হঠাৎ বর্ষনের রাতে পর্ব -০১

“মাঝরাতে বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিল “অর্নব” এমন সময় হুট করে কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে পড়লো অর্নবের গাড়ির সামনে!’আচমকা এমনটা হওয়াতে কিছুটা হতভম্ব হয়ে গাড়িতে ব্রেক কষলো অর্নব!’তারপর বেশি কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে বের হয় সে…

“অন্যদিকে….

“গাড়ির সামনে মাথা জুকে আছে ইরা ভয়ে তার শরীর কাঁপছে সাথে ঠান্ডায় হাত পা জমে গেছে প্রায়!’এমন সময় আচমকা কারো ভয়েস কানে আসতেই চোখ তুলে তাকায় ইরা!’সামনেই অচেনা একটা ছেলেকে দেখে মাথা তুলে তাকায় ইরা!’ছেলেটি কিছু বলছে তাকে কিন্তু ছেলেটির কথা ইরার কান পর্যন্ত যাচ্ছে না চোখে ঝাপসা দেখছে সব!’ইরা আস্তে আস্তে উঠে অর্নবের সামনে দাঁড়িয়ে কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললোঃ

—“প্লিজ হেল্প মি…

“আর কিছু বলার আগেই ইরা ঢলে পড়লো সামনের মানুষটির গায়ের ওপর….

“এদিকে অর্নব মেয়েটিকে পড়ে দেখে তাড়াতাড়ি ধরে বসলো!’তারপর তাকালো মেয়েটির মুখের দিকে,বৃষ্টিতে ভিজে গেছে পুরো!’এতরাতে হুট করে এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হবে অর্নবকে বুঝতে পারে নি সে!’অর্নব বেশ কয়েকবার ডাকলো মেয়েটি কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ করলো না মেয়েটি,

_____

“একটা অন্ধকার রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে আছে ইরা!’এমন সময় আচমকা মুখে পানি এসে পড়াতে চমকে উঠলো সে!’তাড়াতাড়ি চোখ খুলে তাকায় ইরা সামনেই চারটে ছেলেকে দেখে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে যায়!’কিছুটা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে সেঃ

—“আপনারা আমায় এইভাবে বেঁধে রেখেছেন কেন?’

“ইরার কথা শুনে চারটে ছেলে উচ্চ স্বরে হেঁসে দিয়ে বললোঃ

—“তুমি বুঝতে পারছো না সুন্দরী…

“ছেলেগুলোর কথা শুনে ভয়ে আত্মা কেঁপে উঠল ইরার!’ইরা পিছনের দিকে এগোতে এগোতে বলে উঠলঃ

—“প্লিজ এমন করবেন না…

—“তা বললে তো শুনছি না…

“বলেই একটু একটুু করে ছেলেগুলো এগোতে থাকে ইরার দিকে!’ছেলেগুলোর কাজ দেখে ইরা ভয়ে আরো পিছিয়ে যায়,এক পর্যায়ে দেয়ালের সাথে লেগে যায় ইরা!’এমন সময় তার সামনে বসে পড়ে একটা ছেলে তারপর হাসতে হাসতে বলেঃ

—“এবার কোথায় যাবে সুন্দরী?’

—“প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন..

—“ছেড়ে তো দিবোই তার আগে…

“এতটুকু বলে একটা ছেলে হামলে পড়ে ইরার উপর!’

“সাথে সাথে এক চিৎকার দিয়ে উঠে ইরা!’আচমকা ঘুমের মধ্যে ইরাকে চিৎকার দিয়ে উঠতে দেখে ঘাবড়ে যায় অর্নব!’কিছুটা বিস্ময় নিয়ে বলে সেঃ

—“আর ইউ অলরাইট মিস…

“ইরা অর্নবের কথা শুনে পাঁচদশ কিছু না ভেবেই ফট করে জড়িয়ে ধরে অর্নবকে!’তারপর কাঁদতে কাঁদতে বলেঃ

—“প্লিজ আমায় হেল্প করুন না হলে ওরা আমায় মেরে ফেলবে…!’

“হুট করে ইরার এমন কাজে চমকে উঠলো অর্নব!’তবে এতটুকু বুঝে গেছে মেয়েটির বাজে কোনো স্বপ্ন দেখেছে!’অর্নব ইরাকে শান্ত করার জন্য বলে উঠলঃ

—“ইট’স ওকে মিস ভয় পাবেন না এখানে কেউ আপনাকে মারবে না,আপনার বাসার এড্রেস বলুন আমি আপনাকে আপনার বাড়ি পৌঁছে দিবো…

“বাড়ির কথা শুনতেই আস্তে আস্তে শান্ত হয় ইরা!’সাথে সে যে কাউকে জড়িয়ে ধরেছে বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললোঃ

—“সরি….

“বাহিরে মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছে!’সাথে তুুমুলবেগে আকাশে গর্জন দিচ্ছে!’ইরা আশেপাশে চোখ বুলালো একটু,,একটা শুনশান রুমের মধ্যে বিছানায় শুয়ে আছে সে!’এমন সময় অর্নব ইরার দিকে একটা টাওয়াল এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“তারপর বলুন এই বৃষ্টির মধ্যে এতরাতে কোথা থেকে ফিরছিলেন আর ভয়ই বা কেন পাচ্ছিলেন…?’

“অর্নবের কথা শুনে ইরা কিছু না বলে টাওয়ালটা হাতে নিলো তারপর মাথাটা মুছতে মুছতে হাল্কা নীরব কন্ঠে বলতে লাগলোঃ

—“আসলে অফিস থেকে বের হতে আজকে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল আর বৃষ্টির জন্য কোনো গাড়ি বা রিকশা পাচ্ছিলাম এমন সময় কতটুকু গুলো ছেলে আর কিছু বলতে পারলো না ইরা থেমে গেল সে!’

“ইরাকে থেমে যেতে দেখে অর্নবের আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছু!’অর্নব কিছু না বলে চুপচাপ বেরিয়ে যায় রুম থেকে!’এই মুহূর্তে তার কি বলা উচিত জানে না সে…

“অর্নব যেতেই আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে নামলো ইরা!’ভিজে একাকার অবস্থা তাঁর!’লাল চুড়িদারের অবস্থা বেহাল, তবে কিছু করার নেই এভাবেই বাড়ি ফিরতে হবে তাঁকে!’বাড়ির কথা মনে পড়তেই সবার আগেই তার মায়ের কথা মনে পড়লো!’উত্তেজিত হয়ে ইরা তার ফোনটা খুলতে লাগলো!’

“এমন সময় হাতে একটা ড্রেস নিয়ে রুমে ঢুকলো অর্নব!’ইরাকে কিছু খুজতে দেখে বললো সেঃ

—“ফোন খুঁজছেন তো?’

“কারো কন্ঠ কানে আসতেই ইরা তার খোঁজাখুঁজি বন্ধ করে দিয়ে অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললোঃ

—“হুম…

“ইরার কথা শুনে অর্নব ইরার দিকে এগিয়ে এসে বললোঃ

—“এগুলো পড়ে ফেলুন না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে…

“অর্নবের কথা শুনে ইরা তাকায় অর্নবের হাতে দিকে তারপর বলেঃ

—“এগুলো…

—“হুম এগুলো আমার ছোট বোনের আইথিংক আপনার হবে,তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলুন না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে,আর ফোনের টেনশন করবেন না আমার কাছে আছে,আপনি চেঞ্জ করে নিচে আসুন তারপর দিচ্ছি…

“এতটুকু বলে বেরিয়ে যায় অর্নব রুম থেকে!’

_____

“সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলো ইরা পরনে তার ওয়াইট থ্রি-পিচ!’নিচেই দাঁড়িয়ে ছিল অর্নব,ইরার দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে সে!’ইরা অর্নবের দিকে এগিয়ে এসে বললোঃ

—“এবার আমায় বাড়ি পৌঁছে দিন প্লিজ,মা হয়তো অনেক টেনশন করছে?’…..

“এরই মাঝে আকাশে জোরে গর্জন দিয়ে উঠলো!’অর্নব আকাশের অবস্থার কথা ভেবে বলে উঠলঃ

—“এখন তো বৃষ্টি পড়ছে খুব একটু কমুক তারপর যাবো…

“উওরে ইরা আর কিছু বলতে পারলো না!’অর্নব ইরার দিকে ওর ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“আপনার ফোন…

“অর্নবের কথা শুনে ইরা তার ফোনটা নিয়ে বললোঃ

—“থ্যাংক ইউ….

—“ইট’স ওকে…

“এতটুকু বলে সরে আসে অর্নব!’সময়টা তখন প্রায় রাত_দুটো ছাড়িয়ে গেছে!’ইরা তাড়াতাড়ি ফোন করে তার মাকে’!!প্রথম কলেই ফোন তুলে ফেলেন ইরার মা’!!তারপর ইরা কিছু বলার আগেই হতভম্ব কন্ঠে বলেন উনিঃ

—“কই তুই এখনো বাড়ি ফিরছিস না কেন?’

—“আরে আম্মু শান্ত হও বাহিরে বৃষ্টির জন্য আমি একটু আঁটকে গেছি,বৃষ্টি কমে গেলেই আসছি…

“এতটুকু বলে ফোন কেটে দেয় ইরা!’কারন সে জানে এখন ফোন না কাটলে আরো হাজারটা প্রশ্ন করবে তার মা!’

“এরই মাঝে ইরার ভাবনার মাঝখানে হাতে দু’কাপ কফি নিয়ে এগিয়ে আসলো অর্নব!’তারপর এককাপ ইরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“এটা খান,ভালো লাগবে…

“অর্নবের কথা শুনে ইরা তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসলো!’তারপর কফির কাপটা হাতে নিয়ে বললোঃ

—“থ্যাংক ইউ…

“উওরে অর্নব কিছু বলে না!’

___

“পাশাপাশি সোফার উপর বসে আছে ইরা আর অর্নব!”ইরা তার কফিতে এক চুমুক দিতে দিতে বলে উঠলঃ

—“আচ্ছা আপনার বাড়ির কাউকে দেখছি না কেন?’

“অর্নব তার কফিতে চুমুক দিয়ে বললোঃ

—“ওরা সবাই আমার এক আত্মীয় বিয়েতে গেছে কাল সকালেই চলে আসবে…

—“ওহ!’

—“হুম…

—“আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এতরাতে আমায় সাহায্য করার জন্য…

—“ইট’স ওকে!’

“তারপর এটা ওটা নিয়ে গল্প করে ওরা দুজন!’কিছুক্ষন পর…

“কফি খাওয়া শেষ হতেই ইরা বলে উঠলঃ

—“এখন তবে আমায় পৌঁছে দিন,এখন বৃষ্টিও কমেছে অনেক…

“উওরে অর্নব বলে উঠলঃ

—“ঠিক আছে…

___

“গাড়ি করে চলছে অর্নব আর ইরা!’হঠাৎ অর্নব বলে উঠলঃ

—“এতরাত অবদি অফিস করেন কেন?’

—“আসলে ব্যাপারটা তেমন নয় কালকে আমাদের অফিসে নতুন বস আসবে আর তাকে শুভেচ্ছা জানানোর কিছু টুকটাক কাজ করতে করতে একটু দেরি হলো আরকি…

—“ওহ!’

—“হুম…

—“আচ্ছা আপনি যে কোম্পানিতে চাকরি করেন তার নাম কি?’

“ইরা অর্নবের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললোঃ

—“এখানে রাখুন আমরা চলে এসেছি….

“সাথে সাথে অর্নব গাড়ি থামিয়ে দিলো!’তারপর ইরা গাড়ি থেকে নেমে আর একবার অর্নবকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায় রুমে….

“ইরা যেতে অর্নবও আর বেশি কিছু না ভেবে চলে যায় তার গন্তব্যের দিকে…..

_____

“পরেরদিন বিকট শব্দে ফোনের আওয়াজ কানে আসতেই লাফ মেরে উঠলো ইরা!’তারপর ঘড়ির দিকে তাকাতেই “ওহ শিট” বলেই তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে চললো সে….
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ০১

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here