমিয়ে পরবি।
রাখছি

ফারহান ফোন রেখে দিলো। ফারাবির মুখ টা হা হয়ে গেছে।
ফারহান কি করে জানলো ওহ না খেয়ে আছে ? বাসার সবাই তো জানে খেয়েছে।
কি আজব এই লোক টা কি ওর আশে পাশেই আছে নাকি ?

ফারাবি এখনো হা হয়েই আছে। আবার ফোন বেজে উঠলো।
ফারাবি ফোনের দিকে না তাকিয়েই রিসিপ করলো।
ফারহান হো হো করে হেসে বলল
_ মুখ টা বন্ধ কর। না হলে মশা মাছি পেটে চলে যাবে।
আর যাই হোক আমি মশা মাছির পাপা হতে পারবো না।

ফারহানের কথা শুনে ফারাবির ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল।
ফারহান মৃদু হেসে বলল
_ তাড়াতাড়ি কর , অনেক রাত হয়েছে।

_ আপনি একটা কথা বলুন তো। আপনি এতো কিছু জানলেন কি করে ?

_ সিক্রেট এটা।

_ সত্যি করে বলুন। না হলে কিন্তু আমি খাবো না।

_ আরে এতো হাইপার কেন হচ্ছিস। আচ্ছা বলছি , রাগ করবি না তো ?

_ উহুমমম বলুন।

ফারহান বিজ্ঞ দের মতো গলা ঝেরে নিলো। তারপর মৃদু কন্ঠে বলল
_ তোর ঘরে মিনি ক্যামেরা লাগানো আছে।

_ হোয়াট। কবে লাগিয়েছেন ?

_ তিন বছর আগে।

ফারহানের কথা শুনে ফারাবির মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো।
ফারহান নিঃশব্দে হেসে চলেছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান অনুনয়ের স্বরে বলল
_ জান। কি হয়েছে , ক্যামেরা ই তো লাগিয়েছি।

_ আপনি তার মানে , আমি রুমে আমি আর কিছু ভাবতে পারছি না।
আপনার চরিত্রের দোষ আছে জানলে

_ হুসসস একটা কথা ও না। প্রথমত আমার চরিত্রের দোষ নেই। কারন আমি আমার বউয়ের রুমে ক্যামেরা লাগিয়েছি।
আর তুই তো শুধু আমার , তোর প্রতি অংশ ও আমার। বাট আই সয়ার আমি কখনো তোর দিকে তাকাই নি জান।
যখন বুঝেছি তখন থেকে পাঁচ মিনিটের রেকর্ড স্ক্রিপ্ট করে দিয়েছি।
ইউ নো দ্যাট আমি জোড় করে কিছু আই মিন অনুমতি ছাড়া আমি তাকাবো ও না।
রিয়ালি জান

ফারাবি ফোন রেখে দিয়ে থম মেরে গেল। কিছুক্ষণ তব্ধ লেগে যাওয়ার পর হো হো করে হেসে উঠলো।
পেট চেপে ধরে হাসতে লাগলো। মানুষ টা আসলেই পাগল?
একটা মেয়ের রুমে ক্যামেরা লাগিয়ে দিলো। পার্সোনাল কতো কিছু থাকতেই পারো।
ফারাবি নিজের কথায় আবার হেসে উঠলো। ফারহান ওর স্বামী , আর ওহ পুরোপুরি ভাবে ফারহানের।
এখানে পার্সোনালের কিছু ই নেই , ফারাবি গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আপন মনে কাচ্চি নিতে চলে গেল।

**

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here