হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি পর্ব ২৩+২৪

#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-23

মেঝেতে রক্তের ছাপ।আর্তনাদ ভেসে আসছে। তবুও থামছে না নীলাভ। এলোপাথারি মেরেই যাচ্ছে।প্রীতি এসে এবার নীলাভের হাত ধরে আটকালো। অনুনয় সুরে বলে,

-ছেড়ে দেন।মরে যাবে।

নীলাভ থেমে গেলো প্রীতির দিকে ঘুরে তাকালো ও। নিষ্পলক ভাবে তাকিয়ে থাকলো।

এই সুযোগে মেঝে থেকে সন্ত্রাসী দলের লিডার টা উঠে পড়লো। শার্টের ভেতর থেকে ধারালো ছুরি বের করে যেই নীলাভ কে পিছন থেকে মারতে যাবে।ওমনি নীলাভ পিছন থেকেই লাত্থি দিলো।পেটে হাত দিয়ে আর্তনাদ করে খানিকটা দূরে পিছিয়ে সরে গেলো লোকটা।নীলাভ রাগে একটা বেঞ্চ তুলে লোকটার মাথায় ভাঙলো।

প্রীতির হাত ধরে বেরিয়ে পড়লো সেই ক্লাসরুম থেকে।

,

হাই স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে নীলাভ।পেছনে আরো পাচ-ছয় টা গাড়ি ধেয়ে আসছে।

প্রীতি লুকিং গ্লাসে দেখে বলল,

-আমাদের পেছনে কতোগুলা গাড়ি আসছে দেখেছেন?

নীলাভ স্টেয়ারিং টা ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,

-তা আসবে না?আফটার অল গ্যাং এর লিডারকে মারছি।

প্রীতি -তাড়াতাড়ি চালান।

নীলাভ -চালাচ্ছি।তুমি আগে তোমার বাবাকে একটা ফোন দেও বেচারা অনেক চিন্তা করছে।তোমার মা অজ্ঞান ও হয়ে গেছে।

প্রীতি বড় বড় চোখ করে তাকালো নীলাভের দিকে।

ফোনটা হাতে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাবার নাম্বারে ডায়াল করে কথা বলল।এরপর রাফিয়া আহসানের সাথেও কথা বলল।সব শুনে তৌফিক চৌধুরী প্রনয় আহসানকে বলতে বললেন যে আজ ওদের এমুখো না হতে।কারন সন্ত্রাসীরা ওদের খুজছে অন্য কোথাও থাকতে আজ বা রাতে আসতে।

প্রীতি আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলো।নীলাভ সবটাই শুনেছে ফোন লাউডস্পিকারে ছিলো।

নীলাভ একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো। না…গাড়ি গুলো এখনো তাদের পেছনেই আসছে।এদিকে গাড়ির অবস্থাও অনেক খারাপ।রাস্তার যত ময়লা সব গাড়িতে এসেছে যেনো।এদিকে তেল ও ফুরিয়ে আসছে।সেই ৩ টে থেকে গাড়ি গুলো ওদের পিছে ঘুরছে।আর এখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্রায়।নীলাভ রা যে কোথায় এসে পড়েছে তা নিজেরাও জানে না।

নীলাভ আরেকবার পিছনের দিকে তাকিয়ে।একটা চক্কর দিয়ে জংগল এর ভেতর ঢুকে গেলো।

,

বেশকিছুক্ষন পর প্রীতি বলে উঠলো,

-ওরা তো আর আমাদের পিছে আসছে না।

নীলাভ দাতে দাত চেপে বলল,

-তো তুমি কি চাও ওরা আমাদের ধাওয়া করুক?

প্রীতি -না মানে তা না।

পরক্ষনেই আবার নিজে নিজেই বলল,

-হয়তো হারিয়ে ফেলেছে আমাদের।জঙ্গল টা তো অনেক ঘন।

নীলাভ -মাথার বুদ্ধি খুলছে তাহলে।মাথামোটা একটা।

প্রীতি চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলো,

-আপনাকে কিন্তু আমি ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো।

নীলাভ -হম।ফেলে দিয়ে তুমি নিজে গাড়ি চালায়ো।

প্রীতি -অসহ্যকর।

নীলাভ -তোমাকে ওই গ্যাং এর কালো লিডার এর কাছে ফেলে রেখে আসাই ভালো ছিলো।

প্রীতি রেগে তাকালো নীলাভের দিকে।এর মাঝেই গাড়িটা ঝাকি দিয়ে উঠলো ।ঝাকি দিতে দিতে গাড়িটা বন্ধ হয়ে গেলো।

নীলাভ গাড়ি থেকে নেমে দাড়িয়ে দেখলো জংগলের বেশ ভেতরে চলে এসেছে তারা।চারিপাশে অন্ধকার।গাড়ি থেকে ধোয়া উড়ছে।গাড়ির হাল বেহাল।পুরো গাড়ির দশা চল্লিশা।

প্রীতিও এতোক্ষনে নেমে দাড়িয়েছে।

রাত নেমে এসেছে।আশেপাশে একবার চোখ বুলাতেই শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।ভয়ে গা ছমছম করছে ওর।চারিদিকে অন্ধকার। কেউ নেই।এর মাঝে ওরা দুজন ভাঙা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মাঝে মাঝে দু একটা বাদুর উড়ে যাচ্ছে মাথার উপর দিয়ে।আশেপাশের গাছপালা গুলোকে কোনো এক অশরীরী আত্মা মনে হচ্ছে।প্রীতির গা শিরশির করে উঠলো।

প্রীতি আশেয়াশে ভিতু চোখে তাকিয়ে ভয়ে পেছাতে লাগলো।

নীলাভ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে বিরক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো।প্রীতি পেছাতে পিছাতে উল্টে নীলাভের গায়ের উপর পড়তে ধরলে নীলাভ ঝটপট ধরে ফেলল।
ঝটকানা দিয়ে প্রীতি কে সোজা করে দাড় করিয়ে বলে উঠলো,

-হ্যা আসো।একদম আমার উপরে এসে পড়ে যাও।

প্রীতি আড়চোখে তাকিয়ে বলল,

-আমি কি বলছি আপনার উপরে পড়বো?যাই হোক,গাড়ির কি হইছে।ধোয়া কেনো এতো?

নীলাভ জোরপূর্বক হেসে বলে,

-ওহ এটা….এই গাড়ি সিগারেট খাচ্ছে।আর আমরা এখানে কি করব জানো?আমরা এখানে এখন কাবাডি আর কুতকুত খেলবো।(দাতে দাত চেপে)

পরেই ধমক দিয়ে বলল,
-চোখে দেখো না তুমি গাড়ি খারাপ হয়ে গেছে।

নীলাভের কথা শুনে প্রীতি কানে হাত গুজলো। ভালো মতো গাড়িটার দিকে তাকাতেই কিছু গুপ্তধন পাওয়ার মতো বিস্ময়ে চিল্লিয়ে বলল,

-এটা তো আমার বাবার গাড়ি।হায় হায়…. আমার বাপের গাড়ির কি দশা করছেন আপনি।

নীলাভ আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে আছে প্রীতির দিকে।যাকে বাচাতে গিয়ে এতো কিছু সে এখন এইসব বলছে।নীলাভ রেগে গাড়িটাকে এক লাত্থি দিয়ে বলে,

-বকোয়াস খাটারা।

প্রীতি মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে বলল,

-আমার বাবার ফেবারিট গাড়ি।

নীলাভ-রাখো ফেবারিট গাড়ি।জান চলে যাচ্ছে আর তুমি গাড়ি নিয়ে পড়ে আছো

প্রীতি গাল ফুলিয়ে নীলাভের মতো গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালো।

,

কিছুক্ষন পর কিছু মনে করার মতো করে প্রীতি বলল,

-ওওও….আমার তো একজন কে টাকা ফেক্সি করে পাঠাতে হবে।

নীলাভ ভ্রু কুচকে বলল,
-কার কাছে?

প্রীতি মুখ ফুলিয়ে বলল,

-একজন আমার কাছে টাকা পায়।এখানে দোকান কোথায়?

নীলাভ-আমার মাথায়। দেখো।

প্রীতি নীলাভের কথা শুনে চোখ মুখ খিচে কিছু কড়া কথা শুনাতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো।একটু পর নীলাভ বলল,

-কত টাকা?

প্রীতি গাল ফুলিয়েই উত্তর দিলো,

-এক হাজার টাকা।

নীলাভ বিস্ময়ে বলে,
-এক হাজার টাকা?

প্রীতি -হমম আমি ঋনি একজনের কাছে।

নীলাভের সেই অপরিচিত নাম্বার টার কথা মনে পড়ে গেলো।ও নিজেও তো ওই নাম্বারে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছিলো।যাক গে, ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে প্রীতিকে বলল,

-আমার বিকাশে টাকা আছে নাম্বার দেও আমি পাঠিয়ে দেই।

কথা টা বলে নীয়ালভ নিজেই থ হয়ে গেলো।

আরে ওর বিকাশেই তো টাকা আছে।’ধ্যাত’ নিজের বিকাশে টাকা থাকতে ও এতো কাহিনি করছে সিম্পল একটা বিষয় নিয়ে।বিকাশ থেকেই তো ও ৬৩ টাকা ফেক্সি করে দিতে পারতো।নীলাভের নিজের মাথার চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছে করছে।বেহুদা এতো ভেজাল করেছে।ও যদি প্রথমেই মনে করে নিজের বিকাশ থেকে টাকাটা পাঠিয়ে দিতো তাহলে আজ আর এতো কাহিনি হতো না।মেয়েটাকে নীলাভ এতো কড়া কথাও শুনাতো না।

নীলাভ রাগে নিজের চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো। প্রীতি কে বলল নাম্বারটা দিতে।সে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে।

প্রীতি নাম্বার বলতে লাগলো।নীলাভ নাম্বার টা প্রীতির কথা মতো তুলে যেই না আরেকবার চেক করতে যাবে ওমনি ওর চোখ দুটো বিস্ফোরিত হয়ে গেলো।ও প্রীতির কাছ থেকে আরেকবার নাম্বার টা চেক করে নিলো।না…নাম্বার ঠিক ই আছে।

কিছুক্ষন চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে নীলাভ চিল্লিয়ে বলে উঠলো,

-তুমি সেই মেয়ে?যে এতো প্যারা দিছো আমাকে?

আচমকা চিল্লানিতে প্রীতি ভয় পেয়ে গেছে।কেপে উঠেছে সারা শরীর।বুকে থুথু দিয়ে ও চমকে তাকালো নীলাভের দিকে।প্রীতির জিজ্ঞাসু দৃষ্টিকে গ্রাহ্য না করে নীলাভ এবার তাচ্ছিল্য হেসে বলে উঠলো,

-আমার ই দোষ। আমার একবার ভাবার দরকার ছিলো যে এমন তারছিড়া পাগল মেন্টাল ঝামেলা মার্কা মেয়ে তো পৃথিবীতে এক পিস তুমি ই আছো।তাই তো ‘৬৩ টাকা’ ফেক্সি করে চাইছো।তুমি ছাড়া আর কার মাথায় এমন জিনিয়াস বুদ্ধি আসবে?

প্রীতি নীলাভের কথা শুনে বুঝার চেষ্টা করলো।নীলাভ এবার দাতে দাত চেপে ভালো মতো সবটা বুঝিয়ে দিলো। সব কিছু ওর বুঝে আসলে ও নীলাভের দিকে এমন ভাবে তাকালো যেনো নীলাভ কোনো চোর বা ডাকাত।

প্রীতি কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে আহত ভেজা গলায় বলে উঠলো,

-আর আপনি যে আমাকে কতো বাজে কথা শুনিয়েছেন তার বেলায় কি কিছুই না?আমার খুব কষ্ট হয়েছে জানেন?আপনি যে এতোটা কঠোর ভাষায় কথা বলতে পারেন আমি ভাবতেও পারছি না।

চাদের আলোয় নীলাভ স্পষ্ট প্রীতির পানি ভর্তি চোখ টাকে দেখতে পেলো।প্রীতির পানি ভর্তি চোখ দেখে নীলাভ রাগটাকে ধমন করে শীতল কন্ঠে বলে,

-আমি ওইভাবে বলতে চাই নি।আর তাছাড়াও তোমার দোষ আছে।তার মধ্যে কাল বাবা অসুস্থ ছিলো মেজাজ টাও খারাপ ছিলো।

প্রীতি কিছু না বলে অপরাধে মাথা নিচু করে থাকলো।ও জানে ওর দোষ বেশি।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস।ওরা দুজনে এতো বেশি ঝগড়া করে যে ওরা কেউ ই কারোর মুখ দেখতে চায় না।তবুও দুজন দুজনের কাছেই এসে পড়ে।

বেশকিছুক্ষন দুজন পিনপিন নিরবতায় কাটিয়ে দিলো সময়।প্রীতি আকাশের দিকে চেয়ে হঠাৎ বলে উঠলো,

-আচ্ছা, আপনার কি মনে হয় মানুষ আগে ভালোবাসে না কি প্রেমে পড়ে?

নীলাভ গম্ভীর মুখে বলে উঠলো,

-আমি এসব বুঝি না।জীবনে প্রেম ভালোবাসা এসব কাউকে বাসিও নি জানি ও না।

প্রীতি -তবুও নিজের মনের মধ্যে তো সবার ই একটা ধারনা থাকে। সেই ধারনা থেকে বলুন।

নীলাভ আকাশের দিকে তাকালো।পুর্নিমার আলোয় জঙ্গলটাও সুন্দর লাগছে এখন।আজ চাদটাও খুব সুন্দর অনেক সুন্দর করে জ্যোৎস্নাও ছড়াচ্ছে।চাদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নীলাভ গম্ভীর মুখে বলে উঠলো,

-আমার মনে হয়, মানুষের আগে ভালোলাগে। ভালো লাগতে লাগতে মানুষ প্রেমে পড়ে যায়।আর সেই প্রেম থেকে যে কখন হুটহাট হঠাৎ করে ভালোবেসে ফেলে তা আমরা বুঝতেই পারি না।আমাদের জীবনে কিন্তু অনেক রকমের ভালোবাসা আছে, প্রেম আছে।কিন্তু ভালোবাসা একটাই আছে।তোমার এক ই রকম ভাবে দুইটা জিনিস কে ভালো লাগতে পারে।কিন্তু এক ই রকম ভাবে দুইটা জিনিস কে তুমি কখনোই ভালোবাসতে পারবে না।তুমি অনেক কিছুর প্রেমে পড়তে পারো।আমাদের জীবনে প্রেমের অভাব নেই।এক ই সাথে তুমি ৩-৪ টা ছেলের প্রেমে পড়তে পারো কারন তাদের তোমার ভালো লাগে। কিন্তু সেই ৩-৪ টা ছেলের মধ্যে যেকোনো একটা ছেলের প্রেমে তুমি বার বার পড়বে।

নীলাভ থামে। একটু নিঃশ্বাস নেয়।এরপর আবার বলে,

-ছেলেটার সব কিছুই তোমার ভালো লাগবে।তার তাকানো টাতেও তুমি অন্যরকম নেশা খুজে পাবে।সে চোখের পলক ফেললেই মনে হবে ‘নদীর বুকে এক টুকরো মেঘের’ মতো দুর্লভ এই চাহনি। তার সবকিছুতে প্রেমে পড়তে পড়তে হঠাৎ করে তুমি তাকে এমন ভাবে ভালোবেসে ফেলবে যে তাকে ছাড়া এক সেকেন্ড ও তোমার নিঃশ্বাস আটকে আসবে।এমন অনেকে আছে যারা বলে যে প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছে।হ্যা প্রথম দেখায় ভালোবাসতে পারে কিন্তু সেই ভালোবাসায় প্রেম নেই।সেই ভালোবাসা মজবুত না।দুর্বল।সেই ভালোবাসা যখন তখন ভেঙে গেলেও এতোটা কষ্ট হবে না।সাময়িকের জন্য কষ্ট হবে।কিন্তু তোমার আসল ভালোবাসা ভেঙে গেলে কষ্ট তোমাকে সারাজীবন কুড়ে কুড়ে খাবে।তাই আমার মনে হয় প্রেম মানুষের জীবনে আগে আসে।প্রেমে পড়তে পড়তে আমরা হঠাৎ করে ভালোবাসি।

প্রীতি কিছুক্ষন নীলাভের দিকে চেয়ে রইল। এতোসুন্দর করে কেউ কীভাবে বর্ননা দিতে পারে?নীলাভ আকাশের দিকে চেয়ে আছে ঠোঁটে হালকা মৃদু হাসি।প্রীতির কাছে নীলাভকে ভালো লাগে ভিষণ রকমের ভালো।এ মানুষটার কথার ভেতর মন ভালো করার যাদু আছে বলে ওর মনে হয়।প্রীতি মুখ দিয়ে বলে উঠলো,

-নদীর বুকে এক টুকরো মেঘের মতো দুর্লভ আপনার ঠোঁটের কোনের মৃদু হাসি।

নীলাভ চকিতেই তাকালো প্রীতির দিকে।এভাবেও নীলাভকে কেউ কোনো দিন বলে নি।নিজেকে সামলে নিলো ও।

প্রীতির ঠোঁটের কোনেও মিস্টি হাসি।তৃষ্ণা আর আনন্দের হাসি।যে হাসি বলছে, ‘নাহ আমার ধারণা ভুল নয়।কেউ তাও আছে যে আমার মতো করে ভাবে।’আমরা প্রেমে পড়তে পড়তে ভালোবেসে ফেলি…… অনেক ভালোবেসে ফেলি।

এরপর আবারো বেশ কিছুক্ষন নিরাবতা বিরাজ করলো সারা পরিবেশ জুড়ে।ওরা বারবার নিরব হয়ে যায় যেনো কোনো কথাই খুজে পায় না।কি ভেবে যেনো নীলাভ থমথমে গলায় বলে উঠলো,

-তোমার বিয়ের ডেট ঠিক হয়ে গেছে প্রীতি। সামনের মাসের ২০ তারিখ।

এমন চুপচাপ একটা পরিবেশে নীলাভের এই কথা টা যেনো প্রীতির কানে বজ্রপাতের মতো শুনালো।আশেপাশের সবকিছু যেনো ভেঙে পড়ছে।গুড়িয়ে মিশিয়ে যাচ্ছে মাটির সাথে।চাদের এই মিস্টি আলোয় যেনো তিক্ততায় ভরে গেলো।

-বিয়ে?২০ তারিখ? তার মানে আর মাত্র ১৪ দিন পরে?

প্রীতি অসহায় দৃষ্টিতে নীলাভের দিকে তাকালো।আদেও নীলাভের চোখে সেই দৃষ্টি পড়েছে কি না কে জানে।
প্রীতির চোখ মুহুর্তে ছলছল করে উঠলো।ও করবে না এই বিয়ে?
চোখের পানি টইটম্বুর হতেই ঝাপসা হয়ে এলো চারিপাশ।

প্রীতি নীলাভের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সামনের শুন্যে দৃষ্টি রাখলো।এই সময় এই আবহাওয়া এই মানুষ এই পরিবেশ এই ঝগড়া এগুলো আর কখনো জীবনে ফিরে আসবে না….কক্ষনো না।ভাবলেই কেমন বুকটা ছেত করে উঠে।

জীবন নদীর স্রোতের মতো চলতেই থাকবে।নতুন নতুন ঢেউ নিয়ে।আর পুরনো ঢেউ গুলো সব সমুদ্রের বুকেই মিলিয়ে যাবে।আর কখনো ফিরবে না।কক্ষনো না…জীবনে নতুন মোড় আসবেই।
#হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি💕
The_unexpected_Love
#মুমুর্ষিরা_শাহরীন
Part-24

পশ্চিম দিগন্তে সূর্য হেলে পড়ার পরপর ই ঝাপিয়ে রাত নেমে আসে।চারিদিকে নানান আলোয় উজ্জ্বল দিন টা মুহূর্তের মধ্যেই কালো রাতের আধারে ছেয়ে যায়।
এই রাত কারো মন খারাপএর সাক্ষী হয় তো কারোর আনন্দের সাক্ষী। আবার কারোর বালিশ ভিজিয়ে তোলা কান্নার সাক্ষী হয়।তেমনি আজ রাতটা প্রীতির কান্নায় বালিশ ভিজিয়ে তোলার সাক্ষী হচ্ছে।

আজ ১৮ তারিখ চলে গেলো।কাল বাদে পরশু প্রীতির বিয়ে।
প্রনয় আহসান আর রাফিয়া আহসান ভিষণ খুশি আদরের এক মাত্র মেয়ের বিয়ে নিয়ে।বাবা মায়ের এতো খুশির জোয়ারে প্রীতি তার কষ্ট টা আর মুখ ফুটে বলতে পারে নি।নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছে সেই জোয়ারে।

বিছানায় এলো মেলো হয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে প্রীতি। থেকে থেকে বারবার তার শরীর কেপে উঠছে।সে কাদছে.. ভীষণ ভাবে কাদছে। বালিশে মুখ গুজে কাদছে। উড়না মুখে চেপে ধরে কাদছে। যাতে শব্দ বাইরে না যায়।

তার পাশে বেশ কিছু জামা কাপড় শাড়ি ব্লাউজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
আজ প্রীতির মেহেন্দি ছিলো। সবাই হৈ হুল্লোড় আনন্দ করেছে। মেহেদী দিয়েছে।কিন্তু প্রীতি ঘর থেকেই বের হয় নি।

জামা কাপড় আর শাড়ির স্তুপের একপাশেই পড়ে আছে তার ক্যামেরা। আজ হুট করেই সে এই ক্যামেরা টা নিয়ে বসেছিলো।মুহুর্তের মধ্যেই চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠলো অতীতের পুরোনো সব স্মৃতি।তাজা হয়ে উঠলো পুরনো সব স্মৃতি। বান্দরবানের নীলাভের সাথে কাটানো প্রথম মুহুর্তের স্মৃতি।

ক্যামেরায় ছবি উল্টাতে উল্টাতেই নীলাভের সেই শৈলপ্রপাতের ছবিটা স্কিনে ভেসে উঠলো।আরো ভেসে উঠলো নীলাচলে রোয়েদা ভিউ পয়েন্টে বৃষ্টির মধ্যে ভেজা প্রীতির গাল ফুলানো ছবি।

সে আর নিজের মতো চলতে পারবে না।নিজের মতো করে সবকিছু চালোনা করতে পারবে না।তাকে তার বাবা মার থেকে তাকে বহু দূরে চলে যেতে হবে।নীলাভের সাথে আর ঝগড়া করা হয়ে উঠবে না। এসব ভাবতেই তার চোখ ঝাপিয়ে জল নেমে এসেছে।সেই সাথে ভাবছে,

-আমি তো আগে বিয়েতে না করি নি তাহলে এখন কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে আমার।আগে যখন বাবা মার মুখের দিকে তাকিয়ে বিয়েটাতে হ্যা করেছি তাহলে এখন কেনো মনে হচ্ছে সব ভুলে বিয়েটাকে এক মিনিটের মধ্যেই ভেঙে দেই।এই আয়োজন রি উতসব সব কেমন বিষের মতো গায়ে বিধছে আমার।কেনো?

প্রীতি ডুকড়ে কেদে উঠলো।চাপা কান্নার আওয়াজ তুলে সে বলল,

-যাকে আমি ভালোবাসি না তাকে বিয়ে করে কীভাবে থাকবো?আচ্ছা আমি কি একবার বাবাকে বলবো?

প্রীতি প্রনয় আহসান এর ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা চালাতে ধরে আবার পরক্ষনেই নিজেই নিজেকে বলে,

-কিন্তু বাবাকে কি বলবো?বাবা যখন জিজ্ঞাসা করবে আমি কেনো এই বিয়ে ভাঙতে চাইছি তখন আমি কি উত্তর দিবো? আমার তো কোনো ভালোবাসার মানুষ ও নেই।হে আল্লাহ, তুমি আমাকে পথ দেখাও।আমি তনয়কে বিয়ে করতে চাই না।

প্রীতি আওয়াজ করে কেদে উঠলো। বেশ কিছুক্ষন কেদে ও উঠে ওযু করে এসে নামাজে দাড়ালো।জায়নামাজ ভিজে যাচ্ছে প্রীতির চোখের পানিতে।এতো কেনো কাদছে ও?মনে হচ্ছে কোনো অজানা কারনে মনের দহন টা শত গুনে বেড়ে গেছে।পুড়ছে..জ্বলছে সব ছাই হয়ে যাচ্ছে।

_______________________________

রাতের কালো আধারের দিকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নীলাভ। আকাশের দিকে চেয়ে আনমনেই বলে উঠলো ও,

-আজ কি অমাবস্যার রাত?এজন্যই কি রাত চাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে কালো ছায়া নামিয়ে এনেছে।কোথায় একটুকুও আলো নেই।

নীলাভ পরক্ষণেই আবার হাসলো নিজের আজগুবি চিন্তার কারনে।সে আগে কখনো এসব খেয়াল করতো না।সময় ই ছিলো না।কিন্তু এখন যেনো সময়ের অভাব নেই।কিছুতেই সময় কাটতেই চায় না।আজ দশদিন ধরে প্রীতির সাথে নীলাভের কোনো যোগাযোগ বা হুটহাট করে দেখা টা মেলে নি।নীলাভ রাতের কালো আধারের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলো,

-কাল বাদে তোমার বিয়ে।আচ্ছা তুমি কি বিয়ে করে পর হয়ে যাবে?ভুলে যাবে সবাইকে?স্বামী সংসার নিয়েই কি শুধু মেতে থাকবে?আবার কখনো কি আমাদের দেখা হবে?হঠাৎ করে দেখা।বিয়ের পর কি তুমি কখনো হঠাৎ করে ঘুরতে চলে যাবে যেখানে হঠাত করেই তোমার সাথে আমার দেখা হয়ে যাবে।ঝগড়া হবে।আমাকে কি আবার আগের মতো জ্বালাবে?উহু না…জ্বালাবে না।তখন তো তুমি অন্য দুনিয়ায় থাকবে।আমার কথা ভাব্বার সময় কই তোমার।

নীলাভ কিছুক্ষন থামে।ও আবার আস্তে গলায় বলে উঠলো,

-খুব কষ্ট হচ্ছে এই বুকে।কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে?তোমার বিয়ে হয়ে গেলেই তো আমি বেচে যাবো কেউ আমাকে আর বিরক্ত করবে না জ্বালাবে না।এতোদিন তো এটাই চেয়ে এসেছি কিন্তু আজ? আজ কেনো এতো কষ্ট হচ্ছে?কেনো মনে হচ্ছে তোমাকে দেখা ছাড়া থাকা খুব মুশকিল।তোমার সাথে হুটহাট করে না দেখা হলে চলবেই না।বিয়ের পর কি তুমি আর কখনো আমাকে ফোন দিয়ে বলবে না,” আপনি আমার ৬৩ টাকা এখনো দেন নি।”

নীলাভ আবার থামে।কেনো যেনো নিঃশ্বাস নিতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।থমথমে গলায় নীলাভ শূন্যে তাকিয়ে আবারো বলে উঠে,

-আমার তোমাকে ভালো লাগে প্রীতি ।কিন্তু এমন তো অনেক কেই লাগে।এই ভালোলাগা টা হঠাৎ করেই কখন যেনো জন্ম নিয়েছিলো তোমার প্রতি।হঠাৎ করে কি আর আমাদের কখনো দেখা মিলবে?হঠাৎ করে কখনো তুমি আমার ফোনে ভুল করে টাকা পাঠিয়ে দেবে?হুটহাট রাতে ঘুরতে বের হয়ে হঠাৎ করে তোমার সাথে দেখা হবে।ভালোভাবে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করে কি আর ঝগড়া করা হয়ে উঠবে?বলা হয়ে উঠবে কি আমি হঠাৎ করে তোমায়………..

নীলাভ আবার থামে।নিঃশ্বাস নেয়।কথা গুলো গলায় এসে বারবার ধলা পাকিয়ে থেমে যাচ্ছে। নীলাভ তার ছলছল দৃষ্টি টা রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট এ রাখে।ধরা গলায় বলে উঠলো,

-আমি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায় প্রীতি। #হঠাৎ ভালোবেসে ফেলেছি।বুঝতেই পারি নি।হঠাৎ ভালোবাসা কি বুঝা যায় বলো?এটা তো হঠাৎ করেই আসে। না বলে না কয়ে আসে।তেমনি দেখো না আমিও আজ হঠাৎ করেই উপলব্ধি করতে পারলাম আমি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়।

নীলাভ আর বলতে পারলো না।বেসুরো ফোনট বেজে উঠলো। নীলাভ সব ভাবনা সব কথা ফেলে রেখে ফোন রিসিভ করতে ঘরে আসে।

ফোনে কথা শেষ করে যেই নীলাভ ফোন টা রেখে দিবে।ওমনি হাতের চাপ লেগে গ্যালারিতে ঢুকে যায়। নীলাভের চোখ সেদিকে যায়।

গ্যালারির প্রথম ছবিটাই প্রীতির।নীলগিরির সেই ছবিটা।প্রীতি ক্যামেরায় চোখ রেখে আছে বাতাসে চুল গুলো উড়ছে।ঠোঁটে মৃদু হাসি।এরপর নীলাভ আর কোনো ছবি ই তুলে নি ফোনে।প্রীতির এই ছবিটাও তো তুলে নীলাভ ডিলিট করতে চেয়েছিলো তখনি।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে,ডিলিট করলে খুব খারাপ হতো খুব…..নীলাভ ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,

-তুমি আমার হঠাৎ করে দেখা হওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছো।হঠাৎ ঝগড়া করার সাথী হয়ে গেছে।জানো,কেউ আর আমাকে এসে গোমড়ামুখো বলবে না।আমি আর মিস ঝামেলা বলে কাউকে ডাকতে পারবো না। কাউকে আর বলার সুযোগ পাবো না আমি, “একদম কাছে আসার চেষ্টা করবা না।” আর তার প্রতিউত্তরে কেউ আর বলবে না, “আপনিও একদম এডভান্টেজ নিবেন না”।

নীলাভ হাসে।ঠোঁটে কষ্টের হাসি তুলিয়ে সে বলে,

-আমার মা বলে তুমি না থাকলে না কি আমার মাতৃভাষা বৃথা যেতো আমি না কি কথাই বলতে পারতাম না।কিন্তু এবার?এবার আর কেউ থাকবে না।কেউ না।

নীলাভের শেষের কথাগুলো অনেক বেদনাদায়ক শুনা গেলো।ও ভেজা গলায় আবারো বলে উঠলো,

-আমি #হঠাৎ_ভালোবেসে_ফেলেছি তোমায়।খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।যেটা আজ তোমার শূন্যতা আমাকে পদে পদে বুঝিয়ে দিচ্ছে।কিন্তু আমার হাতে কিচ্ছু করার নেই….. কিচ্ছু না।

নীলাভ ফোনটা হাত থেকে রাখলো।

সাথে সাথে শান্ত পরিবেশে ঘর কাপিয়ে মুহুর্তে ঝনঝন শব্দ করে উঠলো।নীলাভ চকিতেই চমকে দরজার দিকে তাকালো।শব্দ টা সেদিক থেকেই এসেছে।দরজার দিকে তাকাতেই নীলাভ ভড়কে গেলো।

নীলা চৌধুরী দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন।নীচে পড়ে আছে খাবারের প্লেট গুলো।ছেলে এখনো রাতে খায় নি।ছেলের জন্য খাবার নিয়ে এসে যে এমন কথা শুনবেন তিনি কখনোই ভাবেন নি।

নীলা চৌধুরী এক পা এক পা করে এগিয়ে আসলেন ছেলের দিকে।নীলাভ কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই নীলা চৌধুরী ছেলেকে ধরে বলে উঠলেন,

-তুই ভালোবাসিস প্রীতিকে? এতোটা ভালোবাসিস?

নীলাভ ঢোক গিলল।কিছু বললা না।

নীলা চৌধুরী ছেলেকে ঝাকাতে ঝাকাতে বললেন,

-বল বাবা।তুই একবার বল।আমি এক্ষুনি প্রীতির সাথে তোর বিয়ের কথা বলবো।ওর বিয়ে ভেঙে আমি তোর সাথে বিয়ে দেবো।আমার একমাত্র ছেলেটার কষ্ট আমি দেখতে পারবো না।বল বাবা।

নীলাভ নীলা চৌধুরীর মমতা দেখে শুকনা হাসি দিলো।মায়ের মমতা বড়ই অদ্ভুত।সবকিছুর উপরে।মলিন গলায় নীলাভ বলে উঠলো,

-না মা…এটা হয় না।তুমি ই তো নিজেই কখনো অন্যায় কে পশ্র‍য় দেও নি।তাহলে আজ কেনো এসব বলছো?প্রনয় আংকেল ছোটো থেকে ওদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে।হয়তো প্রীতি ওর হবু বরকে ভালো ও বাসে।আমি এতোগুলা মানুষের জীবন মান সম্মান খুশি ভালোবাসা নষ্ট করে প্রীতিকে আমার ঘরের বউ করে আনতে পারি না মা।

নীলা চৌধুরী ছেলেকে ছেড়ে বললেন,

-আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না।আমার কাছে আমার ছেলের খুশি ই সবচেয়ে বড়।আমি এক্ষুনি তোর বাবার সাথে কথা বলছি।

নীলা চৌধুরী আর এক সেকেন্ড ও দাড়ালেন না।স্বামীর কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। নীলাভ বারবার তার মাকে আটকানোর চেষ্টা করছে।শেষে না পেরে নীলাভ শক্ত গলায় বলে উঠলো,

-মা তোমাকে আমার কসম। তুমি যদি বাবাকে গিয়ে কিচ্ছু বলো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে।

নীলা চৌধুরীর পা থেমে গেলো।শরীর কাপতে লাগলো।চোখ দুটো বন্ধ হয়ে এলো।ঘুরে দাড়ালো সে।ছেলের চোখের দিকে তাকালো।তার নীল বর্নের চোখ টা লাল হয়ে উঠেছে। নীলাভ জলদি মার কাছে এলো।কিছু বলার জন্য মুখ খুলার আগেই তার গালে ঠাস করে একটা চর পড়লো।

নীলাভ গালে হাত দিয়ে মিনিট দুয়েক পর অবাক হয়ে তাকালো তার মায়ের দিকে।এই কোন মাকে দেখছে সে?যে মা কখনো তাকে ধমক পর্যন্ত দেয় নি।সেই মা তাকে চর মারলো?নীলাভ অবাক হওয়া কন্ঠে বলে উঠলো,

-মাাাাাাা…..

নীলা চৌধুরী চোখের পানি ছেড়ে বলে উঠলেন,

-একদম মা বলে ডাকবি না।সবার কথা ভাবছিস নিজের কথা কি ভেবেছিস কখনো?তোর কি হবে?আমি কি করে নিজের চোখের সামনে নিজের ছেলের কষ্ট দেখবো?সারাজীবনের আপসোস থেকে যাবে তোর বাবা।

নীলাভ মায়ের কথায় বলে উঠলো,

-আমি ঠিক থাকবো মা।আমি তো অনেক শক্ত।

নীলা চৌধুরী ছেলের দিকে তাকালেন।তার দৃষ্টি বলছে পারবি না তুই।ভালোবাসায় কখনো শক্ত থাকা যায় না।নীলা চৌধুরী ঘুরে দাড়ালেন চলে যাওয়ার জন্য।নীলাভ মায়ের উদ্দেশ্যে তৎক্ষনাৎ ডেকে উঠলো,

– মা….

নীলা চৌধুরী তাকালেন না ছেলের দিকে।নীলাভ আবার বলে উঠলো,

-আমি তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি?

নীলা চৌধুরী ছেলের দিকে তাকালেন।শব্দ করে কেদে দিয়ে তার দু হাত বারিয়ে দিলেন।নীলাভ মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,

-আমি হঠাৎ করে ভালোবেসে আবার হঠাৎ করেই হারিয়ে ফেললাম মা।আজ ই বুঝতে পারলাম আর দেখো আজ ই সময় নেই।পাবো না আমি কখনো ওকে।আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে মা।এই মেয়েটা আর কখনো আমার সাথে দুষ্টুমি করবে না আর কখনো আমাকে জ্বালাবে না।অন্যকারো হয়ে যাবে। ভাবলেই আমার বুকের ভেতর টা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে মা।এতোটা ভালোবাসলাম কখন আমি বলতে পারো মা?

নীলা চৌধুরী ঠোঁট চেপে নিজের কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে ছেলের পিঠে হাত বুলালেন।তার এতো শক্ত ছেলে!আর তার চোখের পানি প্রায় আকাশের চাঁদ ধরার মতো দুর্লভ। কতটা ভালোবেসে ফেলেছে সে।নীলা চৌধুরীরও আজ কিচ্ছু বলার নেই… কিচ্ছু না।তার ছেলে তাকে কসম দিয়েছে এরপরেও সে আর কি বলবে?

ভালোবাসাটা এমনই অনেক কঠিন।বেদনাদায়ক। পাহাড় সমপরিমাণ কষ্ট।আবার আকাশ সমপরিমাণ সুখেরও।

চলবে🙂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here