স্বীকৃতি পর্ব ৪

#স্বীকৃতি
#পর্ব_৪
#Saji_Afroz
.
.
.
খালেদা শারমিনের সামনে বসে আছে খুশি ও অনন্ত।
ওবাড়ি থেকে এসেছে তারা বেশ খানিকক্ষণ হলো।
সবটা শুনে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন-
সব ঠিক আছে! সত্যি বলছিস তো তোরা?
.
অনন্ত জবাব দিলো-
হ্যাঁ আন্টি। তুমি আর চিন্তা করো নাতো। সব ঠিক আছে ওখানে। এবার খুশির একটা গতি করো।
.
খুশি রেগেমেগে বললো-
আমাকে তাড়াতে পারলেই যেনো তুমি খুশি?
-হু আমার বিয়ের আগেই তোমাকে এখান থেকে তাড়াতে চাই। যাতে করে আমার বউ এর পিছে না লাগতে পারো তুমি।
.
অনন্তের কথা শুনে খুশির মুখটা গোমড়া হয়ে গেলো। সেই গোমড়া মুখের দিকে তাকিয়ে অনন্ত বললো-
কি হয়েছে?
.
সোফা ছেড়ে উঠে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে খুশি বললো-
বেশি জ্বালাই তো তোমাকে? আর জ্বালাবো না। কথাও বলবো না।
-হু, বাঁচলাম!
.
.
.
সারাদিন খুশবুর সাথে কথা বলার সময়টুকু পায়নি আরহাম।
এদিকে তার সাথে কথা বলতে না পারায় অস্থির হয়ে আছে মনটা। যতক্ষণ না এই বিষয়ে খুশবুর সাথে কথা বলা যাবে ততক্ষণ সে যেনো শান্তিতে থাকতে পারছেনা।
দেখতে দেখতে সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাত হয়ে গেলো।
সারাদিনে আকাশে মেঘের ছিটেফোটাও ছিলোনা। কিন্তু সন্ধ্যে থেকেই আকাশ কালো হয়ে মেঘ জমতে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হলেও ঝড়ো বাতাস বইতে শুরু করলো। একেকবার বাতাসের ঝাপ্টা আসে, গাছের লতাপাতার শব্দ পাওয়া যায়।
রাতের খাবার শেষে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে এলো আরহাম।
এমন একটা আবহাওয়ায় নতুন বউ এর সাথে গল্প আর ভালোবাসায় মজে থাকার কথা হলেও সে যাচ্ছে প্রশ্ন করতে৷ তাও যেমন তেমন প্রশ্ন নয়! বউ এর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন।
এসব ভেবে নিজেরমনে হেসে ভেতরে প্রবেশ করলো আরহাম।
খুশবুকে গুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকতে দেখলো সে।
নিজের উপস্থিতি জানান দেয়ার জন্য হালকা কেশে উঠলো আরহাম। কিন্তু খুশবুর কোনো প্রতিক্রিয়া সে দেখলোনা। তাই কর্কশ কণ্ঠে বলে উঠলো-
আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
.
খুশবুকে ওভাবেই শুয়ে থাকতে দেখে তার পাশে গেলো আরহাম। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মেয়েটি। আরহাম খেয়াল করলো, তার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। মেয়েটির কি ঠান্ডা লেগেছে?
সংকোচ হলেও খুশবুর কপালে হাত দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলোনা আরহাম। সে অনুভব করলো, প্রচন্ড গরম খুশবুর শরীর। জ্বর এসেছে তার।
মেয়েটি কি নিজের শরীরের অবস্থা টাও বুঝেনা? একটা চাঁদর গায়ে দিয়ে ঘুমোতে পারতো!
ড্রয়ার খুলে চাঁদর নিয়ে খুশবুর শরীরের উপরে বিছিয়ে দিলো আরহাম।
গরম তাপ পেয়ে খুশবু সামান্য নড়েচড়ে উঠলো।
আরহাম তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো।
একজন অসুস্থ মানুষের উপরে রাগ দেখানোর মানেই হয়না। আরেকটা রাত নাহয় অপেক্ষা করবে সে….
.
.
.
সকালে ঘুম থেকে উঠে সময় দেখে নিলো আরহাম।
তারপর নজর গেলো তার খুশবুর দিকে।
কপালে হাত ছুঁইয়ে দেখলো জ্বর এখনো আছে।
ঘুম থেকে উঠালো না সে খুশবুকে।
চুপচাপ এগিয়ে গেলো ওয়াশরুমের দিকে।
.
.
বেলা ১১টা হয়ে গেলো। বাড়ি থেকে সব মেহমানই চলে গেলো। এতে আরহামের যেনো ভালোই লাগছে।
শান্ত প্রকৃতির মানুষ হওয়াতে হইচই তার কম পছন্দ।
আরাম করে সোফায় বসে টিভি দেখতে লাগলো সে।
হঠাৎ তার মা এসে বললেন-
আরহাম আমার সাথে একটু আফসানার রুমে আয়। কথা আছে তোর সাথে।
.
.
দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আফসানা।
তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে বকুল জান্নাত ও আরহাম।
আরহাম মায়ের উদ্দেশ্যে বললো-
হয়েছে টা কি?
-তোর বন্ধু ফাহিম আফসানার জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে এটা তোর অজানা নয়। ফাহিমকে আমরা আগে থেকেই চিনি। ভীষণ ভালো ছেলে সে। তাই আমরাও রাজি হয়েছি এই প্রস্তাবে।
-এসব তো আমি জানি।
-আফসানা কে জানিয়েছি কিন্তু সে রাজি না এই বিয়েতে। তার নাকি সাদেক নামের এক ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। ছেলেটি তার সমবয়সী। ও কি করে ভাবলো? এমন পিচ্চি একটা ছেলেকে মেনে নিবো আমরা?
.
মায়ের কথা শুনে আফসানার দিকে তাকিয়ে আরহাম জিজ্ঞাসা করলো-
এসব কি সত্যি?
.
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আফসানা জবাব দিলো-
হু।
.
আফসানার পাশে এসে আচমকা বকুল জান্নাত তার দুই হাত নিজের মাথায় রেখে বললেন-
আমার কসম কর তুই। ওই ছেলের সাথে আর কখনো কথা বলবিনা। তোর বাবা জানলে অনেক কষ্ট পাবে। এইসব যেনো এখানেই শেষ হয়।
.
আফসানা কোনো কথা না বলে নিশ্চুপভাবে কেঁদে চলেছে।
বকুল জান্নাতের নিঃশ্বাস বড় হয়ে যাচ্ছে, ঘামছেন তিনি অনবরত, শরীরটাও কাঁপছে তার।
আফসানার এমন নিরবতা যেনো তার সহ্যই হচ্ছেনা।
আফসানার হাতটা ছেড়ে, বিছানার উপরে থাকা তার মোবাইলটা নিয়ে নিলেন বকুল জান্নাত। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আফসানার দিকে তাকিয়ে বললেন-
দশ বিশ দিনের ভালোবাসা এসব বিয়ের পরেই উধাও হয়ে যাবে। ফাহিম কে ভালো না লাগলে অন্য কোনো পাত্র দেখবো। তবুও এই ছেলেটির সাথে বিয়ে দেয়া সম্ভব নয়।
.
এতোক্ষণ যাবৎ নিশ্চুপভাবে মা ও বোনের কার্যকলাপ দেখেছে আরহাম।
আফসানা এখন কি করবে? মায়ের কথাই তো তার শোনা উচিত। তবে কি খুশবুও এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়ে বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছিলো?
.
.
সারাদিন নিজেকে ঘর বন্দি করে রেখেছে আফসানা।
খুশবু অসুস্থ শরীর নিয়ে তার রুমে এলো। খুশবুর গলার স্বর শুনে দরজা টা খুললো আফসানা।
আফসানার কাছে সবটা শুনে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে খুশবু বললো-
জীবন নিয়ে আমরা যতই পরিকল্পনা করি না কেনো,
ভাগ্যে যা লেখা থাকে সেটাই ঘটে।
-ভাগ্য বিশ্বাসী তুমি?
-ছিলাম না।
-এখন?
-এখন বিশ্বাসী।
-আমার কি সব ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দেয়া উচিত?
-তুমি তোমার ভাইয়ার সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে পারো।
-তুমি বলবে?
-আমি কিভাবে…
-প্লিজ ভাবী।
-চেষ্টা করবো।
.
.
খুশবু রুমে আসতেই তার দিকে তাকিয়ে আরহাম বললো-
এই অসুস্থ শরীর নিয়ে হাটাহাটি না করলে ভালো হয়।
-আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।
-বলুন।
-জোর করে বিয়ে দিলে আফসানা কি সেই সংসারে মন বসাতে পারবে?
-আপনাকে সব বলেছে ও?
-হু।
-ও যাকে ভালোবাসে ছেলেটি ওর সমবয়সী।
-আফসানা আপনার একমাত্র বোন। ওর ভরণ পোষণের দায়িত্ব কি আপনি নিতে পারবেন না? খুব বেশি কি জরুরি, এখুনি ওকে বিয়ে দেয়ার?
.
খুশবুর প্রশ্নের কোনো জবাব আরহাম দিলোনা।
খুশবু তার পাশে এসে ঠোঁট জোড়া প্রসস্থ করে বললো-
একজন ভাই হিসেবে না ভেবে প্রেমিক হিসেবে ভেবে দেখুন।
-আপনি কি প্রেমিকা হিসেবে ভেবেছেন এই বিষয়টা?
-হু।
.
কথাটি বলে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো খুশবু। মাথাটা ঝিমঝিম করছে তার।
এদিকে আরহাম পড়লো মহাভাবনায়, আফসানার বিষয়ে কি করা উচিত তার? মাকে সমর্থন করবে নাকি বোনের ভালোবাসাকে?
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here