স্বীকৃতি পর্ব ৩

#স্বীকৃতি
#পর্ব_৩
#Saji_Afroz
.
.
.
মেসেজটি পাঠিয়েই মোবাইলটি বিছানার উপরে রেখে, ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে গেলো খুশবু।
তাকে দেখে বকুল জান্নাত বলে উঠলেন-
এসো, বসো আরহামের পাশে।
.
খুশবু চেয়ার টেনে আরহামের পাশে বসলো।
সকলের দৃষ্টি তাদের দুজনের দিকে। ভালোই মানিয়েছে দুটিকে।
খুশবু চোখ বুলিয়ে দেখলো, আরহামের বাবা তবিউর রহমান উপস্থিত নেই। শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে খুশবু বললো-
আঙ্কেল কে দেখছিনা?
-কোন আঙ্কেল?
-আপনার হাসবেন্ড।
.
খুশবুর উত্তর শুনে সকলে হেসে উঠলেও আরহামের খালা গম্ভীরমুখে বললেন-
কি কান্ড, কি কান্ড! শ্বশুড় কে কেউ আঙ্কেল বলে নাকি?
.
বকুল জান্নাত বললেন-
আস্তেধীরে শিখে নিবে।
-এখুনি শিখে রাখা উচিত। আমরা নহয় বাসার মানুষ। বাইরের কেউ শুনলে বলবে টা কি!
.
তিনি খুশবুর দিকে তাকিয়ে বললেন-
শ্বাশুড়িকে মা আর শ্বশুড় কে বাবা ডাকবে। ঠিক আছে?
.
খুশবু মাথা নেড়ে সাই দিয়ে বললো-
জ্বী।
.
আফসানা মুখে দুষ্টু হাসির রেখা টেনে খালার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
আর নিজের জামাই কে কি ডাকবে খালা?
.
ভ্রু জোড়া কুচকে তিনি জবাব দিলেন-
অসভ্য মাইয়া একটা। চুপ করে খেয়ে নে।
.
খুশবুর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে আরহাম।
মেয়েটির যে অন্য একটি রূপ আছে ছবিটা না দেখলে সে বুঝতোই না। তার কি উচিত, সকলের সামনে কথাটি প্রকাশ করা?
.
.
.
নাস্তা সেরে খানিকক্ষণ সবার সাথে গল্পের আসরে মেতে ছিলো খুশবু। যদিও সে চুপচাপই ছিলো, তবুও সকলের আড্ডার মাঝে ভালোই সময় কেটেছে।
বকুল জান্নাত বললেন-
আজ কিন্তু পাড়া প্রতিবেশীরা আসবে নতুন বউ দেখতে। খুশবু মা, ভালো একটা শাড়ি পরে তৈরী হয়ে নাও। সবাই দেখে যেনো চমকে যায়।
.
খুশবু মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে এগিয়ে গেলো রুমের দিকে।
আরহাম তার পিছু নিতে চায়লে আফসানা তাকে আটকে বললো-
তুই চুপচাপ এখানে বসে থাকতো। আরামসে রেডি হতে দে ভাবীকে।
.
আফসানার কথার পিঠে কোনো কথা না বলে হতাশ হয়ে বসে থাকলো আরহাম।
.
.
.
সকালের নাস্তা নিয়ে স্বামীর রুমে আসলেন বকুল জান্নাত।
নাস্তা তিনি নিজের রুমে করতেই পছন্দ করেন।
তবিউর রহমান ইজি চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন।
বকুল জান্নাত কে ট্রে হাতে নিয়ে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বললেন-
কি এনেছো আজকে?
-গরুর মাংস আর পরোটা।
.
তবিউর রহমান ইজি চেয়ার থেকে উঠে বিছানায় এসে বসতে বসতে বললেন-
এদিকে রাখো ট্রে টা। পা তুলে বসে খেতে না পারলে যেনো ভালোই লাগেনা আমার!
.
স্বামীর কথামতো বকুল জান্নাত ট্রে টা রাখলেন বিছানার উপরে। নিজেও বসলেন তার সামনে।
তার হাসৌজ্জ্বল মুখটা দেখে তবিউর রহমান বললেন-
খুশি খুশি লাগছে তোমাকে?
-হ্যাঁ। মনের মতো একটা বউ পেয়েছি খুশিতো হবোই।
দুটিতে খুশি থাকলেই হলো এবার।
-তোমার না শখ ছিলো? তোমার ছেলের বউ শাড়ি পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াবে। দুজনে রোমান্স করার সময় হঠাৎ তোমার উপস্থিতিতে লজ্জা পেয়ে যাবে। এমন কিছু হয়েছে কি?
-সবে মাত্র বিয়ে হলো কাল। তবে আমাদের আরহাম বউকে চোখে হারায়। আর খুশবু? প্রচন্ড ভালো মেয়ে। ভাগ্যিস পাশের বাসার মারজানা আপা খুশবুকে দেখিয়ে দিয়েছিলো আরহামের জন্য।
এবার আফসানার বিয়েটা দিতে পারলেই শান্তি।
-ওকে বলোনি প্রস্তাবটির কথা?
-বিয়ের ঝামেলায় বলা হয়নি। বলবো। আরহামের মতো আমাদের পছন্দই মেনে নিবে সে দেখিও।
.
.
মা বাবার কথোপকথন আড়াল থেকে শুনেছে আরহাম। এসেছিলো সে খুশবুর বিষয়টা তাদের জানানোর জন্য কিন্তু খুশবুর প্রতি মায়ের ভালোবাসা দেখে তা আর পারলো না আরহাম।
তাদের আশা, বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে খুশবু। কেনো এমনটা করলো সে? এর জবাব দিতেই হবে।
আপনমনে এসব ভেবে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো আরহাম।
.
সবুজ রঙের একটা কাতান শাড়ি পরেছে খুশবু।
শাড়ি পরেই এলোচুলে বসে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে আছে সে।
মেসেজ অপশনে গিয়ে আবারো টাইপ করে পাঠিয়ে দিলো ফারাজের নাম্বারে-
Reply dibena? Opekkha korchi to….
.
আরহাম এসে খুশবুকে এভাবে দেখে বললো-
মা আপনাকে তৈরী হয়ে নিতে বলেছে। আর আপনি বসে বসে মোবাইল টিপাটিপি করছেন?
-আমি শাড়ি পরেছি তো।
-ব্যাস! হয়ে গেলো?
-তো?
-তো মানে! আপনার যে এই সংসারে মন নেই তা আমি ভালো করেই বুঝেছি। আর কেনো নেই তাও জানি আমি। আপনি…
.
-ভাবী কে এসেছে দেখো।
.
খুশি আর অনন্তকে নিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো আফসানা।
তাদের দেখে থেমে গেলো আরহাম।
এদিকে বোনকে দেখে খুশি তার দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে।
অনন্তের সাথে কথাতে আফসানা মেতে থাকলেও আরহাম খেয়াল করলো, খুশির জড়িয়ে ধরাতে খুশবুর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। নিশ্চুপভাবেই বসে আছে সে নিজের জায়গায়।
খুশি তাকে ছেড়ে পাশে বসে বললো-
এভাবে এলোমেলো ভাবে বসে আছিস কেনো আপু? কেউ দেখলে কি বলবে নতুন বউ তুই?
.
তার কথা শুনে অনন্ত হেসে বললো-
এলোমেলো থাকলেও তোমার চেয়েও খুশবুকে ভালো লাগে বেশি।
-হু! তোমার কাজই তো শুধু আমাকে ছোট করা।
.
আফসানা বললো-
ভাবী তুমি এখনো তৈরী হওনি কেনো?
.
খুশি বললো-
তৈরী কেনো হবে?
-প্রতিবেশিরা দেখতে আসবে।
-ওহ! আচ্ছা আমিই আপুকে রেডি হতে সাহায্য করছি।
.
আফসানা অনন্ত ও আরহামের উদ্দেশ্যে বললো-
তাহলে আমরা যাই?
.
রুম থেকে বেরিয়ে এলো আরহাম। এখনো জিজ্ঞাসা করতে পারলোনা সে কিছু খুশবুকে।
কখন যে পারবে!
.
.
প্রতিবেশীরা একেএকে দেখে যাচ্ছে খুশবুকে।
খুশবুর অস্বস্থি হবার কথা হলেও হচ্ছেনা। খাটের এক পাশে চুপচাপ বসে আছে।
তার সাথে কথা বলে এসে ড্রয়িংরুমে বসলো অনন্ত।
খুশি ফিসফিসিয়ে বললো-
কিছু বুঝলে আপুর মতিগতি?
-হুম। পুরোপুরি ফারাজে মগ্ন এখনো। তবে মনেহয় না এখানের কেউ এই বিষয়ে জানে। সবই ঠিকঠাক লাগছে।
-আমারো।
.
আফসানা এসে বললো-
কি বিষয় নিয়ে ফিসফিস হচ্ছে?
.
খুশি হাসিমুখে জবাব দিলো-
ভাইয়া আপুর সম্পর্ক কেমন বোঝার চেষ্টা করছি।
-আরে একদিনেই ভাইয়া তো ভাবীকে চোখে হারাচ্ছে।
-সত্যি?
-হু। তোমরা যখন এসেছো, দেখোনি ভাইয়া তখনও ভাবীর কাছে ছিলো?
.
খুশি স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো-
কারো যেনো নজর না লাগে ওদের উপরে।
-আচ্ছা আমি একটু আসছি। তোমরা ফিসফিস কন্টিনিউ করো।
.
খুশি খেয়াল করলো, অনন্তের কপালে চিন্তার ভাজ।
খুশি বললো-
কি ব্যাপার অনন্ত? চিন্তিত মনেহচ্ছে তোমাকে?
-হুম চিন্তা তো একটু লাগছেই। সব যদি ঠিকই থাকে তাহলে খুশবুর উচিত নতুনভাবে শুরু করা। এমন আচরণের জন্য কিন্তু ওর নিজেরই ক্ষতি হতে পারে।
-আরে কিছু হবেনা! বিয়ের প্রথমে মেয়েদের এমনিতেই বাসার জন্য মনমরা হয়ে থাকে।
.
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে অনন্ত বললো-
কিন্তু তোমার হবে বলে তো মনেহয় না।
-কি মনে হয়?
-বিয়ে করতে পারলে খুশিই হবে।
.
নিজেরমনে খুশি বললো-
আসলে তুমিই বোঝো আমাকে। তোমাকে বিয়ে করতে পারলে মনমরা থাকার প্রশ্নই আসেনা!
.
.
নিজের রুমে এসে মোবাইলটা হাতে নিলো আফসানা।
অনেকক্ষণ যাবৎ সে সাদেকের সাথে কথা বলেনি। তাই একটু সুযোগ পেতেই ঝটপট ডায়েল করলো তার নাম্বারে।
সাদেক তার ফোন পেয়ে রিসিভ করে বললো-
এতোক্ষণে সময় হলো আমাকে ফোন দেয়ার?
-বিয়ে বাড়ি বুঝোই তো।
-ইশ! কবে যে আমার বাড়িটাও এভাবে মেতে থাকবে!
-বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেই পারো আমার বাসায়।
-মানবে?
-সেটা তো আনার পরেই বলা যাবে, তাইনা?
-তা অবশ্য ঠিক।
.
কথা বলতে বলতেই মায়ের ডাক কানে আসলো আফসানার। সাদেকের উদ্দেশ্যে তাড়াহুড়ো করে বললো-
মা ডাকছে এখন রাখছি।
-একটু শুনো?
-কি?
-হবু শ্বাশুড়িকে পটানোর টিপস দিও পারলে।
.
মৃদু হেসে ফোনের লাইন কেটে রুম থেকে বেরিয়ে, ড্রয়িংরুমের দিকে এগিয়ে গেলো আফসানা।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here