হঠাৎ বর্ষনের রাতে পর্ব -১৩

#হঠাৎ_বর্ষনের_রাতে💖
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💖
— পর্বঃ১৩

“হা হয়ে তাকিয়ে আছে অর্নব ইরার দিকে,চোখ যেন সরছেই না তাঁর!’মেরুন রঙের গাউন,খোলা চুল সাথে হাল্কা মেকাপ সবই যেন পারফেক্ট ভাবে মানিয়েছে ইরাকে!’অর্নব মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ইরার দিকে যেন চোখে পলক ফেলতেই ভুলে গেছে সে!’

“অন্যদিকে ইরা,,

“গায়ের গাউনটা ধরে আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো!’পায়ে হাই হিল থাকায় হাঁটতে একটু সমস্যা হচ্ছে তার,এটা হয়েছে একমাত্র জেরিনের জন্য,জেরিনের তাড়াতাড়ি করার কথা শুনতে শুনতে ভুল করে হাই হিল পড়ে এসেছে ইরা!’প্রথমে বুঝতে না পারলেও এখন হারে হারে টের পাচ্ছে সে!’পুরো পরিবেশটার চারদিকে চোখ বুলালো ইরা!’বাহিরটার থেকেও ভিতটা আরো বেশি সুন্দর!’লাইটের আলোতে যেন পুরো বাড়িটা চকচক করছে!’জেরিন তো বলেই উঠল ইরাকেঃ

—“দোস্ত দেখেছিস জায়গাটা কত সুন্দর করে সাজিয়েছে, ভালো লাগে না বল…?’

—“হুম খুব!’

“এরই মাঝে স্টেজে উঠলো আরিফ আর তার উডবি ওয়াইফ!’ইরা খুশি মনে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে!’

.

“খুশি মনে সবার সামনে আরিফ তার উডবি ওয়াইফকে আংটি পড়িয়ে দিল আর ওর উডবিও আরিফকে আংটি পড়িয়ে দিল!’ওদের কাজ শেষ হতেই আশেপাশের সবাই করোতালির মাধ্যমে ওদের শুভেচ্ছা জানালো,ইরাও খুশি মনে করোতালি দিলো!’

“অর্নবও সোফা থেকে উঠে এসেছে অনেক আগেই সেও করোতালি দিয়ে শুভেচ্ছা জানালো আরিফ আর আরিফের উডবিকে!’

“হঠাৎই ইরার চোখ যায় অর্নবের দিকে,ইরা বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে চলে যায় অর্নবের দিকে!’তারপর খুশি মনে বলেঃ

—“হ্যালো স্যার…

“আচমকা ইরার কন্ঠ শুনে কিছুটা চমকে উঠলো অর্নব!’পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে হাল্কা হেঁসে বললো সেঃ

—“হ্যালো…

—“কখন এসেছেন স্যার?’

—“অনেক আগে আর তুমি?’

—“আমি তো এইমাত্র আসলাম..

—“ওহ,তা একা এসেছো?’

—“না স্যার আমার সাথে ওই জেরিনও এসেছে..

“বলেই পিছনে তাকালো ইরা,কিন্তু আশেপাশে কোথাও জেরিনকে না দেখে বললো ইরাঃ

—“কি হলো ও আবার গেলো কই…

“এতটুকু বলে অর্নবের দিকে তাকিয়ে বললো ইরাঃ

—“আপনি এখানে থাকুন স্যার আমি একটু আসছি?’

“উওরে অর্নবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে ইরা!’বেশ চিন্তিত সে,না জানি এই জেরিনের বাচ্চা কোথায় আছে….!’

“আশেপাশে হেঁটে হেঁটে চারদিকে খুঁজতে লাগলো ইরা জেরিনকে কিন্তু কোথাও খুঁজে পেল না সে!’ এরই মাঝে লাউডে মিউজিক বাজতে শুরু করলো,সাথে এনাউন্সও করা হলো পার্টি ইনজয়ের জন্য!’

“মিউজিক বাজতে শুনেই আশেপাশের মানুষজন যে যার পার্টনারের হাত ধরে ড্যান্স করতে শুরু করলো!’সবাইকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো ইরা,,এমন সময় পিছন থেকে তার হাত ধরে বসলো কেউ!’আচমকা এমনটা হওয়াতে কিছুটা ঘাবড়ে যায় ইরা!’পরক্ষণেই পিছন ফিরে আসফিকে দেখে হাল্কা হেঁসে বললো সেঃ

—“আপনি…

—“হুম আমি,

“বলেই হাত ছেড়ে দেয় আসফি!’তারপর বলেঃ

—“সেই কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না..

—“ওহ ডাকছিলেন আসলে এত জোরে মিউজিক বাজছে যে শুনতে পায় নি…

—“হুম বুঝতে পেরেছি তা এত তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছো?’

—“না মানে আসলে জেরিনকে কোথায় দেখছি না তাই আর কি?’

—“ওহ এখানেই আছে হয়তো,

—“হবে হয়তো..

“বলেই দুজন একসাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সামনের মানুষের কাপল ড্যান্স দেখতে থাকে!’ইরার সবার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে আসফি তো এখানে তাহলে জেরিনের বাচ্চা গেল কই?’

“আসফি সবার নাচ দেখতে দেখতে হঠাৎই মুচকি হেঁসে নিজের হাত ইরার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

—“লেট’স ড্যান্স ইরা?

“আসফির কথা আর কাজ দেখে ইরা হাল্কা হেঁসে বললোঃ

—“আমি ড্যান্স পারি না…

—“নো প্রবলেম আমি শিখিয়ে দিবো….

—“না না এত মানুষের মাঝে আমার ধারা হবে না আপনি বরং অন্য কাউকে দেখুন..

—“কাম অন ইরা কিচ্ছু হবে না আমি তো আছি…

—“আপনি বুঝতে পারছেন না…

—“বললাম তো কিছু হবে না..

“এতটুকু বলে জোর করে ইরার হাত ধরে এগিয়ে যেতে লাগলো আসফি!’তারপর সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে কাঁপল ড্যান্স করতে লাগলো ইরা আর আসফি!’শুরুতে ইরা কিছুটা আনকনফিটেবল ফিল করলেও পরক্ষনেই আসফির সহযোগীতায় বেশ ভালো লাগছে তাঁর!’….

___

“অন্যদিকে…

“দূর থেকে আসফি আর ইরার কাজ দেখে ভিতরে ভিতরে চরমভাবে রেগে যায় অর্নব!’চোখে মুখে রাগ তার বিদ্যমান!’অর্নবের ছোট বেলা থেকেই একটা বিষয়ে খুব রাগ হয় সেটা হলো নিজের জিনিসের ওপর অন্যকারোর নজর!’রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে অর্নব ইরা আর আসফির দিকে!’

“চারিদিকে লাইডে মিউজিক বাজছে, সাথে লাল নীল রঙের বাতি জ্বলছে!’তার মাঝেই ইরা আসফি সহ আরো অনেকেই একসাথে কাপল ড্যান্স করছে!’আর ওদের থেকে কয়েক কদম দূরে দাঁড়িয়ে এসব দেখছে অর্নব!’এমন সময় অর্নবের পাশ কাটিয়ে একজন লোক ড্রিংক সার্ভ করার জন্য হাতে ট্রে নিয়ে যাচ্ছিল!’অর্নব রাগের মাথায় তাকে ডেকে তার কাছ থেকে পর পর সব গ্লাসের ড্রিংক করে বসে!’অর্নবের কাজ দেখে লোকটি কিছু বললো না জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো!’

“এদিকে আসফি আর ইরা দিব্বি হেঁসে হেঁসে নিজেদের কাজে ব্যস্ত!’

“অর্নব পর পর সব গ্লাস শেষ করে একটা গ্লাস জোরে চেপে ধরে ভেঙে ফেললো,ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে সে!’অর্নব বেশি কিছু না ভেবে ইরার দিকে তাকাতে তাকাতে হন হন করে চলে যায় ইরা আর আসফির সামনে,তারপর সবার সামনেই ইরার হাত ধরে হাঁটা শুরু করলো অর্নব!’..

.

“নিজেদের ড্যান্স শেষ করে জাস্ট ইরা আসফি দাঁড়িয়ে কথা বলতে ছিল এমন সময় হুট করে কাউকে নিজের হাত ধরে হেঁটে নিয়ে যেতে চমকে উঠলো ইরা!’সামনেই অর্নবকে দেখে অবাক হয়ে বললো সেঃ

—“আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন স্যার?’

“অর্নব চুপ!’

“এদিকে অর্নবের এমন কাজে আশেপাশে সবাই তাকিয়ে রইলো অর্নব আর ইরার দিকে!’আসফিও বেশ অবাক বিষয়টায়, কারন সেও ইরার মতো বুঝতে পারলো না অর্নব ইরাকে কেন নিয়ে গেল!’

“অর্নব ইরার কথায় তেমন কোনো কান না দিয়ে হন হন করে বাড়ির বাহিরে বেড়িয়ে চলে আসলো ইরাকে নিয়ে!’অর্নবের কাজে ইরা হতভম্ব হয়ে বললোঃ

—“আপনার কি হলো স্যার হুট করে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় আর কথা কেন বলছেন না?’

“অর্নব চুপ!’অর্নবের এই চুপ থাকার বিষয়টা একদমই মেনে নিতে পারছে না ইরা!’তার মাথাতেই ঢুকছে না হুট করে হলো কি অর্নবের!’ইরা বেশ রাগী কন্ঠ নিয়ে চেঁচিয়ে বললোঃ

—“আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায় আর হাত ধরে রেখেছেন কেন হাত ছাড়ুন আমার…?

“বলেই নিজের হাত ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে ইরা!’ইরার কাজে অর্নব আরো রেগে যায়,অর্নব ইরার দিকে তাকিয়ে চোখ গরম করে বলেঃ

—“ডোন্ট টক,আর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন?’

“আচমকা অর্নবের থ্রেড শুনে ঘাবড়ে যায় ইরা!’সাথে অর্নবের রাগী চোখ দেখে কিছুটা ভয়ও পেয়ে যায় ইরা,কারন অর্নবকে রেগে যেতে দেখেছে সে কিন্তু এবার যেন অর্নবের চেহারায় অন্যরকম ভয়ংকর কিছু দেখছে ইরা!’তাই তো অর্নবের কথা শুনে আর কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না ইরা….

______

“ওয়াশরুম থেকে নিজের জামা পরিষ্কার করতে করতে বাহিরে বের হলো জেরিন!কিছুক্ষন আগে একটা লোকের সাথে ধাক্কা লেগে জামায় ময়লা লেগে যায় জেরিনের,ইরাকে কিছু বলবে কিন্তু তখন ইরাকে অর্নব স্যারের সাথে কথা বলতে দেখে আর কিছু বললো না জেরিন!’চুপচাপ চলে যায় সে ওখান থেকে তারপর ওয়াশরুম খুঁজে বের করতে করতেই সময় লেগে যায় তার!’বর্তমানে মোটামুটি নিজেকে ঠিক করে হাঁটছে জেরিন…

“নিচে এসে আশেপাশে চারদিকে তাকালো জেরিন কিন্তু আশেপাশে কোথাও ইরাকে না দেখে একটু খুঁজতে লাগলো জেরিন ইরাকে!’তারপর নিজের ফোনটা বের করে একটা কল করতে নিলো ইরাকে,এমন সময় তার থেকে কিছুটা দূরে আসফিকে দেখে দৌড়ে যায় জেরিন তার দিকে তারপর বলেঃ

—“স্যার ইরাকে কি দেখেছেন আপনি?’

“জেরিনের কথা শুনে আসফি অবাক হয়ে বললোঃ

—“কেন তুমি দেখো নি…

—“কি দেখবো স্যার..

—“কেন কিছুক্ষন আগে অর্নব ইরাকে নিয়ে চলে গেছে…

“আসফির এবারের কথা শুনে বেশ শকট হয়ে বললো জেরিনঃ

—“কি চলে গেছে…

—“হুম…

—“ইরা আমায় রেখেই চলে গেল!’….(নিরাশ হয়ে)

.
.
.

—“তোমার সাহস কি করে হলো আসফির হাত ধরে ড্যান্স করার…?’

“গাড়ির সাথে চেপে ধরে ভয়ংকর কন্ঠে কথাটা বললো অর্নব ইরাকে!’আর অর্নবের এমন কাজ আর কথা শুনে প্রচন্ড ঘাবড়ে যায় ইরা!’কিছুক্ষন আগে ইরার হাত ধরে অর্নব নিজের গাড়ির সামনে এনে চেপে ধরে!’তারপর উপরের কথাটা বলে!’অর্নবের এমন কাজে ইরার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম!’ইরা কাঁপা কাঁপা গলায় বললোঃ

—“না মানে কি হয়েছে তাতে একটু ড্যান্সই তো করেছি স্যার…

—“কেন করছো তুমি..

—“স্যার আপনি এতো রেগে যাচ্ছেন কেন?’

—“আমার প্রশ্নের উত্তর দেও কেন ড্যান্স করেছো তুমি?’

—“না মা নে আসফি স্যার বললেন তাই..

—“ওহ বলেছে আর তুমি চলে গেছো…

“বলে অনেকটা কাছে চলে যায় অর্নব ইরার!’ইরা অর্নবের মুখ থেকে মদের গন্ধ আসাতে বলেঃ

—“স্যার আপনি ড্রিংক করেছেন…

—“হ্যাঁ করেছি…

—“কিন্তু কেন…

“বলতে বলতে ইরার চোখ যায় অর্নবের হাতের দিকে টপটপ করে রক্ত বের হচ্ছে সেখান থেকে!’ইরা চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলঃ

—“স্যার আপনার হাত…

—“কিচ্ছু হয় নি আমার…

—“আপনি বুঝতে পারছেন না স্যার আপনার হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে…

—“পড়ে পড়ুক তাতে তোমার কি…

—“আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন স্যার,আর এত রেগে আছেন কেন…(চেঁচিয়ে)

—“তুমি বুঝতে পারছো না আমি কেন রেগে গেছি…

—“আমি আসফির সাথে ড্যান্স করেছি এর জন্য আপনি রেগে গেছেন স্যার,কিন্তু এতে রাগার কি আছে….

“ইরার এবারের কথা শুনে অর্নব রেগে গিয়ে ইরার হাত গাড়ির সাথে চেপে ধরে বললোঃ

—“বিকজ আই লাভ ইউ,আমি তোমায় ভালোবাসি ইরা আর আমার ভালোবাসার ওপর কেউ নজর দিবে তাতে আমার রাগ হবে না….

“অর্নবের এবারের কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় ইরার!’অবাক হয়ে বলে সেঃ

—“কি….??’
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে,জানি অনেকেই এই দুই দিন গল্পের অপেক্ষায় ছিলে আসলে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম!’]

#TanjiL_Mim♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here